কবি অতুলপ্রসাদ সেনের গান
*
আমার আঙ্গিনায় আজি পাখী গাহিল এ কি গা
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “বিবিধ” পর্বের গান।

॥ আসোয়ারী॥

আমার আঙ্গিনায় আজি পাখী গাহিল এ
কি গান!
শুনিনি এমন গাওয়া--হেন মরম-ভেদী
বাণ।

যে করেছে অবহেলা, আমার গানের মালা,
আজি কি পাখীর গলায় তার গলার প্রতিদান?

যে দিয়েছে এত ব্যথা, মনে হয় এ তারই কথা ;
বুঝি গো ভিজেছে আজি তার নিঠুর দু
নয়ান!

বল্‌ রে অজানা পাখী, তুই তার দূত নাকি ?
এত দিনে ভাঙ্গিল কি তার গভীর অভিমান ?

মোর প্রাণের গানটি শিখি, বনে যা তুই বনের পাখী ;
বুঝায়ে কহিস্‌ তাহারে, আমি তার বগিয়া ধরি প্রাণ।


.      ****************                
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
আমার পরান কোথা যায়, কোথা যায় উড়ে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের গান।

॥ হাম্বীর॥

আমার পরান কোথা যায়, কোথা যায় উড়ে !
কে যেন ডাকিছে মোরে, দূর সাগর-পারে
বিরহবিধুর সুরে।
বাতাসে তাহারই কথা, তরঙ্গে তারই বারতা,
জোছনা পথ তার দেখায় দেখায় দূরে।
হে অধীর হে উদাসী, হে মম অন্তরবাসী,
কাহার শুনিলে বাঁশি, কোন্‌ প্রেমের পুরে?
যে দিগন্তে নীলাম্বরে চুম্বিছে সে নীলাম্বুরে,
সেথা মোর নীলকান্ত চায়, মোরে চায়,
ওগো, চায় কত মধুরে !

.      ****************                
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
সে ডাকে আমারে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের গান।

॥ ভৈরবী॥

সে ডাকে আমারে।
বিনা সে সখারে রহিতে মন নারে! ---
প্রভাতে যারে দেখিবে বলি
দ্বার খোলে কুন্থম-কলি,
কুঞ্জে ফুকারে অলি যাহারে বারে বারে,
নিঝর-কলকণ্ঠ-গীতি বন্দে যাহারে,
শৈল-বন-পুষ্পকুল নন্দে যাহারে,
যার প্রেমে চন্দ্র তারা
কাটে নিশি তন্দ্রা-হারা,
যার প্রেমের ধারা বহিছে শত ধারে।

.      ****************                
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ওগো সাথী, মম সাথী, আমি সেই পথে যাব সাথে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের গান।

॥ কীর্তন॥

ওগো সাথী, মম সাথী, আমি সেই পথে যাব সাথে,
যে পথে আসিবে তরুণ প্রভাত অরুণ-তিলক-মাথে।

যে পথে কাননে আসে ফুলদল,
যে পথে কমলে পশে পরিমল,
যে পথে মলয় আনে সৌরভ শিশিরসিক্ত প্রাতে।---
আমি সেই পথে যাব সাথে।

যে পথে বধূরা যমুনার কূলে
যায় ফুল হাতে প্রেমের দেউলে,
ষে পথে বন্ধু বন্ধুর দেশে চলে বন্ধুর সাথে।---
আমি সেই পথে যাব সাথে।

যে পথে পাখিরা যায় গো কুলায়,
যে পথে তপন যায় সন্ধ্যায়,
সে পথে মোদের হবে অভিসার শেষ তিমির-রাতে।

.      ****************        
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
তব চরণতলে সদা রাখিয়ো মোরে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের গান।

॥ জৌনপুরী॥

তব চরণতলে সদা রাখিয়ো মোরে ;
দীনবন্ধু করুণাসিন্ধু, শান্তি-সুধা দিয়ো চিত্ত-চকোরে।

কাঁদিছে চিত “নাথ” “নাথ” বলি
সংসার-কান্তারে সুপথ ভুলি ;
তোমার অভয় শরণ আজি মাগি---
দেখাও পথ আজ তিমিরে।

মন্দ ভালো মম সব তুমি নিয়ো,
দুঃখী-জন-হিত সাধিতে দিয়ো ;
হে নারায়ণ, দীন রূপে আসিয়ো,
বাঁধিয়ো সবে মম প্রেমভোরে।

.      ****************        
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
এড়াতে পারলে না আজ প্রভাতে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের গান।

॥ আশাবরী॥

এড়াতে পারলে না আজ প্রভাতে ;
আমার ফুলের ফাঁদে পড়লে ধরা গন্ধে আর ওই শোভাতে।

ভেবেছিলে গোপন রেণু ঢাকবে তোমার মোহন বেণু ;
লুকাতে পারলে না গো সুন্দরের এই সভাতে।

দুঃখশোকের ভগ্ন ভিতে এসেছিলে অলক্ষিতে,
স্বার্থ-সুখের দুয়ার দিয়ে পথ পেলে গো পালাতে।

আমার বঁধুর আনাগোনা, কোন্‌ পথে তা কেউ জানে না।
শুধু নূপুর যায় গো শোনা পথিকের মন লোভাতে।

.      ****************        
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
এসো গো একা ঘরে একার সাথী
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের গান।

॥ জয়জয়ন্তী॥

এসো গো একা ঘরে একার সাথী।
সজল নয়নে বল র'ব কত রাতি?

সুনীল আকাশে চন্দ্র বিকাশে, তামস নাশে ;
এ আXধারে হাসিবে কবে তব মুখ-ভাতি?

তোমারে গোপন ব্যথা জানাব গোপনে,
তোমারে কুসুমমালা পরাব যতনে।

তব সঙ্গ মাগি আছি আমি জাগি, সরব-তেয়াগী ;
তব চরণ লাগি আছি কান পাতি।

.      ****************        
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
যখন তুমি গাওয়াও গান তখন আমি গাই
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের গান।

॥ সিন্ধু কাফি॥

যখন তুমি গাওয়াও গান তখন আমি গাই।
গানটি যখন হয় সমাপন তোমার পানে চাই।

আরও কি মোর গাইতে হবে? নয়ন-জলে নাইতে হবে?
আরও কি মোর চাইতে হবে--- দিলে না যা তাই?

যে সুর ভুমি গেয়েছিলে, যে কথাটি কয়েছিলে,
বারে বারে আমি তারে যাই যে ভুলে যাই।

এবার তুমি বিজন রাতে গানটি ধরো আমার সাথে,
তোমার ওই তানপুরাতে সুরটি মোর মিলাই।

.      ****************        
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
আমি বাঁধিনু তোমার তীরে তরণী আমার
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের গান।

॥ মিশ্র খাম্বাজ॥

আমি বাঁধিনু তোমার তীরে তরণী আমার।
একাকী বাহিতে তারে পারি নে যে আর।

প্রভাতহিল্লোলে ভুলে, দিয়েছিনু পাল তুলে,
ভাবি নি হবে সহসা এমন আঁধার।

ঝড়েতে বাঁধন টুটে দিশাহারা এনু ছুটে,
তাই তরী তব তটে লাগিল এবার।

এখনো যা-কিছু আছে, তুলে লহো তব কাছে,
রাখো এই ভাঙা নায়ে চরণ তোমার।

.      ****************        
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ওরে বন, তোর বিজনে সংগোপনে কোন্‌ উদাসী থাকে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের প্রকৃতি পর্যায়ের গান।

॥ বাউল॥

ওরে বন, তোর বিজনে সংগোপনে কোন্‌ উদাসী থাকে?
আমার মনের বনের উদাসীরে ডাকে সে আজ ডাকে।

নিজে সে নীরব হয়ে রয়,
শোনে সে ফুল যে কথা কয় ;
তরুর হিয়া আলিঙ্গিয়া লতার অনুনয়,
শোনে সে লতার অনুনয়।
পাখিদের প্রগল্ভতা দেয় কি ব্যথা তাকে।

কেউ তারে পায় নাকো ডাকি,
থাকে সে সদাই একাকী ;
কোন্‌ একাকী করল তারে এমন একাকী?
তারে বৃথা খোঁজে চন্দ্র তপন পাতার ফাঁকে ফাকে।

আজি মন বিবাগী চঞ্চল,
বিরহে চক্ষু ছল ছল্ ;
সদাই ভনে--- ওই বিজনে আমায় নিয়ে চল্‌ !
ওরে মোর পাগ্ লা  পরান, পাবি কি তুই তাকে?

.      ****************        
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর