বলদেব পালিত এর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। www.milansagar.com
১।   নারীর প্রেম   
২।   
চুম্বন           
৩।   
বিচ্ছেদ  
৪।   
প্রিয়তমা শ্রীমতী-র প্রতি      
৫।   
য়োধর   
  
      
       
      
     
 
*
        নারীর প্রেম

একদিন অস্তগামী দিবাকর-করে,
            স্নানান্তে বসিয়া কোন সরসীর ধারে,
            দেখিলাম এক নারী, নম্রা কুচ-ভারে,
ভাঙ্গিল মৃণাল এক মৃণালিনী-করে ;
জলে তারে পুনরায় ডুবায়ে সাদরে,
            সোপানে বসিয়া ধনী, স্বেচ্ছা অনুসারে,
            লিখিল একটি কথা দেখায়ে আমারে,
"যাক প্রাণ তবু থাক প্রেম অন্তরে |"
সে লেখা পড়িয়া, তার রূপ-রত্নাকরে ;
            মগ্ন হয়ে, তারে আমি সঁপিলাম মন ;

কিন্তু কি আশ্চর্য্য ! তারি দুদিনের পরে,
            আমারে ত্যজিয়া বালা করিল গমন ;
            উভয় সমান জ্ঞান হইল তখন,
            নারীর পিরীতি আর বারির লিখন |

.                    ******************                              
উপরে
      চুম্বন

সুধাংশু বদনে! তব সুধাংশু বদন,
বহুদিন পরে আজি করি দরশন,
এ অধীন চকোরের মনে বড় আশা
অধর-অমিয়া-পানে মিটাবে পিয়াসা |
হেন সাধে প্রণয়িনী, কেন সাধি বাদ
"না না না না" বলে, মনে ঘটাও বিষাদ?
অম্বরেতে মুখ-শশী ঢাকিয়া কি কাজ?
নায়কে চুম্বন দিতে বল কিবা লাজ
বারেক বদন তুলে দেখ সরোবরে,
নলিনী চুম্বন দান করে মধুকরে ;
সমুখেতে দেখ ওই চন্দ্র-মল্লিকায়
কীটেরে কৃতার্থ করি অধর পীয়ায় ;
হৃদি-রাজ্যে প্রজাপতি, করি প্রজী, পতি,
চুম্ব-কর লয় দেয় সেঁওতী যুবতী |
এইরূপ দেখ যত রমণী, রমণ ;
চুম্বন-রসেতে মত্ত সবাকার মন |
প্রকৃতির যদি এই হইল নিয়ম,
তুমি আর কেন কর তার ব্যতিক্রম?

তা নয় লো ধনি, তব বুঝিয়াছি ভাব,
চতুড়া নবোঢ়াদের এমনি স্বভাব |
আগ্রহ বাড়াতে শুধু না না না কহে,
ফলে তাহা মনোগত অভিপ্রায় নহে |
গোলাবের কলি যথা এ সুখ-প্রভাতে,
যত্ন করি স্বীয় শোভা গুপ্ত রাখে পাতে ;
নিকটে আইলে পরে নায়ক-পবন,
মাথা নাড়ি, করে ধনী অনেক বারণ ;
কিন্তু সে চতুর কান্ত না হয়ে নিরাশ,
ছলে বলে পূর্ণ করে নিজ অভিলাষ ;
তাহার চুম্বনে কলি প্রীতি পেয়ে অতি
হৃদয় খুলিয়া গন্ধ দেয় হৃষ্ট-মতি ;
অধরেতে ধরে আরো গাঢ়তর রাগ,
রমণের মনে যাতে বাড়ে অনুরাগ |
তেমনি রমণি ! হেরি তোমার কৌশল,
সোহাগ বাড়াতে শুধু করিতেছ ছল ;
না না ধ্বনি ধনি, তব শুনিব না আর,
মানিব না কোন মতে নিষধ তোমার ;
তবে কেন সদয় হৃদয় রসবতি,
অধীনে চুম্বন দান কর না সম্প্রতি?

.           ******************                                      
উপরে
          বিচ্ছেদ

সাধের পিরীতে সই ঘটিল বিষাদ ;
            তীরেতে লাগিয়া হায় ! ডুবিল তরণী ;
গ্রাসিল আসিয়া রাহু পূর্ণিমার চাঁদ ;
            ঝড়েতে ফলন্ত তরু ভাঙিল, সজনি ;
যে শুকপাখীরে, পাতি প্রণয়ের ফাঁদ,
            প্রাণপণে ধরিলাম ক্লেশ তুচ্ছ গণি,
মাস পূর্ণ না হইতে, বিধি সাধি বাদ
            উড়াইয়া দিল তারে প্রবাসে অমনি !
সে বিনা আঁধার দেখি এ মহী-মণ্ডল,
            সে গেল চলিয়া, কেন গেল না জীবন?
মনোরথ সব মম হইল বিফল,
            বিফল হইল হায় ! এ নব যৌবন,
বৃথা কেন করি আর আশার সম্বল?
            আর কি পাইব সেই প্রাণাধিক ধন !

.                ******************                                 
উপরে
প্রিয়তমা শ্রীমতী-র প্রতি

বড় বড় কবি যারা,                    বীর-রস-ভক্ত তাঁরা,
সে রসে মজিতে ধনি পারে কি সবাই?
বহিতে গণ্ডীব-ভার,                  পার্থ বিনা সাধ্য কার?
আমি প্রেম-ফুলধনু কেবল নোয়াই |
মধুর পিরীতি রস---                   আমি ত ইহারি বশ,
অন্য রস কটু বলে স্পর্শিতে না চাই |
আশা করি ভালবাসা,               গাঁথিয়া কোমল ভাষা,
আদি-রসে ডুবাইয়া তোমারে যোগাই |
মূর্খ পণ্ডিতাভিমানী,                  কত জন আছে জানি,
এ রসের নাম শুনি বিরক্ত সদাই ;
তুষিতে তাদের মন,                    বৃথা মম আকিঞ্চন,
অন্ধজনে তব রূপ বুঝান বালাই |
তোমারে এ কাব্য-হার,                  দিই আমি উপহার
রত্নহার পরাবার সাধ্য মম নাই |
প্রেম-সূত্রে গাঁথা মালা,                তহ যোগ্য বটে, বালা,
তুমি নিলে মনোমত বাঞ্ছা-ফল পাই |
যদিও এ ফুলচয়,                            সমুদয় নব নয়,
রসপূর্ণ বটে কিনা তোমারে সুধাই?
তুমি যদি হৃষ্ট মনে                     ভাল বল সুলোচনে,
খল ছলগ্রাহিগণে আমি কি ভরাই?

.                                       ******************                                 
উপরে
    পয়োধর

অঞ্চলেতে ঢাকা প্রিয়ে, তব পয়োধর
মেঘাবৃত গিরি প্রায় ছিল শোভাকর ;
উপরেতে তরলিত মুকুতার হার
বিহার করিতেছিল বিদ্যুত-আকার |
এখন অম্বর মুক্ত করি মনঃসাধে,
অপূর্ব মোহন ঠাম নিরখি অবাধে ;
পীনোন্নত, সুকঠিন, রজতবরণ,
জিনিয়া ধবল-গিরি মনোজ্ঞ গঠন |
পুনঃ ভাবি ধরাধর বন্ধুর বিষম,
পয়োধর নধর, চিকণ, মনোরম |
তাই যুক্তি করি মনে, কাম-বায়ু ভরে,
উঠিছে তরঙ্গ তব বক্ষঃ-সরোবরে ;
অথবা মানস সরঃ করি পরিহার,
দিব্য দুই হংস আসি করিছে বিহার |
আবার মৃণাল তুল্য ভুজ বিলোকনে,
কুচ পদ্ম-কলি বলি ভ্রম হয় মনে ;
যৌবন-প্রভাতে কিবা নব বিকসিত !
চুচুক ভ্রমর তায় পতিত মোহিত |
কভু ভাবি, মুগ্ধ হয়ে তব কেশপাশে,
কাদম্বিনী-ভ্রমে বুঝি কদম্ব বিকাশে |
কভু রম্ভা-তরু সম ঊরু হেরি প্রাণ,
কচু নয়, মোচাদ্বয় করি অনুমান |
কভু ভাবি তব রূপ-ক্ষীরোদ-মন্থনে
ঐরাবত-কুম্ভ-যুগ উঠিছে গগনে |
কখন বা মনে মনে করি অনুভব,
ত্রিভূবন পরাভব করি মনোভব,
আপনি দুন্দুভি-যুগ অহঙ্কার করি,
রেখেছ উলটি তব বক্ষঃস্থলোপরি |
এইরূপ বিবিধ কল্পনা করি মনে,
অবশেষে এই স্থির করি, চন্দ্রাননে,

হৃদে তব মনোমত পাইয়া সদন,
সমাগত হয়েছেন আপনি মদন ;
তাই তাঁর পূজা হেতু ওখানে নিশ্চিত,
পূর্ণ-কুম্ভ পয়োধর হয়েছে স্থাপিত |
চন্দনে উহাতে লিখি মকর আকার,
চৌদিগ বেড়িয়া দিব কুসুমের হার ;
পল্লবস্বরূপ ধনি এ কর-পল্লবে,
রাখিব ঘটের মুখে কাম-মহোত্সবে |
সিন্দুরের বিনিময় নখক্ষত-ছটা
অপূর্ব শোভিবে, যেন প্রবালের ঘটা |

.           ******************                                      
উপরে