পূজো মানে
পূজো মানে পাড়ায় পাড়ায় মার্কস্ দাদার রাজ,
পুলিশ দিয়ে পেঁদিয়ে ছোটা বঙ্গ নারীর লাজ।
পূজো মানে গরীব চাষীর জমির হরির লুট,
হোক না তাঁদের পূজায় এবার আঁধার ঘুট ঘুট।
এই সেদিনের বিপ্লবীরা, বর্গা অন্ত প্রাণ,
আজকে তারাই লুটছে চাষীর, ভাত-ইজ্জত-মান।
যে বাবুরা কালকে ছিল পুঁজিপতির চাঁই,
আজ কি যাদুর বলে তারাই হলেন সবার ভাই ?
বুদ্ধবাবুর নেইতো সে দোষ, যাকে বলে চুরি,
তাঁর আড়ালে কমরেডরা করেন পকেট ভারি।
পূজো মানে মার্কসবাদের বুলি ফাঁকা ফাঁকা,
কেরলেতে ঘটা করে জমির নিলাম হাঁকা।
ধর্ম নাকি গণের আফিম, প্রচারিত ভবে।
বকলমে পূজার ধূমে, শামিল কেন তবে?
যেথা কেবল অনুসূচিত জাতির লড়ার কথা,
কোন নীতিতে মার্কসবাদীরা ভোটে দাঁড়ান সেথা?
আসল যাঁরা সমাজবাদী, দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন,
তাঁদের স্বপ্ন বিফল হচ্ছে, হতাশ নেত্রে দেখেন।
বঙ্গদেশে নানান মানের বুদ্ধিজীবির নীড়,
বিবেক ঝেড়ে কলের পুতুল হতেই তাদের ভীড়!
মাঝে মাঝেই তাঁরা করেন, মিছিল প্রতিবাদ,
বিষয়বস্তু সদাই সেথা, সাম্রাজ্যবাদ!
বঙ্গে জখন মরেন মানুষ, নিঃস্ব-অনাহার,
বুদ্ধিজীবিদের তখন দেখা মেলা ভার!
রাজ্য জুড়ে বন্যা হলেও, নেই যে ফুরসত্
বুদ্ধ ব্যস্ত শিল্প পতির লিখতে দাসখত্!
দুষ্ট কবি মিলন বলে -- তাইতো অবশেষে,
বুদ্ধ গেলেন দেখতে যখন, সবই গেছে ভেসে।
শিল্প পতির, হেলিকপটার চেপে জমি বাছা,
পূজো মানেই যা করে হোক, সিঙ্গুরে মান বাঁচা।
**********
কলকাতা
২৮শে সেপ্টেম্বর ২০০৬, মহাষষ্ঠির দিন
শুভ বিজয়া ২০০৬
মা গেলেন চলে,
নিরব ভাষায় বলে -
ভাল থাকিস,
আবার আসবো
বছর কেটে গেলে।
সত্ পথেতে চলিস,
উচিত কথা বলিস,
ত্রাতার বেশে লুঠছে যারা -
রুখতে যদি নাও পারিস -
সঙ্গ তাদের ছাড়িস।
দুষ্ট কবি মিলন বলে -
পূজোর মেলায় মায়ের কথা
একটু ভেবে দেখিস।
*******
দীপাবলী ২০০৬
জ্বেলে দীপকের মালা,
ঘোচা আঁধারের জ্বালা |
থেকে সত্যের সাথে
চলে বন্ধুর পথে |
মেনে শতেক যাতন
কাটা ভয়ের বাঁধন |
এ রাজার হস্ত
আজ বড় ব্যস্ত,
ভরিতে তাহারি ঝুরি
যার ভরা পুরোপুরি |
নিরিহের ভিটা মাটি,
জোর করে নেয় লুটি |
রাজ কাজ সবি ভুলি,
রাজা করে ভূ-দালালী |
কর সবে প্রতিরোধ
অন্যথা নাই পথ |
আজ অন্যের জমি--
কাল হতে পারে 'তুমি' |
দুষ্ট-মিলনের শলা -
মুক্তির দিয়া জ্বালা |
*******
দার্জ্জিলিং মেল, ২৪ অক্টোবর
২০০৬
আনন্দবাজারকে গণশক্তির চিঠি ২/১২/২০০৬
দাদা !
আজ বড় দুঃখে, ছল ছল চোক্ষে, আপনারে কহি এই আর্জি--- সব দিক দেখে শুনে, রাখি মোর কথা মনে, করিবেন যাহা কিছু মর্জি |
প্রাক নির্বাচন (২০০৬), আমাকেই বাম-গণ, মানিতেন অগতির গতি! এমন কি করিলে দাদা ? ভাটায় আমার চাঁদা, তব লাভ রকেটের ভাতি!
প্রতিটি পাড়ার মোড়ে, আর নাই ভীড় করে, আমাকে পড়িবার চিত্র! মোর থেকে কেড়ে জমি, রাজ-সখা হলে তুমি, মেহনতি মানুষের মিত্র ?!
লোকেরা বলে আমায়, কি লাভ পড়ে তোমায় ? ভালো আরও আনন্দবাজারে! রোজ বুদ্ধের স্তুতি, মমতার কুত্সা খাঁটি, উপরি রগ্-রগে ছবি বাহারে!
সেদিন পাড়ায় দেখি, তোমায় গছাতে একি! বলিতেছে সেলস্ এর ছোঁড়াটা --- "যে রোজ পড়ে গণশক্তি! পার্টিতে সদা ভক্তি! অবশ্য পাঠ্য, তার এই কাগজটা!"
হয়ে বুর্জুয়ার আরাধ্য, রোজ ক'রে জ্যোতির শ্রাদ্ধ! ছিলে অ-বাম জনতার মুখপাত্র! কি চুক্তি করিলে বাপ! এক ঘায়ে মরিল সাপ! লাঠিটিও হইল রাজ ছত্র!
বুদ্ধের সন্মোহনে, হামলিনের বাঁশীর টানে, পিছু নিয়াছে বাম-জোট! যার কিছু পাইবার, আছে মাল-কারবার, জলের দরে জমীর হরির লুট!
ত্রিশে নভেম্বর ঘটা, বিধানসভায় ক্ষোভে ফাটা***, বিরোধীদের দেখিয়া মানি --- বহুদিন পর দেশে, আবার বাজিল শেষে, দুর্গতের বিদ্রোহের ধ্বনি!
কিন্তু বিধি "বাম" ! লিখিতেছি উল্টা-পুরাণ! করিতেছি ধনতন্ত্রের জয়গান! আদর্শের ডিগ্ বাজি, কেম্ নে কর কারসাজি, দাদা, কোন্ মন্ত্রে কাগজে দাও টান ?!
বল দাদা বল শুনি, কেমন করে তুমি, লিখিতেছ অম্লান বদনে ?! আক্ষরিক সর্বহারা! তাদেরও হরিছে যারা! গাও তার জয়গান কেমনে ?!
বুঝি, মালিক ব্যবসাদার, ওয়ান পাইস ফাদার মাদার, ন্যায় নীতি ত্যাগি হল "উদার-মনা"! কিন্তু, ভক্ষকের পক্ষ নেওয়া! অর্ধসত্য খবর দেওয়া! সাংবাদিকদের হাতও কি কাঁপে না ?!
যাদের নিঃশ্বাসে সদা, বিপ্লবের জয় গাথা! তারা আজ বিদুষক মাত্র! টু-পাইস করার বালাই! অধিকাংশের মগজ ধোলাই! আস্তিনে গোটানো আরও অস্ত্র!
যে ক'টা সাচ্চা নেতা, হয় মৃত নয় ছাঁটা! সমাজতন্ত্রের আমিই ছিলাম পরাকাষ্ঠা! কালের কু-নজরে! আমার থেকে তোমার উপরে, বুদ্ধরাজার আজ বেশী আস্থা!
ছিলাম পার্টির বক্ষে! মেহনতি মানুষের পক্ষে! এইদেশে মার্ক্সবাদী গীতা! ভনে দুষ্ট কবি মিলন--- " নাহি পাঠ তো নাহি সম্মান!" ভাবিতেছি -- প্রবেশিব চিতা!
********************* (৩০শে নভেম্বর২০০৬ তারিখে বিধানসভায় বিরোধীরা, সিঙ্গুরে তাঁদের নেত্রিকে ঢুকতে না দেওয়া ও তাঁর উপর পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে আসবাব পত্র ভাঙচুর করেন | কবির মনে হয়েছে সেটাই বিদ্রোহের শুরু! আইন মেনে কোনো বিদ্রোহ বা বিপ্লব হয়নি |)
************************
|
সংখ্যা গুরু
" ভাল আছি, সুখে আছি "
রাজ্য বাসী সবাই বল---
একমাএ আমিই বুঝি ! তোমাদের কি চাই, না-চাই, কোনটা খারাপ,
কোনটা ভাল ---
কখন হবে মৌনি তুমি,
কখন কাদের ব্যাথায় খোঁড়া |
পথে নামবে, মিছিল করবে, কাদের হাতে কখন তুলবে ---
রক্ত রাঙা ফুলের তোড়া |
সংবিধানে বলছে বটে,
এই দেশেতে তুমি স্বাধীন |
কিন্তু বাপু, ইচ্ছে হলেই হ্যাঁচ্ কা টানে আমরা নেব ---
তোমার জমি তোমার সাকিন |
"ইচ্ছে" থাকুক নাইবা থাকুক,
সে সবে আর নাইবা গেলে ---
আমার দেশে আজকে দিনে, "ইচ্ছে" করাই---মহাপাপের,
গরীব গুরবো মানুষ হলে |
প্রার্থনা স্যার! সবার সাধের শিল্পটা কি
অল্প খানিক দূরে হবে ?
অজ্ঞ নাকি?! দুশোর উপর খুঁটির জোরে
ওইখানেতেই যা চাই, হবে |
কিন্তু স্যার, অত খুঁটি হলে পরেও
একটা জিনিষ ভাবেন নি !
রাজ্যবাসীর ঠিক অর্ধেক
আপনাকেই তো ভোট দেন নি |
দুষ্ট কবি মিলন বলে---
গণতন্ত্রই এ সব পারে!
মার্ক্সবাদের গাছের ফসল
গণতন্ত্রের ছায়ায় বাড়ে!
***************** (৪/১২/২০০৬) কলকাতা
কি চাও তুমি বুদ্ধদেব ?
কি চাও তুমি বুদ্ধদেব ?
না,
আগামী দিনের মানুষ আমার এই কবিতা পড়ে--
যেন তোমার পরিচয় গুলিয়ে না ফেলে---
সেই মানুষটার সঙ্গে,
যে রাজ-পাট-সিংহাসন ত্যাগ করে,
কৃচ্ছসাধন করে জেনেছিল---
দৈন্যের রহস্য, আর্তের রহস্য, জরার রহস্য, মৃত্যুর রহস্য |
হিংশ্র দুর্বৃত্তের মন শান্ত করে তাকে বুকে দিয়েছিল ঠাঁই |
পতীতাদের হৃদয়ে স্থান দিয়ে করেছিল সমাজের একজন |
তাই
আমি বলব
কি চাও তুমি মাননীয় মূখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ?
সিঙ্গুরে তোমার বিশৃঙ্খল বাহিনীর উচ্ছৃঙ্খল আচরণ দেখে
আমি আজ আমার ছন্দ হারিয়েছি |
দেখলাম | টিভির পর্দায় শুধু দেখলাম |
আর কি করতে পারি আমরা |
আমাদের তো শান্তিতে থাকতে হবে---
আমাদের তো দেশের সব কটা আইন মেনে চলতে হবে---
আমাদের শুধু বসে বসে দেখে যেতে হবে |
তবেই আমরা পরিচয় দেব আমাদের সংস্কৃতির !
আমাদের আর কত দেখে যেতে হবে ?
হে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ?
তর্কটা ছিল শুধু এইটুকুই,
প্রস্তাবিত গাড়ীর কারখানাটাকে আর সামান্য একটু দূরে সরিয়ে নেবার |
সিঙ্গুরের এত ভাল কৃষিজমিটাকে একটু রেয়াত করার |
কৃষক-বর্গাদের তাঁদের জীবনযাত্রা চালিয়ে যেতে দেবার |
কিন্তু তাতেই তোমার মানে লেগে গেল |
তোমার দম্ভে পড়ল কষাঘাত |
তুমি বললে---
ওই যায়গাতেই কারখানা হবে |
আমাদের আছে দুশো তেত্রিশ আর ওদের মাত্র তিরিশ |
কে আটকাবে আমাদের ?
কিন্তু মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য--
এই অনুরোধটুকু তো প্রথমে এসেছিল সেই সিঙ্গুরের গ্রামের চাযিদের থেকেই |
তাঁরা দিতে চায়নি তাঁদের পূর্বপুরুষদের জমি | এই তাঁদের অপরাধ ?
তাঁরা নাকি এ যাবত্ তোমাকেই ভোট দিয়ে এসেছেন !
কি চাও তুমি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ?
"আমাদের", "ওদের", এই কথাগুলো
কোনো রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যানদের মানায় |
তোমাকে কি মানায় ?
তুমি না এ রাজ্যের সকলের---
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য !
কি চাও তুমি
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ?
দেখলাম তোমার বিশাল বাহিনী
জোর করে কৃষদের জমি কেড়ে নিল |
দেখলাম তোমার পুলিশের লাঠির ঘায়ে
হত দরিদ্র বঙ্গবাসীর রক্তাক্ত মুখমণ্ডল |
অতি অসহায় অবলা শিশু ও বৃদ্ধদেরও রেয়াত করো নি তুমি---
তোমার বাহিনীর অশ্রাব্য গালি-গালাজ খিস্তি-খেউর, বন্দুক ও টিয়ার গ্যাসের
শেল ফাটার আওয়াজ আর ধোঁয়ায় "মুখরিত" হয়ে উঠেছিল---
সিঙ্গুরের আকাশ বাতাশ |
এ কি করলে তুমি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ?
আমরা, ভদ্রলোকরা, সেই দৃশ্য সব দেখেছি টিভির পর্দায় |
তার পরেও সল্ট লেকের জনৈকা নন্দিতা সেনগুপ্তের মনে হয়েছে--
যা হলো তার জন্য একমাত্র চাষিরাই দায়ী !
শিক্ষিতা বাঙালী নারীর চোখেও তোমার ধাঁচের শিল্পায়ণের স্বপ্নের ছানি!?
সে, অসহায়ের উপর নির্লজ্জ্ব নিপীড়ণ দেখেও দেখতে পারল না!
কি করলে বাঙালীর সহমর্মিতার ?
কি শিক্ষায় শিক্ষিত করলে বাঙালীকে ?
হে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ?
এ সবের পরেও মুখ মুছে সংবাদ মাধ্যমকে তুমি বললে--
সিঙ্গুরে কিচ্ছু হয়নি | আগে পুলিশরা আক্রান্ত হয়েছিল |
যত গন্ডোগোল বাইরের লোক করেছে |
কারা এই "বাইরের লোক" ?
এই রাজ্যেরই হাতে গোনা কয়েকজন ছাত্রছাত্রি ?
যাঁরা প্রমাণ করল যে বাঙালী ছাত্রদের মেরুদণ্ড এখনো শক্ত আছে |
অন্যান্য দলের কিছু কর্মি-- যাদের তুমি সর্বদাই ক্রিমিনাল বলে থাক !
এ দিনও বললে!
দেশ তথা বিশ্ব বরেণ্যা মেধা পাটেকর সহ আরও নেতা নেত্রি, যাদের ঢুকতেই
দাও নি?
নাকি সেই গ্রামবাসীরা নিজেই ?
নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ?
গত নির্বাচনেও দেখা গেল তাঁর দিকেই তাঁকিয়ে রাজ্যের উনপঞ্চাশ ভাগ মানুষ!
কি চাও তুমি?
হে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ?
সবই তো পেয়ে যাচ্ছ |
যেমন পৃথিবীর বুকে আরও অনেকেই পেয়ে গেছে |
আরো অনেক কিছুই পাবে |
কিন্তু এই সংস্কৃতি-মনস্ক মানুষের রাজ্যে, সংস্কৃতিবান কবিদের ভিড়ে--
আমি, অতি দুষ্ট কবি মিলন তোমার বন্দনায় শামিল হতে পারলাম না ||
***************** (৫/১২/২০০৬) কলকাতা
এই কবিতাটি ১২/১২/২০০৬ তারিখে কবি নিজে ধর্মতলার অনশন মঞ্চে
আবৃত্তি করে আসেন |
মহামান্য মন্ত্রী এবং একজন সংবাদ পাঠিকা
রবীন দেব মন্ত্রী মশায়
তারা-টিভির পর্দায়---
সিঙুর প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হয়ে
ওঠেন এমন মাত্রায়----
মুখোষ থেকে বেরিয়ে আসে
আসল তার চেহারা ---
"সিঙুর গাঁয়ের ছবি তুলে, "ওদের হয়ে" খবর বলে,
টেরটি পাবে তোমরা |"
খবর পড়েন যে বোনটি
তাঁর উপরেই ফেটে পড়া!
"তোমায় আমরা দেখছি শোনো,
রাখছি মনে আমরা---
ভোগ করবেই দু তিন মাসেই
এর নতিজা তোমরা |"
শান্ত মেয়ে অনিন্দিতা---
সাহস দেখে গর্ব হয়,
এ সব শুনেও, অসম্মানেও,
কাজ করে যান অবলীলায় |
মহা দুষ্ট কবি মিলন,
দেখে শুনে মুচকি হাসে---
সর্বহারার নেতা ভাবেন
মানুষ চলে মুখটি ঘাসে!
***************** (৬/১২/২০০৬) কলকাতা
জ্বালিয়ে দিলে না কেন ?
দু একটি অবাধ্য কাগজের পাতায় পাতায়----
আর বেয়াদপ টিভির পর্দায় পর্দায়----
সারি সারি অনাহারে শায়িত মানুষের ছবি---
দেশে কি আকাল পড়েছে ?
না,
সিঙ্গুরের মানুষ অনশন করছেন |
তাঁদেরই পাশে থেকে তোমাকেও ধর্মতলায় দেখলাম--
অনশন রত | আজ তৃতীয় দিন |
দেখলাম বার বার নির্মমভাবে তোমাকে বলপূর্বক
সিঙ্গুরে ঢুকতে না দেওয়ার ছবি |
একটি প্রশ্ন বার বার মনে জাগে---
পুলিশ যদি পুরুষ হয় তবেই মারটা মার আর
মহিলা পুলিশ চেপে ধরলে, গুঁতোলে, মারলে, মেরে হাস্পাতালে
পাঠিয়ে দিলেও মারটা বুঝি মার নয় !?
তাই তো বলে-- কথাটা "মানবাধিকার"!
মানবীর অধিকার নয়!
কি করেছ তার বিরুদ্ধে ?
গুটি কয়েক চেয়ার টেবিল ভাঙচূর---
জ্বালিয়ে দিলে না কেন ?
তার পর হল সিঙ্গুরের লুণ্ঠন | দেখলাম ঘর থেকে
টেনে হিঁচড়ে আবালবৃদ্ধবনিতাকে নৃসংশ প্রহারের ছবি |
দেশে কি বর্গিরা ফিরে এল ?
জ্বালিয়ে দিলে না কেন ?
তা তুমি কর নি |
তুমি গান্ধীর দেশে অহিংসার প্রতি দায়বদ্ধ |
তাই তুমি সিঙ্গুরের হতভাগ্য মানুষের পাশে থেকে
অনশন করছো |
কবে যেন শুনেছিলাম যে অহিংসায় নাকি অনেক জোর আছে!
কিন্তু বিদ্রোহ যার বিরুদ্ধে, সে কি নিজে অহিংসায় বিশ্বাসী ?
গরীব মানুষের হাড়ের চেয়ে
চেয়ার টেবিলের দাম যার কাছে বেশী
সে কি কখনও অহিংসায় বিশ্বাসী হতে পারে ?
না |
তুমি এই দুষ্ট কবির "জ্বালিয়ে দেবার" কূবুদ্ধির প্ররোচনায় পা দিয়ো না---
পা দিয়োনা দীর্ঘকালের ক্ষমতার দর্পে মত্ত,
কিশোর কবির প্রতিটি ছন্দের থেকে পতিত,
রাজ পরিবারের নিরস, কটু, অশালীন উক্তির ফাঁদে |
তুমি তোমার পথেই চল |
সিঙ্গুরের হতভাগ্য মানুষদের সাথে |
দেখিয়ে দাও অহিংসার আগুনের তাপ হিংসার চেয়ে কত বেশী জ্বালাময়ী |
তোমার সাথে আছে তোমার দল |
তোমার সাথে আছে সেই উনপঞ্চাশ ভাগ বঙ্গবাসী---
যারা রাজাকে ভোট দেয় নি |
তোমার সাথে আছে নিরবে আরও হাজার হাজার এমন মানুষ---
যারা তোমাকে ভোট দেয় নি |
তোমার সাথে আছেন মহাশ্বেতা দেবী, মেধা পাটেকর সহ আরও অনেক বিশ্ব বরেন্য
মানুষ |
তোমার সাথে এখন লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, গেরুয়া, সাদা অনেকেই আছে
জেনে আমি আরও খুশি | জানতে চাইও না আর কিছু |
যারা তোমার সাথে এল না, তাদের জন্য ভেবো না |
তাদের জবাবদিহি করতে হবে নিজেদের অন্তরাত্মার কাছেই!
আর
তোমার সাথে আছি---
এই, মাথা গরম করা, হঠকারী,
দুষ্ট কবি মিলন |
অন্তত এই বার তোমার সঙ্গে থাকবো |
***************** (৭/১২/২০০৬) কলকাতা
এই কবিতাটি ১২/১২/২০০৬ তারিখে কবি নিজে ধর্মতলার অনশন মঞ্চে আবৃত্তি করে
আসেন |
এখন দেশে কবিদের আকাল
সিঙ্গুরের মানুষের আজ বড় দুর্দিন |
চোখের উপরে হাতছাড়া হয়ে গেল---
পূর্বপুরুষদের জমি,
খেটে খাওয়ার, বেঁচে থাকার, একমাত্র পুঁজি |
পুলিশের মারের ক্ষত এখনও শুকায়নি |
ভাঙা হাড় এখনও জোড়া লাগে নি |
ভুখ হড়তালে বসেছেন তাঁরা |
এখনও হার মানেননি |
আজ সিঙ্গুর চলো অভিযান |
নেত্রী এখনও বসে আছেন অনশনে |
অদূরেই মার্ক্স আর এঙ্গেলস দাঁড়িয়ে |
রাষ্ট্রপতির বকলমে করা অনুরোধ সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন |
অন্যদের কথা নাইবা বললাম |
যেখানেই বিপ্লব, বিরোধ, বিদ্রোহ ঘটেছে---
মানুষ সর্বদাই পাশে পেয়েছেন সেযুগের সেরা কবিদের |
ফ্রান্সের মানুষ পেয়েছিলেন রুসো আর ভলটিয়ার কে----
রাশিয়ার মানুষ পেয়েছিলেন টলস্টয় আর গোর্কিকে---
বঙ্গভঙ্গে বাঙালী পেয়েছিলেন মুকুন্দ দাস, রবীন্দ্রনাথ কে---
পরাধীন ভারতবাসীর কপালও অনেক ভাল ছিল---
সারা দেশ পেয়েছিল একরাশ চিরস্মরণীয় কবিদের এবং নজরুলকে!
গান্ধী পেয়েছিলেন বিশ্বকবিকে---
তাঁর গানের তালে তালে এগিয়েছিল ডাণ্ডি মার্চ!
আজ সিঙ্গুর মার্চে কবিরা সব কোথায় ?
হে বাংলা মা--
তুমি কি এখন আর কবিদের প্রসব করো না?
না কি বিমূর্ত-প্রেম-ভাব-রসের আঁচড়ে
কাগজ ভরাতে অভ্যস্ত কবিরা
এই কষাঘাতে আজ স্তম্ভিত !?
হে সিঙ্গুরের মানুষ ও এই আন্দোলনের পুরোধা--
তোমরা সন্তুষ্ট থাক,
ছেনি-হাতুড়ি চালানো, কড়া-পড়া হাতে--
দুষ্ট কবি মিলনের মত কবিদের নিয়েই |
আমার কবিতায় নেই সেই তাল, সেই সুর, সেই ছন্দ |
নির্মম সব কাণ্ডের ধাক্কায়, বেরিয়ে আসছে যা---
তা যদি কবিতা নাও হয়---
তোমাদের কপালে এর চেযে ভাল আর কিছু নেই |
তোমাদের দিনকাল এখন ভীষণ খারাপ যাচ্ছে |
এখন দেশে কবিদের আকাল !
***************** (৭/১২/২০০৬) কলকাতা
সিঙ্গুরে বিরোধীরা এক হও
বিরোধী সব দলই, সিঙ্গুরের কথা বলি, আন্দোলনে হইয়াছে শামিল | কিন্তু দুঃখের কথা এই, দলে, দলে ভাব নাই, নিজেদেরই মধ্যে নাই মিল ||
এমতবস্থায়, যুদ্ধ কভু কি যেতা যায়? প্রশ্নটা মনে এই ক্ষণে | সময় থাকিতে তাই, একটা কিছু কর ভাই, যাতে, 'বল' ফেরে মানুষের মনে ||
আজ, যে বেটাই দেশেতে হিন্দু, সে ই শুভ্রে শ্যাম বিন্দু, ভারতের অনিষ্টের মূল যত! এবং, মুসলমান দেখিলেই ভাবে, লাদেনের কুটুম্ব সবে, দূরে ঠেলে দাও সাধ্যমত!!
রাজনীতির দাবা খেলার, ফায়দা লুটিছে যাহার, ইচ্ছা মত করিছে বিভাজন | তাঁদের পাতা ফাঁদ এড়াইয়া, হাত মেলাও আগ বাড়াইয়া, ব্যর্থকর কর কূচক্রিদের স্বপন ||
এই খেলার সুযোগে দেখি, বামেদের রাজত্ব একি, বিরাজে অনন্ত কাল ধরি | বিরোধী শিবিরে দ্বিধা, সুযোগ নিয়া যে সিধা, সিঙ্গুরে বর্গিরা এল ফিরি ||
দেশের আইন বলে, কোন ভাবেই বিভেদ করিলে, কারাগারের শাস্তি বিধান কষি | রাজনৈতিক চক্রের বলে, সব কিছুই শাসক দলের, অন্যরা অঙ্গুষ্ঠ চোষে বসি ||
যদি, চোদ্দ বছর আগের কর্মের, দোহাই দিয়ে রাজ্যে, ধর্মের, এখনও বিজেপিরা ব্রাত্য | তবে, চুড়াশির দাঙ্গার আগুনে, শিখদের নৃশংস নিধনে, কংগ্রেসীরা দোষী, তাও সত্য !!
যদি, হিন্দু মুসলিম নিধন করিলে, মন্দির মসজিদ দেদার ভাঙিলে, রাজনীতির ছুত্ মার্গ 'ঠিক' হয় | তবে, শিখ ভাইদের কোতোল করিলে, স্বর্ণ মন্দির নাপাক ছাড়িলে, একই রকম শাস্তি কেন 'ঠিক' নয় ||
তাই বলি কংগ্রেসীদের, এসব কথা রেখে অতীতের, রাজ দণ্ড দখলে দাও মন | যদি বিরোধী থাকিয়াই তৃপ্ত, কু-শাসনেও নির্লিপ্ত, তবে, সব ছাড়ি কর বন-গমন ||
হিন্দু-মুসলমান উভয় দিকে, একটু যারা পড়ে লিখে, এবং মগজ ধোলাই হয় নি যার সদ্য | বিভেদ কায়েম রাখা, ভোটের বাক্সে ফল দেখা, হাড়ে হাড়ে বোঝে এই সত্য ||
রাজনৈতিক প্রয়োজনে, শত্রুরাও মিত্র বনে, যেমন আজ তোমরা আর সিপিএম | যা ইচ্ছে কেন্দ্রে কর, রাজ্যে ওদের সঙ্গ ছাড়, বিরোধী-জোট-শাসন কর কায়েম ||
এখন ধ্রুব সত্য এটা, প্রমান হল এবারও যেটা, একেলা কেহ পারিবেনা জীতিতে | ব্যেক্তি স্বার্থ, লেংগি মারা, একে অপরের কুত্সা করা, যত নীচ কর্ম ত্যাগো নদীতে ||
সিঙ্গুরের ভিতর দিয়া, নিজের পরীক্ষা নিয়া, প্রমাণ কর তোমরা সবার পাশে | বিজেপি ও কংগ্রেসে, এই দিনে ভেদ কিসে! স্কোর তো একই , দাঙ্গার ইতিহাসে!!
কিছু কি লাভ হয়? সিঙ্গুরই যদি নাহি রয়? দখলিছে অতি দ্রুতগতি | পুছে দুষ্ট কবি মিলন, হাতে হাত, প্রাণ পণ, ইহা ছাড়া তোমাদের কি গতি ||
***************** (৮/১২/২০০৬) কলকাতা,
|
দুটো ভাত মুখে দিয়ে নাও
আজ পঞ্চম দিন |
এক দিনে চব্বিশ ঘন্টা |
এক শো কুড়ি ঘন্টারও বেশী |
এক দিন দুপুরে খেতে দেরী হলেই
শরীরে আসে এক অনুভূতি |
অতি পরিচিত |
খিদে !
খিদের জ্বালা !
এক মুঠো ভাতের জন্য মন-প্রাণ-শরীর
আকুতি জানাতে থাকে |
সব কাজ ফেলে খুঁজি ভাত |
যে কোনো মূল্যেই তা যোগাড় করে মুখে দেই |
প্রাণটা জুড়িয়ে যায় |
বেঁচে যাই |
বেঁচে থাকি |
আর আজ পাঁচ দিন হয়ে গেল |
তুমি এক দানা অন্ন মুখে দাও নি |
তোমার অন্তরে যে বেদনা অনুভব করছ
তা আমি কল্পনাও করতে পারছি না |
আমি যে পেট ভরে খেয়েছি!
তুমি কেন এত দিন না খেয়ে আছ ?
কি চাও তুমি ?
কি করে বলি যে
তুমি আরো ধন-দৌলত চাইছ | হিরে-জহরত চাইছ | মান-ইজ্জত চাইছ |
বাড়ী-গাড়ী চাইছ |
কেউ বিশ্বাস করবে না |
তোমার প্রতিপক্ষও না |
তুমি এতদিন না খেয়ে আছ---
শুধু সিঙ্গুরের মানুষের জন্য |
তোমার নিজের জন্য নয় |
আজ মূখ্যমন্ত্রি চিঠি দিয়ে তোমাকে অফিশিয়ালি অনুরোধ করেছিলেন
অনশন শেষ করতে |
তুমি বিনয় সহকারে তা প্রত্যাখ্যান করেছ |
তোমার শর্তে ছিল না বলে |
আজ বড় স্বার্থপর লাগছে নিজেদের |
নিজের হাতে করে তোমার
মুখে ভাত তুলে দিতে ইচ্ছে করছে |
পরক্ষণেই স্বার্থের ব্যারিকেড সেই হাত আটকে দিচ্ছে |
তুমি যদি ভাত খেয়ে ফেল,
অনশন শেষ হয়ে যাবে |
তারপর
যদি এই আন্দোলনের দুর্বার প্লাবন, বিধি বামের চোরাবালিতে ---
হারিয়ে যায় |
যদি সিঙ্গুর শেষ হয়ে যায় |
যদি সেই মানুষগুলো, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তাদের জমি থেকে |
যদি তারা হারিয়ে যায় চিরতরের জন্য, এই হঠকারি শিল্পায়নের থাবায়,
হাজার হাজার উচ্ছেদ হওয়া মানুষের মিছিলে |
তাহলে আমাদের কি হবে ?
আর যদি এভাবে না খেয়ে থাকো--
তোমার যদি কিছু হয়ে যায় ?
সেটা ভেবে আরো আতঙ্কিত হই |
তাহলেও আমাদের কি হবে ?
ঠিক সেই জন্যেই, আমাদের নিজেদের স্বার্থের জন্যই---
নির্লজ্জের মত আমি কবি মিলন তোমাকে বলছি
দিদি
দুটো ভাত মুখে দিয়ে নাও ||
***************** (৮/১২/২০০৬) কলকাতা,
সিঙ্গুরে ঢুকতে দেব না
ঢুকতে দেব না সিঙ্গুরে
কাউকে ঢুকতে দেব না ভাই!
যা নেবার আমরা নিয়েছি
আর দেখার কিছুই নাই!
গুটি কয়েক রিয়্যাকশানারি,
ঘুরছে গ্রামে বাড়ী বাড়ী
গুঁজে জামায় কালো কাপড়,
তাও এমন হতচ্ছিরি!
অনেকের তো এমন দশা
কালো কাপড় কোথায় পায়?
কালো প্লাস্টিক কেটেই তাঁরা
ঝোলায় বাড়ীর গায়ে গায়ে!
খেতে পায় না চাষাভূষা
পড়ার নেই বেশভূষা,
সাহস তাঁদের সর্বনেশে
বলে ফোকলা দাঁতে হেসে---
চাইনা টাটার মোটর গাড়ী
রাজার সাথে মোদের আড়ি!
আচ্ছা বলো, এসব মানায়?
যার, নূন আনতে পান্তা ফুরায়?!
জমির তাদের কিসের টান?
কানে যায় না আমার গান ?!
বেচো চাষের জমি যত--
পয়সা দেব প্রমাণ মত!
রাখবে ব্যাঙ্কে জমাপুঁজি--
পায়ের উপর পা তুলে সব
করবে সুখে পার্টিবাজি!
এ ছাড়াও আছে অনেক
আরও হরেক রকম পাওয়া!---
পড়বে ফ্রী তে মাথায় টুপি!
মিটিং-মিছিল-খাইবে হাওয়া!
সার বেঁধে সব গাড়বে খুঁটি
চাষের থেকে তোমার ছুটি!
এত্তো কিছু বলার পরেও
যখন ওরা শুনলো না---
বাধ্য হয়েই করছি দখল
বিরোধ-টিরোধ মানছি না!
কি বললে? আবার বল--
বর্গাদার আর কৃষক ওরাই!
কিন্তু শোনো আবার বলি---
সর্বহারার নেতা মোরাই!
কৃষক-বর্গা-চাষা-মুটে
সব কালেতেই সর্বহারা!
দু হাত জমি দিয়ে দিলে
আরও কি তার ক্ষতি করা?!
আগেও ছিল আধ-পেটা
মোদের রাজেও বলির পাঁঠা!
বাত্তেলা সব রাখো দাদা--
আসল কথা পার্টির চাঁদা!
এরই মাঝে অবাধ্য সব
ক্যামেরা হাতে ঢুকতে চায়!
তারা বাংলা, ই-টিভি,
তাজা-চ্যানেল, কলকাতা-য়!
কত বলি তোমরা সবাই
হাত তালি দে ধন্য হও!
তা না করে মোদের মুখোশ
কেন টেনে খুলতে চাও?
আট তারিখে শ্যাওড়াফুলি
পুলিশ ঝেড়ে তাদের ঝুলি
একটু শুধু চমকে দিল!
বলার, বলছি, হয়নি ভাল!
পুলিশোতো মানুষ , নাকি?
তার উপরে তিরিশ বছর,
রসে বশে সঙ্গে রাখি!
আদ্যোপান্ত রক্ত রাঙা!
তোমরা দেখ বাইরে খাকি!
এ তো কেবল ট্রেলার ছিল
যদি, আবার শুনি "সিঙ্গুর চল" --
দেখবে আরও কি কি আছে--
এই, শুভ্র হাতার ভাজে ভাজে!
দুষ্ট কবি মিলন ভাবে
এ কাব্যে কি ছন্দ হবে?!
***************** (৯/১২/২০০৬) কলকাতা,
কবিদের আকালের দিন শেষ
সিঙ্গুরের মানুষ!
আজ তোমাদের শুভদিন |
আজ তোমাদের একটি অতি মূল্যবান প্রাপ্তি হল!
দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তাঁর কবিতায়
তোমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন
কবি জয় গোস্বামী |
কবিদের আকালের দিন শেষ!
তোমাদের পাশে আছে সবাই |
যে যায়গাটা খালি ছিল তা আজ পূরণ হল |
তোমরা নির্দ্বিধায় তোমাদের লড়াই চালিয়ে যাও |
হে কবি জয় গোস্বামী
তোমাকে জানাই
দুষ্ট কবি মিলনের --
সশ্রদ্ধ অভিনন্দন ||
***************** (৯/১২/২০০৬) কলকাতা,
গড়ের মাঠ নয় কেন?
গড়টা বাদ দিলেও, এক জায়গায় অতটা খোলা জমি!
কোনো চাষাবাদও হয় না সেখানে!
তাই জমিটা এক ফসলাও না!
জমিটা নিচুও নয়!
রাস্তা ঘাট খাসা!
ঢিল ছুড়লেই বন্দর!
পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পতিত পাবন গঙ্গে!
পাপ হরণের সাথে কারখানার জলও পাওয়া যাবে অফুরন্ত!
কাউকে মেরে ধরে জমি কেড়ে নেবার দরকার পড়বে না!
সেখানে কেউ থাকে না!
বিদেশ থেকে কেউ দেখতে এলে--
বিমান বন্দরের আরও কাছে পড়বে!
কারখানার এক পাশে ভিক্টোরিয়া!
আর এক পাশে শহীদ মিনার!
শিল্পের সাথে পর্যটনের মেল-বন্ধন!
আরও লোক টানবে!
আর এক পাশে পার্ক স্ট্রীট!
হাঁটা পথ!
সব চেয়ে অভিজাত আমোদ-প্রমোদের গন্তব্যস্থল!
কোনো শিল্প পতি যদি ঐ যায়গাটাকে পছন্দ করে ফেলেন!
জমির মালিক সেনা বাহিনী রাজি হলেও
সরকার দিতে রাজি হবেন তো?
বার বার শুনছি যে
যে টাকা দেবে তাঁকে তাঁর পছন্দের জমিই দিতে হবে!
দুষ্ট কবির ধৃষ্ট জিজ্ঞাসা---
গড়ের মাঠ নয় কেন?
***************** (১০/১২/২০০৬) কলকাতা,
কেমন স্বাধীন দেশ?
আমি কেমন স্বাধীন দেশে?
যেথা শাসক মিষ্টি হেসে
যদি বলেন -- ওহে উপেন
জমি নিচ্ছি কিন্তু শেষে!
বাপ-দাদাদের মাটি
সেই পূব-পুরুষের ভিটা
যদি বলি দেব না আমি---
তবু ছিনিয়ে নেবে সেটা ?
তবে গণতন্ত্র কেন?
কেন স্বৈরতন্ত্র নয়?---
'সেথা রাজার কথাই শেষ'---
সেটা জেনেই মানুষ রয় |
ভালো, কে না চায় ?
উন্নয়ণই স্বপন |
তাহলে, দীনেরে বসিয়ে পথে
কেন চাও উত্তরণ?
আমীর ওমরা বড়,
তাঁরা চাইবেই আরো আরো |
সর্বহারার মিত্রও কেন
সেথা, বলতে পারো?
আমলা-এগজিকিউটিভ,
নব-যুগের প্রতিভূ যারা |
ছাপোষা প্রজার করের টাকায়---
দেশের কলেজে পড়া!
তাঁরাও কেন স্তব্ ধ ?
নয় তরফদারী করছে!
কাজের গাজর দেখিয়ে
কেন মিথ্যা ভাষণ বলছে?
ভোগবাদের বিশ্বায়ণে
বুঝি, কেরিয়ারটাই প্রধাণ!
তা বলে, এক ফোঁটাও কি থাকবে না--
মনে কৃতজ্ঞতার স্থান?
এত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে
কি লাভ হয়েছে বল?
আর্তের পাশে আজ তাঁরা নেই
লুঠেরাকে বলে ভাল!?
এ জন্যে কি হাসতে হাসতে
শহীদেরা দিল প্রাণ?
এই স্বাধীনতা চেয়েছিল তারা?
এই তার প্রতিদান?
এদের কথাই সবাই শুনছে--
মিডিয়া যাদের হাতে |
দুষ্ট কবি মিলনের কথা
ছড়াও হাতে হাতে ||
***************** (১০/১২/২০০৬) কলকাতা,
মানবাধিকার দিবস?
মানবাধিকার দিবস এল!
রাজার কি এল গেল!
ক'দিন আগেই তাঁর আদেশে,
তাঁরই পুলিশ, বর্গি-বেশে--
দখল নিল সিঙুর গ্রামের,
নির্বিচারে পিটলো তাদের |
টিভির স্ক্রীনে তরাস ও ভয়!
রাজার অমত করলে কি হয়!
দেশ জুড়ে ঝড় প্রতিবাদের!
তাতে কি যায় মহারাজের!
অনশনে গ্রামের মানুষ,
সঙ্গে 'দিদি', দেশের মানুষ |
রাজনৈতিক বর্ণালিতে--
বামে-ডানে সম্মিলিতে!
ধিক্কারিছে মুষ্টিবদ্ধ
নিপাত যাও বিমান বুদ্ধ!
শুনছে কে তা? বধির শাসক!
পুঁজির আলোয়, অন্ধ দু-চোখ!
এবার প্যাঁদাও তাদের ধরি!
হঠাও প্রেসের খবরদারী!
শ্যাওড়াফুলির পথের ধার!
রিপোর্টারদের ছকে প্রহার!
আঘাত যেন, সবার উপর!
গণতন্ত্রের দুগালে চড়!
অনুশোচনা! মানবিকতা!
এসব কেবল ফালতু কথা!
'ওদের' জন্য গণতন্ত্র!
'আমাদের' ভাই শাসন যন্ত্র!
সংস্কৃতিতে 'মুখোশ' সাজে!
স্ট্যালিন থাকে বুকের মাঝে!
মানবাধিকার! এই দিবসে!
এদের কিছু যায় আসে?!
দুষ্ট কবি মিলন বলে
দেখাও সবার মুখোশ খুলে |
***************** (১০/১২/২০০৬)
কলকাতা,
হে বঙ্গবাসী! তোমরা কোথায়?
যখনই, দেখি ইতিহাসে, শত্রু এসে নানান বেশে, ছুঁয়েছে আঁচল বঙ্গমাতার! কাণ্ডারিরা চিরদিন, শোধি মাতৃদুগ্ধ ঋণ, নিভাইয়াছে ভূমিকা ত্রাতার |
দেবতুল্য নেতাদের ডাকে, সর্বদাই পাশে থাকে, তোমাদেরই বাপ-দাদাগণে | নিজেরা একাত্ম হইয়া, যখনি গিয়াছে ধাইয়া, গেছে শত্রু, ভঙ্গ দিয়া রণে |
স্বরণে আনি তোমার, সে সব ঘটনার, বুঝি, আজ তব মনে নাই ! কহে দুষ্ট কবি মিলন, দেখিয়া মায়ের যাতন, ইহা ছাড়া তার আর কাজ নাই!
বঙ্গভঙ্গ বিরোধ দ্রোহে, মহাত্মার সত্যাগ্রহে, ছিলে 'ভারত ছাড়ো' ডাকের সময় যতি! সুভাষের আহ্বানে সাড়া, আজাদ হিন্দ ফৌজের যাঁরা, সমুখ-সমরে হয় ব্রতী |
শুধু একবার করেছ ত্রুটি, আজও দিচ্ছো খেসারতী, শুভবুদ্ধি হারাইয়াছিলে যখন! ধর্মের ধূম্রে চোক্ষু বাঁধি, হিতাহিত জ্ঞান ত্যাগী, দেশ ভাগ হইল তখন |
ইহার পরেও অনেক যুদ্ধে, শুভ ও সত্যের আরাধ্যে, গর্বিত হইয়াছেন মাতা | কৃষকের দুর্দশার পাশে, অথবা মজদুরের আশে, তখন যেসব ছিলেন নেতা ---
সদা তাঁদের পাশে থাকিয়া, আন্দোলনকে মুখর করিয়া, প্রতিষ্ঠা করিলে নবযুগের | বঙ্গবাসী আজ যা ভাবে, কাল ভারতবর্ষ ভাবে, সত্য এই বচন বহু আগের |
বাংলার আকাশে এল, আবার ঘনিয়ে কালো, দুর্যোগের ঘন বরষা! ভয়ে প্রজা সদা ভীত! অধিকার অস্তমিত! এখন, প্রাণ রক্ষা করাই দুরাশা!
গরীবের চর্মে মোড়া! রক্তের মসিতে ভরা! শিল্পের নকসা রচনা! বুঝাইয়া দাও তাদের, কালের পরিহাসে যাদের, চোক্ষে আজ রঙিন চশমা!
এই দশার অবসানে, সিঙ্গুর প্রতীক জ্ঞানে, বিরোধীরা একজোট আজি | হে বঙ্গবাসী সবে, আজও কি নিরব রবে? দাঁড়াও পাশে রণসাজে সাজি ||
***************** (১১/১২/২০০৬) কলকাতা,
|
রতন টাটাকে
হে টাটা কুলপতি
এই শস্য শ্যামলা বঙ্গভূমির সাথে
তোমাদের আত্মীয়তা ঐতিহাসিক!
তোমার পূর্বপুরুষ জামশেদজী,
এই মাটির ছেলে বিবেকানন্দের বাণীতে প্রভাবিত হয়ে---
ভারতবর্ষে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভারতীয় শিল্প |
তোমারই পূর্বপুরুষের তৈরী ইষ্পাত ছিল হিটলার নিধনের অস্ত্রে!
তোমার প্রতিটি পণ্যে আছে দেশের মানুষের ভরষা!
তোমার তৈরী গাড়ী সগর্বে চালিয়ে যায় দেশের মানুষ!
বাংলার মানুষ |
এই বাংলার মানুষ---
তোমার নাম এখনো সসম্মানে উচ্চারণ করেন |
"টাটা নিপাত যাক"
ধ্বনি দিতে বাংলা তথা দেশের মানুষের গলা আজও কেঁপে ওঠে!
ভয়ে নয়! শ্রদ্ধায়!
তাঁরা দেখেছেন তোমার পূর্বপুরুষদের---
যাঁরা মানবিকতার সাথে পরিচালনা করেছেন শিল্পের |
"টাটা হৃদয়হীন"
এখনো বাংলার মানুষ বলেন নি |
কিন্তু আজ!
এই যুগের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে,
এ কি দেখছি, হে টাটা কুলপতি!?
তোমার দুচোখ আজ কোন মায়ার আবেশে আচ্ছন্ন!?
কিছু ক্ষমতা-মদমত্ত, আদর্শচ্যুত মানুষের
প্ররোচনায় তুমি পা দিও না |
এই সুজলা সুফলা বাংলার---
"সবুজ-হরণকারী" দুর্নামের ভাগিদার কেন হতে চাইছ?
শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কথা শুনে
নিজের বিবেকের বিচারে
এই রাজ্যেই গড়ে তোলো তোমার শিল্প |
একটু সরে!
আর অল্প একটু দুরে!
যেখানে শোনা যায় না লাঙ্গল চালানো কৃষকের পরিচিত হুর-র-র-হৈ ডাক!
সেখানে তুমি শুনবে না
অসহায় চাষিদের সব হারানোর হাহাকার !
ক্ষমতার দম্ভে উন্মাদ শাসকের নিপিড়ণে
অসহায় বর্গাদের আর্তনাদ!
সেখানে দেখবে---
এই বাংলার মানুষের চোখে আত্মীয়তার আহ্বান!
বাংলায় কৃষকের গোলা পূর্ণ হলে
তুমি পাবে বাংলার নবান্নে সাদর নিমন্ত্রণ !
এটাই তো তোমার শেষ শিল্প নয় |
এটাই তো পৃথিবীর বুকে তোমার শেষ কীর্তি নয়!
যতদিন চন্দ্র সূর্য থাকবে---
ভারতবর্ষ থাকবে---
থাকবো এই বাংলার মানুষ---
আর
তোমার নামকে সার্থক করে
বাংলার নয়নের মণি হয়ে থাকবে তুমি ||
***************** (১২/১২/২০০৬) কলকাতা,