দুষ্ট কবির ধৃষ্ট কবিতা |
সিঙ্গুরনামা টাটাবাবু হলেন কাবু, বাংলা দেশে এসে! বলেছিলেন জমি নেবেন, একর হাজার চষে | বিশ্বজুড়ে কেনেন বেচেন, হরেক রকম জিনিষ, তার কথাতে বিকোয় সবাই, মন্ত্রী থেকে মুনিষ! বুদ্ধরাজা, ভোটে তাজা জিতেই ছোড়েন পাশা--- এই যে টাটা গড়বে দেশে, ছোট্ট গাড়ী খাসা! বাঙ্গালীরা হেব্-ভি খুশি, নাচলো আবীর মেখে! হোচট্ খেল, চাষের জমি, নিচ্ছে কেড়ে দেখে | সিঙ্গুর গাঁয়ে ঘিরল জমি, চাক্ না চাক্ দিতে | লেঠেল দিয়ে কব্জা ক’রে জমি নিলেন জিতে | কৃষক নেতা বেচা মান্না, করেন আন্দোলন, বলেন “আমরা দেই নি জমি, ফেরত চাই এখন” | মমতা বসেন অনশনে, ধর্মতলায় হাট --- রাষ্ট্রপতির অনুরোধে, তোলেন মুখে ভাত | চললো বছর দুয়েক ধরে টানা পোরেন শত | তাপসী গেল অকাল-চিতায়, হতাহত কত | সিঙ্গুর নিয়েই, রাজার নজর নন্দীগ্রামের বাটে, আরও বড় জমি নেবেন, খবর দিলেন রটে! সেথায় জ্বললো এমন আগুন, বাংলা জ্বলে আঁচে, রাজার শাসন ঢুকতে মানা, ঘেঁষতে না পায় কাছে ! নন্দীগ্রামের সেই কাহিনী, হবে অন্য ক্ষণে, শোনো এখন “সিঙ্গুরনামা”, দুষ্ট কবি ভনে! এই অন্যায় মানতে নারে, জ্ঞানী-গুণী-জন, প্রতিবাদের ঝড়ে টলে রাজার প্রশাসন | এরই মাঝে নালিশ করেন রতন টাটাজী--- অন্য গাড়ীর মালিকরা সব করছে কারসাজি! সিঙ্গুর-আন্দোলনের মাথায় তাদের টাকার ছাতা! সবাই মন্দ, তিনিই শুধু ধোওয়া তুলসীপাতা! এত মরণ, এত কাঁদন, এত রক্ত ঝরে, টাটাবাবুর কারখানাটি ফনফনিয়ে বাড়ে ! আদালতের আশির্বাদে টাটার পোয়া বারো! ভাবটি এমন - দেখি মোদের থামাও, যদি পারো! ভেবছিলেন রাজাই যখন হাতের পুতুল তার এখান থেকেই গাড়ীটি তার হবেই হবে বার | অন্য কোথাও গ'ড়ে “প্রোটো”, নাম রাখলেন “ন্যানো” ঢোল পিটিয়ে বলেন নামটি “মমতা” নয় কেন--- ---গাড়ীর নামকরণ করতে পুরণ লক্ষ কথা অনেকে নাকি বলেছিল --- রাখুন 'মমতা', কাটা ঘায়ে নুন ছিটিয়ে হেসে বলেন টাটা--- "আমরা ভেবেছিলাম রাখি --- ডেসপাইট্ মমতা"! অগাস্ট মাসে লক্ষ লোকের সিঙ্গুর অবরোধ, দাবী তাদের - ফেরাও জমি, থাকবে না বিরোধ | টেরটি পেলেন টাটা, কত ধানে কত চাল! এত তির্যক্, টাকা ঢেলেও ফিরলো না রে হাল! মমতাদিদি বুদ্ধবাবুর চুক্তি হলো বসে | ওমা! তার পরের দিনই চুক্তি গেল ভেসে | রেগে আগুন রতন টাটা বলেন সভা ডেকে--- “ওই চুক্তি মানতে নারি”| গেলেন মোদীর ঠেকে! ভেবেছিলেন সেই ভয়েতে জমি দেবে ছেড়ে, অল্প কিছু খাইয়ে দিলেই, আসবে না আর তেড়ে ! বাংলা দেশের অনেক মানুষ, আজও বিকোয় না রে, এই কথাটি রতন টাটা, বুঝল দেরি করে ! মধ্যবিত্ত বাংলা কাঁদে হাপুস্ নয়নে! টাটা গিয়ে অনাথ যেন বিধির বিধানে! আরো বেশী কান্না ঝরায় রাজার পরিবার! চোখের জলে বাংলা বুঝি ভাসলো এইবার! অর্ধ শতক হাঁকলো যারা “টাটা বিড়লা নিপাত যাক্” ! টাটার যাত্রা ভঙ্গ হতে, কাটছে কেন নিজের নাক্ ? কী কারণে আজকে টাটা চাষীর চেয়েও আপনজন ? চাষের জমি কেড়ে কেন বাড়ায় এরা টাটার ধন ? করতে কিছুই পিছুপা নয়, রাখতে টাটাবাবুর মান! গরীব চাষী বেকার শ্রমিক, এদের প্রাণের নেইকো দাম ? লুঠছে ছেলে, লুঠছে বুড়ো, লুঠছে নারী, লুঠছে গ্রাম! চাষীর মেয়ে - জ্যান্ত মাঠে জ্বলছে, কানা কড়ির দাম! বলছে রাজা, টাটা এলে চাকরি হবে বেসুমার! অর্ধলক্ষ কারখানা-কল খোলার তাগিদ নেই কো যার, যার সুযোগে মালিকপক্ষ, বকেয়া টাকা, করছে পার, কোন্ মুখে সে বলছে মিছে, করছে কেন মিথ্যাচার ? হে বাঙালী! কাঁদিস না রে, “কুইল পিট্ট্যা” কাঁদিস না! “সুদিন-বন্ধু”, টাটার মতন, আর যাই হোক, “বন্ধু” না আসবে এরা দাদাল ধরে, সস্তা জমি পাচ্ছে যে, মন্ত্রী আমলা এঁটে শালমা, জো হুজুরী, নাচছে যে! গেলে গেল, বালাই গেল! টাটা গেল পগার পার! বুক চাপড়ে কাঁদিস কেন, বইয়ে নোনা অশ্রুধার ? উন্নয়ন তো সবাই চায় রে | দুধ-ভাতে যে --- আরও চায়! নুন্ আনতে পান্তা ফুরায়---সেও চায়, সেও চায়! উন্নয়নটা হোক না সবার কেউ কি মানা করে ? দুধে-ভাতে থাক্ না সবাই প্রগতির পথ ধরে | কিন্তু যদি গরীব চাষীর, কেড়ে সব সম্বল, করে যদি চাকরি দেবার মিথ্যা কপট-ছল্--- ফেল্ মুছে ফেল্ এমন যত উন্নয়নের বাণী, এমন চিন্তা মনে আনাও নয় কি বেইমানি ? অন্যের ভাত-জীবন কেড়ে মুখে কি ভাত রোচে ? অন্য কাউকে বসিয়ে পথে নিজের সুখই ঘোচে | রতন টাটা! মহান দাতা, দরিয়ার দিল তার! তিনি নাকি কুবের কূলের মহান অবতার! সেই কথাটা এমনভাবে মিথ্যে হবে ভাই, টাটা, সিঙ্গুর আসার আগে, জানা ছিল নাই | ********** . এস. এস. রিভার এম্বলে, উইপা নোঙ্গরে, অস্ট্রেলিয়া, . ২০ অক্টোবর ২০০৮ . সূচির পাতায় ফেরত . সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে মিলনসাগর |