গায়ত্রী দাশ শর্মার কবিতা
যে কোন গানের উপর ক্লিক করলেই সেই গানটি আপনার সামনে চলে আসবে।
১।  কা      
২।  
ক্ষ্মী বৌ
৩।  নয়ন জলে পূজা
৪।   আমি বাঁচবো    
৫।   
আজকে বিশেষ দিন                     
    
  
         
        
*
      একা

এসেছিলাম একা আবার যাবোও তো একা
  মাঝখানে কেন গন্ডোগোল?
মায়ার বাঁধন খোল ওরে মায়ার বাঁধন ভোল
  জীবনে যা কিছু পেয়েছি সবই তো মায়া
  যার নাইকো কোনো কায়া |
মায়ার তরে কেন কাঁদা আর হাসা?
মায়ার নিয়ম শুধু যাওয়া আসা |
কোরবো না কো এর কাছে অন্য কিছু আশা,
  মায়ার বাঁধন ছিঁড়তে হবে ---
একা আমায় চলতেই হবে |
মায়ার তরে সুখ দুঃখ কেন তবে?
মায়ার মাঝে রইবো যত জ্বলবে তোমার বুক
মায়ার তরে দুঃখ কেন? কেনই বা তারপরে সুখ?
ওরে মায়ার বাঁধন খোল, মায়ার বাঁধন ভোল |
  মায়া শুধুই মরিচিকা --- যতই জড়াবো মায়ার ফাঁদে
  মায়ার বাঁধন ততই জড়াবে আমায় পাঁকে |
মায়ার তবে শেষে কেবল রইবে শুধুই কান্না
  যখন জানবো মায়া আমায় আর চায় না,
দেখবো কখন মায়া আমাকে ছেড়ে গিয়েছে চলে,
  কিচ্ছুটি না আমায় বলে
তখন থেকেই আমি শুধুই একা
পাব না আর মায়ার দেখা |
রইবো বসে ঘরের কোণে আমিই শুধু একা
পাব না আর মায়ার দেখা |
রইব বসে ঘরের কোণে আমিই শুধু একা |
একা একা একা কোথাও নেইতো কারোর দেখা
চক্ষু মুদে দেখি কেবল আমিই শুধু একা
  চারিদিকে ঘুটঘুটে স্তব্ ধতার   অন্ধকার ---
  যেন মৃত্যুর হাহাকার!
                  একঘরে খালি বুকে রইনু পড়ে
                  কান্না আমার দুচোখ বেয়ে পড়ল ঝরে
  কত ঘন্টা এমনভাবেই হয়ে গেল পার
  বুকের মাঝে বাজলো শুধু শুণ্য হাহাকার
  হঠাত্ দেথি এক দিব্য জ্যোতি!
     একি এত আলো!
  কোথা থেকে এলো এত আলো?
  ঘুচিয়ে দিলে অন্ধকারের কালো!
  মনের দরজা গেল খুলে
  বক্ষ আমার উঠল দুলে
দেখি তুমি এসেছ মোর কাছে
কানে কানে বলছ তুমি ' আছে, আছে, আছে |
    চেয়ে দেখ সবই আছে |'
রইলো আমার নয়ন ধারা
কেঁদে কেঁদে হলেম সাড়া
বললেম 'কি আছে প্রভু কি আছে?'
বললে তুমি, 'আছে এমন ধনও যা হারায় না রে কখনও'|
    বুঝলেম নইত আমি একা ---
    আমি পেয়েছি তাঁর দেখা |
জ্বেলে নিয়ে মনের বাতি
পেয়েছি যে মনের সাথী
তাঁকে নিয়েই চলব দিবস রাতি |
আমি নইত আর একা,
আজ পেয়েছি তাঁর দেখা |

      ***************************
লক্ষ্মী বৌ

আমি এক ঘোমটা ঢাকা বউ,
আমি পাড়ার লক্ষ্মী বউ
আমায় জানে না তো কেউ
আমায় বোঝে না তো কেউ,
আমি এক ঘোমটা ঢাকা বউ,
আমি পাড়ার লক্ষ্মী বউ |
পাড়ার লোকে সবাই মোরে
'লক্ষ্মী মা' বলে সোহাগ করে
তুলনা দেয় অন্য বউ এর সাথে
ঘোমটা নাকি ওরা আমার
নিত্য মাথায় দেখে |
আমি এক ঘোমটা ঢাকা বউ,
আমি পাড়ার লক্ষ্মী বউ |
শ্বশুর বাড়ীর সবাইকে
সদাই মান্য করে চলি
শ্বশুর, ভাসুর, স্বামী ও শাশুড়ীর
সব কথা শুনে চলি
কথা বলি, ওদের সনে, দৃষ্টি করে নিচু --
সদা সব সময় চলি তাঁদের পিছু পিছু |
মৃদু স্বরে কয়ে কথা, দৃষ্টি করে নত --
বিয়ের পরের দশটি বছর হল সে বিগত |
বিয়ের পরের দশটি বছর ঐ ঘোমটার ফাঁক দিয়ে
কেটে গেল কোথা দিয়ে, কি হবে তার হিসাব খানি নিয়ে?
রাঁধার পরে খাওয়া, আবার খাওয়ার পরে রাঁধা
বিয়ের পরের দশটি বছর ছিল একই চাকায় বাঁধা |
বাড়ীর সবার খাওয়ার শেষে আমার খাওয়া দাওয়া
দুপুর বেলায় বারণ আমার বিছানায় শোয়া |
   সারা দুপুর জানলা দিয়ে দেখি আকাশটাকে
   হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চাই ঐ দুরন্ত বাতাসকে
ফুলগুলি সব গাছের ডালে দুলতে থাকে নিয়ত --
রঙবেরঙের প্রজাপতিরা সব হাতছানি দেয় অবিরত |
ডাকতে আসে ওরা আমায় কইতে আসে কথা --
ওদের একটু ছোঁয়ায় আমি ভুলি মনের ব্যথা |
রান্নাঘরের পাঁচিল বেয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছে
মনটা আমার আটকে গেল যেথায় কোকিল আছে |
শুনতে চায় মন কোকিল আর দোয়েলের মিষ্টি মধুর ডাক --
হই কেন যে, আনমনা তা বুঝতে নারি আজ |
এই 'আনমনা মন' ভাঙতে চায় বুঝি সব ছকে বাঁধা নিয়মকে
ভেঙে বুঝি আনবে সে আজ সংসারের সব অনিয়মকে |
হঠাট শুনি বিকট আওয়াজ খেতে দেওয়ার ডাক
'অনিয়ম' কে দূরে রেখে শুধু 'নিয়ম' রাখার ডাক |
আমার মনের নান্দনিকতা রইল পড়ে দূরে --
সংসারের সব 'নিয়ম'গুলি বসল মনটি জুড়ে |

আমার মনের যতেক ইচ্ছা কামনা সব যত --
ঘোমটার তলে রইল চাপা হল সে বিগত |
আজ নেইতো কিছু নিজের তরে চাওয়ার
নেইকো কিছু নিজের কথা কওয়ার
নিজের যে কি মত তা জানাইনে তো কভু
অন্যের মত বেঠিক হলেও ঠিক বলিয়ে তবু |
দশের ইচ্ছা বোঝাই করা ঐ ঘোমটাখানি দিয়ে
মনের যত ইচ্ছাকে সব রেখেছি বাঁধ দিয়ে --
শুধু ঐ 'লক্ষ্মী বৌ' ডাকটি শোনার লোভে
ভুলেছি সব না পাওয়ার ক্ষোভকে ||

আমি এক ঘোমটা ঢাকা বউ,
আমি পাড়ার লক্ষ্মী বউ ||

         ************************
নয়ন জলে পূজা

বুক ভরা মোর ব্যথার জ্বালা
   নয়ন ভরা জল --
তাই নিয়ে মা দিচ্ছি পূজো
নিবি কি না বল?
রক্তে রাঙা 'ব্যথার ফুলে'
অঞ্জলী মোর নিও তুলে
গঙ্গা জলের বদলে আজ
নিও 'নয়ন জল' ---
তার পরে মা দিও আমায়
'তোমার ইচ্ছাফল' |
পঞ্চভূতের প্রদীপ জ্বেলে
করছি তোমায় 'আরতি'
মোর চেতনার সে প্রদীপটিতে
জ্বেলে রাখো বাতি |
যা চেয়েছি সব দিয়েছ
আবার রেখেছ সব তুলে ---
পাওয়ার গর্বে মাগো তোমায়
ছিলেম বুঝি ভুলে |
তাইতো মা গো দিলে আমায়
এত বড় অশান্তি
দেখবো বলে তোমার মাগো
'পরম পাওয়ার' সে 'কান্তি'
দুঃখ 'ব্যথার ধূপটি' জ্বেলে
 কামনা সব পুড়িয়ে ফেলে ---
আজকে শুধু রইব পড়ে
 তোর 'পা দুখানি' জড়িয়ে
ঠেলে আমায় দিও না কো দূরে
নিও আমায় তোমার আপন করে |
ব্যথার কান্নায় আকণ্ঠ ---
  ভুলেছি সব 'শেখানো মন্ত্র'
দুখের মাঝে দিও আমায় নূতন কোনও শিক্ষ --
নতুন করে পাই গো যেন ব্যথার নূতন দীক্ষা |

     ***********
আমি বাঁচবো

চারিদিকের ক্লেদাক্ত পরিবেশ থেকে উঠে আসা
বিষাক্ত অনুভূতিগুলি যখন আমাকে বিষাক্ত করে তোলে---
যখন হাঁপিয়ে উঠি তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে---
যখন মন চায়না কিছু বলতে---
যখন কান্না ওঠে ঠেলে গলা পর্যন্ত---
যখন সব কিছু বেসুরো মনে হয় অত্যন্ত
যখন জীবনের সব ভালোও আলো
হয়ে যায় অন্ধকারের মতও কয়লার মত কালো---
তখন সরল পবিত্র ফুলের মত স্বচ্ছ কোমল ছোট্ট শিশুর গান
আমার 'বেতালা জীবনের ছন্দে আনে নতুন সুরের তান' |
আমি হয়ে উঠি আনন্দের সুরে উচ্ছল ও ভরপুর---
চিত্তে আমার বাজে সুরের এক নূপুর |
খুঁজে পাই বাঁচার আশ্বাস
খুঁজে পাই জীবনের অর্থ ও বিশ্বাস |

ভুলে যাই সব ক্লেদাক্ত অনুভূতি---
আনন্দে হয়ে পড়ি অভিভূত |
মুছে ফেলি সব অবসাদ!
খুঁজে পাই নতুন করে বাঁচার স্বাদ |
মনে হয় কেন থামব?
শুধু চলব আর চলব---
বলব আর বলব---
মনে হয় কেন থামবো?
এই সব কচি প্রাণে ঝড় তুলব, আর তুলব আর তুলব |
আমি চলব, আমি বাঁচবো |

   ***********
আজকে বিশেষ দিন

আজকে প্রবীণদেরই 'বিশেষ দিন'
  মনটা তাই নাচছে তাধিন্ ধিন্  ||
আজ যা কিছু কর, যা কিছু খাও---
  মনটা আজকে আনন্দেতে ভরাও ||

নাই বা হলেম লেখক কিংবা নাই বা হলেম গায়ক
  আজকের এই দিনটির তরে হয়েছি যে নায়ক |
বৃদ্ধ হয়েও হয়েছি যে যুবা ---
  কোনও কাজেই বারণ করবে কেবা?

আজ গাইবো, কইবো ও বাঁচব
  সকলের সাথে প্রাণের হাসি হাসবো |
প্রৌঢ়ত্বের এই স্পেশাল দিনে
  নেব যেন জগত্টাকে কিনে |

মন আজ নাচছে তাধিন্ ধিন্
  কারণ আজ প্রবীণদেরই বিশেষ দিন ||

চান্স পেয়েছি শোনাবার কবিতা
  শুনো তোমরা নিয়ে মনে মমতা |
ভুল কি ঠিক ভাল কি মন্দ
  সে বিচারে নেই কোন ধন্দ |

কারণ আজকে একটা বিশেষ দিন
  মন আজ নাচছে তাধিন্ ধিন্ ||

বলছে সবাই 'এস, বস, বল,
  যেখানে মন যেতে চায় চল' ||

আজকের দিনে আবেদন করছি মোরা সরকারকে
  মুকুব যদি করেন তিনি বৃদ্ধদের ওষুধের দামটাকে |
তবে থাকবো নাকো আর কোন টেনশনে
  স্বচ্ছলেই কাটবে মাসটা পাই যা পেনশনে ||

বৃদ্ধদের বৃদ্ধ বলে কোরো নাকো হেলা ---
  মান্য করে সমীহ করে কিছু কথা বল এই বেলা |
মনে রেখো জীর্ণ শরীর হলেও প্রাচীন
  অভিজ্ঞতায় মোরা সদাই নবীন ||

মোদের অভিজ্ঞতার দরজাখানি দিয়ে
  যাচাই করে নিও তোমরা বিশ্ব জগত্টিরে ||
দেখবে সেথায় মোদের গড়া পথে---
  চলছ তোমরা নবীনরা তোমাদেরই জয়রথে ||

তাই তো কবির গানে ---' তোমার হল শুরু আমার হ'ল সারা
  তোমায় আমায় নিয়ে এমনি বহে ধারা'

এই ধারাকে সরিয়ে দিয়ে
  চলতে পারো কি তোমরা?
আজকের দিনে এই প্রশ্নটাই ;
  রাখছি বৃদ্ধ আমরা ||

         ***********