হে বাক্য-বণিক ধিক্, শত ধিক্!
. কি কর দেশের কাজ?
কাগজে কলমে, বক্তৃতায় গানে
দেশ-প্রেম তব মহা বন্যা আনে,
পাষণ্ডেরা যবে প্রবেশিয়া ঘরে
স্বদেশী বধূরে অপমান করে,
. তখন পাও না লাজ?
হে ভণ্ড ধার্মিক, ধিক্ শত ধিক্!
. ধর্ম কাহারে কয়?
প্রস্তর প্রতিমা, ইষ্টকের ঘর
তার চেয়ে শতগুণে পূজ্যতর
রমণীর মান---নারীর সন্তান,
এ কথা হৃদয়ে নাহি পায় স্থান?
গৃহের রমণী প্রেম-পুণ্য-খনি
. সে কি রক্ষণীয়া নয়?
যায় দিন রাত গুটাইয়া হাত
. শুধু পর-মুখ চাও ;
হিন্দু ধর্মের করিছ বড়াই,
হিন্দু-সভ্যতার বল তুলা নাই ;
সতী অতুলনা ভারতের নারী
. সে সতীরে শাস্তি দাও।
যোগ্য শাস্তি থাকে দাও আপনাকে,
. আপনার দুষ্ক্রিয়ার।
পোষা পাখি সম রুধিয়া পিঞ্জরে,
রেখেছ আজন্ম উড়ে যাবে ডরে,
তাই বঙ্গনারী পঙ্গু পক্ষাঘাতে,
তাই সে নিজেরে পারে না বাঁচাতে
. সে দোষ তো নহে তার।
নব শক্তি রথে জ্ঞান দীপ্ত পথে
. তরুণ বাঙালি ভাই,
কে চলিছ আজ, উৎসাহে অধীর,
শত্রু দুর্নীতির, সত্য-যুদ্ধে বীর,
উদার হৃদয়, তোমাদের কাছে
. আমি তাহা গেয়ে যাই---
. তরুণ বাঙালি ভাই।
খুলিয়া শৃঙ্খল ভাঙিয়া পিঞ্জর,
শিখাও চলিতে ধরি তার কর,
শুদ্ধি নাহি বাড়ে অন্ধ কারাগারে।
উন্মুক্ত বাতাসে আলোক মাঝারে
. তাহারো যে আছে ঠাঁই---
. বিধিদত্ত স্বীয় ঠাঁই।
তোমার ভগিনী, তোমার প্রেয়সী,
তাদেরে বাঁচাতে লেখনী ও মসি
নহে গো যথেষ্ট, চাহি বীর্য-অসি
. চরিত্রের তেজ চাই।
জ্ঞানের আলোক, ন্যায়ের বিচার
মানবের জন্মগত অধিকার
. তারে দিতে হবে ভাই।
সেবা সুখ আশে, হারাবার ত্রাসে
রাখিয়া নিরুদ্ধ সংকীর্ণ আবাসে,
পুরুষেরো বল গেছে রসাতল,
. নির্বীর্য হয়েছে দেশ ;
দৃঢ় হতে দাও তার দেহ প্রাণ,
রাখিতে শিখাও আপনার মান,
চিরদিন ডরে না মরিতে মরে,
তাই নির্যাতিতা দুর্বৃত্তের করে,
. এ দুর্গতি হোক শেষ।
নারী-আত্মা এইবার জাগে,
প্রলয় আগুন বুঝি লাগে!
রেখেছিল যারে অন্ধকৃপে,
জগদ্ধাত্রী জগন্মাতা রূপে
দাঁড়াবে সে সন্তানের আগে,
এই বার নারী আত্মা জাগে!
কাঁদিবে কতই চুপে-চুপে
আপনার গৃহ অন্ধকৃপে,
দীনা, হীনা, সর্ব স্বত্ব ত্যাগে?
আজ সে যে আপনারে মাগে।
দাসত্বের ভেঙে হাত কড়া
শাসনের ছিড়ে দড়ি-দড়া
ছুটিয়াছে মুক্তি-অনুরাগে
যজ্ঞের বেদির পুরোভাগে।
এদেরও তো গড়েছেন নিজে ভগবান্ ,
নবরূপে দিয়েছেন চেতনা ও প্রাণ ;
সুখে দুঃখে হাঁসে কাঁদে স্নেহে প্রেমে গৃহ বাঁধে
বিধে শল্যসম হৃদে ঘৃণা অপমান,
জীবন্ত মানুষ এরা মায়ের সন্তান॥
এরা যদি আপনারে শেখে সম্মানিতে,
এরা দেশ-ভক্ত রূপে জন্মভূমি-হিতে
মরণে মানিবে ধর্ম বাক্য নহে --- দিবে কর্ম ;
আলস্য বিলাস আজো ইহাদের চিতে
পারেনি বাঁধিতে বাসা, পথ ভুলাইতে॥
এরা হতে পারে দ্বিজ---যদি এরা জানে,
এরা কি সভয় সরি' রহে ব্যবধানে ?
এরা হতে পারে ,বীর, এরা দিতে পারে শির,
জননীর, ভগিনীর, পত্নীর সম্মানে,
ভবিষ্যের মঙ্গলের স্বপনে ও ধ্যানে।
এরা যদি জানে॥
উচ্চ কূলে জন্ম ব'লে কত দিন আর
ভাই বিপ্র রবে তব এই অহংকার ?
কৃতান্ত সে কুলীনের রাখে না তো মান,
তার কাছে দ্বিজ শূদ্র পারীয়া সমান।
তার স্পর্শে যেই দিন পঞ্চভূতে দেহ লীন
বাহ্মণে চণ্ডালে রহে কত ব্যবধান ?
॥ মিশ্র ইমনকল্যাণ - একতালা॥
আমরা ব্রাহ্মণ ব'লে নোয়ায় না মাথা, কে আছে এমন হিন্দু?
আমাদেরই কোনও পূর্ব্ব পুরুষ গিলে ফেলেছিল সিন্ধু।
গিরি গোবর্দ্ধন ধরে ছিল যেই, মেরেছিল রাজা কংসে,
তার বক্ষে যে লাখি মারে, সে যে জন্মেছিল এ বংশে ;
বাবা, এখনো রেখেছি গলায় ঝুলিয়ে অমন ধোলাই পৈতে ;
তোমরা মোদের সম্মান করিবে, সে কথা আবার কইতে?
আগেকার মত মুখ দিয়ে আর বেরোয় না বটে আগুন,
(কিন্তু) কথার দাপটে এ দুনিয়া মারি, সাহস থাকেতো লাগুন
যদিও এখন অভিশাপ দিয়ে ক’ত্তে পারিনে ভষ্ম ;
(কিন্তু) হাওয়াই তর্কে গিরি উড়ে যায়, তোমরা আবার কস্য?
বাবা, এখনো রেখেছি গলায় ঝুলিয়ে, ইত্যাদি।
পৌরহিত্য ক'রে থাকি আর করি মোরা গুরুগিরি হে ;
(আর) নরক হইতে দু'হাত তুলিয়া দেখাই স্বর্গের সিঁড়ি হে ;
অনুস্বার আর বিসর্গের যোগে বাজাই এমনি আখড়াই,
(যে) ষজমান, আর শিষ্যবর্গে, বেমালুমভাবে পাক্ড়াই ;
বাবা, এখনো রেখেছি গলায় ঝুলিয়ে ইত্যাদি।
আমরা ভূম্যধিকারী বঙ্গে,
সদা এয়ার-বন্ধু-সঙ্গে
কত ফুর্তিতে করি সময়-হত্যা,
. তাস, পাশা, চতুরঙ্গে।
মোদের highly furnished room,
তাতে দিন-রাত ‘দেরে তুম্’
ঐ তবলার চাঁটি, ‘বাহবার’ চোটে
. নাই পড়শীর ঘুম।
চলছে সুন্দর টানাপাখা,
তার ঝালরে আতর-মাখা,
আর হরদম পান-তামাক চলছে,
. গল্প চলছে ফাঁকা।
আছে ডজন চারেক চাকর,
ব’সে, মাচ্ছে মাছি ও মাকড়,
(দেখ) তাদেরো মাথায় আলবার্ট টেরী
. (ভুড়িটিও বেশ ডাগর)
. তারাও রসিক নাগর।
মোদের আছে পেয়ারের ভৃত্য,
তারা যোগায় মেজাজ নিত্য ;
আর উদর পুরিয়া প্রসাদ পাইয়া
. ‘বা! খুশি’ তাদের চিত্ত।
বাইরে সমাজের ধারো ধারি,
বাড়িতে পুজোর জমক ভারি ;
যদিও করেছি চটির দোকান, ঠেল্ছি বেড়ি ও হাতাটা,
(কিন্তু) টিকিটি সুদ্ধ বজায় রেখেছি মহর্ষি ব্যাসের মাথাটা ;
মদ্টা আসাং টা খাই, মাঝে মাঝে পড়েও থাকি গো খানাতে,
(আর) ব্রাহ্মণ ব'লে চিনিতে না পেরে ধরেও নে’ যায় থানাতে।
কিন্ত এখনো রেখেছি গলায় ঝুলিয়ে ইত্যাদি।
যদিও ভূলেছি সন্ধ্যা ও গায়ত্রী, জপ, তপ, ধ্যান, ধারণা,
(কিন্তু) ব্রাহ্মণত্ব কোথা যাবে? সোজা কথাটা বুঝিতে পার না?
টুক্ ক'রে ঢুকে চাচার হোটেলে খাই নিষিদ্ধ পক্ষী,
(আর) ভোরে উঠিয়া গীতা নিয়ে বসি, বাবা বলে ‘ছেলে লক্ষী’ ;
বাবা, এখনো রেখেছি গলায় ঝুলিয়ে ইতাদি।
চুরী কি ডাকাতি, খুন কি জখম, যা’খুসী দু’হাতে ক'রে যাই ;
পক্ষীতো ভাল, রাস্তায় যদি আস্ত “---”টা ধরে খাই ;
আমরা হচ্ছি জেতের কর্ত্তা, আমাদের জাত নিবে কে?
(এই) স্বার্থের পাকা-বেদীর উপরে গল টিপে মারি বিবেকে।
বাবা এখনো ঝুলছে ব্রহ্মণ্য তেজের Leyden Jar এ পৈতে ;
তোমরা মোদের সম্মান করিবে সে কথা আবার কইতে?
॥ বাউলের সুর - গড় খেমটা॥
. তোরা ঘরের পানে তাকা ;
. এটা কফ্ভরা রুমালের মত,
. বাইরে একটু আতর মাখা।
. বহুশাস্ত্র বারিধি, কালাচাঁদ বিদ্যেনিধি,
. নিবারণ মাইতির সঙ্গে কচ্ছেন তর্কফাঁকা,
. মা ইতি বলে, 'মুরগী ভাল’, শাস্ত্রী বলে, ধর্ম্ম গেল’,
(আবার) আঁধার হ'লে দুজন মিলে, হোটেলে হ’লেন গা’ ঢাকা !
. অথর্ব্ব বুড়োর সনে, সাত বছরের কনে,
. বিয়ে দেয় নিঠুর বাপে, হাতিয়ে কিছু টাকা ;
(আবার) এমনি কিছু মোহ তঙ্কার, যে দু'শ শাস্ত্রী, বিদ্যালঙ্কার,
. সেই বিষের মন্ত্র পড়ায়,
. উড়িয়ে টিকি জয়-পতাকা !
. না যেতে বাসিবিয়ে, মেয়ের যায় সব ফুরিয়ে,
. মোছে কপালের সিঁদুর, ভাঙ্গে হাতের শাঁখা ;
(তখন) মিলে সব শাস্ত্রীবর্গ, হেসে করান বৃষোৎসর্গ,
. মেয়েটির একাদশীর সুব্যবস্থা করেন পাকা।
. সে একাদশীর রেতে, মরে জল পিপাসেতে,
. বোকা বাপ্ দাঁড়িয়ে দেখে, মাথায় হাঁকায় পাথা ;
(আবার) ব'সে সেই মেয়ের পাশে, অন্ন গেলে গ্রাসে গ্রাসে,
. সমাজের নাই চেতনা, অন্ধ, বধির, মিথ্যে ডাকা।
. পাড়াগাঁয় দলাদলি, সুধু কানমলামলি,
. ‘ভাইপো’কে রাগের চোটে, শালা বলেন কাকা ;
(আবার) পেলে একটু দোষের গন্ধ, অমনি ধোপা নাপিত বন্ধ,
. এঁরাই আবার সভায় বলেন, ‘উচিত মিলে মিশে থাকা!’
. পুরোহিত পৃজোয় ব’সে মন্ত্র আওড়াচ্ছে ক’সে,
. গায়েতে নামাবলী, প্রাণে লুচির ঝাঁকা ;
(আবার) বাইরে ব'সে নব্য হিন্দু, গণ্ডুষ কচ্ছেন মদ্যসিন্ধু,
. ধর্ম্মে বিশ্বাস নাই একবিন্দু, সুধু কৌলিক বজায় রাখা।
. কান্ত কয় কইব কত, এরাই দেশহিতে রত,
. এটা যে গাড়ীর মত, কাদায় ডুবল চাকা,
. এরা, ঘুমিয়ে ছিল উঠলো জেগে,
. চাকা টানতে গেল লেগে,
. মরণের জন্যে যেমন কুম্ভকর্ণের হঠাৎ জাগা!
আবার half a score বাবুর্চি আছে,
. রেঁধে দেয় চপ, কারি।
রোজ ছানা ও মাখন চলে,
আমরা রোদে গেলে যাই গ’লে,
ওই কস্তুরী দিয়ে দাঁত মাজি, আর
. আঁচাই গোলাপ জলে।
দেশে কত দুখী ভাতে মরে,
তাদের দেইনে পয়সাটি হাতে ক’রে ;
তারা গেট থেকে পেয়ে অর্ধচন্দ্র
. রাস্তায় প’ড়ে মরে।
কিন্তু D.M., D.S., D.J.
এলে, ভয়ে ঘেমে উঠি ভিজে.
তাদের খানা দেই আর বুট চাটি,
. (আহা) নতুবা জনম মিছে।
খেয়ে, স্কুলে severe beating,
ওই First Book of Reading,
হাঁ, প’ড়েছিনু বটে, এখনো ভুলিনি---
. “The blind man is bleating,”
যত সাহেব-সুবোর সনে
বলি ইংরেজি প্রাণপণে
ওই First Book-এর বিদ্যের চোটে,
. তারাও প্রমাদ গণে।
Brain-এ সয় নাক’ গুরু চাপ্ টা
আর প’ড়েই বা কোন্ লাভটা?
‘Yes’, ‘no’ আর ‘very good’ দিয়ে
. বুঝালেই হ’লো ভাবটা।
আমরা এত যে আরামে থাকি,
তবু কোন রোগ নাই বাকি---
Dyspepsia, Debility, আর
. কিছু কিছু ঢেকে রাখি।
ক’রে প্রজার রক্ত শোষণ,
করি মোসাহেব-দল পোষণ ;
আর প্রজার বিচার আমলারা করে,
. কোথায় আপীল মোসন?
করি হাতিতে চড়িয়া ভিক্ষে,
কেহ না দিলে পায় সে শিক্ষে,
তারা ভিক্ষে-খরচা দিতে, জমি ছেড়ে
. উঠেছে অন্তরীক্ষে।
তবু ঘোচে না ঋণের দায় ;
ওই খেয়ালেই তো মাথা খায়!
দেখ, সুবিধা ঘটিলে, দু’চার হাজার
. এক রেতে উড়ে যায়।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকা
|
|
|
এই পাতাটি পাশাপাশি, ডাইনে-বামে ও কবিতাগুলি উপর-নীচ স্ক্রল করে! This page scrolls sideways < Left - Right >. Poems scroll ^ Up - Down v.
|
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
এসো, দেশের অভাব ঘুচাও দেশে
কবি কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ (৯.৬.১৮৬১ - ৪.৭.১৯০৭)।
॥ প্রসাদি সুর॥
এসো, দেশের অভাব ঘুচাও দেশে |
সবার, আহার বিহার বিলাস বেশে ||
দেখো দেখি, মিলে আঁখি, যত ভিন্নদেশী এসে |
দেশের যা ছিল ধন, কচ্চে হরণ
জাহাজভরে এক নিমেষে ||
গৃহ ধনধান্যে ভরা, আমরা মজি নিজের দোষে |
আমরা, কিছুই না পাই, হেলাই হারাই,
নয়নজলে বেড়াই ভেসে ||
সকল কাজে বিজ্ঞ সাজি অনভিজ্ঞ ধল্লে ঠেসে |
আসে, ত্যাগ স্বীকারের নামেই বিকার,
দংশে যেন আশীবিষে ||
বসন ভূষণ, যা প্রয়োজন,
পান ভোজন নয় আত্মবশে |
যেন, বাসা থাকতে বাবুই ভিজে,
নিজের উপায় দেখে না সে ||
ধুতি চাদর মাঞ্চেস্টরের চেয়ে দেখো সব সর্বনেশে,
ভরে জাহাজগুলো, তোদের তুলো
তোরাই কিনিস সেই জিনিসে ||
যাদের তুলো তাদের দিয়ে
লাভ নিয়ে যাস সব বিদেশে |
আমরা, অলস হয়ে, আছি চেয়ে
বিদেশবাসীর দয়ার আশে ||
লজ্জা বারণ, শীতের দমন,
রেশম পশম পাট কাপাসে |
বলো, কীসের কসুর, খাবার প্রচুর,
কীনা ফলে খেতের চাষে ||
মাছ মাংস ফল, আছে সকল,
সব পাওয়া যায় বিনা ক্লেশে |
নদী, সরোবরে, স্নিগ্ধ করে, মিষ্ট জলে তৃষ্ণা নাশে ||
গুড় চিনি আর মধু ফেলি
লোফসুগারের মজি রসে |
আছে গোয়াল পোরা বকনা গাভি
কৌটাতে দুধ তবু আসে ||
বিষ কোটি শ্রমজীবী হেথা,
পশু পুষ্ট মাঠের ঘাসে |
লোকে, অল্পে তুষ্ট, সহে কষ্ট,
বাঁকায় না মুখ অসন্তোষে ||
তবু কেন ভিক্ষা করি বিদেশবাসীর দ্বারদেশে |
কেবল স্বভাব দোষে অভাব ভাবি,
নাহি দেখি কী হয় কীসে ||
কাঞ্চন বিলায়ে দিয়ে,
কাচ খুঁজি হায় পরের বাসে |
পর, নাহি দিলে, মুখে তুলে,
দিন কেটে যায় উপবাসে ||
দিয়ে, সোনা হীরের খনি,
আমদানি কাচ রাংতা সিসে |
যত, বিদেশবাসী নে যায় শস্য,
আমরা আছি সমান বসে ||
চারিদিকে, দৃষ্টি রেখে,
কাজ করে যাও আবেগবশে |
সবে, করিলে পণ, অধঃপতন,
হবে দমন অনায়াসে ||
নিজের বলে হও না বলী,
আসবে অরি কোন সাহসে |
যখন, ঘরের পেলে কার্য চলে,
কেন যাবে পরের পাশে ||
হয়ে যদি লুপ্ত শক্তি সুপ্ত থাক নিদ্রাবেশে |
জেনো, সবার দুঃখে, অধোমুখে,
শিয়াল কুকুর কাঁদবে শেষে ||
আশার আলো, সামনে জ্বালো,
তুচ্ছ ভাবো, ভোগবিলাসে |
আজি, কয় বিশারদ, যাবে বিপদ,
হতাশবাণী উড়াও হেসে ||
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
নীতি বন্ধন করোনা লঙ্ঘন
কবি কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ (৯.৬.১৮৬১ - ৪.৭.১৯০৭)
মৈমনসিংহ সুহৃদ-সমিতি দ্বারা ১৩১৩ বঙ্গাব্দে (১৯০৬ খৃঃ) প্রকাশিত
“গান” শিরোনামের একটি স্বদেশী-গানের সংস্করণের গান। আমরা গানটি
পেয়েছি, ১৮২৬ বঙ্গাব্দে (২০১৯ খৃঃ) কবি দিলীপ কুমার বসু সম্পাদিত,
কুবোপাখি প্রকাশন দ্বারা প্রকাশিত, এই গ্রন্থের ৩য় সংস্করণ থেকে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
নীতি বন্ধন করোনা লঙ্ঘন, রাজধর্মসার প্রজার রঞ্জন।
হইয়ে রক্ষক হ'য়োনা ভক্ষক, অবিচারে রাজ্য থাকে না কখন।
করেছ কলুষে এ রাজ্য অর্জন, কলুষ কল্মষে করোনা শাসন।
অবাধে হ'বে না দুর্ব্বল দমন, দুর্ব্বলের বল নিত্য নিরঞ্জন॥
ধ্বংস কংশাসুর [মু] যদুবংশ দল, চন্দ্র সূর্য্যবংশ গেছে রসাতল।
গৌরব-বিহীন পাঠান মোগল, হয় পাপ পথে সবার পতন।
কাল জলধিতে জল বিন্বপ্রায়, উঠে কত শক্তি কত মিশে যায়।
তোমরা কি ছিলে উঠেছ কোথায়, আবার পতনে লাগে কতক্ষণ?
এক দেশে থাকি, এক মাকে ডাকি
কবি কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ (৯.৬.১৮৬১ - ৪.৭.১৯০৭)
১৯০৫ সালে প্রকাশিত, যোগেন্দ্রনাথ শর্ম্মা সম্পাদিত “স্বদেশ-সঙ্গীত” কাব্য-
সংকলনের গান। আমরা গানটি পেয়েছি ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত গীতা
চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত “বাংলা স্বদেশী গান” সংকলন থেকে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
॥ কীর্তনের সুর॥
এক দেশে থাকি, এক মাকে ডাকি
এক সুখে সখী, ছিলাম সবে।
আজি অকস্মাং অশনি সম্পাত!
সমান বিষাদে কাঁদিতে হবে।
কে করে শ্রবণ, অরণ্যে রোদন?
কে চাহে তুষিতে তাপিত জীবন?
ব্যথিত বেদন, সমান রবে॥
কিন্তু ব্যবচ্ছেদে করিবনা খেদ
মিলালে হৃদয় কি হবে প্রভেদ?
মনের মিলন কে ভাঙ্গে কবে?
রাজবলে যদি নাম ভিন্ন হয়
সে ভেদে কি আর ভাঙ্গিবে হৃদয়,
মিলে ভাই ভাই রহিব ভবে॥
ওই যে জগৎ জাগে, স্বদেশ অনুরাগে
কবি কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ (৯.৬.১৮৬১ - ৪.৭.১৯০৭)।
১৯০৫ সালে প্রকাশিত দুর্গাদাস লাহিড়ী সংকলিত ও সম্পাদিত, ২২৭ জন কবির লেখা ৫৬৬৩টি গানের সংকলন
“বাঙ্গালীর গান” থেকে নেওয়া।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
॥ বাউলের সুর॥
ওই যে জগৎ জাগে, স্বদেশ অনুরাগে। কে আর, ব্যবচ্ছিন্ন, বঙ্গভিন্ন, নিদ্রামগ্ন দিবাভাগে ভাঙবে না কি এ কাল নিদ্রা, রইবে এ ভাব যুগে যুগে। পেয়ে, পরের প্রসাদ, যায় কি বিষাদ, এ অবসাদ কোন বিরাগে॥ থাকতে অঙ্গ, পঙ্গু বঙ্গ, দাগা বুলায় পরের দাগে। করে, গৃহ শূন্য, পরের জন্য, লক্ষ্মীর পুত্র ভিক্ষা মাগে॥ স্নিগ্ধ কত্তে দগ্ধ উদর, গোলামি চায় সবার আগে সদা, গোরার দুপায়, তৈল জোগায়, তাও বাঙালির ভালো লাগে। আর কী কারণ, জীবন ধারণ, প্রাণ ধরে তো কুকুর ছাগে। যদি, দেশের দশা, এমনই থাকে, বিলম্ব কী অনুত্যাগে॥ দেশের শিল্পে জলাঞ্জলি, ভেকের ভোজ্য, জোগায় নাগে। বলে ব্যাবসা অবাধ, নাইকো বিবাদ, কতই দ্রব্য দেয় সোহাগে॥
|
পরের পদে, তোষামোদে, মর্মব্যথা কর্মভোগে। বলো কোন দেশের আর দশা এমন, জীবন ধারণ যোগাযোগে॥ এই বিচিত্র কর্মক্ষেত্রে, আমরা অন্ধ নেত্ররোগে। ও তাই আশার পথে, যেতে নারি আর সকলে চলচে বেগে॥ সমুন্নত সর্বজাতি আমরা কেবল অধোভাগে। এবার, মন্ত্র সাধন, করেছি পণ, ছাড়ব না তা প্রাণ বিয়োগে॥ প্রাণে যখন আবেগ আসে, শত্রু ভাষে ‘হুজুগ চাগে’। বিশারদ কয়, সেই তো সময়, কার্য সারো সেই সুযোগে॥
|
শঙ্কা
কবি কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ (৯.৬.১৮৬১ - ৪.৭.১৯০৭)
১৯৬০ সালে প্রকাশিত, হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য্য বিদ্যাবিনোদ, কাব্য-ব্যকরণ-
পুরাণ-কৃততীর্থ কর্ত্তৃক সংকলিত ও সম্পাদিত “মাতৃবন্দনা, দেশাত্মবোধক
সঙ্গীত ও কবিতার সংকলন (১৭৪১ - ১৯৮৭)” থেকে নেওয়া।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
হতাশ হ’য়ো না প্রাণে অনুচিত নির্যাতনে,
সাহসে হৃদয় বাঁধ কি শঙ্কা নির্দ্দোষ মনে?
গুর্থা দেখে মূর্খ যত, কি আতঙ্কে অভিভূত,
উচ্চ শির অবনত, এত শঙ্কা কি কারণে?
যার অঙ্কে জন্ম নিলে, যার শস্যে যার জলে
রবি-শশি-কর-জালে ধরেছ শরীর---
তার ধন তারে দিতে, তারি তরে কষ্ট পেতে,
মাটিতে মাটির দেহ, এত শঙ্কা সমর্পণে?
‘স্বর্গাদপি গরীয়সী’ মুখে বল ঘরে বসি ;
ভয়ে ম্লান মুখশশী, দেখিলে বিপদ !
একদিন মৃত্যু হবে, নিত্য ভবে নাহি রবে,---
কাঁপে বক্ষ কেন তবে, মাতৃ সম্বোধনে?
ছিন্ন অঙ্গ হলো বঙ্গ কেন ভাব অমঙ্গল
কবি কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ (৯.৬.১৮৬১ - ৪.৭.১৯০৭)
১৯০৫ সালে প্রকাশিত, যোগেন্দ্রনাথ শর্ম্মা সম্পাদিত “স্বদেশ-সঙ্গীত” কাব্য-সংকলনের গান।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
॥ আশোয়ারি - ধামার॥
(আস্থায়ী)
ছিন্ন অঙ্গ হলো বঙ্গ কেন ভাব অমঙ্গল।
রাজ রঙ্গে আশাভঙ্গে কেন হব হীন বল॥
(অন্তরা)
কি ফল বিফলে কাঁদি
হৃদয়ে জদয় বাঁধি
দাঁড়ালে এ ব্যবচ্ছেদে
কি ভেদ হইবে বল
(সঞ্চারী)
খণ্ড খণ্ড করি রাখুক এ দেশ
হউক ভূধরে সিন্ধু সন্নিবেশ,
কীর্ত্তিনাশা জলে কিন্বা রসাতলে
সমগ্র ভূখণ্ড করুক প্রবেশ,
(আভোগ)
মিলাইতে পারি যদি মনে মন
কে খুলিবে সেই মিলন বন্ধন?
পর করুণায় আশায় আশায়
জীবন যাপনে ফলিবে কি ফল?
(সঞ্চারী ফেরতা)
বলিব বদনে---জয় জন্মভূমি
শুনিব স্বপনে---জয় জন্মভূমি
আশায় ভাষায় ভক্তি করুণায়
অন্তরের স্তরে আগ্নেয় অক্ষরে
রাখিব লিখিয়া---জয় জন্মভূমি !
(অভোগ-ফেরতা)
জয় জন্মভূমি গাও সব ভাই।
এস প্রাপভ’রে---সবে মিলে গাই।
এ গানের ধ্বনি বহু প্রতিধ্বনি
আর বিদেশীর দয়া কাজ নাই॥
আমাদের ঢাকা আমাদের ধাম
ত্রিপুরার প্রান্ত---চারু চট্টগ্রাম
সেই রাজসাহী---সেই বর্দ্ধমান
সেইত সীমান্ত---হলেও প্রাণান্ত
হইবে না ভিন্ন, কর ব্যবচ্ছিন্ন
সেইত রয়েছে---প্রভেদ কোথায়?
রুধিরের ধারা সেই ত শিরায়
সেই শোকে তাপে প্রাণের ব্যথায়
মরমের জ্বালা হবে না শীতল
নবীন এ অনুরাগ রাখ রাখ মনে রাখ
কবি কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ (৯.৬.১৮৬১ - ৪.৭.১৯০৭)
১৯০৫ সালে প্রকাশিত, যোগেন্দ্রনাথ শর্ম্মা সম্পাদিত “স্বদেশ-সঙ্গীত” কাব্য-
সংকলনের গান।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
॥ হাম্বির - কাওয়ালি॥
(আস্থায়ী )
নবীন এ অনুরাগ রাখ রাখ মনে রাখ।
উঠেছ আবেগ ভরে দুর্দিনে তা ভুলো না কো॥
(অন্তরা)
খুলিয়া মুদিত আঁখি, নবভাব মনে রাখি
বারেক জেগেছ যদি---এই ভাবে জেগে থাক॥
(সঞ্চারী)
যে শিখা জ্বলেছে প্রাণে, বিন্দু বিন্দু স্নেহ দানে
দীপ্ত রেখো---সুপ্ত হয়ে নিবায়োনা তায়---
(আভোগ)
এ শিখা নিবিলে পরে জ্বলিবেনা যুগান্তরে
বিশারদ অন্ধকারে তাহার আলোকে ডাক।
জাগো জাগো বরিশাল কবি কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ (৯.৬.১৮৬১ - ৪.৭.১৯০৭)।
“স্বদেশী আন্দোলন ও বাংলা সাহিত্যের” গান। আমরা গানটি পেয়েছি ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত
গীতা চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত “বাংলা স্বদেশী গান” সংকলন থেকে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
॥ ভীমপলশ্রী - একতালা॥
জাগো জাগো বরিশাল
তোমার সম্মুখে আজি পরীক্ষা বিশাল॥
প্রাণ দিয়ে হুতাশনে
দেখাও জগৎজনে
বিশুদ্ধ কনককান্তি---সৌর করজাল॥
বিশুদ্ধি কালিমা কত
হবে এবে পরীক্ষিত
আজি পরীক্ষার দিনে ঘুচাও জঞ্জাল॥
দেখিব তোমার শক্তি
দেশভাক্তি অনুরক্তি
দেখিব গৌরব তব রবে কতকাল॥
বুঝিব দেশের তরে
কতটা রুধির ঝরে
মনুষ্যত্বে বরিশাল হবে কি কাঙ্গাল?
নিরখি আরক্ত নেত্র
প্রহরীর করে বেত্র
হারাবে প্রতিজ্ঞা-ভঙ্গে ইহ-পরকাল?
ভুলিও না কোন ভয়ে
থাকিও যাতনা স'য়ে
ঝুলুক বঙ্গের শিরে খর করবাল॥
জন্মে মৃত্যু অনিবার্য
মানুষ করিবে কার্য
ভয়ে ভঙ্গ দেয় শুধু---নীচ ফেরুপাল॥
যদি এ দুঃখের নিশা কখন পোহায়
কবি কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ (৯.৬.১৮৬১ - ৪.৭.১৯০৭)
যোগেন্দ্রনাথ শর্মা সম্পাদিত “স্বদেশী সঙ্গীত” এর গান। আমরা গানটি পেয়েছি ১৯৮৩
সালে প্রকাশিত গীতা চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত “বাংলা স্বদেশী গান” সংকলন থেকে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
॥ সিন্ধু - কাওয়ালী॥
যদি এ দুঃখের নিশা কখন পোহায়,
যদি সুখ প্রভাকর
এ ভারতে দেয় কর
সুবিচার হিন্দুস্থানে আসে পুনরায়,
যদি কভু হিন্দুস্থান
হয় উল্লাসিত প্রাণ
দারুণ বিষাদানল যদি নিবে যায়,
যদি রাজকীয় কার্য্য,
পণ্ড বলে শিরোধার্য্য,
করিতে না হয়, এই দগ্ধ বাঙ্গালায়,
তবেই হাসিব আর
লভিব সন্তোষ ভার
ভুলিব সকল দুঃখ সুখের আশায় !
দণ্ড দিতে চণ্ড মুণ্ডে এস চণ্ডি! যুগান্তরে
কবি কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ (৯.৬.১৮৬১ - ৪.৭.১৯০৭)
১৯০৫ সালে প্রকাশিত, যোগেন্দ্রনাথ শর্ম্মা সম্পাদিত “স্বদেশ-সঙ্গীত” কাব্য-সংকলনের
গান। আমরা গানটি পেয়েছি ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত গীতা চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত
“বাংলা স্বদেশী গান” সংকলন থেকে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
॥ বাহার - ধামার॥
দণ্ড দিতে চণ্ড মুণ্ডে এস চণ্ডি! যুগান্তরে।
পাষণ্ড প্রচণ্ড বলে অঙ্গ খণ্ড খণ্ড করে॥
হুঙ্কারে আতঙ্কে মরি শঙ্কা নাশ শুভঙ্করি !
এ ব্রহ্মাণ্ড লণ্ড ভণ্ড---দৈত্যপদ-দণ্ড ভরে।
এ যুগে আবার মা গো দুর্গতি নাশিতে জাগো---
এসে নিজে রক্তবীজে নাশ সেই মূর্ত্তি ধরে॥
এস মা ত্রিতাপ হরা স্তম্ভিত এ বসুন্ধরা
শুম্ভ নিশুম্ভের দম্ভে সর্ব্ব নেত্রে অশ্রুঝরে।
দশ দিকে হর-প্রিয়া, দশভূজ প্রসারিয়া।---
ভূভারহরণ কর নাশিয়া মহিষাসুরে॥
আবার সে রূপ ধরি অবনীতে অবতরি---
“তিষ্ঠ তিষ্ঠ” বলে ডাক তেমনি ভীষণ স্বরে।
শুনে ভয়ঙ্কর শব্দ ত্রিভুবন হ'ক স্তব্ধ
বিশারদ ওই পদ কাতর হৃদয়ে স্মরে॥
ভাই সব দেখ চেয়ে, বাজার ছেয়ে
কবি কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ (৯.৬.১৮৬১ - ৪.৭.১৯০৭)। নরেন্দ্রকুমার শীল
সম্পাদিত “স্বদেশী-সঙ্গীত” কাব্য-সংকলনের গান। আমরা গানটি পেয়েছি
১৯৮৩ সালে প্রকাশিত গীতা চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত “বাংলা স্বদেশী গান” সংকলন
থেকে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
॥ বাউলের সুর॥
ভাই সব দেখ চেয়ে, বাজার ছেয়ে
আসতেছে মাল বিদেশ হ'তে।
আমাদের বেচাকেনা, পাওনা দেনা
অভাব মোচন পরের হাতে॥
আমাদের পিতল কাঁসা, ছিল খাসা
কাজ চালাতেম কলার পাতে।
এখন এনামেলে, মাথা খেলে
কলাই করার ব্যবসাতে॥
এখানে পরশ পাথর পায় না আদর
চটা উঠছে পেয়ালাতে।
যত ঠুনকো পলকা, দরে হালকা
দ্বিগুণ মূল্য পালটে নিতে॥
ঘরে, নাইকো আহার বেশের বাহার
যাহার তাহার ঘাটে পথে।
হায়রে নিজের দেশে যায়না অভাব
অশন বসন সব বিলাতে।
ছেড়ে, পরের ঠাকুর ঘরের কুকুর
ইচ্ছা করে মাথায় নিতে।
বিশারদ, ছাড়তে নারে কেঁদে মরে,
কার্য সারে কোন মতে।
মা গো, যায় যেন জীবন চলে
কবি কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ (৯.৬.১৮৬১ - ৪.৭.১৯০৭)
১৯৫৯ সালে প্রকাশিত শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরুণকুমার মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত
“উনবিংশ শতকের গীতিকবিতা সংকলন” থেকে নেওয়া।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
॥ বাউলের সুর॥
মা গো, যায় যেন জীবন চলে,
শুধু জগৎমাঝে তোমার কাযে
“বন্দেমাতরম্* বলে॥
(যখন) মুদে নয়ন, করবো শয়ন
শমনের সেই শেষ কালে---
তখন, সবই আমার হবে আঁধার
স্থান দিও মা ঐ কোলে॥
(আমার) যায় যাবে জীবন চ'লে॥
(আমার) মান অপমান সবই সমান
দলুক না চরণতলে।
যদি, সইতে পারি মায়ের পীড়ন,
মানুষ হ'ব কোন্ কালে? (আর)
(আমার) যায় যাবে জীবন চ'লে॥
লাল টুপি কি কালো কোর্তা,
জুজুর ভয় কি আর চলে?
(আমি) মায়ের সেবায় রইব রত
পাশব বলে দিক্ জেলে॥
(আমার) যায় যাবে জীবন চ’লে॥
আমায়---বেত মেরে’, কি ‘মা’ ভোলাবে?
আমি কি মা’র সেই ছেলে?
দেখে, রক্তারক্তি বাড়বে শক্তি
কে পালাবে মা ফেলে?
(আমার) যায় যাবে জীবন চ'লে॥
আমি, ধন্য হব মায়ের জন্য
লাঞ্চনাদি সহিলে।
ওদের, বেত্রাঘাতে, কারাগারে
ফাঁসিকাষ্টে ঝুলিলে॥
(আমার)যায় যাবে জীবন চ'লে॥
যে মা'র কোলে নাচি, শস্যে বাঁচি
তৃষ্ণা জুড়াই যার জলে।
বল, লাঞ্চনার ভয়, কা'র :কোথা রয়
সে মায়ের নাম স্মরিলে?
(আমার) যায় যাবে জীবন চ'লে॥
বিশারদ কয় বিনা কষ্টে
সুখ হবে না ভূতলে।
সে ত, অধম হয়ে সইতে রাজি
উত্তমে চাও মুখ তুলে॥
(আমার) যায় যাবে জীবন চ'লে॥
দেখ গো ভারতমাতা তোমারি সন্তান
কবি নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত (১৮৬১ - ২৮.১২.১৯৪০)
বঙ্গবঙ্গ বিরোধ আন্দোলন-কালের গান। আমরা গানটি পেয়েছি দিল্লী
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত, গীতা চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত
“বাংলা স্বদেশী গান” সংকলন থেকে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
দেখ গো ভারতমাতা তোমারি সন্তান
ঘুমায়ে রয়েছে সবে হয়ে হতজ্ঞান
সবে বলবীর্য-হীন অন্ন বিনা তনুক্ষীণ
হেরিয়ে এদের দশা বিদারিয়ে যায় প্রাণ
মরি এ দশা তোমার হেরিতে না পারি আর
অপার জলধিপাস চলিলাম ছাড়ি এ স্থান।
সাধের মরণ
কবি মানকুমারী বসু (২৫.১.১৮৬৩ - ২৬.১২.১৯৪৩)
১৯৬০ সালে প্রকাশিত, হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য্য দ্বারা সঙ্কলিত ও সম্পাদিত
“মাতৃবন্দনা দেশাত্মবোধক সঙ্গীত ও কবিতার সঙ্কলন ১৭৪১ -১৯৪৭”
থেকে নেওয়া।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
এক বীণা গাহিছে কি গান! আকাশ ছাপায়ে দেছে তান,
এ গান শুনিতে হায়! লক্ষ তারা কেন চায়!
শিহরি উঠিছে কেন এ নির্জীব প্রাণ?
জননী জনম-ভূমি! শুনিছ কি গান তুমি,
যে গীতি ঢালিছে তব স্নেহের সন্তান?
ওই শুন ---
মরণের বায়ু বয়ে যায়, কে তোরা মরিতে যাবি আয়!
ওই দেখ! ঘরে ঘরে---কত কে কাঁদিয়া মরে,
অনেক কাঁদিছে ওরা অসহ্য জ্বালায়
নীরবে কাঁদিবে যারা, বিজনে কাঁদুক তারা,
আয়! কে ডুবিতে যাবি সাগর-তলায়?
মরিবার সাধ কার আছে?
মায়ের নয়ন জল, ভাই-বোন হতবল
খেতে না পাইয়া শিশু ভূমে পড়ি আছে ;
মুখেতে তুলিতে গ্রাস মরমে জনমে ত্রাস,
আগে তো মরিব আমি তোরা আয় পাছে!
বিদ্যাসাগরের শ্রাদ্ধ
কবি মানকুমারী বসু (২৫.১.১৮৬৩ - ২৬.১২.১৯৪৩)। ১৯৬০ সালে প্রকাশিত, হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য্য দ্বারা সঙ্কলিত ও
সম্পাদিত “মাতৃবন্দনা দেশাত্মবোধক সঙ্গীত ও কবিতার সঙ্কলন ১৭৪১ -১৯৪৭” থেকে নেওয়া।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
"বিদ্যাসাগরের শ্রাদ্ধ" বালাই! হৃদয় চমকি ওঠে শোণিতে আগুন ছোটে, ছয় কোটি প্রাণ পুড়ে হয়ে যায় ছাই! এ দীন পতিত দেশে পতিতপাবন-বেশে--- দয়ার দেবতা আহা আজ আর নাই! বিদ্যাসাগরের শ্রাদ্ধে বুক ফাটে তাই আজ যদি "পিতৃশ্রাদ্ধ" সারা বঙ্গময়--- "পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম," দেখিব তাহারি কর্ম, হৃদিপিণ্ডে পিণ্ডদান কর সমুদয় ; পদধূলি রাখি শিরে, চল যাই গঙ্গা-তীরে, ঘরে ঘরে হবে সেই দেব-অভ্যুদয়--- এ যে গো প্রতিষ্ঠা---এতো বিসর্জন নয়॥
বিষাদের দিনে এই নব মহোত্সব, দিয়া ভক্তি উপহার--- "ষোড়শ" সাজাও তাঁর কোটি ভাই বোন কেউ থেকো না নীরবে ; কি করিবে "বৃষোত্সর্গ" এ বিধি যে "আত্মোত্সর্গ" ফিরে যাহে প্রাণ পাবে কুড়ি কোটি শব। খুলিয়া বুকের পাতা দেখ সঞ্জীবনী গাথা, পড় সে "বিরাট পুঁথি" বীরত্বের স্তব। আজি পিতৃপ্রীতি লাগি হও সবে স্বার্থত্যাগী, উঠুক দিগন্ত ভেদি কোটি কণ্ঠ-রব, বিদ্যাসাগরের শ্রাদ্ধ---নব মহোত্সব॥
|
বিদ্যাসাগরের শ্রাদ্ধে আত্মা দাও ডালি--- কাঙালী "বিদায়" যাচে দুয়ারে দাঁড়ায়ে আছে--- বিদ্যাসাগরের শ্রাদ্ধে ভারত কাঙালী ! টাকা পয়সার তরে আসেনি মা শোক ভরে--- কাঁদিছে সে, কোল তার হয়ে গেছে খালি, দাও মা'রে দাও ভিক্ষা, মহামন্ত্রে লও দীক্ষা, "ঈশ্বরের" ভাই হও ছ'কোটি বাঙালী ! জননী হয়েছে আজি "ঈশ্বর-কাঙালী"॥
"বিদ্যাসাগরের শ্রাদ্ধ" বড় গালাগালি--- ক'স্ নে ও কথা ফিরে কোটি বুক যায় চিরে, ছয় কোটি প্রাণ পুড়ে হয়ে যায় কালি! এ জাতীয় পিতৃকৃত্য তবেই হিবে "নিত্য", হীনতা নীচতা দাও গঙ্গাজলে ঢালি! শেখ সে উদ্যম-আশা বুকভরা ভালবাসা, পূরাও পরাণ দিয়ে মার কোল খালি! মহাশ্রাদ্ধ হোক্ শেষ, "ঈশ্বরে" ভরুক দেশ, পূজিব সে পিতৃমূর্তি হৃদয়ে উজালি, নিতি দিব---প্রাণগলা আঁখিজল ঢালি॥
|
বঙ্গবাসিনী
কবি মানকুমারী বসু (২৫.১.১৮৬৩ - ২৬.১২.১৯৪৩)। ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত, কবির কনকাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের কবিতা।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
১ এ বঙ্গবাসিনী আমি দোষী শত দোষে, খুলে কি বিলিতে পারি, সংসারের “গো-বেচারী” কাটি হায়! দিন রাত কত আপশোষে! যেখানে সেখানে যাই, কোথাও “সোয়াস্তি” নাই, ডাকিনী পিছনে ফিরে, ভূতে রক্ত চোষে ! এ পোড়া জনম মম জানি না কি দোষে! ২ বঙ্গবাসিনীর জন্ম জানি না কি দোষে, মেয়েটী প্রসবমাত্র, শিহরে মায়ের গাত্র ! (সে হ'তে মা বুকে যেন শত বিছা পোষে !) মা'র যেন “অপরাধ”, স্বজনেরা সাথে বাদ, বন্ধুজনে দেয় গালি, গুরুজনে রোষে ! বঙ্গবাসিনীর জন্ম জানি না কি দোষে! ৩ বঙ্গবাসিনীর জন্ম জানি না কি দোষে, বাবারে দেখা’তে ভয়, কত লোকে কত কয়, মেয়ের বিয়ার সুখ শুনি বুক শোষে ! তাই তো বাবার মায়া জড়ায়ে ভয়ের ছায়া
|
ঝরায় মায়ের আঁখি কোণে বোসে বোসে ! এ বঙ্গবাসিনী-জন্ম জানি না কি দোষে! ৪ বঙ্গবাসিনীর জন্ম জানি না কি দোষে, ভাই বোন খেলি খেলা, ঘরে আসি সন্ধ্যাবেলা, দাদা খায় ছানাবড়া পরম সন্তোষে ; আমি পাই চিড়ে মুড়ি, তবু "লক্ষ্মীছাড়া ছুঁড়ী”, দাদারে “মাণিক, যাদু" বলি' সবে তোষে, বঙ্গবাসিনীর জন্ম জানি না কি দোষে! ৫ বঙ্গবাসিনীর জন্ম জানি না কি দোষে, এত ভাল বাসি, ভাই তবু করে “দূর ছাই” মেরে করে আধমরা দোষে, বিনা দোষে সে কীল চড়ের দাগ অঙ্গে অঙ্গে অঙ্গরাগ ! পিসীমা কাকীমা তবু মোর দোষ ঘোষে ! বঙ্গবাসিনীর জন্ম জানি না কি দোষে ৬ বঙ্গবাসিনীর জন্ম জানি না কি দোষে, বোধোদয়, ব্যাকরণে বিদ্যা-শুভ-সমাপনে, পানসাজা, লুচিভাজা শিখিনু সন্তোষে ;
|
বাবা নিজ পুণ্য-তরে সঁপিলেন পতি-করে, দিয়ে পাশ করা বরে---শূন্য অর্থ কোষে ! বঙ্গবাসিনীর জন্ম জানি না কি দোষে! ৭ বঙ্গবাসিনীর জন্ম জানি না কি দোষে, স্নেহের আলয় ছাড়ি চলিনু শ্বশুরবাড়ী, ভাসিনু সমুদ্র-মাঝে অজ্ঞানে, বেহোঁসে ; শ্বাশুড়ীর উপদেশ,--- ধরিতে গৃহিণী-বেশ, রাঁধা বাড়া ঝাটি ছড়া শিখান সন্তোষে, বঙ্গবাসিনীর জন্ম জানি না কি দোষে ! ৮ বঙ্গবাসিনীর জন্ম জানি না কি দোষে, পতির সেবিকা আমি, বহু-পাশ-করা স্বামী, ঘোমটায় রুষ্ট হন মনের আক্রোশে ! বলেন “ছায়ার মত কাছে থাক অবিরত, গৃহকর্ম্ম নীচ ধর্ম্ম, ইংরাজীতে ঘোষে ! বিজ্ঞান, গণিত শেখ, দর্শনে প্রবন্ধ লেখ” শুনে এ অদ্ভুত কথা, ভয়ে বুক শোষে ! বঙ্গবাসিনীর জন্ম জানি না কি দোষে!
|
৯ বঙ্গবাসিনীর জন্ম জানি না কি দোষে, রাখিলে পতির কথা, শ্বাশুড়ী ভাবেন ব্যথা, না রাখিলে পতিদেব বজ্র-হস্তে রোষে ! মন যোগাইব কার? আমি তো পারি না আর বহিতে বিরক্তি-বোঝা এত অসন্তোষে ! বঙ্গবাসিনীর জন্ম জানি না কি দোষে ! ১০ বঙ্গবাসিনীর জন্ম জানি না কি দোষে, সংসারে আরামশূন্য, সমাজ অকৃপাপূর্ণ, সমাজ দিতেছে গালি বজ্রের নির্ঘোষে ! কুটিল নয়নে চাহে, বিদ্রূপ, অবজ্ঞা তাহে তার সে অসুরপনা দেখি র@@
অভাগিনী বঙ্গনারী, কার কি করিতে পারি? চুপে চুপে দিন রাত কাটি আপশোষে ! কেবলি বিধির ঠাঁই একমাত্র ভিক্ষা চাই, নারীহীন হ'য়ে বঙ্গ থাক্ পরিতোষে ! কেন এ আপদগুলা হৃদয়ে মা পোষে?
@@ - অপাঠ্য শব্দ।
|
যদি জানতে চাও আমরা কে,
. আমরা Reformed Hindoos.
আমাদের চেনে না ক যে,
. Surely he is an awful goose ;
কেন না আমরা Reformed Hindoos.
It must be understood
. যে একটু heterodox আমাদের food ;
কারণ চলে মাঝে মাঝে “এ’টা”, “ও’টা”, “সে’টা” যখন
. we choose ;
---কিন্তু সমাজে তা স্বিকার করি if you think,
. তা’লে you are an awful goose.
আমাদের dress হবে English কি Greek
. তা এখনো করতে পারি নি ঠিক ;
আর ছেড়েছি টিকি, নইলে সাহেবরা বলে সব
. superstitious ও obtuse,
---কিন্তু টিকিতে electricity নেই if you think,
. তা’লে you are an awful goose.
আমাদের ভাষা একটু quaint as you see,
. এ নয় English কি Bengali,
করি English ও Bengaliর খিচুড়ি বানিয়ে
. conversation এ use ;
---কিন্তু একটিও ঠিক কইতে পারি if you think,
. তা’লে you are an awful goose.
মোটা তাকিয়া দিয়া ঠেস
আমরা স্বাধীন করি দেশ---
আর friendsদের ভিতরে ইংরেজগুলোকে
. করি খুব hate ও abuse ;
কিন্তু সামনে সেলাম না করি if you think,
. তা’লে you are an awful goose.
আমরা পড়ি Mill, Hume, Spencer,
. কোন ধর্ম্মের ধারি না ধার ;
করি hoot alike the Hindoos, the Buddhists,
the Mahomedans, Christians & Jews ;---
কিন্তু ফলারে ভোজে হিঁদু নই if you think,
. তা’হলে you are an awful goose.
About female education, ও female emancipation,
আর infant marriage, আর widow remarriage,
. আমাদের খুব enlightened views ;
কিন্তু views মতে কাজ করি if you think,
. তা’হলে you are an awful goose.
You are not far wrong if you Think,
যে আমরা করি একটু বেশি drink,
কিন্তু considering our evolution এর state,
আমাদের morals নয় খুব loose ;
আর about morals we care a hang if you think,
. তা’হলে you are an awful goose.
From the above দেখতে পাচ্চ বেশ,
. যে আমরা neither fish nor flesh ;
আমরা curious commodities, human
oddities, denominated Baboos ;
আমরা বক্তৃতায় যুঝি ও কবিতায় কাঁদি,
. কিন্তু কাজের সময় সব ঢুঁ ঢুঁs ;
আমরা beautiful muddle, a queer amalgam
of শশধর, Huxley and goose.
. ঐ ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, হো! কার্ত্তিক, গণপতি---
. আর দুর্গা, কালী, জগদ্ধাত্রী, লক্ষ্মী, সরস্বতী,---
. আর শচী, ঊষা, ইন্দ্র, চন্দ্র, বায়ু, অগ্নি, যম ;---
. ঐ সবই আছে ;---হিন্দুধর্ম্ম তবে কিসে কম?---
(কোরাস) ছেড়ো না ক এমন ধর্ম্ম, ছেড়োনাক ভাই ;
. এমন ধর্ম্ম নাই আর দাদা, এমন ধর্ম্ম নাই!
[বাদ্য] তড়ালাক্ তড়ালাক্ তড়ালাক্ ডুম্।
. ঐ কৃষ্ণরাধা, কৃষ্ণের দাদা বলরাম বীর,
. আর শ্রীরাম, বুদ্ধ, শ্রীচৈতন্য, নানক ও কবীর ;
. হ’ন নিত্য নিত্য উদয়, নব নব অবতার ;
. ব্যস্---বেছে নেও---মনোমত যিনি হ’ন যাঁর!---
(কোরাস) ছেড়োনাক এমন ধর্ম্ম, ছেড়োনাক ভাই ;
. এমন ধর্ম্ম নাই আর দাদা, এমন ধর্ম্ম নাই!
[বাদ্য] তড়ালাক্ তড়ালাক্ তড়ালাক্ ডুম্।
. আছে বানর, কুমীর, কাঠবিড়ালী, ময়ূর, পেঁচা, গাই---
. আর তুলসী, অশথ, বেল, বট, পাথর---কি এ ধর্ম্মে নাই!
. ঐ বসন্ত, কলেরা, হাম---ইত্যাদি “বেবাক্” ;
. সবই রোগের ব্যবস্থা আছে---কিছু যায় নি ফাঁক।
(কোরাস) ছেড়োনাক এমন ধর্ম্ম, ছেড়োনাক ভাই ;
.. এমন ধর্ম্ম নাই আর দাদা, এমন ধর্ম্ম নাই!
[বাদ্য] তড়ালাক্ তড়ালাক্ তড়ালাক্ ডুম্।
. যদি চোরই হও, কি ডাকাত হও---তা গঙ্গায় দেও গে ডুব ;
. আর গয়া, কাশী, পূরী যাও সে---পূণ্যি হবে খুব ;
. আর মদ্য, মাংস খাও---বা যদি হ’য়ে পড় শৈব ;
. আর না খাও যদি বৈষ্ণব হও ;---এর গুণ কত কৈব।
(কোরাস) ছেড়োনাক এমন ধর্ম্ম, ছেড়োনাক ভাই ;
. এমন ধর্ম্ম নাই আর দাদা, এমন ধর্ম্ম নাই!
[বাদ্য] তড়ালাক্ তড়ালাক্ তড়ালাক্ ডুম্।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
REFORMED HINDOOS কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৯.৭.১৮৬৩ - ১৭.৫.১৯১৩)। হাসির গান - পর্যায়। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত, গোপাল হালদার
সম্পাদিত "দ্বিজেন্দ্র রচনা সংগ্রহ প্রথম খণ্ড" থেকে নেওয়া। শিল্পী - দিলীপ কুমার রায়। VDOটি সৌজন্যে Joydeep Banerjee YouTube Channel.
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
এমন ধর্ম্ম নাই কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৯.৭.১৮৬৩ - ১৭.৫.১৯১৩)। হাসির গান - পর্যায়। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত, গোপাল
হালদার সম্পাদিত "দ্বিজেন্দ্র রচনা সংগ্রহ প্রথম খণ্ড" থেকে নেওয়া।
. ১
প্রথম যখন ছিলাম কোন ধর্ম্মে অনাসক্ত,
খ্রীষ্টিয় এক নারীর প্রতি
. হলাম অনুরক্ত ;---
বিশ্বাস হ’ল খ্রীষ্টধর্ম্মে---
. ভজতে যাচ্ছি খ্রীষ্টে,---
এমন সময় দিলেন পিতা
. পদাঘাত এক পৃষ্ঠে!
---ছেড়ে দিলাম পথটা, বদলে গেল মতটা,
(কোরাস) অমন অবস্থায় পড়লে
. সবারই মত বদলায়।
. ২
চেয়ে দেখলাম নব্যব্রাহ্ম
. সম্প্রদায়ে স্পষ্ট,
চক্ষু বোজা ভিন্ন নাইক
. অন্য কোনই কষ্ট ;---
ক্কচিৎ ভগ্নি সহ দীক্ষিত হব উক্ত ধর্ম্মে,---
এমন সময় বিয়ে হ’য়ে
. গেল হিন্দু formএ ;
---ছেড়ে দিলাম পথটা, বদলে গেল মতটা,
(কোরাস) অমন অবস্থায় পড়লে
. সবারই মত বদলায়।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
বদলে গেল মতটা
কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৯.৭.১৮৬৩ - ১৭.৫.১৯১৩)। হাসির গান - পর্যায়। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত, গোপাল হালদার সম্পাদিত "দ্বিজেন্দ্র
রচনা সংগ্রহ প্রথম খণ্ড" থেকে নেওয়া।
. ৩
নাস্তিকের এক দলের মধ্যে
. মিশলাম গিয়ে রঙ্গে
Hume ও Miller ও Herbert Spencer
. পড়তে লাগলাম সঙ্গে ;
ভেসে যাবো যাবো হচ্ছি
. Fowl ও Beef এর বন্যায়,
এমন সময় দিলেন ঈশ্বর গুটিকতক কন্যায়!
---ছেড়ে দিলাম পথটা, বদলে গেল মতটা,
(কোরাস) অমন অবস্থায় পড়লে
. সবারই মত বদলায়।
. ৪
ছেড়ে দিলাম Herbert Spencer,
. Bain ও Millerএর চর্চ্চায়,
ছেড়ে দিলাম Beef ও Fowl---
. অন্ততঃ নিজের খর্চ্চায় ;
বুঝছি বসু ঘোষের কাছে
. হিন্দুধর্ম্মের অর্থে,---
এমন সময় প’ড়ে গেলাম
. Theosophyর গর্ত্তে!
---ছেড়ে দিলাম পথটা, বদলে গেল মতটা,
(কোরাস) অমন অবস্থায় পড়লে
. সবারই মত বদলায়।
সে ধর্ম্মটার ঈশ্বর হচ্ছেন ভূত কি পরব্রহ্ম,
এইটে কর্ব্ব কর্ব্ব রকম কচ্চি বোধগম্য ;
মিশিয়েও এনেছি প্রায় “এনি” ও বেদাঙ্গ,
এমন সময় হ’য়ে গেল ভবলীলা সাঙ্গ!
---ছেড়ে দিলাম পথটা, বদলে গেল মতটা,
(কোরাস) অমন অবস্থায় পড়লে
. সবারই মত বদলায়।
আমরা বিলেত ফের্ত্তা ক’ ভাই,
আমরা সাহেব সেজেছি সবাই,
তাই কি করি নাচার, স্বদেশী আচার
. করিয়াছি সব জবাই।
আমরা বাংলা গিয়াছি ভুলি’,
আমরা শিখেছি বিলিতি বুলি,
আমরা চাকরকে ডাকি ‘বেয়ারা’ ---আর
. মুটেদের ডাকি ‘কুলি’।
‘রাম’ ‘কালীপদ’ ‘হরিচরণ’
নাম এ সব সেকেলে ধরণ ;
তাই নিজেদের সব ‘ডে’ ‘রে’ ও ‘মিটার’
. করিয়াছি নামকরণ।
আমরা সাহেবের সঙ্গে পটি
আমরা মিস্টার নামে র’টি,
যদি সাহেব না বলে বাবু কেহ বলে
. মনে মনে ভারি চটি।
আমরা ছেড়েছি টিকির আদর
আমরা ছেড়েছি ধুতি ও চাদর
আমরা হ্যাট বুট আর প্যন্ট কোট প’রে
. সেজেছি বিলিতি বাঁদর।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
কবিপুত্র দিলীপকুমার রায়ের কণ্ঠে গান
|
প্রদীপ ঘোষের কণ্ঠে আবৃত্তি
|
আমরা বিলিতি ধরণে হাসি
আমরা ফরাসি ধরণে কাশি
আমরা পা ফাঁক করে সিগারেট খেতে
. বড্ডই ভালোবাসি।
আমরা হাতে খেতে বড় ডরাই,
আমরা স্ত্রীকে ছুরি কাঁটা ধরাই,
আমরা মেয়েদের জুতো মোজা, দিদিমাকে
. জ্যাকেট কামিজ পরাই।
আমাদের সাহেবিয়ানার বাধা
এই যে রংটা হয় না সাদা
তবুও চেষ্টার ত্রুটি নেই-‘ভিনোলিয়া’
. মাখি রোজ গাদা গাদা।
আমরা বিলেতফের্ত্তা ক’টায়
দেশে কংগ্রেস আদি ঘটাই
আমাদের সাহেব যদিও দেবতা তবু ঐ
. সাহেবগুলোই চটাই।
আমরা সাহেবি রকমে হাঁটি,
স্পীচ্ দেই ইংরিজি খাঁটি ;
কিন্তু বিপদেতে দেই বাঙালিরই মত
. চম্পট পরিপাটি।
বলি ত হাসব না, হাসি
রাখতে চাই ত চেপে ;
কিন্তু, এ ব্যাপার দেখে, থেকে থেকে,
যেতে হয় প্রায় ক্ষেপে”।
সাহেব-তাড়াহত, থতমত, অঞ্চলস্থ স্ত্রীর,
ভূত-ভয়গ্রস্ত, পগারস্থ, মস্ত মস্ত বীর ;
যবে সব কলম ধ'রে, গলার জোরে
দেশোদ্ধারে ধায় ;
তখন আমার হাসির চোটে, বাঁচাই মোটে,
হ’য়ে ওঠে দায়।
যবে নিয়ে উড়ো তর্ক, শাস্ত্রিবর্গ
টিকি দীর্ঘ নাড়ে ;
একটু ‘গ্যানো’ প’ড়ে কেহ
চড়ে বিজ্ঞানেরই ঘাড়ে ;
কোর্ত্তে ‘একঘরের’ মস্ত বন্দোবস্ত
ব্যস্ত কোন ভায়া ;
তখন আমি হাসি জোরে, গুম্ফ ভ’রে
ছেড়ে প্রাণের মায়া।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
বলি ত হাসব না কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৯.৭.১৮৬৩ - ১৭.৫.১৯১৩)। হাসির গান - পর্যায়।
১৯৭৩ সালে প্রকাশিত, গোপাল হালদার সম্পাদিত দ্বিজেন্দ্র রচনা সংগ্রহ প্রথম খণ্ড থেকে নেওয়া। কবিপুত্র
দিলীপকুমার রায়ের কণ্ঠে গান শুনুন ভিডিওতে। VDOটি সৌজন্যে Joydeep Banerjee YouTube Channel.
যবে কেউ বিলেত থেকে ফিরে
বেঁকে প্রায়শ্চিত্ত করে ;
ধর্ম্ম ভাঙ্গে গড়ে ;
যখন কেউ প্রবীণ ভণ্ড, মহাষণ্ড
পরেন হরির মালা---
তখন ভাই নাহি ক্ষেপে, হাসি চেপে
রাখতে পারে কোন্---
১
তোমরা দেশোদ্ধারটা কর্ত্তে চাও কি
ক'রে মুখে বড়াই?
তা’ সে হবে কেন।
তোমরা বাক্যবাণে শুধু ফতে কর্ত্তে
চাও কি লড়াই?
তা’ সে হবে কেন!
তোমরা ইংরাজ-গৌরবে ক্ষুব্ধ ব'লে
চাও কি যে, সে
তোমাদের ও করপদ্মে দেশটা সঁপে, শেষে
তল্পিতল্পা বেঁধে, নিজের চলে যাবে দেশে?
তা’ সে হবে কেন!
২
তোমরা হিন্দুধর্ম্ম “প্রচার” করেই,
হতে চাও যে ধন্য,
---তা' সে হবে কেন !
তোমরা মূর্খ হ'য়ে হ'তে চাও যে
বিশ্বে অগ্রগণ্য !
তোমরা বোঝাতে চাও হিন্দুধর্ম্মের
অতি সূক্ষ্ম মর্ম---
‘ভীরুতাটি আধ্যাত্মিক, আর
কুড়েমিটা ধর্ম্ম !’
অমনি তাই সব বুঝে যাবে যত শ্বেতচর্ম্ম?
---তা’ সে হবে কেন!
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
তা সে হবে কেন
কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৯.৭.১৮৬৩ - ১৭.৫.১৯১৩)। হাসির গান - পর্যায়। ১৯৭৩ সালে
প্রকাশিত, গোপাল হালদার সম্পাদিত দ্বিজেন্দ্র রচনা সংগ্রহ প্রথম খণ্ড থেকে নেওয়া।
৩
তোমরা সাবেক ভাবে সমাজটিকে
রাখতে চাও যে খাড়া ;
---তা’ সে হবে কেন!
তোমরা স্রোতটাকে ফিরাতে চাও
যে দিয়ে মুখের তাড়া ;
---তা' সে হবে কেন!
তোমরা বিপ্র হয়ে ভৃত্য-কার্য্য
ক’রে বাড়ী ফিরে,
শাস্ত্র ভুলে, রেখে শুধু আর্কফলা শিরে---
দলাদলি ক'রে শুধু রাখবে সমাজটিরে?
---তা' সে হবে কেন!
৪
তোমরা চিরকালটা নারীগণে
রাখবে পাঁচিল ঘিরে’?
---তা’ সে হবে কেন!
তোমরা গহনা ঘুষ দিয়ে বশে রাখবে রমণীরে?
---তা’ সে হবে কেন!
তোমরা চাও যে তারা বন্ধ থাকুক,
এখন যেমন আছে,
রান্নাঘরের ধোঁয়ায় এবং
আঁস্তাকুড়ের কাছে ;
এবং তোমরা নিজে যাবে থিয়েটারে, নাচে?
---তা’ সে হবে কেন!
১
বড়ই নিন্দা মোদের সবাই,
কর্চ্ছে দিবারাতি ;
বল্ছে আমরা ভণ্ড, ভীরু,
মিথ্যাবাদী-জাতি ;
হতাশভাবে তক্তার উপর
পড়লাম গিয়ে শুয়ে,
দুইটি ধারে সরল রেখায় ছড়িয়ে হস্ত দুয়ে ;
ভাবছি এটার মুখের মতন
জবাব দেবো কি তা’
---ঠেকলো হাত এক বইয়ের উপর,
তুলে দেখি গীতা!
---ও মা! তুলে দেখি গীতা।
২
লাফিয়ে উঠলাম তক্তার উপর
‘মাটামভাবে’ সোজা ;
ছট্কে পড়লো মাথা থেকে
অপমানের বোঝা।
এবার যদি নিন্দা কর,
কর্ব্ব তা কি জানি---
অমনি চাঁদের চ'খের সাম্নে
ধর্ব্ব গীতাখানি :
এখন বটে অপমানটা কর্চ্ছ মোদের বড় ;
তবু একবার চন্দ্রবদন, গীতাখানি পড়---
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
গীতার আবিষ্কার
কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৯.৭.১৮৬৩ - ১৭.৫.১৯১৩)। হাসির গান - পর্যায়। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত, গোপাল হালদার সম্পাদিত দ্বিজেন্দ্র
রচনা সংগ্রহ প্রথম খণ্ড থেকে নেওয়া।
একবার গীতাখানি পড়।
৩
সকাল বেলায় আপিস্ গিয়ে
গাধার মত খাটি,
নিত্য নিত্য প্রভুর রাঙা পা দুখানি চাটি ;
বাড়ী ফিরে---বন্ধুবর্গ জড় হ'লে খালি,
যাঁদের অন্নে ভরণপোষণ,
তাঁদের পাড়ি গালি ;
একা হ'লে ( হায় রে, গলায়
জোটেও না দড়ি ! )
বুঝি বা সে নাই বুঝি---
গীতাখানি পড়ি
আমার গীতাখানি পড়ি।
৪
দেখি যদি গৌরমূর্ত্তির রক্তবর্ণ আঁখি,
অমনি প্রাণের ভয়ে ‘ওগো
বাবা' ব’লে ডাকি ;
পালাই ছুটে উর্দ্ধশ্বাসে,
যেন বাঘে খেলে !
চাদর এবং পরিবারে সমভাবে ফেলে
পিতৃপুণ্যে পৌঁছে বাড়ী, ঘরে দিয়া চাবি,
মালা জপি এবং আমার
গীতার কথা ভাবি।
আমার গীতার কথা ভাবি।
৫
গীতার জোরে সচ্ছে ঘুঁষি
সচ্ছে কানুটিটে,
গীতার জোরে পেটে না খাই,
সয়ে যাচ্ছে পিঠে ;
করি যদি ধাপ্লাবাজি, মিথ্যে মৌকর্দ্দমা,
স’য়ে যাবে,---গীতার পুণ্য
আছে অনেক জমা ;
মাঝে মাঝে তুলনায় মনে হয় এ হেন,
মুর্গীর কোর্ম্মার চেয়ে আমার
গীতাই মিষ্টি যেন---
আমার গীতাই মিষ্টি যেন।
(কোরাস) গীতার মত নাইক শাস্ত্র,
গীতার পুণ্যে বাঁচি---
বেঁচে থাকুক গীতা আমার---
গীতায় ম'রে আছি ;
বাবা! গীতায় ম'রে আছি।
১
বিশ্বমাঝে নিঃস্ব মোরা, অধম ধূলি চেয়ে ;
চৌদ্দ শত পুরুষ আছি পরের জুতো খেয়ে ;
তথাপি ধাই মানের লাগি ধরণীমাঝে ভিক্ষা মাগি !
নিজ মহিমা দেশবিদেশে বেড়াই গেয়ে গেয়ে।
বিশ্বমাঝে নিঃস্ব মোরা, অধম ধূলি চেয়ে।
২
লজ্জা নাই ! ‘আর্য্য’ বলি চেঁচাই হাসিমুখে !
সুখে বলি তা, বাজে যে কথা বজ্রসম বুকে ;
ছিলাম বা কি হয়েছি এ কি ! সে কথা নাহি ভাবিয়া দেখি
নিজের দোষ দেখালে কেহ মারিতে যাই ধেয়ে !
বিশ্বমাঝে নিঃস্ব মোরা, অধম ধূলি চেয়ে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
জাতীয় সঙ্গীত
কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৯.৭.১৮৬৩ - ১৭.৫.১৯১৩)। ১৯০২ সালে প্রকাশিত, কবির “মন্দ্র” কাব্যগ্রন্থের কবিতা।
৩
কেহই এত মূর্খ নয় ; সবাই বোঝে জেনো,
হাজারি ‘গীতা’ পড়, তুমিও পয়সা বেশ চেনো।
এ সব তবে কেন রে তাই, তুমিও যাহা আমিও তাই---
স্বার্থময় জীব ! ---কাজ কি মিছে চীৎকারে এ?
বিশ্বমাঝে নিঃস্ব মোরা, অধম ধূলি চেয়ে।
৪
ব্যবসা কর, চাকরি কর, নাহিক বাধা কোন ;
ঘরের কোণে ক্ষুদ্র মনে রৌপ্যগুলি গোণ ;
চারটি ক'রে খাও ও পর, স্ত্রীর দুখানা গহনা কর,
আর্য্যকুল বৃদ্ধি কর, ও পার কর মেয়ে।
---বিশ্বমাঝে নিঃস্ব মোরা, অধম ধূলি চেয়ে।
১ এবার হয়েছি হিন্দু, করুণাসিন্ধু গোবিন্দজীকে ভজি হে। এখন করি দিবারাত্রি দুপুরে ডাকাতি (শ্যাম) প্রেম-সুধারসে মজি হে। আর মুরগী খাই না, কেন না পাই না! (তবে) হয় যদি বিনা খরচেই,--- আহা ! জান ত আমার স্বভাব উদার (তাতে) গোপনে নাইক অরুচি। এখন ঘোষের নিকট, বোসের নিকট (হিন্দু) ধর্ম্মশাস্ত্র শিখি গো! আমি জীবনের সার করেছি আমার (আহা) ফোঁটা, মালা আর টিকি গো।
. ২ আহা ! কি মধুর টিকি, আর্য্য ঋষি কি (এই) বানিয়ে ছিলেনই কল গো। সে যে আপনার ঘাড়ে আপনিই বাড়ে (অথচ) চতুর্ববর্গ ফল গো। আহা এমন কম্র, এমন নম্র, (আছে)---গোপনে পিছনে ঝুলিয়ে। অথচ সে সব একদম করিছে হজম, (এমনি) বিষম হজ্মি গুলি এ !
|
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
হিন্দু
কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৯.৭.১৮৬৩ - ১৭.৫.১৯১৩)। হাসির গান - পর্যায়। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত,
গোপাল হালদার সম্পাদিত দ্বিজেন্দ্র রচনা সংগ্রহ প্রথম খণ্ড থেকে নেওয়া।
৩ লয়ে ভিক্ষার ঝুলি, নির্ভয়ে তুলি (ওগো) ধর্ম্মের নামে চাঁদা গো। দেয় হরিনাম শুনে টাকা হাতে গুণে, (আছে) এখনও বহুত গাধা গো! তবে মিছে কেন গোল, বল হরিবোল, (আর) রবে না ক ভব-ভাবন1। দেখ হরির কৃপায় দশ জনে খায় (তবে) আমরাই কেন খাব না।
|
চম্পটি চম্পটি চম্পটি,
চম্পটির দল আমরা সবে।
একটু মেশাল রকম ভাবে।
আমরা ক'জন এইটি ভবে।
যদি কিছু দেশী রং
রেখেছি সায়েবি ঢং ;
একটু তবু নেটিভ গন্ধ,
কি কর্ব্ব তা রবেই র'বে।
ইংরাজীতে কহি কথা,
সেটা “পাপার” উপদেশ ;
হাট্টা কোট্টা পরি কেন---
কারণ সেটা সভ্য বেশ ;
চক্ষে কেন চসমা সাজ?---
কারণ সেটা ফ্যাশন আজ ;---
চসমাশূন্য ছাত্রমহল,
কোথায় কে দেখেছে কবে।
বঙ্গভাষা কইতে শিখছি,
বছর দুত্তিন লাগবে আরো ;
তবে এখন কইছি যে,
সে তোমরা যাতে বুঝতে পারো ;
টেবিলেতে খাচ্ছি খানা
কারণ সে সাহেবিয়ানা ;
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
চম্পটির দল
কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৯.৭.১৮৬৩ - ১৭.৫.১৯১৩)। হাসির গান -
পর্যায়। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত, গোপাল হালদার সম্পাদিত দ্বিজেন্দ্র
রচনা সংগ্রহ প্রথম খণ্ড থেকে নেওয়া।
খাই বা যদি শাক চচ্চড়ি
টেবিলেতে খেতে হবে।
ইউরেশীয়ান ছেলে মেয়ে
তৈরি মোরা হচ্ছি ক্রমে,
এদিকেও সংখ্যায় বাড়ছি
বিনা কোন পরিশ্রমে ;
জানি না কি হবে শেষে,
কোথায় বা চলেছি ভেসে ;
মাঝিশূন্য নৌকার উপর
ভেসে যাচ্ছি ভবার্ণবে।
১
কথায় কথা যাচেছ শুধু কথা বেড়ে,
গানে গানে ছেয়ে পড়ল দেশটা ;
কিছুই বোঝা যাচ্ছে না ক নেড়ে চেড়ে।
কি রকম যে দাঁড়ায় এখন শেষটা।
সভায় সভায়, মাঠে হাটে, গোলেমালে,
বক্তৃতাতে আকাশ পাতাল ফাটছে ;
যাদের সময় কাটত না ক কোন কালে,
তদের এখন খাসা সময় কাটছে।
নেতায় নেতায় ক্রমেই দেশটা ভরে গেল
সবাই নেতা সবাই উপদেষ্টা,---
চেঁচিয়ে ত সবার গলা ধরে গেল,
অন্য কিছুর দেখাও যায় না চেষ্টা।
লিখে লিখে সম্পাদকে কবিগণে
ভীষণ তেজে অনুপ্রাসে কাঁদছে ;
সবাই বলছে কি কাজ এখন “পিটিশনে”
সবাই কিন্তু পায়ে ধ’রেই সাধ্ছে।
২
খাটো লম্বা কবিতায় ও উপদেশে
সবাই বোঝায়, সবাই খাসা বুঝছে ;---
সবাই কিন্তু সভা হ'তে ঘরে এসে,
নিজের নিজের আহার নিদ্রাই খুঁজছে।
নেতারা কেউ হ্যাটে কোটে গায়ে এঁটে,
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
নেতা
কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৯.৭.১৮৬৩ - ১৭.৫.১৯১৩)।
১৯০৭ সালে প্রকাশিত, কবির “আলেখ্য” কাব্যসংকলনের চতুর্দশ চিত্র।
সাহেবগুলোয় তেজে গালি পড়ছে ;
রেশমি চাদর উড়িয়ে দিয়ে, তেড়ি কেটে,
কেউ বা জোরে “মা মা” ধ্বনি ছাড়ছে ;
কেউ বা হাতের কব্জায় সখের রাখী বেঁধে,
(ব্যয়টি তাতে একাট পয়সা মাত্র)
আর্য ভ্রাতার প্রতি বলছে কেঁদে কেঁদে---
“বটে, তুমি নহ ঘণার পাত্র।”
কেউ বা বলে “দেশের জন্য-যত চাহ,
ইংরাজদিগে সুখে গালি পাড়ব ;
কিন্তু স্বপ্নেও কভু তুমি ভেবো না ও
দেশের জন্য নিজের 'কিছু ছাড়ব।”
কেউ বা খাসা নিজের থলে ভ’রে 'নিল
দেশের নামে দিয়ে সবায় ধাপ্পা!
কেউ বা খাসা দু পয়সা বেশ করে নিল
বিদেশীয়ে দিয়ে “দেশী” ছাপ্পা।
কেউ বা বলে “শোন সবাই এই বাণী---
রাখব না আর বিজাতীয় চিহ্ন ;
অর্থাৎ কি না হুইস্কি এবং সোডা পানি
ম্যানিলা ও ভিনোলিয়া ভিন্ন।”
শুনে সবাই এ ঘোর কঠোর দৃঢ় পণে
বলে “এরাই সাধু এঁরাই শ্লাঘা।”
এতেও যদি বাঁচেন বাঁচেন এঁরা---ভাবে মনে---
সেটা দেশের বিশেষরকম ভাগ্য।
৩
আমি বলি বোসো বোসো, গ্যাছে বোঝা ;
ওহে নেতা ! ওহে স্বদেশভক্ত !
স্বদেশহিতৈষণা নয় ক এত সোজা,
সেটা একটু ইহার চেয়ে শত্ত।
“মা মা” বলে, চেঁচিয়ে ওঠা বারে বারে,
“ভাই ভাই” ব’লে বাঁকা সুরে বায়না ;
তাতে তোমার ভাষার খ্যাতি হ'তে পারে ;
স্বদেশভক্তির কাছেও ঘেঁষে যায় না।
যেমনি তোমার হাতে একটা সূতা বেঁধে,
হৃদয়ের বিষ হয় না তোমার মিষ্ট
তেমনি হয় না বাউলসুরে গলা সেধে,
স্বদেশভক্তি কাস্মিন্ কালেও সৃষ্ট।
কার্পেটমোড়া ত্রিতলকক্ষে বসে থেকে,
“মা মা” ব’লে নাকিসুরে কান্না ;
নিয়ে যাও সে ভক্তি বক্ষে চেপে রেখে,
মা সে সৌখীন মাতৃভক্তি চান না।
---সুসম্তান কেউ দূরে বসে দেখে না সে
মায়ের কেমন ভূবনমোহন কান্তি!
তাহার কেবল মায়ের ব্যথাই মনে আসে,
মায়ের স্নেহধারা অবিশ্রান্তি।
পিকধ্বনি, শীতল ছায়া, “জ্যোছনা”টি,
তাতে কাহার নাই ক অনুরক্তি?
হ'তে পারে তাতে কাব্য পারপাটি,
কিন্তু তাতে দেখায় না ক ভক্তি ;
বিভোর হয়ে রাধাকৃফের ছবি নিয়ে,
লম্পটেরও দেখা---নয় ক শক্ত ;
তাহার জন্য যে জন সংসার ছেড়ে দিয়ে
কৌপীন নিতে পারে, সেইই ভক্ত!
৪
নিজের খাবার গুছিয়ে নিয়ে খেয়ে দেয়ে
ক্ষেপাও নিয়ে স্কুলের ক'টি ছাত্র ;
পরের ছেলের ভবিষ্যতের মাথা খেয়ে,
আপনি গিয়ে বোসো ঝেড়ে গাত্র।
খেতে না পায পরের ছেলেই পাবে না ক,
মরে যদি পরের ছেলেই মরবে ;
নিজের সিন্দুক বন্ধ ক'রে ব’সে থাক,
(বটে, তখন তুমি তা কি করবে?)
নামটি নিজের জাহির ক'রে দিয়েছ ত,
পেয়েছ যা ধর নিজের মস্তে ;
তুমি তাদের করতালি নিয়েছ ত,
আশিস্ তাদের দিয়ে যাও দু হস্তে।
---প্রবেশ কর্বে সংসারে সে পরে যবে,
শাপ্বে তোমায় সে যৎপরোনাস্তি ;
পাপের শাস্তি থাকে, তোমায় পেতে হবে,
ইহার জন্য পেতেই হবে শাস্তি।
৫
হা রে মূঢ-ইংরাজদিগে গালি দিয়ে
দেশের প্রতি দেখায় না ক ভক্তি ;
দেশভক্তি নয় ক ছেলেখেলাটি এ,
সেখানে চাই প্রাণ দেবার শক্তি।
দেশের জন্য দুঃখ নিতে হবে চেয়ে,
দেশের জন্য দিতে হবে রক্ত ;
সেটা হয় না টানাপাখার হাওয়া খেয়ে,
সেটা একটু বিশেষ রকম শক্ত।
পার যদি---এস রে ভাই---লাগ তবে,
ধর ব্রত, অঙ্গে মাথ ভস্ম ;
দেশের জন্য গ্রামে গ্রামে ফির সবে,
ভায়ের সেবায় দাও রে সর্বস্ব।
মায়ের সেবা কর্তে সত্য চাহ যদি,
ভায়ের সেবায় নিবেশ কর চিত্ত ;
নিজের ভাবনা ছেড়ে, কর নিরবধি
ভায়ের ভাবনা তেমার ভাবনা নিত্য।
টিয়ার মত দাঁড়ে ব’সে ছোলা খেয়ে,
রাধাকৃষ্ণ বল্লেই হয় না ধর্ম ;
পরের জন্য ভাবতে হবে জগতে এ,
পরের জন্য কর্তে হবে কর্ম।
চাদর উড়িয়ে, মাথায় বাঁকা সিথী কেটে,
তক্তার উপর হয়ে উচ্চ ব্যক্তি,
“মা মা” শব্দে অকাশ যায়ও যদি ফেটে,
---দেখানো তায় হয় না মাতৃভক্তি।
ফিটন চড়ে টাউন হলে নেমে এসে,
গেয়ে গান---সেও একটু বেশী মাত্রায়---
স্বদেশহিতৈষণাটাকে পরিশেষে
করে তুল্লে ভুলোর দলের যাত্রায় !
৬
নামের কাঙাল হায় রে। দ্বারে দ্বারে ঘুরি
বেড়াচ্ছিলে---ভালো । ---ওহে মিত্র!
পরিশেষে নামের জন্য জুয়াচুরি !
মায়ের নামটাও কর্চ্ছ অপবিত্র !!!
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
বঙ্গ আমার, জননী আমার, ধাত্রী আমার, আমার দেশ !
কেন গো মা তোর শুষ্ক নয়ন, কেন গো মা তোর রুক্ষ কেশ!
কেন গো মা তোর ধূলায় আসন,
কেন গো মা তোর মলিন বেশ!
সপ্তকোটি সন্তান যার ডাকে উচ্চে ‘আমার দেশ’ !
(কোরাস) কিসের দুঃখ, কিসের দৈন্য, কিসের লজ্জা, কিসের ক্লেশ,
সপ্তকোটি মিলিত কণ্ঠে ডাকে উচ্চে 'আমার দেশ’।
উদিল যেখানে বুদ্ধ আত্মা মুক্ত করিতে মোক্ষ-দ্বার,
আজিও জুড়িয়া অর্ধ জগৎ ভক্তি প্রণত চরণে যাঁর।
অশোক যাহার কীর্তি ছাইল গান্ধার হ'তে জলধি শেষ,
তুই কি না মাগো তাদের জননী,
তুই কি না মাগো তাদের দেশ!
(কোরাস) কিসের দুঃখ---ইত্যাদি।
একদা যাহার বিজয় সেনানী হেলায় লঙ্কা করিল জয়,
একদা যাহার অর্ণবপোত ভ্রমিল ভারত সাগরময়,
সন্তান যার তিব্বত চীন জাপানে গঠিল উপনিবেশ,
তার কিনা এই ধূলায় আসন, তার কিনা এই ছিন্ন বেশ !
(কোরাস) কিসের দুঃখ---ইত্যাদি।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
বঙ্গ আমার, জননী আমার, ধাত্রী আমার, আমার দেশ
কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৯.৭.১৮৬৩ - ১৭.৫.১৯১৩)। ১৯০২ সালে প্রকাশিত, কবির “মন্দ্র” কাব্যসংকলনের কবিতা। গানটি
আমরা নিয়েছি ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত বিনয়কুমার গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত “স্বাধিনতার অঞ্জলি ভারতের মুক্তি” গ্রন্থ থেকে।
কবিপুত্র দিলীপকুমার রায়ের কণ্ঠে গান শুনুন ভিডিওতে। VDOটি সৌজন্যে Joydeep Banerjee YouTube Channel.
উঠিল যেখানে মুরজ মন্দ্রে নিমাই-কণ্ঠে মধুর তান,
ন্যায়ের বিধান দিল রঘুমণি, চণ্ডিদাস গাহিল গান।
যুদ্ধ করিল প্রতাপাদিত্য তুই তো না সেই ধন্য দেশ।
ধন্য আমরা যদি এ শিরায় থাকে তাঁদের রক্ত লেশ।
(কোরাস) কিসের দুঃখ---ইত্যাদি।
যদিও মা তোর দিব্য আলোকে
ঘেরে আছে আজি আঁধার ঘোর,
কেটে যাবে মেঘ, নবীন গরিমা, ভাতিবে আবার ললাটে তোর।
আমরা ঘুচাব মা তোর কালিমা, মানুষ আমরা নহি তো মেষ !
দেবী আমার, সাধনা আমার, স্বর্গ আমার, আমার দেশ।
(কোরাস) কিসের দুঃখ---ইত্যাদি।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
নারী নিগ্রহ কবি কামিনী রায় (১২.১০.১৮৬৪ - ২৭.৯.১৯৩৩)।
১৯২৯ সালে প্রকাশিত কবির “দীপ ও ধূপ” কাব্যগ্রন্থের কবিতা। আমরা নিয়েছি,
২০০১ সালে ভারবি থেকে প্রকাশিত, ডঃ বারিদবরণ ঘোষ সম্পাদিত “কামিনী
রায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” কাব্য সংকলন থেকে।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
নারীর দাবি কবি কামিনী রায় (১২.১০.১৮৬৪ - ২৭.৯.১৯৩৩)।
১৯২৯ সালে প্রকাশিত কবির “দীপ ও ধূপ” কাব্যগ্রন্থের কবিতা। আমরা
নিয়েছি, ২০০১ সালে ভারবি থেকে প্রকাশিত, ডঃ বারিদবরণ ঘোষ সম্পাদিত
“কামিনী রায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” কাব্য সংকলন থেকে।
নারীর জাগরণ কবি কামিনী রায় (১২.১০.১৮৬৪ - ২৭.৯.১৯৩৩)।
১৯২৯ সালে প্রকাশিত কবির “দীপ ও ধূপ” কাব্যগ্রন্থের কবিতা। আমরা
নিয়েছি, ২০০১ সালে ভারবি থেকে প্রকাশিত, ডঃ বারিদবরণ
ঘোষ সম্পাদিত “কামিনী রায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা” কাব্য সংকলন থেকে।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
এরা যদি জানে কবি কামিনী রায় (১২.১০.১৮৬৪ - ২৭.৯.১৯৩৩)। ১৯৬০ সালে
প্রকাশিত, কবিশেখর কালিদাস রায় সম্পাদিত, মাধুকরী কাব্য-সংকলনের কবিতা।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
পতিত ব্রাহ্মণ কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০)। ১৯১০ সালে প্রকাশিত কবির "অভয়া"
কাব্যগ্রন্থের "বিবিধ সঙ্গীত" পর্যায়ের গীত।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
সমাজ কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০)। ১৯১০ সালে প্রকাশিত কবির "অভয়া" কাব্যগ্রন্থের
"বিবিধ সঙ্গীত" পর্যায়ের গীত।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
জমিদার কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০).। ১৯২৭ সালে প্রকাশিত কবির "শেষ দান" কাব্যগ্রন্থের গীত।
ঋণ-শোধের উপায় কুত্র?
শুধু অধঃপাতের সূত্র।
বাবা করেছিল, আমি উড়ালাম,
. বাবার যোগ্য পুত্র!
ঠিক বলেছিল Darwin,
We are very sanguine,
মোদের জীবনটা এক চিরবাঁদ্ রামী,
. সম্মুখে শুধু ruin!
এই ছোট Autobiography
প’ড়ে, কে কি ভাবে তাই ভাবি---
কমলা গো! তুমি কার হাতে দিলে
. তোমার ঝাঁপির চাবি?
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
সংকল্প
॥ মূলতান, গড় খেমটা॥
মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়
মাথায় তুলে নে রে ভাই ;
দীন-দুঃখিনী মা য়ে তোদের
তার বেশী আর সাধ্য নাই।
ঐ মোটা সূতোর সঙ্গে, মায়ের
অপার স্নেহ দেখতে পাই ;
আমরা, এমনি পাষাণ, তাই ফেলে ঐ
পরের দোরে ভিক্ষা চাই।
ঐ দুঃখী মায়ের ঘরে, তোদের
সবার প্রচুর অন্ন নাই ;
তবু, তাই বেচে কাচ, সাবান মোজা,
কিনে কল্লি ঘর বোঝাই.
আয়রে আমরা মায়ের নামে
এই প্রতিজ্ঞা ক'রব ভাই ;
পরের জিনিষ কিনবো না, যদি
মায়ের ঘরের জিনিষ পাই।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়
কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০) । ১৯০২ সালে প্রকাশিত, কবির “বাণী” কাব্যগ্রন্থের “বিলাপে”-
র অন্তর্ভুক্ত। রুমা গুহঠাকুরতার পরিচালনায় “ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়্যার”-এর পরিবেশনা। ভিডিওটি সৌজন্যে
Shiblee Noman (শিবলী নোমান) YouTube Channel.
তাই ভালো
॥ জংলা, কাহারোয়া॥
তাই ভালো, মোদের
মায়ের ঘরের শুধু ভাত ;
মায়ের ঘরের ঘি-সৈন্ধব,
মার বাগানের কলার পাত।
ভিক্ষার চালে কাজ নাই, সে বড় অপমান ;
মোটা হোক্, সে সোণা মোদের মায়ের ক্ষেতের ধান
সে যে মায়ের ক্ষেতের ধান।
মিহি কাপড় প'রব না আর যেচে পরের কাছে ;
মায়ের ঘরের মোটা কাপড় প'রলে কেমন সাজে !
দেখতো প'রলে কেমন সাজে !
ও ভাই চাষী, ও ভাই তাঁতী, আজকে সুপ্রভাত ;
ক’সে লাঙ্গল ধর ভাই রে, ক'সে চালাও তাঁত।
ক'সে চালাও ঘরের ভাত।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
তাই ভালো, মোদের
কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০)
১৯০২ সালে প্রকাশিত, কবির “বাণী” কাব্যগ্রন্থের “বিলাপে”-র অন্তর্ভুক্ত।
তাঁতী-ভাই
॥ রে গঙ্গামাই---প্রাতে দরশন দে - সুর, কাহারোয়া॥
রে তাতী ভাই, একটা কথা মন লাগিয়ে শুনিস্ ;
ঘরে তাঁত যে ক'টা আছে রে,---
তোরা স্ত্রী-পুরুষে বুনিস্।
এবার যে ভাই তোদের পালা,
ঘরে ব'সে, ক'সে মাকু চালা ;
কলের কাপড় বিশ হবে রে,---
না হয় তোদের হবে উনিশ।
তোদের সেই পুরাণো তাঁতে,
কাপড় বুনে দিবি নিজের হাতে ;
আমরা মাথায় ক'রে নিয়ে যাব রে,---
টাকা ঘরে বসে গুণিস্ !
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
রে তাঁতী-ভাই, একটা কথা মন লাগিয়ে শুনিস্
কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০)
১৯০২ সালে প্রকাশিত, কবির “বাণী” কাব্যগ্রন্থের “আলাপে”-র অন্তর্ভুক্ত।
মিলন
॥ সংকীর্ত্তন, গড়খেমটা॥
আয় ছুটে ভাই, হিন্দু-মুসলমান!
ঐ দেখ ঝ'রছে মায়ের দু-নয়ান।
অজ, এক ক'রে সে সন্ধ্যা-নমাজ,
মিশিয়ে দে আজ, বেদ-কোরাণ !
(জাতিধর্ম্ম ভুলে গিয়ে রে ) (হিংসাবিদ্বেষ ভূলে গিয়ে রে)
থাকি একই মায়ের কোলে, করি
একই মায়ের স্তন্যপান।
( এক মায়ের কোলে জুড়ে আছি রে ) ( এক মায়ের দুধ খেয়ে বাঁচি রে)
আমরা পাশাপাশি, প্রতিবাসী,
দুই গোলারি একই ধান।
( একই ক্ষেতে সে ধান ফলে রে ) ( একই ভাতে একই রক্ত ব’য়ে যায়)
এক ভাই না খেতে পেলে,
কাঁদে না কোন্ ভায়ের প্রাণ?
( এমন পাষাণ কেবা আছে রে) ( এমন কঠিন কেবা আছে রে)
বিলেত ভারত দু'টো বটে, দুয়েরি এক ভগবান্।
( দুই চ'খে যে দু'দেশ দেখে না ) ( তার কাছে তো সবাই সমান রে )
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
আয় ছুটে ভাই হিন্দু-মুসলমান
কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০)। ১৯০২ সালে প্রকাশিত,
কবির “বাণী” কাব্যগ্রন্থের “আলাপে”-র অন্তর্ভুক্ত।
জন্মভূমি
॥ মিশ্র পরোজ, কাওয়ালী॥
জয় জয় জনমভূমি, জননি !
যাঁর, স্তন্যসুধাময় শোণিত ধমনী ;
কীর্ত্তি-গীতিজিত, স্তম্ভিত, অবনত,
মুগ্ধ, লুব্ধ, এই সুবিপুল ধরণী ;
উজ্জ্বল-কানন-হীরক-মুক্তা---
মণিময়-হার-বিভূষণ-যুক্তা ;
শ্যামল-শস্য-পুষ্প-ফল-পূরিত,
সকল-দেশ-জয়-মুকুটমণি !
সর্ব্ব-শৈল-জিত, হিমগিরি শৃঙ্গে,
মধুর-গীতি-চির-মুখরিত ভূঙ্গে,
সাহস-বিক্রম-বীর্য্য-বিমণ্ডিত,
সঞ্চিত-পরিণত-জ্ঞান-খনি।
জননী-তুল্য তব কে মর-জগতে?
কোটি কণ্ঠে কহ, “জয় মা! বরদে!”
দীর্ণ বক্ষ হ’তে, তপ্ত রক্ত তুলি'
দেহ পদে, তবে ধন্য গণি!
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
জয় জয় জয় জনমভূমি, জননি
কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০)
১৯০২ সালে প্রকাশিত, কবির “বাণী” কাব্যগ্রন্থের “আলাপে”-র অন্তর্ভুক্ত।
দুর্ভিক্ষ
(উড়িষ্যা দুর্ভিক্ষ উপলক্ষে রচিত)
॥ বিজয়া, তেওড়া॥
অস্থিভূষণ মৃত্যুদানব
ভীম-নগ্ন-কপাল-মালী,
রুদ্র নেত্রে কি রোষ পাবক,
জ্বলিছে তীক্ষ মরীচি-শালী !
দুঃখ, দৈন্য, বিষম বুভুক্ষা,
প্রেত-প্রেতিনী সঙ্গে,
নাচে তাণ্ডবে, অট্ট হাসিছে
ভীম কর্কশ কি করতালি !
---জাগো জাগো বিলাস পরিহর,
ত্যজ সুকোমল শয়ন রে,
দৈত্য নাশিতে ডাক জননীরে
দৈত্য-হরণা শক্তি কালী।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
অস্থিভূষণ মৃত্যুদানব
কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০)
কবির “অভয়া” কাব্যগ্রন্থের “বিবিধ সঙ্গীত” থেকে নেওয়া।
আছ ত’ বেশ
॥ বাউলের সুর, গড় খেমটা॥
আছ ত বেশ মনের সুখে!
আঁধারে কি না কর, আলোয় বেড়াও বুকটি ঠুকে।
দিয়ে লোকের মাথায় বাড়ি, আনলে টাকা গাড়ি গাড়ি,
প্রেয়সীর গয়না -সাড়ী, হ'ল গেল লেঠা চুকে!
সমাজের নাইক মাথা, কেউ ত আর দেয়না বাধা ;
সবি টের পাবে দাদা, সে রাখছে বেবাক টুকে ;
যত যা' ক'রে গেলে, সেইখানে সব উঠ্বে ঠেলে,
তুমি তা' টেন কি পেলে,
নাম উঠেছে যে “Black Book” এ?
কে কারে ক'রবে মানা? অমনি প্রায় ষোল আনা,
ভিজে বেড়ালের ছানা, ভাল মানুষ মুখে ;
যত, খুন ডাকাতি প্রবঞ্চনা, মদ গাঁজা ভাঙ্গ্ বারাঙ্গনা,
এর মজা বুঝবে সে দিন,
যে দিন যাবে সিঙ্গে ফুঁকে!
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
আছ ত বেশ মনের সুখে
কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০)
কবির “কল্যাণী” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া।
আমরা
॥ মিশ্র বারোয়াঁ, কাওয়ালী॥
আমরা নেহাৎ গরীব আমরা নেহাৎ ছোট ;
তবু আজি সাত কোটি ভাই জেগে ওঠো॥
জুড়ে দে ঘরের তাঁত সাজা দোকান ;
বিদেশে না যায় ভাই গোলারি ধান ;
আমরা মোটা খাব, ভাই রে প'রবো মোটা ;
মাখবো না ল্যাভেন্ডার, চাই নে “অটো”॥
নিয়ে যায় মায়ের দুধ পরে দুয়ে'
আমরা, রব কি উপোসী ঘরে শুয়ে?
হারাস্ নে ভাই রে, আর এমন সুদিন
মায়ের পায়ের কাছে এসে জোটো॥
ঘরের দিয়ে আমরা পরের মেঙে ;
কিন্ বো না ঠুন্ কো কাঁচ, যায় যে ভেঙে ;
থাকলে, গরীব হয়ে, ভাই রে, গরীব চালে,
তাতে হ'বে নাকো মান খাটো॥
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
আমরা নেহাৎ গরীব আমরা নেহাৎ ছোট
কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০)
১৯০২ সালে প্রকাশিত, কবির “বাণী” কাব্যগ্রন্থের “বিলাপে”-র অন্তর্ভুক্ত। অনুপ ঘোষালের কণ্ঠে গানটি শুনুন।
ভিডিওটি সৌজন্যে RadioKolkata YouTube Channel.
মোক্তার
॥ “আমরা বিলেত ফেরতা ক’ভাই” - সুর॥
আমরা, মোক্তারি করি ক'জন,
এই, দশ কি এগার ডজন,
কিন্ত, সংখ্যার অনুপাতে আমাদের
বড্ডই কম ওজন।
পরি, চাপকান তলে ধুতি,
যেন, যাত্রার বৃন্দেদূতী ;
আমরা, দৌত্য কর্ম্মে পটু তারি মত
জানি রসিকতা স্তুতি।
যত, ভাইসাহেব মক্কেল,
তাদের কতই যে মাখি তেল,
আর, দু’ আনা, চার আনা ছ’ আনায়, করি
সরষে কুড়িয়ে বেল।
যত, নিরক্ষর চাষাগুলো,
প্রায় দিয়ে যায় কলা মুলো,
দেখ, ক’রে তুলিয়াছি প্রায় একচেটে
চাচার চরণ ধূলো।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
আমরা, মোক্তারি করি ক’জন
কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০)। কবির “অভয়া” কাব্যগ্রন্থের “বিবিধ সঙ্গীত” থেকে গান।
কত মিষ্টি কথায় মাতিয়ে,
আর, ধর্ম্ম-কুটুম পাতিয়ে,
ঐ, লম্বা দাড়িতে হাতটি বুলিয়ে
যা থাকে নেই হাতিয়ে।
করি, জামিনের ফিস আদায়,
কভু, আসামীটে গোল বাধায়,
ঐ, বিচারের দিনে হাজির না হ'য়ে
হাসির দ্বিগুণ কাঁদায়।
ঢের বাঁধা ঘর আছে বটে,
কিন্তু বলা ভাল অকপটে,
যে বছরের শেষে পূজোর সময়,
মাইনে চেলেই চটে।
দু’টো ইংরেজী কথাও জানি,
সুধু ভুলেছি Grammer খানি,
এই “I goes”, “he come”, “they eats” বেরোয়
ক’রে খুব টানাটানি।
বলি, Your honour record see,
What, প্রমাণ against me?
এই doubts benefit all court give
হুজুর not give কি?
কারো টাকা যদি পড়ে হাতে,
বড় নগদ রয়না তাতে,
আমরা জমা খরচেই সব সেরে দেই
পণ্ডিত ধারাপাতে।
বলি “মা'ত্তে দেখিনি কিরে?
বেটা কান দু'টো দেবো ছিঁড়ে,
বল্, নিজের চক্ষে মা'ত্তে দেখেছি
দশ বারজনা ঘিরে”।
(রাখি ), জমা খরচটা মস্ত
তাতে এমনিতর অভ্যস্ত,
বাজেয়াপ্তিতে জলকেটে নেয়,
দুগ্ধে পড়ে না হস্ত।
এখন, ভার হইয়াছে বসত,
প্রায় বন্দ হয়েছে রসদ,
মক্কেল, হাকিম, গিন্নি, চাকর,
সব মনে করে অসৎ।
গোপনে দিয়েছি খেয়েছি কত,
সাক্ষী শিখিয়েছি অবিরত,
(এ হাতে) দোষীর মুক্তি, নিরপরাধীর
জেল হ'য়ে গেল কত!
সদর খাজানা না দিয়ে,
(ও সে ) টাকাটা গোপনে হাতিয়ে,
নিলাম করিয়ে নিজে কিনে নেই
গরীব মালিকে কাঁদিয়ে।
আর বেশী দিন কই বাকি?
শুনেছি, সেখানে চলে না ফাঁকি ;
খ্মাষরা শিখিয়েছি কত দোষীর জবাব,
মোদের জবাবটা কি?
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
পুরোহিত
আমাদের, ব্যাবসা পৌরোহিত্য,
আমরা, অতীব সরল-চিত্ত,
হিত যাহা করি, জানেন গোসাঞী,
(তবে) হরি যজমানবিত্ত
আমাদের, রুজি এ পৈতে গাছি,
রোজ, যত্নে সাবানে কাচি,
আর, তালতলা চটি পেন্ সেন্ দিয়ে,
ঠন্ ঠনে নিয়ে আছি।
দেখছ, আর্কফলাটি পুষ্ট,
যত, নচ্ছার ছেলে দুষ্ট,
কি বিষ-নয়নে ঐটে দেখেছে,
কাটতে পেলেই তুষ্ট।
বাবা, দিয়েছিল বটে টোলে,
কিন্তু ঐ অনুস্বারের গোলে,
“মুকুন্দ সচ্চিদানন্দ” অবধি
প’ড়ে, আসিয়াছি চ'লে।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
আমাদের, ব্যবসা পৌরোহিত্য কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০)। কবির “কল্যাণী” কাব্যগ্রন্থ
থেকে নেওয়া। ॥ সুর – “আমরা বিলেত ফেরতা ক’ভাই”। --- D.L. Roy ॥ সেই গানটি শুনতে এখানে ক্লিক করুন . . . ।
যদিও, ছুঁইনি সংস্কৃত কেতাব,
তবু “স্মৃতি-শিরোমণি” খেতাব,
কিন্তু, কিছু যে জানিনে, বলে কোন্ ভেড়ে?
মুখের এমনি প্রতাপ !
আছে, ব্রতের একটি লিষ্টি,
তারা মায়ের এত কি সৃষ্টি !
আমর, সব চেয়ে দেখি, সোপকরণ
মিষ্টান্নটাই মিষ্টি!
দেখ, রেখে গেছে বাপ দাদা,---
ঐ, মন্তর গাদা গাদা,
আর, যেমন তেমন ক'রে আওড়াও,
দক্ষিণাটি ত' বাঁধা ;
মোদের, পসার বিধবাদলে ;
এই, পৈতে টিকির বলে,
দক্ষিণে, ভোজনে, বেড়ে যুত, আর
মন্ত্র, যা’ বলি চলে।
মা সকল, বামুন খাইয়ে সুখী,
আর, আমরাই কি ভোজনে চুকি?
এই, কণ্ঠা অবধি পরস্মৈপদী
লুচি পান্তোয়া ঠুকি।
ঐ, “সিন্দুরশোভাকরং”,
আর, “কাশ্যপেয় দিবাকরং”
মন্ত্রে, লক্ষ্মীর অঞ্জলি দেওয়ায়ে,
বলি, “দক্ষিণাবাক্য করং”।
বড়, মজা এ ব্যাবসাটাতে,
কত, কল্ যে মোদের হাতে ;
এ, ফল লাভ, আর মন্ত্রের দৈর্ঘ্য,
দক্ষিণার অনুপাতে ;
সাঁঝে, একপাড়া থেকে ধরি,
জ্ঞান নাই যে বাঁচি কি মরি,
বাড়ী বাড়ী দু'টো ফুল ফেলে দিয়ে,
দু’শো! কালীপূজো করি!
পূজোর, কলসী না হ'লে মস্ত,
কেমন, হই যে বিকারগ্রস্ত !
পিতৃলোক সহ কর্ত্তাকে করি
এক দম্ নরকস্থ।
আমরা 'ধর্ম্মদাস দেবশর্ম্ম"
আমরা, বিলিয়ে বেড়াই ধর্ম্ম,
কিন্তু, নিজের বেলায়, খাঁটি জেনো, নেই
অকরণীয় কুকর্ম্ম।
ডেপুটী
আমরা, ‘Dey’ কি ‘Ray’ কি ‘Sanyal’,
আমরা, Criminal Bench ‘Daniel’,
আমরা, আসামী-শশক তেড়ে ধরি, যেন
Blood hound কি Spaniel !
আমরা, দেখতে ছোকরা! বটে,
কিন্তু কাজে ভারি চটপটে ;
যাঁহা, এজলাসে বসি, মেজাজ রুক্ষ,
চট ক'রে উঠি চ'টে।
আমাদের বয়সটা খুব বেশী নয়,
আর এই, পৌষাকটাও এদেশী নয় ;
আর ঐ, 'হাম্বড়া' ভাব, মোদের অস্থি-
রক্ত-মাংস-পেশী-ময়।
দু'শ তিন ধারা কি প্রশস্ত !
দেখে, ফরিয়াদীগুলো ত্রস্ত ;
প্রায় Civil nature ব'লে, দিয়ে দেই
মধুময় গলহস্ত।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
আমরা, ‘Dey’ কি ‘Ray’ কি ‘Sanyal’ কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০)। কবির “কল্যাণী”
কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া। ॥ সুর – “আমরা বিলেত ফেরতা ক’ভাই”। --- D.L. Roy॥ সেই গানটি শুনতে এখানে ক্লিক করুন . . .।
বড় কায়দা হ’য়েছে ‘Summary’,
ওহো! কি কল ক'রেছে, আ মরি!
To record a deposition at length,
What an awful drudgery!
ঐ, ফেলে Summaryর ফেরে,
আমরা, যার দফা দেই সেরে,
সে যে চিরতরে কেঁদে চ'লে যায়,
আর কভু নাহি ফেরে।
আমরা, ধমকাই যত সাক্ষী,
বলি, নানাবিধ কটু বাক্যি,
আর, যেটা এজাহার-খেলাপে যায় না,
সেটার বড়ই ভাগ্যি।
এই কবলে আসামী পেলে,
বড় দেই না খালাস bail এ,
আর, ঠিক জেনো, যেন তেন প্রকারেণ,
দিবই সেটাকে জেলে।
আর, যদি দেখি কিছু সন্দ,
ঐ, প্রমাণটা অতি মন্দ,
তবে, আপীল-বিহীন দণ্ডে ক'রে দি,
খালাসের পথ বন্দ।
কারণ, খালাসটা বেশী হ'লে,
উঠেন, কত্তাটি ভারি জ্ব'লে,
আর, শান্তি ভিন্ন promotion নাই,
কাণে কাণে দেন ব’লে।
কিন্তু, হঠাৎ সাহেবের পা'টা
লেগে, বাঙ্গালীর পিলে ফাটা---
কভু, মোদের সূক্ষ্মবিচারে দেখেছ
আসামীর জেল-খাটা?
আর, মফস্বলে গেলে,
বেশ, বড় বড় ডালা মেলে,
আরে, প্রীতিদান সেটা, তবু লোকে কয়
ডিপুটীটা ঘুষ খেলে।
আর ঐ, কর্ত্তাটি ভালবেসে,
যদি কাণ ম'লে দেন ক'সে,
ঐ, কর-কমলের কোমলতা, করি
অনুভব, হেসে হেসে।
এই নাসায় বিলিতি গুঁতো,
আর এই, পৃষ্ঠে বিলিতি জুতো,---
একটু, দৃষ্টি-কটুতা-দুষ্ট হ'লেও,
তুষ্টিময় বস্তুতঃ।
ডাক্তার
॥ মিশ্র ইমনকল্যাণ, একতালা॥
দেখ, আমরা হচ্ছি পাশকরা,
ডাক্তার মস্ত মস্ত ;
ঐ Anatomy, Physiology তে
একদম সিদ্ধহস্ত।
আমরা ছিলাম যখন students,
ঐ Medical Jurisprudence,
এই Poetryর মতনআউড়ে যেতাম ;
ভেবোনা impudence ;
And, that hellish cramming system,
was but all for good ends.
আমরা M.B. কিন্বা M. D. কিম্বা L. M. S.
V. L. M. S.
And as a rule, we take as medicine
Vinum galicia, more or less.
আমরা, ব’লে দিতে পারি, তোমার,
দেহে ক’খানা হাড়।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
দেখ, আমরা হচ্ছি পাশকরা ডাক্তার মস্ত মস্ত
কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০)। কবির “অভয়া” কাব্যগ্রন্থের “বিবিধ সঙ্গীত” থেকে।
করি spinal cord আর wisdom tooth এর
সন্বন্ধ বিচার।
আর ঐ, পচা পোকাপড়া,
হাতে, ঘেঁটেছি কত মড়া,
যখন দ”মে যেতাম, দে’খে, সেটা
কি সব দ্রব্যে গড়া’,
তখন এক peg whisky টেনে নিয়ে,
মেজাজ কর্ত্তাম চড়া।
আমরা M. B. কিম্বা M. D. ইত্যাদি।
ঘেন্না ফেন্না নাই আর আমাদের,
হয়েছি মুচি নাকা,
তোমার মূত্র বিষ্ঠা ঘাঁটতে পারি, দাদা,
পেলে নূতন টাক ;
রোগটা বুঝি বা না বুঝি,
আগে, দর্শনী ট্যাকে গুঁজি,
দেখ, stethescope আর thermometer,
আমাদের প্রধান পূঁজি ;
রোগের, description শুনে, prescription করি,
অমনি সোজাসুজি ;
আমরা M. B. কিম্বা M. D. ইত্যাদি।
তোমার ছেলে অক্কা পেলে,
আমার কি আর তাতে ;
কিন্তু অষুধের billটে আসবেই আসবে
প্রত্যেক সন্ধ্যায় প্রাতে,
তুমি, হাজার মাথাঠোকো,
আর, দেবো না বলে রাখো,
Bill টা, ভিমরুল-মাফিক তেড়ে ধ’রবে,
জলে বা গর্ত্তে ঢোকো,
তা, হওনা তুমি কিস্মত মণ্ডল,
হওনা Admiral Togo ;
আমরা M. B. কিম্বা M. D. ইত্যাদি।
Medical certificate এর জন্যে
এলে ধনী কেহ,
ঐ, জলপানী কিঞ্চিৎ হাতিয়ে, ব’লে দেই,
“অতি রুগ্নদেহ,
আমার চিকিৎসার নীচে আছেন,
জানিনে মরেন কিম্বা বাঁচেন,
এঁর ব্যারাম ভারি শক্ত, ইনি
হাই তোলেন আর হাঁচেন ;
আর, কষ্ট হলেই কাঁদেন, আর
আহলাদ হলেই নাচেন ;
আমরা M. B. কিম্বা M. D. ইত্যাদি।
দেখলে, compound fracture, simple fracture,
tumour কিম্বা sore ;
বা ফুর্ত্তিতে, লেগে যাই, তখন
দেখে নিও ছুরির জোর ;
এই সিদ্ধ হস্তে কেটে,
দি, আঙ্গুল দিয়ে ঘেঁটে,
আমরা পরের গায়ে ছুরি চালাই
অতি ভয়ঙ্কর রেটে,
আর ঐ operation ব্যাপার আমরা
করেছি একচেটে।
আমরা M. B. কিম্বা M. D. ইত্যাদি।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
বরের দর
॥ “ঝাঁকে ঝাঁকে লাখে লাখে ডাকে ঐ পাখী” -সুর, মতিয়ার॥
কন্যাদায়ে বিব্রত হ’য়েছ বিলক্ষণ ;
তাই বুঝি সংক্ষেপে কচ্ছি ফর্দ্দ সমাপন।
নগদে চাই তিনটী হাজার,
তাতেই আবার গিন্নী বেজার,
বলেন, এবার বরের বাজার কসা কি রকম!
(কিন্তু) তোমার কাছে চক্ষুলজ্জা লাগে যে বিষম !
(আর) পড়ার খরচ মাসে তিরিশ,
হায় না কমে, বলে “গিরিশ”,
কাজেই সেটা, হ্যাঁ হ্যাণ, বেশী বলা অকারণ ;
সোণার চেন্ ঘড়ী, আইভরি ছড়ি,
ডায়মণ্ডকাটা সোণার বোতাম,
দিও এক সেট, কতই বা দাম?
বিলিতি বুট্, ভাল শ্লিপার্, বরের প্রয়োজন ;
ফুল্ এষ্টকিং, রেসমী রুমাল, দিও দু'ডজন।
ছাতি, বুরুস, আয়না, চিরুণ,
ফুলকাটা সার্ট, কোট, পেণ্টালুন,
দু’ জোড়া শাল, সার্জ্জের চাদর, গরদ সুচিকণ ;
জমকালো ব়্যাপার, আতর ল্যাভেণ্ডার,
খান পনের দিশি ধুতি, রেসমী না হয়, দিও সূতি ;
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
কন্যাদায়ে বিব্রত হ’য়েছ বিলক্ষণ
কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০)। ১৯০২ সালে প্রকাশিত, কবির “বাণী” কাব্যগ্রন্থের “আলাপে”-র অন্তর্ভুক্ত।
হ্যাদ্দ্যাখো ধরিনি 'চসমা”,---কেমন ভুলো মন!
ছেলে, ঠুসি পেলে খুসি, একটু খাটো-দরশন।
খাট, চৌকী, মশারি, গদি, এর মধ্যে নেই “পারি যদি”
তাকিয়া, তোষক, বালিশাদি, দস্তর মতন ;
হবে দু' প্রস্ত, শয্যা প্রশস্ত,
(আর) টেবিল, চেয়ার, আলনা, ডেক্স,
হাতীর দাঁতের হাত-বাক্স,
স্টীলট্রাঙ্ক খুব বড় দু'টো, যা, দেশের চলন ;
(আর) তারি সঙ্গে পূরো এক সেট্ রূপোরি বাসন।
গিন্নি বলেন বাউটি সুটে, রূপ লাবণ্য ওঠে ফুটে,
একশ' ভরি হ'লেই হবে একটি সেট্ উত্তম ;
যেন অলঙ্কার দেখে নিন্দে করে না লোকে,
দিও বরাণসী বোম্বাই,---ফর্দ্দ কিছু হ'ল লম্বাই ;
তা, তোমার মেয়ে, তোমার জামাই,
তোমার আকিঞ্চন ;
আমার কি ভাই? আজ বাদে কা'ল মুদব দু'নয়ন।
(আর) দিও যাতায়াতের খরচ,
না হয় কিছু হবে করজ,
তা,---মেয়ের বিয়ে, তোমার গরজ, তোমার প্রয়োজন ;
আবার আসবে কুলীন-দল, তাদের চাই বিলিতি জল,
ডজন বিশেক “হুইস্কি” রেখো,
নইলে বড় প্রমাদ, দেখো!
কি ক’রব ভাই, দেশের আজকা'ল এমনি চালচলন ;
কেবল চক্ষু-লজ্জায় বাধ’ বাধ’ ঠেক্ছে যে কেমন!
ছেলেটি মোর নব কার্ত্তিক,
ভাবটি আবার খাঁটী সাত্ত্বিক,
এই বয়সে ভার ভাত্তিক, কত্তাদের মতন ;
বদি দিতেন একটা 'পাশ', তবে লাগিয়ে দিতেম ত্রাস.
ফেল্ ছেলে, তাই এত কম পণ,
এতেই তোমার উঠল কম্পন?
কেবল তোমার বাজার যাচাই,---বকা'লে অকারণ,
দেশের দশা হেরে “কান্ত” করে অশ্র-বরিষণ!
মা! কষ্ট ক'রে মানুষ ক'রে
পরের হাতে দিতে হয় ;
মেয়ের কাজ কি শক্ত, পরকে
আপন ক'রে নিতে হয়।
অচেনা! সংসারে গিয়ে
চেনার মত থাকতে হবে ;
সবার কথার বাধ্য হ'য়ে,
সবারি মন রাখতে হবে।
তাতে, মা, তুই শিশু, সেথা
গেলেই যে তোর কান্না পাবে ;
চোখের জলটি না শুকাতেই
তোর হাতে, মা, রান্না যাবে।
মুখ দেখে, মা কত রকম
করবে সবাই আলোচনা,
মন্দ লোকে ব'লবে মন্দ,
ভালো ব'লবে ভালো জনা।
ঘোমটা একটু স'রে গেলে,
ব’লবে “ব’য়ের সরম নাই” ;
গায়ের কাপড় স'রবে না, মা,
নূতন ব’য়ের গরম নাই।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
মা! কষ্ট ক’রে মানুষ ক’রে কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০)।
কবির “বিশ্রাম” কাব্যগ্রন্থের “পরিণয়-মঙ্গল”-এর অন্তর্ভুক্ত কবিতা।
ব্যথা পেলে “উহু” নাই তার,
আনন্দে সে হাসতে নারে ;
পাড় পড়সী আর না পারুক,
কথায় কথার শা'স্ তে পারে।
‘এ ভাল নয়,---তা' ভাল নয়,---
কত রকম ক’য়ে যাবে ;
আপন কাজে মন দিয়ে রো’স,
শুনতে শুনতে স’য়ে যাবে,
সেই যে, মা, তোর আপন বাড়ী,
তারাই, মা, তোর আপন জন ;
তাদের তুষ্ট ক'রতে হবে,
ক’রতে হবে জীবন-পণ।
নিজের কষ্ট চেপে রেখে,
তাদের কষ্ট করিস্ দূর ;
তাদের গর্ব্ব মাথায় রেখে,
নিজের দর্প করিস্ চূর।
গুরু জনের সেবা ক'রো,
তাঁদের বাধ্য হয়ে থেকো ;
তাঁদের জন্য কষ্ট সইতে
সুখ আছে, মা, স’য়ে দেখো।
“সাবান ঘসা, এসেন্স্ মাথা,
কুন্তলীনে কেশাটি ভরা?
জ্যাকেট, সেমিজ, সেফটি পিনে,
দিবা রাত্রি বেশটি করা ;
'উল্ নিয়ে বউ ব’সে থাকে,
ঘুরে বেড়ায়, হাসে, খায় ;
সংসারের কাজ ভেসে গেলে,
তার কি তাতে আসে যায়?”
এ সব কথা কেউ না বলে,
নিজের মান্য রাখিস্ নিজে?
সবকে রাখিস্ মাথায় ক’রে,
সরম নিয়ে থাকিস্ নীচে।
আমরা, মা, তোর জন্যে কাঁদি,
তুই হেসে যা তাদের ঘরে ;
মনের দুঃখ রেখে যা, মা,
সুখ নিয়ে যা তাদের তরে।
মিথ্যা গৌরব ভুলে গিয়ে,
ধর্ম্মের তরে হ’স্ তৃষিতা ;
সতী লক্ষ্মী হ’স্ মা, সবে
কয় যেন “সাবিত্রী-সীতা”।
কর্ত্তা। আমার, এমন কি বয়েসটা বেশী?
. সত্য হ'লে কোষ্ঠী, এই যে আসছে জ্যোষ্ঠী,
. এই মাসে পূরিবে আশী !
. আরে না না! আমার বিয়ে করবার কাল
. যায়নিকো এখনো ; ---আরে নম্দলাল !
. কি বলিস্?
চাকর। কর্তা অ্যাহনো ছাওয়াল
. হইবো, বিয়্যা করেন ; ---তামুক লইয়্যা আসি।
কর্ত্তা । আরে দেখ্না আমার সংসারো অচল,
. ছেলে পিলে মানুষ কে করে তাই বল ;
. আমি, চুলে কলপ দেবো, দাঁত বাঁধিয়ে নেবো ;
. আর এম্নি ক'রে হাসবো সুধা-মাখা-হাসি। (প্রদর্শন)
. আমার, চামড়া গেছে ঝুলে, চোক গেছে কোটরে,
. কোমর গেছে বেঁকে, বেড়াই লাঠি ধ’রে ;---
. তা, ---শৃঙ্গার-তিলক কিছু নেব তোয়ের ক'রে ;
চাকর। আর যৈবন ফিব়্যা পাইবেন, হইবেন মোট্টা-খাসী
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
বিয়েপাগলা বুড়ো ও তাহার বাঙ্গাল চাকর
কবি রজনীকান্ত সেন (২৬.৭.১৮৬৫ - ১৩.৯.১৯১০)। কবির “কল্যাণী” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া।
কর্ত্তা । কচি-মুখখানিতে বলবে প্রেমের বুলি,
. গয়না পেলেই আমার বয়স যাবে ভুলি’ ;
. ক্ষীর-নবনী দিব চাঁদ-মুখেতে তুলি’ ; ---
চাকর। (আর), চরণ হ্যাবা কর্বো হৈয়া হ্যাবা-দাসী।
কর্ত্তা। আর, কথায় কথায় যদি ক'রে বসে মান,
. পায়ের উপর প'ড়ে বল্বো “দুটো খান” ; ---
. তাতেও না ভাঙ্গিলে, ত্যজিব এ প্রাণ ; ---
চাকর। কর্তা, আমি আপনার গলায় দিয়্যা দিমু ফাসী।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
সত্য কি তোমারে আমি বাসি ভালো? স্বদেশ জননি!
কহি বটে, সাধনার ধন তুমি, নয়নের মণি!
কিন্তু যবে অন্তরের অন্তরেতে করি নিরীক্ষণ,
বুঝি সব শূন্যগর্ভ, অর্থহীন অলীক বচন।
প্রবঞ্চিত প্রবঞ্চক হ'য়ে হেন র’ব কতকাল?
পূত, শুদ্ধ কর মা গো, দূর কর মনের জঞ্জাল।
পারিতাম সত্য যদি মাতৃরূপে ভাবিতে তোমারে,
হইতাম বধির কি এত ডাকে, এত হাহাকারে?
দারিদ্র্যের কশাঘাতে কাঁদে ভ্রাতা, কাঁদে ভগ্নী মোর,
বিলাসে নিমগ্ন আমি, কই ঝরে নয়নের লোর?
অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে আছে কোটি কোটি জন,---
একটিও দীপ আমি নাহি করি কেন প্রজ্বালন?
কোটি কণ্ঠে রোগে শোকে শুনি উঠে তীব্র আর্তনাদ
আমি হাসি হা-হা ক'রে, নাহি চিন্তা নাহিক' বিষাদ!
সত্য দেশভক্তি যাহা, এ তাহার নহে পরিচয় ;
দেশভক্তি ত্যাগে, ধর্মে, কর্মে, প্রেমে,--- বচনেতে নয়।
বাক্যভারে ভারাক্রান্ত, অবসন্ন হয়ে গেছে প্রাণ,
কর্মক্ষেত্রে শক্তি, স্ফূর্তি, অন্তর্যামী! কর মোরে দান।
অকপটে তব পদে এই ভিক্ষা চাহি পরমেশ!
সত্য সত্য বুঝি যেন মাতৃরূপা আমার স্বদেশ!
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
দেশ ভক্তি
কবি যোগীন্দ্রনাথ বসু (১৮৬৫ - ১৯২৭)। অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়
সম্পাদিত “বাংলা গীতিকবিতা উনিশ শতক”, ১৯৯৬, থেকে নেওয়া।
সুধাও ধর্ম্মের কথা দিবস রঞ্জনী
সাক্ষী দিয়া ঈশ্বরের কথায় কথায় :
বক্তৃতা শুনিয়ে শুধু স্তম্ভিত অবনী,
আহা ! আহা ! বলি তব চরাণে লুটায়
ধরণীর সুখ দুঃখ অবহেলা করি,
আঁকিছ স্বর্গের ছবি নাসিকা কুঞ্চিয়া
নিমেষে নিশ্বাস ফেলি ভগবান স্মরি
মানবের শত পাপ দাও দেখাইয়া !
ওহে সাধু ! আমি জানি, অন্তর তোমার
ক্ষুধিত তৃষিত সদা যশ লালসায় :
ধরণীর করতালি উৎসাহ অপার
গুঞ্জরে শ্রবণে শত মধূপের প্রায়।
এস এস কাছে লয়ে মানবের প্রাণ
কাজ কি এ মিথ্যাভরা দেবতার ভাণ।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
ধার্ম্মিক
কবি চিত্তরঞ্জন দাশ (৫.১১.১৮৭০ - ১৬.৬.১৯২৫)
১৯১২ সালে প্রকাশিত, কবির মালঞ্চ কাব্যগ্রন্থের কবিতা।
তুমি উচ্চ হ'তে উচ্চ, ধার্ম্মিকপ্রবর।
তুচ্ছ করি অতি তুচ্ছ আমাদের প্রাণ,
ওগো! কোন্ শূন্য হ’তে আনিয়া ঈশ্বর,
জীবন তাহারি কর আরতির গান?
ভ্রাতার ক্রন্দন শুনি চেয়োনা ফিরিয়া,
ধরণীর দুঃখ দৈন্য আছে যাহা থাক্ :
ঊর্দ্ধমুখে পূজা কর দেবতা গড়িয়া,
প্রাণপুষ্প অযতনে শুকাইয়া যাক্ !
রক্তহীন রিক্ত হস্ত কঙ্কাল জীবন,
সব রক্ত করে পান ঈশ্বর তোমার!
রুদ্ধ করি নিরুপায় জীবন মরণ
চরণে দলিয়া করে মহা অত্যাচার!
কোন্ মুখে কার তরে কর অহঙ্কার?
মুছে ফেল আঁখি হ'তে মোহ-অন্ধকার।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
অহঙ্কার
কবি চিত্তরঞ্জন দাশ (৫.১১.১৮৭০ - ১৬.৬.১৯২৫)
১৯১২ সালে প্রকাশিত, কবির মালঞ্চ কাব্যগ্রন্থের কবিতা।
বিদায় লয়ে এবে যেতেছি চলিয়া তাই কর্ম ক্ষেত্রে শিশু মোরা, ক্ষম যত দোষ তাই। কত যে রহিল আশা না পূরিল কর্ম তৃষা, হৃদয় লুকায়ে জ্বালা কারাবাসে চলে যাই। ভারতের ছবি আঁকি হৃদয়ে মাঝারে রাখি কারাগারে দীপান্তরে পূজিব যেথায় যাই। ভারত উদ্ধার ব্রতে, না ভুলিব দীক্ষা দিতে বনের বিহগে ধরি যদি না মানুষ পাই। বিধি যদি আসে নিজে বাধা দিতে হেন কাজে, নির্ভয়ে বলিব তারে হেন বিধি নাহি চাই।
|
বিপ্লবী কবি হেমচন্দ্র দাস কানুনগো
|
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
বিদায় লয়ে এবে যেতেছি চলিয়া তাই
বিপ্লবী কবি হেমচন্দ্র দাস কানুনগো (১২.৬.১৮৭১ - ৮.৪.১৯৫১)
১৯৫২ সালে প্রকাশিত, বিনয় জীবন ঘোষের “অগ্নিযুগের অস্ত্রগুরু হেমচন্দ্র” গ্রন্থের শেষে গানটি হেমচন্দ্রেরই রচিত বলে দেওয়া
রয়েছে, যা তিনি জাহাজ ঘাটায়ে যাবার পথে কয়েদী-গাড়িতে যেতে যেতে গেয়েছিলেন। এই গানটি, পরবর্তীতে বরিশাল যড়যন্ত্র
মামলায় দীপান্তরের সাজাপ্রাপ্ত বিপ্লবী মদন মোহন ভৌমিকও তাঁর “আন্দামানে দশ বছর” গ্রন্থে আংশিক উল্লেখ করেছেন,
কবির নাম ছাড়া। বিপ্লবী যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায় তাঁর ১৯৫৬ (১৩৬৩) সালে প্রকাশিত, “বিপ্লবী জীবনের স্মৃতি” গ্রন্থের ৩৪৪-
পৃষ্ঠায় এই কবিতার দুটি পংক্তি উদ্ধৃত করে লিখেছেন --- “শোনা যায় হেমচন্দ্র কানুনগো নাকি এই পদ্যের রচয়িতা”। তাই
আমরা এই গানটি, অগ্নিযুগের অস্ত্রগুরু বিপ্লবী কবি হেমচন্দ্র দাস কানুনগোর রচনা হিসেবেই এখানে তুলে ধন্য হলাম।
ভারতের নাম কি, যাচি দুটি কর ধরি, প্রাণ পণে সাধ সবে যাহা মোরা পারি নাই। স্বাধীনতা তৃষাণল জ্বলেছে এবে কেবল প্রজ্বলিত কর তারে স্বার্থাহুতি দিয়ে তায়। এ অনল নিভাইতে, পারে শুধু, এ জাগাতে মৃত্যু কিম্বা স্বাধীনতা, জেন অন্য কিছু নাই॥
|
পাপ-পুণ্যের বিধাতা ভগবান, কর্মফল, পরকাল আর পরকালে
কর্ম্মফল-ভোক্তা আত্মা, এই কটি জিনিষ, যা দিয়ে শুধু ভক্তদের জন্যই
ধর্ম তয়ের হয়েছে, ধর্ম্মের ধ্বজাধারী নেতার তা যে বিশ্বাম করেন না,
তার প্রমাণ, ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য জাতীয় স্বার্থের হানি করবার
বেলায় ধর্ম্ম, ভগবান, তুরীয়ানন্দ, ভগবানের আদেশ, তাঁর আদর্শ অথবা
নিজের বিবেকাদির কোনটাই গ্রাহ্যের মধ্যে আনেন নি। তাঁদের কেবল
একমাত্র গ্রাহ্যের বিষয় হয়েছিল---লোকনিন্দার ভয়। লোকের চক্ষু
এড়াবার আপাত, সম্ভাবনা থাকলে ও দেশ-উদ্ধারকারীদের অনেকে না
পারেন, এমন দুষ্কর্ম্ম কিছুই নাই। টাকা-কড়ির অপব্যবহার, অপব্যয়,
চুরী, জুয়াচুরী, এ সব ত অতি সামান্য কথা ; এ সব হয় ত তাঁরা
গ্রাহ্য করেন না। এর চেয়ে যা না কি শতগুণে সমাজের অনিষ্টকর,
বিপ্লবী কবি হেমচন্দ্র দাস কানুনগো
|
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
পাপ-পুণ্যের বিধাতা ভগবান
বিপ্লবী হেমচন্দ্র কানুনগো (১২.৬.১৮৭১ - ৮.৪.১৯৫১)
ইনিই নাকি কবি পীতাম্বর দাস রচিত “একবার বিদায় দে মা” গানে “অভিরামের দ্বীপ চালনা” বলে উল্লিখিত হয়েছিলেন।
২১.৮.১৯০৭ তারিখে জার্মানীর স্টুটগার্টে, আন্তর্জাতিক সোসিয়ালিস্ট কনফারেন্সে ম্যাডাম ভিখাজী কামা ভারতের যে পতাকাটি
উত্তোলন করেছিলেন, সেটি ছিল শিল্পী হেমচন্দ্র কানুনগোর আঁকা।
আমরা এখানে তাঁর রচিত গ্রন্থ “আমার কারা-জীবনী”-র ১৯পরিচ্ছেদ থেকে একটি অংশ তুলে ধরলাম তাঁর কবিতা হিসেবে।
সর্বোপরি এই পাতার ব্যাকগ্রাউণ্ড চিত্রটিতে যে অলিন্দের ছবি দেখা যাচ্ছে, হেমচন্দ্র কানুনগো সেই অলিন্দ-সংলগ্ন কোনো
কালকুঠরীতে জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়ে এসেছিলেন, যাতে আমরা স্বাধীন দেশে জন্মগ্রহণ করতে পারি। তাই তাঁদের মতো
মানুষের কলমের ছোঁয়াই আমাদের কাছে কবিতা !
সেই ভাবের ঘরে চুরী, জুয়াচুরী করছেন, ধরাও পড়ছেন। ভক্তির
পণ। হাড়-মাঁস-রক্তই হোক বা কাঠ-পাথর-রাংতাই হোক, সাকার
না হ'লে আমাদের ভক্তি উথলোয় না। নিরাকার ভাব বা আদর্শ
না কি আমাদের আধ্যাত্মিক বুদ্ধির সঙ্গে খাপ খায় না। কাযেই
ভাবের ঘরে চুরী-চামারী হ'লে আমাদের একটুও বাধে না। ভাবের
বিপর্য্যয় ঘটলেও সেই ভাবাধার শরীর, বিশেষ করে আমাদের ভক্তির
কেন্দ্রস্থল শ্রীচরণখানির কোন পরিবর্তনই দেখতে পাই না। তাই
নেতারা যা-ই করুন, তাঁদের প্রতি আমাদের ভক্তি অটুট থাকে।
তাঁদের পূজা ক্রমবর্দ্ধনশীল হয়। এ রকম সিকিউরিটী আছে বলেই
ত নেতারা এত বেপরোয়া, এত বিবেকহীন।
॥ প্রসাদী সুর - একতালা॥
নিক না মোদের জেলে ধরে।
বিনে অপরাধে অবিচারে॥
মাতৃমন্ত্রে নিয়ে দীক্ষা, পেয়েছি যে নূতন শিক্ষা,
মা’র চরণ পেয়ে ভিক্ষা, ঘরের ছেলে ফির্ব ঘরে।
ভারতের জয় বলে মুখে, জেল খাটনী খাটব সুখে ;
মা'র মূরতি রেখে বুকে, কাজ করিব হাতের জোরে॥
জীবে জীবে ভগবান, সর্ব্বভূতে অধিষ্ঠান,
ওরে, মা মোদের সর্ব্বপ্রধান, বলব ইহা যারে তারে॥
মার জিনিস পরে নেবে, কোন্ ছেলে সহিতে পারে?
ছোট হয়ে আছি মোরা, সে দুঃখ আর বলব কারে।
সচেতন হও ভাই সকল, বলে পথিক সকাতরে,
ওরে, সুখ-দুঃখ সমান করি ঝাঁপ দিও কর্মসাগরে।
প্রতিবাদী কবিতার দেয়ালিকার এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
নিক না মোদের জেলে ধরে
কবি সরোজিনী দেবী (১৮৭১ - ১৯৬০)
আমরা গানটি পেয়েছি দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত,
গীতা চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত “বাংলা স্বদেশী গান” সংকলন থেকে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|