কথা ও কাঁথায় কবি শীলা বিশ্বাস কবির চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ “নির্বাচিত শূন্য” -এর কবিতা।
(এক) তোমাকে ঘুম পাড়াতে ঘুম ঘুম খেলি। ঘুমিয়ে গেলে সূঁচ আর রঙিন সুতোয় ঘর বাড়ি তুলে কথা ভ্রমনে বেরিয়ে পড়ি স্মৃতির ব্যাকপ্যাক নিয়ে। ভাঙাচোরা জীবনে রাত্রির বুকে মেসোপটেমিয়া আর নীলনদ ফুটিয়ে তুলতে কয়েক ঘণ্টা মাত্র। হোয়াং-হোতে দুঃখের ঝুলি ভাসিয়ে দিয়ে চকিতে তোমার কাছে ফিরে আসি। দেখি তোমার গা থেকে নকশী কাঁথা পড়ে গেছে। তোমার হাতটা আমার বালিশের উপর। বালিশের তুলোর মধ্যে কবেকার অভিমানগুলো দলা পাকিয়ে আসে। জমাট কান্নারা চিৎকার করতে চায়। আমি তাড়াতাড়ি বালিশের খোলে জোড়া টিয়ার চুম্বন দৃশ্য সূঁচ সুতোয ফুটিয়ে তুলি। তোমার গায়ে আরো একটি নতুন কাঁথা দিয়ে আবার কথা ভ্রমনে… ওই যে নীল নদের দিকে যেতে যেতে কথা আর কাঁথায জড়িয়ে ফেলি জীবন আর যন্ত্রণা।
(দুই) কথার কাছে আমি অঙ্গাবরণ খুলে রাখি রমনে রতিতে। স্বপ্ন ডানায় মেখে রাখি ল্যাভেন্ডার। ছোট ছোট ঘন ঘন রান সেলাইয়ে বালিরেখা নীলের গতিপথ জুড়ে। ভূর্জ্পত্রের পুঁথি খুলে রেখে কবেকার রামি রজকিনী আমি সাধন সঙ্গিনী হয়েছি কথাগোসাঁই। কাঁথার ফাঁকে জড়িয়ে ধরি প্রাচীন গুল্মলতা। প্রতিটি কথাসঙ্গম ধরা দেয় পদ্মযোনির নতুন বন্দিশে। তুমি এত কাছটিতে থেকেও টের পাও না। বুঝতে না দেওয়ার খেলা রপ্ত করেছি নিদারুন অভ্যাসে। কথাবলয়ে সময় ঢেকে রেখে একাকী কথা সেলাই করি তোমার মুখপানে চেয়ে। ঘুম ভাঙার আগেই কথা ও কাঁথার সরনী বেয়ে সন্ধ্যাভাষায় ভেসে ফিরে আসি সেই চেনা আমি। যদি পথ হারিয়ে ফেলি খুঁজে নেবে তো আমায়?
(তিন) এখনও সময় হয়নি। ভোরের আলো ফোটার আগে এসো তবে বেঁধে রাখি আমাদের শ্লোক ও শোক নির্জনে। এসো কোন শুঁয়ো পোকার রেশম গুটি বানানোর পথ প্রশস্ত করি। স্বপ্নরঙে কথা এঁকে দিই প্রজাপতির ডানায়। দীর্ঘ ব্যবহারে যদি ছিঁড়ে যায় কাঁথা । যদি মায়ের গন্ধ পাই পুরানো শাড়ির ভেতর থেকে তবে তাকে রেখে দেবো ইড়া ও পিঙ্গলায় কথানাথ। যদি একবার ফিরে পাই ছেলেবেলা লাল শালু দিয়ে শোকপাড় মুড়ে দেব। রাখো রাখো হে ভ্রামক, কথা ও কাঁথায় জড়ায়ে। সফলতায় ব্যর্থতায় জরা ও জঙ্গমে। . **************** . সূচীতে . . .
স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছায়াছবি কবি শীলা বিশ্বাস কবির চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ “নির্বাচিত শূন্য” -এর কবিতা।
৷৷ ক ৷৷ তোমার বুকের রোমকূপ থেকে গাছ জন্মাচ্ছে আর আমি ছুটে যাচ্ছি এক একটা গাছের দিকে। আশ্রয় হয়ে তুমি ফুটে থাকো। আমি ডানা মেলে দিই নিশ্চিন্তের। সারা রাত তুমি কথা বল তারাদের সাথে। স্বপ্ন নির্মাণের ইতিকথা লেখে অভুক্ত চাঁদ। নীচু হই । মুঠো ভরে কুড়াই জ্যোৎস্না। জল ভাঙে। কান পেতে শুনি সদ্যোজাতের দেয়ালা। নস্যাৎ হয়নি যে কারুকৃতি তাকে কুলুঙ্গি ভরে রাখি। নাক ডাকার শব্দ সয়ে গেছে কান। তোমার বুকে গুঁজে রাখা ঘুমে অনায়াসে স্বপ্ন লুটে নেওয়া যায়। তুমি মানো বা না মানো ঘুমের চোখ আছে। চোখের কিছু নিজস্ব ঘুম আছে অভ্যাসের ।
৷৷ খ ৷৷ দীর্ঘ লম্ফনের আগে একটু পিছিয়ে আসা আসলে নিজেকেই অতিক্রম করার প্রয়াস। রেফারির হুইসেলের অপেক্ষা থাকা চাই। আগলে রাখা স্বপ্নকে সহজ স্বভাবে রেখে দিও গোপন কুঠুরিতে। অবনত স্বগতোক্তিগুলি ভাসিয়ে দিও নদীতে। নিজের নাম থেকে অখ্যাতি খুলে রেখে ঝুলিয়ে দিও গাছের ডালে। ছায়া দেখে কেঁপে ওঠে যে মন তাকে সমাধিস্থ করে কবিতার লাইন লিখে রেখো সমাধিফলক। সমবেত আত্মহত্যা করতে চেয়ে যে ইচ্ছেরা ঘরছাড়া তাদের তুমি স্বপ্নবাতি জ্বেলে দাও পুনর্বার ।
৷৷ গ ৷৷ আমার শরীরের মধ্যে মৃগয়া জেগে উঠলে নতুন ম্যাজিকে মৃতকথারা বেঁচে উঠে সঙ্গম করে। নিদ্রাহীন রাত্রি নটরাজ মুদ্রায় অধিকার করে মগজ। তুমি থালায় সাজিয়ে রাখো মৃত্যুর প্রসাদ। মগজের একপ্রান্তে ঝড় ওঠে অপরপ্রান্ত সমাহিত সমুদ্র। জ্বলন্ত অঙ্গারে কারফিউ লাগা অলিন্দের বদ্ধ দৃশ্যকল্প ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে এক রূপকথা। সঙ্গম প্রতিবার শরীরকে নতুন মায়াবী কোন জন্মের দিকে ছুঁড়ে দেয় যেখান থেকে কথারা ছড়িয়ে পড়ে নিউটনের অপ্রকাশিত চতুর্থ সূত্রের সন্ধানে। . **************** . সূচীতে . . .