কবি অতুলপ্রসাদ সেনের গান
*
যবে মানবের বিচারশালায় অবিচার পাব দান
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “দেবতা” পর্বের গান।

॥ কীর্ত্তন॥

যবে মানবের বিচারশালায় অবিচার পাব দান ;
যখন লুকানো নিন্দা আমারে আঁধারে হানিবে বাণ ;
সহিব নীরবে, কহিব তখন,---
“তুমি জান, নাথ, তুমি জান!”

ভবের সভায় যশের মুকুট দেয় যদি তারা শিরে,
পারি যেন দিতে সরল বিনয়ে তাদের চরণে ফিরে ;
বলি যেন তাবে, “হীনতা আমার
তুমি জান, নাথ, তুমি জান!”

লক্ষের দিকে যদি আসে মেঘ বিপদের পাখা খুলে ;
যদি ভবপারে সবে ডাকে মোরে, “লাগাও তরণী কুলে’,
চলিব আঁধারে, বলিব তখন---
তুমি জান, নাথ, তুমি জান!”

ফুরায় যে সুখ, ফুরায় যে দুঃখ, না ফুরায় শুধু আশা ;
ভাঙ্গে যতবার গড়ি ততবার ধূলায় ধূলির বাসা ;
কেন এ যতন? কোথা সে রতন?---
“তুমি জান, নাথ, তুমি জান!”

.              ****************                
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
হে দীনবন্ধু, পার কর
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “দেবতা” পর্বের গান।

॥ ভৈরবী॥

হে দীনবন্ধু, পার কর।
পার কর তরী, পার কর, পার কর।
বিশাল সিন্ধু দুস্তর--পার কর।

ভাঙ্গা এ ভেলা,                আমি একেলা,
দূরে গরজে জলধর ;
হে ভয়হারী, ভয় হর।

মোহ কুয়াশায়,               দিক নাহি ভায়
হে ভবমাঝি, হাল ধর।

জীবন তরী                       কলুষে ভরি
শূন্য করি তব ঠাঁই কর,
হে দীনত্রাতা, দীনে তর।

.              ****************                
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
হরি হে, তুমি আমার সকল হবে কবে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “দেবতা” পর্বের গান।

॥ কানাড়া॥

হরি হে, তুমি আমার সকল হবে কবে?
আমার মনের মাঝে ভবের কাজে মালিক হয়ে রবে----কবে?

আমার সকল সুখে, সকল দুঃখে,
তোমার চরণ ধর্ ব বুকে ;
কণ্ঠ আমার সকল কথায়
তোমার কথাই ক’বে।

কিন্ ব  যাহা ভবের হাটে ;
আন্ ব  তোমার চরণ বাটে ;
তোমার কাছে, হে মহাজন,
সবই বাঁধা রবে---কবে?

স্বার্থ-প্রাচীর করে খাড়া,
গড়ব যবে আপন কারা,
বজ্র হয়ে তুমি তারে
ভাঙ্গবে ভীষণ রবে।

পায়ে যখন ঠেল্ বে সবাই,
তোমার পায়ে পাইব ঠাঁই ;
জগতের সকল আপন হতে
আপন হবে---কবে?

শেষে, ফির্ ব  যখন সন্ধ্যাবেলা,     সাঙ্গ করে ভবের খেলা,
জননী হয়ে আমায় কোল বাড়ায়ে ল'বে।

.              ****************                
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
পরাণে তোমারে ডাকিনি, হে হরি
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “দেবতা” পর্বের গান।

॥ কীর্ত্তন॥

পরাণে তোমারে ডাকিনি, হে হরি,
ডেকেছি শুধুই গানে ;
তাইত তোমারে পাইনি জীবনে ;
ফিরেছি শূন্যপ্রাণে।

তুমি চাহ প্রাণ, নাহি চাহ ভাষা ;
চাহ দীনবেশ, নাহি চাহ ভূষা ;
গাহিনি সে গান তুমি শুন যাহা, আর কেহ নাহি শোনে।

তুমি সবাকার হতে আপনার,
সে কথা বুঝিতে বাকী নাহি আর ;
তবু শত ঠাঁই শতবার ধাই, চাহিনা চরণ পানে।

শিখাও আমারে গাহিতে সে সুরে,
যা শুনি থাকিতে পারিবে না দূরে ;
আসিবে হৃদয়ে তব বীণা লয়ে, মাতা’বে নূতন তানে।

.              ****************                
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
তবু তোমারে ডাকি বারে বারে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “দেবতা” পর্বের গান।

॥ সিন্ধু কাফি॥

তবু তোমারে ডাকি বারে বারে :
কত যে পেতেছি@ ব্যথা তব ব্যবহারে!

জানি না কেন যে দাও,                কাঁদায়ে ফিরাবে নাও,
তুমি ত ভোলনা বিধি নয়ন আসারে।

বল হে কবে জানিব,                  শ্মশানেতে তুমি শিব ;
তোমারে সুখে বরিব দুঃখের মাঝারে।

বুঝেছি সুখ যে মায়া,                 বুঝাও দুখও যে ছায়া,
তুমি যে রয়েছ সুখ দুঃখের ওপারে |

মনে হয় তব কাছে                       সব হারাধন আছে,
তাই ত এসেছি হে নাথ তোমার দুয়ারে।

.              ****************                

@ পেতেছি -
কথাটা সম্ভবত "পেয়েছি" হবে। গ্রন্থের মুদ্রণ প্রমাদ। ---মিলনসাগর॥


.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
দিয়েছিলে যাহা, গিয়াছে ফুরায়ে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “দেবতা” পর্বের গান।

॥ পূরবী॥

দিয়েছিলে যাহা, গিয়াছে ফুরায়ে
ভিখারীর বেশ তাই ;
ফুরায় না যাহা এবার সে ধন
তোমার চরণে চাই।

সুখ আমারে দেয় না অভয়,
দুঃখ আমারে কবে পরাজয় ;
যত দেখি তত বাড়িছে বিস্ময়,
যাহা পাই তা হারাই

ভবের মেলায় কতই খেল্ না
কিনিলাম, তবু সাধ ত গেল না ;
ঘাটে এসে দেখি কিছু নাই বাকি ;
কে দিবে তরীতে ঠাঁই !

দাও হে বিশ্বাস, দাও হে ভকতি,
বিশ্বের হিতে দাও হে শকতি ;
সম্পদে বিপদে তব শিব পদে
স্থান যেন সদা পাই।

.              ****************                
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রকৃতির ঘোমটাখানি খোল্ লো বঁধূ
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “প্রকৃতি” পর্বের গান।

॥ মিশ্রপাহাড়ী॥

প্রকৃতির ঘোমটাখানি খোল্‌লো বধু!
ঘোমটাখানি খোল্‌।
আছি আজ পরাণ মেলি, দেখব বলি’
তোর নয়ন সুনিটোল লো বধু!
নয়ন সুনিটোল।

কত আর নীরব র’বি,
কবে তুই ফিরে চাবি,
মোরে ব’রি ল’বি বধু।
কবে জীবন বাসর-বাটে
বাজ্ বে শঙ্খ ঢোল লো বধু!
বাজ্ বে শঙ্খ ঢোল?

আজি নিখিল কুঞ্জবনে,
মিল্ ব পরম বধুর সনে,
বড় সাধ মনে বধু।
এ মোহন রাতে, আমার সাথে
বিশ্ব দোলায় দোল্‌ লো বধু!
বিশ্বদোলায় দোল্!

.              ****************                
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কে গো তুমি, বিরহিনি, আমারে সম্ভাষিলে
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “প্রকৃতি” পর্বের গান।

॥ গজল॥

কে গো তুমি, বিরহিনি, আমারে সম্ভাষিলে?
এ পোড়া পরাণ তরে এত ভালবাসিলে?

কভু হরিত বসনে সাজি',
কুসুমে ভরিয়া সাজি,
মধুমাসে মধুহাসে মম পানে হাসিলে!
কে আমারে সম্ভাষিলে?

শারদে নিশীথে যবে
বিরহে রহি নীরবে,
পীত কায়ে মৃদু পায়ে মম পাশে আসিলে!
কে আমারে সম্তাষিলে?

কভু বাদলে ঢাকি বয়ান
করিলে গভীর মান,
দামিনীর গুরুভাষে আঁখি-নীরে ভাসিলে!
কে আমারে সম্তাষিলে?

আমি শ্যাম, তুমি, রাধা,
তাই বঁধূ এত বাধা ;
তুমিও হায় উদাসিনী, মোরেও উদাসিলে !
কে আমারে সম্ভাষিলে?

.              ****************                
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
আমার ঘুম ভাঙ্গান চাঁদ
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “প্রকৃতি” পর্বের গান।

॥ আসোয়ারী॥

আমার ঘুম ভাঙ্গান  চাঁদ!
আমার মন ভাঙ্গান চাঁদ!

তুমি যাও গো সরে।
বাতায়নে আমার পানে
চেওনা অমন করে।

বিধু, তুমি বধূর রূপে,
এলে ঘরে চুপে চুপে,
নয়নে করলে পরশ কিরণ-করে।

কয়ো না পুরাণ কথা,
দিয়ো না পুরাণ ব্যথা,
এনো না পুরান প্রদীপ আঁধার ঘরে।

জানি, ওগো সর্ব্বনাশী,
জানি তব মোহন হাসি,
জানি তব ভালবাসা দু'দিন তরে।

.              ****************                
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
বন দেখে মোর মনের পাখী
কবি অতুলপ্রসাদ সেন
কবির “কয়েকটি গান” গীতিগ্রন্থের, “প্রকৃতি” পর্বের গান।

॥ পিলু॥

বন দেখে মোর মনের পাখী
ডাক্ লো গো আজ ডাক্ লো গো!
অনেকদিনের ঘুম ভেঙ্গে সে
জাগ্ লো গো আজ জাগ্ লো গো!

হাত বাড়ায়ে অযুত শাখায়,
ডাকে বন, “আয়, আয়, আয়”;
ভাঙ্গি মোর সোনার খাঁচা
ভাগ্ লো গো সে ভাগ্ লো গো!

যেন আজ বিদেশ ছেড়ে,
ঘরেতে এল ফিরে ;
আপন দেশের শীতল হাওয়া
লাগ্ লো গো গায় লাগ্ লো গো!

সবুজের সহজ টানে,
মানা আর নাহি মানে;
অমৃতের ফল বুঝি আজ
পাক্ লো গো আজ পাক্ লো গো !

.              ****************                
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর