কবি অতুলপ্রসাদ সেনের গান
*
আসিল শীত খতু বায়ু আজি
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
২০০২ সালে ভারবি থেকে শোভন সোম দ্বারা সম্পাদিত “অতুলপ্রসাদ সেনের
শ্রেষ্ঠ কবিতা” কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া।

॥ ভূপালি॥

আসিল শীত খতু বায়ু আজি।
বহিছে শীতলিয়া জনমন মোহিয়া।
তিরপিত হও সবে সংগীত-পিপাসু
ভূপালি গাহিয়া।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
হরিনাম ভজন করো মন
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
২০০২ সালে ভারবি থেকে শোভন সোম দ্বারা সম্পাদিত “অতুলপ্রসাদ সেনের শ্রেষ্ঠ
কবিতা”, কাব্যসংকলনের অগ্রন্থিত-কবিতা অধ্যায় থেকে নেওয়া।

॥ কাতন॥

হরিনাম ভজন করো মন ( হরিনাম )।
নাম সংকট-তারণ, ভবভয়-বারণ,
তাপ-কলুষ-বিমোচন ( নাম )।
ও নাম গায় দেবগণ, গায় জীবগণ,
গায় তটিণী-গিরি-বন ;
ও নাম শ্রবণ-রঞ্জন, হৃদয়-নন্দন,
সাগর-মন্থন ধন ;
ও নাম গাও মোর বীণ, গাও নিশিদিন,
গাও হরি-গুণগান।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ওগো ক্রন্দসী পথচারিণী
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
২০০২ সালে ভারবি থেকে শোভন সোম দ্বারা সম্পাদিত “অতুলপ্রসাদ সেনের শ্রেষ্ঠ
কবিতা”, কাব্যসংকলনের অগ্রন্থিত-কবিতা অধ্যায় থেকে নেওয়া।

॥ পিলু - গজল॥

ওগো ক্রন্দসী পথচারিণী,
তুমি কোথা যাও, তুমি কারে চাও?
কী ব্যথা তব অন্তরে,
ও বিষাদিনী, মোরে বলে যাও।

বন্ধুর পথ অজানা,
বন্ধুর ঘর জানো না,
তুমি পথিকে কত শুধাবে---
“কোথা গেছে সে পথ বলে দাও?"

সংকটময় ভুবনে
চলিবে একা কেমনে?
কোন্‌ চঞ্চল তাড়নে
বঞ্চিলে নিজ ভবনে?

এসো গো অয়ি অঙ্গনে,
এসো গো এই অঙ্গনে,
দেখ তল্লাসি এই অন্তরে,
তুমি যারে চাও যদি তারে পাও।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ও জীবন-সুখের পথিক    
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
২০০২ সালে ভারবি থেকে শোভন সোম দ্বারা সম্পাদিত “অতুলপ্রসাদ সেনের শ্রেষ্ঠ
কবিতা”, কাব্যসংকলনের অগ্রন্থিত-কবিতা অধ্যায় থেকে নেওয়া।

॥ বাউল॥

ও জীবন-সুখের পথিক, ভুল পথে আর চলবি কত?
চলিয়ে অবিশ্রান্ত হলি ক্লান্ত, তার দেখা তুই পেলি না তো।

কতবার মোহের বশে, ভাবিলি ওই বুঝি সে,
গেলি তুই ঊর্ধ্বশ্বাসে কাছে হেসে ;
সুখ ভেবে কোল দিলি তারে, লাগল দুঃখের মতো!

পর-সুখ খুঁজবি যবে, নিজ-সুখ পাবি তবে,
ও পথিক, পথ চলা তোর সফল হবে ;
আপনারে হারাবি যত ঘরের পুঁজি বাড়বে ততো।

দুঃখে যে বুক ভাসাবে, সুখেতেই সেই হাসাবে,
তাঁর হাতে সঁপে দিয়ে চল্‌ রে পথিক চল্‌ রে ভবে ;
নয়নে সিঞ্চিলে জীবন অন্তরে ফুল ফুটবে শত!

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কে গো যায় যমুনায় জল আনিতে   
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
২০০২ সালে ভারবি থেকে শোভন সোম দ্বারা সম্পাদিত “অতুলপ্রসাদ সেনের শ্রেষ্ঠ
কবিতা”, কাব্যসংকলনের অগ্রন্থিত-কবিতা অধ্যায় থেকে নেওয়া।

॥ পিলু-খাম্বাজ॥

কে গো যায় যমুনায় জল আনিতে।
বিজলি করে কেলি তারি নীল সরিতে।
আঁখিতে-আঁখিতে হৃদয়ে রাখিতে
কেলে-সোনা আনাগোনা করে কদমতলাতে।

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
জননী বঙ্গ, তোমার সঙ্গ লভিয়া যদি গো  
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
২০০২ সালে ভারবি থেকে শোভন সোম দ্বারা সম্পাদিত “অতুলপ্রসাদ সেনের শ্রেষ্ঠ
কবিতা”, কাব্যসংকলনের অগ্রন্থিত-কবিতা অধ্যায় থেকে নেওয়া।

জননী বঙ্গ, তোমার সঙ্গ লভিয়া যদি গো
অঙ্গ আমার হয় না মা, ক্ষয় ;
তথাপি রঙ্গে ভ্রূকুটি-ভঙ্গে তুচ্ছ করিয়া
গাহিব জননী, তোমারি জয়।
লাঞ্ছিত আমরা যদিও জননী,
শোণিত-রঞ্জিত মোদের শির ;
বক্ষ ভেদিয়া বয়ে যায় গুলি,
তথাপি ফেলি না অশ্র-নীর।
মৃত্যু সতত করিছে নৃত্য শিয়রে মোদের,
তবু তো করি না কাহারে ভয়।
অভয়ার বরপুত্র আমরা
হাসিয়া করি মা, গরল পান ;
অনল-দাহন যদিও মা বুকে,
কণ্ঠ গাহিছে তোমারি গান।
সপ্ত কোটি সন্তান আমরা
তোমার লাগিয়া এনেছি অর্ঘ্য ;
তুমি গো জননী, দেবতা মোদের,
ধরায় তুনি মা, মোদের স্বর্গ!
যে পূজার মা গো, এত আয়োজন প্রাণ-বিনিময়ে
যেন সে যজ্ঞ পূর্ণ হয়!

.      ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
সাধে কি মা তোরে ডাকি
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
২০০২ সালে ভারবি থেকে শোভন সোম দ্বারা সম্পাদিত “অতুলপ্রসাদ সেনের শ্রেষ্ঠ
কবিতা”, কাব্যসংকলনের অগ্রন্থিত-কবিতা অধ্যায় থেকে নেওয়া।

.                সাধে কি মা তোরে ডাকি।
সাথের সাথী সব গিয়েছে, বিজন পথে একা রাখি।
মা তোরে আমি চাইনি বলে সবাই ফেলে গেছে চলে,
বাঁধব বলে বসে আছি হাত ভরা মোর রইল রাখী।
আনতে সাধের হরিণ ধরে, হারিয়েছি মা যা ছিল ঘরে,
আজ সুখের মায়া সোনার কায়া
.                খুব আমারে দেছে ফাঁকি।
নয়নে আজ এসেছে জল, খুঁজে পাইনে এখন আঁচল,
চিরদিনের বলে যে আঁচলে, নিঃশেষিয়ে মুছব আঁখি।
তুই বুঝি মা দয়া করে, আমার সকল পুঁজি নিলি হরে,
.                যদি একে-একে মন নিলি মা,
.                আমায় কেন রাখলি বাকি।

.                   ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
এল গো আজ চাঁদ-বদনী স্বর্ণ-উজল সাজে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
২০০২ সালে ভারবি থেকে শোভন সোম দ্বারা সম্পাদিত “অতুলপ্রসাদ সেনের
শ্রেষ্ঠ কবিতা”, কাব্যসংকলনের অগ্রন্থিত-কবিতা অধ্যায় থেকে নেওয়া।

এল গো আজ চাঁদ-বদনী স্বর্ণ-উজল সাজে।
ঢেউগুলি তাই নাচে ;
উল্লসিয়া কল্লোলিয়া ঢেউগুলি তাই নাচে।
নীল সাগরের বক্ষে আজি লক্ষ ঘুঙুর বাজে।

সোনার নায়ে সোনা-গায়ে কে এলে গো রানী!
ঘোমটাখানি টানি,
মাঝে-মাঝে নীলাম্বরীর ঘোমটাখানি টানি।
তোমার মনে কি আছে তা জানি ওগো জানি।

ঘরের বাহির করবে মোরে এই তো আছে মনে?
তাই তো সংগোপনে,
হাওয়ার সনে কানা-কানি তাই তো সংগোপনে ;
মেঘের আঁচল পড়ছে খসে তাই তো ক্ষণে-ক্ষণে!

আমি যদি আপন হতেই দিই তোমারে ধরা
মিথ্যে যতন করা।
অমন করে মন ভোলানোর মিথ্যে যতন করা।
তোমার তরেই বসে আছি, ওগো স্বয়ম্বরা।

.                   ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
খোল মা খোল মা দ্বার বহুদিন পরে প্রত্যাবর্তন
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
২০০২ সালে ভারবি থেকে শোভন সোম দ্বারা সম্পাদিত “অতুলপ্রসাদ সেনের শ্রেষ্ঠ
কবিতা”, কাব্যসংকলনের অগ্রন্থিত-কবিতা অধ্যায় থেকে নেওয়া।

খোল মা খোল মা দ্বার বহুদিন পরে
আজি এ তামসরাতে উল্কার আলোকে
পথ চিনি পুরাতন মাতৃগৃহে পুন
ফিরিয়া এসেছি ; মোরা কোটি পুত্র তোর,
নহি মা অতিথি ; স্নেহে ডেকে নে গো ঘরে।
নাহি সুখশয্যা পর্ণগৃহে তোর?---তাহে
ক্ষতি কি মা? আজি ধর্মদ্বেষ-জাতিগর্ব
ভুলি, কণ্ঠে-কণ্ঠে মিলি সহোদর সবে
তোর ক্রোড়ে সব ব্যথা জুড়াতে এসেছি, ....
মুষ্টিঅন্ন যাহা আছে তাই দেগো আজ
কোটি হস্তে বাটি লব মায়ের প্রসাদ
মিটাইব পূর্ণ করি প্রবল এ ক্ষুধা।
কোটি হস্তে ভরা শস্যে করিব শ্যামল
অচিরে প্রান্তর তোর কোটি পুত্র মিলি।
স্বেচ্ছায় ফেলিয়া দূরে মহার্ঘ বসন
ভিক্ষুকের বেশে মা গো এসেছি আমরা ;
খুলে দে খুলে দে দ্বার, অয়ি স্নেহময়ী।...

ঐ যে খুলিল দ্বার, মার মৌনমুখে
ঈষৎ হাসির রেখা ; হস্ত প্রসারিত
স্নেহে ; দে মা পদধূলি অধম সন্তানে।
আয় ভাই ত্যাগমন্ত্রে হইয়া দীক্ষিত
স্বার্থ করি বলিদান মার পদাম্বুজে,
তুলিয়া বঙ্গের পুষ্প বঙ্গ জননীরে
অর্ঘ্য করি দান ; ঘুচাই দুর্গতি ;
গগন ভরিয়া বলি, “বন্দে মাতরম্”,
“বন্দে মাতরম্” ---পুনঃ “বন্দে মাতরম্”।

.          ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
এনেছি, হে বিশ্বনাথ, এ সুপ্ত নিশীথে অর্ঘ্য
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
২০০২ সালে ভারবি থেকে শোভন সোম দ্বারা সম্পাদিত “অতুলপ্রসাদ সেনের শ্রেষ্ঠ
কবিতা”, কাব্যসংকলনের অগ্রন্থিত-কবিতা অধ্যায় থেকে নেওয়া।

এনেছি, হে বিশ্বনাথ, এ সুপ্ত নিশীথে
গুপ্ত অর্ঘ্য মোর ; অন্ধ আঁধারে সঞ্চিত
সুগন্ধ কুসুম, লক্ষ নাগ-সুরক্ষিত
কন্টক-কেতকী--- লহ তারে নাগ-নাথ!
একী বিশ্বেশ্বর! কেন বহে অশ্রুধার
ত্রিনেত্রে তোমার? পড়েছে কি মনে
শিবশূন্য দক্ষযজ্ঞে সতীর ক্রন্দন,
লাঞ্ছিত প্রেমের সেই চরম আহুতি?
জেগেছে কি পূর্বস্মৃতি, হে রুদ্র সন্ন্যাসী,
তোমার সে প্রণয়ের প্রলয়-নর্তন?
জাগিল কি মনে পার্বতীর প্রেমালাপ
মানস-সরসী-তটে নির্জন কৈলাসে?
লহ তবে, হে বৈরাগি, জাহ্নবীর তীরে
এ দীনের মহাদান পূত নেত্র-নীরে।

.          ****************       
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর