বর্ণা মজুমদারের কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
১।   অচেনা       
২।   
মা সারদা
৩।   সভ্যতার কলঙ্ক
৪।   সহস্রাব্দের অসি             
৫।   
জীবন
৬।   বিষন্ন গোধুলীবেলায়        
৭।   
একটি লক্ষ্যভ্রষ্ট তারা
৮।   সন্ত্রাস     
৯।   
থ্যালাসেমিয়া    
১০।  
সর্ব্বংসহা      


                 
              
                 
*
অচেনা

চেনা চেনা মুখগুলো সব অচেনা হয়ে যায়,
চিনতে পেরেও না চিনে পাশ কাটিয়ে যায়,
কিন্তু কেন ? এমন হলো আধুনিক সমাজ ?
অর্থই অনর্থ করে, সবারই মেজাজ?
অতীতের দিনগুলো সব সামনে ভেসে আসে,
ভীড়ের মাঝেও দেখতে পেলে একটুখানি হাসে।
সভ্য সমাজ, সভ্য মানুষ, কলকব্ জার সাথী,
সময়ের দাম দিয়ে দিয়ে জীবন হারায় গতি।
এমনি দিনের কথা ভেবে ক্লান্ত মনের তন্ত্রীগুলো ছেঁড়ে,
হায়, যেদিন গেছে সেদিন আবার আসবে না আর ফিরে।

********
মা সারদা

মা সারদা জগজ্জননী, শ্যামা সূতা স্বরূপিনী,
দশের সেবায় নিমজ্জিত, সেবাব্রতী তপস্যারূপিনী।
তুমি মোদের আপন করেছ, সবারে নিয়েছ নিজের করে।
ঠাকুরের ঘরনী তুমি, নরেনকে তুলেছ নিজের ক্রোড়ে।
তোমার সেবায় চোখ ফুটেছে, বিশ্ববাসী এ ধরার,
তোমার আলোর আলো পেয়ে শক্তি হয়েছে নিবেদিতার,
মনের কালিমা মুছিয়ে দিয়ে, দুহাত ভরে আশিষ দাও,
জীবনে যাহার আর কিছু নাই, তোমার চরণে তাহারে নাও।

********
সভ্যতার কলঙ্ক

নবযুগের সভ্য  সমাজ যত এগিয়ে যাই,
দুচোখ ভরে অসভ্যতার নমুনা দেখতে পাই।
এই তো সেদিন, হঠাত্ দেখি পথের মাঝে,
নাম না জানা, ঠিকানা বিহীন পথচারী এক,
হঠাত্ প্রবল বুকের ব্যথায়, মাথাঘুড়ে বেসামাল হয়ে,
বসল শেষে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়ীর গায়ে।
আমরা যত নিত্য রাহী দেখছি সবাই,
নিরুপায় হয়ে মুখ ঘুরিয়ে যাচ্ছি চলে,
ইচ্ছে হলেও এগিয়ে গিয়ে পরোপকার করতে নারি
এই ভয় - পড়ে যাই পুলিশ কবলে ?
হাসপাতালে নিতে গেলে পথেই যদি প্রাণ হারায় ?
পুলিশ তখন নাছোড়বান্দা সুযোগ বুঝে হাজার প্রশ্ন দাঁড় করায় ?
কোনটা সঠিক, কোনটা বেঠিক, বুঝতে গিয়ে সময় যায়,
এগিয়ে গেলে যদি নিজের কোনো বিপদ হয় ?
এই না ভেবে সটকে পড়ি, আকাশ পাতাল ভেবেই মরি,
অবশেষে মনে হোলো না ই বা হোলো পরোপকার,
পুলিশ বেঁচে গিয়ে হলেম না হয় পগার পার।
বুক ভরা দুঃখ নিয়ে ফিরছি যখন ঘরে, ভাবছি তখন মনে,
জন্মে সবাই হলাম বড় মা-জননীর অঙ্কে --
কিন্তু হায় ! বেঁচে থেকেও মরে আছি সভ্যতারই পঙ্কে।


********
সহস্রাব্দের অসি

(এই কবিতাটি "সীমানা" ম্যাগাজিনে ২০০০ সনে প্রকাশিত হয়। পরে এই
কবিতাটির জন্য বর্ণা মজুমদারকে ঐ ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে, প্রধাণ অতিথি শ্রী
রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে কলকাতায় একটি সভায় পুরস্কৃত করা হয়।)

তুমি, সহস্রাব্দের অসি, ঝংকার তোলো কলমের মসীধারে,
হাজার বছর অত্যাচারীর অত্যাচারে বিঘ্নিত হয়েছে সুন্দর এ ধরাভূমি,
দূর্নীতি আর অপশাসনে দহন-দাহনে নিপীড়নে মর্তভূমি হয়েছে বধ্যভূমি।
দিকে দিকে শুধু হাহাকার, জল্লাদের আক্রমণে করুণ আর্তনাদ
গৃহহারা যারা, জ্বলেছে পুড়েছে, কত লাশ আজ অতলে তলিয়ে গেছে,
মানুষের মূল্যবোধ শূন্যস্থানে, ছিনিয়ে নিয়েছে বাঁচবার অধিকার।
শ্ধু তারাই বুঝেছে কেন এই পরমাদ ?
স্বার্থান্বেষী মুনাফা লুটছে অশান্তিকে জাগিয়ে রাখার।
অস্ত্রই পারে অস্ত্রকে হারাতে, "রক্তের বদলে রক্ত নেব" হবে যাবে এ মহামন্ত্র,
সফল জীবন ফিরে পাব সেদিন, তাই অসিই মোদের যুদ্ধ যন্ত্র,
বিশ্বাসঘাতী আফজল খাঁ কে অস্ত্রসরূপ "বাঘনখে", শিবাজী করেছিল সংহার,
কত ঝঞ্ঝা, তুফান বয়েছে সেদিন, রক্ষা করেছিল সেই অসিরই ঝংকার।

হে অসি কোষমুক্ত হয়ে দাঁড়াও সমুখে,
আজ এসেছে সেদিন, হে মানব তুমি হও সচেতন,
খুঁজে পেতে হবে পথের সমাধান।
সংগঠনের পরিকল্পনায়, সু-বুদ্ধি সাথে গাইবে ঐক্যতান,
বর্বরের বর্বরতাকে করে দাও খান খান।
অশান্তকে শান্ত করে শান্তিরে কর আহ্বান।

সহস্রাব্দ তুমি কঠোর হয়ে তীব্র প্রতিবাদে জাগরণ আনো -
বলিষ্ঠ হাতে তুলে নাও অসিখানি,
বন্ধ কর এ করুণ অশ্রুপাত।
রণহুঙ্কারে, অসির ঝঙ্কারে, দুর্বৃত্তেরে চিরতরে করো হে ধুলিস্বাত্।
হে "সহস্রাব্দের অসি" তোমার জয় হোক, জয় হোক।


********
জীবন

জীবনের তরী পামসির মত
ধেয়ে চলে তর্ তর্।
ক্ষুদ্র বৃহত্ জল্পনাগুলো, ছোট্ট বড় বাক্য যত
সংঘাত হানে হৃদয়ের মাঝে,
যেন এক জোর থাপ্পর।
হয়তো কিছু নয়, অথবা অনেক,
দুটো বাসনের ঝন্ ঝনা ঝন্।
মনের গ্লানিমা রুদ্ধশ্বাসে কেঁপে ওঠে প্রতি ক্ষণ,
ঈশ্বরে জানাই নতি, জীবনের যত ফাঁটা ছবি,
বুদ্ বুদের মত মিলিয়ে গিয়ে, হয়ে থাক শুধু জলছবি।

********
বিষন্ন গোধুলীবেলায়

নই আমি গীতিকবি, কাব্যও নই,
ক্ষুদ্র গৃহে পড়ে থাকা, সবারই শুধু সই,
শব্ দ ছকের মত বাঁধা এ জীবন,
খোপগুলো ফাঁকা পেলে ভরে গেছি
দিয়ে প্রাণ মন।
জীবনের আঙ্গিনায় দ্বন্দ কত, কত সংঘাত,
কখনও জিতে গেছি, কখনো বা ক্লান্ত মনে করছি প্রতিপাত।

(বেলাশেষে) গোধুলীবেলায় মনে আসে কি পেয়েছি, কি পাইনি,
আর কতটুকু বাকি ?
শূন্যতারে পূর্ণ করেছি, নিজেরেই দিয়েছি শুধু ফাঁকি।

নিয়মের অঙ্কগুলোর ফলের আশা রাখিনি।
অবগাহন করেছি শুধু উদ্যম, উত্সাহে
তবুও নিঃশ্বাস যেন হারিয়ে ফেলিনি।


********
একটি লক্ষ্যভ্রষ্ট তারা

অপাপবিদ্ধ এক সুন্দর শিশু, জিগীষায় আর জিজ্ঞাসায় বেড়ে ওঠে ত্বরা,
মন তার কোমল ফুলের মত, সরল হাসি, কেবলই যেন আনন্দে ভরা,
পঞ্চবর্ষে রামায়ণ মহাভারত পড়ে পড়ে সারা,
দাদু দিদা শুনে শুনে হতবাক্ বিস্ময়ে খুশিতে আত্মহারা।
নাতিটিরে টেনে নিয়ে স্নেহাদরে আশিসে আশিসে ভরে দেন শির,
সোনা মোর বড় হও, খ্যাতি হোক, দীর্ঘজীবি হয়ে সুস্থ শরীরে হয়ে ওঠো বীর।

বছর ঘুরে এসে যায় কৈশোর, শুরু হয় স্কুল যাত্রা,
কত কিছু শিখে শিখে বেড়ে যায়, জ্ঞান আলোর মাত্রা।
বিদ্যালয়ে চাহিদার সাথে সাথে মেটাতে পারেনা তার পরিপূর্ণ আসা,
পিতা তার উদাসীন বেকার জীবন, মায়ের মাতৃত্ব আর জীবীকার পারিশ্রমিক
শুধু এটুকুই যে ভরসা।

কৈশোরের সারল্য আর উচ্চাভিলাশের পথে, প্রবল বাধা কেবলই দেয় তীব্র যন্ত্রণা।
অন্য সবারে দেখে দেখে চিত্ত না জানি কেন অন্তঃস্থলে করে ওঠে বিদ্রোহ ঘোষণা।
নাই শুধু নাই, কেন নাই ? বারংবার প্রশ্নবাণে জর্জ্জরিত অবুঝ হৃদয় --
শোনে না যে মানা।

কৈশোর ছাড়িয়ে যৌবনের পদার্পন কালে,
অকস্মাত্ হারিয়ে যায় কালের এক ভয়াবহ কুত্ সিত জালে,
এ কেমন কাল ? ছিনিয়ে নেয় এক নবীন যৌবনের কত শত আশা ?
হায়, সে কি জানতো যে চারি দিকে ছেয়ে আছে কুহক আর মায়া ? শুধুই হতাশ ?
বিদ্যার্জ্জনের বদলে দুচোখে ঠাঁই পেল, চারিদিকে ভরে আছে নানা বিন্যাস,
যেন পরিপূর্ণ মরুদ্যান।

যৌবনের তীব্র চাহিদায় তাই শুধু পিপাসা মেটাতে নিত্য করে যায় পান।
ধীরে ধীরে ঊর্ণনাভের জালে দেহ মন ছিন্ন ভিন্ন হয়ে ছিঁড়ে খান্ খান্।
শত চেষ্টা করেও ফেরাতে পারে না নিজেকে, একি নিষ্ঠুর নিয়তির বিধান ?
ব্যর্থ হয়ে ফেরে ঘরে অলসমনে অধ্যয়নের এখানেই শেষ
শুরু হয় অন্য জীবন, কদাকার রূপ, বিকৃতরুচির এক জটাধারী বেশ,
উঃ সে কি দৃশ্য ! কল্পনার অতীত, কখনও পড়ে আছে নালার মাঝে
কখনও বা রাস্তার পাশে,
দয়া করে কারা যেন উঠিয়েছে, সকরুণ দীর্ঘশ্বাসে।
হঠাত্ সেদিন রিক্সাওয়ালা ধুলি ধুসরিত চেতনাহীন দেহখানি তুলে এনে
ফেলে দেয় ঘরের মাঝে,
মা দেখে শিউরে ওঠেন, একি হলো ? সর্বাঙ্গে রক্ত মাখা কালো কালো দাগ
জমে যে আছে।

নিরুপায় নিশ্ চুপ মা তার করনীয় সবই করে যায়,
তবুও বোঝে না মা, কেন আজ এই হাল, এত অসহায় ?
হয়তো তারই পরিচালনার ভুলে দিতে হয় যে মাশুল,
নির্ভুল অঙ্কগুলো সব হয়ে যায় ভুল।

পরদিন, পনরাবৃত্তি, সেই নরদেহ ধীরে ধীরে চলে,
পকেটে শরাবের বোতল, রামায়ণ-মহাভারতের বুলির বদলে,
রক্তবর্ণ মুখে শুধু অনর্গল, কদর্য্য বোল, চিড়ধরা গালে,
কালের সেই ভয়ঙ্কর কবলে পড়ে, লক্ষ্যভ্রষ্ট তারা
তলায় অতলের তলে।

মা ভাবে কেমনে ফিরাবো বাছারে আমার
কালের এই নাগপাশ হতে ?
নচিকেতা যমদ্বার হতে ফিরেছিল ঘরে,
তাই "কাল"কে নস্যাত্ করে ফিরায়ে আনিব তারে।
শোন খোকা, মনে কি আছে তোর ? কথা দিয়েছিলি তারে
জীবনের প্রস্ফুটিত নবযৌবনদ্বারে, চিরসাথী করে নিবি, বলেছিলি তারে।
আজও সে প্রতীক্ষায় আছে, তোরই তরে,
ফিরে আয়, আয় ফিরে নরকের দ্বার হ'তে স্বর্গের দুয়ারে,
চমকিয়ে খোকা তার, মায়েরে জড়িয়ে ধরে,
দু'চোখের অশ্রুধারা রুধিতে না পারে।

                ********                                        
উপরে
সন্ত্রাস
(এই কবিতাটি "শারদীয়া সীমানা" ম্যাগাজিনে ২০০৩ সনে প্রকাশিত হয়)

কেন এত সন্ত্রাস ? এ এক সন্ত্রাসের কাল,
শতাব্ দীর সূচনাতেই জগত্ জুড়ে বিছানো আতঙ্কবাদীর জাল।
ঘটনাবহুল জীবন ছুটেছে কালের গতির টানে,
বিশ্বজোড়া শত্রুর ফাঁদ, কেউ পায় না রেহাই বিষের তীক্ষ্ণ বাণে।

সারা পৃথিবী আজ ধোঁয়ায় অন্ধকার,
কোথাও খরা, কোথাও প্লাবন, গলে যায় গ্লেসিয়ার।
জিঘাংসা আর প্রতিহিংসায় সমাজ চিরে ফিরে একাকার,
কত নিষ্পাপ অবোধ শিশু হারিয়ে গেল, পেল শুধু অবিচার।
কত অপমান সয়ে সয়ে আজ চারিদিকে শ্মশানভূমি।
জীবন দোলায় দেখেছে মানুষ শুধু মরীচিকা, শুধু মরুভূমি।

ধর্মের নামে সবারই হাতে শুধুই বীষের পাত্র
ভয়ানক এক অগ্ন্যুত্পাতের বিষোদ্গীরণ মাত্র।
আরো আছে নাশ আরো ধ্বংস,
রসাতলে তলিয়ে যাবে ধরণীর অংশ।
মনুষ্য জীবন সে তো ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।
হিংসা দ্বেষে হারিয়ে ফেলে সহস্তে তার বৃষ্টি।
যত উন্নতি তত অবনতি, জ্ঞানের আলোর তলে কেন এ অন্ধকার ?
হে বিশ্ববাসী, তমসার জাল গুটিয়ে বিষের বদলে খোলো অমৃতের দ্বার।
আজানার পথ নেই কারো জানা, তবুও আশা আসবে সুদিন।
আশার আলোয় দেখবে মানুষ, মুছে গেছে দুর্দ্দিন।


********
থ্যালাসেমিয়া
(এই কবিতাটি "শারদীয়া সীমানা" ম্যাগাজিনে বাংলার ১৪০৮ সনে প্রকাশিত হয়)

যতদূর দৃষ্টি যায়, সারি সারি বেডে শায়িত শিশুর ভীড়,
কারো বা মা পাশে বসে, কেউ বা বাচ্চা নিয়ে কোলে,
প্রতি বেডের পাশে লম্বা স্ট্যান্ডে ঝুলছে বোতল, রং তার লাল,
অবাক বিস্ময়ে দেখি আর ভাবি, এরা কি রোগের শিকার ?
শীর্ণকায় দেহগুলো পাংশুবর্ণ, চোখ সবার কোটরে, শুধু অস্থিচর্মসার।
কৌতুহলে জিজ্ঞাসি এক সেবিকারে, "সিস্টার
এরা কি রোগে আক্রান্ত ? কিসের শিকার ?"
তাপ-উত্তাপহীন স্বরে সিস্টারের উত্তর "থ্যালাসেমিয়া",

শুনে মনে মনে ভাবি বাঃ রোগের নামটি তো বড় মরমিয়া,
কত ব্যামো শুনেছি ক্যানসার, ক্ষয়রোগ, ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া,
এমন রোগের নাম শুনিনি কখনও, যা কি না এত দরদিয়া।

ভিজিটে ডাক্তার এলে শুদিয়ে জেনে নি, এ বড়ই ভয়ঙ্কর রোগ,
রক্ত তৈরী বন্ধ হলে, যতদিন বাঁচবে তত দুর্ভোগ।
শরাহতের মত হৃদয়ের তন্ত্রীগুলো ছিঁড়ে একাকার।
এক অব্যক্ত ব্যথা আর মথিত যন্ত্রণা নিয়ে উদ্দ্যোদ করি ফিরিবার।

হঠাত্ শুনি ক্লান্ত করুণ স্বরে কে যেন বলিছে "দিদিগো, একটু রক্ত দেবে ?"
চেয়ে দেখি বেডে শুয়ে বারো তেরো বছরের একটি ছেলে,
ঘাড়খানি কাত করা, মুখখানি করুণ, চোখদুটো ছলছলে।
তোলপাড় শুরু হয় অন্তরে, ভাবি আমার দেহের ধমনি শিরায় যত রক্ত বইছে,
তাই নিঃশেষ করে ঐ নিভন্ত শিখাটি জ্বালিয়ে দিই,
কাছে গিয়ে সান্ত্বনায় আর আশ্বাসে তাকে ভরিয়ে দিই,

সবাই মোরা রক্ত দিয়ে দিয়ে নতুন প্রজন্মকে জাগাতে পারি না ?
সবই তো সম্ভব, কঠীনকে সহজ করে নিতে, চাই শুধু একতা, নিষ্ঠা আর উদ্দিপনা।
হিংশা, দ্বেষ ভুলে, চেতনায় জাগ্রত হয়ে এগিয়ে এসো দোশের মানুষ,
মবীন প্রাণগুলো, প্রদীপ্ত করো, দেখাও পথের আলো,
বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতির সাথে নবচিকিত্সায় ঊদ্জীবিত কর -
ক্ষয়ে যাওয়া প্রাণগুলো।

এরা তো দেশের, দশের, তোমার, আমার, সবাকার -
নবজীবনদানে একবিংশ শতা ব্দীকে করি শ্রেষ্ঠতর, এই হোক অঙ্গীকার।



********
সর্ব্বংসহা

নারী একাধারে ভার্য্যা, জননী এবং ভগিনী,
যে যার স্বস্থানে স্বীয় সত্তায় অধিষ্ঠাত্রী, তবুও
অভাগী হতভাগিনী।
বিন্দুমাত্র ভুলত্রুটির মাঝে হতে হয় বৃন্তচ্যূত।
বিকৃত সমাজ করেছে তারে বিপথগামী এবং ধিক্কৃত।
তবু সে অসামান্যা, অতলান্তের মত চির অনন্যা।

আমি জানি সেই অনন্যা নারীকে --
যিনি ছ'টি পুত্রের জননী হয়েও ছিলেন বঞ্চিতা এবং ধিক্কৃতা।
বৃদ্ধ পিতার পেনশনের কিয়দংশে চালাতেন সংসার,
সর্ব্ব কনিষ্ঠ পুত্রটি ছিল তাঁর প্রতিবন্ধী।
আর পাঁচটি পুত্রই কিন্তু তাঁর কৃতি ছিল। বড়ই করুণ।

আমি জানি সেই নারীকে, জিনি পুত্রের সাথে তীর্থের আশায় -
গিয়েছিলেন সাগর সঙ্গমে,
কিন্তু হায়, সেই জননীর আর হলোনা ঠাঁই স্বামীর গৃহেতে,
পুত্র ছেড়ে এল 'মা'কে সাগর সৈকতে।
নির্মম, কি দুঃসহ।

আমি জানি সেই অনন্যা নারীকে,
জিনি মুখ বুজে জঠরানলে জ্বলে, দু' মুঠো অন্নের আশায় -
পুত্রগৃহে পরিচারিকার মত প্রাণপাত করে -
একদিন নিলেন বিদায় - অতি মর্মান্তিক।

আমি জানি সেই অভাগিনীকে, যিনি পাঁচটি পুত্রের জননী,
১০ মাস, ১০ দিন গর্ভে ধরণ করে, নিজহাতে খাইয়ে,
চাঁদের গান শুনিয়ে, করেছিলেন বড় হতে আরও বড় -
আজ তারই ঘরে ভিন্ন উনান, স্বপাক খান,
অবশেষে ক্লান্ত দেহে অজানার পথে হলেন অন্তর্ধান। - অতি বেদনাদায়ক -

আমি জানি সেই অভাগিনীকে, সেই অনন্যাকে,
জিনি প্রতিদিন  প্রতিরাতে পুত্রের লগুড়াঘাতে,
চপেটাঘাতে আর অকথ্য অত্যাচারে জর্জ্জরিতা,
তবুও সেই বৃদ্ধা শীর্ণদেহে আছেন বেঁচে শেষ দিনটির প্রতিক্ষায়,
হায়, কি নিঠুর বিধাতা।

হে ঈশ্বর, তোমার সৃষ্টির শেষ্ঠ উপহার মানবজীবন,
শুধু লিঙ্গভেদে স্ত্রীজাতির প্রতি কেন এত অবিচার ? কেন এই কঠোরতা ?
জননী, তাইতো তুমি স্বর্গাদপি গরীয়সী, নারী তুমি ধন্যা,
তুমি সর্ব্বংসহা বলেই অনন্যা, জননী বসুন্ধরা কোটি কোটি জন্ম তুমি ধন্যা।


********