মুক্তিযুদ্ধের গান ও কবিতার দেয়ালিকা
|
|
|
এই পাতাটি পাশাপাশি, ডাইনে-বামে ও কবিতাগুলি উপর-নীচ স্ক্রল করে! This page scrolls sideways < Left - Right >. Poems scroll ^ Up - Down v.
|
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা তফিক-এর চিঠি কবি তফিক বা
তফিকুল ইসলাম তফিক। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের
কাছে কবিতাই !
শিল্পী রিয়াজ রনি এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে Abritti
Online YouTube Channel । রণাঙ্গন থেকে লেখা ‘একাত্তরের চিঠি’র
পাঠ সংকলন "রুধিয়া রাখিতে নারি" থেকে। এই পত্রটি পাঠের
অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি
অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের
লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
শ্রদ্ধেয় মা,
বাংলার রক্তরাঙ্গা উদয়াকাশে উদীয়মান সূর্যের তলে.... বাংলার
এহেন অবস্থায় স্বাধীনতা লাভের উৎসস্বরূপ প্রথম স্বাগত জানাই
আপনাকে। মা, আমার এ অন্তরের অন্তর গুহা থেকে বারবার
ঢেউ খেলে। বাংলার মুক্ত আকাশে আনন্দে তাল রেখে সবার
মুখে মুখে স্বাধীনতার ছোঁয়াছ লাগিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে দিচ্ছে।
আর জানাই পরম পূজনীয় শ্রদ্ধেয় 'বাবা'কে যার কথা মনে পড়ে
প্রতি মুহূর্তে। যখন রাইফেলের ট্রিগার-এর ওপর আমার হাতের
চাপ পড়ে, গর্জন করে ওঠে আমার বাংলার দুলাল শেখ মুজিবের
সিংহ গর্জন কণ্ঠের ন্যায়।
মা, বহু বাধা-বিঘ্ন, বহু বুলেটের ফাঁকে বাংলা মায়ের আশীর্বাদে
আজ আমরা ফেনীতে উপস্থিত হয়েছি। সেখানে বাংলাদেশের
পতাকা পত্ পত্ করে উড়ে আনন্দে তাঁর আদরের সন্তানকে
স্বাগত জানাচ্ছে।
কেমন করে দিন কাটাচ্ছেন জানি না। হয়তো বা ভয়ে নিরাশায়
মলিন বেশে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভেসে আসছে এক দীর্ঘ
নিঃশ্বাস যার মধ্যে নিবিষ্ট এক মহা-আশীর্বাদ, শুধু আমার জন্য
নয়, যত সব আপনার মতো দুঃখিনী মায়ের সন্তানেরা মাতৃভূমির
ইজ্জত রক্ষার্থে, লাখো মা-বোনের ইজ্জত রক্ষার্থে বুলেটের সামনে
নিজেকে আত্মোৎসর্গিত করেছে।
মা, চিন্তার কোনো কারণ নেই, আশা করি কয়েক দিনের মধ্যে
দেখা পাব। মা, যখন শত্রুর 'ডিফেন্স' পেছনে ফেলে এগিয়ে
আসছি, মনে বড় সংকোচ ছিল---জানি না লোকে আমাদের
কীভাবে গ্রহণ করবে। কিন্তু কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর লোকের
আনন্দ-ফুর্তি দেখে সব ভয়, সংকোচ, কালিমা মন থেকে নিমিষে
মুছে গেল। কেবল তারা পারছে না আমাদের তাদের পেটের
মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে---এমন আনন্দ-উল্লাসে মত্ত তারা। আর কী
লিখব! 'রক্ত ছালাম' দিয়ে সবার থেকে বিদায় নিচ্ছি।
ইতি আপনার তফিক
এপার বাংলার কলকাতায়, ভারতমাতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তির সামনে, ভারতবর্ষের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।
দিল্লীর গেটওয়ে অফ ইণ্ডিয়াতে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ভারতীয় সেনার স্মৃতিতে বিগত ৫০ বছর যাবৎ প্রজ্বলিত "অমর জওয়ান জ্যোতি" নামক অনির্বাণ অগ্নিশিখাকে নিভিয়ে দিয়ে, আমাদের ইতিহাস থেকে, মুক্তিযূদ্ধের কালে, ভারত ও বাংলাদেশের মৈত্রী, সহযোগিতা ও ভারতীয় সেনার আত্মবলিদান এবং ইন্দিরা গান্ধীর অবিস্মরণীয় অবদান মুছে ফেলার বর্তমান ভারতের ক্ষমতাসীন সরকারের আপ্রাণ চেষ্টার প্রতিবাদে আমরা এই ছবিটি এখানে তুলে দিলাম।
মোদী সরকার বলছেন যে তাঁরা নাকি ওই অনির্বাণ অগ্নিশিখাটিকে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে অন্যান্য সেনাদের সৌধের অগ্নিশিখার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছেন। যা আমরা হাস্যকর মনে করি।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সারা ভারত তথা এপার বাংলায়, দেশের শাসকদলের ছড়ানো বিদ্বেষ-বিষে বুঁদ হয়ে থাকা নাগরিক সমাজ ও বিরোধী দলগুলি থেকে এই সিদ্ধান্তের কোনো জোরালো প্রতিবাদ চোখে পড়ে নি।
|
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আম্মা,
অনেক দিন পর আপনার ও লুৎফার চিঠি পেলাম। গত পহেলা
তারিখে ঈশ্বরগঞ্জ থেকে আব্বার প্রথম চিঠি পাই ও সবার কথা
জানতে পারি। এই অবস্থায় আপনারা সবাই ভালো আছেন জেনে
অনেক নিশ্চিন্ত হয়েছি। গ্রামে যা আছে তা নিয়েই আপনাদের
বাঁচতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা কবি কর্নেল আবু তাহের
|
মুক্তিযোদ্ধা তফিক-এর চিঠি কবি কর্নেল আবু
তাহের। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী বাপ্পী আশরাফ এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Abritti Online YouTube Channel । রণাঙ্গন থেকে লেখা ‘একাত্তরের
চিঠি’র পাঠ সংকলন "রুধিয়া রাখিতে নারি" থেকে। এই পত্রটি
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
আশা করি সে মতোই আপনারা ভেবে চলবেন। কবে পর্যন্ত যে
স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে বলা যায় না। আজকাল অবশ্য
আপনাদের বিশেষ কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নেই। মাছ
পাওয়া যায়। ধান পাকতে শুরু হয়েছে। আজকাল গ্রামে অনেকে
এসেছে। ছোটদের পড়াশোনা কবে শুরু হবে লিখেছেন। গ্রামে
এখন এত শিক্ষিত লোক। আপনার এক বৌ ইউনিভার্সিটি পড়া,
স্কুল-কলেজ বাড়িতে শুরু করে দেন। খাওয়া-দাওয়া ও পানির
প্রতি খেয়াল রাখবেন। আজকাল তো আবার ডাক্তার-ওষুধ
পাওয়া মুস্কিল হবে।
সৌদি আরব থেকে ভাইজানের চিঠি পেয়েছি, লন্ডন থেকে রফির
চিঠি পাই, শেলী ইসলাম ও দিবা ভালো। ইসলামাবাদে
ভাইজানের কাছে প্রতি সপ্তাহে যাই। ভাইজান ভালো আছেন।
শেরপুর থেকে ভাবীর চিঠি পেয়েছেন। ভালো আছেন।
আব্বা কেমন আছেন? আমাদের জন্য আপনারা ভাববেন না।
ভেবে কী লাভ হবে। যখনই সম্ভব হবে আমি আপনাদের কাছে
পৌঁছব। খোকা, মনু, বাহার, বেলাল, ডলি-জলিকে লিখতে
বলবেন। আপনারা সাহস হারাবেন না। আব্বা ও আপনি আমার
সালাম নেবেন। নীলু কেমন আছে? ওকে লিখতে বলবেন।
ইতি,
আপনার স্নেহের
তাহের
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মা,
তুমি আজ কোথায় জানি না। তোমার মতো শত শত মায়ের
চোখের জল মুছে ফেলার জন্য বাংলার বুকে জন্ম নিয়েছে লক্ষ
লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা। আমি যদি মরে যাই তুমি দুঃখ কোরো না, মা।
তোমার জন্য আমার যোদ্ধাজীবনের ডায়েরি রেখে গেলাম আর
রেখে গেলাম লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা। তারা সবাই তোমার ছেলে।
অজ্ঞাত মুক্তিযোদ্ধা কবির চিঠি অজ্ঞাত কবি।
মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী নাজমা কাজী এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে Abritti
Online YouTube Channel । রণাঙ্গন থেকে লেখা ‘একাত্তরের চিঠি’র
পাঠ সংকলন "রুধিয়া রাখিতে নারি" থেকে। এই পত্রটি পাঠের
অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি
অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের
লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
আজ হাসপাতালে শুয়ে তোমার স্নেহমাখা মুখখানি বারবার মনে
পড়ছে। আমার ডায়েরিটা তোমার হাতে গেলে তোমার সকল
দুঃখ দূর হয়ে যাবে। দেখবে, তোমার ছেলে শত্রুকে পেছনে রেখে
কোনো দিন পালায়নি। যেদিন তুমি আমাকে বিদায় দিয়েছিলে
আর বলেছিলে, শত্রু দেখে কোনো দিন পেছনে আসিসনে, বাবা।
তুমি বিশ্বাস করো মা, শত্রু দেখে আমি কোনো দিন পালাইনি।
শত্রুর বুলেট যেদিন আমার বুকের বা দিকে বিধল সেদিনও
তোমার কথা স্মরণে রেখেছিলাম। মা, আমার সবচেয়ে আনন্দ
কোথায় জানো? আজ থেকে চার দিন পূর্বে একটি গ্রামের পাশ
দিয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ বেদনাক্লষ্ট একটি নারীকণ্ঠ ভেসে এল।
কালবিলম্ব না করে সেদিকে দৌড়ে গেলাম। একটা গুলি আমার
মাথার ওপর দিয়ে চলে গেল---আবার একটা। এবার বুঝলাম
শক্ররা আমাকে লক্ষ্য করেই গুলি ছুড়ছে। তবুও আমি এগিয়ে
চলছি। বাড়িটার পেছনে একটা বাশঝাড়ের আড়ালে পজিশন
নিলাম। দেখলাম বিবস্ত্র একটি নারীর দেহ নিয়ে কয়েকজন
পৈশাচিক খেলায় মেতে উঠেছে। আমি আর স্থির থাকতে
পারলাম না, মা। মনে পড়ে গেল বাংলার লক্ষ লক্ষ মায়ের কথা।
শত্রুকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লাম ৷ ওরাও অনবরত গুলিবর্ষণ শুরু
করল । জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালে। জানতে পারলাম
আমার গুলিতে পাঁচজন নরখাদক পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে।
দোয়া করো, মা। ভালো হয়ে আবার যেন তোমার শত শত
সন্তানের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে
মায়ের অপমানের প্রতিশোধ নিতে পারি।
ইতি
তোমার ছেলে
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আমার মা,
আশা করি ভালোই আছ। কিন্তু আমি ভালো নাই। তোমায় ছাড়া
কেমনে ভালো থাকি। তোমার কথা শুধু মনে হয়। আমরা ১৭
জন। তার মধ্যে ৬ জন মারা গেছে, তবু যুদ্ধ চালাচ্ছি। শুধু
তোমার কথা মনে হয়, তুমি বলেছিলে 'খোকা মোরে দেশটা
স্বাধীন আইনা দে' ; তাই আমি পিছু পা হই নাই, হবো না,
মুক্তিযোদ্ধা কবি নূরুল হক
|
মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হক এর চিঠি কবি নূরুল হক।
মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী দিলারা নাহার বাবু এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Abritti Online YouTube Channel । রণাঙ্গন থেকে লেখা ‘একাত্তরের
চিঠি’র পাঠ সংকলন "রুধিয়া রাখিতে নারি" থেকে। এই পত্রটি
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
দেশটাকে স্বাধীন করবই। “রাত শেষে সকাল হইবো, নতুন সূর্য
উঠবো, নতুন একটা বাংলাদেশ হইবো, যে দেশে সোনা ফলায়'
রক্তপাত বন্ধ হবে, নতুন রাত আসবে, মোরা শান্তিতে ঘুমাবো।
আর যদি তার আগে আমি মরে যাই তবে তুমি দেখবে, গোটা
দেশ দেখবে। একটু আগে একটা যুদ্ধ শেষ করে এলাম। এখন
আবার যাবো, বাবা ভালো থেকো। নয়ন ভাই আমার বাংলার
পতাকা হাতে নিয়ে উড়াবে। বোন ময়না, মা বাবারে ভাল করে
দেখো। আর বেশি দেরি নাই আমাদের দেশ আবার স্বাধীন হবে।
আমি বাড়ি ফিরে যাব। যাওয়ার দিন বাবার পাঞ্জাবি, মার শাড়ি,
ময়নার চুড়ি, নয়নের পতাকা আনবো। শুধু আমার জন্য দোয়া
করো না, সবার জন্য দোয়া করো, যাতে দেশটা স্বাধীন হয়। আর
বেশি কিছু নয়। এখনি একটা যুদ্ধে যাবো। আমার লেখা ভাল
নয়, তবু ময়নার দ্বারা শুনো। আল্লাহ হাফেজ।
ইতি---
যুদ্ধখানা হইতে তোমার পোলা
নূরুল হক
জয় বাংলা
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
প্রিয় মুকুল,
একটা বিরাট ট্র্যাজেডি ঘটে গেছে। যন্ত্রণায়, ক্লান্তিতে কাতর হয়ে
আছি। আমাদের প্রিয় আজাদ শহীদ হয়েছে, সাতজন কমরেডের
সাথে। অ্যামবুশে পড়ে, হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সামনাসামনি যুদ্ধ
করতে করতে তারা শহীদ হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার
বেতিয়ারা গ্রামের কাছে এই যুদ্ধ হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা কবি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
|
মুক্তিযোদ্ধা সেলিম এর চিঠি কবি মুজাহিদুল
ইসলাম সেলিম। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী জান্নাতুল ফেরদৌস মিতু এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি
সৌজন্যে Abritti Online YouTube Channel । রণাঙ্গন থেকে লেখা
‘একাত্তরের চিঠি’র পাঠ সংকলন "রুধিয়া রাখিতে নারি" থেকে। এই
পত্রটি পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই
অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী
পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক
করুন...।
আমাদের গেরিলারা ফায়ার করতে করতে ব্যাক করে
আসার চেষ্টা করে। ৪০ জনের মতো যোদ্ধা গেরিলা দলে ছিল।
একজন সিভিলিয়ান গাইড আর আজাদসহ মোট ছয়জন গেরিলা
যোদ্ধা---এই মোট সাতজন শহীদ হয়েছে। ১০-১২ জন কিছুটা
বেশি আর অন্যরা সামান্য আহত হয়েছে। সকলের জন্য,
বিশেষত আজাদের জন্য আমার মন কেমন করছে, তা অনুমান
করতে পারছ নিশ্চয়ই। তোমার মনের অবস্থা এই খবর জেনে
কেমন হবে, সেটাও আমি বুঝতে পারছি। আজাদ সম্পর্কে কত
কথা তো মাত্র সাত দিন আগেই হয়েছিল কলকাতায়। ছয়-সাত
মাস পরে তোমার সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা
উপলক্ষে কলকাতায় দেখা হলো। আমি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করছি।
রণাঙ্গন থেকে দুই দিনের জন্য কলকাতায়। ফিরে গিয়ে আজাদকে
তোমার কোন কোন গল্প শোনাতে হবে, তা দুজনে মিলে ঠিক
করেছিলাম। মনে আছে নিশ্চয়ই। আর আগরতলা ফিরেই রাত
শেষে ভোরের সংবাদ---আজাদ এবং আরও কয়েকজন কমরেড
আর নেই। বড় বিপর্যয় হয়ে গেছে। এসব ঘটনা ১১ নভেম্বরের।
অ্যামবুশের পরে আমাদের গেরিলারা ফিরে এসে সীমান্তের এপারে
ইনডাকশন ক্যাম্পে রিগ্রুপ করেছে। আমি ১২ তারিখেই সেখানে
চলে যাই। সব খবর বিস্তারিত শুনলাম। এই ব্যাচের কমান্ডার
মনজুর ভাই আগেই সেখানে পৌছে গেছে। ইয়াফেজ, হেলাল---
ওরা জীবিত ফিরতে পেরেছে। আমার মনটা আরও বেশি খারাপ
এ জন্য যে, গেরিলা দলের ইনডাকশনের সবগুলো অপারেশন
আমার তন্তাবধানে হয়ে থাকে। কিন্তু এবার মাত্র দুই দিনের জন্য
কলকাতায় গিয়েছি, যাতায়াত মিলে মাত্র চার দিনের জন্য বেইস
ক্যাম্পের বাইরে আছি। আমাকে বাদ দিয়েই ইনডাকশনের
ব্যবস্থা করে ফেলল! সামনের কয়েকজনের হাতে loaded arms
ছিল। অথচ পেছনে বেশির ভাগের arms-amunition-ই প্যাক
করা। আধা গেরিলা কায়দা আধা ফ্রন্টাল combat-এর কায়দা।
সমস্যা হয়েছে তাতেই। তার পরেও যুদ্ধ করে, fire back করতে
করতে প্রায় গোটা দলই সফলভাবে retreat করতে সক্ষম হয়েছে।
পাক আর্মি সিঅ্যান্ডবি রোডে ভারী সমরযান নিয়ে এসে অ্যামবুশ
করেছিল। হেভি মেশিনগান দিয়ে ফায়ার করে নির্বিচারে। এর
মধ্যেও বেশির ভাগ জীবিত ফিরে আসতে পেরেছে।
গেরিলা কমরেডরা এক-দুই দিন বিমর্ষ ছিল। তৃতীয় দিনে খুবই
high moral ফিরে এসেছে। মনজুর ভাই বক্তৃতা করেছে। খুব
সাহায্য হয়েছে তাতে। আমি কথা বলছি। পাশে কমান্ডারদের
পেয়ে ওদের মনোবল চাঙা হয়েছে। নতুন করে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ড্রিল করা শুরু হয়েছে। এবার যেন বিপর্যয় না হয়।
একটা enquiry committee করা হয়েছে। আমি তার সদস্য। পরশু
আবার যাব এলাকায়। ভৈরব টিলা নামের পোস্ট থেকে এলাকাটা
দেখা যায়। দুজনকে ছদ্মবেশে দেশের ভেতরে, বেতিয়ারা ও
আশপাশের গ্রামে সরেজমিনে খবর সংগ্রহের জন্য পাঠানো
হয়েছে। আগামী পরশু তারা ফিরবে। ওরা খবরে জেনেছে যে,
বেতিয়ারার পথের পাশে পাঁচ-ছয়জনকে কবর দেওয়া হয়েছে।
অনেক খবর লিখলাম। লিখে শান্তি পেলাম কিছুটা । চিঠিটা গোপন
রাখবে। আমি শিগগিরই ভেতরে যাব হয়তো। দেশ স্বাধীন
হবেই। আমাদের সাধনা, জনতার জীবনপণ প্রচেষ্টা সফল হবেই।
লাল সালাম।
ইতি সেলিম
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
Letter written by :
Muktijoddha & Martyr Lt. Ashfaqus Samad to Touhid
Samad on 25th October 1971.
চিঠিটি লিখেছেন মুক্তিযোদ্ধা লেফটেনেন্ট আশফাকুস সামাদ
চিঠির প্রাপক তৌহিদ সামাদ
চিঠিটি লেখা হয়েছিল ২৫.১০.১৯৭১ সালে রাত দশটায়
Muktijoddha & Martyr Lt. Ashfaqus Samad For Bengali Translation >>>>>> মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি লেফটেনেন্ট আশফাক সামাদ
|
Muktijoddha & Martyr Lt. Ashfaqus Samad's
Letter. A Freedom Fighter & Martyr's letter is nothing but
Poetry to our ears !
The letter was written in English.
For Bengali translation with VDO, please click here . . . or
scroll to right >>>
The letter is recited by Shahanama Azim Urmee.
VDO courtesy voice marina YouTube Channel .
The text of this letter has been put down after listening to this
VDO.
Dear Tauhid,
First let me tell you that I am writing to you from a
liberated area of Bangladesh. The Indian border is
almost 18 miles from here. I am breathing the free air of a
liberated place and by God it feels good. Liberated this
place 2 weeks back. It is sometime around 10 o’clock in
the evening. I am lying in my bed inside a hut. My bed is
a wooden platform dug in about two feet below the floor
level. The earth raised all around me to give protection
from the bullets & shells. One lamp burning with the min.
light. My ‘friends’ the Punjabis are only 600 yards away.
The sons-of-bitches have not shelled on us today/night,
but I have a feeling they will any time, now, they usually
do at this time. The idiots did not let us sleep last night.
Fired about 40 shells, couldn’t land a single one on us,
marksmanship! So we fired about 50 shells today on
them. Intelligence report received one ‘dog’ killed, what
marksmanship! Actually these kind of funny things
happen quite often. Because once you are inside the
bunker, you are safe. Unless one unlucky one lands right
on yours top, which is very rare.
I am writing to you because after a long time I
remembered the good old days. I remembered my
friends, my family and above all my Dacca. You know
Tauhid, these days I don’t even get much time to think
about the old times. I really don’t know when I shall get
my next chance to write to you. The place I wrote to you
last is about 150 miles from here. How’s London? Must
be very big and glamorous. If I can dodge their bullets
and stay alive I'll see you there. Fix a nice little place for
me, will you?
Have you written to my home? Please take a little more
trouble. Ask them to write to you about there welfare so
that you can write to me about them. It is six long months I
have no news of them.
My ad--
LT. Ashfaqus SAMAD
Hq. Sector-6
C/o Postmaster
PO. CHANGRABANDHA
D.T. COOCHBIHAR
INDIA
How’s Rukhsana and everybody at home. Give them my
best. Please give my best to Najmul also. Answer fast.
Love
Ashfi
@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি সিরাজুদ্দীন হোসেন
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন-এর
চিঠি কবি সিরাজুদ্দীন হোসেন। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের
কাছে কবিতাই !
প্রথম আলো চ্যানেলের অনামা শিল্পীর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি
সৌজন্যে Prothom Alo YouTube Channel । প্রথম আলোর পাঠ
সংকলন "একাত্তরের চিঠি" থেকে। এই পত্রটি পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
স্নেহের শামীম
কারও কোনো বিপদে এখন আর এক পয়সার সাহায্যও আমার
পক্ষে করা সম্ভব নয়। এ অবস্থা আমার কাছে অসহ্য। সারা
জীবন পরিশ্রম করে আজ বলতে গেলে একেবারে নতুন করে
সংসারযাত্রা শুরু করতে হচ্ছে। কোনো অপঘাতে যদি মৃত্যু হয়
জানি না কোনো অকূল পাথারে সকলকে ভাসিয়ে রেখে যাব ।
কোনো দিন নেও ভাবিনি যে, সংসারজীবনে এমনি করে পেছনে
ফিরে যেতে হবে। এ বয়সে নতুন করে দুঃখ কষ্টের মধ্যে
যাওয়ার মতো মনের বল আর অবশেষ নেই!
যা হোক, তোমাকে আশীর্বাদ করি, জীবনে সত্য ও ন্যায়ের পথে
থেকে সামনে এগিয়ে যাও । আমার বন্ধুবান্ধবের সম্পর্কে যে কথা
লিখেছ, ওতে আমি বিস্মিত হইনি, কারণ আমি অনেকের বন্ধু
হলেও কেউ আমার বন্ধু ছিল না। কারণ, এ সংসারে সকলেই
স্বার্থের দাস, জীবনের মহত্বের গুণাবলি কজনের আছে? আমার
জীবনে অপরিচিত জন ছিল যারা, বিপদে-আপদে তারাই আমার
পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, পরিচিত কোনো বন্ধুজন নয়।
শুনে খুশি হলাম, তুমি মানিকের স্রেহাস্পর্শে আছ। ওদের
ক'জনকে আমি বরাবর স্নেহের নয়, শ্রদ্ধার চোখেই দেখেছি।
ওকে আমার শুভেচ্ছা জানাবে।
ইতি
আব্বা
এগারোই অক্টোবর
উনিশ শ’ একাত্তর
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি শহীদ কাজী নূরুন্নবী বাবুল
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কাজী নূরুন্নবী
বাবুল-এর চিঠি কবি সিরাজুদ্দীন হোসেন। মুক্তিযোদ্ধার
চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী ঋষি আবীর এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
আমাদের পরিচয় জাদুর শহর থেকে YouTube Channel । এই পত্রটি,
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
আম্মা,
সালাম নেবেন। আমি ভালো আছি এবং নিরাপদেই আছি।
দুশ্চিন্তা করবেন না। আব্বাকেও বলবেন। দুশ্চিন্তা মনঃকষ্টের
কারণ ছাড়া আর কোনো কাজে আসে না। এখানে গতকাল ও
পরশু পুলিশ বনাম আর্মি-র মধ্যে সাংঘাতিক সংঘর্ষ হয়ে গেল।
শেষ পর্যন্ত আমরা জিততে পারিনি।
রাজশাহী শহর ছেড়ে লোকজন সব পালাচ্ছে। শহর একদম খালি।
মিলিটারি কামান ব্যবহার করেছে। ২৫০-র মত পুলিশ মারা
গিয়েছে । ৪ জন আর্মি মারা গিয়েছে মাত্র। রাজশাহীর পরিস্থিতি
এখন আর্মি-র আয়ত্তাধীনে রয়েছে। হাদী দুলাভাই ভাল আছেন।
চিন্তার কারণ নেই। দুলি আপার খবর বোধহয় ভালোই। অন্য
কোথায় যেন আছেন। আমি যাইনি সেখানে। পুষ্প আপা সমানে
কাঁদাকাটি করে চলেছেন। ঢাকার ভাবনায়। ক'দিন আগে
গিয়েছিলাম। ধামকুড়িতে বোধহয় উনার মা আছেন। সম্ভব হলে
খবর পৌঁছে দেবেন। আমার জন্য ব্যস্ত হবেন না। যেভাবে
সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে আমাদের বেঁচে
থাকাটাই লজ্জার।
আপনাদের দোয়ার জোরে হয়তো মরব না। কিন্তু মরলে
গৌরবের মৃত্যুই হতো। ঘরে শুয়ে শুয়ে মরার মানে হয় কি?
এবার জিতলে যেমন করে হোক একবার নওগাঁ যেতাম। কিন্তু
জিততেই পারলাম না। হেরে বাড়ি যাওয়া তো পালিয়ে যাওয়া।
পালাতে বড্ড অপমান বোধ হয়। হয়তো তবু পালাতেই হবে।
আব্বাকে সালাম। দুলুরা যেন অকারণ কোনোরকম risk রিস্ক না
নেয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বললাম কথাটা। তাতে
শুধু শক্তি ক্ষয়ই হবে।
দোয়া করবেন।
ইতি
বাবুল
চিঠি লেখক : শহীদ কাজী নূরুন্নবী। ১৯৭১ সালে রাজশাহী
মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র এবং কলেজ ছাত্রলীগের
সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিব বাহিনীর
রাজশাহীর প্রধান ছিলেন। ১ অক্টোবর ১৯৭১ নূরুননবীকে
পাকিস্তানি বাহিনী আটক করে শহীদ জোহা হলে নিয়ে যায়। তার
আর খোঁজ পাওয়া ষায়নি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের একটি
হোস্টেল তার নামে রয়েছে।
চিঠি প্রাপক : মা নূরুস সাবাহ্ রোকেয়া। শহীদের বাবার নাম
কাজী সাখাওয়াত হোসেন, ঠিকানা - লতা বিতান কাজী পাড়া,
নওগাঁ।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন : ডা. কিউ এস ইসলাম, ২৮ শান্তিনগর, ঢাকা।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি এ বি এম মাহবুবুর রহমান
|
মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম মাহবুবুর রহমান-
এর চিঠি কবি এ বি এম মাহবুবুর রহমান। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি
আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী মাহবুবা হাসানাহ্ এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
আমাদের পরিচয় জাদুর শহর থেকে YouTube Channel । এই পত্রটি,
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
মাগো, ৫ এপ্রিল ১৯৭১ সাল
তুমি যখন এ পত্র পাবে, আমি তখন তোমার থেকে অনেক
অনেক দূরে থাকব। মা, জানি তুমি আমাকে যেতে দিবে না,
তাই তোমাকে না বলে চলে যাচ্ছি। তবে যেদিন মা-বোনের
ইজ্জতের প্রতিশোধ এবং এই মাতৃভূমি সোনার বাংলাকে
শত্রুমুক্ত করতে পারব, সেদিন তোমার ছেলে তোমার কোলে ফিরে
আসবে। দোয়া করবে মা, আমার আশা যেন পূর্ণ হয়।
ইতি তোমারই
হতভাগা ছেলে।
সেই গাঢ় অন্ধকারে একাকী পথ চলছি-শরীরের রক্ত মাঝে মাঝে
টগবগিয়ে উঠছে, আবার মনে ভয় জেগে উঠছে যদি পাক
সেনাদের হাতে ধরা পড়ি তবে তো সব আশাই শেষ...। যশোর
হয়ে নাগদা বর্ডার দিয়ে ভারতে প্রবেশ করি। পথে একবার
রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ি। তারা শুধু টাকা-পয়সা ও চার-
পাচটা হিন্দু যুবতী মেয়েকে নিয়ে আমাদের ছেড়ে দেয়। তখন
একবার মনে হয়েছিল, নিজের জীবন দিয়ে মেয়েদের ওদের হাত
থেকে রক্ষা করি। কিন্তু পরমুহূর্তে মনে হয়, না, এভাবে তাদের
উদ্ধার করতে গেলে শুধু প্রাণটাই যাবে, তাহলে হাজার হাজার মা-
বোনের কী হবে?
রাত চারটার দিকে বর্ডার পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করি।
বাল্যবন্ধু শ্রী মদন কুমার ব্যানার্জি, ইতনা কলোনি, শিবমন্দির,
বারাসাত, ২৪ পরগনা এই ঠিকানায় উঠলাম। ওখানে এক সপ্তাহ
থেকে ওই বন্ধুর বড় ভাই শরৎচন্দ্র ব্যানার্জি আমাকে বসিরহাট
মহকুমা ৮ নম্বর সেক্টর মেজর জলিলের তত্ত্বাবধানে আমাকে
মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিংয়ে ভর্তি করে দেন। সেখানে পরিচয় হয় বে.
রেজিমেন্টের আবুল ভাইয়ের সাথে। ট্রেনিং ক্যাম্পে এক সপ্তাহ
থাকার পর কর্নেল ওসমান গনির নির্দেশে আমাদেরকে উচ্চ
ট্রেনিং... ... চিঠিটি অসম্পূর্ণ এখানেই শেষ ...
চিঠি লেখক : মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম মাহবুবুর রহমান। তিনি
চিঠিটি লিখেছিলেন ৮ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টার, ট্রেনিং সেকশন,
বসিরহাট সাব ডিভিশন. ২৪ পরগনা, ভারত থেকে। তাঁর বর্তমান
ঠিকানা : বাড়ি ৭ (দোতলা), সড়ক ১৮, ব্লক জি/১, সেকশন ২.
মিরপুর, ঢাকা।
চিঠি প্রাপক : মা রাহেলা বেগম রাঙা, আখালিপাড়া, নদীয়ার
চাদঘাট, বোয়ালমারী, ফরিদপুর।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন : লেখক নিজেই।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মা,
আমার সালাম গ্রহণ করবেন। পর সংবাদ আমি আপনাদের
দোয়ায় এখনো পর্যন্ত ভালো আছি। কিন্তু কত দিন থাকতে পারব
বলা যায় না। বাংলা মাকে বাচাতে যে ভূমিতে আপনি আমাকে
জন্ম দিয়েছেন, যে ভাষায় কথা শিখিয়েছেন, সেই ভাষাকে, সেই
জন্মভূমিকে রক্ষা করতে হলে আমার মতো অনেক জিন্নার প্রাণ
মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডো শহীদ কবি জিনাত আলী খান
|
মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডো শহীদ জিনাত
আলী খান-এর চিঠি কবি নৌ কমান্ডো শহীদ জিনাত
আলী খান। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
প্রথম আলো চ্যানেলের অনামা শিল্পীর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি
সৌজন্যে Prothom Alo YouTube Channel । প্রথম আলোর পাঠ
সংকলন "একাত্তরের চিঠি" থেকে। এই পত্রটি পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
দিতে হবে। দুঃখ করবেন না, মা। আপনার সম্মান রক্ষা করতে
গিয়ে যদি আপনার এই নগণ্য ছেলের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়,
সে রক্ত ইতিহাসের পাতায় সাক্ষ্য দেবে যে বাঙালি এখনো
মাতৃভূমি রক্ষা করতে নিজের জীবন পর্যন্ত বুলেটের সামনে পেতে
দিতে দ্বিধা বোধ করে না।
সময় নেই। হয়তো আবার কখন দৌড় দিতে হয় জানি না। তাই
এই সামান্য পত্রটা দিলাম। শুধু দোয়া করবেন। সবার কাছে ক্ষমা
চাচ্ছি। মা, যদি সত্যি আমরা এই পবিত্র জন্মভূমি থেকে ইংরেজ
বেনিয়াদের মতো পাঞ্জাবি গুণ্ডাদের তাড়িয়ে দিয়ে এ দেশকে মুক্ত
করতে পারি, তবে হয়তো আবার আপনার সঙ্গে দেখা হতে
পারে। বিদায় নিচ্ছি মা। ক্ষুদিরামের মতো বিদায় দাও। যাবার
বেলায় সালাম।
মা...মা...মা...যাচ্ছি।
ইতি
জিন্না
চিঠি লেখক : নৌ কমান্ডো শহীদ জিনাত আলী খান।
চিঠি প্রাপক : মা শুকুরুননেছা।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি আব্দুল আজিজ
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল আজিজ-এর
চিঠি শহীদ কবি আব্দুল আজিজ। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের
কাছে কবিতাই !
শিল্পী সানজিদা শর্মী এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
আমাদের পরিচয় জাদুর শহর থেকে YouTube Channel । এই পত্রটি,
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
প্রিয় ফজিলা, ১৬ই এপ্রিল ১৯৭১
জানি না কী অবস্থায় আছ। আমরা তো মরণের সঙ্গে যুদ্ধ করে এ
পর্যন্ত জীবন হাতে নিয়ে বেঁচে আছি। এর পরে থাকতে পারব
কি না বুঝতে পারছি না। সেলিমদের বিদায় দিয়ে আজ পর্যন্ত
অশান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। আবার মনে হয় তারা যদি আর
একটা দিন আমাদের এখানে থাকত তাহলে তাদের নিয়ে আমি
কী করতাম। সত্যিই ফজিলা, রবিবার ১১ এপ্রিলের কথা মনে
হলে আজও ভয় হয়। রাইফেল, কামান, মেশিনগান, বোমা, রকেট
বোমার কী আওয়াজ আর ঘরবাড়ির আগুনের আলো দেখলে
ভয় হয়। সুফিয়ার বাড়ির ওখানে ৪২ জন মরেছে। সুফিয়ার
আব্বার হাতে গুলি লেগেছিল। অবশ্য তিনি বেঁচে আছেন।
সুফিয়াদের বাড়ির এবং বাড়ির সব জিনিস পুড়ে গেছে।
আমাদের বাড়িতে তিন-চার দিন শোয়ার মতো জায়গা পাইনি।
রাহেলাদের বাড়ির সবাই, ওদের গ্রামের আরও ১৫-১৬ জন,
সুফিয়ার বাড়ির পাশের বাড়ির চারজন, দুলালের বাড়ির সকলে,
দুলালের ফুফুজামাই দীঘির কয়েকজন এসে বাড়িতে উঠল। তাই
বলি, সেই দিন যদি আব্বা এবং সেলিমরা থাকত তাহলে কী
অবস্থা হতো। এদিকে আমরাও আবার পায়খানার কাছে জঙ্গলে
আশ্রয় নিলাম। কী যে ব্যাপার, থাকলে বুঝতে। বর্তমানে যে
পরিস্থিতি তা আর বলার নয়, রাস্তার ধারের মানুষের জীবনের
নিরাপত্তা নেই। রোজ গরু, ছাগল, হাস-মুরগি ছাড়াও যুবতী
মেয়েদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। দুই-এক দিন পর আধা মরা অবস্থায়
রাস্তার ধারে ফেলে দিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক দিন এসব ঘটনা।
বাড়িতে আগুন আর গুলি করে মানুষ মারার তো কথাই নেই।
তা ছাড়া লুটতরাজ, চুরি, ডাকাতি সব সময় হচ্ছে। কয়েক দিন
বৃষ্টির জন্য রাস্তাঘাটে কাদা হওয়ায় আমরা বেঁচে আছি।
রাস্তাঘাট শুকনা থাকলে হয়তো আমাদের এদিকেও আসত।
জানি না ভবিষ্যতে কী হবে। তবে ওরা শিক্ষিত এবং হিন্দুদের
আর রাখবে না বলে বিশ্বাস। হিন্দু এবং ছাত্রদের সামনে পেলে
সঙ্গে সঙ্গে গুলি করছে। গত রাতে পাশের গ্রামে এক বাড়িতে
ডাকাতরা এসে সেই বাড়ির মানুষদের যা মেরেছে তা আর বলার
নয়। কখন যে কী হয় বলার নেই। তবু খোদা ভরসা করে বেঁচে
আছি! আমাদের এদিকের ছেলেরা প্রায় সবাই বাড়ি ছেড়ে দূরে
থাকে। কারণ বাড়িতে থাকা এ সময় মোটেই নিরাপদ নয়।
তোমাদের দেখার জন্য চৌবাড়ি যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি।
দুঃখের বিষয়, একটি দিনও বৃষ্টি থামেনি। অবশ্য বৃষ্টি না থামার
জন্য আমাদের একটু সুবিধাই হয়েছে। তোমাদের সংবাদ জানানোর
মতো কোনো পথও নেই। কীভাবে যে সংবাদ পাব ভেবে পাই না।
মিঠু বোধ হয় এখন হাটতে শিখেছে তাই না? মিঠুকে দেখতে খুব
ইচ্ছে করছে। কিন্তু পথ নেই। সান্তনা এইটুকুই যে বেঁচে থাকলে
একদিন দেখা হবে। কিন্তু বাঁচাটাই সমস্যা। রাতে ঘুম নেই, দিনে
পালিয়ে বেড়াই। মা-বাবা তো প্রায়ই আমার জন্য কাঁদে। যাক,
দোয়া কোরো যেন ভালো থাকতে পারি। বুবুদের যে কী অবস্থায়
পাঠিয়েছি, তা মনে হলে দুঃখ লাগে। আমি সঙ্গে যেতে চেয়েছিলাম,
কিন্তু সম্ভব হয়নি। অবশ্য সেদিন না পাঠালে তাদের নিয়ে দারুণ
মুশকিলে পড়তে হতো। রবিবার দিন বাবলুর আম্মা মেরীগাছা
এসেছিল। বাবলুরা ভালো আছে। তোমাদের সংবাদটা জানাতে
পারলে জানাবে। আমার মানসিক এবং শারীরিক অবস্থা ভীষণ
খারাপ। বুবু, আম্মা, দুলাভাইকে আমার সালাম এবং সেলিমদের ও
মিনাদের আমার স্নেহ দেবে। সম্ভব হলে তোমাদের সংবাদটা
জানাবে। আমরা তো মরেও কোনো রকমে বেঁচে আছি। শেষ
পর্যন্ত কী হবে জানি না।
ইতি আজিজ
চিঠিটির লেখক : শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ।
চিঠিটির প্রাপক: স্ত্রী ফজিলা আজিজ।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন : মো, ফারুক জাহাঙ্গীর, গ্রাম : কুজাইল, নাটোর।
ফারুক জাহাগীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজের পুত্র।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি আবদুল্লাহ হিল বাকী
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবদুল্লাহ হিল বাকী শহীদ কবি আবদুল্লাহ হিল বাকী ।
মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী সাকিব রিজভী এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে আমাদের পরিচয় জাদুর শহর থেকে YouTube Channel । এই পত্রটি,
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
মা, ১৮.৪.৭১
আপনি এবং বাসার সবাইকে সালাম জানিয়ে বলছি, দেশের এই
সংকটময় মুহূর্তে আমি ঘরে বসে থাকতে পারি না।তাই ঢাকার
আরও বিশ ২০টা যুবকের সাথে আমিও পথ ধরেছি ওপার
বাংলায়। মা, তুমি কেঁদো না, দেশের জন্য এটা খুব ন্যুনতম চেষ্টা।
মা, তুমি এ দেশ স্বাধীনের জন্য দোয়া করো। চিন্তা করো
না, আমি ইনশাল্লাহ বেঁচে আসব। আমি সাত ৭ দিনের মধ্যেই
ফিরে আসতে পারি কি বেশিও লাগতে পারে। তোমার চরণ মা,
করিব স্মরণ। আগামীতে সবার কুশল কামনা করে খোদা হাফেজ
জানাচ্ছি।
তোমারই বাকী
চিঠি লেখক : শহীদ আবদুল্লাহ হিল বাকী, বীর প্রতীক। পিতা এম
এ বারী।
চিঠি প্রাপক : মা আমেনা বারী, ২০৩/সি বাকী ভবন, খিলগাঁও,
ডাকা।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মা, ২৩ এপ্রিল ১৯৭১
দোয়া করো। তোমার ছেলে আজ তোমার সন্তানদের রক্তের
প্রতিশোধ নিতে চলেছে। বর্বর পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী আজ
তোমার সন্তানদের ওপর নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধা কবি মোহম্মদ খোরশেদ আলম
|
মুক্তিযোদ্ধা মোহম্মদ খোরশেদ
আলম এর চিঠি কবি মোহম্মদ খোরশেদ আলম।
মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী আনিকা তাসনিম এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
আমাদের পরিচয় জাদুর শহর থেকে YouTube Channel । এই পত্রটি,
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
যেখানে তোমার সন্তানদের ইজ্জতের ওপর আঘাত করেছে,
সেখানে তো আর তোমার সন্তানরা চুপ করে বসে থাকতে পারে
না। তাই আজ তোমার হাজার হাজার বীর সন্তান বাঁচার দাবি
নিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
তোমার নগণ্য ছেলে তাদের মধ্যে একজন। পরম করুণাময়
আল্লাহর কাছে দু হাত তুলে দোয়া করি তোমার সন্তানরা যেন
বর্বর পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠীকে কতল করে এ দেশকে স্বাধীন
সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করতে পারে। এ দেশের নাম হবে
বাংলাদেশ, সোনার বাংলাদেশ। এ দেশের জন্য তোমার কত বীর
সন্তান শহীদ হয়ে গিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। ইনশাল্লাহ্ শহীদের
রক্ত বৃথা যেতে দেব না। দেশকে স্বাধীন করে ছাড়বোই। জয়
আমাদের সুনিশ্চিত। দোয়া করো যেন জয়ের গৌরব নিয়ে ফিরে
আসতে পারি, নচেৎ বিদায়।
ইতি
তোমার হতভাগা ছেলে খোরশেদ
চিঠি টি লিখেছিলেন লেখক মোহম্মদ খোরশেদ আলম।
মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর ২, বর্তমান ঠিকানা ১ই-৭/৪ মিরপুর, ঢাকা
১২১৬।
চিঠিটির প্রাপক ছিলেন মা রাহেলা খাতুন।
চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন লেখক নিজেই।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
অজ্ঞাত মুক্তিযোদ্ধা কবির চিঠি অজ্ঞাত কবি।
মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
প্রথম আলো চ্যানেলের অনামা শিল্পীর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি
সৌজন্যে Prothom Alo YouTube Channel । প্রথম আলোর পাঠ
সংকলন "একাত্তরের চিঠি" থেকে। এই পত্রটি পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
এই চিঠিটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র থেকে সংগ্রহ
করা হয়েছে
১লা নভেম্বর ১৯৭১
প্রিয় ছোট ভাই,
আমার স্নেহ নিয়ো। তোমার চিঠি পেয়ে বেশ উদ্বিগ্ন হলাম।
তোমার যে তিন বোনের কথা লিখেছ, ওদের নাম পাঠাও।
বিশ্বাসঘাতকদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যু। ডাক্তার এবং সিরাজ
সম্পর্কে আমাদের এই অভিমত। তবে যদি সম্ভব হয় ওদের
যেভাবে পার আমাদের কাছে পাঠাবার ব্যবস্থা কোরো। না
পারলে সিদ্ধান্ত তোমরাই নেবে।
আগে যে নির্দেশাদি দিয়েছি, তা ঠিকমতো পালন-করছ না। সকল
নির্দেশ ভালো রকম বুঝে পালন করতে চেষ্টা করবে।
তোমাদের জন্য ডিম এবং মুরগি সত্বর পাঠাবার ব্যবস্থা চেষ্টা
করব। সময় কিছু লাগবে। যেসব ব্যাপার জানতে চেয়েছি, তা
সত্বর জানাবে। তোমার সাংসারিক খরচের জন্য একশত টাকা
পাঠালাম। আহারের সংস্থান অবশ্যই স্থানীয়ভাবে করতে হবে।
নখলার বড় বোন দুজনকে যোগাযোগ করতে বোলো। ওরা নীরব
কেন?
আমরা ভালো আছি। তোমাদের কুশল কামনা করি।
ইতি
বড় ভাই
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মা, ১৬-৭.১৯৭১
মুক্তিসেনাদের ক্যাম্প থেকে লিখছি। এখন বাইরে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে।
তাঁবুর ফাক দিয়ে দেখতে পাচ্ছি সমস্ত দিগন্ত মেঘলা মেঘলা ! মাঝে
মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে কিনা, তাই মনটা
ভালো না। আচ্ছা মা, সারা রাত এমনি চলার পর পূর্বাকাশে
যে লাল সূর্য ওঠে, তার কাঁচা আলো খুব উজ্জ্বল হয়, তাই না?
মুক্তিযোদ্ধা কবি মো. আব্দুর রউফ ববিন
|
মুক্তিযোদ্ধা ববিন এর চিঠি কবি মো. আব্দুর রউফ
ববিন। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী আহমেদ রেজা এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Ahmed Reza YouTube Channel । রণাঙ্গন থেকে লেখা ‘একাত্তরের
চিঠি’র পাঠ সংকলন "রুধিয়া রাখিতে নারি" থেকে। এই পত্রটি
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
এই মুহূর্তে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে। বর্ষা এলে তুমি
বাইরে যেতে দিতে না, একদিন তোমার অজান্তে বাইরে আসতেই
পিছলে পড়ে পায়ে চোট লাগে। তখন তুমি চিৎকার করে কেঁদে
উঠেছিলে ৷ ওষুধ দিয়ে ভর্তি হয়েছিল টেবিলটা, আমার বেশ মনে
আছে। তখন থেকে একা বাইরে যেতে সাহস পেতাম না, ভয়
লাগত। বাইরে গেলেই পড়ে যাব। কিন্তু আজ, আজ আমার
অনেক সাহস হয়েছে, রাইফেল ধরতে শিখেছি। বাংকারে
বাংকারে রাতের পর রাত কাটাতে হচ্ছে তবুও ভয় পাই না।
শত্রুর আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমণে শিরায়-
উপশিরায় রক্তের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে মা, সত্যিই তোমাকে সত্যিই
বোঝাতে পারব না। ছোটবেলার কথা মনে পড়লে কেমন যেন
লাগে। কিন্ত আমার একি আশ্চর্য পরিবর্তন, কারণ আমি আমার
স্বদেশ, আমার বাংলাকে ভালোবাসি।
মা, কৈশোরে একদিন আব্বা আমাকেসৈয়দপুরে নিয়ে গিয়েছিলেন
স্পেশাল ট্রেন দেখাতে। সেখান থেকে আমি হারিয়ে যাই। তখন
একলা একলা অনেকক্ষণ ঘুরেছিলাম। ধীরে ধীরে সন্ধ্যার ঘনঘটা
নেমে আসছিল, আমার কেমন যেন কান্না পাচ্ছিল। মনে হয়েছিল
আমি হারিয়ে গেছি। তখন মনে হয়েছিল আর কোনো দিনই
হয়তো তোমার কাছে ফিরে যেতে পারব না। তখন কাঁদতে
কাঁদতে স্টেশনের দিকে আসতে শুরু করেছিলাম। রাস্তায় হাজারী
বেলপুকুরের হাই-ই আমাকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল। দেখি, সেখানে
কিছুক্ষণ পরে আব্বা গেলেন। পরের দিন এসে সমস্ত কথা শুনতে
না শুনতেই আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তুমি কাঁদছিলে। অথচ
সেদিন তুমি তো কাঁদলে না মা! আমি রণাঙ্গনে চলে এলাম। গুলি,
শেল, মর্টার নিয়ে আমার জীবন। ইয়াহিয়ার জঘন্যতম
অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার জন্য দুর্জয়
শপথ নিলাম। এখন বাংকারে বাংকারে বিনিদ্ব রজনী কাটাতে হয়।
কখনোবা রাতের অন্ধকারে শত্রুর ঘাটির ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ
চালাই। এ যুদ্ধ ন্যায়ের যুদ্ধ মা। আমাদের জয় আমাদের হবেই
হবে।
মাগো, সেদিনের সন্ধ্যাটাকে আমার বেশ মনে পড়ছে। আজকের
মতো মেঘলা মেঘলা আকাশ সেদিন ছিল না। সমস্ত আকাশটা
তারায় ভর্তি ছিল। তুমি রান্নাঘরে বসে তরকারি কুটছিলে।
আমি তোমাকে বললাম--- মা, আমি চলে যাচ্ছি। তুমি মুখের দিকে
তাকালে। আমি বলেছিলাম, “মা, আমি মুক্তিবাহিনীতে চলে যাচ্ছি।”
উনুনের আলোতে তোমার মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম। তোমার
চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তুমি দাঁড়িয়ে আশীর্বাদের ভঙ্গিতে
তাকালে। আমার ঘরের পেছনে বেলগাছটার কিছু পাতা বাতাসে
দোল খেয়ে আবার স্থির হয়ে গেল। মা, সেদিন সন্ধ্যাতেই তুমি
আমাকে হাসিমুখে বিদায় দিয়েছিলে। মা, মনে হচ্ছে কত যুগ
পেরিয়ে গেছে, আর একটি দিন ইতিহাসের পাতার মতো রয়ে
গেছে। কত আশা, কত আকাঙ্ক্ষা অন্যায়ের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে
গেছে। কিন্তু মা, দিনান্তের ক্লান্তি নিত্যকার মতো সেই সন্ধ্যাটা
আবার আসবে তো?
ইতি
তোমার স্লেহের ববিন
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মা, ১৫ই জুলাই ১৯৭১
পথ চলতে গিয়ে ক্ষণিকের বিশ্রামস্থল রাস্তার ধারের এ বাড়ি
তোমায় চিঠি লিখতে সাহায্য করছে। বাড়ি থেকে আসার পর
এই প্রথম তোমায় লিখার সুযোগ পেলাম। এর পূর্বে ইচ্ছে থাকা
সত্তেও কাগজ, কলম, মন ও সময় একীভূত করতে পারিনি।
টিনের চালাঘরে বসে আছি। বাইরে ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধা বিপ্লব এর চিঠি কবি বিপ্লব।
মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী দেবযানী বিশ্বাস এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Abritti Online YouTube Channel । রণাঙ্গন থেকে লেখা ‘একাত্তরের
চিঠি’র পাঠ সংকলন "রুধিয়া রাখিতে নারি" থেকে। এই পত্রটি
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
ঘুটঘুটে অন্ধকার সর্বত্র। প্রকৃতির একটা চাপা আর্তনাদ শোনা
যাচ্ছে টিনের ওপর বৃষ্টি পড়ার শব্দে শব্দে। মাগো, আজ মনে
পড়ছে বিদায়বেলায় তোমার হাসিমুখ। সাদা ধবধবে শাড়িটায়
বেশ মানিয়েছিল তোমায়। বর্ধার সকাল। আকাশে খণ্ড খণ্ড সাদা
মেঘের ভেলা ভাসছিল। মেঘের ফাঁকে সেদিনকার পূর্ব দিগন্তের
সূর্যটা বেশ লাল মনে হয়েছিল। সেদিন কি মনে হয়েছিল জানো
মা, অসংখ্য রক্তবীজের লাল উত্তপ্ত রক্তে ছেয়ে গেছে সূর্যটা। ওর
এক একটা কিরণচ্ছটা পৃথিবীতে জন্ম দিয়েছে এক একটি
বাঙালি। অগ্নিপথে বলীয়ান, স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত। মাগো,
তোমার কোলে জন্মে আমি গর্বিত। শহীদের রক্ত রাঙা পথে
তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেকে তুমি এগিয়ে দিয়েছ।
ক্ষণিকের জন্যও তোমার বুক কাঁপেনি, স্নেহের বন্ধন দেশমাতৃকার
ডাককে উপেক্ষা করতে পারেনি। বরং তুমিই আমাকে মুক্তি
বাহিনীতে যোগদানের জন্য প্রেরণা দিয়েছ। দেশকে ভালোবাসতে
শিখিয়েছ। মা, তুমি শুনে খুশি হবে তোমারই মতো
অসংখ্য জননী তাদের স্নেহ ও ভালোবাসার সম্পদ পুত্র-সন্তান,
স্বামী, আত্মীয়, ঘরবাড়ি সর্বস্ব হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হয়নি ;
বরং ইস্পাতকঠিন মনোবল নিয়ে আজ অগ্নিশপথে বলীয়ান।
মাগো, বাংলার প্রতিটি জননী কি তাদের ছেলেকে দেশের তরে
দান করতে পারে না? পারে না এ দেশের মা-বোনেরা ছেলে ও
ভাইদের পাশে এসে দাঁড়াতে? মা তুমিতো একদিন বলেছিলে,
“সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন এ দেশের মায়ের কোলের শিশুরা
মা-বাবার কাছে বিস্কুট-চকলেট চাইবে না জেনো, চাইবে
রিভলবার পিস্তল।" সেদিনের আশায় পথ চেয়ে আছে দেশের
প্রতিটি সন্তান। যেদিন বাংলার স্বাধীনতা সূর্যে প্রতিফলিত হবে
অধিকারবঞ্চিত, শোষিত, নিপীড়িত বুভুক্ষ সাড়ে সাত কোটি জাত
বাঙালির আশা, আকাঙ্খা। যে মনোবল নিয়ে প্রথম তোমার
থেকে বিদায় নিয়েছিলাম তা আজ শতগুণে বেড়ে গেছে, মা।
রক্তের প্রবাহে আজ খুনের নেশা টগবগিয়ে ফুটছে। এ শুধু
আমার নয়, প্রতিটি বাঙালি, পাঞ্জাবি হানাদার লাল কুত্তাদের
দেখলে খুনের নেশায় মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। তাই তো বাংলার
প্রতিটি আনাচে-কানাচে এক মহাশক্তি ও দুর্জয় শপথে বলীয়ান
মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা অনেক বেড়ে গেছে। তোমাদের
এ অবুঝ শিশুগুলিই আজ হানাদার বাহিনীকে চরম আঘাত
হানছে। পান করছে হানাদার পশুশক্তির রক্ত। ওরা মানুষ হত্যা
করে। আমরা পশু হত্যা করছি। এই তো সেদিন বাংলাদেশের
ময়মনসিংহ জেলার সদর দক্ষিণ মহকুমার কোনো এক মুক্ত
এলাকায় ভালুকাতে প্রবেশ করতে গিয়ে হানাদার বাহিনী মুক্তি
বাহিনীর বীর যোদ্ধাদের হাতে চরম মার খেয়েছে। মা, তোমার
ছোট্ট ছেলে বিপ্লবের হাতেই লেগে আছে বেশ কয়টা পশুর রক্ত।
এমনি করে বাংলার প্রতিটি আনাচে-কানাচে মার খাচ্ছে ওরা।
মাত্র শুরু। যুদ্ধনীতি ওদের নেই, তাই বাংলার নিরীহ অস্ত্রহীন
কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, বৃদ্ধ, শিশু ও নারীর ওপর হত্যা
কাণ্ডের মই চালাচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ড ভিয়েতনামের একাধিক
“মাইলাইয়ের” হত্যাকাণ্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে।
ওরা পশু। পশুত্বের কাহিনী শুনবে, মা? তবে শোনো। শত্র
কবলিত কোনো এক এলাকায় আমার এক ধর্ষিতা বোনকে
দেখেছিলাম নিজের চোখে। ডেকেছিলাম বোনকে। সাড়া দেয়নি।
সে মৃত। সম্পূর্ণ বিবস্ত্র দেহে পাশবিক অত্যাচারের চিহ্ন শরীরের
প্রতিটি ভাজে ভাজে। বাংলার শিশু ছিল তার গর্ভে কিন্তু তবু
পাঞ্জাবি পশুর হায়না কামদৃষ্টি থেকে সে রেহাই পায়নি। সে
মরেছে কিন্তু একটা পশুকেও হত্যা করেছে। গর্বিত, স্তব্ধ, মূঢ় ও
কঠিন হয়েছিলাম। আজ অসংখ্য ভাই ও বোনের তাজা রক্তকে
সামনে রেখে পথ চলছি আমরা। মাগো, বাংলাদেশে হানাদার
বাহিনীর এমন অত্যাচারের কাহিনী শুনে ও দেখে কি কোনো জননী
তার ছেলেকে প্রতিশোধের দীক্ষা না দিয়ে স্নেহের বন্ধনে নিজের
কাছে আটকে রাখতে পারে? পারে না। প্রতিটি জননীই আজ তার
ছেলেকে দেবে মুক্তিবাহিনীতে, যাতে রক্তের প্রতিশোধ, নারী
নির্যাতনের প্রতিশোধ শুধু রক্তেই নেওয়া যায়। মা, আমার ছোট্ট
ভাই তীতু ও বোন প্রীতিকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও। পারবে না
আমাদের তিন ভাই-বোনকে ছেড়ে একা থাকতে? মা, মাগো। দুটি
পায়ে পড়ি, মা। তোমার ছেলে ও মেয়েকে দেশ ও জাতির
ক্রান্তিলগ্নে ঘরে আটকে রেখো না। ছেড়ে দাও স্বাধীনতার উত্তপ্ত
রক্তপথে। শহীদ হবে, অমর হবে, গাজী হয়ে তোমারই
কোলে ফিরে আসবে, মা। মাগো, জয়ী আমরা হবই। দোয়া রেখো।
জয় বাংলা।
ইতি
তোমারই বিপ্লব
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
চিঠি লেখক - মুক্তিযোদ্ধা পাটোয়ারি নেসারউন্দিন নয়ন।
চিঠি প্রাপক - স্ত্রী ফাতেমা বেগম অনু, গ্রাম - মৈশাদী, ইউনিয়ন -
তরপুরচণ্ডী, থানা ও জেলা - চাঁদপুর।
অনু, ২০.৭.১৯৭১
ভালো আছি। তোমার মনের বাঁধ ভেঙে গেলে বলব, লক্ষ্মী আমার
মানিক আমার, চিন্তা করো না। তোমার নয়ন কুশলেই আছে।
মুক্তিযোদ্ধা কবি পাটোয়ারি নেসারউন্দিন নয়ন
|
মুক্তিযোদ্ধা নয়ন এর চিঠি কবি পাটোয়ারি
নেসারউন্দিন নয়ন। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী রামিজ রাজু এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে The
Stage Ramiz Razu YouTube Channel । রণাঙ্গন থেকে লেখা
‘একাত্তরের চিঠি’র পাঠ সংকলন "রুধিয়া রাখিতে নারি" থেকে। এই
পত্রটি পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই
অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী
পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক
করুন...।
বিধাতার অপার করুণা। যখন আমায় বেশি করে মনে পড়বে
তখন এই ভেবেই মনকে বোঝাবে, এই বলেই বিধাতার কাছে
প্রার্থনা জানাবে। শুভ কাজে অনড় থেকে শুভ সমাধা করে যেন
ঘরের ছেলে ঘরে ফিরতে পারি। ফিরতে পারি মায়ের
বুকে, মুছিয়ে দিতে মায়ের এত কান্নাকে। নতুন দিনের আলোয়
ভরা উজ্জ্বল প্রভাতে গিয়ে যেন মাকে মা বলে ডাকতে পারি।
দোয়া করো। তোমরা সবাই নামাজ পড়ো। তোমার মনের দৃড়
প্রত্যয় আমায় জোগাবে এগিয়ে চলার শাশ্বত মনোবল। আমি এ
বলে বলীয়ান হয়ে অন্যায়কে পদদলিত করতে জানব, সত্যকে
আকড়ে ধরতে পারব বেশি করে। এবং এ পারাই আমায় এগিয়ে
নিয়ে যাবে শেষ লক্ষস্থলে, যেখানে ভবিষ্যৎ বংশধরেরা হাসতে
পারবে, কথা বলতে পারবে, বাঁচার মতো বাঁচতে পারবে নিজ
শক্তিতে শক্তিমান হয়ে।
পাহাড়ের শ্যামল বনরাজির এ মেলায় প্রায় প্রতিদিন বর্ষা নামে
চারদিক অন্ধকার করে। বর্ষার অশান্ত বর্ষণে পাহাড়ি ঝরনায়
তখন মাতন নেমে আসে। দুর্বার বেগে ঝরনার সে জলধারা
কলকল গান করে এগিয়ে চলে সমতলের দিকে। আমার মনের
সবটুকু মাধুরী ঢেলে তখন সে ধারাকে কানে কানে বলি--- ওগো
ঝরনার ধারা, তুমি সমতলের দেশে গিয়ে আমার অনুকে আমার এ
বারতা বলে দিয়ো, ওকে আমার একান্ত কাছে পাই যখন সবাই
ঘুমিয়ে পড়ে। নিকষ কালো অন্ধকারের একাকিত তখন আর থাকে
না। মনের আলোয় আমি সবকিছু দেখতে পাই। দূরকে দূর মনে
হয় না। একাকার হয়ে যায়। ওগো ঝরনার ধারা, তুমি অনুকে এও
বলো--- তোমার নয়ন তোমার কথা ভাবে--- মনের প্রশান্তিতে
ভরিয়ে আনতে তাকে সাহায্য করে সব দিক দিয়ে। তুমি ওকে
বলো--- মিছে মিছে আমার অনু যেন মন খারাপ করে
না থাকে। ওর হাসিখুশি মন ও আত্মশক্তিই তো আমার প্রেরণার
উৎস।
আচ্ছা, সত্যি করে বল তো লক্ষ্মী, তুমি কি গোমরা মুখ করে সারা
দিন ঘরের কোণে একাকী বসে বসে কাটাও? না, এ চিঠি পাবার
পর থেকে তা করো না। আমি কিন্তু টের পেয়ে যাব। তিন সত্যি
করে বলছি--- দেশে গিয়ে তোমার সে-ই কিচ্ছাটা সুন্দর করে
শোনাব। না, না, মিথ্যে বলছি না। অবশ্য আগে বলতাম। বিশ্বাস
করো, আগের আমি আর এখনকার আমি অনেক তফাত।
এখনকার আমি ভবিষ্যৎ বংশধরের প্রাথমিক সোপান।
তোমার শরীরে পরিবর্তন এসেছে অনেকটা বোধহয়। নিজের
প্রতি বিশেষ যত্নবান হয়ো। মনকে প্রফুল্ল রেখো। মনের প্রফুল্লতা
ভবিষ্যৎকে সুন্দর করবে প্রয়োজনবোধে ওষুধ সেবন করো।
সাবধানে থেকো। বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেয়ো না। আম্মাকেও
কোথাও যেতে দিয়ো না। বুঝি, আমার কথা তুমি একটু বেশি
করেই ভাব। সত্যি বলছি, ভাববার কিছুই নেই! আজ আমি ধন্য
এই জন্য যে আমি আমার দেশকে ভালোবাসতে শিখেছি। আমার
এ শিক্ষা কোনো দিন বিফলে যাবে না। তোমার সন্তানেরা একদিন
বুক উঁচু করে তাদের বাবার নাম উচ্চারণ করতে পারবে। তুমি
হবে এমন সন্তানের জননী, যে সন্তান মানুষ হবে, মানুষকে মানুষ
বলে ভাবতে জানবে। এবং এ মানুষ হওয়া সম্পূর্ণ নির্ভর করবে
তোমার ওপর। কেবলমাত্র আত্মশক্তিতে বলীয়ান মা-ই তেমন
সন্তান দেশকে দিতে পারে। আশা করি তুমি সেই আদর্শ জননীর
ভূমিকাই পালন করে যাবে--- কাজে, কথায়, চিন্তায়।
মার সাথে দেখা করে আসতে পারিনি। পারিনি আজ পর্যন্ত
সন্তানের কর্তব্য পালন করতে। আমার অবর্তমানে তাঁকে দেখার
ভার তোমার ওপর রইল। সন্তান হয়ে যা করতে পারিনি, বধু হয়ে
তোমায় তা করতে হবে। পরিশেষে বলব, যাত্রা সবে শুরু হলো।
পথ এখনো অনেক বাকি। পথের দুর্গমতা দেখে থমকে দাঁড়ালে
চলবে না। এগিয়ে যেতে হবে দৃঢ় পদক্ষেপে, সকল বাধাকে
দলিতমথিত করে। এর জন্য চাই অটুট মনোবল। সে মনোবলের
অধিকারিণী হয়ে ভবিষ্যৎ বংশধরদের মানুষ করে গড়ে তোলো।
গকুলনগর থাকতে কি মজার ব্যাপার হয়েছিল তা অনেক দিন
পরে হলেও লিখে আজকের লেখার ইতি টানব। কী কারণে যেন
সেদিন সারা বেলা উপোস থাকতে হয়েছিল। খাওয়া আর হয়ে
ওঠেনি। সকালবেলাতেও না-রাতেও না। একেবারে কিছু না খেয়ে
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুমিয়ে পড়েও কিন্তু ঘুমিয়ে থাকতে পারিনি।
তুমি এসে ঘুমের বারটা বাজিয়ে হরেক রকমের এত খানা খাইয়ে
দিয়েছ যে আর খেতে পারি না বলে তোমার হাত চেপে ধরে যেই
দুষ্টুমী করতে গিয়েছি, অমনি ঘুম ভেঙে গেল। নিজেকে কিছুটা
সামলে নিয়ে দেখি আমি বাড়িতে শুয়ে নেই। সুউচ্চ পাহাড়ের
মালভুমিতে তাঁবুর এক কোণ ঘেঁষে আমার ব্যাগটার, যেটা
বালিশের কাজ দিচ্ছিল, হ্যান্ডেল ধরে ওপরের দিকে চেয়ে আছি।
তাবুর সামনের পর্দা সরিয়ে দেখি ভোর হতে আর দেরি নেই।...
সেই যে একদিন এলে--এরপর আর আসনি। এলেই তো পারো।
এবার কিন্তু ইতি টানব না--- শুধু বলব--- নিচে একটা ধাধা দিলাম,
মাথা ঘামিয়ে ভেঙে দাও। ভাঙতে পারলে জানতে পারবে আমি
কোথায় আছি।
ধাধা . . .
তিন অক্ষরে নাম আমার হই দেশের নাম
মধ্যের অক্ষর বাদ দিলে গাছেতে চড়লাম
শেষের অক্ষর বাদ দিলে কাছে যেতে কয়
বলো তো অনু, আমি রয়েছি কোথায়?
আব্বা-আম্মাকে সালাম দিয়ে দোয়া করতে বলো। ছোটদের
সেহাশিস জানিয়ো। তুমি নিয়ো সহস্র চুমো অ-নে-ক আদর।
তোমার নয়ন
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি ফহম উদ্দিন আহমেদ
|
মুক্তিযোদ্ধা ফহম উদ্দিন আহমেদ এর
চিঠি কবি ফহম উদ্দিন আহমেদ। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের
কাছে কবিতাই !
প্রথম আলো চ্যানেলের অনামা শিল্পীর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি
সৌজন্যে Prothom Alo YouTube Channel । প্রথম আলোর পাঠ
সংকলন "একাত্তরের চিঠি" থেকে। এই পত্রটি পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
এই চিঠিটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র থেকে সংগ্রহ
করা হয়েছে
৩০শে অক্টোবর ১৯৭১
আজিজ ভাই,
সালাম নিবেন ও আর সবাইকে দিবেন। পাকিস্তান মিলিটারির
পাল্লায় আমরা পড়েছি, না পাক মিলিটারি আমাদের পাল্লায়
পড়েছে, তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। তবে ওদের সঙ্গে
আমাদের প্রায়ই দেখা হচ্ছে এবং সামনে আরও হবার সম্ভাবনা
আছে বুঝতে পারছি। ২৬-১০-৭১ তারিখে চরকুলিয়ার যুদ্ধে
আমরা সর্বমোট একশত আটান্ন জন হানাদারকে মেরেছি এবং
প্রায় এক শতাধিককে জখম করেছি। কোথাও থেকে সাহায্য
পাইনি। যাক, আতি ভাইকে আপনার কাছে পাঠালাম। সাচিয়াদহ
হাট আদায় না করলে আমাদের সত্যিকারে নানা রকম
অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তাই খাজা মিয়াকে বলবেন,
যাতে আমাদের লোক হাট আদায় করতে গেলে কোনো রকম
বাধা-বিপত্তি না করে। ভালো আছি। এইমাত্র দুঃসংবাদ পেলাম।
তাই আবার চরকুলিয়া দৌড়াচ্ছি।
ইতি
ফহম উদ্দিন আহমেদ
জোনাল অফিসার
নর্থ খুলনা জোন
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মাগো, ৪ অক্টোবর ১৯৭১
সবেমাত্র রণাঙ্গন থেকে ফিরে এসে শিবিরে বিশ্রাম নিচ্ছি। একটা
বিস্তীর্ণ এলাকা শক্রমুক্ত করতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছি।
মনটা তাই বেশ উৎফুল্ল। হঠাৎ মনে পড়ল তোমাকে। বাড়ি
থেকে আসার পর এই প্রথম তোমাকে লিখছি। ইচ্ছে থাকা সত্তেও
তোমায় লিখতে পারিনি। বাঙ্কারে বসে আছি। বাইরে
মুক্তিযোদ্ধা দুলাল এর চিঠি কবি দুলাল।
মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী মৌমিতা জ্যোতি এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Abritti Online YouTube Channel । রণাঙ্গন থেকে লেখা ‘একাত্তরের
চিঠি’র পাঠ সংকলন "রুধিয়া রাখিতে নারি" থেকে। এই পত্রটি
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি আর বাতাসের শব্দ মিলে একটা চাপা
আর্তনাদ ভেসে আসছে।
মাগো, আজ মনে পড়ছে বিদায় নেবার বেলায় তোমার করুণ
হাসিমুখ। সাদা ধবধবে শাড়িটায় বেশ মানিয়েছিল তোমাকে।
সেদিনের পূর্ব দিগন্তের সূর্যটা বেশ লাল মনে হয়েছিল। আমার কী
মনে হয়েছিল জানো মা? অসংখ্য বাঙালির রক্তে রঞ্জিত
ওই লাল সূর্যটা। ওর প্রতিটা কিরণচ্ছটা পৃথিবীতে জন্ম দিয়েছে
অগ্নি-শপথে বলীয়ান, স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত এক একটা বাঙালি
সন্তান। মাগো---তোমার কোলে জন্মে আমি ধন্য। শহীদের রক্ত
রাঙা পথে তোমার আদুরে ছেলেকে এগিয়ে দিয়েছে। ক্ষণিকের
জন্যও তোমার বুক কাঁপেনি, স্নেহের বন্ধন-- দেশমাতৃকার ডাক
উপেক্ষা করতে পারোনি। মা, তুমি শুনে খুশি হবে যে তোমারই
মতো, অসংখ্য জননী তাঁদের স্নেহ ও ভালোবাসার ধন-পুত্র-স্বামী,
আত্মীয়-সর্বস্ব হারিয়েও শোকে মুহ্যমান হয়নি ; বরং ইস্পাত
কঠিন মনোবল নিয়ে আজ অগ্নি-শপথে বলীয়ান।
মাগো---বাংলার প্রতিটি জননী কি তাঁদের ছেলেকে দেশের তরে
দান করতে পারে না---পারে না মা-বোনেরা ভাইয়েদের পাশে এসে
দাঁড়াতে? তুমিই তো একদিন বলেছিলে. সেদিন বেশি দূরে নয়---
যেদিন এ দেশের শিশুরা মা-বাবার কাছে বিস্কুট-চকলেট না চেয়ে
চাইবে পিশুল-রিভলবার।
সেদিনের আশায় পথ চেয়ে আছে বাংলার প্রতিটি সন্তান, যেদিন
বাংলার স্বাধীনতার সূর্য প্রতিফলিত হবে, অধিকারবঞ্চিত,
শোষিত, নিপীড়িত, বুভৃক্ষু, সাড়ে সাত কোটি বাঙালির আশা-
আকাঙ্ক্ষা। যে মনোবল নিয়ে প্রথম তোমা থেকে বিদায়
নিয়েছিলাম, তা আজ শত গুণ বেড়ে গেছে। শুধু আমার নয়,
প্রতিটি বাঙালি খুনের হানছে মাতোয়ারা। তাই তো বাংলার
আনাচকানাচে এক মহাশক্তিতে বলীয়ান তোমার অবুঝ শিশু
গুলোই আজ হানাদার বাহিনীকে চরম আঘাত হেনেছে---পান
করছে হানাদার পশুদের তাজা রক্ত। ওরা মানুষ হত্যা করছে---
আর আমরা পশু হত্যা করছি। মা, মাগো। দুটি পায়ে পড়ি মা।
তোমার ছেলে ও মেয়েকে দেশ ও জাতির ত্রান্তিলগ্নে ঘরে আটকে
রেখো না। ছেড়ে দাও স্বাধীনতার উত্তপ্ত রক্তপথে। শহীদ হয়ে
অমর হব ; গাজী হয়ে তোমারই কোলে ফিরে আসব মা। মাগো-
জয়ী আমরা হবই। দোয়া রেখো। জয় বাংলা।
তোমারই
দুলাল
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
প্রিয়তম স্বামী, ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সালাম নিয়ো এবং ভালোবাসা। জাহান ভাই-এর হাতে একটা চিঠি
পাঠিয়েছ। চিঠিটা পড়ে বেশ কিছুদিন পর ছিঁড়ে ফেলেছি
রাজাকারদের ভয়ে। কারণ রাজাকাররা ২৪ ঘণ্টা আমাদের বাড়ি
পাহারা দিচ্ছে --- তোমাকে ধরার জন্য। তোমার দ্বিতীয় সন্তানের
বয়স যখন ৬ দিন, তখন তোমার চিঠিটা পাই। তুমি লিখেছিলে
মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী কবি কদবানু আলেয়া
|
মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী কদবানু আলেয়া-র চিঠি
কবি কদবানু আলেয়া মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাকের স্ত্রী।
মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী জিনাত জাহান এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Abritti Online YouTube Channel । রণাঙ্গন থেকে লেখা ‘একাত্তরের
চিঠি’র পাঠ সংকলন "রুধিয়া রাখিতে নারি" থেকে। এই পত্রটি
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
আমি বেঁচে থাকি তোমার গর্ব তোমার স্বামী। বাংলাদেশকে
ছিনিয়ে আনব। আমি ছুটোছুটি করতে থাকি। প্রচণ্ড কষ্ট
বোঝাতে পারব না। আমি যেদিন তোমাদের বাড়ি থেকে আমার
বাবার বাড়ি আসি, সেদিন ছিল ১৪ই জুলাই। সেদিন তুমি বাড়িতে
ছিলে না। বুঝেছিলাম তুমি অস্থির আছ এবং বেশ কয়েক মাস
ধরে লুকিয়ে থাকছ এবং অস্থিরতার মধ্যে থাকছ। কিন্তু আমাকে
কিছু বলো না। বুঝতে পারতাম তুমি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য তৈরি
হচ্ছ। আমার বাবার বাড়িতে আসার কয়দিন পর বাবুর জন্ম
হলো, ২১শে জুলাই। আশা করেছিলাম তুমি আসবে। তার
বদলে এল চিঠি। আগামীকাল আমি শ্বশুরবাড়ি অর্থাৎ তোমাদের
বাড়ি যাব। রাজাকারদের অত্যাচারে। জাহান ভাই-এর মাধ্যমে
খবর পেতাম। তুমি বেঁচে আছ। ওখানে খবর পাব কীভাবে?
তাই লিখছি।
তোমার আড়াই বছরের বড় ছেলে সব সময় পতাকা হাতে নিয়ে
জয় বাংলা বলতে থাকে আর রাজাকাররা ধমক দেয়। আব্বা
ছেলের মুখ চেপে ধরে, ছেলে ছটফট করতে থাকে আর বলে,
নানু, আমাকে ছেড়ে দাও এবং বলে বাংলাদেশ জয় হোক।
রাজাকাররা আব্বাকে বলে, তোমার জামাই তোমার বাড়িতে
আসে, তোমাকে ধরিয়ে দিব। তোমার বাড়ি পুড়িয়ে দিব। এই
সমন্ত কারণে আব্বাকে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আল্লাহর
কাছে দোয়া করি, দেশ স্বাধীন করে ফিরে এসো সুস্থ দেহে।
ইতি
তোমার কদবানু আলেয়া
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি মহিউদ্দিন মনু
|
মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মনু-র চিঠি কবি
মহিউদ্দিন মনু। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
প্রথম আলো চ্যানেলের অনামা শিল্পীর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি
সৌজন্যে Prothom Alo YouTube Channel । প্রথম আলোর পাঠ
সংকলন "একাত্তরের চিঠি" থেকে। এই পত্রটি পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
চিঠিটি কাউনিয়া, বরিশাল থেকে লিখেছিলেন এটিএম রফিকুল
ইসলাম এর কাছে।
বরিশাল ২৫.৮.১৯৭১
রফিক ভাই,
শুভেচ্ছা নিন। কেমন আছেন, সাবধান ভাই, আমি ধরা
পড়েছিলাম মিলিটারি ক্যান্টনমেন্টে। বাংলার স্বাধীনতার স্বাদ
আমার জীবন থেকে হয়তো বঞ্চিত হবে না সেই কারণেই
জাঁদরেল পাক বাহিনী আমাকে দীর্ঘদিন আটক রেখে ছেড়ে
দিয়েছে। নতুন করে শপথ নিয়েছি ওদের আমরা শেষ চিহ্নটুকুও
বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ করব। আপনারা চাখারের
বানাড়ীপাড়ায় কী ধরনের অপারেশন করছেন। সাবধান, শপথ
নিয়ে নেমেছেন ও নেমেছি, পিছপা হব না বা হবেন না। রফিক
ভাই, জানি না কবে আমরা আবার পাশাপাশি মুক্ত দেশের মুক্ত
হাওয়ায় প্রাণ খুলে কথা বলতে পারব। আপনার মঙ্গল কামনা
করি। জয় বাংলা, বাংলাদেশ অমর হউক।
ইতি
আপনারই
মনু
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি বেশারউদ্দীন আহমদ
|
মুক্তিযোদ্ধা বেশারউদ্দীন আহমদ এর
চিঠি কবি বেশারউদ্দীন আহমদ। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের
কাছে কবিতাই !
প্রথম আলো চ্যানেলের অনামা শিল্পীর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি
সৌজন্যে Prothom Alo YouTube Channel । প্রথম আলোর পাঠ
সংকলন "একাত্তরের চিঠি" থেকে। এই পত্রটি পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
চিঠিটির লেখক মুক্তিযোদ্ধা বেশারউদ্দীন আহমদ বড়গ্রাম
অপারেশন ক্যাম্প থেকে তিনি লিখেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা
শহীদুল্লাহকে।
৩.৮.১৯৭১
শ্রদ্ধেয় শহীদুল্লাহ্ ভাই,
সালাম নেবেন। আপনার সঙ্গে দেখা করব করব করেও সম্ভব
হয়ে উঠছে না। আপনার বড়গ্রাম অপারেশন ক্যাম্প নিয়ে বড়
ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আপনি নিজেও একবার এলেন না।
আশা করি আগামীতে একবার এসে ক্যাম্প পরিদর্শন করে যাবেন
। তা ছাড়া অপারেশন বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলাপ আছে।
অর্থাৎ (গোদাগাড়ী) ক্যাম্প উঠিয়ে দিতে হলে আপনার সঙ্গে
মিলিতভাবে একটা প্যান করা দরকার। যা হোক একটু দোয়া
রাখবেন, যেন অবিলম্বে আমরা একটা বড় রকমের অপারেশন
করতে পারি। আর সে কাজে কিছু অটোমেটিক হাতিয়ার দরকার
। অনেক চেষ্টা করেও উদ্ধার বা সংগ্রহ করা গেল না। বর্তমানে
কাটলা ইয়ুথ ক্যাম্পে নাকি দু-একটি LMG এল.এম.জি রাইফেল
আছে। যদি দয়া করে সেগুলো আপনাদের বড়গ্রাম ক্যাম্পে
পাঠিয়ে দেন তো যারপরনাই উপকার হবে এবং আশা করি
আপনি তার ত্রুটি করবেন না।
ইতি আপনার মাস্টার ভাই
বেশারউদ্দীন আহামদ
৩.৮.৭১
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মাগো, ১ অগাস্ট ১৯৭১
তুমি আমায় ডাকছিলে? আমার মনে হলো তুমি আমার শিয়রে
বসে কেবলই আমার নাম ধরে ডাকছো, তোমার অশ্রুজলে
আমার বক্ষ ভেসে যাচ্ছে, তুমি এত কাঁদছো? আমি তোমার
ডাকে সাড়া দিতে পারলাম না। তাই আমায় ডেকে ডেকে হয়রান
হয়ে গেলে।
মুক্তিযোদ্ধা কবি ইসহাক খান
|
মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক খান এর চিঠি কবি ইসহাক
খান। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী শুক্লা রায় এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে Abritti
Online YouTube Channel । রণাঙ্গন থেকে লেখা ‘একাত্তরের চিঠি’র
পাঠ সংকলন "রুধিয়া রাখিতে নারি" থেকে। এই পত্রটি পাঠের
অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি
অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের
লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
স্বপ্নে একবার তোমাকে দেখতে চেয়েছিলাম, তুমি আমার বড়
আবদারের, ছেলের আবদার রক্ষা করতে এসেছিলে। কিন্তু মা,
আমি তোমার সঙ্গে একটি কথাও বললাম না। দুচোখ মেলে
কেবল তোমার অশ্র্জলই দেখলাম। তোমার চোখের জল মুছাতে
এতটুকু চেষ্টা করলাম না।
মা, তুমি আমায় ক্ষমা করো তোমায় বড় ব্যথা দিয়ে গেলাম।
তোমাকে এতটুকু ব্যথা দিতেও তো চিরদিন আমার বুকে
বেজেছে। তোমাকে দুঃখ দেওয়া আমার ইচ্ছা নয়। আমি স্বদেশ
জননীর চোখের জল মুছাবার জন্য বুকের রক্ত দিতে এসেছি তুমি
আমায় আশীর্বাদ করো, নইলে আমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে না।
একটিবার তোমাকে দেখে যেতে পারলাম না। সে জন্য আমার
হৃদয়কে ভুল বুঝো না তুমি। তোমার কথা আমি এক মুহূর্তের
জন্য ভুলিনি, মা। প্রতিনিয়তই তোমার আশীর্বাদ প্রার্থনা করি।
আমার অভাব যে তোমাকে পাগল করে তুলেছে তা আমি জানি।
মাগো, আমি শুনেছি, তুমি ঘরের দরজায় এসে সবাইকে ডেকে
ডেকে বলছ--- “ওগো, তোমরা আমার ‘ইসহাক’-শূন্য রাজ্য দেখে
যাও” তোমার সেই ছবি আমার চোখের ওপর দিনরাত ভাসছে।
তোমার এই কথাগুলি আমার হৃদয়ের প্রতি তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে
কান্নার সুর তোলে। মাগো, তুমি অমন করে আর কেঁদো না।
আমি যে সত্যের জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি
তাতে আনন্দ পাও না?
কী করব মা? দেশ যে পরাধীন। দেশবাসী যে বিদেশির
অত্যাচারে জর্জরিত। দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলাভারে অবনতা,
লাঞ্ছিতা, অবমানিতা। তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা?
একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উৎসর্গ করতে পারবে
না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে?
আর কেঁদো না মা। যাবার আগে আর একবার তুমি আমায় স্বপ্নে
দেখা দিয়ো। আমি তোমার কাছে জানু পেতে ক্ষমা চাইব। আমি
যে তোমার মনে বড় ব্যথা দিয়ে এসেছি মা। ইচ্ছে করে ছুটে
গিয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আসি। তুমি আদর করে আমাকে
বুকে টেনে নিতে চাইছ, আমি তোমার হাত ছিনিয়ে চলে এসেছি।
খাবারের থালা নিয়ে আমায় কত সাধাসাধিই না করেছ, আমি
পেছন ফিরে চলে এসেছি।
না, আর পারছি না। ক্ষমা চাওয়া ভিন্ন আর আমার উপায় নেই।
আমি তোমাকে দুদিন ধরে সমানে কাঁদিয়েছি। তোমার কাতর
ক্রন্দন আমাকে এতটুকু টলাতে পারেনি।
কী আশ্চর্য মা, তোমার ইসহাক নিষ্ঠুর হতে পারল কী করে! ক্ষমা
করো মা, আমায় তুমি ক্ষমা করো।
ইতি
ইসহাক
চিঠি প্রাপক : মা, ফয়জনের নেসা।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
১৯৭১ সালের ১৬ই জুলাই তারিখে রণাঙ্গণ থেকে শিশুকন্যা
ওয়াসেকা এ খান কে লেখা।
মামণি আমার,
তুমি যখন ইনশাল্লাহ পড়তে শিখবে, বুঝতে শিখবে, তখনকার
জন্য আজকের এই চিঠি লিখছি। তোমার ছোট্ট বুকে নিশ্চয়ই
মুক্তিযোদ্ধা কবি আতাউর রহমান খান কায়সার
|
মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খান
কায়সার এর চিঠি কবি আতাউর রহমান খান কায়সার।
মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী শামস কালাম এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে Abritti
Online YouTube Channel । রণাঙ্গন থেকে লেখা ‘একাত্তরের চিঠি’র
পাঠ সংকলন "রুধিয়া রাখিতে নারি" থেকে। এই পত্রটি পাঠের
অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি
অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের
লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
অনেক অভিমান জমা। আব্বু তোমাকে দেখতে কেন আসে না।
মা আমার, আব্বু আজ তোমার জন্মদিনে তোমাকে বুকে নিয়ে
বুক জুড়াতে পারছে না এই দুঃখ তোমার আব্বুর জীবনেও যাবে
না। কী অপরাধে তোমার আব্বু আজ তোমার কাছে আসতে
পারে না। তোমাকে কোলে নিয়ে আদর করতে পারে না, তা তুমি
বড় হয়ে হয়তো বুঝবে, মা। কারণ আজকের অপরাধ তখন
অপরাধ বলে গণ্য হবে না। আজকে এ দেশের জনসাধারণ
তোমার আব্বুর মতোই অপরাধী, কারণ তারা নিজেদের
অধিকার চেয়েছিল। অপরাধী দেশবরেণ্য নেতা, অপরাধী লেখক,
শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক--- এ দেশের সব বুদ্ধিজীবী, কারণ
তারা এ দেশকে ভালোবাসে। হানাদারদের কাছে, শোষকদের
কাছে এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কিছুই নেই। এই অপরাধের
শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সেই দণ্ড এড়াবার জন্য লাখ লাখ লোক দেশ
ত্যাগ করেছে। সেই দণ্ড এড়াবার জন্য তোমার আব্বুকে গ্রামে
গ্রামে, পাহাড়ে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। তাই আজ বুক ফেটে
গেলেও আব্বু এসে তোমাকে কোলে নিয়ে আদর করতে পারছে
না। মনের মণিকোঠায় তোমার সে ছোট্ট মুখখানি সব সময় ভাসে,
কল্পনায় তাকে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিই । আর তাতেই তোমার
আব্বুকে সান্ত্বনা পেতে হয়।
আম্মু, নামাজ পড়ে প্রত্যেক ওয়াক্তে তোমার জন্য দোয়া করি।
আল্লাহ রহমানুর রাহিমের কাছে মোনাজাত করি তিনি যেন
তোমার আম্মুকে আর তোমাকে সুস্থ রাখেন, বিপদমুক্ত রাখেন
মামণি, তোমার আম্মু লিখেছে তুমি নাকি এখন কথা বল। তুমি
নাকি বল, আব্বু জয় বাংলা গাইত। ইনশাল্লাহ সেই দিন বেশি
দূরে নয় আব্বু আবার তোমাকে জয়বাংলা গেয়ে শোনাবে। যদি
আব্বু না থাকি তোমার আম্মু সেদিন তোমাকে জয়বাংলা গেয়ে
শোনাবে। তোমার আম্মু আরও লিখেছে, তুমি নাকি তোমাকে
পিট্টি লাগালে আম্মুকে বের করে দেবে বলে ভয় দেখাও। তোমার
আম্মু না ভীষণ বোকা। খালি তোমার আর আমার জন্য কষ্ট
করে। বের করে দিলে দেখো আবার ঠিক ঠিক ফিরে আসবে।
আমাদের ছেড়ে থাকতে পারবে না।
তোমার আম্মু দুঃখ পেলে এখন আর কাউকে বলবে না। একা
একা শুধু কাঁদবে। তুমি আদর করে আম্মুকে সান্ত্বনা
দিও, কেমন? তুমি আমার অনেক অনেক চুমো নিও।
ইতি আব্বু
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
১৯৭১ সালের ৭ জুলাই তারিখে শ্রী হেমেন্দ্র দাস পুরকায়স্থকে লেখা
অঞ্জলির চিঠি
শ্রী হেমেন্দ্র দাস পুরকায়স্থ, শ্রদ্ধাস্পদেষু,
আপনাদের খবর অনেক দিন পাইনি। বাঁশতলা ক্যাম্প দেখার পর
সেই ছেলেদের মুখগুলো সমানেই চোখের ওপর ভাসছে।
মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জলি এর চিঠি কবি অঞ্জলি।
মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী ইসমত জাহান সুপর্ণা এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি
সৌজন্যে Abritti Online YouTube Channel । রণাঙ্গন থেকে লেখা
‘একাত্তরের চিঠি’র পাঠ সংকলন "রুধিয়া রাখিতে নারি" থেকে। এই
পত্রটি পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই
অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী
পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক
করুন...।
তাদের মধ্যে যে সাহস, শৃঙ্খলা ও উদ্দীপনা দেখেছি তা আমার
জীবনে এক নতুন ইঙ্গিত বয়ে এনেছে। কত লোকের কাছে যে সে
কাহিনী বলেছি তা বলার নয়। তাদের কিছু জিনিস দেবার
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। কিন্তু শুনছি তারা শিগরিই Youth camp
ইউথ ক্যাম্প-এ চলে আসবে এবং সেখানে তাদের প্রয়োজনীয়
সবকিছু সরবরাহ করা হবে। তাই আমাকে সেগুলো জোগাড়
করতে মানা করা হলো।
আমি ক্যাম্পের মেয়েদের জন্য কিছু শাড়ি সংগ্রহ করেছি। আপনি
প্রয়োজনমতো তা বিলি করার ব্যবস্থা করে দেবেন। কাকিমার
জন্য একখানা লালপাড় শাড়ি পাঠালাম, তিনি যেন তা ব্যবহার
করেন। বাচ্চাদের জন্য সামান্য কিছু কাপড়-জামা পাঠালাম। অল্প
ওষুধ ও ফিনাইল পাঠালাম, আশা করি কাজে লাগবে। আমি
সেলা ক্যাম্পে যাবার পর বালাট, ডাউকী, উমলারেম (আমলারেং)
প্রভৃতি ক্যাম্পে ঘুরছি। অবস্থা দুর্দশার চরম সীমায়, খালি
মুক্তিবাহিনীর ছেলেরাই অন্ধকারে আশার আলো বয়ে আনে।
ভগবান তাদের স্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন দিন এই প্রার্থনা জানাই।
আপনার শরীর কেমন আছে? কাকিমা কেমন আছেন? ক্যাম্পের
ও মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা কেমন আছে? আজ এখানেই শেষ করি।
আপনারা আমার সম্রদ্ধ প্রণাম নেবেন।
ইতি
অঞ্জলি
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি হাকিম ও শহীদ কবি মতি
|
মুক্তিযোদ্ধা হাকিম ও শহীদ মতি-র চিঠি
কবি হাকিম ও কবি মতি। মুক্তিযোদ্ধাদের চিঠি আমাদের কাছে
কবিতাই।
শিল্পী সানজিদা শর্মী এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
আমাদের পরিচয় জাদুর শহর থেকে YouTube Channel । এই পত্রটি,
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
২৩শে জুলাই ১৯৭১, শুক্রবার
চিঠি ১
মা ও বাবজান,
আমার সালাম ও কদমবুসি জানিবেন। আজ কয়েকদিন গত হয়
আপনাদের নিকট হইতে বহুদূরে অবস্থান করিতেছি। খোদার
কৃপায় মঙ্গলেই পৌছিয়াছি। হযরতের কাছ হইতে হয়তো এ
কয়দিনে একখানা পত্র পাইয়াছেন। তাহা হইতেই বুঝিতে
পারিয়াছেন আমি কোথায় আছি। আমি ভালো আছি। আমার
জন্য সবাইকে ও আপনারা দোয়া করিবেন। শ্রেণীগতভাবে
সবাইকে আমার সালাম ও স্নেহাশিস দিবেন। নানা অসুবিধার
জন্য খোলাখুলি সবকিছু লিখিতে পারিলাম না।
ইতি হাকিম
NB : হয়তো মাস দুই পরে বাড়ি ফিরিব। আবার তা নাও হইতে
পারে।
চিঠি ২
শ্রদ্ধেয় মামাজান,
আমার ভক্তিপূর্ণ সালাম ও কদমবুসি গ্রহণ করিবেন। আশা করি
ভালো আছেন। আমরা আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি।
আমার জন্য কোনোরূপ চিন্তা করিবেন না। দোয়া করিবেন যেন
ভালোভাবে আপনাদের নিকট ফিরিয়া যাইতে পারি ও উদ্দেশ্যকে
সাফল্যমণ্ডিত করিতে পারি। অধিক কি আর লিখিব। আমাদের
বাড়িতে সংবাদ দিবেন।
ইতি
আপনার স্নেহের মতি
একই কাগজে পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা চিঠি লিখেছেন। তাঁদের মধ্যে
মুক্তিযোদ্ধা মতি শহীদ হন। তাঁরা চিঠিগুলো লিখেছেন পশ্চিম
বঙ্গের করিমগঞ্জ স্টেশনের নিকটবর্তী কেচুয়াডাঙ্গা হাইস্কুলে
ট্রানজিট সেন্টারে অবস্থানকালে।
পত্র লেখকদের নাম - হাকিম, হাশমত, হাসু, মতি ও মোতালেব।
এখানে হাকিম ও মতির চিঠি প্রকাশিত হলো।
চিঠি প্রাপক : মো . শামসুল আলম, প্রযত্নে মৌলভী সেহাবউদ্দিন,
গ্রাম নলসন্দা, পো : ডিগ্রীর চর, উল্লাপাড়া, পাবনা বর্তমানে
সিরাজগঞ্জ জেলা।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন - মো. শামসুল আলম। তিনি বর্তমানে
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের দিনাজপুর দক্ষিণের
উপমহাব্যবস্থাপক।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি দুদু মিয়া
|
মুক্তিযোদ্ধা দুদু মিয়া-র চিঠি
কবি দুদু মিয়া। মুক্তিযোদ্ধাদের চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই।
শিল্পী সানজিদা শর্মী এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
আমাদের পরিচয় জাদুর শহর থেকে YouTube Channel । এই পত্রটি,
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
কোনো দাবি রাখবেন না। কারণ আমার মৃত্যু যদি এসে থাকে,
তবে আপনারা আমায় বেঁধে রাখতে পারবেন না। মৃত্যুর সঙ্গে
আমাদের সংগ্রাম করতে হবে। মৃত্যুর জন্য আমি সব সময়
প্রস্তুত। গ্রামে বসে শিয়াল-কুকুরের মতো মরার চেয়ে যোদ্ধাবেশে
আমি মরতে চাই। মরণ একদিন আছে। আজ যদি আমার মরণ
আসে, তাহলে আমাকে আপনারা মরণ থেকে ফিরাতে পারবেন
না। মরণকে বরণ করে আমার যাত্রা শুরু করলাম। আমার জন্য
দুঃখ করবেন না। মনে করবেন, আমি মরে গেছি। দোয়া করবেন,
আমি যাতে আমার গন্তব্যস্থানে ভালোভাবে পৌছাতে পারি।
আব্বাকে আমার জন্য দোয়া করতে বলবেন । সে যেন আমার
সমস্ত অন্যায়কে ক্ষমা করে দেয়। নামাজ পড়ে আমার জন্য দোয়া
করবেন। আপনার ছেলে যদি হয়ে থাকি, তবে আমার জন্য দুঃখ
করবেন না। বাড়ির সবার কাছ থেকে আমার দাবি ছাড়াবেন।
খোদায় যদি বাঁচায়, তবে আমি কয়েক দিনের ভেতর ফিরে
আসব। ইনশাল্লাহ খোদা আমাদের সহায় আছেন! মিয়াভাইয়ের
কাছে আমার সালাম ও দোয়া করতে বলবেন। আর আমার জন্য
কোনো খোঁজ বা কারও ওপর দোষারোপ করবেন না। এটা
আমার নিজের ইচ্ছায় গেলাম। আমি টাকা কোথায় পেলাম সে
কথা জানতে চাইলে আমি বলব, বাবুলের মায়ের ট্রাংক থেকে
আমি ৬০ টাকা নিলাম এবং তার টাকা আমি বাঁচলে কয়েক
দিনের ভেতর দিয়ে দেব। বাবুলের মায়ের টাকার কথা কারও
কাছে বলবেন না। আর বাবুলের মাকে বলবেন, সে যেন কয়েকটা
দিন অপেক্ষা করে। জানি, আমাকে দিয়ে আপনাদের সমস্ত আশা-
ভরসা করছেন। কিন্তু আমার ছোট ভাই দুইটাকে দিয়ে সে সমস্ত
আশা সফল করতে চেষ্টা করবেন। দাদা ও মুনিরকে মানুষ করে
ওদের দ্বারা আপনারা সমস্ত আশা বাস্তবরূপে ধারণ করবেন।
আমাদের এ যাত্রা মহান যাত্রা। আমরা ভালোর জন্য এরূপ যাত্রা
করলাম। অতি দুঃখের পর এ দেশ থেকে চলে গেলাম। দোয়া
করবেন। খোদা হাফেজ।
ইতি
আপনার হতভাগা ছেলে
আমি
চিঠি লেখক : মুক্তিযোদ্ধা দুদু মিয়া ; তার পুরো নাম আবু বকর
সিদ্দিক, পিতা মৃত আবুল হোসেন তালুকদার। ঠিকানা : গ্রাম -
নরসিংহলপষ্টি, ডাকঘর শাওড়া, উপজেলা : গৌরনদী, জেলা -
বরিশাল।
চিঠি প্রাপক : মা আনোয়ারা বেগম।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন : লেখক নিজেই।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
মা
সর্বপ্রথম আমার সালাম ও কদমবুসি গ্রহণ করবেন। পর সমাচার
এই যে আমি আজ এমন এক স্থানে রওয়ানা হলাম, যেখানে
মিলিটারির কোনো হামলা নেই। তাই আজ আপনার কাছে লিখতে
বাধ্য হলাম। আমার সমস্ত দোষ। তাই আপনি আমার অন্যায়
বলতে যা কিছু আছে, সমস্ত ক্ষমা করে দিবেন। আমার প্রতি
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি কর্নেল খন্দকার নাজমুল
হুদা-র চিঠি কবি কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা। মুক্তিযোদ্ধার
চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই।
শিল্পী সাফিন উজ জামান এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
আমাদের পরিচয় জাদুর শহর থেকে YouTube Channel । এই পত্রটি,
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
তবে গত ৩-৪ দিন খুব ব্যস্ত ছিলাম। তাই সময় কেটে গেছে।
গতকাল ভোর রাহে ছোটিপুর আক্রমণ করেছিলাম ও দারুণ যুদ্ধ
হয়েছে। গুলি ফুরিয়ে যাওয়াতে আমরা পিছে চলে আসতে বাধ্য
হই। আমরা মাত্র ৪০ জন আর ওরা ১৫০-র মতো ছিল। কিন্তু
আক্রমণে টিকতে না পেরে বহু পালিয়ে যায়। আমরা শেষ পর্যন্ত
ওদের শেষ defence-এর দেড় শ গজের মধ্যে চলে যেতে
পেরেছিলাম। আমরা আর আধা ঘণ্টা টিকতে পারলে দখল
করতে পারতাম। কারণ, আজ জানলাম ওরা নৌকা তিনটা করে
পালিয়ে যেতে জোগাড় করেছিল। ওদেরও গুলি শেষ হয়ে
এসেছিল। ভোর ৪-২০ থেকে ৭-৪৫ পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। ওদের
বারজন মারা গেছে ও বহু আহত হয়েছে। আমাদের তরফে
একজনের হাতে গুলি লাগে--- হাসপাতালে আছে। Col কাপুর
General-কে আমার এই যুদ্ধ সম্বন্ধে একটা দারুণ ফুলে যাওয়ার
মতো Report দিয়েছে।
খোকনকে বলো ইনশাল্লাহ আগামীকাল রাত্রে আমরা সেই
Operationটা করব, যেটা সেদিন রওনা হবার সময় Cancel করি।
আজ Radio-তে Daily Telegraph-এ Peter Bill-এর আমার ও
আমার মুক্ত এলাকার Report শুনে খুব খুশি লেগেছে। আজ
বাংলাদেশ মিশন থেকে আমাকে জানিয়েছে যে Peter Bill নাকি
এই প্রথমবার আমাদের সম্বন্ধে একটা Favourable report দিল।
আরও শুনলাম Time-এ বেরিয়েছে।
এসবের Copy-গুলো জোগাড় করো। মওদুদকে বলো Daily Mirror-
এ কিছুদিন আগে আমার এলাকা সম্বন্ধে যে Report বেরিয়েছিল,
সেটা যেন অবশ্যই দেয় ও অন্য যাদের নিয়েছিল সেগুলোও দেয়।
তুমি শুনে খুশি হবে যে সেদিন জিওসির Conference-এ জানলাম
যে আমার Coy (Company) শত্রু ধ্বংস করার Record-এ সমস্ত
পশ্চিম রণাঙ্গনে প্রথম স্থানে ও আমার Coy-কে Best বলে ধরে
নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল Indian Film Division আমার এলাকার
Movie তুলতে আসবে।
এত সব হওয়া সত্বেও ভীষণ একা লাগছে এবং কেমন যেন অসহ্য
লাগছে। Physically ও Mentally completely tired সব সময়। সবকিছু
ছেড়ে চলে আসতে ইচ্ছা করে, কিন্ত তখনই বিবেকের কাছে ভীষণ
অপরাধী মনে হয়। আজ তো প্রায় French leave-এ চলে
আসছিলাম। সকালে গিয়ে বিকেলে চলে আসা, কিন্তু পরে আবার
বিবেকের তাড়নায় ইচ্ছা ছাড়লাম।
ইত্তু ও নাহীদ মনিরা কেমন আছে? ওদের আমার অনেক আদর
দিয়ো। বরিশালের আর নতুন কোনো খবর পেলে কি না জানাবে।
লোক পেলে আমি লিখব।
আশা করি তোমরা সবাই ভালো আছ। আব্বা-আম্মা ও আপাকে
আমার সালাম দিয়ো। খোকন ও খুশনুদকে ভালোবাসা দিয়ো।
জলদি উত্তর দিয়ো।
ইতি
গুডু
২৯.৭.১৯৭১ বয়ড়া
নীলু,
নাসিরের হাতে পাঠানো চিঠি কাল পেয়েছি ও আজ পোস্টের
চিঠিটা পেলাম। খোকন যাবার পর মনসুর থাকাতে তবুও সময়
চলে গেছে। সেদিন ও চলে যাবার পর এখন একদম loanly লাগছে,
চিঠি লেখক : মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা। সাব সেক্টর
কমান্ডার। লিখেছেন বয়ড়া থেকে। তিনি ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর
নিহত হন। চিঠি প্রাপক : স্ত্রী নীলুফার দিল আফরোজ বানু। ১৯৭১
সালে তিনি কলকাতায় ছিলেন। তার বর্তমান ঠিকানা : ১৫৯ ইন্টার্ন
রোড, লেন ৩, নতুন ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন : নীলুফার দিল আফরোজ বানু।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি আবদুল মালেক
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি আবদুল মালেক এর
চিঠি কবি আবদুল মালেক। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে
কবিতাই।
শিল্পী নাফিউর রহমান এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
আমাদের পরিচয় জাদুর শহর থেকে YouTube Channel । এই পত্রটি,
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
ভালোবাসা জানাইয়ো। এখানে খাওয়াদাওয়ার যেমন অসুবিধা,
তেমনি লোকের ঝামেলাও অনেক বেশি। সেদিন তোমাদের বাড়ি
হইতে আসিতে কোনো অসুবিধা হয় নাই। দেড় ঘণ্টার মধ্যে
বিলোনিয়া পৌঁছিয়াছি। তোমাদের বাড়ি হইতে যেদিন ফিরিয়াছি
সে রাতে মোটেই ঘুম হয় নাই। দুলা মিয়া, তুমি এবং আমার
স্নেহের নাতিদের কথা মনে পড়ার সাথে সাথে ২৩.৪.১৯৭১
তারিখে তোমার মাতা, রেখা, রেণু, রুবি, রৌশন ও তার চারটি
ছেলে। আমার বৃদ্ধ ও রুগ্ন আব্বা ও জীবনের যৎসামান্য আড়াই
লক্ষ টাকার নগদ টাকা ও সম্পদ সবকিছুর কথা। দোকান, বাসা
ও মালপত্র ছাড়াও সরকারের ঘরে ৮০ হাজার টাকার যতো
পাওনা রহিয়াছে। তা পাওয়া যাইবে কি না যাইবে তাহার কথা
বেশি ভাবি কি না। বাংলাদেশে যখন ফিরিতে পারি এবং যদি
কখনো ফিরি তবে ফেলিয়া আসা ছাইয়ের উপর দাঁড়াইয়া আবার
নতুনভাবে গড়িয়া তোলার চেষ্টা করিবার আশা নিয়া বাঁচিয়া
আছি। জানু, কয়েকটা কথা প্রায় দিন বারবার মনে পড়ে। এই
কথাগুলো ভুলিতে পারিব দেশে ফিরিবার পরিবেশ সৃষ্টি করিয়া,
দেশে ফিরিয়া গিয়া, নতুবা মৃত্যুর পর। ২২.৪.১৯৭১ তারিখ
দিবাগত রাত্র দেড়টার সময় দেশের বাড়ি হইতে বাহির হওয়ার
সময় সকলের থেকে বিদায় নেওয়ার পর যখন আব্বার থেকে
বিদায় নিতে যাই তখন আব্বা আমাকে কোনো অবস্থায় যাইতে
দিবেন না বলিয়া হাত চাপিয়া ধরেন এবং জোরে কাঁদা আরম্ভ
করিয়া দেন। বাড়িতে বা দেশে থাকা নিরাপদ নহে ভাবিয়া
রৌশন এবং অন্যরা জোর করিয়া আব্বার হাত হইতে আমাকে
ছিনাইয়া লয় এবং আল্লাহর হাতে সঁপিয়া দিয়া রাত্র ২ ঘটিকার
সময় সকলের কাঁদা রোল ভেদ করিয়া তোমার আম্মার সাথে
দেখা করিবার জন্য কায়ুমকে সাথে লইয়া কচুয়ার পথে রওনা
হই। কচুয়া একদিন থাকিয়া তোমার আম্মা, রেখা, রেণু ও
রুবিকে কাঁদা অবস্থায় ফেলিয়া রাত্র ৪টার সময় রওনা হইয়া
তোমার নিকট আসিয়া পৌঁছাই। বাড়ি হইতে রওনা হওয়ার
পূর্বেই কথা হইয়াছিল যে রৌশন পরের দিন সকালে চর চান্দিয়া
রওয়ানা হইয়া যাইবে। এই ঋতুতে যে কোনো দিন সে এলাকায়
থাকার অন্য বিপদ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ যেকোনো মুহূর্তেই
হইতে পারে। কোনো গত্যন্তর না থাকায় আমার প্রাণের ‘মা’
রৌশন ও সোনার বরন চারজন নাতিকে সমুদ্রের ঢেউয়ের মুখে
ঠেলিয়া দিতে বাধ্য হইয়াছি। তুমিও জানো যে তোমার মাতার
ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি তাহাদিগকে উক্ত কারণে বাসায় রাখিতে
চাহিতাম।
তোমাদের সকলের মুখ উজ্জ্বল করিবার জন্য নিজের চেষ্টায় যাহা
গড়িয়া তুলিয়াছিলাম, তাহা আজ অবস্থার গতি পরিবর্তনের সাথে
সাথে সব ধূলিসাৎ হইয়া গেল। সবকিছু ভুলিবার চেষ্টা করিয়াও
ভোলা যায় না। মা, তুগি অনুভব করিতে পার কি না জানি না,
তবে আমার ছেলেদের অপেক্ষা তোমাদেরকে অন্তরে অধিক
ভালোবাসি। সে ক্ষেত্রে আজ আমার পাঁচ মেয়েকে ভিনদেশে
রাখিয়া আসিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিতে পারিতেছি না। জানু,
আজকে তুমি আমার একমাত্র নিকটে, তাই তোমাকে দেখিবার
চেষ্টা করি। দুলা মিয়া, তুমি ও সোহরাব, শিমুলকে সামনে
দেখিতে পাইলে একটু আনন্দ পাই এবং কিছুটা মনের ভাব লাঘব
হয়৷ আত্মীয়স্বজন সকলের আগ্রহ দেখিয়া নিজেকে হালকা বোধ
করি, চিন্তামুক্ত থাকি! কায়ুম, মোতা, কবীর, আপসার ও আক্তার
সব এখানে আছে। ক্যাম্পে জায়গা হয় নাই বলিয়া। এখানে ফেরত
২৮-৫-১৯৭১
স্নেহের মা জানু,
আমার আন্তরিক স্নেহ ও ভালোবাসা নিয়ো। তোমার শাশুড়ি
আম্মাকে আমার সালাম দিয়ো। দুলা মিয়া, পুত্রা মিয়ারা,
ঝিয়ারীগণ ও সোহরাব, শিমুলকে আমার আন্তরিক স্নেহ ও
আসিয়াছে। আগামী ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করিতেছে।
আশা, কয়েক দিনের মধ্যে যাওয়া হইবে। সোহরাব ও শিমুলের
প্রতি লক্ষ রাখিয়ো। আমি ভালো।
তোমাদের কুশল কামনা করি।
ইতি তোমারই
বাবা
চিঠি লেখক : মরহুম আবদুল মালেক, ফেনী জেলা চেম্বার অব
কমার্স ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধ
চলাকালে তিনি ফেনীর বিলোনিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পের প্রধান ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণের জন্য ফেনীর মধুপুরের নিজ গ্রাম
থেকে রওনা হয়ে বিলোনিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পে আসেন। ক্যাম্পে
পৌছানোর পর এই চিঠিটি লেখেন।
চিঠি প্রাপক : মেয়ে জানু
চিঠিটি পাঠিয়েছেন : ফরহাদ উদ্দীন আহাম্মদ। চিঠি লেখকের নাতি
এবং জানুর দ্বিতীয় পুত্র।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি মো. গোলাম রহমান
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি মো. গোলাম রহমান এর
চিঠি কবি মো. গোলাম রহমান। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের
কাছে কবিতাই।
শিল্পী ইমাম হোসেন এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
আমাদের পরিচয় জাদুর শহর থেকে YouTube Channel । এই পত্রটি,
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
মানুষের হাতে নয়, এটা পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার
হাতে। তাঁর নির্দেশ ব্যতীত দুনিয়ার কোনো কাজ হতে পারে না।
একটা পা তুললে সে, মানে করুণাময় আল্লাহ, যতক্ষণ পর্যন্ত পা
ফেলার হুকুম না দেবে ততক্ষণ কারোর ক্ষমতা নেই পা ফেলে।
তাই বলছি দুঃখ করো না, যে পরিস্থিতি, কখন কার মৃত্যু হয়
কেউ বলতে পারে না। আমি কখন কোথায় থাকব, আমি নিজে
বলতে পারি না। তাই বলছি আল্লাহ যদি আমার মরণ লিখে
থাকে, হয়তো কোথায় কীভাবে মরণ হবে কারুর সঙ্গে দেখা হবে
না, কিছু বলতেও পারব না। মনে দুঃখ থাকবে তাই আগে
থেকেই লিখে যাচ্ছি। এটা পড়ে কেদো না। এই লিখছি বলে যে
সত্যি সত মরব তা তো নয়! যদি মরি তবে তো বলতে পারব
না সেই জন্য লিখলাম। যদি মরি আমার দেওয়ার মতো কিছু
নেই। আছে একটু ভালোবাসা আর একটু আশীর্বাদ আর ক-বিঘা
জমি । আগেও বলেছি এখনো বলছি, ইচ্ছা যা-ই হোক, কারোর
যুক্তি শুনে এক কাঠা জমি বিক্রি কোরো না। যদি কেউ বলে,
ওখান থেকে বেচে এখানে ভালো জমি কিনে দেব, খুব সাবধান,
তা করেছ কি মরেছ। আমি যদি মরি আমি দেখতে আসব না,
সুখে আছ না দুঃখে আছ। তাই আমার আদেশ নয়, অনুরোধ
করছি বারবার। আমার কথাগুলো শুনো। কারোর কথা শুনে
কোনো কাজ করো না, তাই যতই ভালো কাজ হোক না কেন,
তাতে দুঃখ পাবে, তখন আমার কথা মনে হবে। বাচ্চাটা বুকে
নিয়ে থেকো, সুখে থাকবে। কারোর কথা শুনে কোনো
কাজ করলে জমি তোমার থাকবে না। তখন কেউ দেখতে পারবে
না। যে মেয়ের স্বামী মরে যায় বা নেয় না, তার বাপ-ভাই
আত্মীয় স্বজন কেউ ভালো চোখে দেখে না। তাই যত আদুরে
হোক না, এটা মেয়েদের অভিশাপ ৷ বেশি বলতে হবে না, পাশে
অনেক প্রমাণ আছে। জমিজমা ও জিনিসপত্র থাকলে সবাই যত্ন
করবে,
তোমার পায়ের জুতো খুলে গতি হবে না। তাই বারবার অনুরোধ
করছি জিনিসপত্র যা এর-ওর বাড়ি আছে, ভাই জানে, ভাইয়ের
সঙ্গে সব বলা আছে। বাপের বাড়ি হোক আর হোক, যেখানে
হোক থেকো বেশি দিন থেকো, তোমার দেখো সবাই যত্র করবে,
তবে আমি যা বলেছি মনে রেখো। মেয়েটাকে মানুষ করো।
লেখাপড়া শিখাও। মামণি যখন যা চায় তখন সেটা দেবার চেষ্টা
করো। তুমি তো জানো যে একটা মেয়ে হওয়ার আমার কত
আশা ছিল, আল্লাহ আমার আশা পুরণ করেছে। হয়তো নিজ
হাতে সেভাবে মানুষ করতে পারব না, তবু আমার আশা আছে,
তুমি যদি আমার কথা শোন তবে তুমি সেভাবে মানুষ করতে
পারবে। আশা করে মামণির জন্য দোলনা করেছিলাম। দোলনায়
বোধহয় মামণির দোলা হলো না। বড় আশা করে হারমোনিয়াম
কিনেছিলাম মামণিকে গান শেখাব, হারমনিটা নষ্ট কোরো না, তুমি
শিখাও। তোমার কানেরটা মামণিকে দেব বলে তোমার কানেরটা
করলাম, মামণির সেটা তো ডাকাতরা নিয়ে গেছে। আমার আশা
আশাই থেকে গেল, আশা বোধহয় পূরণ হবে না। তাই আমার
আশা তুমি পূরণ করো। আর কী লিখব, সত্যি যদি মরি আমায়
ঋণমুক্ত করো। তোমার কাছে যে খণ আছে হয়তো শোধ করতে
পারব না। হয়তো সে কষ্ট পাব বা আল্লাহতাআলার কাছে দায়ী
থাকব, যদি পারো মন চায় শোধ করে নিয়ো বা মুক্ত করে দিয়ো।
আর কিছু লিখলাম না।
ইতি তোমার স্বামী
গোলাম রহমান
মহৎপুর, খুলনা।
১৩ আষাঢ় ১৩৭৮
মহৎপুর ১.৭-১৯৭১
প্রিয় ফজিলা
আমার অফুরন্ত ভালোবাসা নিয়ো। আমার এই চিঠির ওপর
নির্ভর করছে তোমার আগামী দিনের (সুখ ও দুঃখ)। এই চিঠি
পড়ে দুঃখ পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ জন্ম ও মৃত্যু
চিঠি লেখক : মুক্তিযোদ্ধা মো. গোলাম রহমান। ঠিকানা : গ্রাম :
মহৎপুর, ডাক : ওবায়দুরনগর, উপজেলা : কালিগঞ্জ, সাতক্ষীরা।
চিঠি প্রাপক : স্ত্রী ফজিলা।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন : গোলাম রহমানের ছেলে আসলামুজ্জামান।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি আখলাকুল হোসেইন আহমেদ
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি আখলাকুল হোসেইন
আহমেদ এর চিঠি কবি আখলাকুল হোসেইন আহমেদ।
মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই।
শিল্পী ফারহানা তৃনা এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Abritti Online YouTube Channel । এই পত্রটি, পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
১৯৭১ সালের ১৬ জুন তারিখে মহাদেও রণাঙ্গন থেকে স্ত্রী
হোসনে আরা হোসেইনকে লেখা মুক্তিযোদ্ধা আখলাকুল হোসেইন
আহমেদ এর চিঠি . . .
হেনা,
আশা করি ভালো আছ। তোমাদিগকে খবর দেওয়া ছাড়া
তোমাদের কোনো খবর পাওয়ার কোনো উপায় নেই, আর আশা
করেও লাভ নেই। অনেকের নিকট বলে দেই মহিশখালীর C/O
Sekandar Nuri সেকান্দার নূরী চিঠি পাঠালে সে আমার নিকট
পাঠাতে পারে। আল্লাহর নিকট শুধু প্রার্থনা এই যে, তোমরা সবাই
যেন ভালো থাক ৷ আমি অদ্য মহেশখলা থেকে তুরার পথে রওনা
হয়েছি। অদ্য আমি মেঘালয় প্রদেশের মহাদেও ক্যাম্পে আছি।
আমার সঙ্গে খালেক সাহেব M.P.A. ও জবেদ সাহেব M.N.A.
আছেন। আগামীকল্য রংড়া ক্যাম্পে গিয়ে থাকবার আশা রাখি।
সমস্ত পথই হেটে চলছি। মহেশখলা হতে রংড়া ৩৫ মাইল।
রংড়া হতে গাড়ি পাওয়ার রাস্তা হবে তুরা। যা হোক আমার
কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। নানান দেশের ওপর দিয়ে চলেছি।
ছোটবেলা পড়তাম, ময়মনসিংহের উত্তরে গারো পাহাড় আর
এখন গারো পাহাড়ের সর্বোচ্চ টিলার উপর ১০ দিন ঘুমিয়ে এলাম
আর পাহাড়ের ভিতর দিয়েই রওনা হলাম। দেশ ভ্রমণে আনন্দ
আছে কিন্তু যখন তোমাদের কথা মনে হয় তখন মন ভেঙে যায়।
বিশেষ করে সোহেলের কথা ভুলতেই পারি না। সোহেলটাই
আমাকে বেশি বিব্রত করছে। ওর দিকে বিশেষ লক্ষ রেখো।
তোমাকে আর কী লিখব। তোমরা বাড়ি থেকে সরে গেছ কি না
জানি না। তোমাদের উপর আক্রমণ আসতে পারে ; তাই
পূর্ব পত্রে লিখেছিলাম বাড়ি থেকে সরে যেতে। কোথায় আছ তা
যেন অন্য লোক না জানে। যেখানেই যাও রাস্তায় যেন কোনো
অসুবিধা না হয় তার প্রতি বিশেষ নজর রেখে চলো ৷ সোহেল
বোধহয় আমাকে খোঁজে। আস্তে আস্তে হয়তো ভুলেই যাবে। যা
হোক নামাজ নিয়মিত পড়তে চেষ্টা করি। তার জন্য কোনো চিন্তা
করো না। পূর্বে আরও ২টি দুটো চিঠি দিয়েছি তাতে ধান ও
গাড়িটার কথাও বলেছিলাম সরিয়ে রাখতে। আজকে স্বাধীন
বাংলা বেতারের খবরে নিশ্চয়ই শুনেছ যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুঁজিবুর
রহমানের বাড়িও আক্রমণ করতে ছাড়েনি। সুতরাং খুব
সাবধান। বিশেষ আর কি লিখব। ইচ্ছা আছে তুরা হতে ফিরে
আসব আবার মহিশখালী।
দোয়া করিয়ো।
আখলাক
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি শাফী ইমাম রুমী
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি শাফী ইমাম রুমী
এর চিঠি শহীদ কবি শাফী ইমাম রুমী। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি
আমাদের কাছে কবিতাই।
শিল্পী ফারহানা তৃনা এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Abritti Online YouTube Channel । এই পত্রটি, পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
১৯৭১ সালের ১৬ জুন তারিখে রণাঙ্গন থেকে মামা সৈয়দ মুস্তাফা
কামাল পাশাকে লেখা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রুমীর চিঠি . . .
Dearest Pasha Mama,
Don’t be surprised! It was written and has come to pass.
And after you read this letter, destroy it. Don't try to write
to Amma about this letter. It will put them in danger. This
is a hurried letter. I don’t have much time. I have to leave
tomorrow for my base camp. We are fighting a just war.
We shall win. Pray for us all. I don't know what to write
there is so much to write about. But every tale of atrocity
you hear, every picture of terrible destruction that you
see is true. They have torn into us with a savagery
unparalleled in human history. And sure as Newton was
right, so shall we too tear into them with like ferocity.
Already our war is far advanced. When the monsoons
come we shall intensify our operation.
I don't know when I shall write again. Please don’t write to
me. And do your best for SHONAR BANGLA.
Bye for now. With love and regards.
Rumi
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
ঝালকাঠি, মিলিটারি ক্যান্টনমেন্ট
২৪.৭.১৯৭১, বাংলা ৬ শ্রাবণ, ১৩৭৮
স্নেহের ফিরোজা,
তোমাকে ১৭ বৎসর পূর্বে সহধর্মিণী গ্রহণ করিয়াছিলাম।
অদ্যাবধি তুমি আমার উপযুক্ত স্ত্রী হিসাবে সংসারধর্ম পালন
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি বাদশা মিয়া তালুকদার
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি বাদশা মিয়া
তালুকদার এর চিঠি শহীদ কবি বাদশা মিয়া তালুকদার।
মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী সাহিদা সনি এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
আমাদের পরিচয় জাদুর শহর থেকে YouTube Channel । এই পত্রটি,
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
করিয়া আসিয়াছ। কোনো দিন তোমার উপর অসন্তষ্ট হইতে
পারি নাই। আজ আমি তোমাদের অকুল সাগরে ভাসাইয়া
পরপারে চলিয়াছি। বীরের মতো সালাম ইনশাল্লাহ জয় আমাদের
হইবে, দুনিয়া হইতে লাখ লাখ লোক চলিয়া গেছে খোদার কাছে।
কামনা করি যেন সব শহীদদের কাতারে শাখিল হইতে পারি।
মনে আমার কোনো দুঃখ নাই। তবে বুক জোড়া কেবল আমার
বাদল। ওকে মানুষ করিয়ে। আজ যে অপরাধে আমার মৃত্যু
হইতেছে খোদাকে সাক্ষী রাখিয়া আমি বলিতে পারি যে এই সব
অপরাধ হইতে আমি নিষ্পাপ। জানি না খোদায় কেন যে আমাকে
এরূপ করিল। জীবনের অর্ধেক বয়স চলিয়া গিয়াছে, বাকি
জীবনটা বাদল ও হাকিমকে নিয়া কাটাইবে। পারিলাম না। বজলু
ভাইয়ের বেটা ওহাবের কাছে ১৫ হাজার টাকা আছে। যদি
প্রয়োজন মনে কর তবে সেখান হইতে নিয়া নিয়ো।
ইতি
তোমারই বাদশা
বাবা হাকিম, তোমার মাকে ছাড়িয়া কোথাও যাইয়ো না
চিঠি লেখক : শহীদ বাদশা মিয়া তালুকদার, গ্রাম : বাশবাড়িয়া,
উপজেলা : টুঙ্গিপাড়া, জেলা : গোপালগঞ্জ।
চিঠি প্রাপক: স্ত্রী ফিরোজা বেগম।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন : মো: বাদল তালুকদার । ১/২ বুক জি.
লালমাটিয়া, ঢাকা।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আব্বা,
আমার সালাম ও কদমবুসি গ্রহণ করুন। জীবনের যত অপরাধ
ক্ষমা করে দেবেন। আমি আজ চলে যাচ্ছি, জানি না আর ফিরে
আসব কি না। যদি ফিরে আসতে পারি তাহলে দেখা হবে।
আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, যেন আপনার ছেলে এ দেশের
মুক্তিসংখামে গাজী হতে পারে।
মুক্তিযোদ্ধা কবি আজিজুল হক
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি আজিজুল হক এর চিঠি
কবি আজিজুল হক। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী উর্মি আক্তার এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
আমাদের পরিচয় জাদুর শহর থেকে YouTube Channel । এই পত্রটি,
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
আমি জীবনে কোনো দিন আপনাদের সুখ দিতে পারি নাই। জানি
না দিতে পারব কি না। দোয়া রাখবেন। আপনার থেকে যে টাকা
নিচ্ছি, মামার কাছ থেকে এনে মহাজনকে দিবেন। আর মামাকে
তার চিঠিটা দিবেন। মায়ের প্রতি নজর দিবেন। আমি জানি,
আমি চলে যাবার পর মায়ের মাথা আরও খারাপ হবে। কিন্তু এ
ছাড়া আমার পথ নেই। তার প্রতি নজর রাখবেন। সাইয়েদকে
হাতে হাতে রাখবেন। বুবুকে আমার সালাম দিবেন । আমি
যাচ্ছি কলকাতার পথে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবেন, বরিশাল
গেছে। আর আমার সব অপরাধ ক্ষমা করে আল্লাহর কাছে
দোয়া করেন যেন সহিসালামতে আবার ফিরে আসতে পারি।
কাকুকে আমার সালাম দিবেন এবং বাড়ির সকলকে।
শেষ করি, আব্বা ।
ইতি
আপনার স্নেহের টুকরো হক
চিঠি লেখক: মুক্তিযোদ্ধা হক। পুরো নাম আজিজুল হক।
চিঠি প্রাপক : বাবা হামিজউদ্দিন হাওলাদার, গ্রাম : আ-কলম,
থানা : স্বরূপকাঠি, জেলা : পিরোজপুর।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন: মুক্তিযোদ্ধার ছোট ভাই মো. শাহরিয়ার
কবীর, সহকারী অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অৰ ডেভেলপমেন্ট
অল্টারনেটিভ (ইউডা), রোড-২৫, বাড়ি ৩০১, ধানমন্ডি, ঢাকা।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আজকের চিঠির লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌস কামাল উদ্দীন
মাহমুদ।
চিঠি প্রাপক : মা. হাসিনা মাহমুদ তার তখনকার ঠিকানা : ৮৩
লেক সার্কাস, কলাবাগান, ঢাকা।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন : লেখক নিজেই।
মুক্তিযোদ্ধা কবি ফেরদৌস কামাল উদ্দীন মাহমুদ
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি ফেরদৌস কামাল উদ্দীন
মাহমুদ এর চিঠি কবি ফেরদৌস কামাল উদ্দীন মাহমুদ।
মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী নাজনীন তৌহিদ এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Nazneen Towhid YouTube Channel । এই পত্রটি, পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
০৩.০৮.৭১
মা,
আমার সালাম নিয়ো। অনেক পাহাড় পর্বত, নদী প্রান্তর পেরিয়ে,
সমস্ত বাধা অতিক্রম করে তোমার ছেলে তার অনেক আকাঙ্ক্ষার
শেষ ঠিকানা আজ খুঁজে পেয়েছে। হ্যাঁ মা, আমি পৌঁছে গেছি
আমার ইচ্ছার কেন্দ্রবিন্দুতে। নিজেকে এবার প্রস্তুত করব
প্রতিশোধ নেওয়ার এক বিশাল শক্তি হিসেবে। আমার প্রতিশ্রুতি
আমি কখনো ভুলব না। ওদের উপযুক্ত জবাব আমাদের দিতেই
হবে। মা, তুমি এই মুহূর্তে আমাকে দেখলে চিনতে পারবে না।
বিশাল বাবড়ি চুল, মুখভর্তি দাড়ি গোঁফ। যদিও আমি নিজের
চেহারাটা বহুদিন দেখি না কারণ এখানে কোনো আয়না নেই।
মিহির বলে, আমাকে নাকি আফ্রিকার জংলিদের মতো লাগে।
মিহির ঠিকই বলে, কারণ, এখন আমি নিজেই বৃঝি আমার মাঝে
একটি জংলি ভাব এসে গেছে। সেই আগের আমি আর নেই।
তোমার মনে আছে মা, মুরগি জবাই করা আমি দেখতে পারতাম
না। আর সেই আমি আজ রক্তের নদীতে সাঁতার কাটি।
খাওয়াদাওয়ার কথা বলে লাভ নেই, দুঃখ পাবে। তবে বেঁচে আছি
ও খুব ভালো আছি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমরা
আর সেই দিনটি থেকে খুব দূরে নাই, যখন আমরা আবার
মুখোমুখি হব। দোয়া করো মা, যেন সেই দিনটি পর্যন্ত বেঁচে
থাকি। মনি ভাই আমাদের officer করেনি কারণ ওনার অন্য
কাজের জন্য আমাদের প্রয়োজন পড়বে। এখানে আমার অনেক
পুরান বন্ধুর দেখা পেলাম। আমার আগের চিঠিটা হয়তো এত
দিনে পেয়ে গেছ। সেলিম তোমার সাথে দেখা করে এসেছে, বলল।
তোমরা ভালো আছ জেনে খুশি হলাম। আমার জন্য কোনো চিন্তা
কোরো না। মায়ের দোয়া আমার সাথে আছে, আমার ভয় কী?
অনেক লেখার ইচ্ছা করছে কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। কত ঘটনা মনে
জমা হয়ে আছে তোমাদের বলার জন্য। হয়তো অনেক বছর লেগে
যাবে শেষ করতে। মন্টু চিঠি নিয়ে যাচ্ছে! পারলে ওকে একটু
ভালো কিছু খাবারদাবার দিয়ো। অনেক দিন ও ভালো কিছু
খায়নি। আজ তাহলে আসি, সবাইকে সালাম ও দোয়া দিও।
তোমার স্নেহের ফেরদৌস
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
চিঠিটি লিখেছেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা খাজা নিজামুদ্দীন বীর উত্তম,
তিনি এই চিঠিটি সিলেট জেলার কানাইঘাটের মমতাগঞ্জের
মুক্তিবাহিনী দলের অগ্রগামী ক্যাম্পের কমান্ডার থাকা কালীন
পার্শ্ববর্তী মাদারিপুর সালামটিলা এলাকার মুক্তিবাহিনী ক্যাম্প
কমান্ডার একেএম রফিকুল হক এর কাছে লিখেছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি খাজা নিজামুদ্দীন
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি খাজা নিজামুদ্দীন
এর চিঠি শহীদ কবি খাজা নিজামুদ্দীন। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি
আমাদের কাছে কবিতাই !
প্রথম আলো চ্যানেলের অনামা শিল্পীর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি
সৌজন্যে Prothom Alo YouTube Channel । প্রথম আলোর পাঠ
সংকলন "একাত্তরের চিঠি" থেকে। এই পত্রটি পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
৮-৮-১৯৭১,
রফিক,
আজকে এক জরুরি কাজের জন্য আতাউর, সামসুসহ ভালো
ভালো ৬ জন ছেলে সন্ধ্যার খাওয়ার পর পাঠিয়ে দেবে। তাদের
সঙ্গে একটি অটোমেটিক ও বাকি সব রাইফেল থাকবে। কালকে
সকালে ইনশাল্লাহ সবাইকে ফেরত পাবে। ওই Password
পাসওয়ার্ড থাকবে।
খাজা নিজামুদ্দীন
বি. দ্র. কিছুক্ষণ আগে এক গাড়ি পাকসেনা আটগ্রাম গিয়েছে। ওরা
আচমকা আমাদের আক্রমণ করতে পারে। আটগ্রাম খবর
পাঠাবে। Explosive এক্সপ্লোসিভ চাই।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি মেজর ডা. মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন
|
মুক্তিযোদ্ধা মেজর ডা. মোহাম্মদ
মোফাজ্জল হোসেন এর চিঠি কবি মেজর ডা.
মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে
কবিতাই !
শিশুশিল্পী কথিকা সাহা এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Shoishob bd YouTube Channel । এই পত্রটি পাঠের অডিও রেকর্ডিং
শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে
মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের
সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
From
Major M. M. Hossain, PABNA 8/1 Lalmatia Block-D
. Dhaka-7, 12.10.71
খালা ও মমিন
আমাদের আন্তরিক স্নেহ ও দোয়া ভালোবাসা জানিবা। আজ ৬
মাস তোমাদের কোনো সংবাদ পাই না। তিন মাস পর জেনেছি
তোমরা ও বাড়িতে আছ এবং ভালো আছ। প্রথম তিন মাস
আমাদের কী অবস্থা হয়েছিল অনুমান করতে পার। যাক
তোমরা বেঁচে আছ জেনে কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছি। আমাদের
মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ। এপ্রিল মাসের প্রথমদিকেই আমার
বাড়িঘর সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দিয়েছে। সমস্ত জিনিস পুড়ে গিয়েছে
কিংবা লুট হয়েছে। আমরা সত্যিকারের সর্বহারা। অনেক
বাড়িই পুড়ে গিয়েছে এবং সমস্ত বাড়িই লুট হয়েছে। মাঝে মাঝে
২/১ খানা ভাল আছে। অপূরণীয় ক্ষতি। স্মৃতিচিহ্ন সবই গিয়েছে।
জামাকাপড় থেকে আরম্ভ করে যাবতীয় জিনিস নষ্ট হয়েছে।
এমনকি শোয়ার মতো বিছানা, খাট ইত্যাদিও নাই। বাড়ি
মেরামত করা ছাড়া বাড়িতে যাওয়ার উপায় নাই। বর্তমানে
সাধুপাড়া বাসাতে থাকি, ওই দিকটা বেশি নষ্ট হয় নাই। এই ছয়
মাস বহু জায়গায় থেকে বর্তমান তিন সপ্তাহ হলো এখানে আছি।
লাভলুর চিঠি পেয়েছি, ভালো আছে। করিম ও গিনি ঢাকা
এসেছিল। করিম গত ৩০/৯ করাচি গিয়েছে। টিটোও গিয়েছে।
টুটুরা অনেক জায়গায় ছিল, বর্তমানে চিটাগাং আছে। বেবী ও
পিয়া সাড়ে চার মাস ঢাকাতে।
গত মাসে ঢাকায় তুহিনের বিবাহ হয়েছে। ছেলে এমবিবিএস-
ময়মনসিংহ জেলায় বাড়ি। হিরার শ্বশুর ও শালা আয়নাল
গুলিতে মারা গিয়েছে। বাড়িঘর সব লুট হয়েছে। আমিনউদ্দীন
অ্যাডভোকেট গুলিতে মারা গিয়েছে। ঘুটুর শশুর, আনিসের
শ্বশুর, তুহিনের বড় মামা ইত্যাদি ইত্যাদি মারা গিয়েছে। পল্টু
মামাও মেহমানদের নিকট। আমরা প্রথমেই বাড়ি ছেড়ে দিয়ে
জীবনে বেঁচে আছি। এই শুধু সান্তনা। খোদা তোমাদের সবাইকে
বাঁচিয়ে রাখুন, এই দোয়াই করি। ইমনের জন্য সব সময়ই মনে
হয়, ও-ই সব সময় খেতে চাইত---এখন কত কষ্টই পাচ্ছে। মেয়ে
হওয়ার সংবাদ যদিও পেয়েছি প্রথমে ঘুটু D.A.D. Rangpur Mr
Momtaz শাহানা ও অন্যান্য ২/১ জনের নিকট কিছু কিছু সংবাদ
পেয়েছিলাম। পরে হেলেনের চিঠিতে সব জানি। মাঝে মাঝে,
এমনকি সপ্তাহে সপ্তাহে রফিকের নিকট লিখে আমাদের জানাবে।
শুভেচ্ছা রইল। ইমনকে আমাদের প্রীতি ভালোবাসা জানাবে।
খোদা হাফেজ।
আশীর্বাদক
তোমাদের আব্বা
১২.১০.১৯৭১
চিঠি লেখক : মেজর ডা. মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন।
চিঠি প্রাপক : মেরিনা ইসলাম ও মুক্তিযোদ্ধা মুজহারুল ইসলাম।
মেরিনা ইসলাম ডা. হোসেনের কন্যা। ডা. হোসেন তাঁর কন্যা
মেরিনাকে "খালা" বলে সম্বোধন করতেন।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন : মেরিনা ইসলাম।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি আবদুল হাসিব চৌধুরী
|
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাসিব চৌধুরী এর
চিঠি কবি আবদুল হাসিব চৌধুরী। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের
কাছে কবিতাই !
শিল্পী নেহা এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে Neha's Beauty
World YouTube Channel । এই পত্রটি পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে
শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা
করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের
সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
৬ই মে ১৯৭১
প্রিয় মোয়াজ্জেম সাহেব,
তসলিম। আশা করি খোদার রহমতে কুশলে আছেন। কোনোমতে
বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে মুরগি যেমন তার ছানাগুলো ডানার তলে রাখে
বেঁচে আছি। পত্রবাহক আপনার পূর্বে দেওয়া আশ্বাস অনুযায়ী
আপনার কাছেই যাচ্ছে। শ্বাপদসংকুল ভরা এ দুনিয়ার পথ।
নিজের হেফাজতে যদি রাখতে পারেন তবে খুবই ভালো নতুবা
নিরাপদ স্থানে চিতলমারীর অভ্যন্তরে কোনো গ্রামে পৌছানোর
দায়িত্ব আপনার। বিশেষ কিছু দরকার মনে করি না। মানুষকে
মানুষে হত্যা করে আর মানুষের সেবা মানুষেই করে। হায়রে
মানুষ! আমার অনুরোধ আপনি রাখবেন জানি--তা সত্তেও
অনুরোধ থাকল।
ইতি আপনাদের
আ. হা. চৌধুরী
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
লেখক : আবদুল হাসিব চৌধুরী। ১৯৭১ সালে তার ঠিকানা :
আমিনা প্রেস, কোর্ট মসজিদ রোড, বাগেরহাট। চিঠি প্রাপক :
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। বাগেরহাটের পিসি.
কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৮
অক্টোবর তিনি শত্রুপক্ষের গুলিতে শহীদ হন। অর্থনীতি বিষয়ে
তার বেশ কিছু বই বিভিন্ন কলেজে পাঠ্য হয়েছে। চিঠিটি
পাঠিয়েছে : মোয়াজ্জেম হোসেন ফাউন্ডেশন, বাগেরহাট।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা মোহন এর চিঠি কবি মোহন।
মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী নেহা এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে Neha's Beauty
World YouTube Channel । এই পত্রটি পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে
শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা
করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের
সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
কোচবিহার
৮.১২.১৯৭১
জনাবেষু,
আমার সালাম গ্রহণ করবেন এবং বাড়ির সবাইকে শ্রেণীমতো
আমার সালাম এবং স্নেহাশিস জানাবেন। আপনার চিঠি পেয়ে
আমি শিলচর থেকে চলে এসেছি। ২/৪ দু-চার দিনের মধ্যে
শেরপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে মেঘালয়ের দিকে পা বাড়াব। বর্ডার
এলাকায় যারা ছিল তারা মনে হয় ঢুকে পড়েছে। সত্যি আমরা
একটু পিছে পড়ে গেলাম না? আপনি কবে পর্যন্ত রওনা হবেন,
চিচিং পাড়ার ঠিকানায় জানাবেন। যদি ভেতরে ঢুকে না পড়ি
তাহলে হয়তো জানতে পারব।
শিলচর থেকে আসার পর আমি শারীরিক দিক থেকে ভালো
আছি। কিন্তু মানসিক অবস্থাটা বেশি ভালো না। বিশেষ করে
শেরপুরের নানা রকম খবর শোনার পর মনটা বিশেষ ভালো না।
আপনাদের কুশল কামনা করে আজকের মতো শেষ করছি।
জয় বাংলা।
মোহন
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
চিঠি লেখক : মুক্তিযোদ্ধা মোহন। তিনি বর্তমানে শেরপুর জেলা
বাস মালিক সমিতির সভাপতি।
চিঠি প্রাপক : অ্যাডভোকেট এম এ সামাদ। তিনি ২০০৭ সালে
মৃত্যুবরণ করেন।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন : ছেলে জয়েনউদ্দিন মাহমুদ।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি মো. সিরাজুল ইসলাম
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মো. সিরাজুল ইসলাম
এর চিঠি শহীদ কবি সিরাজুল ইসলাম। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি
আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী ফাহিমা সূর্য এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Fahima Surjo YouTube Channel । এই পত্রটি পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
অস্ত্র। এমন পরিস্থিতিতে সাহসী কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম
সহযোদ্ধাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়ে নিজে
গ্রেনেড নিয়ে ক্রলিং করে শত্রু বাংকারের দিকে এগিয়ে যান।
শক্রুর দুটি বাংকারে গ্রেনেড চার্জ করে তছনছ করে দেন। এক
পর্যায়ে শত্রুপক্ষের এলএমজির বুলেট বিদীর্ণ করে দেয় তার দেহ।
তিনি শহীদ হওয়ার কিছুদিন আগে ৩০ জুলাই টেকেরহাট থেকে
বাবার কাছে এই পত্রটি লিখেছেন।
টেকেরহাট থেকে, ৩০.৭.৭১ ইং
প্রিয় আব্বাজান,
আমার সালাম নিবেন। আশা করি খোদার কৃপায় ভালোই
আছেন । বাড়ির সকলের কাছে আমার শ্রেণীমতো সালাম ও
স্নেহ রইল। বর্তমানে যুদ্ধে আছি আলী রাজা, রওশন, সাত্তার,
রেনু, ইব্রাহিম, ফুল মিয়া। সকলেই একত্রে আছি। দেশের জন্য
আমরা সকলেই জান কোরবান করেছি। আমাদের জন্য ও দেশ
স্বাধীন হওয়ার জন্য দোয়া করবেন। আমি জীবনকে তুচ্ছ মনে
করি। কারণ দেশ স্বাধীন না হলে জীবনের কোনো মূল্য থাকবে
না। তাই যুদ্ধকেই জীবনের পাথেয় হিসেবে নিলাম। আমার
অনুপস্থিতিতে মাকে কষ্ট দিলে আমি আপনাদেরকে ক্ষমা করব
না। পাগলের সব জ্বালা সহ্য করতে হবে। চাচা-মামাদের ও বড়
ভাইদের নিকট আমার সালাম। বড় ভাইকে চাকুরীতে যোগ দিতে
নিষেধ করবেন। জীবনের চেয়ে চাকুরি বড় নয়। দাদুকে দোয়া
করতে বলবেন। মৃত্যুর মুখে আছি। যেকোনো সময় মৃত্যু হতে
পারে এবং মৃত্যুর জন্য সর্বদা প্রস্তুত। দোয়া করবেন মৃত্যু হলেও
যেন দেশ স্বাধীন হয়। তখন দেখবেন লাখ লাখ ছেলে বাংলার
বুকে পুত্রহারাকে বাবা বলে ডাকবে। এই ডাকের অপেক্ষায়
১৯৭১ সালের ৮ আগস্ট ৫ নম্বর সেক্টরের বড়ছড়া সাবসেক্টরের
সাচনা জামালগঞ্জে পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর ব্যাপক
রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। বীর যোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম একটিমাত্র
প্লাটুন নিয়ে পাকবাহিনীর সুরক্ষিত ঘাটি সাচনা আক্রমণ করেন।
সুসংগঠিত পাকবাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের মুখে মুক্তিযোদ্ধাদের
টিকে থাকাই ছিল অসম্ভব। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ছিল সীমিত
থাকুন। আর আমার জন্য চিন্তার কোনো কারণ নাই। আপনার
দুই মেয়েকে পুরুষের মতো শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন। তবেই
আপনার সকল সাধ মিটে যাবে।
দেশবাসী, স্বাধীন বাংলা কায়েমের জন্য দোয়া করো, মীরজাফরী
করো না। কারণ মুক্তিফৌজ তোমাদের ক্ষমা করবে না এবং
বাংলায় তোমাদের জায়গা দেবে না।
সালাম, দেশবাসী সালাম।
ইতি
মো. সিরাজুল ইসলাম
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি মুন্সী আবু হাসমত রশিদ
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মুন্সী আবু হাসমত
রশিদ এর চিঠি শহীদ কবি মুন্সী আবু হাসমত রশিদ।
মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী ফাহিমা সূর্য এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Fahima Surjo YouTube Channel । এই পত্রটি পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
মা,
আমার সালাম নিবেন। ভাবির কাছ থেকে আপনার চিঠি
পেলাম। আপনি আমার জন্য সব সময় চিন্তা করেন। কিন্তু মা,
আপনার পুত্র হয়ে জন্ম নিয়ে মাতৃভূমির এই দুর্দিনে কি চুপ করে
বসে থাকতে পারি? আর আপনিই বা আমার মতো এক পুত্রের
জন্য কেন চিন্তা করবেন? পূর্ব বাংলার সব যুবকই তো আপনার
পুত্র। সবার কথা চিন্তা করুন। আমাদের সবাইকে আশীর্বাদ
করুন, যেন আমরা যে কাজে নেমেছি তাতে সাফল্য লাভ করতে
পারি। তবেই না আপনার পুত্র হয়ে জন্ম নেওয়া সার্থক হবে।
আমাদের বিজয়েই না আপনার এবং শত শত জননীর গৌরব।
শুনতে পেলাম আপনার শরীর খুব খারাপ। শরীরের দিকে নজর
দেন। কেননা বিজয়ের পর যে উৎসব হবে, সেই উৎসবে
আপনাকেই তো আমাদের গলায় মালা পরিয়ে দিতে হবে।
আপনি তো শুধু আমার জননীই নন, শত শত বিপ্রবী যুবকের মা।
আপনি আমাকে বাড়ি আসতে লিখেছেন। এই মুহূর্তে তা সম্ভব
হচ্ছে না। তবে আশা করি সামনের মাসের প্রথম দিকে বাড়ি
আসতে পারব। আমার জন্য চিন্তা না করে আশীর্বাদ করবেন।
আব্বাকে আমার সালাম জানাবেন আর ছোটদেরকে ব্লেহাশীষ।
আমি ভালো আছি
ইতি
আপনার শত শত বিপ্লবী যুবক সন্তানের একজন
আজু
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
চিঠি লেখক : শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী আবু হাসমত রশিদ। তিনি
সাভারের কাছে শিমুলতলীতে ২৫ অথবা ২৭ আগস্ট, শহীদ হন।
আজু তার ডাকনাম। চিঠি প্রাপক : মা, তাহমিনা বেগম। গ্রাম :
কমলাপুর, পো : জানিপুর, খোকশা, কুষ্টিয়া।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি আজিজুর রহমান তরফদার
|
মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান তরফদার
এর চিঠি কবি আজিজুর রহমান তরফদার (আজিজ বাঙ্গাল)।
মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী ফাহিমা সূর্য এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Fahima Surjo YouTube Channel । এই পত্রটি পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
. তারিখ ১২.৯.৭১
মামা,
পত্রের প্রথম আমার হাজার হাজার সালাম জানবেন। এইমাত্র
আপনার পত্র পেলাম, পত্র পড়ে সব অবগত হলাম । মামা, বড়
অসুবিধায় পড়ে আপনার কাছে পত্র দিয়েছিলাম। আমি ১৫
দিনের জন্য ছুটি নিয়েছিলাম। মনে করেছিলাম সকলের সঙ্গে
একবার দেখা করব কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে কারও সঙ্গেই দেখা
করতে পারলাম না। জানি না এরপর আর কোনো দিন দেখা
করতে পারব কি না। মামা, আম্মা এবং আব্বার প্রতি নজর
রাখবেন, আমার মতো তাদের বিমুখ করবেন না। এখনো কয়েক
দিন ছুটি আছে। এ কয় দিন কোথায় থাকব জানি না। এর কয়
দিন পর যাব সেখানে যেখানে আমার স্থান। তারপর কোথায়
থাকব জানি না। আমার জন্য এবং দেশের জন্য দোয়া করবেন।
বাড়িতে চিন্তা করতে মানা করবেন। যেমনি হোক বেঁচে থাকব,
কেননা ন্যায়ের পথে আছি, মরে যাই যাব, কোনো দুঃখ নেই, তবু
মনে করব কিছু করেছি। আমার কাছে একটা transistor আছে।
সেটা তোতা মামার কাছে রেখে যাব। যদি পারি তবে পরে
পাঠাব। আপনি তোতাকে চিনবেন না। ওরা খুব ভালো তাই সবই
নিয়েছে। তাদের জন্যই আপনি মাফ করবেন, একদিন বুঝবেন
ঠিকই। মিন্টু ভাইয়ের কাছে খোজ মনে হয় পাননি। মামানিকে
এই পাগলের জন্য দোয়া করতে বলবেন এবং সালাম জানাবেন।
মেরী কেমন? তাকেও দোয়া করতে বলবেন। আপনাদের দোয়াই
আমাদের সকলের পাথেয়। ভুল ক্ষমা করবেন।
ইতি
আজিজুর
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
চিঠি লেখক : মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান তরফদার (আজিজ
বাঙ্গাল)।
চিঠি প্রাপক : তৎকালীন মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক
খন্দকার আবদুল হাই।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি কবীরউদ্দীন আহমেদ
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি কবির এর চিঠি
শহীদ কবি কবীরউদ্দীন আহমেদ। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে
কবিতাই !
শিল্পী ফাহিমা সূর্য এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Fahima Surjo YouTube Channel । এই পত্রটি পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
আব্বাজান,
প্রথমে আমার সালাম জানাইব। আশা করি খোদার ফজলে
ভালোই আছেন। কামালের সঙ্গে আমার দেখা হইয়াছে। তাহার
বাসা হইতে যেন কাপড়চোপড় পাঠাইয়া দেয়। আব্বা, আপনি
বাবুর আব্বা সালাম খান সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখিবেন।
আর সুলতান দাদাকে দিয়া নূরুল আমিন সাহেবকে ধরেন।
আপনারা আমার জন্য কোনো রকম চিন্তা করিবেন না। এখন
পর্যন্ত আপনাদের কোনো সংবাদ না পাইয়া চিন্তিত আছি। যদি
পারেন তবে আমার সঙ্গে দেখা করিতে পারেন। আমার জন্য
কাউকে টাকা দিবেন না। যদি পারেন নিজেরা কিনে জেল গেটে
জমা দিয়া দিবেন। আপনি আম্মাকে সান্তনা দিয়া রাখিবেন।
আম্মাকে আমার সালাম ও দোয়া করিতে বলিবেন। এরশাদ ভাই
ও মামাদের আমার সালাম জানাইবেন ও দোয়া করিতে বলিবেন।
ইতি
কবির
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
চিঠি লেখক : শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কবির। জেল থেকে বাবার কাছে
লিখেছেন। তাঁর প্রকৃত নাম কবীরউদ্দীন আহমেদ। বাবা ডা.
রকিবউদ্দীন আহমেদ। মা আসিয়া খাতুন। পৈতৃক স্থায়ী ঠিকানা
দিলারপুর, মুরাদনগর, কুমিল্লা।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি কে মুশতাক ইলাহী
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি কে মুশতাক ইলাহী এর
চিঠি কবি কে মুশতাক ইলাহী। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের
কাছে কবিতাই !
শিল্পী ফাহিমা সূর্য এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Fahima Surjo YouTube Channel । এই পত্রটি পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
তারিখ ২৯/১১/৭১
শ্রদ্ধাবরেষু,
ভাই, সালাম জেনো। কুচবিহার থেকে একটা চিঠি দিয়েছি গত
সপ্তাহে বা তার কিছু আগে। পেলে কি না জানাবে। তোমার বা
আমার চিঠি প্রায়শই হারাচ্ছে। কিছুদিন আগে কুচবিহার থেকে
ফিরলাম। শত্রুদের কাছ থেকে সদ্য দখল করে নেওয়া বিস্তীর্ণ
অঞ্চল দেখে এলাম। দশটা থানা আমাদের দখলে। অসম্ভব সুন্দর
ডিফেন্স। জীবনযাত্রা বেশ নরমাল। ভারতীয় সৈন্য দ্বিতীয়
ডিফেন্সে আছে-চিন্তার বিশেষ কিছু নেই বলে আমাদের বিশ্বাস।
আমাদের সৈন্য বা মিলিটারি অফিসাররা নিজেদের স্বাতন্ত্র্য
রাখতে যথেষ্ট সমর্থ। ডিসকারেজ হয়ো না। পাকিস্তানে ফিরবার
সামান্যতম বাসনাও বাদ দাও। ঢাকার অবস্থা আবার দিন দিন
খারাপ হতে চলেছে। খবরও বিশেষ পাওয়া যাচ্ছে না। চিঠিপত্র
লিখো মাঝে মাঝে।
কুচবিহারে বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কয়েক দিন গেছলাম
ভাইয়ের ক্যাম্পে। ওখানে সেক্টর অফিসে আছেন। কাজ
করছেন--- ফ্রন্টে যেতে হয় না। কাজেই তাকেও কাজেই থাকতে
আমি বলেছি। চিনু একেবারে ফ্রন্টে আছে --- শহর থেকে ৬/৭
মাইল দূরে তাদের বেস্। ওর এক কমরেডের সঙ্গে দেখা হয়েছে
--- ওরা ভালো আছে --- গ্রামাঞ্চলে ওরা দেবতার মতো পুজ্য বলে
শুনছি।
চিঠি লেখক : মুক্তিযোদ্ধা কে মুশতাক ইলাহী। তাঁর পিতার নাম :
খোন্দকার দাদ ইলাহী। ঠিকানা : ধাপ, মেডিকেল মোড়, রংপুর।
চিঠি প্রাপক : ভাই কে. মউদুদ ইলাহী।
আমি আগামীকাল আবার কুচবিহারে যাচ্ছি --- কলকাতায়
থাকছি না, আর কাজ ওদিকেই হবে বোধ হয়। চিঠি কুচবিহারে
দিও। ঠিকানা, প্রযত্নে : তাইবুর রহমান, ইনচার্জ, বাংলাদেশ যুব
শিবির, সুভাষ পল্লী, কুচবিহার, উত্তরবঙ্গ, ভারত।
মুশতাক ইলাহী
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি ওমর ফারুক
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি ওমর ফারুক এর
চিঠি শহীদ কবি ওমর ফারুক। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের
কাছে কবিতাই !
শিল্পী ফাহিমা সূর্য এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Fahima Surjo YouTube Channel । এই পত্রটি পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
. তারিখ ২৭.৬.১৯৭১ ইং
মা,
আমার শত সহস্র সালাম ও কদমবুসি গ্রহণ করিবেন। আব্বার
কাছেও তদ্রুপ রহিল। এতদিনে নিশ্চয় আপনারা আমার জন্য
খুবই চিন্তিত। আমি আল্লাহর রহমতে ও আপনাদের দোয়ায়
বাংলাদেশের যেকোনো এক স্থানে আছি। আমি এই মাসের ২০
হইতে ২৫ তারিখের মধ্যেই বাংলাদেশে আসিয়াছি। যাক,
বংলাদেশে আসিয়া আপনাদের সাথে দেখা করিতে পারিলাম না।
আমাদের নানাবাড়ির ও বাড়ির খবরাখবর নিম্নের ঠিকানায়
লিখিবেন। আমি বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য আসিয়াছি।
আশা করি বাংলায় স্বাধীনতা আসিলেই আমি আপনাদের কোলে
ফিরিয়া আসিব। আশা করি মেয়াভাই ও নাসির ভাই এবং
আমাদের স্বজন বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত। যাক, বর্তমানে
আমি ময়মনসিংহ আছি। এখান হইতে আজই অন্য জায়গায়
চলিয়া যাইব । দোয়া করিবেন।
পরিশেষে
আপনার স্নেহমুগ্ধ
ফারুক।
জয় বাংলা
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
চিঠি লেখক : শহীদ ওমর ফারুক। ভোলা জেলার সদর
উপজেলার চরকালী গ্রামের আনোয়ারা বেগম ও আবদুল ওদুদ
পণ্ডিতের পুত্র। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে গাইবান্ধার নান্দিনায়
সংঘটিত যুদ্ধে তিনি শহীদ হন।
চিঠি প্রাপক : মা আনোয়ারা বেগম। গ্রাম : চরকালী, সদর
উপজেলা, জেলা : ভোলা।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি মোস্তফা আনোয়ার কামাল
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি মোস্তফা
আনোয়ার কামাল এর চিঠি শহীদ কবি মোস্তফা
আনোয়ার কামাল। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী ফাহিমা সূর্য এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Fahima Surjo YouTube Channel । এই পত্রটি পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
. তারিখ ১.১১.৭১
আম্মা,
সালাম নিবেন। আমরা জেলে আছি। জানি না কবে ছুটব। ভয়
করবেন না। আমাদের ওপর তারা অকথ্য অত্যাচার করেছে।
দোয়া করবেন। আমাদের জেলে অনেক দিন থাকতে হবে। ঈদ
মোবারক।
কামাল
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
চিঠি লেখক : কামাল। পুরো নাম মোস্তফা আনোয়ার কামাল।
চিঠি প্রাপক : মা আনোয়ারা বেগম। স্বামী : মো. শির মিয়া।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলে কামাল এবং তাঁর পিতা ২১.১১.১৯৭১
তারিখে শহীদ হন।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি অনিল মুখার্জি, আমিন
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি অনিল মুখার্জি, আমিন
এর চিঠি কবি অনিল মুখার্জি, আমিন। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি
আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী ফাহিমা সূর্য এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Fahima Surjo YouTube Channel । এই পত্রটি পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
. তারিখ আগরতলা, ১০.১১.৭১
স্নেহের মঞ্জুর,
আমার বিপ্লবী অভিনন্দন ও ভালোবাসা নিয়ো এবং সবাইকে
দিয়ো। আশা করি তোমরা সবাই ভালো আছ।
শুনলাম তোমরা অতিসত্বর দেশের ভিতরে যাচ্ছ। তবে তার
অসুবিধাও আছে। যদি একান্ত কোনো কারণে যাওয়া হয়ে না
ওঠে কয়েক দিনের মধ্যে, তবে একদিন দেখা হলে খুবই খুশি হব।
আমি কাল এসেছি এখানে এবং আগামী ২০ শে পর্যন্ত অবশ্যই
এখানে আছি। তত দিন থাকলে একদিন ছুটি নিয়ে আসতে
পারবে আশা করি।
আমি এখন মোটামুটি ভালোই আছি। তোমাদের তথা আমাদের
সবারই সাফল্য কামনা করি। শুভেচ্ছা রইল।
ইতি
তোমাদের
আমিন ভাই
পুনঃ ভিতরে ঢোকার দিন তোমার ছোট ভাই-এর সঙ্গে দেখা
হয়েছিল খুবই আনন্দ পেয়েছি।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
চিঠি লেখক : আমিন এটা তাঁর ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম অনিল
মুখার্জি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা।
চিটি প্রাপক : মনজুরুল আহসান খান।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি লেফটেনান্ট সেলিম
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি লেফটেনান্ট
সেলিম এর চিঠি শহীদ কবি লেফটেনান্ট সেলিম।
মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
শিল্পী ফাহিমা সূর্য এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
Fahima Surjo YouTube Channel । এই পত্রটি পাঠের অডিও
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
. তারিখ ৩০.১১.৭১
মা,
পহেলা নভেম্বর নোয়াখালীতে যাওয়ার হুকুম হলো। ফেনীর
বেলোনিয়া ও পরশুরাম মুক্ত করার জন্য। ৬ই রাতে টুপ চুপ
করে শত্রু এলাকার অনন্তপুরে ঢুকলাম। পরদিন সকালে ওরা
দেখল ওদের আমরা ঘিরে ফেলেছি। ৮ই রাতে ওই জায়গা সম্পূর্ণ
মুক্ত হলো। শত্রুরা ভয়ে আরও কিছু ঘাটি ফেলে পালিয়ে গেল।
পরদিন চিতোলিয়া আমরা বিনাযুদ্ধে মুক্ত করলাম। আস্তে আস্তে
আরও এগিয়ে গেলাম। ২৭ শে নভেম্বরে যখন আমরা ওই এলাকা
থেকে ফিরে এলাম, তখন আমরা ফেনী মহকুমা শহর থেকে দেড়
মাইল দূরে ছিলাম। পাঠাননগর ছিল আমাদের অগ্রবর্তী ঘাঁটি।
শিগগিরই মাগো, আবার তোমার সঙ্গে দেখা করতে পারব ভেবে
মনটা আনন্দে ভরে গেল। জানো মা, এই যুদ্ধে আমরা ৬০ জন
শত্রু ধরেছি। আমাদের কোম্পানির তিনজন শহীদ ও একজনের
পা মাইনে উড়ে গেছে।
দোয়া করো, মা।
সেলিম
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
চিঠি লেখক : শহীদ লে. সেলিম। তাঁর পুরো নাম সেলিম মোঃ
কামরুল হাসান। স্বাধীনতার পর ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২ মিরপুর
শত্রুমুক্ত করতে গিয়ে তিনি শহীদ হন।
চিঠি প্রাপক : মা। সালেমা বেগম।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযোদ্ধা কবি ফজনুর রহমান
|
মুক্তিযোদ্ধা ফজনুর রহমান এর চিঠি শহীদ
কবি ফজনুর রহমান। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
ভয়েস ম্যারিনা চ্যানেলের অনামা শিল্পীর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন,
ভিডিওটি সৌজন্যে voice marina YouTube Channel । এই পত্রটি
পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
চিঠি লেখা হয়েছিলো ১৭ই অক্টোবর ১৯৭১ সালে
শ্রদ্ধেয় বড় ভাই,
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক
আস্সালামু আলাইকুম
সমাচার এই যে ১৯৭১ সালে কাল রাত্রি ২৬ শে মার্চ
বর্বর হানাদার বাহিনী পাঞ্জাবিরা তার সাথে আলবদর রাজাকার
সিএফ যৌথভাবে নিরীহ বাঙালির ওপর নারকীয় গণহত্যা শুরু
করে এবং বেশি শিক্ষিত লোকদের ওপর বেশি জুলুম শুরু করে।
তাই আপনি আমাদের মাঝে বেশি শিক্ষিত, অর্থাৎ এমএ পাস ও
কলেজের অধ্যাপক। তাই বাড়ির সমস্ত পরিবার, অর্থাৎ আব্বা-
আম্মা, চাচা, ভাই-বোন সকলেই মন স্থির করলাম, আপনাকে এই
চৌডালার মাটিতে বাঁচানো সম্ভব নয়। তাই আপনাকে অনুরোধ
করলাম, আমাদের ভাগ্যে যা আছে তা-ই হবে, আপনি চলে যান
মুক্তিযুদ্ধে। আপনার যাওয়ার মন ছিল না। তবুও আপনাকে
মুক্তিযুদ্ধে যেতে হলো। আপনি বললেন, মরলে সবাই একসঙ্গে
মরব। আমি বাড়িতেই থাকব। তবুও আপনাকে অনুরোধ করে
মুক্তিযুদ্ধে পাঠালাম। আপনি আমাদের সকলের কথা মেনে নিয়ে
প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে গেলেন। আমরা এতখানি বুঝতে
পারিনি যে আপনি যাওয়ায় আমাদের ওপর এত জুলুম-অত্যাচার
হবে। যখন পাঞ্জাবির দোসর রাজাকারেরা শুনল
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছে, তখন তারা সুযোগ
পেল, তার পর পাচজন রাজাকার বাড়িতে এসে অন্যায় জুলুম
শুরু করল।
যদি জানে বাঁচতে চাস, তবে একটা খাসি এবং দুই মণ চাল দে
এবং পাঁচ হাজার টাকা দে। আমরা পিকনিক করব।
চিঠিটির লেখক হলেন ফজনুর রহমান, গ্রাম : হাউসনগর. পো চৌডালা,
জেলা : রাজশাহী। তিনি মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাকের ছোট ভাই।
এ চিঠি প্রাপক : মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক। তিনি তখন ৭ নম্বর
সেক্টরের অধীন ভোলাহাট এলাকায় যুদ্ধরত ছিলেন।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন : এবিএম কাইসার রেজা, সহকারী অধ্যাপক,
ভূগোল বিভাগ, কুমারখালী ডিগ্রি কলেজ, কুমারখালী, কুষ্টিয়া। তিনি
মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাকের ছেলে।
তখন সঙ্গে সঙ্গে আব্বা ও চাচা খাসি-চাল-টাকা দিয়ে সেদিনের
মতো বিদায় দিলেন। তার পর থেকেই দুই-চার দিন অন্তর টাকা-
পয়সা, চাল-ডাল নিয়ে যায়। তখন মেজো ভাই থাকতে না পেরে,
আমাকে বলল, ফজলুর রহমান, তুই রাজাকারে যোগদান কর, না
হলে আর জান বাঁচবে না। তখন আমি বললাম এখন রাজাকারে
যোগদান করলে তারা আমাদেরকে আরও সন্দেহ করবে।
আমাদের ওপর আরও জুলুম শুরু হবে। ভাগ্যে যা আছে তা-ই
হবে, আমি যোগদান করলাম না। আল্লাহর ওপর ভরসা করে
দিন কাটাতে লাগলাম। তারপর বড় বাগানের সমস্ত বাবলার গাছ
কেটে তারা মরিচা বানাতে শুরু করল। আপনি তো জানেন প্রায়
১০০ গাছ ছিল। কিছুই বলতে পারিনি। এবং সে বাগানেই
আমাদের ইটের ভাটা ছিল, সে ভাটার ইটে মরিচা করেছে।
বাদবাকি ইট লুটপাট করে বিক্রি করে দিয়েছে, এখন পর্যন্ত কিছুই
বলার সাহস পাইনি। এইভাবে তাদের মন জোগাই আর দিন
যায়। তারপর অক্টোবর মাস হতে তারা গ্রামের প্রায় ১০ জন
নিরীহ লোককে ধরে নিয়ে গিয়ে রহনপুরে পাঞ্জাবিদের ক্যাম্পে
বন্দী করে রাখে। তিন দিন পর পাঞ্জাবিরা রাত্রিবেলায় চোখ বেঁধে
গুলি করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। তার দু-তিন দিন পর পাঞ্জাবিরা
গোমস্তাপুরে সমস্ত হিন্দুদের ধরে নিয়ে নদীর ধারে প্রকাশ্যে গুলি
করে হত্যা করে। তারপর রাজাকার পাঞ্জাবিরা যৌথ বাহিনী বড়
জামবাড়িয়া ছোট জামবাড়িয়ায় হাজার হাজার বাড়িঘর লুটপাট
করে। এবং নিরীহ মানুষ হত্যা করে। তার কিছুদিন পর
পাঞ্জাবিরা কাসিয়াবাড়ী বোয়ালিয়া অপারেশন করে। সেখানে
তারা এমন গণহত্যা চালায় যে নদী দিয়ে শত শত লাশ আমরা
ভেসে যেতে দেখেছি। আর কী লিখব, এই করুণ কাহিনী লিখে
শেষ করা যাবে না। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করেন, যেন
আমরা আল্লাহর রহমতে কোনোরকমে জানে বাঁচতে পারি।
আমাদের মনে প্রবল আশা যে শীঘ্রই হবে। আপনাকে আল্লাহর
হাতে সঁপে দিয়েছি। মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজি হয়ে ফিরে
আসবেন। এই দোয়া রাখি। ক্রুটি মার্জনীয়।
ইতি
আপনার ছোট ভাই
ফজলুর রহমান
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
প্রিয় তৌহিদ,
প্রথমেই বলে নিই যে বাংলাদেশের মুক্ত এলাকা থেকে তোমাকে
লিখছি। এখান থেকে ভারতীয় সীমান্ত প্রায় ১৮ মাইল দূরে। আমি
মুক্ত ভূমিতে নিঃশ্বাস নিচ্ছি, খোদার ইচ্ছায় খুব ভালো লাগছে। এ
জায়গাটি মুক্ত হয়েছে দুই সপ্তাহ আগে।
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কবি লেফটেনেন্ট আশফাক সামাদ <<< মূল ইংরেজী চিঠি পাঠের জন্য...
|
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আশফাক এর চিঠি কবি
লেফট্যানান্ট আশফাক সামাদ। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে
কবিতাই ! চিঠিটি ইংরেজীতে লেখা হয়েছিল। এখানে বঙ্গানুবাদ।
মূল কবিতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন বা বাঁ দিকে স্ক্রল করুন <<<
শিল্পী ফ্লোরা শুচি এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে Abritti
Online YouTube Channel । রণাঙ্গন থেকে লেখা ‘একাত্তরের চিঠি’র
পাঠ সংকলন "রুধিয়া রাখিতে নারি" থেকে। এই পত্রটি পাঠের
অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি
অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের
লেখা পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
এখন রাত দশটার কাছাকাছি সময়। একটা কুঁড়েঘরে আমি
আমার বিছানায় শুয়ে আছি। মেঝে থেকে দুই ফুট নিচে খোঁড়া
গর্তের মধ্যে কাঠের পাটাতনে পাতা বিছানা। বুলেট ও গোলা
থেকে রক্ষার জন্য আমার চারদিকে মাটির দেয়াল। একটা অল্প
আলোর কুপি জুলছে। আমার “বন্ধু” পাঞ্জাবিরা মাত্র ৬০০ গজ
দূরে। কুত্তার বাচ্চাগুলো আজ দিন/রাতে গোলাগুলি করেনি।
আমার মনে হচ্ছে যেকোনো সময় তারা সেটা শুরু করতে পারে।
হয়তো এখনই, তারা সাধারণত এ রকম সময়ে গোলাগুলি করে।
গাধাগুলো গত রাতে আমাদের ঘুমাতে দেয়নি। প্রায় ৪০টা গোলা
নিক্ষেপ করেও আমাদের ওপর ফেলতে পারেনি। লক্ষ্যভেদের কী
নমুনা! আমরা আজ ওদের ওপর ৫০টা গোলা নিক্ষেপ করেছি।
গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে, একটা “কুকুর' মারা গেছে। কী
অসামান্য লক্ষ্যভেদ! আসলে এ রকম হাস্যকর ঘটনা মাঝে মাঝে
ঘটে। তুমি যদি বাংকারে থাকো তাহলে নিরাপদ থাকবে।
নয়তো ভাগ্য খারাপ হলে একটা গোলা এসে তোমার ওপর
পড়তে পারে। তবে এর সম্ভাবনা খুবই কম।
অনেক দিন পর পুরোনো মধুর দিনগুলোর কথা মনে পড়ল বলে
তোমাকে লিখতে বসেছি। আমার মনে পড়ছে বন্ধুদের কথা,
পরিবারের কথা, সর্বোপরি আমার ঢাকা শহরের কথা।
তুমি জানো তৌহিদ এই দিনগুলোতে পুরোনো দিনের কথা ভাবার
মতো সময় পাইনি। সত্যি সত্যি জানি না, আবার কখন তোমাকে
লেখার সুযোগ পাব। শেষ যেখান থেকে তোমাকে লিখেছি সেখান
থেকে এই স্থানের দূরত্ব ১৫০ মাইল।
লন্ডন কেমন? খুব বড় আর জমকালো নিশ্চয়ই। ওদের বুলেট
এড়িয়ে যদি বাঁচতে পারি তাহলে তোমার সঙ্গে ওখানে দেখা
করব। আমার জন্য একটা সুন্দর ছোট জায়গা ঠিক কোরো।
করবে?
তুমি কি আমার বাড়িতে চিঠি লিখেছিলে? আরেকটু কষ্ট করো।
তাদের বলো, তারা যেন তোমাকে চিঠি লিখে তাদের কুশল
জানায় যাতে তুমি আবার সেটা আমাকে জানাতে পার। ছয় মাস
চলে গেল, আমি তাদের কোনো খবর পাই না।
আমার ঠিকানা
লেফট্যানান্ট আশফাক সামাদ
হেডকোয়ার্টার সেক্টর ৬
প্রযত্নে : পোস্টমাস্টার
চ্যাংড়াবান্ধা
জেলা : কুচবিহার
ভারত
বাসায় রুখসানা ও আর সবাই কেমন আছে? তাদের আমার
শুভেচ্ছা জানিয়ো। নাজমুলকেও আমার শুভেচ্ছা দিয়ো। দ্রুত
উত্তর দিয়ো।
ভালোবাসা
আসফি
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
জনাব আব্বাজান, ২৩শে মে ১৯৭১
আজ আমি চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় যাচ্ছি। শুধু এইটুকু জানি,
বাংলাদেশের একজন তেজোদৃপ্ত বীর স্বাধীনতাকামী সন্তান হিসাবে
যেখানে যাওয়া দরকার আমি সেখানেই যাচ্ছি। বাংলার বুকে বর্গী
নেমেছে। বাংলার নিরীহ জনতার ওপর নরপিশাচ রক্তপিপাসু পাক-
সৈন্যরা যে অকথ্য বর্বর অত্যাচার আর পৈশাচিক হত্যালীলা চালাচ্ছে,
মুক্তিযোদ্ধা কবি শহীদ আমানউল্লাহ চৌধুরী ফারুক
|
মুক্তিযোদ্ধা ফারুক এর চিঠি কবি শহীদ আমানউল্লাহ
চৌধুরী ফারুক। মুক্তিযোদ্ধার চিঠি আমাদের কাছে কবিতাই !
সৌম্যজিৎ পাল এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
MILANSAGARwebsite YouTube Channel । এই পত্রটি অন্য পাঠের
রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ
করে মার্জনা করে দেবেন। আগ্রহী পাঠকগণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
পত্রের সংকলনের জন্য এখানে ক্লিক করুন...।
তা জানা সত্তেও আমি বিগত এক মাস পঁচিশ দিন যাবৎ ঘরের
মধ্যে বিলাস-ব্যসনে মত্ত থেকে যে ক্ষমাহীন অপরাধ করেছি, আজ
সেই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য যাত্রা শুরু করলাম। সমগ্র
বাঙালী যেন আমায় ক্ষমা করতে পারেন। আপনি হয়তো দুঃখ
পাবেন। দুঃখ