আমার জীবনে (তোমার দান) বিষাদ নীরস কঠিন যবে হল এ প্রাণ, কে বাঁচাবে তারে ঢালি ঐ অমৃতসুধা যা চন্দ্র আলোকে বাঁচে যুগ যুগ ধরি আকন্ঠ সুধা পান করি । ওগো মঙ্গলময় তুমি আজো আছো মোর এ অন্তরে, আমি প্রাণ পাই মোর সকল কাজে ।
তোমারে সঁপিয়াছি মোর সকল মন ও প্রাণ, তুমি মোরে বাঁচাইয়া করেছ অমর এই জীবন, এ প্রাণ । আমি তোমার রস করেছি আকন্ঠ পান, আমার জীবনে তোমারই রয়েছে সকল দান ।
জেগেছে ওই আজ অর্ণব কি রূপ ধরেছে । আজ দিগন্ত হয়েছে লাল, অস্তসূর্য্যে । রেঙেছে ঐ দিগদিগন্ত অন্তহীন ঐ জলরাশি । গ্রাসিছে লাল সমুদ্রেরে কি শোভা জেগেছে । সমুদ্র বক্ষে আজি দাঁড়ায়ে দু বাহু মেলেছি তার বিশাল বক্ষমাঝে । কি অপরূপ শোভা মাঝে আমি ধ্যানমগ্ন, আমার হৃদয় জলমগ্ন । দুই আঁখিপাতে জল আজি জলে আপ্লুত । স্বর্ণছটামাঝে জাগে দিগদিগন্ত, সূর্য্যে । জাগে মোর প্রাণ ঐ অপরূপ রূপমাঝে, আমি ভাসি পোত ওই সমুদ্রবক্ষে ।
সূর্য্য যখন যায় যে ডুবে ওই অতল অতলান্তিকে, তখন কেমন তব আলোর প্রকাশ ঘনায় সমুদ্র দিক্চক্রবালে। লাল আলোয় আঁধার ঘনায় জলের পাটে পাটে, তখন আমি উদাস মনে লুকাই মোর হৃদয় মাঝে । কত কিছু দুঃখ সুখের মাঝে বেঁচে আছি আমি যে গো প্রভু তোমার চরনখানি ধরে । এই ভুবনখানি জুড়ে অনেক লীলা করো তুমি, আসা যাওয়ার মাঝে মিথ্যা হল যেরে খুঁজি আমি হৃদয় ভরে তোমায় পথে পথে ।
নবীন নয় তিনি প্রবীন নানা কিছু দেখে শুনে শান্তির বৈঠক ডাকছেন । দুস্তর পারাবার এই মোর কারবার সভাপতি প্রশাসনে বলেন বারবার । বিদেশী নয়ত নন্দীগ্রামবাসী কেন তবে দাও তারে ফাঁসি । তবে কেন মারামারী হাতাহাতি মৃত্যুটা ঘটছে , কোন্ অধিকারে রাজ্যের পাল আর হাইকোর্ট মহারব তুলছেন , আইনের বুজরুকি করছেন । পঞ্চায়েত নির্বাচন সামনে আসছে রাজ্যের নানা জেলায় লুন্ঠন হত্যা আজ চলছে । মহা প্রলয় ঘটবেই ঘটবে লাল তারা আকাশেতে জেগে কাস্তেটা রক্তে ভাসাচ্ছে , নির্বাচন ঐ আসছে । দিকে দিকে মৃত্যু বার্তা দিচ্ছে ধ্বংসের সিঁদুরে মেঘ দিগন্তে উঠছে অঞ্চলবাসীরা গৃহহীন হচ্ছে পথে পথে চিতা ঐ জ্বলছে । জাগে ওই দিকে দিকে পূর্ব সে মেদিনীপুরে শহীদের রক্তে মাটি ভাসছে । নির্ভীকবক্ষে স্বাধীনতা-দামামা বাজে জনগণ মুখ টিপে তামাসায় মজে ।
নন্দীগ্রাম সেথা সিপিএম দুর্গ রক্তের লীলা খেলা চলছে । কুখ্যাত বন্দুকবাজ যত লুটপাট ভাঙচুর করছে । লুন্ঠিত অধিকার এই রাজ্যে, সব দলই শান্তিরবৈঠক ডাকছে শান্তির খোঁজে গলা ফাটছে । কত শত মধুভরা কথা ঐ ময়নারা শুধু বকছে প্রহসন-বৈঠক বসছে । জুড়ছেনা কাটা পথ, খুলছে না যানপথ সব বিপ্লবী পথ যত কাটছে । কত শত মৃত্যু অজানা থাকছে অজানা আশঙ্কায় পিলেখানি বাড়ছে । জমি দখল না শিল্পের উন্নয়ন সেটা মুখ্যমন্ত্রী ভাবছেন । যত মত তত পথ চলছে মুখ্যমন্ত্রী প্রগতির জাল বুনছেন । গোলকের মন্ত্রীরা গোলকধাঁধায় যত স্বপ্নের জালখানি বুনছেন । যে যার মত বিপ্লব করছে কারণ কেউ না দেখছে ! জনগণ উন্নয়ন রুখছে ! উত্তপ্ত নন্দীগ্রাম আজ সেথা কাস্তে হাতুড়ীর ঠোকাঠুকী হচ্ছে । মন্ত্রীরা প্রলাপ বকছেন দেখে শুনে মুখ্যমন্ত্রী আক্কেল গুড়ুম হচ্ছেন । রোগ ঐ দিকে দিকে বাড়ছে দলে কি ক্যানসার ধরেছে ? লালবাগে মন্ত্রীরা বৈঠক করছেন গেল গেল ওই রব উঠছে । মন্ত্রীরা স্নায়ু রোগে ভুগছেন পুলিসকে সংযত করছেন । রাষ্ট্রের আমলারা কলকাঠি থেকে থেকে নাড়ছেন ঐ ফাঁকে ডকটর হচ্ছেন । রাজ্যপাল হাল ধরছেন চক্রান্তের গল্পটা ধরে মন্ত্রীরা থেকে থেকে ফুট্ কাট্ছেন । লোকেরা ফ্রন্টের কফিনে নানা ভুত দেখছে সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন আসছে । বিড় বিড় কেউ কেউ বকছে কেন গুলি বন্দুকটা চলছে , নন্দীগ্রামে লড়াইটা জমছে । তামাসা জনগণ দেখছে বিরোধীরা কি একজোট হচ্ছে ? তাই লাল-তারা হাতুড়ীরা মনে মনে কত ছবি আঁকছে ঐ দেখ দূর্দিন আসছে ।
লাল গোলা পায়রা করে বকম্ বকম্ (সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা)
গোলা করে বকম্ বকম্ খুন গড়িয়ে পড়ে যেরে সিঙ্গুরের রক্তে ঝর্ণা বয় নন্দীভৃঙ্গী যত ষড়যন্ত্রী লালে লাল হেঁকে দেয় লাল সেলাম রে । বলে যত পার মুন্ডু কাটো মার ওই কুর্দদের বসাও বন্দুকের কুঁদো। ভোল্গা থেকে ভদ্কা যা চাইবা তাই পাবা ওরে বদ্ পাজী হতচ্ছাড়া ওরে হতভাগা আড়াল কর্ তোরা মোদের লাল পতাকা । না লাগে গর্দা না লাগে রক্তের ছিটেফোঁটা লাল সরাবের ঘোরে , মাতিস্ নে তুই ওরে মরিস্ নে পথে পড়ে মারিস্ হিসেব করে , করিস্নে কভু ক্ষমা লাল বিরোধীদের। ওই সর্বনাশে উৎসন্নে শিল্প যে যায় ভেসে একে একে লালের মাটি মেদিনীপুর ছেড়ে চলে হাঁটাহাঁটি হল্দী নদীর পাড়ে যেথায় সোণার শিল্প ওরে , লাল বাংলায় লাল সূর্য্য জ্বলে কোথায় হবেরে হাব্ রসায়নের পাতা যে ফাঁদ জগৎ জুড়ে লালের বাণী উঠবে ভুবন মেতে ওকে লাল সেলাম যেরে ।
আজ ওই দিকে দিকে জাগে তর্ক বির্তক মাঝে মাঝে । মানুষ ওই মরে সেথা হোক সিঙ্গুর, তা হোক নন্দীগ্রাম, হোক তা রাজ্যের ভিন্গ্রাম , হোতা ওঠে ওই রব শ্মশ্মানে জাগে শব করে রাজনৈতিক প্রতিরব প্রতিপদে প্রতিবাদ। ভাষা না পায় খুঁজি তার না পায় তার পথ । শুধু বিশৃঙ্খলা মাঝে জ্বলে ভিটে ঘর গ্রাম। চলার পথ হয় খান খান ছিনিমিনি খেলা চলে মানুষের প্রাণ রক্তের নদী বয়ে চলে , নেই কোন প্রতিকার ছলচাতুরীর রাজনীতি আজ ওই দুর্বার পথে হাঁটে । নেই সমাধান , নয় সাবধান মান ধন লুটে চলে দরিদ্র কৃষক না পায় পথ মাথা শুধু খুঁড়ে মরে ।
প্রশ্নঃ শিল্প না কৃষি? উঠেছে ঐ ঝড়। প্রাচীন না নবীন কোন পথে চলব মোরা, শিক্ষার আলোকে না ওই অন্ধকার, অজ্ঞানতা মাঝে । উন্নয়ণ না সঞ্চয়ের পিছুটান সেই পুরান বিতর্ক । যুদ্ধ প্রাচীন আর নবীনে উন্নয়ন না অনগ্রসরতা । ওই উন্নয়নের কে দেবে মূল্য ? ওই যে আক্রমণ হচ্ছে ঘটাচ্ছে তা মস্ত গন্ডগোল । একি দুঃশাসন না অপশাসন মূল্য কে দেবে গরীব না ধনী রেলপথ না জলপথ গরুর গাড়ী না ঘোড়ার গাড়ী নাই তো হেথায় উড়োজাহাজ । রাজনীতিতে ঘুণ ধরেছে ঘুণে ভরা শাসনব্যবস্থা মুনাফার প্রশ্নে দেশ - না ওই কৃষিশ্রমজীবীরা । কৃষকের ওই অন্নের ঝুঁকি তার পাল্টা বন্দুকের গুলি এন্তার খায় , হজম করে আর ফেরায় লড়াই , লড়াই , বাঁচার লড়াই , নন্দীগ্রাম ভাসে ওই রক্তে রক্ত না ঝরালে কি শিল্প গড়ে ? রাজতন্ত্র, সামন্ত্রতন্ত্র, জমিদারী হল যে তোদের হাতে বলি । ভুমিহীনেরে দিলে জমি ! আবার কি বিচারে হারাতে হয় ওই ভূমিপুত্রেরে সে জমি ! পরিবর্ত্তনশীলতার মাঝেই জগৎ বেঁচে আছে । বিচারের বাণী ওই নন্দীশিঙ্গুরে মাথা খুঁড়ে শুধু মরে বল দেখি মোরে মিটবে কিসে এ অশান্তি যে, তদন্ত অনুসন্ধান না শাস্তিতে কি পথে আসিবে শান্তি ফিরে !
অনেক দিন পার করে নিঃশর্ত সিদ্ধান্ত হল ঐ নন্দীর শান্তির বৈঠক হবে যেরে । ডাকে সাড়া মেলে, বোধে সম্বিত ফেরে, উপলব্ধির হৃদয়ের দ্বারে পরিবর্ত্তনশীলতা আছে । রাজনৈতিক মতাদর্শ মাঝে ঘাত প্রতিঘাত, অনুসন্ধান , মাঝে জাগে বোধি বিচিত্র সে রূপ ধরে দুর্গতিশেষে জাগে সুমতি । ওই ঘৃণা শত্রুতা কত নির্মম হতে পারে? প্রাণের মূল্য কভু প্রাণ নিয়ে মেটে ওরে?
ঐ রাজ্য বা জেলা নয়ত বড় কথা ! তোরা আগুণ নিয়ে করিস্ ছেলেখেলা । তোদের ছলচাতুরীতে যদি কেউ না দেয় সাড়া কি দাম ঐ শান্তি বৈঠকে, স্বস্তয়নের খেলায় মেতে, বল অভাগা বল ! আগুন - জ্বালা , আগুন নিয়ে খেলা শেষ হবে কবে বল ! অনেক ভাঙা গড়ার মাঝে গড়বি শিল্প কেমন সেযে । তোরা সেই দূর্বাদল , আপত্তিতে আছে তোদের বুৎপত্তি , সে বড় বল ! হবে বৈঠক রাজ্য স্তরে প্রক্রিয়া আর বিক্রিয়ামাঝে আছে ঐ বিষক্রিয়া যে । মস্ত ঐ বিপর্যয় , ঐ কুটিল চাণক্য জাগে কাস্তে হাতুড়ী তারা হাতে । ঐ নীল গগনে রক্তের নদীতে ভাসিস্ যে ঐ দূর্বাদল তোরা । নির্ঘাৎ অশণিসঙ্কেতে তোদের ঐ শান্তিবৈঠকে তোদের নেতানেত্রীর নেই কোনো আশা যেরে ।
আমরা যে তানপুরা সকল সুরে বাজি মোরা , সর্বঘটে কাঁটালি কলা এই তো মোদের ছলাকলা । রূপে আমরা বহুরূপী সব রঙে হয়ে আছি সাদা । আঁধার আকাশে আমরা চাঁদের যে ঐ স্নিগ্ধ ছটা, আমরা বাঁধ ভাঙা উচ্ছল হাসিতে ভরা , ভন্ডামি আর ছলে মোদের জুড়ি নেই জগতে , জানে নন্দী আর শিঙ্গুরবাসী যে, শান্তির ওই ছলচাতুরী বোঝে কি সর্বদলই, বুক ডন বৈঠকিতে, ঘুরপাক্ খাই কারসাজিতে । আতসবাজী ভোজবাজি ফুলঝুরি আর তুব্ ড়ি , নেই ঘটে কানাকড়ি যত আমি দেখাই ভেল্ কি নেই তোদের বোধ কি ?
চলেছে নন্দীগ্রামে মস্ত যে ঐ ছল ছাড়ছে গ্রাম, জ্বলছে মানুষের প্রাণ পুড়ছে বাড়ী , কাট্ছে পথ ঘাট । ধুমধুমধুমাধুম ! হচ্ছে মানুষ গুম আগডুম বাগডুম ! বাজে ঘোড়ার ডুম ! ঝুম শরাবী ঝুম আলখাল্লায় ঢেকে খুন, বুদ্ধবাবু হেসেই খুন ! বলেন বাবু কিসের ধুম ! উঠছে ধূম ,জ্বলছে চিতা মাঝে শান্তি বৈঠকের ধুম খাচ্ছে ধোঁয়া পাক্ , জানিনা কে কার মিতা । জ্যোতিদাদুর আসতে মানা আসছে শুধু রামগরুড়ের ছানা । বুদ্ধবাবুর বসার কথায় আলিমুদ্দিন মুখ বেঁকায় , বলে , যখন মুখ্যমন্ত্রী ডাকেননি ওই সভা , কেন যাবেন হোথায় ? সবাই আছেন মস্ত ধাঁধাঁয় ! চর্তুধারায় হবে কি অবগাহন ? আকাশের ওই বিমান ছেড়ে সভাপতি আসেন কি করে ? আর জ্যোতিবাবু হেসে কহেন ‘আসে কি ওই চতুরা নারী ? বৃথাই বৈঠক খাবে হাবুডুবু ।’ দফায় দফায় হচ্ছে অনেক কথা আছে কি তার ঠিকানা , ধরবে কে তার টিকি , সঙ্গে আছে হুলি বেড়াল আর মিডিয়ার টিকটিকি । কোমর দুলিয়ে হেসে খেলে তিনি নেচে বেড়ান , কেমন হচ্ছে শান্তি বৈঠক এবার বুঝে নিন । শরিক বিবাদে হচ্ছে যে ফ্রন্ট্ মস্ত জেরবার ! মিছেই ডাকে শান্তি বৈঠক হেঁকে ডেকে বারবার । ছলচাতুরীতে হচ্ছে ভরা ডুবি মিছে বৈঠকী কারবার । নন্দীগ্রামে হচ্ছে খুনোখুনি সে ভাগ্যের পরিহাস । অগ্নিলীলায় মাতে গ্রামের নন্দী আর ভৃঙ্গীরা। ধা ধিন না , না তিন না , তেরে কেটে তাক ধিন না ! গ্রামের মানুষেরা মরে যা না !
আজ জ্যোৎস্নারাতে এলে তুমি প্রাণ ভরাতে মোরে জাগি তোমার পরশ মাঝে জাগি সকল সুখে । তোমার অপূর্ব ছটা দেখে অবগুন্ঠিত নয়ত তুমি সেথা তোমার সাথে হবে প্রাণের কথা । হৃদয় হবে গাণে গাণে ভরা সকল দুঃখ সুখের মাঝে জাগব আমি ভাসব আমি তোমার বাহুখানি ধরে । আমার ভুবন ভরব গানে বাজব তোমার কন্ঠে বীণা হয়ে আমার তারে তারে । মোর হৃদয় ঝঙ্কারে আজ অনেক দিনের পরে তুমি এসে জাগালে মোরে স্বপন দুয়ার খুলে তোমায় আমি কেমনে যাই ভুলে ? বরণ করব তোমায় পদ্মদলে ।
অবাক করা প্রেক্ষাপটে মহান নেতার ডাকে এলেন মমতা গৃহে ধেয়ে জ্যোতিবাবুর আন্তরিকতার মাঝে । তাঁর স্নেহের ছায়ায় বসে বিরোধী নেত্রী হলেন শান্ত শেষে , মঙ্গলময় চালে ধরা দিলেন নিজে শান্তিবৈঠক মাঝে । তাঁর অভিযোগ শুনে নেতা স্বীকৃতি দেন তাঁরে , অনেক চাপান উতোর মেনে শেষে শান্তিবারি ঝরে । মহান নেতা সোহাগভরে রাখেন হাতখানি তাঁর পিঠের পরে সে অনেক আশ্বাসমাঝে । নন্দীগ্রামের ঘরছাড়া সব কৃষক স্বপ্নে তারা ঘরে ফেরে , খেজুরী-নন্দী-শিঙ্গুর প্রাঙ্গনে এবার শান্তি মঞ্জরী ধরে । আন্দোলনের পাঠ মিটবে শান্তি ওই রাজদূত দ্বৈতে , এবার ঘরে ফেরার পালা । শান্তির শাঁখ বাজবে সেথা নেইকো তাতে ছলাকলা । ইতিবাচক বৈঠক মাঝে আসবে শান্তি নন্দী-শিঙ্গুরে । অনেক মূল্য দিয়ে ফিরবে মানুষ ঘরে ।
কে ওই উচ্ছ্বল দেহ দেউলে প্রকাশিছে মাণব তনুতে আনন্দের বার্তা নিয়ে । জাগে সে স্বতস্ফুর্তে ধ্যানগম্ভীর এই চরাচরে শান্ত সংযত চিত্তে এই দেহ চরাচরে । আত্মার গভীর অতলে ছিল বার্তা রুদ্ধ হয়ে এই দেহ সরিতে । আত্মা মুক্তির আনন্দে জাগে আজি শত শত চেতনার পথ ধরে জাগে সে সকল হৃদয় কম্পনে । অন্তরের অতল হতে ওঠে শত চেতনার দীপ জ্বেলে জাগে সে দেহ অর্ণবে। বহু নিভৃত চেতনা ছিল গভীরে জাগিয়া উঠিল আজি সকল বার্তা নিয়ে তব দান চেতনা সমুদ্র হতে জীবন সার্থক আজি তোমার পরশে ।
মোর ভুবন যে আঁধার ভরা নেই তো কোনোআলো । তোমার আমার ভুবনখানি আলোর সেতু জুড়লো । আলোর যেথায় অভাব আছে সভ্যতা পড়ে কাঁদে , সভ্যতার এই কান্নাকাটি মানায় নাকো কভু । আঁধার মাঝে কেমন করে উঠবো আমি জাগি আলোর ছটার প্রভু । আঁধার নাই যে কভু । আমার মাঝে সব কিছু ওই তোমার দেয়া প্রভু । নাই যে কিছু অভাব আমার , জন্ম হতে মৃত্যু , কারণ তুমি কার্য্য আমি , মোরে দাও গো দিশা প্রভু । পার করো মোরে প্রভু । আলোক ধারায় স্নান করিয়ে জ্ঞান দাও গো প্রভু ।
বয়সও গেল , বেলাও হল , কেশ যা আছে পেকে গেল । তোদের মিথ্যা হল ভুবন দেখা এখনও মনের কথা না হল শেখা । গাঁথলি যে ফুলের মালাগুলি , কার গলাতে তোরা পরালি । করলি সেধে ভিন দেশে বাস , তোদের দীর্ঘ সেই পরবাস । ফেরার সময় আজও আছে মাটি তোদের টানছে কাছে । আকাশ জাহাজে , জলের জাহাজে আয়রে ভেসে , নিজ দেশের কাজে । ভোলা ময়রা তৈরী করে , মন্ডা মিঠাই তোদের তরে । মিথ্যে তোরা গোমর করিস্ কিসের লোভে মত্ত থাকিস্ । হুঁস যে তোদের হবে কবে , বেলা যে এবার পড়ে যাবে । ঢের হয়েছে অসার জীবন , বন্ধ এ দুয়ার , রুদ্ধ এ ভুবন । দেশের টানে আয়রে ফিরে , সকল মায়া কাটিয়ে দেরে ।
বিপর্যয় আকাশে আজ বাদলধারা আনলো যে বিপর্যয়, জলের ধারায় হারায় পথ চলা হল বড় দায় । থই থই অথই যে জল ভাঙছে যে পথ ঘাট , যায় ভেসে যায় এ আষাঢ়ে, হল নদী , ছিল মাঠ । সাঁতার কেটে জলের মাঝে স্তব্ধ মনে মানুষ চলে , কবির চোখে বলতে গেলে বর্ষাবরণ একেই বলে । ছাতার মাথা ভেজে জলে মানুষ ভেজে প্রাণের দায়ে , ফিরতে তাকে হবে ঘরে ঘরণী আছে চিন্তা নিয়ে । ঘর দুয়ার ভাসে জলে ভাবি ফিরি কেমন করে , থামল না এই বর্ষাবাদল চলবে সারা রাত ধরে ।
পথে যা কিছু রয় পড়ে জীবের তাই নিয়ে প্রাণ বহে । যার কেহ নেই ভুবনে তার তরে সবার প্রভু রেখেছে তোমারে । যাহা তুমি নষ্ট কর এ জীবনে বাঁচে খেয়ে অন্নহীণে । তোমার প্রাণে যে আলো জ্বেলেছে তোমার প্রভু, তুমি কি জ্বেলেছ সেই আলো এই দীনহীণ প্রাণে। প্রাণ হতে প্রাণধরে, চোখ তাই ভুবন চেয়ে দেখে, দেহ হতে দেহ ধরে আসে । ভুল না তুমি অনাথের নাথ, তুমি সর্বব্যাপী, ভুল না প্রভুর বাণী ।
উদ্দাম চঞ্চল ঝকঝকে একঝাঁক যৌবন বছরের প্রান্তে হল চঞ্চল। শেফালি, মল্লি , চম্পা, চামেলি , ধরে আছে ওই যৌবনে ভরা হিল্লোল কল্লোল সঙ্গীত । তার পিছে মৌমাছি ফেরে , নাচানাচি ঝটকায় তারে । যৌবন বলে প্রাণহারা, কি হল আজ মাধবীর ? তালে তালে নিয়ে যাও যা আছে বুকে ওই যৌবন । ঘোরে যেন বন্বন্ শন্শন্, ভন্ভন্ । মরতে যে ভয় নেই বাঁচতে যে চায় প্রাণ। তাই করি নাচগান হিল্লোল হল প্রাণ। বুকে যত আছে ভালবাসা যত আছে নিরাশা করে মোরে ওগো চন্ডালিকা ।
আবোল তাবোল মত্ত মাদল মন আমার হয়েছে পাগল । লিখতে যে চাই লিখব কি ছাই মন হয়ে আছে যাচ্ছেতাই। পাহাড়ি ঝর্ণাযে ওই নদী হয়ে সমতলে নামে নাচতে নাচতে। ফুটিয়ে জুঁই সরিৎবুকে , আর সবুজের বণ্যা চাষার ক্ষেতে। যেমন আমার হৃদয় , ময়ূর হয়ে নাচে তোমার হৃদয় শতদলে , পাপড়ি মেলে আলোয় , ভুবনখানি ভরিয়ে যে ওই তোলে । কে সাজালে তোমায় যেগো এমন করে , না সাজালেও তোমার রূপ মোহিত করে ।