চন্দ্রাবতীর কবিতা (বাংলার প্রথম মহিলা কবি) যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
|
মলুয়া
বন্দনা
আদিতে বন্দিতে গাই আনাদি ঈশ্বর |
দেবের মধ্যে বন্দি গাই ভোলা মহেশ্বর ||
দেবীর মধ্যে বন্দি গাই শ্রীদুর্গা ভবানী |
লক্ষ্মী সরস্বতী বন্দুম যুগল নন্দিনী ||
ধন সম্পদ মিলে লক্ষ্মীরে পূজিলে |
সরস্বতী বন্দি গাই বিদ্যা যাতে মিলে ||
কার্ত্তিক গণেশ বন্দুম যত দেবগণ |
আকাশ বন্দিয়া গাই গড়ুর পবন ||
চন্দ্র সূর্য বন্দিয়া গাই জগতের আখি |
সপ্ত পাতাল বন্দুম নাগান্ত বাসুকী ||
মনসা দেবীরে বন্দুম আস্তিকের মাতা |
যাহার বিষের তেজ ডরায় বিধাতা ||
হর শিরে বন্দিয়া গাই কাল মহাকাল ||
তার পরে বন্দিলাম শ্রীগুরু চরণ |
সবার চরণ বন্দিয়া জানাই নিবেদন ||
*********************
মলুয়া
জলপ্লাবন ও দুর্ভিক্ষ
মন্দ্যান্যা আইশনারে পানি ভাটি বাইয়া যায় |
চান্দ বিনোদে ডাক্যা কইছে তার মায় ||
" উঠ উঠ বিনোদ আরে ডাকে তোমায় মাও |
চান্দ মুখ পাখলিয়া মাঠের পানে যাও ||
মাঠের পানে যাওরে যাদু ভালা বান্দ আইল |
আশমান ছাইল কালা মেঘে দেওয়ায় ডাকে রইয়া |
আর কত কাল থাকবে যাদু ঘরের মাঝে শুইয়া ||"
আইল আইশনারে পানি উভে কর্ ল তল |

উত্তরিয়া শীতে পরাণ কাঁপে থরথরি |
ছিড়া বসন দিয়া মায় অঙ্গ রাখে মুরি ||
ভালা হইল চান্দ বিনোদ দেবতার বরে |
ঘরে নাই সে লক্ষ্মীর দানা লক্ষ্মী পূজার তরে ||
ধারেতে কাচি আন্যা মায়ে তুল্যা দিল হাতে |
"ক্ষেতে যাওরে পুত্র আমার ধান্য যে কাটিতে ||"
পাঞ্চ গাছি বাতার ডুগল হাতেতে লইয়া |
মাঠের মাঝে যায় বিনোদ বারমাসী গাইয়া ||
আশ্বিনা পানিতে দেখে মাঠে নাইক ধান |
এরে দেখ্যা চান্দ বিনোদের কান্দিল পরাণ ||
চান্দ বিনোদ আসি কয় মায়ের কাছে |
"আইশনা পানিতে মাও সব শস্যি গেছে ||"
মায়ে কান্দে পুত্র কান্দে সিরে দিয়ে হাত |
সারা বছরের লাগ্যা গেছে ঘরের ভাত ||
টাকায় দেড় আড়া ধান পইড়াছে আকাল |
কি দিয়া পালিব মায় কুলের ছাওয়াল ||
পোষ মাসে পোষা আন্ধি বিনোদে ডাকিয়া |
মায় পুতে যুক্তি করে ঘরেতে বসিয়া ||
আছিল হালের গরু বেচিয়া খাইল |
পাঁচ গোটা ক্ষেত বিনোদ মাজনে দিল ||
খেত খোলা নাই তার, নাই হালের গরু |
না বুনায় ধান কালাই না বুনায় সরু ||
ভাবিয়া চিন্তিয়া বিনোদ কোন কাম করে |
মাঘ ফাল্গুন দুই মাস কাটাইল ঘরে ||
চৈত বৈশাখ মাস গেল এই মতে |
জৈষ্ঠ মাসেতে বিনোদ পিঁজরা লইল হাতে ||
মায়েরে ডাকিয়া কয় মধুরস বাণী |
"কুড়া শিগারে যাইতে বিদায় দাও মা জননী ||"
ঘুম থাক্যা উঠ্যা বিনোদ মায়েরে কহিল |
কুড়া শিগারে যাইতে বিদায় মাগিল ||
টিক্কা না জ্বালাইয়া বিনোদ হুক্কায় ভরে পানি |
ঘরে নাই বাসি ভাত কালা মুখখানি ||
ঘরে নাই খুদের অন্ন কি রান্ধিব মায় |
উপাস করিয়া পুত্র শিকারেতে যায় ||
মায়ের আক্ষির জলে বুক যায়রে ভাসি |

*********************
কেনারামের পালা
কেনারামের জন্ম ও নানা কষ্ট
তার পরে যশোধরা শুন দিয়া মন |
মাসেকের মধ্যে হৈল গর্ভের লক্ষণ ||
সুগোল সুন্দর তনুগো লাবণি জড়িত |
সর্ব্ব অঙ্গ দিনে দিনে হইল পূরিত ||
অজীর্ণ অরুচি আর মাথাঘোরা আদি|
রুচী হৈল চূকা আর ছিকর মাটিতে |
বিছানা ছাড়িয়া শুয়ে কেবল ভূমিতে ||
এহি মতে দশ মাস দশ দিন গেল |
হায়রে দারুণ বিধি কি লিখিয়া ভালে |
মরিলা জননী হায়রে সাত মাসের কালে ||
কোলেতে লইয়া পুত্র কান্দে খেলারাম |
"কি হেতু হৈলা মর প্রতি বাম ||
মাও ভিন্ন কে বা জানেরে পুত্রের বেদন |
যাহার স্তনেতে হয় শরীর পালন ||
সেই মায়ের নিলা কারি কিসের কারণে |
কি মতে বাঁচাইয়া পুত্র রাখিব জীবনে ||
অপুত্রা ছিলামগো মোরা সেই ছিল ভাল |
ভুলাইয়া মায়ায় পরে কেন দেও শেল ||"
কান্দিয়া কান্দিয়া তবে যায় খেলারাম |
পুত্র কোলে উপনিত দেবপুর গ্রাম ||
সোহিত গ্রামেতে হয় মাতুল আলয় |
মামার বাড়ীতে কেনা কিছুদিন রয় ||
দুগ্ধ দিয়া মামী তার পালয়ে কুমারে |
*********************