ভারতী ভট্টাচার্যের কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
১।  শুরু  
২।  
ছয় ঋতু               
৩।  
প্রার্থনা                      
৪।  
মসদির
৫।  অবসর গ্রহণের প্রাক্কালে সহকর্মিদের প্রতি
৬।  বানতলা       
৭।  
যুদ্ধ নয় শান্তি   




           
          
        
*
শুরু

বিকেল বেলায় করলাম শুরু,
সকাল বেলার কাজ।
দিন যে আমার ফুরিয়ে এল
ঘনিয়ে এল সাঁঝ।

দিন যে কত কেটে গেছে,
আনমনে অবসরে,
আসেনি তো মনে তখন,
কাটাই কেমন করে।

দিনগুলো মোর শুরু হলো,
নিঃসঙ্গতায় ভরি,
দ্বন্দের মাঝে আনন্দ পেয়ে,
লিখতে শুরু করি।

ক্ষুদ্র এই লিপিটুকু,
দিলাম তোমাদের,
রইব না আর ভবে যখন,
স্মৃতি রবে মোর।

*************
৮ই সেপ্টেমবর ১৯৯০
বেগুসরাই, বিহার
উপরে
*.
ছয় ঋতু

বাংলা দেশ মজার বেশ,
পাঁচটি ভাই থাকে,
একটি মাত্র বোন তাদের,
ছয় ঋতু নামে ডাকে।

বড় যিনি, হলেন তিনি,
গ্রীষ্ম তাহার নাম,
তাঁ দাপটে সবাই অস্থির,
ঝড়ে কেবল ঘাম।
মাঝে মাঝে ছাড়েন তিনি
প্রচণ্ড হুংকার।
কালবৈশাখী নামে যে
পরিচয় তাঁর।

মধ্যম যিনি এলেন ধরায়,
বর্ষা তাহার নামটি,
তাঁর দয়াতে একটু কাটে
বড় ভাইয়ের দাপটটি।
ঠাণ্ডা হলেও তারও আছে,
বিরাট ঘনঘটা ;
বজ্রমালায় সাজেন তিনি,
চোখে বিদ্যুত্ ছটা।

তৃতীয় যিনি, শরত্ তিনি
এলেন রাণীর সাজে,
তার পরশে প্রকৃতিও
ফুলে ফুলে হাসে।
একটি মাত্র বোন বলে,
ঋতু রানী নাম,
সাদরে তাঁকে বরণ করে,
এ ধরাধাম।
তাঁর সঙ্গে মহামায়া,
আসেন ধরায়।
দেবী পূজার সঙ্গে তাঁকেও
বরণ করা হয়।

শরতের ছোট ভাই,
হেমন্ত নামে খ্যাত,
বিশেষত্ব কিছুই নেই,
অতি তিনি শান্ত।
দীপাবলীর রাতে তিনি,
আলোক মালায় সাজেন।
একটু খানি হিমের পরশ
গায়ে তিনি মাখেন।

পঞ্চম যিনি, শীত তিনি,
একেবারে কাবু,
তুষার ধবল সজ্জায় তিনি,
সদাই জুবুথুবু।
হাড় কাঁপানো কামড়ে তার,
প্রাণ ওষ্ঠাগত।
তবুও তাঁরে ভালবাসে সবে,
আর সকলের মত।

সবার ছোট যিনি হ'ন,
তিনি ঋতুরাজ।
বসন্ত যে তাঁহার নাম,
সঙ্গে ফুলসাজ।
নানা রঙের ফুলে ফুলে,
সেজে থাকেন তিনি।
বাসন্তী রঙের চাদর দিয়ে,
ঢাকেন অঙ্গখানি।
চারিদিকে তাঁর ফুলের বাহার,
নানা রঙের মেলা,
দৃষ্টিতে আছে যে তার,
প্রেমের বাণের খেলা।

********
৯ই সেপ্টেমবর ১৯৯০,
বারাউনি, বিহার
উপরে
*.
প্রার্থনা

কোথা দিয়ে চলে যায়, দিবস রাত্রি আমার।
বৃথা মনে হয় এ জীবন, বৃথা এ সংসার।

বসি বাতায়ন পাশে, অতীতের স্মৃতি ভাসে,
মন চলে যায় কোন সুদূরের পানে।
বর্তমানকে সামনে রাখি, ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি,
হরিয়ে ফেলি নিজেরে কিসের সন্ধানে।

যাদের লাগি সঁপেছি মন, সবাই তারা নয়তো আপন
তবুও তাদের আপন বলে মানি।
কয়টি দিনের চেনা জানা, পথের মাঝে আনা গোনা
স্বল্প কালের এ জীবন খানি।

তোমার কাছে করি মিনতি, তব পদে রাখি মতি,
সব কাজ করি সমাপন,
বিশ্বের দরবার হতে, তোমার মঙ্গল সভাতে,
করিলাম আত্ম সমর্পণ।

********
২০ জুন ১৯৯০
বারাউনি, বিহার
উপরে
*.
মসদির

মন্দির নয়, মসজিদ নয়,
গড়ব মোরা মসদির।
দুই এর মাঝে এক হয়ে
ধর্মে রব স্থির।

এক মায়েরই সন্তান মোরা
হিন্দু মুসলমান।
প্রনাম নামাজ, একই সাথে
একই ধর্মস্থান।

হিন্দু, মুসলিম, খৃষ্টান শিখ,
বিভেদ কেন করি,
এই মাটিতে জন্ম মোদের
এই মাটিতেই মরি,

চিতায় পোড়াও আর কবরই দাও ;
একই পরিনতি,
ভায়ে ভায়ে বিবাদ ভুলে,
আসুক সাম্য ও প্রীতি।

********
উপরে
*.
অবসর গ্রহণের প্রাক্কালে সহকর্মিদের প্রতি

হে বন্ধু বিদায়,

কর্মহীন পূর্ণ অবকাশ,
আসিয়াছে মম দ্বারে,
খ্যাতি - অখ্যাতি ভাল মন্দ,
রহিল সব পিছে পড়ে।
নাই মোর কোন অভিমান,
কাহারও প্রতি।
পিছু ফিরে দেখা,
নাই আর বাকি।
আমার বেদনার আভাসটুকু
রেখে যাব বকুলের মৃদু গন্ধের মত,
কর্মক্লান্ত পথিকের স্মৃতি,
রহিবে নিয়ত।
তোমাদের সযত্নে সাজানো,
বিদায়ের ডালি।
বেদনায় করিব না সিক্ত
আঁখ্জল ফেলি।
স্মৃতি মোর থাকিবে তোমাদের মনে,
রহিল আশা।
হিসাব করিনি কভু,
পেযেছি যত ভালবাসা।
তোমাদের কাছে যা পেয়েছি,
সেই হোক অক্ষয় ধন
মার্জনা করিও দেখ যদি,
মোর সিক্ত নয়ন।
রহিল শুভেচ্ছা তোমাদের প্রতি,
বিদায় বেলায়।
এ মিলন ক্ষণটুকু,
হোক অক্ষয়।

হে বন্ধু বিদায়।


********
৩১ জানুয়ারী ১৯৯৪,
হলদিয়া, পশ্চিম বঙ্গ
উপরে
*.
বানতলা

ভোটের মুখে নগর জুড়ে, বানতলা আর বানতলা,
- কে যে দোষী কে নির্দোষী, এই নিয়ে সব জটলা।

সি.পি.এম বলে কংগ্রেস, আর কংগ্রেস বলে সি.পি.এম
আসল দোষীর খোঁজ নাই, হায়রে পুলিশ, শেম্ শেম্।

"প্রফুল্ল সেন" বৃদ্ধ নেতা করলেন তিনি অনশন,
"জ্যোতি বাবু", বলেন তিনি  "কতই ঘটে এমন ঘটন"।

যতই ঘটুক এ ঘটনা ; দাবি জনতার একটাই,
তদন্ত করে বিচার করে আসল দোষীর শাস্তি চাই।

তা যদি না পারে দিতে মহামান্য সরকার,
কি লাভ তবে ভোটে জিতে, মন্ত্রী হবার দরকার ?

ঘটত যদি এ ঘটনা বড় বাবুদের পরিবারে,
থাকতেন কি এমন ভাবে উদাসীন হয়ে চুপ করে ?

অতএব নেতাগন, শুনুন তবে জনতার বাণী,
সুষ্ঠভাবে করুন বিচার সুবিচারক আনি।

********
১৭ই জুন ১৯৯০,
বেগুসরাই, বিহার
উপরে
*.
যুদ্ধ নয় শান্তি

খাড়ি যুদ্ধ্ ভারি হ'ল,
বুশ সাদ্দাম রেষারেষি।
কে বা জেতে, কে যে হারে,
চিন্তিত সারা বিশ্ববাসী।
সাদ্দাম করল কুয়েত দখল,
বুশ হলেন রেগে লাল,
সৈন্য পাঠিয়ে তিনি এবার,
মিটাবেন তাঁর গায়ের ঝাল।
রাষ্ট্রসংঘ করল চেষ্টা,
তবু হলোনা মিটমাট।
একজন যদি ছাড়ে স্কাড,
আরেকজন ছাড়েন প্যাট্রিয়ট।
আকাশ জলে যুদ্ধ হ'ল,
স্থল এবার রইল বাকি।
তেলের মাঝে আগুণ দিয়ে
সাদ্দাম দিল বুশকে ফাঁকি।
যুদ্ধ যদি লেগেই থাকে,
এই ভাবেতে বহুদিন,
ধরনীর বুকে রে ভাই,
বাজবে তবে ধংসের বীণ্।
নানা ধর্ম নানা ভাষা,
ধ্বনি মোদের একটাই,
বিশ্ববাসী মুখর হল,
যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।

********
৩০শে জানুয়ারী ১৯৯১,
বারাউনি, বিহার
মিলনসাগর
উপরে