| ডঃ মহেন্দ্রনাথ সেনের কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। |
||||||||||||||||||||||||||
![]() |
||||||||||||||||||||||||||
| ১। সন্ত কবীরদাসের দোহার বাংলা পদ্যানুবাদ ২। মূর্খ তুমি বলছ একি বল ? ৩। দুইয়েরে দলিয়া পায়ে ৪। তোমাতে আমাতে নাহি নাহি কোন ভেদ ৫। গন্ধে মাতায় কনক চাঁপা সোনার বরণী ৬। লয়ে কনক চাঁপার ডালি ৭। ভোরের পূজায় ছিলে তুমি আমার মনে মিশে |
||||||||||||||||||||||||||
| সন্ত কবীরদাসের ( পঞ্চদশ শতক ) হিন্দীতে রচিত দোহা বা দুই পঙত্তির কবিতার বাংলা পদ্যানুবাদ, কবি ডঃ মহেন্দ্রনাথ সেনের লেখা ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত 'সদ্ভাব নিচয়' বই থেকে উপস্থাপন করা হল | বইটিতে মোট ১৪১টা দোহার পদ্যানুবাদ রয়েছে | |
||||||||||||||||||||||||||
![]() |
||||||||||||||||||||||||||
| ঘুরছে জাঁতা দেখে কবীর ফেল্ল নিজে কেঁদে; পাটের মধ্যে পড়লে পরে পিষে যাবে সিধে | তাহে বল দুঃখ কিবা ওহে পথিক বীর, কাঁদ কেন অমন করে চক্ষে বহে নীর ? যার জিনিষ সে নিয়েছে দুঃখ তাহে কিবা ? জিম্মী হেন দিয়েছিল অল্প দুই এক দিবা | ******** |
||||||||||||||||||||||||||
![]() |
||||||||||||||||||||||||||
| ঘুরিয়াছি পাহাড়ে পাহাড়ে কেঁদে কেঁদে চোখ নষ্ট করে কই প্রাণ বাঁচান জুড়ী খুঁজে পেলাম না ত চক্ষে আমার জ্বালা ভরা তোমায় খুঁজে খুঁজে সারা প্রতিক্ষণে তোমার খোঁজেই রই | পেলাম না ক' তোমার দেখা মন খুশী না হো'ল সখা মনে কত দরদ বুঝ মম ; সংসারেতে সবাই সুখী খেয়ে দেয়ে ঘুমোয় দেখি কবীর একা থাকে দুঃখী সম | ঘুম আসে না তাহার চোখে জেগে বসে কাঁদে দুখে বোঝে না তা নিঠুর প্রিয়তম | ******** |
||||||||||||||||||||||||||
| উপরে |
||||||||||||||||||||||||||
![]() |
||||||||||||||||||||||||||
| সাধুর জাতের খোঁজ কোরো না খোঁজো তাহার জ্ঞান | তরবারির দাম করিও ফেলে খাপের মান ! জ্ঞানের হাতী চড়বে ভাই সহজ-হাওদা দিয়ে, সংসারটা শুনী মত মরুক্ না ডাক দিয়ে | ******** |
||||||||||||||||||||||||||
![]() |
||||||||||||||||||||||||||
| খোদা যদি মসজিদেতে বদ্ধ হয়ে আছে পৃথিবীর সব তবে কেমনে চলিছে ? রাম যদি বাস করে তীর্থস্থানে মূর্তির মাঝারে কে তবে জানিছে কি বা ঘটিছে বাহিরে ? ভাব হরি পুবে আল্লা পশ্চিমে আছে ? দেখ নিজ হৃদি মাঝে উভয়ে বিরাজে | তাহারই জীবন্ত মূর্তি নরনীরী সবে, রাম মহিমের শিশু কবীর রহিবে ; গুরু বলে মানি যারে সততই আমি গুরু পীর দুই বলে তারে আমি জানি | ******** |
||||||||||||||||||||||||||
| উপরে |
||||||||||||||||||||||||||
| মূর্খ তুমি বলছ একি বল ? সাকার বিশ্বে ব্যপ্ত যে জন নিরাকার সে হলো ? স্থাবরে সে সাকার কত জঙ্গমেতেও সাকার শত, বিশ্বভরে সাকার হয়ে রয়েছে বিস্তৃত, এ সব কভু হয় কি যদি নিরাকার সে হতো ? মন্দিরেতে যেয়ে ডাকলে তারে মনের ভক্তি দিয়ে, মূর্তি তথা কইছে কথা কত ; এ কাজ কভু হয় কি বল নিরাকারের মত ? ধ্যানে যখন বসি সাকার হয়ে মনের মাঝে দেয় সে দেখা আসি | তবু যদি নিরাকার সে হয় হ'কগে তবে তাহার বিচার আমার কার্য নয় | সাকার ভাবে যদি আমি তাহার দেখা পাই নিরাকারের সাধনায় মোর কোন কার্য নাই | ******** |
||||||||||||||||||||||||||
| উপরে |
||||||||||||||||||||||||||
| দুইয়েরে দলিয়া পায়ে একেরে মানিয়া লয়ে একাকার হয়ে গেছি আমি এক যদি একে মেশে যাব কেন দুই দেশে একেশ্বর একেশ্বরে নমি | বিশ্বে শুধু এক রয় আর সবই মায়াময় মায়ায় সে বহু হয়ে রয় | বহু তবু মায়া নয় বহুতেও একই রয় বহু পুনঃ একে মিশে যায় | এক ও বহুর খেলা আছে জুড়ে ভবমেলা একে দুইয়ে ভেদ কিবা বল ? দুইয়ে মিলে এক হয়ে বহু মাঝে মিশে গিয়ে একেশ্বরে একেশ্বর চল | ******** |
||||||||||||||||||||||||||
| উপরে |
||||||||||||||||||||||||||
| তোমাতে আমাতে নাহি নাহি কোন ভেদ, শুনে মনে জাগে খেদ | মূঢ়মতি আমি এই ভবে, ভব অধিপতি প্রশান্ত মুরতি সেই তুমি কি না মমসহ এক হবে এ হেন অলীক কথা প্রত্যয়কাহার বল হবে কবে কোথা ? এই সব ভেবে মম মন না চাহে মনিতে ঐ শাস্ত্রের বচন | তুমি প্রভু আমি ভৃত্য জানিয়াছি সার দাও মোরে প্রভু শুধু এই অধিকার | ******** |
||||||||||||||||||||||||||
| উপরে |
||||||||||||||||||||||||||
| গন্ধে মাতায় কনক চাঁপা সোনার বরণী পলাশ দেখি রক্ত রংএ রাঙ্গায় ধরণী গোলাপ ফুলে রংএর খেলা সুগনেধেতেও নাইকো হেলা রূপ গুণেতে নাইকো ত্রুটি উভয় ধনে ধনী যাঁহার দান এ সব ফুলে কোন গুণে সে গুণী ? ভোর না হ'তে পাখীর ডাকে যখন জেগে উঠি দোয়েল শ্যামা কোকিলের ডাক শুনি কোমন মিঠি, মধুর সে ঐকতানের তাল কেটে যায় ডাকে কাকের ; কেমন ধারা শিল্পী সেজন যাহার এমন দৃষ্টি মধুর মাঝে কড়ার মিশেল করেছে যে সৃষ্টি ? দেখে এসব ভাবি বসে কেমন ধারা সেই ? এত সৃষ্টি ক'রেও কি তার রুচির বালাই নেই ? (তখন) গুরু ডেকে বললে মোরে "বৃথা কেন ভাবিস ওরে এসব দেখেই বুঝবি তাঁহার গুণের অন্ত নাই কড়া আছে বলেই ত না মধুর স্বাদ পাই |" ******** |
||||||||||||||||||||||||||
| উপরে |
||||||||||||||||||||||||||
| লয়ে কনক চাঁপার ডালি মন্দিরেতে গেলাম চলি দিনু ঢালি উজার করে রাধা শ্যামের পায়ে | শ্যামের পায়ে চাঁপা দেখি রাধার পায়ে নেই ত, একি ! রাধার তৃপ্তি নয় কি তবে আমার পূজা পেয়ে ? বিষাদ ছেয়ে এলো প্রাণে কি দোষ হল ভাবি মনে হেন কালে পড়লো ঝরে একটি চাঁপা ফুল রাধার চরণ প্রান্ত হ'তে, দৃষ্টি যখন পড়লো তাতে দেখি রাধার চরণ ঢাকা চম্পকে অতুল ; সোনার বরণ রাধার চরণ কনক চাঁপার সোনার বরণ দুয়ে মিশে আছে সেথা হয়ে একাকার ; দেখে তাহা আমার চোখে ঝরে অশ্রুধার | ******** |
||||||||||||||||||||||||||
| উপরে |
||||||||||||||||||||||||||
| ভোরের পূজায় ছিলে তুমি আমার মনে মিশে ; বাইরে যখন এলাম আমি আমার পূজা শেষে মনের মাঝে তখন তোমায় খুঁজতে দেখি নাই, এইত ছিলে কোথায় গেলে ভাবছি বসে তাই | ব্যাকুল হয়ে খুঁজতে তখন এদিক সেদিক চাই, ভিখারী এক বললো এসে "ভিক্ষা দুটি পাই ?" মুখখানি তার তোমার মতন, একি আমার ভ্রম ! তুমি কেন আসবে হেথায় ভিক্ষুকেরই সম ? পূজার প্রসাদ ছিল হাতে দিলাম তারে কিছু, তৃপ্ত হয়ে গেল চলে চাইল না সে পিছু | চিন্তান্বিত মনটা নিয়ে উদ্যানেতে ভ্রমি ; মালীর ছেলে এল তথায় কোথা হতে নামি | আনন্দে সে হেসে খেলে ঘুরছে বাপের পিছে হাসিটি তার তোমার মত, দেখছি একি মিছে ! ভাঙতে ভুল তার পরেতে দৃষ্টি দিয়ে দেখি তাহার মুখেও তোমার বিকাশ, দেখছি আমি একি ! মনের এই বিকার দেখে উদ্বেগে আকুল এলাম চলে কর্মস্থলে কর্মে সমাকুল | পতিতা এক নারী তথায় কদর্য সে রোগী সে যন্ত্রণা কাতর মুখেও তোমার ছবি দেখি | দিনের অন্তে নিশীথ কালে দেখি চিন্তা করে সারা দিনটা সকল স্থলে দেখনু তোমায় কিরে ? হঠাত্ আমার মনের দুয়ার খুলে দিল কেউ, দৃশ্যের পর দৃশ্য দেখি যেন জলের ঢেউ, বিশ্ব স্রষ্টা আজ তুমি সারা বিশ্ব জুড়ে আমার শক্তি কোথায় তোমায় রাখব হৃদে পুরে ? দেখিয়ে দিলে এ সব দৃশ্য দম্ভ ভাঙার তরে, তোমার স্বরূপ দেখিয়ে দিলে আমায় ভাল করে ; মনের ঠাকুর আছ মনে নইকো ইহা ভুল, তবু জুড়ে আছ তুমি সকল বিশ্ব মূল তোমার পদে জানাই এবার প্রার্থনা মোর তাই সব কিছুতে যেন আমি তোমার দেখা পাই | ******** |
||||||||||||||||||||||||||
| মিলনসাগর |
||||||||||||||||||||||||||
| উপরে |
||||||||||||||||||||||||||