কবি অতুলপ্রসাদ সেনের গান
*
ভালবাসা কত পাবি আর, হারে খ্যাপা
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “বিবিধ” পর্বের গান।

॥ বাউল॥

ভালবাসা কত পাবি আর, হারে খ্যাপা!
যেখানে তুই থাক্ ‌রে ভোলা, পরিস্‌ গলে হার, রে খ্যাপা!

শূন্য যে তোর পর্ণ-গেহ, ( হারে কাঙাল, হারে কাঙাল! )
তবু পাস্‌ তুই পরম স্নেহ!
হা অভাগা. কি দিবি তুই তাদের উপহার, রে খ্যাপা!

যখন যাস্‌ তুই ফুলের পাশে, ( ওরে খ্যাপা )
ওরে, তারাও তোরে ভালবাসে,
আকাশ ভরে তারা হাসে, তোর ঘুচায় দুঃখ-ভাব, রে খ্যাপা!

যারা এত দিচ্ছে তোরে, ( হারে কাঙাল, হারে কাঙাল! )
বসা, ছিন্ন প্রাণের পরে ;
আর কিছু তোর নাই রে কাঙাল, তুই খুলে দে দুয়ার, রে খ্যাপা!

কতদিন বা রইবি ভবে, ( হারে ভোলা! )
এত ঋণ তুই শুধ্ বি কবে?
তোর দিনে দিনে বাড়ছে বেলা, বাড়ছে প্রেমের ধার, রে খ্যাপা!
পারের কড়ি চাইবে যবে, ( হারে কাঙাল, হারে কাঙাল! )
পারের্‌ কড়ি দিস্‌রে তবে ;
হ’স্ রে পরের দেওয়া ধনে বৈতরণী পার, রে খ্যাপা!

.      ****************                
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
পাগলা! মনটারে তুই বাঁধ
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “বিবিধ” পর্বের গান।

॥ ভৈরবী॥

পাগলা! মনটারে তুই বাঁধ!
কেন রে তুই যেথা সেথা পরিস্‌ প্রাণে ফাঁদ?

শীতল বায়ে আস্ লে নিশি,
তুই কেনরে হোস্‌  উদাসী?
( ওরে ) নীলাকাশে অমন করে হেসেই থাকে চাঁদ!

শৈলশিরে সোণার খেলা,
দেখিস্ যবে প্রভাতবেলা,
তুই কেন যে হোস্‌ উতলা, দেখে মোহন চাঁদ!

করুণসুরে গাইলে পাখী,
তোর কেন রে ঝরে আঁখি?
কবে তুই মুছ্ বি নয়ন, ঘুচ্‌বে মনের ধাঁধ?

সংসারেতে উঠ্ লে হাসি,
তুই শুনিস্ রে ব্রজের বাঁশী!
( ওরে ) ভাবিস্ ‌কিরে সবই গোকুল, সবই কালাচাঁদ?

কতই পেলি ভালবাসা,
তবু না তোর মেটে আশা!
এবার তুই একলা ঘরে নয়ন ভরে কাঁদ্‌!

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
হৃদে জাগে শুধু বিষাদ-রাগিণী
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “বিবিধ” পর্বের গান।

॥ পিলু বাঁরোয়া॥

হৃদে জাগে শুধু বিষাদ-রাগিণী!
কেমনে গাহি হরষ-গান ?
---আমায় বলোনা, বলোনা গাহিতে গান!

সংসারের মহোত্সবে কভু এই ক্ষীণ কণ্ঠ
আপন উল্লাসে গাহিত গান ;
এবে নয়নে অশ্রু লয়ে হাসির ভান!
কেমনে গাহিব হরষ-গান?
---আমায় বলোনা, বলোনা গাহিতে গান!

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
এত হাসি আছে জগতে তোমার---বঞ্চিলে শুধু মোরে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “বিবিধ” পর্বের গান।

॥ বেহাগ॥

এত হাসি আছে জগতে তোমার---বঞ্চিলে শুধু মোরে!
বলিহারি, বিধি, বলিহারি যাই তোরে!

হাসিব, হাসাব--এই মনে লয়ে রচিলাম কত গান ;
সেই গানে আমি কাঁদিলাম কত, কাঁদালেম কত প্রাণ ;
যে ডোরে সবার হয় মালা গাঁথা--দিলি ফাঁসি সেই ডোরে!
বলিহারি, বিধি, বলিহারি যাই তোরে!

আমিও ত কত সুখের আশায় আশার ভেলায় ভেসেছি ;
আমিও ত কত সেই বাঁশী শুনি যমুনার কুলে এসেছি ;
কোথা শ্যাম রায়, যার লাগি হায় রহিতে নারিনু ঘরে?
বলিহারি, বিধি, বলিহারি যাই তোরে!

বুঝেছি তোমার মধুর মুরলী বাজিবে না মোর তরে ;
এস, ঘনশ্যাম, তোমার রুদ্র দণ্ড লইয়া কবে ;
লয়ে যাও মোরে, হে চিরবিরাম, তোমার রথের ‘পরে!
বলিহারি, বিধি, বলিহারি যাই তোরে!

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
থাকিস্ নে বসে তোরা সুদিন আস্ বে বলে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “বিবিধ” পর্বের গান।

॥ মিশ্র খাম্বাজ॥

থাকিস্ নে  বসে তোরা সুদিন আস্ বে  বলে ;
কারো দিন যায় হরষে, যায় কারো বিফলে!

সুখের ছদ্মবেশে,
আসে দুঃখ হেসে হেসে,
জীবনের প্রমোদ-বনে ভাসায় আঁখিজলে!

যেথা আজ শুষ্ক মরু,
যেথা নাই ছায়া তরু,
হয়ত তোদের নয়নজলে ভর্ বে ফুলে ফলে!

জীবনের সন্ধিপথে,
খুঁজে পথ হবে নিতে ;
কেউ জানে না কোথায় যাবি, কেউ দিবে না বলে!

ভাঙ্গিলে বালির আবাস,
বিষাদে হ'স্ নে হতাশ,
আছে ঠাঁই, বলে রাতুল, রাতুল চরণতলে!

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
তোরা জাগাস্ না লো পাগলারে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “বিবিধ” পর্বের গান।

॥ বাউল॥

তোরা জাগাস্ ‌না লো পাগলারে!
সে যে পড়ে আছে, থাক্ পড়ে পথের ধারে!

ও সে সুদূর গানে, বঁধুর পানে ছুটেছিল আঁধারে ;
মানেনি জোয়ার-ভাটা৷ বনের কাঁটা সঙ্গীবিহীন সংসারে!

সে মোহন পাখী দেছে ফাঁকি কাটাবনের মাঝারে ;
তাই সে লোহিত গায়ে ক্লান্ত কায়ে চাহে যেন কাহারে!

ঘুমে আছে ভাল, জাগাস্‌ না লো, গাওয়াস্ ‌না লো তাহারে ;
তার গোপন কথা প্রাণের ব্যথা করুণ গানে গাঁথা রে!

আজ তার নাইক কড়ি, নাইক তরী, ডাক শুনেছে ওপারে ;
চায় সে হইতে পার আকুল পাথার বক্ষ-ভাঙ্গা সাঁতারে!

ওলো এমন ভোলায় কাজ কি তোলায়, থাক্‌ শুয়ে ধূলি প'রে :
কহি সুখের ভাষা দিস্ নে  আশা এমন সর্ব্বনাশারে!

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
মিলন-সভা মাতাও আনন্দ-গানে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “বিবিধ” পর্বের গান।

॥ তিলক কামোদ--ঝাঁপতাল॥

মিলন-সভা মাতাও আনন্দ-গানে ;
বাঁধ আজি প্রেম-ডোর প্রাণে প্রাণে

শোভন-শুভ-উৎসবে,
বৈরী আজি বন্ধু হবে ;
চাহে চিত সর্ব্বহিত সুখ পানে।

সকলে ধরি হাতে হাতে,
চলহে আগে, চলহে সাথে,
গাহ শত কণ্ঠ মিলি একতানে।

বন্দি যাচে বন্ধুজনে,
যুবকজন সম্মিলনে ;
ওহে ঈশ, আশীষ করুণা-দানে।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
বঁধূয়া, নিঁদ্ নাহি আঁখি-পাতে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “বিবিধ” পর্বের গান।

॥ বেহাগ॥

বঁধূয়া, নিঁদ্‌ নাহি আঁখি-পাতে!
আমিও একাকী, তুমিও একাকী, আজি এ বাদল-রাতে!

ডাকিছে দাদুরী মিলন-তিয়াসে,
ঝিল্লী ডাকিছে উল্লাসে ;
পল্লীর বঁধূ বিরহী বঁধূরে,
মধুর মিলনে সম্ভাষে ;
আমারো যে সাধ বরষার রাত কাটাই নাথের সাথে!
---নিঁদ্ নাহি আঁখি-পাতে !

গগনে বাদল, নয়নে বাদল, জীবনে বাদল ছাইয়া ;
এস হে আমার বাদলের বঁধু, চাতকিনী আছে চাহিয়া!
কাঁদিছে রজনী তোমার লাগিয়া,
স্বজনী তোমার জাগিয়া!
কোন্ ‌অভিমানে, হে নিঠুর নাথ,
এখনও আমারে ত্যাগিয়া?
এ জীবন-ভার হয়েছে অবহ, সঁপিব তোমার হাতে!
---নিঁদ্‌ নাহি আঁখি-পাতে!

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কেন যে গাহিতে বলে, জানে না জানে না তারা
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “বিবিধ” পর্বের গান।

॥ খাম্বাজ॥

কেন যে গাহিতে বলে, জানে না, জানে না তারা ;
সে সুরে গাহিতে চাহি আমি যে সে সুরহারা !

যে সুরে শিশুরা হাসে, যে সুরে ফুল বিকাশে,
যে সুরে প্রভাতে পাখী বরষে অমৃত-ধারা !

যে সুরে নাচে পতঙ্গ, যে সুরে নাচে তরঙ্গ,
যে সুরে নাচে গগনে, ঘুরে ঘুরে শশীতারা !

সংসারের পোষা পাখী, জীবন-পিঞ্জরে থাকি,
শিখেছি শেখান কথা, তাই গেয়ে হই সারা।

যে কাননে মোর বাসা, ভুলে গেছি তার ভাষা,
শেখা কাঁদা, শেখা হাসা, জানিনে গো তাহা ছাড়া!

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
এস হে, এস হে প্রাণে, প্রাণসখা
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “বিবিধ” পর্বের গান।

॥ কানাড়া॥

এস হে, এস হে প্রাণে, প্রাণসখা !
আঁখি তৃষিত অতি, আঁখিরঞ্জন,
আঁখি ভরিয়া মোরে দেহ দেখা !

খুলিয়া প্রাণের আধ লাজ-বসন,
জীবন-মন্দিরে পেতেছি আসন ;
বস হে বিরহ-ক্লেশ-নাশন,
কণ্ঠে লহু মম মালিকা ।

উন্মাদ এ তরঙ্গ ;
উথলিছে ভীষণ ভঙ্গ !
ঘোর তিমির ঘেরি দশ দিক্‌;
এস হে নবীন নাৰিক!
জীবন-তরী মাঝে নাহিক কাণ্ডারী ;
প্রেম-পারাবারে আমি একা !

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর