*
ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
www.milansagar.com
ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্র—রচনাবলী
প্রথম খন্ড
( ১২৫ তম রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তী  উপলক্ষে প্রকাশিত সুলভ সংস্করণ শ্রাবণ ১৩৯৩ : ১৯০৮ শক )
প্রকাশক বিশ্বভারতী
জীবনস্মৃতি
ভানুসিংহের কবিতা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

.    
পূর্বেই লিখিয়াছি, শ্রীযুক্ত অক্ষয়চন্দ্র সরকার ও সারদাচরণ মিত্র মহাশয় কতৃক সংকলিত প্রাচীন
কাব্যসংগ্রহ আমি বিশেষ আগ্রহের সহিত পড়িতাম | তাহার মৈথিলীমিশ্রিত ভাষা আমার পক্ষে দুর্বোধ
ছিল | কিন্তু সেইজন্যই এত অধ্যাবসায়ের সঙ্গে আমি তাহার মধ্যে প্রবেশচেষ্টা করিয়াছিলাম | গাছের
বীজের মধ্যে যে-অঙ্কুর প্রচ্ছন্ন ও মাটির নীচে যে-রহস্য অনাবিষ্কৃত, তাহার প্রতি যেমন একটি একান্ত
কৌতূহল বোধ করিতাম, প্রাচীন পদকর্তাদের রচনা সম্বন্ধেও আমার ঠিক সেই ভাবটা ছিল | আবরণ
মোচন করিতে করিতে একটি অপরিচিত ভান্ডার হইতে একটি-আধটি কাব্যরত্ন চোখে পড়িতে থাকিবে,
এই আশাতেই আমাকে উত্সাহিত করিয়া তুলিয়াছিল | এই রহস্যের মধ্যে তলাইয়া দুর্গম অন্ধকার হইতে
রত্ন তুলিয়া আনিবার চেষ্টায় যখন আছি তখন নিজেকেও একবার এইরূপ রহস্য-আবরণে আবৃত করিয়া
প্রকাশ করিবার একটা ইচ্ছা আমাকে পাইয়া বসিয়াছিল |

.   ইতিপূর্বে অক্ষয়বাবুর কাছে ইংরাজ বালককবি চ্যাটার্টনের বিবরণ শুনিয়াছিলাম | তাঁহার কাব্য যে
কিরূপ তাহা জানিতাম না ; বোধ করি অক্ষয়বাবুও বিশেষ কিছু জানিতেন না,  এবং জানিলে বোধ হয়
রসভঙ্গ হইবার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা ছিল | কিন্তু তাঁহার গল্পটার মধ্যে যে একটা নাটকিয়ানা ছিল সে আমার
কল্পনাকে খুব সরগরম করিয়া তুলিয়াছিল | চ্যাটার্টন প্রাচীন কবিদের এমন নকল করিয়া কবিতা
লিখিয়াছিলেন যে অনেকেই তাহা ধরিতে পারে নাই | অবশেষে ষোলোবছর বয়সে এই হতভাগ্য বালক-
কবি আত্মহত্যা করিয়া মরিয়াছিলেন | আপাতত ওই আত্মহত্যার অনাবশ্যক অংশটুকু হাতে রাখিয়া,
কোমর বাঁধিয়া দ্বিতীয় চ্যাটার্টন হইবার চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইলাম |

.   একদিন মধ্যাহ্নে খুব মেঘ করিয়াছে | সেই মেঘলাদিনের ছায়াঘন অবকাশের আনন্দে বাড়ির
এক ঘরে খাটের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া একটা স্লেট লইয়া লিখিলাম ‘গহন কুসুমকুঞ্জ-মাঝে’ | লিখিয়া
ভারি খুশি হইলাম ; তখনই এমন লোককে পড়িয়া শুনাইলাম বুঝিতে পারিবার আশঙ্কামাত্র যাহাকে স্পর্শ
করিতে পারে না | সুতরাং সে গম্ভীরভাবে মাথা নাড়িয়া কহিল, “বেশ তো, এ তো বেশ হইয়াছে |”

.   পূর্বলিখিত আমার বন্ধুটিকে একদিন বলিলাম, “সমাজের লাইব্রেরি খুঁজিতে খুঁজিতে বহুকালের একটি
জীর্ণ পুঁথি পাওয়া গিয়াছে, তাহা হইতে ভানুসিংহ-নামক কোনো প্রাচীন কবিরপদ কাপি করিয়া
আনিয়াছি |” এই বলিয়া তাঁহাকে কবিতাগুলি শুনাইলাম | শুনিয়া তিনি বিষম বিচলিত হইয়া উঠিলেন |
কহিলেন, “এ পুঁথি আমার নিতান্তই চাই | এমন কবিতা বিদ্যাপতি-চন্ডীদাসের হাত দিয়াও বাহির হইতে
পারিত না | আমি প্রাচীন কাব্যসংগ্রহ ছাপিবার জন্য ইহা অক্ষয়বাবুকে দিব |”

.   তখন আমার খাতা দেখাইয়া স্পষ্ট প্রমাণ করিয়া দিলাম, এ লেখা বিদ্যাপতি-চন্ডীদাসের হাত দিয়া
নিশ্চয় বাহির হইতে পারে না, কারণ এ আমার লেখা | বন্ধু গম্ভীর হইয়া কহিলেন, “নিতান্ত মন্দ হয়
নাই |”

.  ভানুসিংহ যখন ভারতীতে বাহির হইতেছিল ডাক্তার নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায় মহাশয় তখন জর্মনিতে
ছিলেন | তিনি য়ুরোপীয় সাহিত্যের সহিত তুলনা করিয়া আমাদের দেশের গীতিকাব্য সম্বন্ধে একখানি চটি-
বই লিখিয়াছিলেন | তাহাতে ভানুসিংহকে তিনি প্রাচীন পদকর্তারূপে যে প্রচুর সম্মান দিয়াছিলেন কোনো
আধুনিক কবির ভাগ্যে তাহা সহজে জোটে না | এই গ্রন্থখানি লিখিয়া তিনি ডাক্তার উপাধি লাভ
করিয়াছিলেন |

.   ভানুসিংহ যিনিই হউন, তাঁহার লেখা যদি বর্তমান আমার হাতে পড়িত তবে আমি নিশ্চয়ই ঠকিতাম
না, এ কথা আমি জোর করিয়া বলিতে পারি | উহার ভাষা প্রাচীন পদকর্তার বলিয়া চালাইয়া দেওয়া
অসম্ভব ছিল না | কারণ, এ ভাষা মাতৃভাষা নহে, ইহা একটা কৃত্রিম ভাষা ;  ভিন্ন ভিন্ন কবির হাতে ইহার
কিছু না কিছু ভিন্নতা ঘটিয়াছে | কিন্তু তাঁহাদের ভাবের মধ্যে কৃত্রিমতা ছিল না | ভানুসিংহের কবিতা
একটু বাজাইয়া বা কষিয়া দেখিলেই তাহার মেকি বাহির হইয়া পড়ে | তাহাতে আমাদের দিশি নহবতের
প্রাণগলানো ঢালা সুর নাই, তাহা আজকালকার সস্তা আর্গিনের বিলাতি টুংটাংমাত্র |

.                                     ******************************************      


.                                                              
ভানুসিংহের পদাবলীর সূচির পাতায় . . .    


মিলনসাগর
*
স্বরবিতান –২১
ভানুসিংহের পদাবলী
ফাল্গুন ১৩৭৯, পৃষ্ঠা ৩৯
[ মিলনসাগরে, ভানুসিংহের পদাবলীর স্বরলিপি এখানে প্রকাশ করা নেই। ]

‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’ রচনার কৌতুকদীপ্ত কাহিনী ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থের ‘ভানুসিংহের কবিতা’
অধ্যায়ে কবি বর্ণনা করিয়াছেন | এই কাব্যগ্রন্থের প্রথম প্রকাশকালে উহাতে ২১টি পদ ছিল ; উত্তরকালে
আর-একটি ভানুসিংহের পদ ১২৯২ সালের প্রচার মাসিক পত্রে ও পরে ‘কড়ি ও কোমল’
কাব্যে প্রকাশিত হয় | ১২৯১ সালে ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’ প্রথম প্রকাশিত হইলেও, উহার
কবিতাগুলি পুরাতন লেখা ; ভারতী মাসিক পত্রে ১২৮৪ হইতে ১২৮৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সংখ্যায় ১৩টি
রচনা প্রকাশিত হইতে দেখা য়ায়--  ‘শাঙ্নগগনে ঘোর ঘনঘটা’ পদটি ১২৮৪ আশ্বিন-সংখ্যায় মুদ্রিত হয় |
প্রত্যেকটি রচনার সুর ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’ তে প্রথমাবধি উল্লিখিত থাকিলেও, অনেকগুলি
গানের সুর হারাইয়া গিয়াছে মনে হয় |  পূর্বে যেগুলির স্বরলিপি প্রকাশিত ছিল এবং ইন্দিরাদেবী
যেগুলির সুর স্মৃতি হইতে উদ্ধার করিয়া স্বরলিপি করিয়া দিয়াছেন তাহাই এই গ্রন্থে প্রকাশিত ( আশ্বিন
১৩৫৮ ) হয় |

.      কাব্যগ্রন্থের পাঠের সহিত গানের তথা স্বরলিপির পাঠ সর্বদা মেলে না | বিস্তারিত পাঠভেদ
‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’ ( পাঠভেদ-সংবলিত সংস্করণ  আশ্বিন ১৩৭৬ ) গ্রন্থে দ্রষ্টব্য |

.     স্বরবিতান একবিংশ খন্ড ( ভানুসিংহের পদাবলী ) প্রকাশিত হয় আশ্বিন ১৩৫৮ সালে | সম্পাদনার
দায়িত্ব বহন করেন ইন্দিরাদেবী চৌধুরানী | এই গ্রন্থে দশটি গানের স্বরলিপি সংকলিত | ইহার মধ্যে নয়টি
গান ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’ র অন্তর্গত ; সর্বশেষ গানটি ( সুন্দরী রাধে আওয়ে বনি ) বৈষ্ণব কবি
গোবিন্দদাসের পদ, সুর রবীন্দ্রনাথের দেওয়া |  রবীন্দ্রনাথ আর একটি বৈষ্ণব পদে (বিদ্যা-
পতি-রচিত এ ভরা ভাদর মাহ ভাদর ) সুর দিয়াছিলেন, তাহার স্বরলিপি ‘কেতকী’ বা একাদশ খন্ড
‘স্ববিতান’-এ মুদ্রিত আছে |

.    বর্তমান গ্রন্থের দশটি গানের মধ্যে ১ ও ৩ সংখ্যক গানের স্বরলিপি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর কতৃক
‘সংকলিত ও ব্যাখ্যাত’ ‘স্বরলিপি-গীতি-মালা’ গ্রন্থে ( ১৩০৪ ) এবং ১, ২ ও ৫ সংখ্যক গানের স্বরলিপি
সরলাদেবী -কতৃক সংকলিত ও সম্পাদিত ‘শতগান’ গ্রন্থে  (১৩১৭ ) প্রকাশিত হইয়াছিল | ৪, ৬, ৮, ৯, ১০-
সংখ্যক গানগুলির স্বরলিপি করিয়াছেন ইন্দিরাদেবী চৌধুরানী | ৭-সংখ্যক গানের স্বরলিপি দিনেন্দ্রনাথ
ঠাকুর –কৃত ; ইহা পূর্বে ‘কেতকী’ ( স্বরবিতান | একাদশ খন্ড ) গ্রন্থে প্রকাশিত হইয়া
থাকিলেও, ভানুসিংহ ঠাকুরের পদগুলির স্বরলিপি একত্র সংকলনের উদ্দেশ্যে, এই গ্রন্থেও মুদ্রিত হইয়াছে |

এই গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত গানের সুরভেদ, ছন্দোভেদ ও প্রকাশকাল সম্পর্কে এ যাবৎ সংগৃহীত তথ্য বর্তমান
সংস্করণে সন্নিবিষ্ট হইল | উল্লিখিত তথ্যাদি সংগ্রহ ও সংকলন করিয়াছেন শ্রী প্রফুল্লকুমার দাস |

ফাল্গুন ১৩৭৯, ৩৯ নং পাতা

.                                     ******************************************      


.                                                              
ভানুসিংহের পদাবলীর সূচির পাতায় . . .    


মিলনসাগর
ছবি সৌজন্যে www.merepix.com
ছবিটি এই পাতার সামঞ্জস্যপূর্ণ করে
উপস্থাপন করা হয়েছে।