কবীর সুমনের গান ও কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
|
দশ ফুট বাই দশ ফুট
তক্তোপোষ বা মেঝেতে বিছানা, দড়িতে লুঙ্গি শাড়ি তিনখানা,
তারি এক পাশে পড়ে আধখানা, বেওয়ারিশ বাসি বিস্কুট।
দরজায় আছে নম্বর লেখা, তাই দেখে দেখে ঠিকানাটা শেখা।
যদিও বাসার আসল ঠিকানা, দশ ফুট বাই দশ ফুট।
জনা চারেকের বাসা এই ঘরে, পাঁচ জন হবে কিছুদিন পরে,
ঘ্যাঁশা ঘ্যাঁশি করে গায়ে গায়ে শুধু কুট্ কুট্।
দরজায় আছে নম্বর লেখা, তাই দেখে দেখে ঠিকানাটা শেখা।
যদিও বাসার আসল ঠিকানা, দশ ফুট বাই দশ ফুট।
খাওয়া বসা ঘুম একই যায়গায়, ছেলে মেয়ে দেখে আধো তন্দ্রায়,
বয়স্ক দুই দেহ মিলে যায়, আঁধার ঘনালে ঘুট্ ঘুট্।
দরজায় আছে নম্বর লেখা, তাই দেখে দেখে ঠিকানাটা শেখা।
যদিও বাসার আসল ঠিকানা, দশ ফুট বাই দশ ফুট।
রান্নাঘরটা খোঁড়া অজুহাত, ঘরণী সেখানে ছড়িয়েছে ভাত।
আরশোলাদের খুলেছে বরাত, রাতে ইঁদুরের খুট্ খুট্।
দরজায় আছে নম্বর লেখা, তাই দেখে দেখে ঠিকানাটা শেখা।
যদিও বাসার আসল ঠিকানা, দশ ফুট বাই দশ ফুট।
ছেলে বড় হয়ে বেকারীর গ্লানি, মেয়ে করে প্রেম বৃথা হয়রানি।
প্রেমিকের আছে টো টো কোম্পানি, শনিবার তারা দেয় ছুট্।
ছুটবে কোথায় প্রেম তাল কানা, গোপনীয়তার নেই মালিকানা।
এই প্রেমিকেরও আসল ঠিকানা, দশ ফুট্ বাই দশ ফুট্।
*************
পেটকাটি চাঁদিয়াল
পেটকাটি চাঁদিয়াল মোমবাতি বগ্গা
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক, মাটিতে অবজ্ঞা।
বয়স বারো কি তেরো, রিক্শা চালাচ্ছে,
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক ছেলেটাকে ডাকছে।
বয়স বারো কি তেরো, বড়জোর চোদ্দ,
রিক্শা চালাতে শিখে নিয়েছে সে সদ্য।
ছেলেটার মন নেই প্যাডেলে বা চাক্কায়,
ঐ তো লেগেছে প্যাঁচ চাঁদিয়াল বগ্গায়।
শান্ দেওয়া মানজায়, বগ্গা ভো কাট্টা।
ছেলেটা চেঁচিয়ে ওঠে "এই নিয়ে আটটা"।
সওয়ার বাবুটি ভাবে, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
বিচ্ছু ছোঁড়াটা বড় আস্তে চালাচ্ছে।
"ওই ছোঁড়া, আরে ওই ছোঁড়া ম'ল যা
আট্টা তো তোর কি ?"
সওয়ার বাবুটি দেন রেগে মেগে হুমকি।
বাবুর খ্যাঁকানি শুনে সম্বিত্ ফিরে পায়
ছেলেটা যে করে হোক রিক্শা চালিয়ে যায়।
এ কিশোর পারবে কি এই বোঝা টানতে ?
এই বাবু কোনো দিন পারবে কি জানতে ?
যে ছেলেটা প্রাণপণে রিক্শা চালাচ্ছে,
মুক্তির ঘুড়ি তাকে খবর পাঠাচ্ছে।
পেটকাটি চাঁদিয়াল মোমবাতি বগ্গা
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক, মাটিতে অবজ্ঞা।
পেটকাটি চাঁদিয়াল...
*************
আমাদের জন্য
গড়িয়াহাটার মোড়, মিনি মিনি বাস বাস,
বাসের টারমিনাসে, মন মরা সারি সারি
মুখ চোখ নাক হাত, রোগা রোগা চেহারার কনডাক্টার
সব আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
চৌরঙ্গীর আলো এবং লোড শেডিং,
পার্ক স্ট্রীট জমকালো, কাগজে হেডিং।
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
বেদম ট্র্যাফিক জ্যাম, ঠান্ডা স্যালামি হ্যাম,
চকলেট, ক্যাডবেরি, মাদার ডেয়ারী,
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
বাজারের দরাদরি, রুটি ভাত তরকারি,
সা নি ধা পা মা গা রে সা মাদার টেরেসা,
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
কুঁয়াশা কুয়াশা কাদা, ভোর বেলা গলা সাধা,
সারেগা রেগামা গামা গামাপা মাপাধা পাধা পাধানি ধানিসা--
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
ফুটবোর্ডে ঝুলে যাওয়া, অথবা লেডিজ সীট-
তাক্ করে উদাসীন, আকাশ কুসুম টিক্ টিক্-
টিকিট কাটতে গিয়ে ব্যাজার মানুষ, খুচ্-খুচরো পয়সা নেই
আমাদেরই জন্য। নেই আমাদেরই জন্য।
সা গা পা ধানি ধানি পাধানি, সানিধা নিধা পাগা সাগা পাধানি,
বছরে তিরিশবার চিত্রাঙ্গদা আর শ্যামা
শাপ-মোচনের অশ্রু মোচন, আমাদেরই জন্য।
গাজনের ছয়লাপ, আধুনিক কিং খাপ,
কিং সাইজ ভজনের শিবের গাজন,
আমাদেরই জন্য।
সংস্কৃতির ঢাক, তে রে কে টে তাক্ তাক্
দমাদম দমাদম কৃষ্টি বিষম
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
পাতাল রেলের খাল, ভাঙাচোরা দিন কাল,
পদে পদে ঠোক্কোর, বকর বকর,
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
আপিস কাছারি রাইটার্স বিল্ডিং ডিং
বিনয় বাদল দিন্ দিনেশের নাম ধার,
ধর্মতলার মোড়ে লেন দেন নিন দিন লেনিন
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
সুনীল গাঙ্গুলীর দিস্তে দিস্তে লেখা,
কত কবি মরে গেল চুপি চুপি একা একা,
আমাদেরই জন্য। শুধু আমাদেরই জন্য।
সিনথেসাইজারের টাপুর টুপুর
সুমন চাটুজ্যের এক ঘেয়ে সুব
নয় আমাদেরই জন্য। নেই আমাদেরই জন্য।
সত্যজিতের ছবি, শক্তির পদ্য,
লিট্ল্ ম্যাগাজিনের লেখা অনবদ্য।
গ্রুপ থিয়েটার আর একাদেমি সমাচার,
একুশে আইন আর গণেশ পাইন।
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
কেরানী ও অফিসার পাটোয়ার নেতা,
ফুটপাথে ছোটো বড় ক্রেতা বিক্রেতা,
বেশ্যা দালাল, টিকিধারী পুরোহিত,
ট্যাকসি চালক আর পুলিশের খিট্ মিট্
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
আমাদের জন্যেই ভোরের আকাশ,
লালচে পূবের কোণে আসে আশ্বাস।
আমাদের জন্যেই মিষ্টি সকাল,
নীলের গভীরে হাসে একা মহাকাল।
আমাদেরই জন্যেই বৃষ্টি এসেছে,
দারুণ প্রাণের টানে দুকুল ভেসেছে।
মৌমাছি খুঁজে মরে আমাদেরই মধু,
আকাশ ডাকছে আজ আমাদেরই শুধু।
সমুদ্রে ঢেউ ভাঙে আমাদেরই নামে,
শ্রমিকের দেহ ভেজে আমাদেরই ঘামে।
যে যেখানে লড়ে যায় আমাদেরই লড়া,
জীবনের কথা বলা গানের মহড়া যেন
সব্বার জন্যে, সব্বার জন্যে।
আমরাই কলকাতা আজ আগামীর,
আমরাই গান গাই আমির তুমির,
ইট কাঠ কংক্রীট শ্যাওলা ময়লা,
প্রতিটি নতুন গান মাসের পয়লা।
আমার জীবন থেকে উঠে আসা সুর
তোমাকে শুনিয়ে আমি যাব বহু দূর।
ফিরেও আসবো আমি তোমার সুবাসে,
থাকবো তোমার বুকে আর আসে পাশে।
আমাকে পড়লে মনে খুঁজো এইখানে,
এখানে খুঁজছি আমি জীবনের মানে।
. ************* উপরে
পাগল
এক মুখ দাঁড়ি গোঁফ,
এক মুখ দাঁড়ি গোঁফ, অনেক কালের কালো ছোপ ছোপ।
জট পড়া চুলে তার উঁকুনের পরিপাটি সংসার।
পিচুটি চোখের কোণে, দৃষ্টি বিস্মরণে মগ্ন।
বাবু হয়ে ফুটপাথে একা একা দিন রাত রঙ্গে।
পাগল ! পাগল ! সাপ লুডো খেলছে বিধাতার সঙ্গে।
চালচুলো নেই তার, নেই তার চেনা বা অচেনা।
আদম-সুমারি হলে তার মাথা কেউ গুনবে না।
তার ভোট চাইবে না গণতান্ত্রিক কোনো প্রার্থী।
সরকারে দরকার নেই তাই নিজের সুড়ঙ্গে।
পাগল ! পাগল ! সাপ লুডো খেলছে বিধাতার সঙ্গে।
বটতলা চুম্বন পদ্ধতি, পেট মোটা ব্যকরণ বই।
ধর্ম বা রাজনীতি, ঠাকুরের ছবি থেকে হরিবোল খই।
সারিবাদি সালসা বা, ভোগীর লালসা আর আভোগীত গান।
হঠাত্ হাসপাতালে অকারণে ফাঁকতালে মহাপ্রয়াণ।
ভিডিও ক্যাসেটে আর নীল সোফাসেটে বসে মিঠে খুনসুটি।
লক আউট কারখানায়, তামাদী মজুরী আর কেড়ে নেয়া রুটি।
জগতে যা কিছু আছে, কিছু নেই তার অনুসঙ্গে।
পাগল ! পাগল ! সাপ লুডো খেলছে বিধাতার সঙ্গে।
*************
ডাক এসেছে
ঐতো তিনি আশির বেশি ভাবনায় নাচে দেহের পেশী নটরাজ আজ কলম খোঁজেন মহাশ্বেতাই লড়াই বোঝেন |
নাচছে জীবন নাচছে প্রলয় নাচে প্রতিরোধ, এই তো সময় ডাকে মুহূর্ত ব্যারিকেড আয় জমির লড়াই সকলকে চায় |
তোমাকে চাইছে আমাকেও চাই জমির কসম এসো গান গাই সিঙ্গুর ভাঙ্গর নন্দীগ্রামে প্রতিরোধ চলে জমির নামে |
এমন সময় আসবে না আর ডাক আসে শোনো মহাশ্বেতার কী আর পেরেছি তাপসী মালিক তুমি বাংলার দোয়েল শালিক |
পাখির কসম, কসম লড়াই ডানা ঝাপটায় ছোট্ট চড়াই বলছে --- আসুন মেধা পাটেকার আপনাকে চায় আমার গিটার |
************* সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন চলা কালীন এই কবিতাটি ১৯ জানুয়ারী ২০০৭ এর দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত হয় |
|
আপনারও দেশ
মুখ্য চেনেন প্যাবলো নেরুদা
মন্ত্রী চেনেন মার্কেস
মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারেন এই দেশখানা কার দেশ |
মুখ্য চেনেন শিল্প
মন্ত্রী চেনেন আইটি
মুখ্যমন্ত্রী, সালিম কি আজ দেশের মিষ্টি ভাইটি?
মুখ্য চেনেন SEZ
মন্ত্রী চেনেন খাসা
মুখ্যমন্ত্রী, বাঘের ঘরেই তৈরি ঘোঘের বাসা |
মুখ্য চেনেন সি এ বি
মন্ত্রী চেনেন ক্রিকেট
মুখ্যমন্ত্রী, বলতে পারেন কাকে বলে হিট উইকেট?
মুখ্য চেনেন সিঙ্গুর
মন্ত্রী চেনেন টাটা
মুখ্যমন্ত্রী, দেখুন সিঙ্গুরের মেয়েরা দেখায় ঝাঁটা |
মুখ্য চেনেন চলচ্চিত্র
মন্ত্রী চেনেন গুণী
মুখ্যমন্ত্রী, বলতে পারেন কারা তাপসির খুনি?
মুখ্য চেনেন একে
মন্ত্রী চেনেন তাকে
জানেননি শুধু এতোজন লোক নন্দীগ্রামোই থাকে |
মুখ্য চেনেন ফিদেল
মন্ত্রী চেনেন কাস্ত্রো
মুখ্যমন্ত্রী, প্রতিরোধ হল জনতার ব্রহ্মাস্ত্র |
মুখ্য চেনেন বৈঠক
মন্ত্রী চেনেন বাম
মুখ্যমন্ত্রী, আপনারও দেশ সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম |
*************
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন চলা কালীন এই কবিতাটি ১১ ফেব্রুয়ারী
২০০৭ এর দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত হয় |
কাজি নজরুল ইসলামের জন্য
শালবল্লার বেড়ায় আগুন বিরোধী নিশান ওড়া
'ল্যাজে যদি তোর লেগেছে আগুন স্বর্ণলঙ্কা পোড়া |'
ফসলের গান গেয়েছিল যারা সাম্যের ধ্বজা ধরে
তারাই এখন পোড়ায় ফসল পুঁজির দালালি করে
ভেবেছিল ওরা পার পেয়ে যাবে বাংলা আগাগোড়া
'ল্যাজে যদি তোর লেগেছে আগুন স্বর্ণলঙ্কা পোড়া |'
লাঙ্গল যাদের জমিও তাদের ওরাই বলত আগে
এখন ওদের তেষ্টা মিটতে চাষির রক্ত লাগে
জাগো বিদ্রোহ ছোটো প্রতিশোধ কামনার ক্ষ্যাপা ঘোড়া
'ল্যাজে যদি তোর লেগেছে আগুন স্বর্ণলঙ্কা পোড়া |'
কাজি নজরুল তোমার বাক্য ধার ক'রে আমি গাই
গণজাগরণ দেখে আজ আমি এই গান বেঁধে যাই
স্মৃতিতে এখনও তোমার কথাই প্রতিবাদী সুরে মোড়া
'ল্যাজে যদি তোর লেগেছে আগুন স্বর্ণলঙ্কা পোড়া |'
*************
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন চলা কালীন এই কবিতাটি ১৬ ফেব্রুয়ারী
২০০৭ এর দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত হয় |
সাবাস পুলিশ
সাবাস পুলিশ সাবাস হাজারবার
দুই বছরের বাচ্চাও গ্রেপ্তার
সেও তো মারল আধলা কিংবা
ছুড়লো একটা ঢিল
সেও তো ভীষণ জঙ্গি বোধ হয়
কাশ্মীরি কার্গিল |
সেও তো বেজায় মাওবাদী আর
আল কায়দার চর,
সেও বেওয়ারিশ গুণ্ডা
ভাঙল গণতন্ত্রের ঘর |
সেও পুলিশের নবমস্বভাব
বুঝতে চায় না কেন?
মায়ের কোলের বিচ্ছুটা দেখ
বেয়াড়া জঙ্গি যেন |
আঁচলটাকেই আঁকড়ে ধরলো
একা বিলকুল একা
উর্দিধারীরা ধর বন্দুক
সিঙ্গুরে হবে দেখা |
আবাদি জমিতে কারখানা হবে
চারফসলিতে গাড়ি,
বেচে দাও খেত, বেচো নবান্ন
বেচে দাও তাড়াতাড়ি |
অনথিভুক্ত বর্গাদারেরা
ভিক্ষে করেই বাঁচো
খেত মজুরেরা নাচতে শেখোনি
এসো রক শুনে নাচো
সাবাস পুলিশ সাবাস হাজারবার
দুই বছরের বাচ্চাও গ্রেপ্তার |
*************
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন চলা কালীন এই কবিতাটি ১০ ডিসেম্বর
২০০৭ এর দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত হয় |
বেঁচে থাক
এখনও তাহলে হারায় নি প্রতিবাদ
এখনও তাহলে বেঁচে আছে প্রতিরোধ
সংহতি দিল দূর করে অবসাদ
শুরু হল তবে এ যুগের শোধবোধ |
কাস্তে ধানের অঙ্গিকারই আজও
মাটির সুজন মানুষরা দেয় ডাক
বাজো হৃদয়ের ধুক পুক জোরে বাজো
তাপসী মালিক এই গানে বেঁচে থাক |
কেমন ছিল সে মেয়েটা পোড়ার আগে
কারা মেরেছিল তাকে মেরেছিল কেন
গিটার আমার গর গর করে রাগে
দাবানল হতে চাইছে হৃদয় যেন |
এখানে হাজার ওখানে হাজার বারো
আর কোনওখানে তেইশ হাজার নেবে
সরকার তুমি একর কাড়তে পারো
প্রতিরোধ তুলে মানুষ জবাব দেবে |
জবাব দিচ্ছে সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম
শাঁখের আওয়াজ আজানে যাচ্ছে মিশে
ব্যারিকেড তোলে বিশু আর আসলাম
শাসক তোমার লালসা মিটবে কিসে |
দ্যাখো বন্ধুরা গাঁয়ের মেয়েরা আসে
হাতে আঁশবটি বুকে শপথের ডাক
মেয়েরা কিন্তু লড়তেও ভালোবাসে
ওদের লড়াই এই গানে বেঁচে থাক |||
*************
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন চলা কালীন এই কবিতাটি ১১ জানুয়ারী
২০০৭ এর দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত হয় |
নন্দীগ্রামের পর
নন্দীগ্রামের পর সক্কলে ভালোই তো আছি
প্রগতিশীলেরা খেলে সংস্কৃতির কানামাছি |
গণহত্যার পর অনেকেই তো ভালো থাকে
নপুংসকের ঝাঁক ছুটে যায় দালালের ডাকে |
ধর্ষণে সই দাও সব সরকারী ক্রীতদাস
নন্দীগ্রামের মাটি মনে রেখো এই সন্ত্রাস |
শিশুহত্যার দায় নন্দনে ফোয়ারার কলে
ঘাতকরা হাত ধোয় বাম অনুদানে পাওয়া জলে |
সংবাদ বৈঠকে বেনিয়ার হয়ে ওকালতি
কয়েকশো খুন হলে দালালের নেই কোনো ক্ষতি |
সরকারী আবাসনে আরো ফ্ল্যাট জুটে যাবে দেখো
নন্দীগ্রামের পর সব মনে রেখো মনে রেখো |
*************
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন চলা কালীন এই গানটি "নন্দীগ্রাম" নামক
গানের সি.ডি.তে প্রকাশিত হয় |
টাটার গাড়ি
ঐ দেখো ঐ টাটার গাড়ি
ফলবে ক্ষেতে ধানের মত
দাও না বেচে চাষের জমি
চাষ করে আর মরবে কত |
এ-যুগ হল লগ্নি করার
তোমার টাকা টাটার টাকা
মাঝখানে এই আমরা আছি
ঘোরাই অর্থনীতির চাকা |
কিসের অত আপত্তি হে
কিসের অত কান্নাকাটি
মাটি তোমায় কি আর দিল
টাটাই সোনার পাথরবাটি |
ধান বুনে আর পাট বুনে আর
আলুর চাষে বেগার খেটে
সেই তো চাষা থেকেই গেলে
অন্ন বেকার তোমার পেটে |
পেট দেখো এই আমার কেমন
সব খেতে চাই বুঝলে বাবা
তোমার জমি বাগিয়ে নেবে
আমার উন্নয়নের থাবা |
তোমার ছেলের চাকরি হবে
ইঞ্জিনিয়ার সাহেব বাড়ি
দারোয়ানের চাকরিটাও তো
দিচ্ছে টাটার মোটর গাড়ি |
তোমার মেয়ের পয়সা হবে
ফ্যাশনপ্যারেড ramp-এ হেঁটে
পত্রিকাতে ছাপবে ছবি
মিথ্যেমিথ্যি মরছ খেটে |
বিক্রী করো চাষের জমি
বিক্রী করো তোমার মাটি
লগ্নি করো বেচার টাকা
লগ্নি করো দুধের বাটি |
দুধের গরু পুষবে কেন
পুষতে হলে লগ্নি পোষো
দোল খেয়ে যাও আমার তালে
সঙ্গে বুড়ো আঙ্গুল চোষো |
চোষার জন্য ওটাই ভাল
লাভ কি চুষে জমির মধু
ক্যাসেট কিনে শুনবে না হয়
বস্তাপচা "গাঁয়ের বধু" |
তারও ছিল স্বপ্ন কিছু
"ঘুঘু ডাকা ছায়ায় ঢাকা"
দুর্ভিক্ষের খিদের চোটে
হজম হল স্বপ্ন ফাঁকা |
সে-গান ছিল প্রগতিশীল
কোন কালে তা কেই বা জানে
মওকা বুঝে উস্কানি দেয়
কবীর সুমন নতুন গানে |
এ-গান যেন কেউ না শোনে
লোকটা বড়ই বে-আক্কেলে
লগ্নি তে আজ স্বপ্ন বোনে
দেশের কত লক্ষ্মী ছেলে |
লক্ষ্মী ছেলে লক্ষ্মী মেয়ে
টাটার মোটর গাড়ির দামে
বিক্রী হবে একটু পরেই
সবই উন্নয়নের নামে |
শিল্প মানে নতুন চাকরি
বুঝতে চায় না চাষির ব্যাটা
মিছিল করে যাচ্ছে নিয়ে
হাতের মুঠোয় খ্যাংরা ঝ্যাঁটা |
গাঁয়ের বধুর খামখেয়ালে
আটকাবে কি লগ্নি শেষে
বৃথাই আমরা রাজ্য পেলাম
"শিব ঠাকুরের আপন দেশে" |
*************
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন চলা কালীন এই কবিতাটি
"নন্দীগ্রাম" নামক গানের সি.ডি.তে প্রকাশিত হয় |
শিশুর ধড়
নন্দীগ্রামে শিশুর ধড়
পড় শিল্পের নমতা পড়
কার ছেলে কার মেয়ের লাস
বামের রাজ্যে স্বর্গবাস |
তোর বাবা বুঝি ক্ষেত মজুর
কাকে বলল না "জি হুজুর" |
তুই কি বলবি এবার বল
ধান ক্ষেতে গড়ি শিল্প চল |
দুহাজার সাত ১৪ মার্চ
শাতক দলের পিশাচ নাচ
গন ধর্ষণে সিদ্ধ কাম
হায় মার্ক্স, দেখ, এরাও বাম |
নন্দীগ্রামের কোনখানে
সভ্যতা শেষ একটানে
তবু প্রতিরোধে একটি নাম
নন্দীগ্রাম নন্দীগ্রাম |
*************
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন চলা কালীন এই কবিতাটি
"নন্দীগ্রাম" নামক গানের সি.ডি.তে প্রকাশিত হয় |
একজোট
ওরা শানাচ্ছে অস্ত্র
আরও খুন হবে আরও
বাঁচতে চাও তো শাসকদলকে ভোটেই না হয় মারো |
একজোট হও বন্ধু
একজোট থাকো সব
বিরোধী জোটের জোরেই ওদের পরাজয় সম্ভব |
ওরা শানাচ্ছে মিথ্যে
আরও মিথ্যের ঝাঁক
তারই ফাঁকে ফাঁকে শুনছি সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের ডাক |
ওরা পাকাচ্ছে দল
ওদের হাতেই টাকা
ওদের কাদায় আটকে গিয়েছে ওদের রথের চাকা |
ওরা জানে কৌশল
ওরা জানে অভিসন্ধি
তিরিশ বছর জারিজুরি আজ সবার নজরবন্দী |
*************
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন চলা কালীন এই গানটি "নন্দীগ্রাম"
নামক গানের সি.ডি.তে প্রকাশিত হয় |