কবি অতুলপ্রসাদ সেনের গান
*
মুরলী কাঁদে রাধে রাধে ব'লে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের মানব
পর্যায়ের গান।

॥ আশাবরী॥

মুরলী কাঁদে রাধে রাধে ব'লে,
শ্যামসুন্দর, হায়, ভাসে নয়নজলে।

দেখো যমুনা-জলে শূন্য তরী দোলে।
শূন্য ঝোলে ঝুলা নীপতরুতলে।---
রাধে রাধে ব’লে।

কুঞ্জে নীরব পাখি, পুচ্ছ মেলে না শিখী,
পবন থাকি থাকি দীরঘ নিশাস ফেলে।
এসো গো মানিনী, মাধো-বিমোহিনী,
এসো বিরহিণী, এসো বঁধু-গলে---
শ্যাম শ্যাম ব'লে।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
যদি তোর হৃদ্-যমুনা হল রে উছল
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের বিবিধ
পর্যায়ের গান।

॥ বাউল কীর্তন॥

যদি তোর হৃদ্-যমুনা হল রে উছল, রে ভোলা,
তবে তুই এ কূল ও কূল ভাসিয়ে দিয়ে চল্‌, রে ভোলা।

আজি তুই ভরা প্রাণে ছুটে যা নৃত্যে গানে ;
যে আসে প্রেম-প্লাবনে ভরিয়ে দিয়ে চল্‌, রে ভোলা।

যে আসে মনের ছুখে, যে আসে ফুল্ল মুখে,
টেনে নে সবায় বুকে, তোর থাক্‌-না চোখে জল, রে ভোলা ।

দু ধারে ফুল কুড়িয়ে চলে যা মন জুড়িয়ে ;
মালা তোর হলে বিফল করবি কি তুই বল্‌, রে ভোলা।

মিছে তোর সুখের ডালি, মিছে তোর দুখের কালি ;
দু দিনের কান্না-হাসি, ছল ছল ছল, রে ভোলা।

জীবনের হাটে আসি বাজা তুই বাজা বাঁশি,
থাক্-না সেথা বেচাকেনার দারুণ কোলাহল, রে ভোলা।

অরূপের রূপের খেলা চুপ করে তুই দেখ্  দু বেলা ;
কাছে তোর এলে কুরূপ, তুই মুখ ফিরিয়ে চল্‌, রে ভোলা।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভোল্‌ রে, ভোলা, ভোল্‌
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের বিবিধ
পর্যায়ের গান।

॥ ভৈরবী॥

ভোল্‌ রে, ভোলা, ভোল্‌।
ভুলে যা কাঁটার ব্যথা,
ফুলগুলি তুই তোল্‌।

কে গেল ছলন করে
কে গেল দলন করে
এখনও তাই ভেবে কি
চিত্তে দিবে দোল্‌।
ভোল্‌ রে ভোলা, ভোল্‌।

যে তোরে খুঁজি খুঁজি
হরে লয় সকল পুঁজি
তারে তুই বন্ধু জেনে
অঙ্গে দে রে কোল।

দাঁড়া তুই সবার পিছু,
যে নিচু সেই তো উঁচু,
ভুলে যা দশের নিন্দা,
যশের উচ্চ রোল।
ভোল্‌ রে ভোলা, ভোল্‌।

কুরূপের তীক্ষ্ণ বাণে
যদি তোর হৃদয় হানে,
চেয়ে দেখ্ নিশীথিনীর
নয়ন সুনিটোল।

আছে তোর গানের তরী,
আছে তোর প্রেমের হরি,
ভুলে যা ঝড়ের বাধা,
খোল্‌ রে নোঙর খোল্।
ভোল্‌ রে ভোলা, ভোল্‌।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভোলা, তুই তাঁর চরণে মাথা ঠেকা
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের বিবিধ পর্যায়ের গান।

॥ বাউল॥

ভোলা, তুই তাঁর চরণে মাথা ঠেকা।
এবার তুই অনেক দিনে পেলি দেখা।

কঠিনে হৃদয় পিষে,                        নয়নের জলে মিশে,
যে চন্দন পেলি রে তুই, ওরে একা,
আজি তুই সে চন্দনে পর্‌ কপালে টিপের রেখা।

হয়তো পুঁজি হবে খালি,                 শুন্য হবে যশের থালি,
করিস নে ভয়, তাই হবে যা আছে লিখা।
শুধু তুই রাখ জালিয়ে প্রাণের কোণে প্রেমের শিখা।

সকল ব্যথা তুচ্ছ ক'রে                রাঙা চরণ থাকিস ধ'রে,
দুখের মাঝেই পাবি রে তুই সুখের দেখা ;
এসেই দেখাতেই হবে রে তোর সকল শেখা।
ভোলা, তুই তাঁর চরণে মাথা ঠেকা।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
আবার তুই বাঁধবি বাসা কোন্‌ সাহসে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের বিবিধ পর্যায়ের গান।

॥ ভৈরবী॥

আবার তুই বাঁধবি বাসা কোন্‌ সাহসে?
আশা কি আছে বাকি হৃদয়-কোষে?

কতবার গড়্ লি  রে ঘর,
কতবার এল রে ঝড়,
কতবার ঘরের বাঁধন পড়ল খ'সে।

বাহিরের মুক্ত মাঠে
যেন তোর জীবন কাটে ;
কেন তুই ক্ষুদ্র বাটে থাকবি ব’সে?

সবারে কর্‌  রে আপন,
হ রে তুই সবার আপন ;
ভুলে যা দুখের দাহন
ডুব দিয়ে গান-সুধার রসে।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ও গো দুঃখী, কাঁদিছ কি সুখ লাগি
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের বিবিধ
পর্যায়ের গান।

॥ মিশ্র পিলু॥

ও গো দুঃখী, কাঁদিছ কি সুখ লাগি?
সুখের যাতনা জান নাকি?

কুসুম দু-দিনে শুকায়ে যায়
থকে শুধু কাঁটা তার বোঁটায় ;
থাকে কেতকী-বনে ফণী জাগি।

মিলনে সদাই বিরহ-ভয় ;
সে জয়ী ষে জন বেদন সয়।

দুখের দাহনে হও অমল,
মুছাও দুঃখীর আখির জল।---
পেতে যদি চাও, হও ত্যাগী।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
এসো প্রবাসমন্দিরে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের বিবিধ
পর্যায়ের গান।

॥ কাফি॥

এসো প্রবাসমন্দিরে,
এসো গো বঙ্গভারতী।
দীন প্রবাসী বঙ্গজনের
লহো গো দীন আরতি।

যতনে তুলিয়া প্রবাসফুল
পূজিব তোমার চরণমুল ;
আসিবে নূতন ভকতকুল,
করিবে চরণে প্রণতি।

তোমার বীণার মোহন তান
মোহিবে নিখিল-ভারত-প্রাণ,
গৌড়জনের গৌরব মান
লভিবে নবীন শকতি।

সুজলা সুফলা ওগো শ্যামা,
ওগো বাঙালি-হৃদি-রমা,
ভোলে নি তোমায় ভোলে নি মা,
তোমার প্রবাসী সন্ততি ৷

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
থাকো সুখে, তুমি থাকো সুখে, তুমি থাকো সুখে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন        
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের বিবিধ
পর্যায়ের গান।

॥ মিশ্র॥

থাকো সুখে, তুমি থাকো সুখে, তুমি থাকো সুখে।
তাঁর অভয় চরণ রাখো বুকে। ---থাকো সুখে, থাকো সুখে।

কাটে দিবস যামিনী, সবার হিতকামিনী,
সে পদ-অনুগামিনী।--- থাকো সুখে, থাকো সুখে।

সদয় হোক ভারতী, সত্য হোক সারথি,
সহো সকল সন্তাপ হাসিমুখে।--- থাকো সুখে।

নিন্দা দ্বেষ স্বার্থ প্রেমেতে করো ব্যর্থ,
ক্ষমাতে করো বন্ধু সব বিমুখে।--- থাকো সুখে।

হোক সফল প্রীতিবন্ধন, সফল হাসি-ক্রন্দন,
আনো জীবন-অঞ্জলি তাঁর সম্মুখে।--- থাকো সুখে।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
জয়তু জয়তু জয়তু কবি
কবি অতুলপ্রসাদ সেন        
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের বিবিধ
পর্যায়ের গান।

॥ নটমল্লার॥

জয়তু জয়তু জয়তু কবি,
জয়তু পূরব-উজল রবি।

জয় জগতবিজয়ী কবি,
জয় ভারতগৌরবরবি,
বঙ্গমাতার দুলাল “রবি”---
জয় হে কবি।

হে কবি, তোমার মোহন-তান
নিখিলজনের মোহিছে প্রাণ,
নানা ভাষা লভি’ তোমার দান
আজি গরবী---
হে বিশ্বকবি।

কভু বাজাও ভেরী গভীর সুর
কভু বাজাও বীণা মৃদুমধুর,
কভু বাজাও বেণু প্রেমবিধুর---
বিচিত্র কবি।

স্বদেশের শঙ্খ যবে বাজাও
সুপ্ত দেশবাসী-জনে জাগাও,
নবীন উৎসাহে সবে মাতাও
হে বীর কবি,
দেশপ্রেমী কবি।

বিশ্বের উদার সমতলে
ভারতীর দেউল তুলিলে,
দেশকালের ভেদ ভুলিলে---
কি নব ছবি ;
হে কর্মী কৰি।

বিশ্বেশ্বরের চরণতলে
তব গীতগঙ্গা সুধা ঢালে,
দুঃখী তাপিত জনে শীতলে,
হে দেবকবি।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রেমময়ে রাখিয়ো সদাই দোঁহে স্মরণে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
১৯৩১ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ থেকে প্রকাশিত কবির “গীতি-গুঞ্জ” গীতিগ্রন্থের বিবিধ পর্যায়ের গান।

॥ খাম্বাজ॥

প্রেমময়ে রাখিয়ো সদাই দোঁহে স্মরণে।
যে নব পথে যাত্রা করিলে আজি,
সবার আশিস লয়ে চলিয়ো নির্ভয় মনে।

সংসারের পথে হাঁটা,                  কত ফুল, কত কাঁটা ;
সকলি তাঁহারি দান--- ভুলো না কভু দু জনে ;

জীবনের সুখে দুখে                    থেকো সদা হাসিমুখে ;
সাধিয়ো আপন হিত সবার হিত-সাধনে।

মিলনে লভিয়ো শক্তি,                প্রেমেতে লভিয়ো মুক্তি ;
পূজার কুসুম হয়ে রহিয়ো তাঁর চরণে।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর