বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। |
||||||||||||||||||||||
১। বরিস লিওনিডোভিচ পাস্তেরনাক - শীতের রাত্রি ২। হো চি মিন - এক হাজার কবির কবিতা পড়ে ৩। মাও জে দঙ - তাপোতি ৪। ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ মায়াকোভস্কি - আমার শ্রেষ্ঠ কবিতা ৫। বের্টোল্ট ব্রেখ্ট - লেখাপড়ার জয়গান ৬। পাবলো নেরুদা - আলোর জন্তুরা ৭। গুন্টার গ্রাস - ক্ষমতাহীন ৮। আর্নেস্টো চে গুয়েভারা - ফিদেলের জন্য গান |
||||||||||||||||||||||
বরিস লিওনিডোভিচ পাস্তেরনাক - শীতের রাত্রি তুষারে ঢাকা পড়ে চারিপাশ দূর দিগন্ত ছাড়িয়ে টেবিলে জ্বলে যায় মোমবাতি শুধুই জ্বলে যায়, জ্বলে যায় | পতঙ্গেরা যেমন গ্রীষ্মে ঝাঁপিয়ে পড়ে মরে আগুনে তুষারকণারাও তেমনই ঝাঁপিয়ে পড়ে এসে জানালায় | উড়ে আসে তুষার বাতাসে কাঁচের জানায় ঝপটা টেবিলে জ্বলে যায় মোমবাতি শুধুই জ্বলে যায়, জ্বলে যায় | ছায়া মূর্তিরা কাঁপছে আলোকময় ওপর দেওয়ালে নিথর নিশ্চুপ হাত-পা অজানা নিয়তির ধন্ধে দু'পাটি জুতো খুলে পড়েছে মেঝেতে আওয়াজ ওঠে তারই রাতের আলো যেন কাঁপছে মোম ঝরে কার পোশাকে ? সকলই যেন শেষ গয়ে যায় শুধুই তুষারের দাপটে টেবিলে জ্বলে যায় মোমবাতি শুধুই জ্বলে যায়, জ্বলে যায় | দমকা হাওয়া এল কোণ থেকে তপ্ত প্রলোভনে বাতিটি যেন দু ডানা মেলে দেবদূত ক্রুশ চিহ্ন আঁকা অবিকল ফেব্রুয়ারি মাস যেন তুষারের যখন তখন শুধু ঝরে যায় টেবিলে জ্বলে যায় মোমবাতি শুধুই জ্বলে যায়, জ্বলে যায় | ************* |
||||||||||||||||||||||
উপরে |
||||||||||||||||||||||
হো চি মিন - এক হাজার কবির কবিতা পড়ে প্রাচীনেরা ভালবাসতেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গান বরফ ও ফুল, চাঁদ ও হাওয়া, কুয়াশা, পাহাড় আর নদী এখন কবিতায় লোহা আর ইস্পাত ও আসুক কবিদেরও শিখতে হবে আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে | ************* |
||||||||||||||||||||||
উপরে |
||||||||||||||||||||||
মাও জে দঙ - তাপোতি লাল, কমলা, হলুদ সবুজ, নীল, আসমানি বেগুনি আকাশ জুড়ে কার নাচ রঙিন ওড়না মেলে ? বৃষিটির পর আবার আকাশে সূর্য-অস্তগামী গিরিপথ আর পাহাড় মেলার রেখা নীলাভ | এখানেই একদিন হয়েছে যুদ্ধ ভয়াল গ্রামের দেওয়ালে দেওয়ালে বুলেটের দাগ | যেন এক অলঙ্করণ, পাহাড়ের সারি আজ মনে হয় সুন্দর আরো | ************* |
||||||||||||||||||||||
উপরে |
||||||||||||||||||||||
ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ মায়াকোভস্কি - আমার শ্রেষ্ঠ কবিতা প্রশ্নের পর প্রশ্ন শ্রোতাদের তীক্ষ্ণ আবেদন নোটের পর নোটে হতভম্ব আমি কিন্তু আমি দেখাব তাদের "কমরেড মায়াকোভস্কি দয়া করে পড়ুন আপনার শ্রেষ্ঠ কবিতা|" কোন কবিতাকে এই সম্মানে বসাব এখন চিন্তা করি মুঠো ডেস্কের উপর হতে পারে পড়ব এই কবিতাটি অথবা আর একটি কোনটি শ্রেষ্ঠ নেড়েচেড়ে দেখি কবিতার সমস্ত সংগ্রহ প্রেক্ষাগৃহ নিঃস্তব্ ধ আগ্রহে 'উত্তরের শ্রমিক' পত্রিকার সচিব শান্ত হয়ে কানে কানে বললেন... আমি চিত্কার করে উঠি কবিতার সুর ছেড়ে জেরিকোর থেকেও জোরে সর্বোচ্চ স্বরে কমরেডস্ ক্যানটনের শ্রমিক ও সেনারা সাংহাই করে দখল যেন টিন ভাঙছে হাতের পাতায় বেড়েই চলেছে বেগ সংবর্ধনার ইয়োরোস্লাভ উল্লসিত শান্তি ঝেড়ে ফেলে দশ মিনিট পনেরো মিনিট থামছেই না তারা হাজার হাজার মাইল ছড়িয়ে গিয়েছে ঝড় চেম্বারলেনের নোটের উত্তর সোজা চীনে ইস্পাতে হাঙ্গরের মাথা সেই রণতরী সাংহাই থেকে বিতাড়িত আমি তুলনা করি না কবিতার জাল এমনকি উচ্চ গ্রামে কবিতার গুণ আর এই ঘটনা সংবাদের পাতায় যদি জেতে ইয়োরোস্লাভ উল্লাসে জানায় আর কোন যোগসূত্র আছে এই সংহতি শ্রমিকদের এক সূত্রে বাঁধা চমত্কার মিলচালক ইয়োরোস্লাভ তোমার অচেনা তবু ঘনিষ্ঠ ভাই চীনের মজুর ********* |
||||||||||||||||||||||
উপরে |
||||||||||||||||||||||
বের্টোল্ট ব্রেখ্ট - লেখাপড়ার জয়গান সবচেয়ে সহজ জিনিসটা জানো তোমার সময় তো এসেই গেছে দেরী হয়ে যায় না কখনো জানো অ আ ক খ, তাই শুধু যথেষ্ট নয় শুরু কর, সব কিছু জানতেই হবে নেতৃত্ব নিতে হবে তোমাকেই | শেখো, যে মানুষ আশ্রমে আছ শেখো, যে মানুষ জেলখানায় আছ শেখো ঘরের বৌ, রান্নাঘরে আছ শেখো বয়স যার ষাট বিদ্যালয়ে খোঁজো, যারা ঘর ছাড়া তীক্ষ্ণ কর উপহাস, যারা ভয়ে ভীত ক্ষুধার্ত মানুষ হাতে নাও বই এটাই হাতিয়ার তোমার নেতৃত্ব নিতে হবে তোমাকেই | প্রশ্ন করতে ভয় পেয়ো না, ভাই অন্যের কথা নিয়ো না মেনে নিজেকেই দেখতে হবে সব নিজে যা জানো না তা তুমি জানই না যোগ করো হিসাব নিকাশ তোমাকেই দিতে হবে দাম আঙুল বসাও সব কিছুতেই -- প্রশ্ন করো, কি করেই বা এল এটা ? নেতৃত্ব নিতে হবে তোমাকেই | ************* |
||||||||||||||||||||||
উপরে |
||||||||||||||||||||||
পাবলো নেরুদা - আলোর জন্তুরা আজ হারিয়ে যাওয়া অরণ্যের গভীরে সে শুনতে পাচ্ছে শত্রুর আওয়াজ, পালাচ্ছে ছুটে অন্যদের থেকে নয়, নিজেরই কাছ থেকে পালাচ্ছে সেইসব সংঘবদ্ধতা জড়িয়ে ছিল আমাদের জীবনের মানে থেকে কারণ শ্ধু একবার,শুধুই একবার একটাই অক্ষর বা নিঃস্তব্ ধ খানিকটা বিরতি | অতৃপ্ত ঢেউয়ের শব্ দ ঠেলে দেয় সত্যের মুখোমুখি আমায় ব্যাখ্যার কিছু নেই বলারও কিছু নেই, এই সব অরণ্যের দরজাগুলি বন্ধ সব সূর্য পরিক্রমা করে, জাগাতে গাছের পাতা চাঁদ উঠছে সাদা ফলের মতন মানুষ নিচু করছে মাথা ভবিতব্যের কাছে | ************* |
||||||||||||||||||||||
উপরে |
||||||||||||||||||||||
গুন্টার গ্রাস - ক্ষমতাহীন আমরা পড়ছি নাপাম, কল্পনা করছি নাপাম যেহেতু কল্পনা করা যায় না নাপাম আবার পড়ছি নাপাম, যতক্ষণ না -- আরো বেশি কল্পনায় আসে এখন প্রতিবাদ করছি নাপাম | প্রাতবাশের পর, সব চুপচাপ ফটোতে দেখছি নাপাম কি করতে পারে, পরস্পরকে দেখাচ্ছি দাগ ভরা ছবি -- আর বলছি তুমিই নাপাম ওরা নাপাম দিয়ে এই করছে | শিগগিরি পাওয়া যাবে সস্তা ছবির বই আরো ভালো ভালো ছবি আরো পরিস্কার দেখা যাবে কি করছে নাপাম | কামড়াচ্ছি নখ, লিখছি প্রতিবাদ কাগজে পড়ছি নাপামের চেয়েও আছে অস্ত্র ভয়ংকর আমরা প্রতিবাদ করছি তখনই আমাদের সোচ্চার প্রতিবাদ মাথা তুলবেই, গর্জে উঠবেই ক্লীবত্ব রাবারের মুখোশে নিঃশেষ ক্লীবত্ব ব্যর্থ গানে ভরা ক্ষমতাহীন হাতে গীটার বাইরে চমত্কার সুরে ক্ষমতা খুঁজছে পথ | ******************** |
||||||||||||||||||||||
উপরে |
||||||||||||||||||||||
আর্নেস্টো চে গুয়েভারা - ফিদেলের জন্য গান তুমি বলেছিলে সূর্য উঠবে, চলো যাই, সেই সব অজানা পথ ধরে মুক্ত করতে তোমার প্রিয় কুমির-গড়ন সবুজ স্বদেশ | চলো যাই সব অপমান ছুঁড়ে ফেলে -- চোখের উপর অন্ধকার বিদ্রোহী তারা আমরা জিতব, মৃত্যুকে হঠাব বন্দুকের মুখে | গুলির আওয়াজে অরণ্য কাঁপবে বিস্ময়ে শান্ত আমরা দাঁড়াব তোমার পাশে | তোমার কণ্ঠস্বর চারিদিকে - জমির লড়াই, সুবিচার, রুটি, স্বাধীনতা | তোমার সুরে গলা মিলিয়ে আমরা তোমার পাশে | শত্রুকে নিখুঁত আক্রমণে দিনান্তের শেষে, শেষ যুদ্ধের জন্য আমরা তোমার পাশে | বুনো জন্তুটা চাটবে তার ক্ষত কিউবার বর্ষার ঘায়ে ক্ষিপ্ত আমরা তোমার পাশে দাঁড়াব গৌরবে | কখনো ভেব না, আমাদের সততা ওরা করবে শেষ | রঙচঙে মাছির দলের উপহার নয়, আমরা চাই -- ওদের বন্দুক, বুলেট, পাথর আর কিছু নয় | যদি লোহাও দাঁড়ায় মাঝে কিউবার অশ্রু আবরণ ঢাকা দেবে গেরিলার হাড় মাংস আমেরিকার ইতিহাসের যাত্রায় এর বেশি কিছু নয় | ******************** |
||||||||||||||||||||||
মিলনসাগর |
||||||||||||||||||||||
উপরে |
||||||||||||||||||||||