দুষ্ট কবির ধৃষ্ট কবিতা
*
তুমি মানুষের পাশে ছিলে
তুমি এখনো পাশেই আছ
রাজ-প্রহরার ব্যারিকেড ভেঙে
জনজোয়ারের পথে নেমে নেমে
প্রজার অশ্রু মোছো

তোমার রাজদণ্ডের শরে
বিদ্যুৎ-শিখা ঝরে
রাজাসন থেকে পথে নেমে এসে
তৃষিত তাপিত জর্জ্বর দেশে
শান্তির বারি ঝরে

যারা করেছিল অপমান
যারা হেনেছিল অবিরাম
তারাই আজকে নতমস্তকে
বিতাড়িত হয়ে জনমন থেকে
গায় তব গুণগান

আমি তোমার, কালেরই কবি
আমি নয় গো তোমার “রবি”
তুমি বেঁচে রবে আগামীর দিনে
আমারই কথায় আমার এই গানে
এ নয় গো আমার দাবী

তবুও হে কাণ্ডারী
কবিরে দাও হে মুক্ত করি
“রবি”র দোহাইয়ে বেঁধো নাকো তারে
তোমারই তরে সে বন্দনা করে  
নিজের মতন করি


.         ***********    কলকাতা ৩০/০৫/২০১১
.                                                                                    
সূচিতে . . .        

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনোত্তর সময়ে, বিজয়ী দলের নেত্রী একটি আদেশ  জারি
করেছিলেন যে মানুষজন যদি কোথাও  কোনো গান বাজাতে  চান, তবে তা যেন শুধু
রবীন্দ্রসংগীত হয় | এই আদেশের উদ্দেশ্য মহৎ হলেও, দেখা গেল যে, যে গানগুলি সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম
আন্দোলনের সময়ে রচিত হয় এবং নিজগুণে জনপ্রিয়তা অর্জন করে, যেমন কবীর সুমনের
“নন্দীগ্রাম” সিডির গান, প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গান,  রাজেশ দত্তর “মা মাটি মানুষের” গান,
দুষ্টকবির লেখা দেবাশিস রায়ের সুরারোপিত “বাংলা জ্বলছে” এবং “ভাঙো বাস্তিল” সিডির গান
এবং অন্যান্য  কিছু জনপ্রিয় গান বাজানো প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হলো | আন্দোলনকারীরা
নিজেরাই নিজেদের আন্দোলনের গান গাওয়া বা বাজানো বন্ধ করে দিয়েছেন, এমনটা এর আগে
সারা পৃথিবীর কোনো আন্দোলনেই দেখা যায় নি! পুরো ব্যাপারটাই এমন রূপ নিয়েছে যেন এই
গানগুলির উপর একটি অলিখিত সেনসরশিপ চাপিয়ে রুদ্ধ করে দেওয়া হল! এরই পরিপ্রেক্ষিতে
দুষ্ট কবি এই কবিতাটি রচনা করেছেন |
 




মিলনসাগর
*
তুমি ফিরে এসো
ফিরে এসো আমাদেরই মাঝে
এখনো সময় আছে
সূর্য এখনো আছে
মাঝ-আকাশের এইপাশে
ফিরে এসো এদিনের
তাপসীর বুকফাটা কান্নায়
শিশুহারা মায়েদের বাঁধভাঙা
অশ্রুর বন্যায়
ফিরে এসো সেদিনের
অবিচার অন্যায়
মুছে ফেলা অগ্নিকন্যায়
আরবার ফিরে এসো
দুষ্ট কবির সেই অখ্যাত
কবিতার আঙ্গিনায়


.         ***********    কলকাতা ১৯/০২/২০১২   
.                                                                                   
সূচিতে . . .    






মিলনসাগর
*
বেনোজল ঢুকলে পড়ে হয় যে কি তা দ্যাখ্ রে সচোক্ষে,
ব্যাবধান বনবাদাড় আর বসতবাড়ীর ঘুচায় সমক্ষে।
বেনোজল শনির প্রকোপ, কলির গরাস, জানিস এ সত্য,
বরগা-কড়ি ঘুন-ধরা সব, ধ্বসবে সতত, ভিত যে অপোক্ত।
গলবে মাটি, পচবে লাঠি, ভেসে যাবে দেওয়ালেরই ইট,
পোক্ত হবার আগেই ঢুকে, বেনোজল খাবে রে তোর ভীত।
রইবি না তুই এই ধরা তে, রইবে না তোর সাধের খেলাঘর,
বেনোজল-বানে ধুয়ে হবি যে তুই, হবিই রে বেঘর।
ভাবিস নে তুই এ জল দিয়ে ফলবে সোনার ধান,
ভাবিস নে তুই এ জলে তোর হবে পুন্যস্নান।
(এ) বানের গ্রাসে মিটবে রে তোর তিলে তিলে গড়া এ ভূবন,
বেনোজল বাঁধরে ত্বরা, নইলে তোদের সমুহ পতন।
মূক সেজে দুষ্ট কবির সইবে নারে সে দরশন,
শুনতে ভাল লাগবে না তোর, তবুও তুই শোন।

.         ***********    কলকাতা ০২/০৩/২০১২    
.                                                                                 
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
বান ডাকে বাংলার নদী নালা জুড়ে
যেথা সেথা বেনোজল ধেয়ে ঢুকে প’ড়ে
হাত দিয়ে মস্তকে ভাবে বাংগালি
এত জল এতদিন কোথা ছুপে ছিলি !?
দুষ্ট কবি বলে আর ব’সে লেখে
শাসকের দলে সদা এই জল ঢোকে!

.         ***********    কলকাতা ০২/০৩/২০১২    
.                                                                                 
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
সেতুবন্ধের কাঠবিড়ালীরা

মরণ তখন জীবন-পথে
আগুন যেমন চিতার ভীতে।
জনগণেশ সবার জীবন
নরমেধের করছে হবন!

এমনি দিনে মুক্তি-রথের
যাত্রা শুরু রুক্ষ পথের |
আমরা ছিলাম যে যার ঘরে
দুরু দুরু বক্ষ ধ’রে |

পথের পাঁকে ডাবলো চাকা,
হেললো কেতন চূড়ায়-রাখা |
যেন, যাত্রা পথের শুরুর কালেই,
কাড়লো হাওয়া রথের পালে |

পথচারী দাঁড়িয়ে দূরে,
মুচকি হেঁসে জটলা করে |
টিপ্পনীতে অমাত্যরা,
শক্তিশেলের হলকা ছোঁড়ে |

তেমনি দিনে আমরা ক’জন
গিয়েছি সে রথের পাশে ---
তুলতে মুক্তি রথের চাকা
কাটিয়ে বাধা প্রবল ত্রাসে !

আমরা নিজেই দীন-হত-দীন !
কী বা সাধ্য মোদের অধীন !
মুক্তি-সেতুবন্ধে ছিলাম,
কাঠবিড়ালী আমরা সেদিন !

রথের কর্মযজ্ঞে ছিলাম,
মুক্তি-রথকে ছুঁয়েছিলাম,
এইটুকু সাধ পূরণ সেদিন,
তাতেই আমরা ধন্য ছিলাম !

সে রথ জখন নড়লো পাঁকে---
চক্র-নিনাদ “জয়তু” হাঁকে !
উঠলো পথের পঙ্ক ছেড়ে,
নবোত্সাহে ধাইলো জোরে !

কালের ফেরে বছর ঘুরে
এগোয় সে রথ মুকুট প’ড়ে !
দেশের দশের চোখের মণি,
তাড়ায় দেশের রাহু-শনি !

এখন আমরা দূর থেকে চা-ই
সে মুক্তি-রথের বাহারখানি |
রথের কাছে যায় না ঘেঁষা,
মোরা কাঠবিড়ালী, নই যে মানী!  

এখন যাঁরা রথের পাশে
তাঁদের সবাই ফুটছে যশে !
যেদিন ছিল আটকে পাঁকে,
ক’জন ছিলো রথের পাশে ?

দুষ্ট কবি স্পষ্ট বোঝে ---
কাঠবিড়ালী যাবেই মুছে |
লাগবে না আর কোনো কাজে,
হারিয়ে যাবে ভীড়ের মাঝে |
তবুও মানুষ থাকুক স্বাধীন  
তবুও দেশে আসুক সুদিন ||

.         ***********           কলকাতা ১৩/০৬/২০১০
  
.                                                                                 
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর