দেবীপ্রসাদ মুখার্জীর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
ভোরের আকাশে

ভোরের   শ্রাবণ আকাশেতে         
                   যে আলোর আভাস ফোটে ।
মন চলে যায় উদাস হয়ে
                    ঘরে থাকতে চায় না মোটে ।
রোদ নেই শুধু জল আর জল
            জলধর আর ধরে না আকাশবুকে ।
সকাল থেকে ঝিরঝিরিয়ে
                   বৃষ্টি ঝরে পড়ে মনের সুখে ।
পাখীটা ওই ডানা ঝাপটে উড়ে
                      ওঠে ওই মধ্য গগন মাঝে ।  
তার ডাকে ওই কোথায় যেন
                   কান্না ও বিষাদের সুর বাজে ।
মেঘের রঙে আলোআঁধারির
                   আভাসের নেই কোন বিশ্রাম  ।
সূর্য্য যায় মেঘের টানে ভেসে
                নামল বুঝি আজ ধারা অবিরাম ।
বরিষণ মাঝে ডুবে যে আছে
                         যত পথ ঘাট খানা খন্দ ।
ঝরিয়ে যে জল শান্ত হবে
                কোথাও  নেই যে কোনই দ্বন্দ্ব ।  
হাল লাঙল সাথে নিয়ে
                    চাষা আনন্দে চাষ করেরে ।
আমি কবি ডুব দিয়েছি
হাতে ধরে কলমখানি
                 লিখব আমি হাজার ছড়ারে ।
                  নিজের মনের  মত করে ।


.          ******************                                                   
উপরে

মিলনসাগর
*
    ভুবনখানি

ফুরফুরে ওই বাতাসখানি দিচ্ছে ভোরে ভুবনখানি,
জীবন হতে ধুয়ে যায় মনের আমার সকল গ্লানি ।
মোর জীবন যে জেগে ওঠে আলোরপরশে  তোমার,
তোমারপ্রেমের মাঝে আছে প্রাণেরসুধা আমার ।
মিটিয়ে দেয় মনের ক্ষুধাতোমার সকল ভালবাসা  ,
জীবনে মোরজাগায় সব দুঃখ সুখে বাঁচার আশা ।
আশাগুলি যে ফুটে ওঠে তোমারসকল ফুলের মাঝে ,
তুমি মোরে করেছ ঋণী তোমার জগৎ  সুধা মাঝে ।
তোমার কি  সুধা আছে তুমি তা দান কর আমারে ,
যাতে আমি বাঁচতে পারি সব দুঃখ সুখের মাঝারে ।



.                  ******************                                       
উপরে

মিলনসাগর
*
ছিট্ কোকিলের বাসা

তোদের মাথাগুলি বড়ই খাসা ,
একেক্‌টা ছিট্ কোকিলের বাসা ।

ডিম পাড়িস্ গিয়ে তোরা কাকের  বাসায় ,
তা দেখে  চক্ষু মোর ছানাবড়া হয় ।

তোরা দেশ বিদেশে দিলি পাড়ি,
প্রকৃতির সঙ্গে করলি আড়ি ।

যদিও তোদের নাইকো আছে দাড়ি ,
বুঝতে তা , আমার গজাল পাকা দাড়ি ।

তোদের দেখে বিষ্ময় মোর ঘোচে নাতো আজ ,
তোরা হলি হরবোলা আর তোদের বহুরূপীর সাজ ।

তোরা মস্ত বড় পাজী , তোদের নানান আতস্‌ বাজি ,
তোরা বুশ- ব্লেয়ারের দেশে মিথ্যে করিস্ কারসাজি ।

বয়স তোদের হলেও তোরা, বুঝিস্ না কেন আজ ,
আমি ভাবি তোরা করে চলেছিস্ ,  মস্ত চাষার কাজ ।

তোদের জন্যে বসে আছে মস্ত বড় এদেশ ওরে ,
শেষ জীবনে ওদের দেশে তোরা মিথ্যা কেনরে ?

যেমন আমি পুষছি একটা ছিট্ কোকিলের ছানা ,
তোদের আমি পুষবো খাঁচায় , কেটে দিয়ে ডানা ।

.                  ******************                                       
উপরে

মিলনসাগর
*
ধূসরতা  কাটে

জীবনের ধূসরতা মেটাতে
ছেটাও তুমি  রঙ্ সেথা যে,  
রঙ্ ধরে জীবে বিচিত্রতা মাঝে
বিকৃতি মাঝে নহে তাহা আসে ।
গঠনমূলক জীবনে
নির্মল আনন্দরূপ ধরে
কাটে ধূসরতা সৌখিনতা মাঝে ।  
বিচিত্র পথ ধরে
বিদ্যার পথে হতে পারো পার
অনন্ত এই আনন্দ মাঝে
বিচিত্র এই আনন্দ ধরে
জাগো তুমি মোর হৃদয়ে  ।
শাখা ধরে দাও দোল
হিল্লোল উঠুক  প্রাণে
সাগর হৃদয়ে  গর্জে
অবিরাম ফেণা ভাঙে ।  
অনন্ত ওই সঙ্গীত ওঠে
বিশ্ব ভুবন মাঝে ।


.           ***********                                               
উপরে


মিলনসাগর
*
ঘুম ভেঙ্গে ওরে

ঘুম ভেঙ্গে ওই , হটাৎ আমি জেগে উঠে পড়ি,
দেখি দিগন্তেখাচ্ছি আমি ,রাতভোর  গড়াগড়ি ।
গড়গড়াটা  ওই খাটের পাশে দিচ্ছে হামাগুড়ি,
স্বপ্নে দেখি লম্বা দাড়ি দিচ্ছে  সাগরপাড়ি ।
উড়ছে দাড়ি ফরফরিয়ে  সারা  আকাশ  জুড়ে,
বাঁধছে তাতে ছোট্ট বাসা  পাখীর ছানা যেরে ।
ডিম পাড়ছে সুখে , লম্বা দাড়ির খাঁচার পরে ,
দেখতে দেখতে সব ডিম সোনার  হয়ে  পড়ে ।
এমন স্বপন কে ভেবেছে , কবে দেখেছে ওরে,
সোনার পাখী উড়ে বেড়ায় সারা আকাশ জুড়ে ।
হটাৎ কে টান মারল আমার পাকা দাড়ি ধরে,
সেই টানেতে স্বপন আমার টুটে গেল যেরে ।  

.           ***********                                               
উপরে


মিলনসাগর
*
       ঘুম ভেঙ্গে ওই

ঘুম ভেঙ্গে ওই পাখীর ডাকে ,  জাগি ভোরে ,
সবাই ঘুমোয়  এখন  আমি   খেলব  কি করে ?
মনে  ভাবি  এখন  আমি  উঠে  করবটা  কি ?
দিদির  মত  আমিও  কি  স্কুলে যাব  নাকি ?
দাদুর  মত দাঁতগুলো   সব  একে  একে  ছাড়ি
স্কুলে গিয়ে  ছড়া বলতে কেমন করে পারি ?
দাদুর  দাঁত  মুখে  ঢুকিয়ে  বলি  এমন  সময়,
বলতো দেখি মা , তা আমায়  কেমন  মানায় ।
আরসিতে  মুখ দেখি আর দাদুর  দাড়ি  নাড়ি ,
গুটি  গুটি  হাঁটি  আর  হেসে  লুটিয়ে   পড়ি ।
বলি আমি মাস্টার হয়েছি ,
          দিদির পিঠে ভাঙবো  মস্ত লাঠি ,
তখন দিদি বলবে আমায়
          ডেকে , আর  মেরোনা   ভাইটি ।

.           ***********                                               
উপরে


মিলনসাগর
*
গুমোট   

গেল  গু মোট  ভেসে
পূবের  হাওয়া  এসে ।
পশ্চিম তায় বরণকরে
স্নিগ্ধ সমীরণ তরে ।
জুড়ায় বাতাসে প্রাণ
আসে মোর কত গান ।
সারা দিন হাওয়ায়
পূব আকাশ থমথমায় ।
মেঘগুলি  নিবিড় ক’রে
সাজে আকাশে থরে থরে।
পাতাগুলি  হাওয়ায়
শুধুই দোলদোলায় ।
ঝড়ের মাঝে নাচে
আপন মনে আছে ।
খুশী ধরে না মনে
যেমন ওই কাশ বনে ।
ঢেউ দিয়ে যায়
মেঘ ও ছায়ায়।
সুন্দর রৌদ্রখেলায়
গগনের সাগরবেলায় ।
নয়নতারায় ঝিকিমিকিরে
আনন্দ নাই ঘরেরে ।

.       ***********                                               
উপরে


মিলনসাগর
*
     হটাৎ দেখি

হঠাৎ দেখি  বয়স  আমার  খড়গ্‌পুরের  লম্বা প্ল্যাট্‌ফর্ম ,
গোঁপ  ছাঁটতে  গিয়ে  সকালে  হল কি  কেলেঙ্কারি কম ।
আরসিতে  দেখি  গালে  ছো ট  বড়  কাঁচা  পাকা   দাড়ি
এবার  মেকাপ  দিতে  জীবন  হবে  আমার   অসারই  ।
পক্ক কেশে  লাগিয়ে  কলপ  বয়স  কি  ধরে রাখা  যায়
লোকের  সাথে  মিষ্টি কথা  বলে  কি  খোকা  সাজা  হয় ।
বয়সভারে  কুব্জদেহ , ক্লান্তও  বিষণ্ণ আমার  মন
ক্লান্তিবিহীণ মুখ খানি  রয়েছে  সারাদিন  অধোবদন  ।
ভন্ডামিতে সারা  জীবন  গেল , সাদা মন পুরো  কাল  হল
আমার জীবন হল মাটি , থেকে  থেকে  করি  কান্নাকাটি।

.                    ***********                                               
উপরে


মিলনসাগর
*
      জগৎ মাঝে

জগৎ মাঝে তোমার কাজে জীবন করি পার ,
                    আমার নেই তো কোন হার ।   
জিতব আমি তোমায় পেয়ে ,
              শুধব তোমার কাছে আমার ঋণ,
এ জনমেই করব জয় এ জীবন
                 থাকব না আর হয়ে দীন হীণ ।
আমার মনের ব্যথা যায় ফুরায়ে
                  তোমার সকল কাজের মাঝে ,
তোমায় আমি জয় করব নিশ্চয়
            তোমার মধুর পরশখানির মাঝে ।
ধরার মাঝে মোহ মায়ার জালে
                   সকাল সন্ধ্যা কাটে আমার
সন্ধ্যা প্রদীপ হাতে নিয়ে
             হৃদয় মাঝে পূজা করি তোমার ।
চাই না আমি কিছুই ওগো
             জীবন দিয়ে যদি তোমায় পাই ,
পূজা হবে সঙ্গোপনে
             তোমায় ছাড়া কিছুই নাহি চাই ।


.                    ***********                                               
উপরে


মিলনসাগর
*
যখন  তুমি  গাইতে  বল  গান

যখন তুমি গাইতে বল গান
    তখন আমি হারাই সুরে সুরে ।
সুর খুঁজে না পাই সুরের মাঝে ,
    যখন তুমি বাজাও তোমার সুরে
            আমায় মনের মতো করে ।
তখন আমি সুরে সুরে ফিরি
         তোমার চরণ ধরে ।
গান গাওয়া মোর মিছেই
         যদি তুমি না গাওয়াও মোরে ।  
সুরের সকল দুয়ার খুলে
তুমি গাওয়াও সুরে সুরে ,
         হারিয়ে যে যাই তোমার সুরের মাঝে ।
ওগো তুমি সুরের  মহেশ্বর              
           তখন আমার প্রাণের মাঝে ।
আমি পড়ি তোমার চরণতলে
সুরের বাণী হারিয়ে যে যায়
               হে তুমি  আমার প্রাণেশ্বর,  
করলে আমায়  তুমি ঋণী
        হে  আমার প্রাণের সুরেশ্বর ।



.                    ***********                                               
উপরে


মিলনসাগর
*
জন্ম রহস্য

প্রকৃতির মাঝে কত যুগ পরে
জন্মিল এ প্রাণ নানা রূপ ধরে ।
জান কি কায়া কি রূপ   মায়ায়
রূপখানি লয়ে আছে এ ধরায় ।
জীবনসত্ত্বা আত্মাতে বিরাজে
কায়ার মায়ায় ছায়া চলে পিছে ।
জীবন মৃত্যু আসে আর যায়
সাগরের ঢেউ ওঠে কোথায় ।
সব জীবের মাঝে আত্মা হেথায়
বাঁধা আছে শুধু  মিথ্যা কায়ায়।
মুক্তির বাণী জীব হতে জীবে
চারিধারে শুধু পথ খুঁজে পাবে ।
শক্তি তখন পথে পথে ফিরে
মুক্তির গান গেয়ে যায় ওরে ।
সারা  বিশ্বে জন্ম থেকে জন্মান্তরে  
আলোর শক্তি সব সৃষ্টি করে ।
সেই শক্তিই নানা রূপ ধরে
পুরো ভুবন রাখে আলো করে ।

.           ***********                                              
উপরে


মিলনসাগর
*
কান্নাকাটির মাঝে তোমার দুর্বলতা বাজে
        
কান্নাকাটির মাঝে তোমার দুর্বলতা বাজে ,
    মিথ্যে তোমার জীবন করো মাটি ,
             দুঃখ সুখে জীবন কভু হয় না ওগো মাটি ।
সুখ দুঃখের মাঝে জীবন গড়ে ওঠে ,
             সংগ্রামে তার শক্তি বাড়ে ,
             বুঝিস্ না কি অবোধ ওরে ,
তোমার  মাঝে  লুকিয়ে আছে  মহৎ শক্তিওরে ।
কর্ম কৃষি মিথ্যা করিস্ ,
            করিস্ কি কর্ষণ মনে ,
মনের মাঝে বাস করিস্ তুই
            সকল রহস্যের মাঝখানে ।
মনের কৃষি হয়েছে মাটি
            মিথ্যা মায়াজালের বন্ধনে।
অশান্ত মন অশান্তপ্রাণ,  
             দিনে দিনে রিপু দিচ্ছে টান ।
             করিছে সে আকন্ঠ বিষ পান ,
মন শতদল পুড়িয়ে রে তুই
             নিজেরে  মারিস্  মৃত্যুবাণ ।


.           ***********                                                      
উপরে


মিলনসাগর
*
কেরিয়ার

কেরিয়ার   শেষে  চাকরি   হল
লেখাপড়ায়  দিয়ে  ছুটিরে ,
রঙ্গভরা এ ভুবনে আমি
ময়ুর পেখম মেলে  ধরিরে ।
ধায় যে মন আকাশ  ছুঁয়ে
পরীর কোমর ধরতে ওরে,
নেচে নেচে গাইতে হবে
সুইট , সুইট  টিনেজ  ওরে ।
মাথায় টুপি গলায় রুমাল
নাচব শুধু মনের সাধেরে ,
ধরার বাধার বাইরে এসে
গাইব শুধু প্রাণের গানরে ।
দেখব তখন জগৎটাকে
ঘুরছে সে চোরা ঘূর্ণিপাকে,
সাতপাকে ওই বাঁধব যারে
কোথায় আমি পাব তাকে ।
এমন জীবন হল যে ছাই
বিশ্বভুবনের মাঝে ওরে ,
ক্ষতি কিছুই নাই যে তাতে
ওরে ক্ষতি কিছুই নাইরে ।


.           ***********                                             
উপরে


মিলনসাগর
*
কবির  জন্ম

এ যে মস্তো উলটো  ফল ,
ফুটল   অনেক  শতদল ,
অমর  কবি  জন্ম নিল ,
কাঁপিয়ে  দিয়ে  ধরাতল ।
এমন কপি কে দেখেছে ,
কবে  তার নাম শুনেছে ,
লেখায় যেন ছন্দ জাদু ,
ভাষায় যেন  রবিদাদু ।
দিচ্ছে সে  যত গ্যাঁজা,
হচ্ছে মনে ততই মজা ।
তার এখন মনে ধরেছে ,
প্রবাল, বাস মিড্-ইস্টে।
তার এখন প্রাণ চঞ্চল ,
ছড়া ভর্তি খাতা সম্বল ।



.           ***********                                             
উপরে


মিলনসাগর
*
মিথ্যা পূজন

মিথ্যা পূজায় জীবন আমার যাচ্ছে কেটে
দেবতা খুঁজে হৃদয় মাঝে ।
আমার জীর্ণ জীবন গেল মিথ্যা পূজন করে ,
ওরে দেবতা নাই ঘরে যে ।
ভোগের বোঝা নিত্য খাওয়া , দেবতা পায়
না খেতে ভোগের প্রসাদওরে ।
ভিক্ষুক এসে যখন দাঁড়ায় দেবতা হয়ে
মিথ্যা পূজার মন্দির দুয়ারে ।
নেই কোনো হুঁস প্রাণে আমার , হৃদয়
হল শক্তকঠিন  পাথর যেরে ,
খেলার ছলে পুতুল পুজো করে ।
ফেলে দিই মিথ্যা পূজন , মিথ্যা আচার
দুনিয়ার সকল কাজের মাঝে ,
হৃদয় মন্দিরে মোর দেবতা সকল অনাচারে
নিরবে নিভৃতে পড়ে কাঁদে ।
মোর হৃদয়ে দেবতা সরব নয় যে রে ,
নীরব তিনি মোর পাষাণ হৃদয় মাঝে ।
ফুটবে না আর মোর সরোবরে শতদল
পাথর হৃদয় বীণার সুরে , মরি লাজে ।

.                                           ***********                                        
উপরে


মিলনসাগর
*
নীলাম্বরে মেঘ

আষাড়ে নীলাম্বরে নীলাঞ্জনে
              মেঘ সে হল ভরা ।
নীলশাড়ীতে  ঢেকে দিল
              বাদল মেঘ সারা ।
আঁধারভরা বাদলাকাশে
              তারা হারায় যেথা ,
মৃদুমন্দ বাতাসে ভাসি
              মরাল হয়ে তথা ।
নীলাকাশ যে যায় না ছোঁয়া,
              মেঘে আকাশ ভাসে ,
অলসভাবে বসে আছি ,
              মনে নানা স্বপ্ন আসে ।
স্বপ্ন যে মোর বাদলধারায়
              গেল না আজ ধরা ,
বাদলা গানে ভরল যে মন,
              হল  হৃদয়খানি  ভরা ।
মরাল যেমন মরালীর পিছে
             ঘোরে দীঘির পাড়ে ,
আমি তেমন ফিরি আমার
             গানের সুরে সুরে ।
সুর খুঁজে যে ফিরি আমি
             সকাল আর সাঁঝে ,
ভাসছে যে ওই সুরখানি মোর
             তোদের হৃদয় মাঝে ।

.           ***********                                           
উপরে


মিলনসাগর
*
পথ হয়েছে  নদী

পথ আজ হয়েছে নদী ,
নদী পথটি  ধরে  বয়ে  চলে ।
ডুবে যায় পথিক আজ ,
মারণবন্যা নামে বর্ষা জলে ।
গগনতলে থৈ নেই আজ,
ঢেউ ওঠে আজ মনের মাঝে ।
দিনদুপুরে আঁধার নামে,
বিষাদ বীণা কেন যে বাজে ?
যায় নদী কোন সাগরে ,
খানাখন্দে ভরা পথটি দিয়ে ।
আমি পথে ফিরি আজি ,
আমার পায়ে  ঢেউ  তুলিয়ে ।
ঘূর্ণী ওঠে জলের তোড়ে,
ছুট্‌ছে  এ পথ সাগর  পানে ।
সে কি এটা জানতে পারে ,
চলেছে সে কিসের টানে ?
নুড়ির ঘুঙুর পরে আমি,
অজানার টানে চলেছি ভেসে।
কোথায় আমি ফেলব নোঙর,
হেসে  হেসে খেলা  শেষে ।

.           ***********                                           
উপরে


মিলনসাগর
*
শোনো  বন্ধু শোনো  

বন্ধু তোমরা দাঁড়িয়ে  আছো
এই ভুবনের পারে ।
তোমাদের বরেছি মোর অন্তরে ,
গভীর প্রেমে ধরে রাখি
ল্যাপ্‌টপ আর কম্প্যুটারে ।
পদ্য আর ছড়া দিয়ে
বেঁধেছি এক পরিবারে ।
না হও তোমরা মোর পাশে ,
হারাওনি মোরে দেশ বিদেশে ।
জীবনের শেষ প্রান্তে আসি
বেঁধেছ নিবিঢ় প্রেমের কসি ।
হে বন্ধু প্রবাল , হে বন্ধু প্রণব ,
তোমাদের মতো যত বন্ধু-বান্ধব ,
কেটেছ সিঁদ মনেতে আমার ,
চুরি করেছ ভালবাসা মোর ।
তোমরা দিয়েছো সাড়া বারবার ,
বাধা হয়নি তা প্রেমের ,
আমাদের এই উদ্দেশ্যের ।
এ বাণী হয়েছে সফল
আমাদের এই বন্ধু প্রাঙ্গনে ,
গড়েছি মোরা সেতু
অদূরে মিলব বন্ধুত্ত্বের বৃহৎ অঙ্গনে ।

.           ***********                                           
উপরে


মিলনসাগর
*
শ্রষ্টা ও সৃষ্টি

আশ্চর্য্য হয়েছি  দেখে বারবার ,
            হে  শ্রষ্টা সৃষ্টি তোমার ,
                     একি  জ্যোতি তোমার ।
তোমার বাতাসে আছে মুক্তি,
                     একি দান তব অনুভূতি ,
     তোমার বারবার পেয়েছি পরিচিতি ।
          প্রশ্ন রেখেছি বারেবারে,
              মুগ্ধ করেছ প্রেমে আমারে ,
                      অন্ন দিয়েছ নিরন্নরে ।
গড়েছ এই মর্তভূমি তোমার ছাঁচে ,
           নিয়ম ও আবর্তন সাথে আছে ,
                তোমার আলোয় মুক্তি আছে ।
                  হয়েছ  সৃষ্টির অভিভাবক   সত্ত্বা  
             তাই মেনে নেই তোমার অধীনতা ,
                   তাই আমি হয়েছি তুমি ,
                      তুমি হয়ে আছ আমি ।
আমি গুণ , তুমি নির্গুণ ,
             তোমাতে আমি হয়েছি একাকার ।

.                     ***********                                             
উপরে


মিলনসাগর
*
শ্রষ্টা ও সৃষ্টি

আশ্চর্য্য হয়েছি  দেখে বারবার ,
          হে  শ্রষ্টা সৃষ্টি তোমার ,
                   একি  জ্যোতি তোমার ।
তোমার বাতাসে আছে মুক্তি,
                   একি দান তব অনুভূতি ,
   তোমার বারবার পেয়েছি পরিচিতি ।
        প্রশ্ন রেখেছি বারেবারে,
            মুগ্ধ করেছ প্রেমে আমারে ,
                    অন্ন দিয়েছ নিরন্নরে ।
গড়েছ এই মর্তভূমি তোমার ছাঁচে ,
         নিয়ম ও আবর্তন সাথে আছে ,
              তোমার আলোয় মুক্তি আছে ।
                হয়েছ  সৃষ্টির অভিভাবক   সত্ত্বা  
           তাই মেনে নেই তোমার অধীনতা ,
                 তাই আমি হয়েছি তুমি ,
                    তুমি হয়ে আছ আমি ।
আমি গুণ , তুমি নির্গুণ ,
           তোমাতে আমি হয়েছি একাকার ।

.                     ***********                                             
উপরে


মিলনসাগর
*
স্বপ্ন দীপের ধোঁয়া

জ্বলছে যে দীপ
            কমছে যে তেল ,
পুড়ছে যে ধুপ ,
            স্বপ্ন আমার হচ্ছে ছাই ।
ছিল যত স্বপ্ন আমার
            আকাশ ভরা তারা যেন,
ঝিকিমিকি রৌদ্র বালি ,
            ছোট ছোট স্বপ্নমাখা হাই ।
মনের যত আলেয়া আমার,
            মরু  স্বপ্নে হল ছারখার ,
মৃগের পিছে ধেয়ে যে মিছে
            হয়েছে তা দিশেহারা ।
বসন্তের মন ফাগুন হাওয়ায়
            কৃষ্ণচূড়া হল রাঙা ,
রাধাচূড়ায় মাঠ ভরেছে ,
            স্বপ্ন আমার বকুল বনে হারা ।
সবুজ যে মন ছিল আমার
             হারিয়ে গেছে স্বপন হয়ে,
ফাগুন হাওয়ায় ভরা
             রাঙা হৃদয় শুণ্য করে দিয়ে ।
স্বপ্ন যত আকাশ তত
             নেই সীমা তার কোনও,
হোলো কুপোকাৎ ভাগ্য,
             ভেসে গেল সব স্বপনও ।

.                     ***********                                             
উপরে


মিলনসাগর
*
তোমার মুখখানি

তোমার মুখখানি যখন উঠল ফুটে
ওই আলো ছায়ার আভাস মাঝে ,
মুখখানেতে চোখগুলি  ওই তারায় ,
তারায় ঝিকিমিকি করে ।
দৃষ্টি তোমার ছড়িয়ে পড়ে
আমার হৃদয় গগন মাঝে,
তোমার আবেশ তোমার পরশ
মনে জাগায় আশার বাণীরে ।
আনন্দে ঐ বাজে বীণা
আমার সকল সুখের মাঝে ।
আমার সকল কাজে তুমি
মোহন বীণা বাজাও ওরে ,
আমায় তুমি গড়ে তোলো
তোমার মনের মতো করে ।
সুরে সুরে গাই যে আমি ,
তোমার চরণে শুধু নমি
যায় সে ভেসে আকাশপারে ,
খোলা সুরের দিগন্ত ভোরে ।

.        ***********                                               
উপরে


মিলনসাগর
*
হে মহাপ্রাণ

মাণবী গর্ভগৃহে তুমি সৃষ্ট হও যুগে যুগে ,
নানা রূপ ধরে এ জীব থেকে ও জীবে ,
তাহা নয় কি শুধু মাত্র ঈশ্বরের বোধে ?
শিল্পীর ছবি জাগে রঙ ও তুলির আঁচড়ে ,
সে রূপ ফুটে ওঠে ধপধপে ক্যানভাসে ।
যেমন ফুল ফোটে গাছের ডালে ডালে ,
ঈশ্বর যেখানে হাসে , মৌমাছি মধু খায় ,
গুনগুন গান করে ফুলে ফুলে যায় চলে ।
মূর্ত্তি জাগে খড় কুটোয় কাদামাটি লেপে ,
জাগে সে প্রাণ বোধনে , জাগে সে ঘটে ।
ক্ষণিক সে প্রাণ যায় ধুয়ে কালের কবলে ,
তুমি জাগো প্রাণ ওই অসীম স্রষ্টার দানে ,
আত্মারূপে তব মায়াময় ধ্বংসশীল অস্তিত্ত্ব
বিরাজিছে পৃথিবীতে এই মায়া দেহ ধরে ,
তুমি জাগো গো , প্রাণে বাজো আত্মা হয়ে ,
জন্ম মৃত্যুর মাঝে কালের বীণার ঝঙ্কারে ,
মৃত্যুতে সে প্রাণ তুমি করো অক্লেশে দান ,
রহস্যময় কালাতীত সৃষ্টির এ ধরাতলে ।
                              দেবী - ১/৯/০৬


.        ***********                                               
উপরে

মিলনসাগর
*
আজব শৃঙ্খলা

অম্বরে আজ কে ফোটালো বল আলোর শতদল ,
ছিন্ন মেঘের ভেলাগুলি ফেরে আনন্দ বিহবল ।
মরাল যেমন ভেসে চলে পদ্মভরা দীঘির কোলে,
আমি ভাসি তাঁর হিয়ায় , আনন্দ কোলাহলে ।
জীবনে যে দু:খ রয় ভাসে তা পুণঃ আনন্দমাঝে,
লীলায় যেন ব্যস্ত প্রভু নিখিল বিশ্বব্রহ্মান্ড মাঝে।
আলো আঁধারে দু:খ সুখের মাঝে জীবন পার হয় ,
নিত্য কাজের মাঝে, জীবন খেয়া ধীরে বয়ে যায় ।
আলোর মাঝে আঁধার টুটে , দু:খ ভাঙে সুখ-মাঝে,
দু:খ নাহি রয় যবে আমি জাগি বিশ্ব-প্রভুর মাঝে ।
                                      দেবী - ২৬/৮/৮৬

.                ***********                                               
উপরে

মিলনসাগর
*
আত্মা

মাণব যত বিশ্বে প্রকাশিত হয় ,
তত তার সার  আত্মায় তন্ময় ।
তুলির ছোঁয়ায় শিল্পীর সার ,
খড়-কাঠ সার নয় প্রতিমার ।
প্রকাশ শিল্পীর তুলির মাঝে,
হাড় মাস দেহ ধীরে গড়ে ।
আত্মা মায়াময় নবরূপ ধরে,
দুয়ে মিলে শিশুর সৃষ্টি করে ।
দেহমাঝে আছে যে অব্যক্ত ,
সেই সার থাকে মৃত্যু পর্য্যন্ত ।
শিল্পীর হাতে গড়া রূপ মৃন্ময়,
জলে ধুলে রূপ থাকে কোথায় ?
প্রাণ দেহমাঝে মায়ারূপ ধরে,
ধীরে ক্ষয় হয় তনুটি  যেরে ।
মাটির পুতুল,আত্মারূপ প্রাণ,
সবে মিলে এক হয়ে এ জীবন ।
জীর্ণ দেহ প্রকাশ শেষে মরণে,
মনরূপ আত্মা তবে ঊর্দ্ধ গগনে ।
                দেবী - ২৬/৮/০৬

.           ***********                                               
উপরে

মিলনসাগর
*
ছবি

জীবন শেষে ছবি হয়ে তুমি যে
রও জেগে মোদের হৃদয় মাঝে ।
ছবির মাঝে যে স্মৃতিখানি দিয়ে,
তুমি মোদের মন দিলে নাড়িয়ে ।
অনেক দিনের অনেক কথা হায়
মনের মাঝে আজও ধাঁধাঁ জাগায়।
হারালেও তুমি হারাওনিকো ওরে,
তোমার আমার বিশ্ব মাঝে যেরে ।
সত্যি বল তুমি কোথায় লুকাও ,
মনের মাঝে কুহেলিকা জাগাও ।
কোন ভুবনের পারে তুমি গেছ ,
নিশ্চয় সেথা পরম সুখে আছ ।
তোমার ছবির উপর মালাখানি,
প্রাণে আমার জাগায় শ্রদ্ধাখানি ।
তোমার নানা সময়ের নানা কথা,
মোদের মনে জাগায় শুধু ব্যথা ।
জীবনভরে তোমার শোক বাজে,
মন লাগে না কভু কোন কাজ়ে ।
তোমার কথা অবাক হয়ে ভাবি,
স্মৃতি শুধুই মোদের কাছে ছবি ।
সেই ছবি ওই হাসছে মিটিমিটি,
জানতে সে চায় নানা খুঁটিনাটি ।
আমাদের এই হৃদয় শুন্য মনে ,
প্রশ্ন শুধু যে জাগে ক্ষণে ক্ষণে ।
                দেবী - ২৫/৯/০৬

.           ***********                                               
উপরে

মিলনসাগর
*
ছারখার ধরণী

ধরণী আর না পারে তার দেহভার বহিতে,
অত্যাচারে স্বেচ্ছাচারে ছারখারে যাইতে ।
বনভূমি ধ্বংস করে সর্বনাশ মানুষ করে ,
তাপিত ধরার  রোষ অঙ্গার সৃষ্টি করে ।
বল  ওগো  রুধিবে  কে  আজ  তারে ,
ধরণী করে আকন্ঠ বিষ পান, নীল হয়,
ধরিত্রি নানা বিপর্যয় বার বার ঘটায় ।
ধরার অঙ্গার গরল , কে পান করে ?
দেখি লাঞ্ছিত আর কর্তিত তরুবরে ।
মহাদুর্যোগ মাঝে অভিশাপ আজ ঝরে ।
সাগর ফুঁসিছে ভাসাইয়া ধরার বেলাভূমি ,
ধরাতল  রসাতল , বাঁচিবে কি আর তুমি ?
প্রকৃতির মাঝে ঘটে অবিরাম দুর্যোগ নানা,
হঠাৎ আসে সুনামি, হ্যারিকেন ক্যাটারিনা ।
পৃথিবীর বুক যায় চিরকাল শুধু চিরে ।  
                               দেবী - ১৮/৮/০৬

.           ***********                                               
উপরে

মিলনসাগর
*
জীবন গল্প

জীবন গল্প শেষ হলে  তুমি ছবি হয়ে রবে ,
ছবির মাঝে স্মৃতি হয়ে মনকে ধরে নাড়বে ।
অনেক দিনের অনেক কথা মনে বাজে আজও ,
হারালেও যা হারায় না তা কি থাকে কোথাও ?
মস্ত জাগে একি কুহেলিকা ছবির পরে মালাখানি,
তোমার তরে আমাদের আছে যে এই শ্রদ্ধাখানি ।
তোমার কথা মোদের মনে ব্যথায় ভরে বাজে ,
অবাক হয়ে ভাবি , তুমি নেইকো মোদের মাঝে ।
যখন তখন যেথা সেথা মোর হৃদয়ে শুণ্য মনে ,
তোমায় ঘিরে নানারকম প্রশ্ন জাগে ক্ষণে ক্ষণে ।
সত্যি বল কোথা তোমার কেমন করে দেখা পাই,
কেমন সুখের সে আবাস, শুধু ছবির পানে তাকাই ।
হতাশ হয়ে তাকাই যত , চোখে তত অশ্রু ঝরে ,
তোমার ছবির চরণতলে সে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে ।
                                     দেবী - ২৪/৯/০৬

.           ***********                                               
উপরে

মিলনসাগর
*
দুঃখ সুখের মাঝে

দুঃখ সুখের মাঝে মোদের জীবন বেঁচে আছে ,
যেমন আশা হয় হতাশা নিত্য খেলার মাঝে ।
মিথ্যে যত চিন্তা করি , সুখ দুঃখের মাঝে মরি ,
জন্ম হলেই মৃত্যু হবে, কি হবে  ভাবনা করি ।
আলো গেলে আঁধার আসে, দুঃখের পরে সুখ ,
সুখের মাঝে হারিয়ে গেল জীবন - ভরা দুখ।
মিথ্যা যত জীবনভোর চিন্তা , নাই সীমা তার ,
আছি নিত্য বাঁচি , ছায়ার মাঝে ক্ষণিক মায়ার ।
নিত্য করি নানা আশা, কিন্তু হয় যে সর্বণাশ ,
মৃত্যু যখন আসে , তখন মানে না কোনো পাশ।
মিথ্যা তোমার কান্নারাশি , নাই যে সীমা তার,
বীণার তারের ঝঙ্কারে  জীবন  যে  হয় পার।
                                    দেবী - ১/৯/০৬

.           ***********                                               
উপরে

মিলনসাগর
*
বুড়বাক

ঘুরছো তুমি ভুবনখানি মস্ত নেশার পেশায় ,
লাট্টু যেমন ঘোরে অনেক কড়ির আশায়।
তোমার ঘট হয়েছে খালি , শুণ্য কাণাকড়ি ,
হাটের মাঝে ভাঙছো তুমি মস্ত বুদ্ধির হাঁড়ি ।
জীবন কথা ভুলে কর তুমি বাড়াবাড়ি বড়ই ,
মিথ্যা মাথা খুঁড়ে মর যেন ক্ষ্যাপা পাগলই।
সাধক তুমি , মিথ্যা মায়া-ঘর দিয়ে ছেড়ে ,
মনের সাধে বাজাও তোমার জীবন ভেঁপুরে।
আপন ঘরে তুমি সারা জীবন ধরে পরবাসী,
মিথ্যা হাসি নাচিনাচি বাজাও তোমার কাঁসি ।
                              দেবী - ২৭/৯/০৬

.           ***********                                               
উপরে

মিলনসাগর
*
বীজ রহস্য

ফুল ওগো তুমি  নিত্য ফোটো গাছের ডালে ডালে ,
ঝরে যাও শেষে কিন্তু তব প্রাণ জেগে থাকে ফলে ।
গাছেতে ফল ধরে  , ফল প্রাণ সঞ্চার করে বীজে,
জাগে সে প্রাণ পুণঃ জলের ও মাটির স্নেহ পরশে ।
অঙ্কুরিত মহাপ্রাণ পল্লবিত হয় ডাল থেকে ডালে ,
ধরে থাকা  প্রাণ ঈশ্বরের দান রহস্য সহজে মেলে ।
বাঁচেযুগযুগ ধরে শেষে তনুদান করে মঙ্গলের তরে ।
কালের কবলে হেলায় মারা যায় সৃষ্টির মাঝারে ।
                                     দেবী - ৯/৯/০৬

.           ***********                                              
উপরে

মিলনসাগর
*
ভাগ্যের পরিহাস  

প্ল্যানটি করে , ছকটি কসে ,
বিয়ে আমার হয়েছিল যে ,
অনেক অনেক কাল আগে ।
দেহটি তখন ছিল আমার ,
এতই শক্ত  আর  সবল ,
পাথর লোহা কোথায় লাগে ।

ভেবে চিন্তে পিতা আমার
বাঁধলো আমায় মস্ত বাঁধনে ,
গিন্নি আমার ছিল  তখন
প্রায় আঠাশ বছর পিছনে ।

মা ভেবেছিল আমি চিরদিন,
বুড়ো খোকাই যাব রয়ে ,
কাটবে জীবন বউর হাতে
দুধেভাতে আমসত্ত্ব খেয়ে ।

জীবন মরণ হিসাব কভু
কখন নিজের হাতে নয় ,
আমার আশী না আসিতে
বউর  ৫০  পার না হয় ।

এখন আমি জানলা ধরে
তাকাই সবুজ ঘাস পানে ,
মাঠের দিকে চেয়ে চেয়ে ,
খালি জল ঝরে দু নয়নে ।
            দেবী -১/৯/০৬  

.           ***********                                              
উপরে

মিলনসাগর
*
মুঢ় তুই           

ওরে মুঢ় তুই হারাস্‌ তোর যৌবন মিছে ,  যায় তা ব ’ য়ে অকর্ম মাঝে ।
কাল যায় ওরে ধীরে চলে , তোর জীবনকাল তার পিছে পড়ে রয় মিছে ।
অবহেলে তুই যাস্‌ ফেলে তোর জীবন , হারায় তা যৌবন কালেকালে ।
অবশেষে তুই দেখবি যে তোরে , যখন বাঁকী কিছু নাই রে তোর ভালে ।‌
ভাগ্যের পরিহাসতরে হয়েছে যে তোর সারা জীবনে অনেক সর্বনাশ ।
অগাধ দুখঃ সলিল করিয়াছে মুঢ় তোরে নিঃশব্দে আর নিঃশেষে গ্রাস ।  
                                                দেবী - ২৬/৮/০৬           
 

.           ***********                                         
                  উপরে

মিলনসাগর
*
ওঙ্কার            

ওঙ্কার ওই সঙ্গীতে
ইঙ্গিত মোর গীতে ।
ঝঙ্কৃত সে সুর
তব অন্তর ইন্দ্রিয়ে ।
জাগ্রত তুমি টঙ্কারে
আমার তারে তারে ।
শঙ্কিত নও অন্তরে
মোর ঝঙ্কার অঙ্গনে ।
আজ নীরব সংগীতে
আমি তব হৃদয়ে ।
জাগ্রত অনুরণণে
মুক্তির সুর বাজে ।
আছে বিশ্ব চরাচরে
চিনেছ কি সেই সুর।
তব হৃদয়ের ঝঙ্কারে
অবিরাম সে সুর ।
মোর আঘাতে ঝরে
তোর হৃদয় দুয়ারে
সেই অনাহত সুররূপ
আমি নিদ্রিত তোর
শয়নে স্বপনে হৃদয়ে ।
          দেবী - ২৫/২/০৭
          


.     ***********                                              
উপরে

মিলনসাগর
*
ওরে তুই লক্কা        

যেতে চাস মক্কা
পরিশেষে অক্কা ।
মশলার খ্যাঁটে তুই মশগুল
হাতে তোর বুলবুল
মন তোর চুলবুল ।
বিরিয়ানি পাতে গড়াগড়ি
নিস খেয়ে তাড়াতাড়ি
দেয় তোরে সুড়সুড়ি
চটকায় নাড়িভুড়ি  ।
লাল জলে নিস্তার নেই যেরে ,
আহা মরিমরি বলিহারি
করিস না বাড়াবাড়ি  ।
পোড়া মাছমাংস
নিয়ে খন্ডযুদ্ধ ।
ওরে তুই মাথামোটা
ব্যাটা হাঁড়িচাঁচা  ।
কোথা গেল কলাপাতা
হারাল ক্যালকাটা ।
না খেয়ে বাগবাজারের দই
খালি করিস হইচই ।
           দেবী - ২৫/২/০৭
        


.     ***********                                              
উপরে

মিলনসাগর
*
কলাবতী        

ওগো কলাবতী তুমি আমার জীবন ভরে লজ্জা দিয়েছ ভারি ,
তোমার নিপুণ অভিনয় ও ছলাকলায় আমার গলায় হল দড়ি ।
সারাটা জীবন তোমার পিছে ঘুরে, মাটি হল মোর জীবন যেরে ,
তোমার সাথে পাল্লা দিতে দাঁড়িপাল্লা কখন মোর গেল ভেঙেরে ।
তোমার ঠোঁটের ডালিম খেতে গিয়ে কামড়ে, আঘাত পেলাম মনে,
তোমার চোখের বিজলীর ঝলক, ঝিলিক জাগায় আমার প্রাণে ।
তোমার পিছে ঘুরে ঘুরে আমার এই জীবন গেল মিথ্যা ব ’য়েরে ,
আমি শেষে সব হারালাম, এখন কি করি ভেবে পাই না খুঁজেরে ।
                                            দেবী - ২৭/৯/০৬

      


.    
                   ***********                                              উপরে

মিলনসাগর
*
খুশীর পালে          

সকাল সন্ধ্যা খুশীর পালে
লাগে হাওয়া হৃদয় দোলে ।
শাড়ির আঁচল ফুরফুরিয়ে
যায় সে আমার পাশ দিয়ে ।
বাদল ভরা মনটি আমার
সময় পায় হাল্কা হওয়ার ।
না বইলে এমন হাওয়া
কেমন করে খুশী হওয়া ।
ঝড় বৃষ্টির আঁধার মাঝে
মনটা আমার ভিজে আছে ।
শ্বাস নিতে হাওয়ার মাঝে
মন যে আমার খুব নাচে ।
বর্ষা মাঝে মনের সকল
বন্ধ দুয়ার কর আগল ।
গেছে কেটে দুখঃ আমার
দেখে মুখ ওই চাঁদমামার ।
চাঁদ হাসে আকাশ ভরে
দেয় যে সব উজাড় করে ।
পুলক লাগে ক্ষণে ক্ষণে
ক্লান্ত আমার এই প্রাণে ।
          দেবী - ১/৯/০৬

.      ***********                                              
উপরে

মিলনসাগর
*
খেলোয়াড়        

মস্তবড় এক খেলোয়াড় তুমি সত্যিকারের গুণী ,
ফুটবলের আজো হয়ে আছো মস্ত মহাণ তুমি ।
সামনে পা পিছনে পা তারমধ্যে তোমার বলটাই ,
সারা মাঠটি দৌড়ে মর লক্ষ তোমার ঠিক নাই ।
গোলে তোমার লক্ষ নেই তা দেখলে বোঝা যায় ,
গোল দিতে গিয়ে কেউ  নিজে নয়ত গোল  খায় ।
সারা জীবন মাঠের পিছে ঘুরে মর যশের আশায় ,
তোমার চাষের ফল কি হল বোঝা তা যে বড় দায় ।
টিপ না করে গোলে মার কেন আর কি ভাবনায় ,
টাকাই এখন লক্ষ তোমার, যশ খ্যাতি নিশ্চয় নয় ।
পকেট ভরা টাকা তোমার নেই কোন ঠিকানা তার ,
দিনে রাতে খেলে শেষে হল একি সর্বণাশ তোমার !
                                          দেবী - ২৭/৯/০৬  


.    
             ***********                                              উপরে

মিলনসাগর
*
জীবন নদী        

জীবন নদী চলেছে ব ’য়ে ,
প্রাণের খেয়াটি সাথে লয়ে ।
খেয়াখানিরে বোঝাই করি ,
যা আছে মোর জীবন ধরি ।
খেয়া পিছে ফিরে না চায় ,
সে শুধু মুক্তির পথে ধায় ।
থেকে থেকে পরশ তোমার ,
লাগে আমার জীবনভোর ।
জীবন বোঝা যা কিছু ছিল ,
নদীর কুলে কুলে তা নামল ।
সব কিছু মোর থাকবে পড়ে ,
ওই জীবন নদীর দুই পাড়ে ।
চাইব না আর কিছু ভুলেও ,
ফিরব না আর নদীর ঘাটেও ।
খেলব না আর তোমা সাথে
নিত্য লীলায় পথ হারাতে ।
দে ফেলে দে খেয়ার বোঝা ,
শুন্য হাতেই ফেরার মজা ।
তোমার ডাকে সাড়া দিতে
ফের ভাসব ছোট খেয়াতে ।
যাব সে চলে কোন সুদূরে ,
মাটির মানুষ , মাটিকে ছেড়ে ।
              দেবী - ২৬/৮/০৬
 
.
       ***********                                              উপরে

মিলনসাগর
*
জীবন মায়া            

মাণব জীবনে আছে ভরপূর যৌবন ,
আছে মধুচন্দ্রিমা ভরা সুন্দর জীবন ।
আছে রাধাকৃষ্ণ , আর আছে বৃন্দাবন ,
আছে মধু স্মৃতিতে ভরা মধুর নন্দন ।
মোরা মুসাফির হয়ে আসি গো ফিরে,
হয়ে ক্ষণিকের অতিথি ধরণী মাঝারে ।
বয়ে যাই আনন্দে জীবন খেয়া মোরা ,
যদিও ক্ষণিক জীবন শুধু মায়ায় ভরা ।
অনন্ত কর্ম নিত্য আসা যাওয়া করায়
সুপরিকল্পিত সৃষ্টির এক কঠিন মায়ায় ।
নিত্য আসাযাওয়া একই ধরণী মাঝে ,
কর্ম অকর্ম যেথায় একসাথে বিরাজে ।
ধরাধামে সৃষ্টি অবসানে , শুন্য হাতে
ঘরে ফিরি মোরা , আবার আসিতে ।
বাস্তবের  জীবন বোঝে কি এই  মায়া ,
কায়া হল অনন্তের এক সাময়িক ছায়া ।  
                     দেবী - ২২/৮/৮৬  


.        ***********                                              
উপরে

মিলনসাগর
*
নবীন            

গগন আলোকিত সূর্য্যের ছটাতে ,
তুমি যে আলোকিত এই মাটিতে ।
জীবন মাঝে তুমি জেগে থাকো ,
সকল উৎসবকে বাঁচেয়ে রাখো ।
হে নবীন তুমি চিরকাল ভাস্বর ,
প্রাণে হরষ জাগে পরশে তোমার।
অজেয় তুমি চঞ্চল প্রাণে জাগো ,
তুমি উচ্ছল তুমি কল্লোল ওগো ।
জাগো হিল্লোলে মম হিয়া মাঝে,
শ্রদ্ধা বিনয়ে ফলভারে নত লাজে ।
তুমি কখনো রুদ্র , শান্ত কখনো ,
বরাভয় দিতেও আসো কখনো ।
দেখি তব মুখখানি বিস্ময় মাঝে ,
জাগো দীপ্ত হয়ে মম মনোমাঝে ।
নিবীড় তমসা ও নিরাশার মাঝে ,
তখন জাগি আমি সকল কাজে ।
কালে কালে তুমি অবতার হয়ে ,
বাঁচাতে আসো বড় আশা লয়ে ।
তব আশীস রাখি হিয়ার মাঝে,
বাঁচিয়া আছি আজি সকল কাজে ।
ওগো নবীনের এই যুগেযুগে আসা,
মোদের প্রাণে আনে বল ও ভরসা ।
                    দেবী - ২৬/৮/০৬
 


.        ***********                                              
উপরে

মিলনসাগর
*
পাকড়াশী      

পাকড়াশী দেয় পাক তার মস্ত দাড়িতে,
মৌমাছি করে নাচ , মিষ্টি মধু খেতে ।
মিষ্টিতে দেয় পাক পাকড়াশীর মস্ত দাড়ি ,
আছে তার মস্ত গাড়ি , আছে মস্ত বাড়ী ।
আছে মস্ত পুকুরখানি , গোলাভরা ধান ,
করে খুব হাঁকাহাঁকি , অনেক সম্মান ।
চারপাশে মারে উঁকি মোসাহেবের দল ,
তারা চারিদিক ঘিরে সব বাজায় মাদল ।
সারাবাড়ী ঘোরে রাশিরাশি চাপরাশি ,
মাথা খুব সাফ্‌ যেন ক্ষুরধার অসি ।
অসি হাতে ঘোরেফেরে তার বডিগার্ড,
খোঁজে রহস্যরাশি , ফেরে পুকুর-মাঠ।
আমি হাসি আর দেখি নিয়ে সাঁড়াশি ,
দাড়ি-গোঁপসহ , এই হল পাকড়াশী ।
                         দেবী - ১৯/৮/০৬


.        ***********                                              
উপরে

মিলনসাগর