*
টাটা যাবে মোদীর বাড়ী             

টাটা যাবে মোদীর বাড়ী, চুক্তি করেছে!
যত আছে তার দরদী কান্না জুড়েছে!
এক কালেতে বলতো যারা টাটা-বিড়লা নিপাত যাক্,
তারাই এখন টাটার দোসর, পাড়ছে গালি, দিচ্ছে হাঁক্ !
দুষ্ট কবি কয় - বাঙালী! আনন্দ কর আনন্দ কর!
বণিকের-মানদণ্ড-বালাই কেটেছে, "পলাশি"-র পর!


.       **********     এস. এস. রিভার এম্বলে, উইপা নোঙ্গরে, অস্ট্রেলিয়া,
.                    ১৯ অক্টোবর ২০০৮

.                                                  
সূচির পাতায় ফেরত
.      সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
দুষ্ট কবির ধৃষ্ট কবিতা
*
রতন টাটা বঙ্গে এলেন             

রতন টাটা বঙ্গে এলেন নির্বাচনের শেষে
বুদ্ধ-রাজার হাতে পাতা লাল-গালিচায় বসে!

অটোয়ে-চাপা বাঙ্গালীকে দিলেন গাড়ীর টোপ্
ছয় ফসলা জমির উপর দিলেন বুঝে কোপ্

লালরাজার লেঠেল ঘেরে চাষের জমি সিঙ্গুর গাঁ-এ
আন্দোলনের আগুন ’জ্বলে দাবানলে বাংলা ছায়

মধ্যবিত্ত আয়েসী বাঙালী, গাছে কাঠাল গোঁফে তেল
আসছে জামাই-ষষ্ঠী যাবে হাঁকিয়ে গাড়ী পুড়িয়ে তেল

সে সব আশার পাকা ধানে চাষীভাইরা দিল মই
জমি গেল, গাড়ি গেল, টাটা বলে বাই বাই

মধ্যবিত্ত বাংলা কাঁদে, কাঁদে পুঁজির বিশ্ব
টাটার শোকে ফুপিয়ে কাঁদে মার্ক্সবাদের শিষ্য  

বাংলা হাসে, মমতা হাসে, হাসে সিঙ্গুর গ্রাম
হাসতে হাসতে কাব্য করে - দুষ্ট কবি নাম



.       **********     এস. এস. রিভার এম্বলে, উইপা নোঙ্গরে, অস্ট্রেলিয়া,
.                    ১৯ অক্টোবর ২০০৮

.                                                  
সূচির পাতায় ফেরত
.      সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
*
রতন টাটা কপাল ফাটা             

রতন টাটা
কপাল ফাটা |
বঙ্গে এসে
জুটল ঝাঁটা |
মনের দুঃখে
গুজরাটে যান,
নরেন মোদির
বাজনা বাজান !
নরেন মোদি ?
মনে পড়ে ?
ধর্ম নিয়ে
দাঙ্গা করে |
শুধু, লাভের তরে
হিসাব করে,
এমন মানুষ
কী লাভ ঘরে ?
মধ্যবিত্ত--
হে বাঙালী!
বুক চাপড়ে
কাঁদিস খালি!
মানুষ মেরে,
জীবন কেড়ে,
দুধে ভাতের
আখের গড়ে,
অন্য কারো
দীর্ঘশ্বাসে,
স্বাদ কি পাবি
মুখের গ্রাসে ?
অন্য কারো
অশ্রুধারে
সুখ কি কভু
আসে ঘরে ?
দুষ্ট কবি
তাই তো বলে --
যে জন যাবার,
যাক না চলে |
টাটা গেছে,
ন্যানো গেছে,
রাহুর দশা
ছেড়ে গেছে |
গেছে গেছে
বালাই গেছে |
আমরা আছি
বাংলা আছে!

.   **********     এস. এস. রিভার এম্বলে, উইপা নোঙ্গরে, অস্ট্রেলিয়া,
.                ১৯ অক্টোবর ২০০৮

.                                                  
সূচির পাতায় ফেরত
.      সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
*
সিঙ্গুরনামা

টাটাবাবু হলেন কাবু, বাংলা দেশে এসে!
বলেছিলেন জমি নেবেন, একর হাজার চষে |
বিশ্বজুড়ে কেনেন বেচেন, হরেক রকম জিনিষ,
তার কথাতে বিকোয় সবাই, মন্ত্রী থেকে মুনিষ!

বুদ্ধরাজা, ভোটে তাজা জিতেই ছোড়েন পাশা---
এই যে টাটা গড়বে দেশে, ছোট্ট গাড়ী খাসা!
বাঙ্গালীরা হেব্-ভি খুশি, নাচলো আবীর মেখে!
হোচট্ খেল, চাষের জমি, নিচ্ছে কেড়ে দেখে |

সিঙ্গুর গাঁয়ে ঘিরল জমি, চাক্ না চাক্ দিতে |
লেঠেল দিয়ে কব্জা ক’রে জমি নিলেন জিতে |
কৃষক নেতা বেচা মান্না, করেন আন্দোলন,
বলেন “আমরা দেই নি জমি, ফেরত চাই এখন” |

মমতা বসেন অনশনে, ধর্মতলায় হাট ---
রাষ্ট্রপতির অনুরোধে, তোলেন মুখে ভাত |
চললো বছর দুয়েক ধরে টানা পোরেন শত |
তাপসী গেল অকাল-চিতায়, হতাহত কত |

সিঙ্গুর নিয়েই, রাজার নজর নন্দীগ্রামের বাটে,
আরও বড় জমি নেবেন, খবর দিলেন রটে!
সেথায় জ্বললো এমন আগুন, বাংলা জ্বলে আঁচে,
রাজার শাসন ঢুকতে মানা, ঘেঁষতে না পায় কাছে !

নন্দীগ্রামের সেই কাহিনী, হবে অন্য ক্ষণে,
শোনো এখন “সিঙ্গুরনামা”, দুষ্ট কবি ভনে!
এই অন্যায় মানতে নারে, জ্ঞানী-গুণী-জন,
প্রতিবাদের ঝড়ে টলে রাজার প্রশাসন |

এরই মাঝে নালিশ করেন রতন টাটাজী---
অন্য গাড়ীর মালিকরা সব করছে কারসাজি!
সিঙ্গুর-আন্দোলনের মাথায় তাদের টাকার ছাতা!
সবাই মন্দ, তিনিই শুধু ধোওয়া তুলসীপাতা!

এত মরণ, এত কাঁদন, এত রক্ত ঝরে,
টাটাবাবুর কারখানাটি ফনফনিয়ে বাড়ে !
আদালতের আশির্বাদে টাটার পোয়া বারো!
ভাবটি এমন - দেখি মোদের থামাও, যদি পারো!

ভেবছিলেন রাজাই যখন হাতের পুতুল তার
এখান থেকেই গাড়ীটি তার হবেই হবে বার |
অন্য কোথাও গ'ড়ে “প্রোটো”, নাম রাখলেন “ন্যানো”
ঢোল পিটিয়ে বলেন নামটি “মমতা” নয় কেন---

---গাড়ীর নামকরণ করতে পুরণ লক্ষ কথা
অনেকে নাকি বলেছিল --- রাখুন 'মমতা',
কাটা ঘায়ে নুন ছিটিয়ে হেসে বলেন টাটা---
"আমরা ভেবেছিলাম রাখি --- ডেসপাইট্ মমতা"!

অগাস্ট মাসে লক্ষ লোকের সিঙ্গুর অবরোধ,
দাবী তাদের - ফেরাও জমি, থাকবে না বিরোধ |
টেরটি পেলেন টাটা, কত ধানে কত চাল!
এত তির্যক্, টাকা ঢেলেও ফিরলো না রে হাল!

মমতাদিদি বুদ্ধবাবুর চুক্তি হলো বসে |
ওমা! তার পরের দিনই চুক্তি গেল ভেসে |
রেগে আগুন রতন টাটা বলেন সভা ডেকে---
“ওই চুক্তি মানতে নারি”| গেলেন মোদীর ঠেকে!

ভেবেছিলেন সেই ভয়েতে জমি দেবে ছেড়ে,
অল্প কিছু খাইয়ে দিলেই, আসবে না আর তেড়ে !
বাংলা দেশের অনেক মানুষ, আজও বিকোয় না রে,
এই কথাটি রতন টাটা, বুঝল দেরি করে !

মধ্যবিত্ত বাংলা কাঁদে হাপুস্ নয়নে!
টাটা গিয়ে অনাথ যেন বিধির বিধানে!
আরো বেশী কান্না ঝরায় রাজার পরিবার!
চোখের জলে বাংলা বুঝি ভাসলো এইবার!

অর্ধ শতক হাঁকলো যারা “টাটা বিড়লা নিপাত যাক্” !
টাটার যাত্রা ভঙ্গ হতে, কাটছে কেন নিজের নাক্ ?
কী কারণে আজকে টাটা চাষীর চেয়েও আপনজন ?
চাষের জমি কেড়ে কেন বাড়ায় এরা টাটার ধন ?

করতে কিছুই পিছুপা নয়, রাখতে টাটাবাবুর মান!
গরীব চাষী বেকার শ্রমিক, এদের প্রাণের নেইকো দাম ?
লুঠছে ছেলে, লুঠছে বুড়ো, লুঠছে নারী, লুঠছে গ্রাম!
চাষীর মেয়ে - জ্যান্ত মাঠে জ্বলছে, কানা কড়ির দাম!

বলছে রাজা, টাটা এলে চাকরি হবে বেসুমার!
অর্ধলক্ষ কারখানা-কল খোলার তাগিদ নেই কো যার,
যার সুযোগে মালিকপক্ষ, বকেয়া টাকা, করছে পার,
কোন্ মুখে সে বলছে মিছে, করছে কেন মিথ্যাচার ?

হে বাঙালী! কাঁদিস না রে, “কুইল পিট্ট্যা” কাঁদিস না!
“সুদিন-বন্ধু”, টাটার মতন, আর যাই হোক, “বন্ধু” না
আসবে এরা দাদাল ধরে, সস্তা জমি পাচ্ছে যে,
মন্ত্রী আমলা এঁটে শালমা, জো হুজুরী, নাচছে যে!

গেলে গেল, বালাই গেল! টাটা গেল পগার পার!
বুক চাপড়ে কাঁদিস কেন, বইয়ে নোনা অশ্রুধার ?
উন্নয়ন তো সবাই চায় রে | দুধ-ভাতে যে --- আরও চায়!
নুন্ আনতে পান্তা ফুরায়---সেও চায়, সেও চায়!

উন্নয়নটা হোক না সবার কেউ কি মানা করে ?
দুধে-ভাতে থাক্ না সবাই প্রগতির পথ ধরে |
কিন্তু যদি গরীব চাষীর, কেড়ে সব সম্বল,
করে যদি চাকরি দেবার মিথ্যা কপট-ছল্---

ফেল্ মুছে ফেল্ এমন যত উন্নয়নের বাণী,
এমন চিন্তা মনে আনাও নয় কি বেইমানি ?
অন্যের ভাত-জীবন কেড়ে মুখে কি ভাত রোচে ?
অন্য কাউকে বসিয়ে পথে নিজের সুখই ঘোচে |

রতন টাটা! মহান দাতা, দরিয়ার দিল তার!
তিনি নাকি কুবের কূলের মহান অবতার!
সেই কথাটা এমনভাবে মিথ্যে হবে ভাই,
টাটা, সিঙ্গুর আসার আগে, জানা ছিল নাই |


**********
.                                                         এস. এস. রিভার এম্বলে, উইপা নোঙ্গরে, অস্ট্রেলিয়া,
.                        ২০ অক্টোবর ২০০৮

.                                                                             
সূচির পাতায় ফেরত
.                             সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
*
জমি চাও ? যাও চাঁদে যাও!            
দেবাশিস রায়-এর সুরে ও কণ্ঠে "ভাঙো বাস্তিল" অ্যালবামের এই গানটির এক ঝলক শুনুন এখানে
ক্লিক করে . . .             

জমি চাও ?
কিগো জমি চাও ? যাও চাঁদে যাও!

চন্দ্রযানে বসে, চাঁদমামার দেশে
যত খুশি ছেলেখেলা খেলো!
জোরজার জমি কেড়ে, ধাওয়া খেয়ে সব ছেড়ে
পালালেও সেথা সব ভালো!

চাঁদের দেশে পাবে জমি অফুরান |
সেথা কৃষিজমি বলে কিছু নেই!
বাংলার হতভাগা চাষা-খেতমজুরের
চন্দ্রের মালিকানা নেই!

চড়কা-কাটা-বুড়ী, যুবুথুবু থুত্থুরি
করবে না চাঁদে আন্দোলন!
নন্দীগ্রাম নেই, সিঙ্গুরের নাম নেই
সেথা কেউ ঘটাবে না কোনো অঘটন!

চাকরি দেবার নামে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি
লাগবেনা | চাঁদ জনহীন |
চাঁদরূপী আরশীতে নিজেকেই নিজে দেখো,
গুনো বসে কড়ি নিশিদিন |

সেথা কেউ থাকে না !
আমি না, তুমি না, রাজা না, প্রজা না,
দুষ্টকবিও থাকে না!
বাংলার জ্বালাময়ী আগুনের লেশ নেই
সেথায় আগুন জ্বলে না!

তাই জমি চাও ? যাও চাঁদে যাও |

.          **********     এস. এস. রিভার এম্বলে, অস্ট্রেলিয়া, ১৮ নভেম্বর ২০০৮


.                                                  
সূচির পাতায় ফেরত
.      সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
*
মা ও মাটি      

মাটির মাঝে যে বিরাজে
সে-ই তো আমার মা  |
মায়ের সাচ্চা সন্তান কভু
মায়ের বিচার করে না |

মাটি আমার ফলায় কত
কিংবা ফলায় না,
যে মাটিতে দাঁড়িয়ে আমি
সে-ই আমার মা |

যে আমাকে ধারণ করে,
মাথার উপর আকাশ ধরে,
অত্যাচারীর নৃশংসতায়
যাহার অশ্রু ঝরে |

সেই মায়েরই করছে যারা
বিচার | যত লক্ষ্মীছাড়া!
গর্জ্জে উঠে, সৌর্য্যে ফুটে
এই মা-টি থেকে তাড়া |

মা কে যারা বন্ধ্যা বলে ---
মন যে তাদের কালো |
এই মায়েরই স্নেহের ছায়ায়
মোদের জগৎ আলো |

ওরে! মায়ের কুত্সা গাইছে যারা,
সভ্য জাতির লজ্জা তারা |
মায়ের ডাকে, কালের বাঁকে,
নিদ্রা ভেঙে দাঁড়া |

যোগ্য জবাব দে রে এবার
বাংলা ধরে নাড়া |
বাংলা ধরে নাড়া |
জোরসে ধরে নাড়া |

দুষ্ট কবি এই মায়েরই
রুদ্ররূপে হারা!


********** কলকাতা, ১ ডিসেম্বর ২০০৮

বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  কে কিছু কাল আগে শাসকদলের সাংসদ
লক্ষ্মণ শেঠ “বন্ধ্যা” আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন যে  জমি নিশ্চই মা কিন্তু বন্ধ্যা মায়ের
কোনো মূল্য নেই  |



.                                                  সূচির পাতায় ফেরত
.      সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
*
হে বীর সেনানী        

মাতৃঋণ শোধিলে তুমি
হে বীর সেনানী
গর্বিত আজ ভারতবাসী
জনপথে লাখো জয়োচ্ছাসি
শোনো “জয় হিন্দ, জয় হিন্দ” ধ্বণী
হে বীর সেনানী
মাতৃঋণ শোধিলে আজ
হে বীর সেনানী

শাসক ব্যাস্ত কূট ছলনায়
বন্ধক মন - বিদেশী মায়ায়,
অর্থনীতির অমোঘ ফাঁদে
জনসমগ্র ত্রাহি ত্রাহি কাঁদে
স্খলিত-ধর্ম-যোদ্ধা সুযোগে
নরসংহারে মাতে
হে বীর সেনানী তোমাতে
গরবী ভারত মাতেঃ

ভারতবাসী যেন নাথহারা
নিজ দেশে সন্ত্রাসে দিশেহারা
মন্দিরে, মসজিদে, পথে, গৃহে,
রক্তের নদী অবারিত বহে
উদ্ধারিলে দেশবাসীগণে
ভেদিয়া শত্রু ব্যুহ তব প্রাণে
ভীষণ-মরণ-পন-রণ হানি
ভারত মাতার হে বীর সেনানী

লিখে তব জয়গান, হে বীর
হল জীবন ধন্য, দুষ্ট কবির


********** কলকাতা, ২ ডিসেম্বর ২০০৮

২৬ থেকে ২৯ নভেম্বর ২০০৮ চলা মুম্বাইয়ের আতঙ্কবাদী হামলার রক্ষাকর্তা
ভারতীয় সেনার কোমাণ্ডো বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী



.                                                  সূচির পাতায় ফেরত
.      সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
*
বিদ্রোহ বাজে মাদলে মাদলে           
দেবাশিস রায়-এর সুরে ও কণ্ঠে "ভাঙো বাস্তিল" অ্যালবামের এই গানটির এক ঝলক শুনুন এখানে
ক্লিক করে . . .             

আবার জেগেছে সাঁওতাল আজ বঙ্গাল দেশ ছেয়ে |
দ্রিমি দ্রিমি বোলে, মাদলের তালে কী গান যায় গেয়ে ?
সরলতা আর ভালোমানুষীর করুণ প্রতিদানে,
ঘুরে দাঁড়িয়েছি সাঁওতাল মোরা, অধিকার পরমাণে |
অত্যাচারীর তরবারী রুখে দাঁড়ায়ে, জান-কবুল |
বিদ্রোহ বাজে মাদলে মাদলে - হুল বলো হুল !

বাংলায় জ্বলে দিগন্ত থেকে দিগন্তে দ্রোহানল |
তারি শিখা থেকে জ্বলেছে সারা জঙ্গলে দাবানল |
স্বাধীন দেশের বুকে আজও কেন চরম অপমান ?
উত্তর আজ দিতে হবে তারই, লাগে দেব বলিদান |
যদি মনে কর বেয়াদপী তবে শোনো ওই নির্ভুল ---
বিদ্রোহ বাজে মাদলে মাদলে - হুল বলো হুল !

অনাহার আর কুশাসনে ডরা, যত-অধিকার হারা,
ভেঙে চুরমার ক’রে চাই মোরা, মুক্ত জীবন ধারা |
অবরোধে-প্রতিরোধে পথ বাঁধা, বর্জিত প্রশাসন |
বনভূমি বাসী সমাজের কাছে মাঁগে সমান আসন |
নিস্তার নাই, ছাড়বো না দাবী, সাঁওতাল-শার্দুল |
বিদ্রোহ বাজে মাদলে মাদলে - হুল বলো হুল !

দুষ্টকবি কয় আবার ফুটেছে অগ্নিযুগের ফুল !
বিদ্রোহ বাজে মাদলে মাদলে - হুল বলো হুল !

********** কলকাতা, ৭ ডিসেম্বর ২০০৮

পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র সাঁওতাল অধ্যুসিত জঙ্গল মহলে যে বিদ্রোহ আমরা দেখতে
পারছি তারই প্রতিচ্ছবি এই কবিতায় | অভিযোগ, এলাকার পুলিশ নাকি মেয়েদের
কাপড় তুলে দেখতে চেয়েছে তারা মেয়ে কিনা | মেরে বৃদ্ধার চোখ উপড়ে দিতে
পিছপা হয় নি | মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পুলিশের অত্যাচার চরমে
উঠেছে | গণ্ডোগোলটি শুরু হয় তাঁর কনভয় কে লক্ষ্য করে বোমা ফাটার পর |  
সেই সূত্রে পুলিশ গিয়ে, মাওবাদী সন্দেহে বহু দূরের গ্রামের মেয়েদের উপর অকথ্য
অত্যাচার চালায় |



.                                                  সূচির পাতায় ফেরত
.      সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
*
দেয়াল-লিখন         

জানি, তোমার কাজই হলো হুকুম তামিল করা |
রাজার আদেশ মাথায় করে চোর-লুটেরা ধরা |
অনেক হলো, এবার তোমার সাঙ্গ কর খেলা |
দেয়াল-লিখন বলছে - এবার রাজার যাবার পালা |

বাংলা জুড়ে জ্বলছে আগুন, দাবানলের মত |
বাড়বে আরো, অত্যাচারের পারদ চড়বে যত |
তাই তো বলি এবার তোমার সাঙ্গ কর খেলা |
দেয়াল-লিখন বলছে - এবার রাজার যাবার পালা |

সেই আগুনের প্রথম ঝলক্ এই গাঁয়েতেই জ্বলে |
সেই আগুনের শীষ নিতে আজ আসছে দলে দলে |
সেই আগুনেই বাংলা ’জ্বলে আজকে আঁধার আলা |
দেয়াল-লিখন বলছে - এবার রাজার যাবার পালা |

ওই যে দেখ তোমার রাজার দেয়াল, জমি ঘিরে |
হাজার চাষীর এখন শুধু আঁধার, তাঁদের নীড়ে |
ওই দেয়াল এখন বলছে - থামাও, এই চোর-পুলিশের খেলা |
দেয়াল-লিখন বলছে - এবার রাজার যাবার পালা |

পড়তে শেখো দেয়াল-লিখন, তোমার সামনে-পীছে |
রাজার আশিস পাবার আশায় আর নেমো না নীচে |
শান্ত বলে ভুল কোরো না, মোদের ভূষণ অগ্নি-মালা |
দেয়াল-লিখন বলছে - এবার রাজার যাবার পালা |

রাজাই যে আজ অকারণে লুঠছে সুখের সুর |
পুড়ছে মাঠে চাষীর মেয়ে, মরছে খেতমজুর |
দুষ্টকবি দেয়াল লিখন দেখছে এই বেলা |
দেয়াল-লিখন বলছে - এবার রাজার যাবার পালা |



********** কলকাতা, ১১ ডিসেম্বর ২০০৮

খবরে প্রকাশ - এখন সিঙ্গুরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর পুলিশ মিথ্যা মামলার ছুতোয়  
রাত-বিরেতে গ্রামবাসীদের ঘরে ঘরে ঢুকে হয়রানি করছে | এমনকি নারীর সম্মান
ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে বলে অভিযোগ | তাই তাঁরা সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়া গ্রামের উজ্জ্বল
সংঘ ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ
করছেন |

দুষ্টকবি এই কবিতাটি, ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ এ সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটি
আয়োজিত, উপরোক্ত লাগাতার অবস্থান মঞ্চে, পাঠ করে এসেছেন |


.                                                  সূচির পাতায় ফেরত
.      সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
*
খবর ছড়াই         
দেবাশিস রায়-এর সুরে ও কণ্ঠে "ভাঙো বাস্তিল" অ্যালবামের এই গানটির এক ঝলক শুনুন এখানে
ক্লিক করে . . .        

মোরা, করছি বড়াই, খবর ছড়াই,         
তোমার আদেশ ছাড়াই |                 
তুমি, মারছো মারো, ধরছো ধরো,
কেয়ার করি থোড়াই!

যুগের, দীপ্ত-মশাল আলোর তলে
আঁধার যতই সরাই!
সুপ্ত খবর লুপ্ত করার
চেষ্টা রুখে দাঁড়াই |

সবার, ধোপ-দুরস্ত বসন তলে
হিয়ার কেমন লড়াই!
আসল মুখটা দেখতে কেমন,
মুখোশ যখন সরাই!

তুমি, করলে ভালো, বলবো ভালো,
মন্ত্র “সত্য” বলাই,
মোদের, কণ্ঠ রুদ্ধ করলে হবে--
তোমার মুখোশ খোলাই!

ক্যামেরা ভেঙে, চোখ রাঙিয়ে,
ঠ্যাঙারে দিয়ে ধোলাই,
মারছো মারো, ধরছো ধরো,
কেয়ার করি থোড়াই!

খবর তুলে আনতে যাদের
দিবস নিশি লড়াই
দুষ্টকবির লেখার কারণ
তাদের সেলাম করাই |

********** কলকাতা, ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮

একের পর এক সাংবাদিকদের উপর আক্রমণের ঘটনার বিরুদ্ধে কবির প্রতিবাদ


.                                                  সূচির পাতায় ফেরত
.      সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
*
হাওয়া ঘুরছে!         
দেবাশিস রায়-এর সুরে ও কণ্ঠে "ভাঙো বাস্তিল" অ্যালবামের এই গানটির এক ঝলক শুনুন এখানে
ক্লিক করে . . .     


শরতের মেঘ যাবার বেলায়
বলে গেলো --- হাওয়া ঘুরছে!
ঝরা পাতা ঝ’রে কানে কানে কয়
ওই দ্যাখো --- হাওয়া ঘুরছে!
সকাল সাঁঝের কুহেলিকা জ’মে
ফিস্ ফিসে বলে --- ঘুরছে!
ঘুরছে! হাওয়া ঘুরছে!
হাওয়া ঘুরছে! ঠিক ঘুরছে!

ঘাসে ঘাসে জমা শিশিরে শিশিরে
একই কথা --- হাওয়া ঘুরছে!
তুলসী তলায়, আকাশ প্রদীপে
টিম টিমে বলে --- ঘুরছে |
মিটি মিটি তারা, ছায়াপথ ধারা,
সকলেই বলে --- ঘুরছে !
ঘুরছে! হাওয়া ঘুরছে!
হাওয়া ঘুরছে! ঠিক ঘুরছে!

যার জমি ঘেরা, রুজি-রুটি কাড়া,
সে তো জানে --- হাওয়া ঘুরছে!
যার কারখানা গেটে তালা মারা
চোখে মুখে --- হাওয়া ঘুরছে!
যার পেটে নেই শুকনো রুটিও
তারও মনে --- হাওয়া ঘুরছে!
ঘুরছে! হাওয়া ঘুরছে!
হাওয়া ঘুরছে! ঠিক ঘুরছে!

স্লোগানের ঢং, পতাকার রং
সবই বলে --- হাওয়া ঘুরছে!
মশালে মশালে আগুনের শিখা
জ্ব’লে বলে --- হাওয়া ঘুরছে!
দুষ্টকবি দেয়াল লিখনে  
দ্যাখে, লেখা --- হাওয়া ঘুরছে!
ঘুরছে! হাওয়া ঘুরছে!
হাওয়া ঘুরছে! ঠিক ঘুরছে!


********** জলপাইগুড়ি, ১৬ জানুয়ারী ২০০৯

.                                                  
সূচির পাতায় ফেরত
.      সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
*
বল সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম         

বল সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম!
আন্দোলনের ইতিহাসে লেখা
থাকবে এ দুই নাম |
বল সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম!

বল সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম!
করে আমরণ সংগ্রাম,
বাঁচিয়েছে তাঁরা নিজের মাটিকে
দিয়ে জীবনের দাম |

রাজার প্রসাদে পুষ্ট কবিরা
দিক্ শত অপবাদ |
স্কুল-কলেজের সিলেবাস থেকে
কৌশলে দিক বাদ |
পারবে না তবু বিস্মৃতি-জালে
চাপা দিতে এই নাম |
আগামীতে জেনো শোনা যাবে ঠিক
"বল সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম!"

তাঁদেরই ঠ্যালায় বদলেছে দেশে
জমি-কেড়ে-নেয়া আইন |
ভোটের বাজারে তাঁদেরই দুয়ারে
পড়েছে বিশাল লাইন!

যাঁরা বেঘোরে দিয়েছে প্রাণ,
মাটির লড়াইয়ে লাঞ্ছিতা হয়ে
বেঁচে থেকে কাতরান্ ,
তাঁদের স্মরণ ক'রেই বল হে ---
"বল সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম!"

বল সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম!
দুষ্ট কবির কবিতার সুরে---
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম |
বল সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম ||


********** কলকাতা, ৫ মার্চ ২০০৯

.                                                  
সূচির পাতায় ফেরত
.      সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
*
আমার কবিতা         

যদি ছত্রে ছত্রে কথার চমক,
নাহি উঠে আসে ঠোঁটে |
যদি বিদ্বজনেরা সমস্বরে বলে ---
"এ হয় নি কবিতা মোটে!"

যদি বিশ্ব-মানব-বাঙালী-বাবুর
ভুরু কুঁচকিয়ে ওঠে |  
যদি, আমার কবিতা পড়লে সভার
মেজাজ যায় টুটে |

যদি মনের গহনে আগুন জ্বলে,
শিরায় রক্ত ফোটে |
যদি অত্যাচারের ক্ষোভের সাওয়ারী
পাগলা ঘোড়ায় ছোটে |

জানবে আমি ধন্য, আমার
কবিতা ধন্য বটে |
তাতেই আমার কবিতার ভালে,
সার্থকতা জোটে |

নই কবীর সুমন, নইকো কাজী,
নই জয়, নই সাধের রবি,
আমি দুষ্ট কবি, কালের কবি,
আন্দোলনের লিখে যাই ছবি |

তবুও তুমি যে ধৈর্য ধ'রে
পড়ছো আমার গান |
তাতেই আমি ধন্য, বন্ধু,
ধন্য আমার নাম |


********** কলকাতা, ৫ মার্চ ২০০৯

.                                                  
সূচির পাতায় ফেরত
.      সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
*
মুখ ফুটে বল "আর নয়"         
দেবাশিস রায়-এর সুরে ও কণ্ঠে "ভাঙো বাস্তিল" অ্যালবামের এই গানটির এক ঝলক শুনুন এখানে
ক্লিক করে . . .   

ক্ষ্যাপা ষাঁড় ঘোরে তেড়ে ফুঁড়ে,
জনপথ অলি গলি কাঁপিয়ে |
সরাসরি দাঁড়া সিং ধরে,
এই বেলা পথে নাম ঝাঁপিয়ে |

চুপ ক'রে ঘরে বসে থেকে
লাভ নেই, তুই পার পাবি না |
যদি বেড়া ভেঙে ঘরে এসে ঢোকে,
তুই পালাবার পথ পাবি না |

যাঁরা পথে নেমে রোখে এই ষাঁড়,
যাঁর, আগুন ঠেকাতে পোড়ে ছাতি,
তাঁদের গায়ের আঁচে কতকাল আর
তুই রাঁধবি চড়ুইভাতি ?

তোর ঘর-সংসার, পরিবার ?
তোর দেশ, পরিবেশ, পারাবার ?
কে নেবে ভার, তাকে বাঁচাবার ?
তোর নেই কি কোনোই দায়ভার ?

দুষ্ট কবি ব'লে যায় ---
যদি চাস্ এই দিন বদলায়,
তবে, দ্বার খুলে পথে নেমে আয়!
তবে, মুখ ফুটে বল --- "আর নয়"!


.     **********      কলকাতা, ৯ মার্চ ২০০৯

.                                                  
সূচির পাতায় ফেরত
.      সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
*
আজ দোলের খেলায় সবার মেলায়
সকল রঙের ভীড় |
লাল সবুজের বিভেদের জের
মুছুক আজ আবীর |
আগামীর দিন উড়ুক নবীন
নিশান নিশিদিন |
চাই না লালে ভিজুক মাটি
সবুজ না হোক্ লীন |
হোলির দিনে দোলের রঙে
সবার আহ্বান |
দুষ্ট কবি গাইছে ভাবী -
দিন বদলের গান |


.     **********      কলকাতা, ১১ মার্চ ২০০৯

.                                                  
সূচির পাতায় ফেরত
.      সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
*
শেষ কথা ব্যালটেই বলবে       
দেবাশিস রায়-এর সুরে ও কণ্ঠে "ভাঙো বাস্তিল" অ্যালবামের এই গানটির এক ঝলক শুনুন এখানে
ক্লিক করে . . .   

বাংলা তো জ্বলছেই জ্বলবে,
সেই অগ্নি-শিখায় জয়-সংকেত |
আকাশ বাতাশে শুনি জয়গান
গায় লুণ্ঠিত, শোষিত, অনিকেত |

যদি ভাবো - ভোট দিয়ে হবে কি ?
জেনে রাখো, না দিলেও র'বে কি ---

রবে শুধু শ্মশানের শান্তি,
বিকে-যাওয়া দেশ জুড়ে ভ্রান্তি |

শ্রমিকের কাজ --- "কেনা-গোলামী",
কৃষকের ধানক্ষেতে সুনামী |

নারীদের লাঞ্ছনা আমরণ,
শোষকের লালসার কর্ষণ |

ক্রোধ প্রতিরোধ কুরবানী |
রাষ্ট্রীয়-ত্রাস, হানাহানি |

তাই, তুলে নাও হাতিয়ার ব্যালটের,
তাক্ করো দম্ভ শাসকের |
অবিরাম, ত্রাসে হেনে প্রতিরোধ,
কেড়ে নাও অধিকার নিজেদের |

এক পা-ও পশ্চাতে না হেঁটে,
বুলেটেরে রুখে দাও ব্যালটে |

দুষ্ট কবি বলে --- দাও শান্ ,
ভোট নামী হাতিয়ারে দাও শান্ |

বাংলা তো জ্বলছেই জ্বলবে |
শেষ কথা ব্যালটেই বলবে |


.     **********        কলকাতা, ১৮/৫/২০০৮ ~ ১২/৩/২০০৯



.                                                            
সূচির পাতায় ফেরত
.            সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
*
সজোরে মার চড়          

সজোরে মার চড়
ওরে, সজোরে মার চড়
সন্ত্রাস রূপী পাগলা ষাড়ের
দুই সিং চেপে ধর
কালাশনিকভে ঝড় তুলে যারা
নিরস্ত্র কে খুন করে !
মরলে, বলে স্বর্গে যাবে,
ধর্মের হাত ধরে !
কাজে, অবকাশে, গৃহে, পরবাসে,
পথে, ঘাটে, নিশিদিন
নিরস্ত্র-কে-মারা বাহাদুরী বলে---
মানসিক অতি দীন |
এত কাপুরুষ পৃথিবীতে আর
জন্মেনি কোনো দিন |
দুষ্ট কবি প্রার্থনা করে ---
ঈশ্বর! এদের সুমতি দিন |


********** কলকাতা, ১৯ ডিসেম্বর ২০০৮

.                                                            
সূচির পাতায় ফেরত
.            সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে

মিলনসাগর
*
মোরা পারি          

মোরা পারি, মোরা পারি
মোরা পাষাণ পিষে বেদম পেষণে  
অস্রু ঝরাতে পারি

রাজার তোলা মারণ দোলার
ঝড় তুফাণের ঝঞ্ঝাকে পার
আমরাও হতে পারি

রুখে সব জারি জুরি
মোরা শানিত অত্যাচার-তরবারি
ভোঁথা ক'রে দিতে পারি

গুঁড়িয়ে দেওয়া জীবন নিয়েই
দাঁতে দাঁত চিপে পার হয়ে যাই
দুর্জ্ঞেয় মরু গিরি

বিধির লিখন মুছে সাফ করে     
নিজের ভাগ্য নতুন সুরে
খোদাই করতে পারি   

পরাজয়ের কালীমাকে ধরে
জয়টিকার অলংকারে  
বদলে দিতে পারি

বিকে যাওয়া এই দেশকে
মোরা জাহান্নামের দুয়ার থেকে
ছিনিয়ে আনতে পারি

দুষ্ট কবি বলছে ডাকি ---
এখনও অনেক রয়েছে বাকি
এখনও হয়নি দেরি

মোরা পারি, মোরা পারি
মোরা পাষাণ পিষে বেদম পেষণে  
অস্রু ঝরাতে পারি  


.     ************** এস. এস. রিভার এম্বলে, গ্ল্যাডস্টোন থেকে উইপা, অস্ট্রেলিয়া,  
১৬/০৫/২০০৯


.                                                            
সূচির পাতায় ফেরত
.            সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে  


লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে বিরোধীদের জয়জয়কার দেখে এই কবিতাটি
লেখা
   

মিলনসাগর
*
মন ভরে না          

পাখীদের চোখ ফোটে
ফুলের কুড়িও ফোটে
বাঙালীর মুখ ফোটে না!

সভা কবিদের ঠোঁটে
লেজ নাড়া হাসি ফোটে
গোলাপী চশমা হটে না!

পার্কে, লেকের ঘাটে
কাতারে কাতারে হাঁটে
সুখের হদিস জোটে না!

এ দেশের মাঠে ঘাটে
কৃষকের ঘাম ছোটে
সুদিনের আলো ফোটে না!

শ্রমিক মজুর মুটে
গেছে ডাল ভাত ছুটে
বাঁধা কল তালা খোলে না!

চাকরি দেবার খাতে
চাষাকে বসিয়ে পথে
লুটে জমি মন ভরে না!



********** কলকাতা, মার্চ ২০০৯



.                                                            
সূচির পাতায় ফেরত
.            সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে  



মিলনসাগর
*
গনগনে আগুনের আঁচে          

গনগনে আগুনের আঁচে,
ওই যেন মহাকাল প্রলয় নাচন নাচে |
বাংলার মানুষের ক্ষোভের বারুদ ফাটে |
শোষনের দিন চলে গেছে |

হতাশার তমসার শেষে,
নিপিড়িত জনতার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে |
হারাবার নেই কিছু যে মানুষের, সে
ভয় ডর কিছু নাহি মানে |

পদে পদে শোষিত মানুষের ভীড় দ্যাখো !
দ্যাখো চেয়ে চোখে মুখে উচ্ছাস !
দ্যাখো ভয়ে রাজ-ধ্বজা-বয়ে-চলা মানুষের,
তা ঝেড়ে-ফেলা-মুক্তির উল্লাস !

অশুভের উসকানী! তরাসের চমকানী!
সইবে না, ওই বলে সবে |
অসত্যের ইঁটে গড়া শাসনের প্রহসন,
ভেঙে খান্ খান্ আজ হবে |

দুষ্ট কবি তার লেখনির শিষ তাতে---
এই গনগনে আগুনের আঁচে !
বাংলার মানুষের ক্ষোভের বারুদ ফাটে |
শোষনের দিন চলে গেছে |


.     ************** এস. এস. রিভার এম্বলে, গ্ল্যাডস্টোন থেকে উইপা, অস্ট্রেলিয়া,
.                                                                     ০৪/০৬/২০০৯

পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোনো ও ঝড়-আইলার পর বাংলার
শাসকদের প্রতি মানুষের ক্ষোভের প্রকাশ দেখে লেখা

.                                                            সূচির পাতায় ফেরত
.            সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে  



মিলনসাগর
*
কালীঘাটে কেন করিম চাচা ?     


কালীঘাটের অলিতে গলিতে
বিশাল সমাগম |
নয় কোনো আজ পূজার তিথি,
নয় কোনো পার্বন |

যে যার মতো সাজিয়েছে ডালি,
কারো হাতে ফুল, কারো হাত খালি |
মিষ্টি রয়েছে কারো কারো হাতে
সবাই এসেছে আজ কালীঘাটে |

মনের মাঝে প্রশ্ন বাজে --
করিম চাচাও ভীড়ের মাঝে!
সেথায় কী তাঁর কাজ ?
তাঁরও হাতে কেন ফুলের শোভা,
বাক্সে ক্ষীরের সাজ!

দেবীর কাছে মানত আছে ?
সে তো মাথা টেকে আল্লার কাছে !
তবু কেন সে এ ভীড়ের মাঝে
হেথায় কী তার কাজ ?  

দোকান আছে দূর গাঁয়ে তাঁর
পসরা তাঁর নানা বীজ-সার
চাষের হরেক রকম দিয়ে
সাজানো দোকান তাঁর |

সাজানো দোকান তাঁর ?
পসরা দিয়ে ভরা সারা ঘর
মেঝে থেকে চালা পার |
তিল ধারণের জায়গা নেইতো
ঠাসাঠাসি চারিধার |
প্রথম দেখা-তে সবাই ভাবে ---
বুঝি দারুণ পসার তাঁর |
চোখ সয়ে এলে বুঝতে পারে যে ---
নামেই দোকান তাঁর |
জিনিষ বোঝাই থাকলেও
তাঁর নেই যে খরিদদার !

গাঁয়ের প্রধাণ ফতোয়া দিয়েছে ---
“খবরদার! খবরদার!
কেউ যাবি না ওই ধার |
ওর দোকান নিয়েই বসে থাকুক ও,
বিনা খরিদদার |
ভদ্রভাবে বলেছি উয়ারে ---
পঞ্চায়েত এ মোদের বিরোধে
দাঁড়াস নে এই বার |
আমাদের কথা শোনেনি যখন
বুঝুক মজা এবার |”

সাহস দেখ তার!
ব্যাটা নাছোড়বান্দা মাথা মোটা বটে
এক ফোঁটা ভয় নেই তার ঘটে,
সেবার, বিরোধী দলের প্রার্থি হয়ে
দাঁড়ালো পঞ্চায়েতে!

জিতবে না সে জানতোই,
দেশে নামেই নির্বাচন!               
বছরের পর বছর ধরে
চলেছে এ প্রহসন!

কত জারিজুরি, কত মার প্যাঁচ,
কত সন্ত্রাস, কত গ্যাঁড়াকল!
রাজ-আস্তিনে লুকানো কত
অভাবনীয় রণ-কৌশল!

তবুও করিম চাচার মনে
ধনুক-ভাঙা-পণ ---
মানবে না সে রাজার-কুলের
ভিতি প্রদর্শন |

তখন থেকেই তাঁর উপরে
রাজনৈতিক ফতোয়া!
চেনা-মুখেও ত্রাসের বাঁধন,
চোখে অসহায়তার ছায়া |

দোকান ভরা পসরা থেকেও
জীবন গেল জলে |
মিথ্যে আনা মামলায় তাঁর
ছেলেটা পচছে জেলে |
দূরারোগ্য ক্যানসারে ভুগে
টাকার অভাবে বৌটা গেছে
চিরনিদ্রার কোলে |

রাজার দলের অত্যাচারে
মচকে গেলেও ভাঙে নি করিম চাচা |
দাঁতে দাঁত চিপে, কামড়ে মাটি
দিন গুনে গুনে বাঁচা |
আর, উপরওয়ালার কাছে দোয়া করা ---
কবে যাবে এই অরাজক রাজা |

তিরিশ বছর টানা ঘুম দিয়ে
আজ আবার বাংলা জাগা!
স্বাধীনতার সেই সংগ্রামী হাওয়া
যেন পুনরায় গায়ে লাগা!

সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের মানুষ
যে বিদ্রোহে দিল জান |
সেই দ্রোহানলে বাংলা ‘জ্বলে
আবার শোধিত প্রাণ |

তাতেই নব নির্বাচনে
ধরাশায়ী এই রাজা |
মানুষ অত্যাচারের জবাবে
দিয়েছে রাজারে সাজা |

সে সংগ্রামের দিক্-দিশা-হাল  
যার শক্ত মুঠোয় ধরা,
অতি সাধারণ ঘরের মেয়ে সে
অসাধারণতায় গড়া |

তাঁর গড়িমায় উদ্বুদ্ধ
কোটি কোটি দেশবাসী |
এক ডাকে তিনি সবার দিদি,
এই কালীঘাট বাসী!

স্বাধীন দেশেও পরাধীনতার
কেন এই গ্লানিবোধ ?
তাই, কোটি কোটি জন দাঁড়িয়েছে ঘুরে
পথে ঘাটে অবরোধ |

করিম চাচার মত যাঁরা ছিল
পরাধীন, বাংলায়,
এই বার তারা উন্নত শিরে
মুক্তির শ্বাস নেয় |

করিম চাচার গাঁয়ে যদি যাও
দেখবে দোকান তার |
এখন সেখানে ভয় কেটে গেছে,
হাসিমুখ জনতার |

যাঁর তরে সে স্বাধীন আবার
যাঁর জয়ে তাঁর জয় |
নয়ন ভরে দেখে যাবে তাঁরে
এই তার প্রত্যয় |
তাই সে এসেছে কালীঘাটে আজ
ধরমের নামে নয় |
এই কথা লিখে দুষ্ট কবির
দু নয়ন ভরে যায় |



********** এস. এস. রিভার এম্বলে, নোঙরে, উইপা, অস্ট্রেলিয়া, ১৯/৫/২০০৮

পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পর মানুষের ঢল নেমেছিল বিরোধী নেত্রী
শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়ীতে |
এই কবিতায় বর্ণিত চরিত্র "করিম চাচা" নামটি, দুষ্ট কবি ইচ্ছে করেই বদলে দিয়েছেন কিন্তু
গ্রামের দোকানের খরিদ্দার বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাটি সত্য, কবির নিজের প্রত্যক্ষ করা!

.                                                          
  সূচির পাতায় ফেরত
.            সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে  



মিলনসাগর
*
বাংলা তুমি জ্বলছো অবিরত     

বাংলা তুমি দাউ দাউ করে
জ্বলছো অবিরত |
সেই আগুনে শোধিত হোক
সন্তান তব যত |

বহু শহীদের কুরবাণী-ধন
স্বাধীনতা ! স্বাধীনতা !
তার বদলে স্বর্গ-সুখও
নরকের দুঃখ যথা |

স্বাধীন দেশের মানুষ যখন
হারায় অধিকার,
ফিরে পেতে তাকে দগ্ধ হতে
হবেই বার বার |

নীতিকথার নব-মায়াজালে
লুঠছে অধিকার |
স্বাধীনতা থাকে কাগজে কলমে,
বিকে যায় সরকার |

তাই তো বাংলা দাউ দাউ করে
জ্বলছো অবিরত |
তার আলোকেই দুষ্ট কবি
রচিছে কবিতা যত |

.     ************** এস. এস. রিভার এম্বলে, উইপা থেকে গ্ল্যাডস্টোন, অস্ট্রেলিয়া,  ১২/০৫/২০০৯


.                                                          
  সূচির পাতায় ফেরত
.            সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে  



মিলনসাগর