কবি অতুলপ্রসাদ সেনের গান
*
মেঘেরা দল বেঁধে যায় কোন্‌ দেশে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের প্রকৃতি পর্যায়ের গান।

॥ বাউল-কীর্তন॥

মেঘেরা দল বেঁধে যায় কোন্‌ দেশে,
ও আকাশ, বল্‌ আমারে।
কেউ-বা রঙিন ওড়না গায়ে, কেউ সাদা, কেউ নীল বেশে।

তারা কোন্‌ যমুনার নীরে ভরবে গাগরি,
কার বাঁশরি শুনল এরা সাগর-নাগরী, মরি মরি!
তারা বাজিয়ে নূপুর ঝুমুর ঝুমুর, যায় চ'লে কার উদ্দেশে? ---
ও আকাশ, বল্‌ আমারে।

কভু বাজিয়ে ডমরু তারা উল্লাসে নাচে,
কভু ভানুর সনে খেলে হোলি প্রভাতে সাঁঝে, মরি মরি!
তারা বিধুর সনে কি কথা কয় উজল মধুর হেসে ! ---
ও আকাশ, বল্‌ আমারে।

আকাশ, বল্‌ রে আমায় বল্‌, আমার আঁখি-জল
তাদের মতো জীবনখানি করবে কি শ্যামল--- আমায় বল্‌ রে।
আমি তাদের মতো আমার বঁধুর সনে মধুর খেলা
খেলব কি দিনের শেষে?
ও আকাশ, বল্‌ আমারে।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
আইল আজি বসন্ত মরি মরি
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের প্রকৃতি
পর্যায়ের গান।

॥ বাহার॥

আইল আজি বসন্ত মরি মরি,
কুসুমে রঞ্জিত কুঞ্জমঞ্জরী।
অলি আনন্দিত নাচে গুঞ্জরি,
পিক পুলকিত গাহে কুহরি।

নৃত্য করে কত বাল-বালিকা,
কণ্ঠে শোভে নব কুন্দ-মালিকা ;
আনিছে সুন্দরী শূন্য গাগরি,
সুখে লহে প্রেমবারি ভরি ভরি ৷

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
মোরে কে ডাকে--“আয় রে বাছা, আয় আয়”
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের স্বদেশ
পর্যায়ের গান।

॥ পিলু বারোয়াঁ॥

মোরে কে ডাকে--“আয় রে বাছা, আয় আয়”!
বহুদিন পরে যেন মায়ের কথা শোনা যায়।

ওগো, তোমার করুণ স্বরে
আপন জনে মনে পড়ে---
যাদেরে ফেলি’ ধূলি-’পরে
আছি রত নিজ-সেবায়।

ও সুধাবাণী মরমে পশি
পড়িছে মনে স্নেহরাশি ;
আজি আপন দেশে পরবাসী
থাকিতে মন নাহি চায়।

মা, তোমার করি' অপমান
লভেছি বহু যশ মান ;
আজ লাজে অতি ম্রিয়মাণ
এ মুখ দেখাতে তোমায়।

মা, ডাকিলে যদি স্নেহ-ভাষে
রাখিয়ো সদা তব পাশে ;
তুচ্ছ ধন-পদ-আশে
আর না যেন দিন যায়।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কত কাল রবে নিজ যশ-বিভব-অন্বেষণে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের স্বদেশ
পর্যায়ের গান।

॥ কীর্তন॥

কত কাল রবে নিজ যশ-বিভব-অন্বেষণে?
দু দিনের ধনের লাগি ভুলিলে পরম ধনে !

ঘরেতে ধন কর পুঁজি, সঙ্গে নেবে ভাব বুঝি?
দীনের দুঃখ করো হে মোচন, দীনের অভাব নাই এ দেশে।
দীনের ধনেই ধনী তোমরা--- দীনবন্ধু হবেন সুখী।
দীনের দুঃখ করো হে মোচন, পুণ্য হবে ধন-অরজনে।

দুটি ঘরে জ্ঞানের আলো, কোটি ঘরে আঁধার কালো ;

এ আঁধার ঘুচাতে হবে--- নইলে এ দেশ এমনি রবে।
দানেই এ জ্ঞান দ্বিগুণ হবে--- এরাও তোমার মায়ের ছেলে।
এ আঁধার ঘুচাতে হবে যতনে, অতি যতনে।

পুরানো সে ত্যাগের কথা হৃদয়ে কি দেয় না ব্যথা?
সেই দেশের মানুষ তোমরা---
যেথা রাজার ছেলে হ'ত ফকির, যেথা পরের তরে ঝরত আঁখি ;
যেথা ধন হতে প্রেম ছিল বড়ো, যেথা ধনী ছিল দীনের অধীন।
সেই দেশের মানুষ তোমরা--- সে কথা কি আছে মনে?

কেন এলে তবে মানবের ভবে রবে যদি নিজ কাজে?
সবাকার মান হোক তব মান, অপমান পর-লাজে। ---
সে দিন কবে বা হবে?
জাতিকুল-অভিমান, দ্বেষ-নিন্দা-ভেদজ্ঞান,
ভারতে আনিল মরণ--- ভাই হে।
কবে হবে এ সুমতি, সবার উন্নতি হইবে সবারই সাধন---
হেন সাধন আর নাই হে।

এ-হেন সাধনে জীবনে মরণে পূজিব হে প্রেমসিন্ধু।
মোরা পূজিব তোমায়
সেবার কুসুম কুড়াইয়া, নিজের পূজা ঘুচাইয়া,
পরের দুঃখ ঘুচাইয়া, ভারতের আশা পূরাইয়া।
তব পদে ঠাঁই যেন সবে পাই--- দয়া করো দীনবন্ধু।
ওহে দীনবন্ধু, তুমি দীনজনের লও প্রণতি, নমো দীনবন্ধু।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
পরের শিকল ভাঙিস পরে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের স্বদেশ
পর্যায়ের গান।

॥ মিশ্র বেহাগ॥

পরের শিকল ভাঙিস পরে,
নিজের নিগড় ভাঙ রে ভাই।
আপন কারায় বন্ধ তোরা,
পরের কারায় বন্দী তাই।

হা রে মুর্খ, হা রে অন্ধ,
ভাইয়ে ভাইয়ে করিস দ্বন্দ্ব!
দেশের শক্তি করিস মন্দ---
তোদের তুচ্ছ করে তাই সবাই।

সার ত্যজিয়ে খোনার বড়াই !
তাই মন্দিরে মসজিদে লড়াই।
প্রবেশ ক'রে দেখ্ রে দু ভাই---
অন্দরে যে একজনাই।

দেশ-মাতার আর বিশ্ব-মাতার
ম্লেচ্ছ কাফের এক পরিবার।
নয় তুরস্ক, নয়কো তাতার---
জন্ম-মৃত্যু এই যে ঠাঁই।

ভিন্ন জাত আর ভিন্ন বংশ---
এক জাতি তাই এক শো অংশ।
হিন্দু রে, তুই হুবি ধ্বংস
না ঘুচালে এই বালাই।

ভাইকে ছুঁলে পদতলে
শুদ্ধ হোস তুই গঙ্গাজলে ;
ওরে সেই অছুঁৎ ছেলেই তুলে কোলে
তুষ্ট হন যে গঙ্গা-মাঈ।

খাবি নে জল ভাইয়ের দেওয়া?
খাস নে অন্ন তাদের ছোঁওয়া?
ওরে, শবরীর আধ-খাওয়া মেওয়া
রঘুনাথ তো খেলেন তাই।

তোরাই আবার সভাস্থলে
হাঁকিস সাম্য উচ্চরোলে,
সম-তন্ত্র চাস সকলে---
বিশ্বপ্রেমের দিস দোহাই!

জাতির গলায় জাতের ফাঁস,
ধর্ম করছে ধর্মনাশ,
নিজের পায়ে পরলি পাশ,
দাসত্ব ঘোচে না তাই।

ছাড়্ দেখি রে রেষারেষি,
কর্‌ প্রাণে প্রাণে মেশামেশি।
তখন তোদের সব বিদেশী
দাস না ব'লে বলবে ভাই।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
তাহারে ভুলিবে বলো কেমনে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের মানব
পর্যায়ের গান।

॥ ভৈরবী॥

তাহারে ভুলিবে বলো কেমনে?
গাঁথা যে সে তব শত গানে যতনে।

কি হবে রুধিয়া দোর? ভাঙা যে হৃদয় তোর।
মানিবে না মন-চোর বাহিরের বারণে।

যাবি কোন্‌ দূর বিজনে পাসরিতে সেই জনে?
সেথাও তো গাহে পাখি কাননে।

সেথাও তো ফোটে ফুল, বরষা বিরহাকুল ;
সেথাও তো ওঠে চাঁদ রজনীর গগনে।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
*
কে তুমি বসি নদীকুলে একেলা
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের মানব
পর্যায়ের গান।

॥ মিশ্র কালাংড়া॥

কে তুমি বসি নদীকুলে একেলা?
কার লাগি এত উতলা?
কে তরী বাহি আসিবে গাহি?
খেলিবে তার সনে কি খেলা?

সারা বেলা গাঁথ' মালা---
ঘরের কাজে এ কি হেল?
ছলনা করি আন' গাগরি
কার লাগি বলো অবেলা?

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কে গো তুমি আসিলে অতিথি মম কুটিরে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের মানব পর্যায়ের গান।

॥ খাম্বাজ॥

কে গো তুমি আসিলে অতিথি মম কুটিরে?
কবে যেন দেখেছি তোমারে আমি
কুঞ্জ-কুসুম হাতে ফিরিতে যমুনা-তীরে।

ও দুটি নয়ন-মণি                        চিনি যে গো আমি চিনি,
কাজল মধূপ-ছায়া দেখেছি ফুল-শিশিরে।

জানি ও উজল হাসি,                         বিষাদ-তামস-নাশী,
দেখেছি বঙ্কিম ধনু নীল-নীরদ-নীরে।

হৃদয়-মাধুরী তব,                           কি অতুল, অভিনব!
দেখি নি হেন বিভব, হৃদয় আসে না ফিরে।

আমার কুসুম-বীথি                        সফল করো অতিথি ;
লহো পূজা নিতি নিতি ভগন মনো-মন্দিরে।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ঘন মেঘে ঢাকা সুহাসিনী রাকা
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের মানব পর্যায়ের গান।

॥ কীর্তন॥

ঘন মেঘে ঢাকা                        সুহাসিনী রাকা
তুমি কি গো সেই মানিনী?
বাদল-নিঝরে                            শুধু মনে পড়ে
সে দুরি কাজল ঝরিনী।

এ ঘোর আঁধারে সে খোঁজে তোমারে,
“এসো বধু” বলি ডাকে বারে বারে।
বিরহীর লাগি আছ কি গো জাগি?
কাটে কি কাঁদিয়া যামিনী?

ক্রুদ্ধ আকাশ, রুদ্ধ দুয়ার---
তুমি কি গো তারই সেই মুখভার?
সহসা বিজলি উঠিছে উজলি---
তুমি কি গো সেই দামিনী?

কাটি যাবে যবে বরষার রাত
আসিবে হাসিয়া সোনার প্রভাত,
তেমতি হাসিয়া, হৃদি বিলাসিয়া,
আসিয়ো মধুরহাসিনী ৷

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
॥ মিশ্র তিলোক-কামোদ কীর্তন॥

জানি জানি তোমারে গো রঙ্গরানী,
শূন্য করি লইবে মম চিত্তখানি।

এসো গো মম অন্তরে                        ধীরে মৃদু মন্থরে,
বিদ্যুৎ-প্রবেশে তব শঙ্কা মানি।

বলো গো অয়ি চঞ্চলে,                এনেছ ও কি অঞ্চলে?
দিবে কি মোরে ভরিয়া দুটি পাণি?

তব চরণ-রন্ ঝনা                করিবে কি গো বঞ্চনা---
কুহক-কল-কণ্ঠে এ কি বাণী গায়!

কি সুধা তব সংগীতে,                কি শোভা তনুভঙ্গিতে ;
ভুলায় তব ইঙ্গিতে কি মোহ আনি’!

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
জানি জানি তোমারে গো রঙ্গরানী
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের মানব পর্যায়ের গান।
গানটি
শুনুন কবিকণ্ঠে। ভিডিওটি সৌজন্যে Surajit Sen YouTube Channel.