|
পরিত্যক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বন্ধু, মনে আছে সেই প্রথম বয়স, নূতন বঙ্গভাষা তোমাদের মুখে জীবন লভিছে বহিয়া নূতন আশা | নিমেষে নিমেষে আলোকরশ্মি অধিক জাগিয়া উঠে, বঙ্গহৃদয় উন্মীলি যেন রক্তকমল ফুটে | প্রতিদিন যেন, পূর্বগগনে চাহি রহিতাম একা, কখন ফুটিবে তোমাদের ওই, লেখনী-অরুণ-লেখা | তোমাদের ওই প্রভাত-আলোক প্রাচীন তিমির নাশি নবজ্রাগত নয়নে আনিবে নূতন জগৎরাশি | একদা জাগিনু, সহসা দেখিনু প্রাণমন আপনার---- হৃদয়ের মাঝে জীবন জাগিছে পরশ লভিনু তার | ধন্য হইল মানবজনম, ধন্য তরুণ প্রাণ ----- মহৎ আশায় বাড়িল হৃদয়, জাগিল হর্ষগান | দাঁড়ায়ে বিশাল ধরণীর তলে ঘুচে গেল ভয়লাজ , বুঝিতে পারিনু এ জগৎমাঝে আমারও রয়েছে কাজ | স্বদেশের কাছে দাঁড়ায়ে প্রভাতে কহিলাম জোরকরে, ‘এই লহো, মাতঃ , এ চিরজীবন সঁপিনু তোমারি তরে |’ বন্ধু, এ দীন হয়েছে বাহির তোমাদেরই কথা শুনে | সেইদিন হতে কন্টকপথে চলিয়াছি দিন গুণে | পদে পদে জাগে নিন্দা ও ঘৃণা ক্ষুদ্র অত্যাচার, একে এরে সব পর হয়ে যায় ছিল যারা আপনারা | ধ্রুবতারা-পানে রাখিয়া নয়ন চলিয়াছি পথ ধরি, সত্য বলিয়া জানিয়াছি যাহা তাহাই পালন করি | কোথা গেল সেই প্রভাতের গান , কোথা গেল সেই আশা ! আজিকে, বন্ধু, তোমাদের মুখে এ কেমনতর ভাষা ! আজি বলিতেছি, ‘বসে থাকো, বাপু, ছিল যাহা তাই ভালো | যা হবার তাহা আপনি হইবে, কাজ কি এতই আলো !’ কলম মুছিয়া তুলিয়া রেখেছ, বন্ধ করেছ গান, সহসা সবাই প্রাচীন হয়েছ নিতান্ত সাবধান | আনন্দে যারা চলিতে চাহিছে ছিঁড়ি অসত্যপাশ, ঘর হতে বসি করিছ তাদের উপহাস পরিহাস | এত দূরে এনে ফিরিয়া দাঁড়ায়ে হাসিছ নিঠুর হাসি, চিরজীবনের প্রিয়তম ব্রত চাহিছ ফেলিতে নাশি | তোমরা আনিয়া প্রাণের প্রবাহ ভেঙেছ মাটির আল, তোমরা আবার আনিছ বঙ্গে উজান স্রোতের কাল | নিজের জীবন মিশায়ে যাহারে আপনি তুলেছ গড়ি হাসিয়া হাসিয়া আজিকে তাহারে ভাঙিছ কেমন করি ! তবে সেই ভালো, কাজ নেই তবে, তবে ফিরে যাওয়া যাক---- গৃহকোণে এই জীবন-আবেগ করি বসে পরিপাক ! সানাই বাজিয়ে ঘরে নিয়ে আসি আট বরষের বধূ, শৈশবকুঁড়ি ছিঁড়িয়া বাহির করি যৌবনমধু ! ফুটন্ত নবজীবনের ‘পরে চাপায়ে শাস্ত্রভার জীর্ণ যুগের ধূলিসাথে তারে করে দিই একাকার ! বন্ধু , এ তব বিফল চেষ্টা, আর কি ফিরিতে পারি ? শিখরগুহায় আর ফিরে যায় নদীর প্রবল বারি ? জীবনের স্বাদ পেয়েছি যখন, চলেছি যখন কাজে, কেমনে আবার করিব প্রবেশ মৃত বরফের মাঝে ? সে নবীন আশা নাইকো যদিও তবু যাব এই পথে, পাব না শুনিতে আশিস্–বচন তোমাদের মুখ হতে | তোমাদের ওই হৃদয় হইতে নূতন পরান আনি প্রতি পলে পলে আসিবে না আর সেই আশ্বাসবাণী | শত হৃদয়ের উত্সাহ মিলি টানিয়া লবে না মোরে, আপনার বলে চলিতে হইবে আপনার পথ ক’রে | আকাশে চাহিব, হায়, কোথা সেই পুরাতন শুকতরা ! তোমাদের মুখ ভ্রূকুটিকুটিল , নয়ন আলোকহারা | মাঝে মাঝে শুধু শুনিতে পাইব হা- হা- হা অট্টহাসি, শ্রান্ত হৃদয়ে আঘাত করিবে নিঠুর বচন আসি | ভয় নাই যার কী করিবে তার এই প্রতিকূল স্রোতে ! তোমারি শিক্ষা করিবে রক্ষা তোমারি বাক্য হতে | ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৮৮৮ . *************************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
নববঙ্গদম্পতির প্রেমালাপ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাসরশয়নে বর | জীবনে জীবন প্রথম মিলন, সে সুখের কোথা তুলা নাই | এসো, সব ভুলে আজি আঁখি তুলে শুধু দুঁহু দোঁহা মুখ চাই | মরমে মরমে শরমে ভরমে জোড়া লাগিয়াছে এক ঠাঁই | যেন এক মোহে ভুলে আছি দোঁহে, যেন এক ফুলে মধু খাই | জনম অবধি বিরহে দগধি এ পরান হয়ে ছিল ছাই---- তোমার অপার প্রেমপারাবার, জুড়াইতে আমি এনু তাই | বলো একবার, ‘আমিও তোমার, তোমা ছাড়া কারে নাহি চাই |’ ওঠ কেন, ওকি, কোথা যাও সখী ? সরোদনে কনে | আইমার কাছে শুতে যাই ! দু-দিন পরে বর | কেন, সখী , কোণে কাঁদিছ বসিয়া চোখে কেন জল পড়ে ? ঊষা কি তাহার শুকতারা- হারা, তাই কি শিশির ঝরে ? বসন্ত কি নাই বনলক্ষ্মী তাই কাঁদিছে আকুল স্বরে ? উদাসিনী , স্মৃতি কাঁদিছে কি বসি আশার সমাধি—‘পরে ? খ’সে-পড়া তারা করিছে কি শোক নীল আকাশের তরে ? কী লাগি কাঁদিছ ? কনে | পুষি মেনিটিরে ফেলিয়া এসেছি ঘরে | অন্দরের বাগানে বর | কী করিছ বনে শ্যামল শয়নে আলো করে বসে তরুমূল ? কোমল কপোলে যেন নানা ছলে উড়ে এসে পড়ে এলোচুল | পদতল দিয়া কাঁদিয়া কাঁদিয়া বহে যায় নদী কুলুকুল্ | সারা দিনমান শুনি সেই গান তাই বুঝি আঁখি ঢুলঢুল্ | আঁচল ভরিয়া মরমে মরিয়া পড়ে আছে বুঝি ঝুরো ফুল ? বুঝি মুখ কার মনে পড়ে, আর মালা গাঁথিবারে হয় ভুল ? কার কথা বলি বায়ু পড়ে ঢলি, কানে দুলাইয়া যায় দুল ? গুন্ গুন্ ছলে কার নাম বলে চঞ্চল যত অলিকুল ? কানন নিরালা, আঁখি হাসি-ঢালা, মন সুখস্মৃতি-সমাকুল--- কী করিছ বনে কুঞ্জভবনে ? কনে | খেতেছি বসিয়া টোপাকুল | বর | আসিয়াছি কাছে মনে যাহা আছে বলিবারে চাহি সমুদয় | আপনার ভার বহিবারে আর পারে না ব্যাকুল এ হৃদয় | আজি মোর মন কী জানি কেমন বসন্ত আজি মধুময়, আজি প্রাণ খুলে মালতীমুকুলে বায়ু করে যায় অনুনয় | যেন আঁখি দুটি মোর পানে ফুটি আশা-ভরা দুটি কথা কয়, ও হৃদয় টুটে যেন প্রেম উঠে নিয়ে আধো-লাজ আধো-ভয় | তোমার লাগিয়া পরান জাগিয়া দিবসরজনী সারা হয়, কোন্ কাজে তব দিবে তারে সব তারি লাগি যেন চেয়ে রয় | জগৎ ছানিয়া কী দিব আনিয়া জীবন যৌবন করি ক্ষয় ? তোমা তরে, সখী, বলো করিব কী ? কনে | আরে কুল পাড়ো গোটা ছয় | বর | তবে যাই সখী , নিরাশাকাতর শূন্য জীবন নিয়ে | আমি চলে গেলে এক ফোঁটা জল পড়িবে কি আঁখি দিয়ে ? বসন্তবায়ু মায়ানিশ্বাসে বিরহ জ্বালাবে হিয়ে ? ঘুমন্তপ্রায় আকাঙ্ক্ষা যত পরানে উঠিবে জিয়ে ? বিষাদিনী বসি বিজন বিপিনে কী করিবে তুমি প্রিয়ে ? বিরহের বেলা কেমনে কাটিবে ? কনে | দেব পুতুলের বিয়ে | গাজিপুর ২৩ আষাঢ় ১৮৮৮ . *************************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
প্রকাশবেদনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আপন প্রাণের গোপন বাসনা টুটিয়া দেখাতে চাহি রে--- হৃদয়বেদনা হৃদয়েই থাকে, ভাষা থেকে যায় বাহিরে | শুধু কথার উপরে কথা, নিষ্ফল ব্যাকুলতা | বুঝিতে বোঝাতে দিন চলে যায়, ব্যথা থেকে যায় ব্যথা | মর্মবেদন আপন আবেগে স্বর হয়ে কেন ফোটে না ? দীর্ণ হৃদয় আপনি কেন রে বাঁশি হয়ে বেজে ওঠে না ? আমি চেয়ে থাকি শুধু মুখে ক্রন্দনহারা দুখে----- শিরায় শিরায় হাহাকার কেন ধ্বনিয়া উঠে না বুকে ? অরণ্য যথা চিরনিশিদিন শুধু মর্মর স্বনিছে, অনন্ত কালের বিজন বিরহ সিন্ধুমাঝারে ধ্বনিছে--- যদি ব্যাকুল ব্যথিত প্রাণ তেমনি গাহিত গান চিরজীবনের বাসনা তাহার হইত মূর্তিমান ! তীরের মতন পিপাসিত বেগে ক্রন্দনধ্বনি ছুটিয়া হৃদয় হইতে হৃদয়ে পশিত, মর্মে রহিত ফুটিয়া | আজ মিছে এ কথার মালা মিছে অশ্রু ঢালা ! কিছু নেই পোড়া ধরণীমাঝারে বোঝাতে মর্মজ্বালা ! সোলাপুর ৬ বৈশাখ ১৮৮৯ . *************************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
মায়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৃথা এ বিড়ম্বনা ! কিসের লাগিয়া এতই তিয়াস, কেন এত যন্ত্রণা ! ছায়ার মতন ভেসে চলে যায় দরশন পরশন----- এই যদি পাই এই ভুলে যাই, তৃপ্তি না মানে মন | কত বার আসে, কত বার ভাসে, মিশে যায় কত বার ---- পেলেও যেমন না পেলে তেমন শুধু থাকে হাহাকার | সন্ধ্যাপবনে কুঞ্জভবনে নির্জন নদীতীরে ছায়ার মতন হৃদয়বেদন ছায়ার লাগিয়া ফিরে | কত দেখাশোনা কত আনাগোনা চারি দিকে অবিরত, শুধু তারি মাঝে একটি কে আছে তারি তরে ব্যথা কত ! চিরদিন ধ’রে এমনি চলিছে, যুগ- যুগ গেছে চ’লে | মানবের মেলা করে গেছে খেলা এই ধরণীর কোলে ! এই ছায়া লাগি কত নিশি জাগি কাঁদায়েছে কাঁদিয়াছে ---- মহাসুখ মানি প্রিয়তনুখানি বাহুপাশে বাঁধিয়াছে ! নিশিদিন কত ভেবেছে সতত নিয়ে কার হাসিকথা ! কোথা তারা আজ--- সুখ দুখ লাজ, কোথা তাহাদের ব্যথা ? কোথা সেদিনের অতুলরূপসী হৃদয়প্রেয়সীচয় ? নিখিলের প্রাণে ছিল সে জাগিয়া , আজ সে স্বপনও নয় ! ছিল সে নয়নে অধরের কোণে জীবন মরণ কত----- বিকচ সরস তনুর পরশ কোমল প্রেমের মতো | এত সুখ দুখ তীব্র কামনা জাগরণ হাহুতাশ যে রূপজ্যোতিরে সদা ছিল ঘিরে কোথা তার ইতিহাস ? যমুনার ঢেউ সন্ধ্যারঙিন মেঘখানি ভালোবাসে----- এও চলে যায়, সেও চলে যায়, অদৃষ্ট বসে হাসে | রোজ্ ব্যাঙ্ক | খিরকি ১ জ্যৈষ্ঠ ১৮৮৯ . *************************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
বর্ষার দিনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায় ! এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে তপনহীন ঘন তমসায় | সে কথা শুনিবে না কেহ আর , নিভৃত নির্জন চারি ধার | দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখী, আকাশে জল ধরে অনিবার | জগতে কেহ যেন নাহি আর | সমাজ সংসার মিছে সব, মিছে এ জীবনের কলরব| কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব | আঁধারে মিশে গেছে আর সব | বলিতে বাজিবে না নিজ কানে, চমক লাগিবে না নিজ প্রাণে | সে কথা আঁখিনীরে মিশিয়া যাবে ধীরে এ ভরা বাদলের মাঝখানে | সে কথা মিশে যাবে দুটি প্রাণে | তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার নামাতে পারি যদি মনোভার ? শ্রাবণবরিষণে একদা গৃহকোণে দুকথা বলি যদি কাছে তার তাহাতে আসে যাবে কিবা কার ? আছে তো তার পরে বারো মাস, উঠিবে কত কথা কত হাস | আসিবে কত লোক কত-না দুখশোক, সে কথা কোন্ খানে পাবে নাশ | জগৎ চলে যাবে বারো মাস | ব্যাকুল বেগে আজি বহে যায়, বিজুলি থেকে থেকে চমকায় | যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে সে কথা আজি যেন বলা যায় এমন ঘনঘোর বরিষায় | রোজ্ ব্যাঙ্ক | খিরকি ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৮৮৯ . *************************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
মেঘের খেলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বপ্ন যদি হ’ত জাগরণ, সত্য যদি হ’ত কল্পনা, তবে এ ভালোবাসা হ’ত না হত-আশা কেবল কবিতার জল্পনা | মেঘের খেলা-সম হ’ত সব মধুর মায়াময় ছায়াময় | কেবল আনাগোনা, নীরবে জানাশোনা, জগতে কিছু আর কিছু নয় | কেবল মেলামেশা গগনে, সুনীল সাগরের পরপারে সুরের ছায়াগিরি তাহারে ঘিরি ঘিরি, শ্যামল ধরণীর ধারে ধারে | কখনো ধীরে ধীরে ভেসে যায়, কখনো মিশে যায় ভাঙিয়া ---- কখনো ঘননীল বিজুলি-ঝিলমিল, কখনো ঊষারাগে রাঙিয়া | যেমন প্রাণপণ বাসনা তেমনি বাধা তার সুকঠিন ---- সকলি লঘু হয়ে কোথায় যেত বয়ে, ছায়ার মতো হ’ত কায়াহীন | চাঁদের আলো হ’ত সুখহাস, অশ্রু শরতের বরষন | সাক্ষী করি বিধু মিলন হ’ত মৃদু কেবল প্রাণে প্রাণে পরশন | শান্তি পেত এই চিরতৃষা চিত্ত চঞ্চল সকাতর, প্রেমের থরে থরে বিরাম জাগিত রে --- দুখের ছায়া মাঝে রবিকর | রোজ্ ব্যাঙ্ক | খিরকি ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৮৮৯ . *************************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
ধ্যান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিত্য তোমার চিত্ত ভরিয়া স্মরণ করি, বিশ্ববিহীন বিজনে বসিয়া বরণ করি ; তুমি আছ মোর জীবন-মরণ হরণ করি | তোমার পাই নে কুল----- আপনা-মাঝারে আপনার প্রেম তাহারো পাই নে তুল | উদয়শিখরে সূর্যের মতো সমস্ত প্রাণ মম চাহিয়া রয়েছে নিমেষনিহত একটি নয়ন-সম--- অগাধ অপার উদাস দৃষ্টি, নাহিকো তাহার সীমা | তুমি যেন ওই আকাশ উদার, আমি যেন এই অসীম পাথার, আকুল করেছে মাঝখানে তার আনন্দপূর্ণিমা তুমি প্রশান্ত চিরনিশিদিন, আমি অশান্ত বিরামহীন চঞ্চল অনিবার--- যত দূর হেরি দিক্ দিগন্তে তুমি আমার একাকার | জোড়াসাঁকো ২৬ শ্রাবণ ১৮৮৯ . *************************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
পূর্বকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাণমন দিয়ে ভালোবাসিয়াছে এত দিন এত লোক, এত কবি এত গেঁথেছে প্রেমের শ্লোক, তবু তুমি ভবে চিরগৌরবে ছিলে না কি একেবারে হৃদয় সবার করি অধিকার ! তোমা ছাড়া কেহ কারে বুঝিতে পারি নে ভালো কি বাসিতে পারে ! গিয়েছে এসেছে কেঁদেছে হেসেছে ভালো তো বেসেছে তারা, আমি তত দিন কোথা ছিনু দলছাড়া ? ছিনু বুঝি বসে কোন্ এক পাশে পথপাদপের ছায়, সৃষ্টিকালের প্রত্যুষ হতে তোমারি প্রতীক্ষায় --- চেয়ে দেখি কত পথিক চলিয়া যায় | অনাদি বিরহবেদনা ভেদিয়া ফুটেছে প্রেমের সুখ যেমনি আজিকে দেখেছি তোমার মুখ | সে অসীম ব্যথা অসীম সুখের হৃদয়ে হৃদয়ে রহে, তাই তো আমার মিলনের মাঝে নয়নে সলিল বহে ! এ প্রেম আমার সুখ নহে, দুখ নহে | জোড়াসাঁকো ২ ভাদ্র ১৮৮৯ . *************************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
মানসী www.milansagar.com |