The Nation is on the move!
সিঙ্গুরের আন্দোলনকারীদের
অনশনের বারো দিন হল---
তাঁদের সবার জন্য সবার উত্কন্ঠা!
একেবারে উথলে উঠছে!
তাই অনুরোধ এসেই চলেছে
অনশন তুলে নেবার--
সাক্ষাতে! গণমাধ্যমে! পত্রে!
কিন্তু কেন এই অনশন?!
সে বিষয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই!
কোনো আশ্বাস নেই তাঁদের দাবীদেওয়া নিয়ে!
যাঁরা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারলো না---
তাঁদের কি বাঁচার অধিকারটুকুও থাকবে না ?!
তাঁদের কথা কি কেউ শুনবে না?!
এটাই কি এখন গণতন্ত্রের নতুন মানে ?!
শুধু অনশন ত্যাগ কর! ব্যাস!
কেন?
বা রে!
মেট্রোয় সিনেমা দেখতে এসেও কি সিঙ্গুর দেখতে ভাল লাগে?!
আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে হবে না?!
আমাদের "উন্নয়ণের" পথে এগিয়ে যেতে হবে না?!
দুষ্ট কবি মিলনের মনে পড়ে যায় সেই এমারজেনসির স্লোগান---
The nation is on the move!
**********১৪/১২/২০০৬,কলকাতা
সিঙ্গুর সিঙ্গুর
সিঙ্গুর সিঙ্গুর, সব্বাই বলছে!
লাগাতার মানুষের, বিক্ষোভ চলছে!
সরকার জোরজার, সব কুছ কাড়ছে!
বর্গির কায়দায়, ধানক্ষেত ঘিরছে!
এক লাখ টংকার, গন্ত্রী গড়বে!
মধ্য-বিত্ত, সেই যান চড়বে!
যার ক্ষেত যার মাঠ, সে ই পথ-বসবে!
এই দেশ শিল্পে, এক ধাপ চড়বে!
হলধর বর্গা, সব্বাই হাঁক্ রে!
রোখ রোখ এই লুঠ, এক্ষণ রোখ রে!
আমরণ অনশন, হরতাল ধরনা!
অসহায় মান্ সের, হাহাকার কান্না!
সব-হারা দরদী, শুনতেও চান না!
শিল্পের ধোঁয়াশায়, দেখতেও পান না!
দুষ্ট কবিবর মিলনের মূল সুর!
সিঙ্গুর সিঙ্গুর সিঙ্গুর সিঙ্গুর!
**********১৪/১২/২০০৬,কলকাতা
বাঙালী বুদ্ধিজীবি
হে মহা জ্ঞানী বঙ্গবাসী!
ক্ষুদ্র-সুখ মায়ায় বসি বসি,
বন্ধ করে মনের যত দুয়ার
রুখবে কিসে "সিঙ্গুর" নামি জোয়ার?
আজও যদি চুপটি করে বসে,
একটু কিছু হারাবার ভয়ে-ত্রাসে
না পায় পাশে আজ সর্বহারা!
তবে কিসে তোমার এত গর্ব করা?!
এত মিছিল, নাটক-যাত্রা, সুস্থ-চিন্তা!
তেভাগার গান, ঝাণ্ডা, স্লোগান-নামতা!
বহু দূর দেশে ন্যায়-লঙ্ঘন তরে--
কণ্ঠে তব বিরোধ ঝরে পড়ে!
অন্য কোথা কোন্ দূর জনপদে--
আর্তের লাগি মন সদা তব কাঁদে?!
এদিকে পাশেই কাঁদে লাঞ্ছিত যারা,
অনাহারে মৃত, মরে যারা গৃহ হারা!
তাঁদের দুঃখে দেখি সদা চুপ থাক!
শেখানো বুলি পথে পথে ঘুরে হাঁকো!
কোক-পেপসিতে ভিজিয়ে গলা খানি,
দাও "সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাও" ধ্বনি!
রাজার নেক-নজরে সদা রহি,
বিবেকেরে কর কেমনে জবাবদিহি?!
শাসকের "মত" এ শুধু মাথা নেড়ে নেড়ে,
শিরদাঁড়াখানি বুঝি আজ বেঁকে পড়ে!
দুষ্ট কবি মিলন বলে ভাবি
এ কি হলে, ভাই বাঙালী বুদ্ধিজীবি?!
এ যাবত্ যাহা করেছ তাহা ভুলি
ঝেড়ে ফেলে যত মলিনতা-ধুলা-বালি,
বুদ্ধির কর সুপ্রয়োগ, হে জ্ঞানি---
সিঙ্গুরের পথে চলহে সবারে টানি |
**********১৬/১২/২০০৬,কলকাতা
হে বাংলার বেবাক মানুষ!
দেখে সিঙুর-গ্রামবাসীর সাহস
গর্বিত আজ দেশের মানুষ!
অবাক সারা ভারতবর্ষ!
চন্দ্র-সূর্য, অবাক বিশ্ব!
গাঁয়ের মানুষ, রবীন্দ্রনাথ-
মাস্টার মশাইর, দিয়ে হাতে হাত--
যেভাবে সামনা, রাজার বাহিনী!
আগামীতে লেখা হবে সে কাহিনী |
কিন্তু, কারা লিখবে সে গাথা?!
তারা তো অনেকে বিকিয়েছে মাথা!
রাজার প্রিয় পাত্র সেজে--
কৃপার ক্ষুদ্র খণ্ডে মজে!
দিন রাত ভজে রাজ-জয়গাথা!
রাজ-ধন ভোগে সদা পাত পাতা!
লেখক শিল্পী নাট্যকর্মি--
একদা যারা গরীব-মরমী!
মেলায়, মঞ্চে, দেখি রাজ-পথে
হাত তালি দিতে শুধু রাজ-মতে!
শিল্পী তো শুধু শিল্পীই হবে!
নির্যাতিতের পক্ষে গাইবে!
"গণতান্ত্রিক শিল্পী" কি ধন?!
বোঝে না এ কবি দুষ্ট মিলন!
কবির কি কভু ডান-বাম হয়?!
সদা মানুষের গানই সে গায়!
দেশটা স্বাধীন শুধু নামে ভাই!
বিরূপ মতের নাই কোন ঠাঁই!
সিঙুরের গান গাইতে নারাজী,
ধামা-ধরা গলা, শুকিয়েছে আজি!
তবু কালো মেঘে রূপোলী এ রেখা!
আস্তে আস্তে ঘুরছে যে চাকা!
বিবেকের খোঁচে জাগছে ক'জন
হচ্ছে রাজার বিরাগ-ভাজন!
বাংলার যত বেবাক মানুষ!
এখনো যদি নাহি জাগে হুঁশ,
ভাবীকাল সবে ফেলে দেবে ছুঁড়ে---
কালের গভীর আঁস্তাকুড়ে ||
**********১৮/১২/২০০৬,কলকাতা
টাটা, তোমার স্বপ্নের গাড়ীর চাকায় রক্তের ছোপ!
রতন টাটা!
তুমি চুপটি করে মজা দেখছ!
যা হোক করে জমিটা পেলেই হল!
তোমার চোখে আজ বিরাট স্বপ্ন!
হেনরী ফোর্ডের পাশে নিজের নাম লিখে রেখে যেতে চাও!
তারও ছিল মধ্যবিত্তের গাড়ী!
শিকাগো শহরের শাসকদের হাত করেছিল সে---
গুলি চালিয়েছিল তারই কারখানার কর্মিদের উপর!
দিনটি ছিল পয়লা মে!
এখানে তুমি হাত করেছ---
এমন এক শাসক দলকে--
যারা সেই মে দিবসের নামেই
দিব্যি দেয়! কবিতা লেখে! গান গায়! নাটক করে!
গা গরম করা বক্তৃতা দেয়!
রক্ত ঝরানো আন্দোলন করে!
ভোট চায়!
তোমার এই মহা "শষ্য-মেধ" যজ্ঞে এর মধ্যেই---
'তাপসী'কে নিয়ে সিঙ্গুরের দুজনকে বলি হতে হল!
এবার নতুন মে দিবসে
তোমার স্বপ্নের গাড়ী
এই বাংলার মধ্যবিত্ত চড়ে বেড়াবে!
এই দুষ্ট কবি মিলন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে---
সেই গাড়ীর চাকায় লালের ছোপ!
শাসকের পতাকার লাল নয়,
শিঙ্গুরের মানুষের রক্ত ||
**********১৯/১২/২০০৬,কলকাতা
গতকাল সিঙ্গুরে টাটার জন্য অধিকৃত জমিতে রহস্যজনকভাবে
তাপসী মালিক নামে এক তরুণীকে নৃসংশভাবে জীবন্ত জ্বালিয়ে
দেওয়া হয়!
এই কবিতাটি ২৫/১২/২০০৬ তারিখে কবি নিজে ধর্মতলার অনশন
মঞ্চে আবৃত্তি করে আসেন |
বাংলা বন্ ধ সফল কর
সিঙ্গুর আন্দোলনে, এবং তাপসীর অকাল প্রয়াণে মমতার দু-দিনের বন্ধ! মিডিয়ার কলরবে, শাসকের গেল রবে, মানুষের মনে ঢোকে ধন্ধ!
ভাবে, জীবন হবে স্তব্ ধ, নিত্যচারী রবে জব্ দ, নিজ গৃহে আটক দুই দিন | কোথা কোন দূর গাঁয়ে, কার জান কেবা খায়, মোদের এই শাস্তির কি প্রয়োজন ?!
টাটার কারখানা হবে, ঘরের ছেলে চাকরি পাবে, এ ধানেও বিরোধীরা মই দেয় ?! কি লজ্জার কথা অতি, যে রাজ্যের নাই কোনো গতি, বিরোধী সেথাও এ ঘোল খায় ?!
ক'রে এ তত্বের অনুধাবন, কহে দুষ্ট কবি মিলন, সত্য বটে হবে দুর্ভোগ | "বাংলা বন্ ধ" প্রহসন, যা শাসকদেরই উদ্ভাবন! একদা ছিল অস্ত্র অমোঘ! অযথা এর অপ প্রয়োগে, অসত রাজনীতির যোগে, এই মহাস্ত্র আজ হয়েছে ভোথা | যখন মাত্রা ছাড়া অত্যাচার, শুধু দলের নামে বাছ-বিচার! তখন মানুষ যাবে আর কোথা?! তারা কি নেবে অস্ত্র তুলি? অহিংসার মন্ত্র ভুলি? আইন তুলে নেবে নিজ হাতে ?! জানাতে দুঃখের কথা, কাটবে কি আজ অন্যের মাথা ? শুধু রাজার বোধোদয় হয় যাতে ?!
তাহলে সুধীজন, ভেবে দেখ এই ক্ষন, লুণ্ঠিতদের আর কি গতি ?! তারা আজ এই জেহাদে, নাই আতঙ্কবাদের ফাঁদে, অহিংস বন্ ধে দিয়ে মতি!
শোন বাংলার মানুষ, হবে না সিঙ্গুরে শেষ, সুফলা জমি কাড়ার এই কাহিনী! যেথাই বিরোধীর বাস, নীল-নক্সায় এই প্রয়াস, একই কায়দায় লুঠবে রাজ-বাহিনী | একটু চোখ খুলেই দেখবে, যেখানেই রাজা জমি ছিনবে, বেশিরভাগই এম-এল-এ বিরোধী! তার মানে হল এই, যার, রাজার মতে মত নেই, সে ধন প্রাণ খুয়ে হবে অপরাধী | তাঁর জমিই শিল্পের জন্য, সবার চেয়ে হবে গণ্য!? না দিলেই হবে সেথা একশান! শিল্পপতিরা বলিহারি! খোলা বাজারের ঝাণ্ডা ধারী! শুধু, জমির বেলাতেই সেটা ভুলে যান!
হে সুধীজন - বলি আবার, যদি ভাব অন্যের ব্যাপার, এই বন্ধে নাই কোনো লাভ তোমার! তবে মহা ভুল করবে, পরে এর মাশুল গুনবে, যখন কু-নজরে পড়বে ঘর তোমার!
কি চাও তুমি ঠিক কর, স্বাধীনতা না শান্তি বড়, ব্রিটিশ আমল কিসের খারাপ ছিল?! অধীনে থেকে চুপটি যে জন, ব্যস্ত নিয়ে নিজের জীবন, তারা তো পরস্কৃতও হয়েছিল!
পরাধীনতার গ্লানি, বিবেকের কষা হানি, যাঁদের যুদ্ধে করেছিল উদ্বুদ্ধ | তাঁদের ত্যাগের ফলে, দেশ-মাতা স্বাধীন হলে, আপামর জনগণ হল ঋদ্ধ!
তাই শোন বঙ্গবাসী, আবার স্বাধীনতার বাঁশী, কষ্ট করেও "বন্ ধ" কর সমর্থন | বহুদিন পর রণ-ক্ষেত্রে, সব বিরোধী এক ছত্রে, সিঙ্গুর পাশে আজ তোমার আমন্ত্রণ!
আমি কবি কথা কই, কোনো দলে নাহি রই, শুধু দেখি কে আছে আর্তের পাশে | দলের রং না দেখে, চুন-কালী না মেখে, এখন দাঁড়াও এসে মমতার পাশে |
**********২০/১২/২০০৬,কলকাতা তাপসী হত্যাকাণ্ডের পর কৃষিজমি বাঁচাও কমিটির নেত্রী, ১৬ দিন যাবত্ অনশন রতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আগামী ২১ ও ২২ তারিখের জন্য ৪৮ ঘন্টার বাংলা বন্ধের ডাক দিয়েছেন |
|
হে নিপীড়িত মানুষ! আরও সংযত হও!
দুদিনের বন্ ধ তুলে নেওয়া হল--
কি আনন্দ!
শীতের আমেজটা আরও ভালভাবে নেওয়া যাবে!
বিরোধীরা জমি কিন্তু একটু ছাড়লোই |
চিঠি এল মঞ্চে
শুধু এক দিস্তে কাগজ!
লেখা আছে---
সিঙ্গুরে জোর করে কোনো জমি নেওয়া হয়নি!
তাহলে মানতেই হবে যে---
সেদিন সেখানে পুলিশের প্রেম নিবেদন পালা চলছিল!
এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হল না |
ধর্মতলার মঞ্চে
মহিলা সাংবাদিক নিগ্রহ---
অন্যান্য নেতাদের তাত্ক্ষণিক চেষ্টায় অবস্থা সামাল দেওয়া |
পরে নেত্রীর ক্ষমা চেয়ে নেওয়া |
এই দুষ্ট কবিরও এর প্রতিবাদ করা উচিত--
করছি |
কিন্তু প্রশ্ন তো থেকেই যাচ্ছে---
গণশক্তির সাংবাদিকদের এভাবে নিগ্রহের কথা তো শুনি নি!
সবাই জানে তাঁরা কোন পক্ষে!
কিন্তু যাঁরা নিরপেক্ষ---
তাঁদের কেন নিগৃহিত হতে হবে?
নিরপেক্ষতার মানে কি?
সত্য খবর পরিবেশন
কোনো দিকে ঝোল না টানা!
আরও নির্ভিকতার পরিচয় পাই---
শাসকের ছল-বলের বিরুদ্ধে বললে,
অসহায়-বঞ্ছিত-মানুষের পক্ষে থাকলে |
সবাই এই শর্ত মানছেন কি?
কাগজ মানুষকে সত্য বললেও,
টিভি মানুষকে সত্য দেখায় |
উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে ওঠে মুহুর্তে!
কাজেই এই মাধ্যমের দায়বদ্ধতা অনেক বেড়ে যায়!
নিরপেক্ষতার তকমা এঁটে কোনো দলীয় মুখপত্র?
তাঁরা কি মানুষের সাথে তঞ্চকতা করছেন না?
সব পাঠক, সব দর্শক, কি বোকা?
ঘাসে মুখ দিয়ে চলেন?
সব্বারই কি মগজ-ধোলাই পরিপূর্ণ?
তাইতো
যাঁরা সরাসরি কোনো পক্ষে
তাঁদের কেউ কিছু বলে না
যাঁরা নিরপেক্ষতার মুখোশের আড়ালে পক্ষ নেন---
তাঁরা দেখেন অসহায় নিপীড়িত মানুষের রোষ |
তবুও
হে অসহায় নিপীড়িত মানুষ!
তোমরা আরও সংযত হও |
দিন যায় চাপানো উতরে
এত দেওয়া নেওয়ার পরও
ধর্মতলা যখন ঘুমিয়ে পড়বে---
তখন সেখানে
তেমনভাবেই শুয়ে থাকবে
সিঙুরের মানুষের পাশে দাঁড়ানো,
সতেরো দিন অনাহারে থাকা,
অনশনকারীরা
যাদের পুরোভাগে
এই পোড়া দেশের
হতভাগ্য, নির্যাতিত মানুষের
অবিসংবাদী
বিপদে মধুসূদন
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ||
**********২১/১২/২০০৬,কলকাতা
২১ ও ২২ তারিখের জন্য ৪৮ ঘন্টার বাংলা বন্ধ বড়দিনের কথা
মাথায় রেখে স্থগিত রাখার পর কি হল!
পরিকল্পনা!
দেখছি
একটি পরিকল্পনার নীল-নকশা!
দেখছি---
দেশে উন্নয়ণেন স্বপ্ন!
বলছে---
এই হাভাতে বঙ্গে,
এখন বাঁচার উপায় একটাই--
দ্রুত শিল্পায়ণ!
বিশ্বের অগ্রগতির সাথে পাল্লা দিয়ে
বাংলার মাটিতে গড়তে দিতে হবে
আধুনিক কল কারখানা |
কল কারখানা তো হাওয়ায় তৈরী হয় না!
চাই শক্ত জমি |
তার উপর হবে কারখানার শেড,
বসবে যন্ত্রপাতি,
শ্রমিকের উত্সাহ মুখরিত পরিবেশে
তৈরী হবে নানান পণ্য |
দুমুঠো অন্ন জুটবে বাংলার ছেলে মেয়েদের |
এ অতি উত্তম প্রস্তাব!
না হলে তো মানুষ না খেয়ে মরবে!
এটাই তো হবার কথা!
এই অবধি সব ঠিকই ছিল |
বাঁধ সাধলো নীল-নকশাটার পরের পাতায়!
সেই শক্ত জমির ব্যাপারটা!
শিল্পপতিদের আবার তা পছন্দও হওয়া চাই!
কোন দিন গড়ের মাঠটাই বুঝি চেয়ে বসবেন!
কেউ সঠিক কিছু জানতে পারছে না,
এ এক অফুরন্ত ধোঁয়াশা!
দেখলাম
একে একে জমি চিহ্নিত হচ্ছে---
সুজলা সুফলা বঙ্গমাতার
সেই সব জমি যাবে
যা অতি শষ্য শ্যামলা!
এই দুষ্ট কবির শ্রবনে--
কূজনের কুকথা আরও অমঙ্গলা!
সেই সব এলাকায় জমি বেশী যাবে
যেখানকার মানুষ রাজ-দলের সমর্থক নন!
আজ বাংলার যা অবস্থা---
রাজাকে সমর্থন না করলে হুক্কা-পানি বন্ধের আশঙ্কা থাকে!
নতুন শিল্পে "আমাদের লোক" না হলে কি কাজ পাবে?
মনে সন্দেহ দানা বাঁধে!
অনিচ্ছায়, এই শষ্যমেধ যজ্ঞে যারা পথে বসবেন--
তাঁরা তো আর রাজাকে ভোট দেবেন না!
তাঁরা "আমাদের লোক" হলেও ক'জন দেবেন?
তা হোক না
সংখ্যায় যেন বেশী না হয়!
মূল নীতি---
জমিও নাও কিন্তু ভোট হারিও না!
ভোট যদি হারাতেই হয়, কম হারাও!
তাই জমি নাও বেশী বিরোধী সমর্থকদের!
তারা তো এমনিতেও রাজাকে ভোট দেয় না!
তিরিশ বছরের প্রচেষ্টাতেও
যে মানুষগুলোকে তাঁবে আনা যায় নি,
তাদের জন্য--
রাজাকে মাথায় তুলে না নাচার---
সকাল-সাঁঝ তাঁর স্তুতি না করার---
এটাই তাদের শাস্তি!
সাঁপও মরলো, লাঠিও ভাঙলো না!
জমিও পাওয়া গেল, ভোটও কমলো না!
তাই সিঙ্গুর গেলে হবে ভাঙর, নন্দীগ্রাম, হরিপুর
এবং আরও অনেক!
সিঙ্গুর আর এখন শুধু
সিঙ্গুরের মানুষের বাঁচার লড়াই নয়
সারা বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষের লড়াই!
**********২২/১২/২০০৬,কলকাতা
কেন?
ভাবতাম তোমরাই বন্ধু
মনে হোত সে রকমই, কথা শুনে,
আজ কেন এমনটা করলে?
মোরা "পথে বসে" কিছুতেই বুঝিনে!
ছিলে এত কাল আমাদেরই মিত্র,
তাই, আছ বসে মসনদ-ই-বঙ্গ |
কোন দোষে দোষী আজ আমরা?
যে রুজি-রুটি হারা নিঃসঙ্গ!
যদি বাবা-কাকা-দাদাদের কর্ম
আজ গর্বের সাথে চাহি করিতে,
স্বেচ্ছায় যারা জমি লিখে দিল
কেন খুশি নও তাতে পেট ভরিতে?
কেন আমাদের মেরে ধরে তোমরা
ঘর-মান-ইজ্জত কাড়লে?
শিশু নারী বুড়ো বুড়ী ঠেঙিয়ে
কাকে, পোষ-মাস উপহার করলে?
বর্গা-চাষী-খেতমজুরের
চাঁদায় কি হচ্ছিল মাথা হেঁট?
পুঁজি-পতি, ডোনেশন, কমিশন,
আজ বুঝি দোস্ত হোলো, কমরেড?!
যদি জোর করে জমি তুমি কেড়ে নাও,
তবে জোতদার কি এমন মন্দ?
যদি মেরে ধরে গ্রাম ছাড়া করে দাও
তবে বর্গির নামে কেন গন্ধ?
অনুকুল বাতাসের ঘরে বসে,
কার্ল মার্ক্স ঘেঁটে তুমি বলবেই---
কবে কোন পৃষ্ঠায় লিখে গেছে
শ্রেণী-সংগ্রাম হবে এ ভাবেই!
সিঙ্গুর বাসী সবে জেনে রাখ,
তোমাদের পাশে সারা দেশটা |
এই কবি দুষ্ট মিলনেরে
ক্ষম, যদি এ না হয় কবিতা |
**********২৩/১২/২০০৬,কলকাতা
তুমি বেঁচে থাক - খোলাবাজারের জন্য
একে একে সবাই
একই সুর গেয়ে গেল |
কাছে এসে,
পাশে বসে,
অথবা দূর থেকেই |
উদাত্ত কণ্ঠে, ফিস্ ফিসিয়ে,
একই সুর বার বার গেয়ে গেল!
কারও কারও এসেও আসা হল না!
গাইতে চেয়েও গাওয়া হল না!
তুমি ভাল থাক বেঁচে থাকো |
শুধু তুমি বেঁচে থাকো |
যাদের কথা তুমি বলছো---
বাঁচার হলে বাঁচবে,
না বাঁচার হলে বাঁচবে না!
খোলা বাজারের নিয়মে!
তুমি তো রাজনীতির মানুষ |
সেখানেও তো খোলা বাজারের খেলা!
ভোটের আগে খুলবে---
গরীব কৃষক-বর্গা-ছাপোষা মানুষদের দিকের দরজা |
ভোটের পর দরজা খুলবে---
পুঁজির মৌ-তাতের কামনা চরিতার্থ হেতু
পাঁচতারা হোটেলে, শ্যম্পেনের ফোয়ারার |
তাতেও কিন্তু এখন কেউ আপত্তি করে না |
তাই বলে প্রথম দরজাটা বন্ধ করে দিতে হবে?
হ্যাঁ, সেটাও খোলা বাজারের নিয়ম |
এই দুষ্ট কবি মিলনের ধৃষ্ট জিজ্ঞাসা---
সর্বস্বান্ত মানুষের হাহাকারের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া
ডিসকোথেকে নাচতে কি আর ভাল লাগে না ?
আন্দোলনরতা নারীর দগ্ধ মাংসের গন্ধ ছাড়া
শিখ কাবাবের স্বাদ কি আর মুখে লাগে না ?
রাজাদেশ অমান্য করা মানুষের মাথা-ফাটা রক্ত না
মেশালে মদিরায় কি আর নেশা জমে না ?
তুমি এই খোলা বাজারের নিয়ম ভাঙছ |
তবে তো খোলা বাজারের সমূহ ক্ষতি হয়ে যেতে পারে |
তোমার যদি কিছু হয়ে যায়!?
আজ বড়দিনে,
যারা তোমার নাম করে
একটা ছোট্ট মোমবাতী জ্বালাচ্ছে,
তাঁরাই মশাল হাতে রাজপথে নেমে আসবে |
সেই মশালের আগুনে
সব কিছু পুড়ে ছাড়খার হয়ে যেতে পারে |
খোলা বাজারের ক্ষতি হতে পারে |
তাই তুমি শুধু বেঁচে থাক ||
**********২৫/১২/২০০৬,কলকাতা
প্রধাণ মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্শীর হাত দিয়ে এক চিঠি
পাঠিয়ে, নিজের কর্তব্য করে, কাল দিল্লী ফিরে গেছেন |
এই কবিতাটি ২৫/১২/২০০৬ তারিখে কবি নিজে ধর্মতলার অনশন
মঞ্চে আবৃত্তি করে আসেন |
হা কংগ্রেস!
পরাধীন ভারত হইতে, ব্রিটিশকে খেদাইয়া দিতে, যাহারা ছিলেন অগ্র গণ্য | স্বাধীনতার বীরগাথায়, যাদের বিনা এক ছত্র না হয়, এমনই ছিলেন গণ্য মান্য ||
কোনো বাঙালীর গৃহে, যদি দুই-খান ছবি রহে, কংগ্রেসীর হবেই একখানি | স্বাধীনতার যুদ্ধ হেরো, কংগ্রেস বিনা ভাবতে পারো, দেশ-সেবায় সদাই অগ্রণী ||
দেশ-মাতার হিতাহিত, এ বিষয়ে সদা নিশ্চিত্, মাতৃকার শৃঙ্খল করি মোচন | ভারতবর্ষের জন্মলগ্নে, রাজনীতির বিবর্তনে, মানুষ তাঁদের ভেবেছেন আপন ||
আজ এ বঙ্গের কপাল পোড়া, ত্রিশ বছর এ রাজ্য জোড়া, সেই দলের যাহা ভূমিকা | কথায় কহা না যায়, ভাবিলে মনে ভ্রম হয়ে, কষ্ট করি বর্ণিব তার কণিকা ||
কি এক অদৃশ্য কারণে, সদাই তাঁরা বিমুখ রণে, বিরোধী দল থাকিয়াই তৃপ্ত | যখনই কেহ তাদের মধ্যে, করে চেষ্টা যথা সাধ্যে, অন্যেরা তাহা ভাঙিতেই দৃপ্ত ||
কংগ্রেসী বলিয়াই শেষ, তাহাতেই থাকে বেশ, গদ্দি দখলের নাই চিন্তা | তোমাদের কি একটাই লক্ষ্য, রাজ-দলের স্বার্থ-সখ্য, তাহা হইলেই নাচো তা-ধিন্-ধিন্-তা ||
কুজনের মুখে শুনি, তব মধ্যে অনেক গুণি, সবেতন কর্মি শাসক দলের | একটাই নাকি কাজ তাদের, দাও ধানে মই বিরোধীদের, রাজার শাসন থাকুক চিরতরের ||
তাহার উপর গোষ্ঠি দন্দ্ব, ত্যাগি দেশের ভাল মন্দ, কূট-কচাল করিতেই সদা ব্যস্ত | বিরোধ-জোট কে লেঙ্গি মারা, জেতা আসন হেলায় হারা, রাজনীতি আজ প্রহসনে ন্যস্ত ||
আজ বাংলার দুখের দিনে, সিঙ্গুর মহা-আন্দোলনে, কি খেল দেখাইতেছ হে কংগ্রেস | যখন বিরোধী এক জোট, তখন পাকাও এমন ঘোঁট, মুখ থুবরাইয়া পড়ে সব প্রগ্রেস ||
তোমরা কি এখনো ভাবো, তলের কুড়াবো-গাছেরও খাবো, রাজ্যের মানুষ এসব কিছুই বোঝে না | এ রাজ্যের মানুষ নাচার, ভুগিতেছে এই অত্যাচার, কোনো কিছুই কিন্তু সে ভোলে না ||
বলে দুষ্ট কবি মিলন, পাইলে সুযোগ তেমন, তোমাদের চুবাইবে নিয়া সাগরে | ভাবী কালের ইতিহাসে, বসিবে তব দুই পাশে, জয়চন্দ ও নবাব মিরজাফরে ||
যখনি কাজের কথা ওঠে, জাতীয়-দলের দোহাই ঠোঁটে, যেন এই রাজ্যে তব কোনো দায় নাই | পাড়ার দাদার ইমেজ ঝাড়িয়া, দাঁড়াও পাশে দায়ীত্ব নিয়া, দেখুক, তোমার মাজা এখনো ভাঙে নাই ||
**********২৬/১২/২০০৬,কলকাতা
|
এবার ঝড় উঠবে!
দু জন মানুষ!
দু জনেই অনড়!
পুঁজিপতিদের করতালিতে মুখরিত
শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনফারেনস হলে---
একজন দৃঢ় কণ্ঠে আজও ঘোষণা করেছেন
কারখানা সিঙ্গুরের ওইখানটাতেই হবে |
পিছিয়ে আসবেন না |
কোনো মতেই না |
তিনি এক জন কমিউনিস্ট!
কালের কি পরিহাস!
অন্যজনার কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে আসছে |
আজ অনশনের তেইশ দিন পার হল |
তিনিও এক চুল পিছিয়ে আসবেন না |
সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষিদের
জমি ফিরিয়ে না দিলে ---
অনশণের পরিনামও তাঁর কাছে সম্মানের |
তিনি একজন তথাকথিত বুর্জুয়া দলের নেত্রী!
সত্যিই! কালের কি পরিহাস!
দুপুর থেকেই একটা অস্থিরতা ছিল |
দুপুর থেকেই একটা উদ্বেগ ছিল |
অক্সিজেন দিতে হয়েছে |
কাতারে কাতারে মানুষ সাশ্রুনয়নে তাঁকে দেখে বাড়ী ফিরে গেছেন |
দলের অন্যান্য, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নেতারা
আজ মহাকরণে গিয়ে,
আলোচনার আমন্ত্রণের বদলে হয়েছেন
গ্রেফতার!
দেশে কি তবে মগ্ রা ফিরে এল ?
ধর্মতলায়
রাত বাড়ার সাথে
চারিদিকে এক অদ্ভুত স্তব্ ধতা নেমে এসেছে!
আজ
কাছেই, এনে রাখা হয়েছে---
জল কামান
বাড়তি পুলিশ
সরকারী ভিডিও ক্যামেরা |
এবার কি কিছু একটা ঘটবে?
মনে হচ্ছে
এবার ঝড় উঠবে |
**********২৬/১২/২০০৬, মাঝরাত্রি,কলকাতা
অনশনের ২৩ দিন পার হয়ে গেছে | দুপুর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
কে অক্সিজেন দেওয়া শরু করতে হয় | খবরে প্রকাশ - বলপূর্বক
তাঁকে নিয়ে গিয়ে অনশন ভাঙানোর জন্য সরকার পক্ষের প্রস্তুতি সারা
হয়েছে |
মনে রেখো
তোমরা মনে রেখো |
হে বাংলার মানুষ, তোমরা মনে রেখো |
যখন সর্বহারার নামাবলি গায়ে জড়িয়ে
একবিংশ শতাব্ দির বর্গিরা
তোমাদের গ্রাম লুঠ করছিল,
যখন নির্বিচারে মারতে মারতে
রক্তে ভাসাচ্ছিল সিঙ্গুর,
যখন কাঁটা তার দিয়ে
তোমাদের জমি ঘিরছিল |
তখন যার দিকে তাকিয়ে ছিলে তোমরা---
তখন যার দিকে তাকিয়ে ছিল সারা বাংলা---
সে আজও তোমাদের পাশে |
সে তোমাদের সঙ্গ ছাড়ে নি |
রাজনীতির দাবাখেলার বোড়েদের
সে হেলায় ত্যাগ করে নি |
ক্ষুধার চরম যাতনাও তাকে বাধ্য করতে পারে নি
এক কুটো অন্ন মুখে তুলে নিতে |
অনশনের চব্বিশ দিন পরও
সে তোমাদের পাশেই অনড়, অবিচল |
হে বাংলার মানুষ, তোমরা মনে রেখো |
দাবী যার কাছে
তাকে মূক ও বধীর বলে
মূক ও বধীরদের অপমান কোরো না |
তাকে বরং বল হৃদয়হীণ |
এই দুষ্ট কবির স্পর্ধিত জিজ্ঞাসা---
হৃদয়হীণ শাসকের কানে
আর্তের কথা যেতে
আর কত সময় লাগবে ?
তাঁর বোধোদয় হতে আর কত দিন লাগবে?
তাঁর বিবেক কে জাগিয়ে তুলতে আর কত যুগ লাগবে?
হে বাংলার মানুষ, তোমরা মনে রেখো |
মুখে এককুটো অন্ন না তোলা মানুষরা
আজও প্রকাশ্য রাজপথে তোমাদের পাশেই রয়েছে |
তাঁরা 'কুজনের' কল্পিত কোনো আন্দোলনের
চোরাগলিতে আটকা পড়ে যায় নি |
হে বাংলার মানুষ, তোমরা মনে রেখো |
তোমরা শান্ত থাকো |
তোমরা সংষত রাখো নিজেদের |
যে চাপা আগুন তোমাদের বুকে ধিকি ধিকি জ্বলছে
তাকে তেমনই জ্বালিয়ে রাখ |
শাসক বড় নিষ্ঠুর | শাসক বড় চতুর |
নিজের প্রয়োজনে
গণতন্ত্রের ঢালের আড়াল থেকে
একে একে তোমাদের সব অস্ত্র কেড়ে নিচ্ছে |
শেষ পর্যন্ত একটা দেশলাই কাঠিও
তোমাদের হাতে রাখতে দেবে না!
তখন তোমাদের বুকের এই ধিকি ধিকি আগুনের আঁচ থেকেই
জ্বালিয়ে তুলতে হবে ---
আন্দোলনের রাজপথ আলোকিত করার মশাল |
হে বাংলার মানুষ, তোমরা মনে রেখো |
বেঁচে থাকতে হলে
যখন বরফ গলে না
আগুণ জ্বালাতে হয় ||
**********২৭/১২/২০০৬, কলকাতা
অনশনের আজ ২৪ দিন | গতকাল দুপুর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
কে অক্সিজেন দেওয়া শরু করতে হয় | খবরে প্রকাশ - বলপূর্বক
তাঁকে নিয়ে গিয়ে অনশন ভাঙানোর জন্য সরকার পক্ষের প্রস্তুতি সারা
হয়েছে | তিনি এখনও পিছু হটেন নি |
টাটার যাদু!
আকাশে, বাতাশে, শব্ দে, তরঙ্গে
একটাই বার্তা ক্রমাগত কানে এসেই চলেছে---
এই বাংলার বিরোধিরা---
সিঙ্গুরে টাটাকে চায় না
টাটাকে বাংলায় চায় না
বাংলায় শিল্প চায় না
শিল্পে পুঁজি চায় না
পুঁজিপতিদের দেশেই চায় না
দেশের ভবিষ্যত চায় না
ভবিষ্যতে নিজেদের উন্নতি চায় না
উন্নতির হাত ধরে জমি বেচে চাষা থেকে ভদ্রলোক হতে চায় না
ভদ্রলোক হয়ে ব্যাঙ্কের সুদে আরামের জীবন কাটাতে চায় না!
আমি বহু দিন ধরে
কান পেতেও তা শুনতে পাই নি!
আমি শুনেছি---
সিঙ্গুরের উর্বর সুজলা সুফলা,
বলপূর্বক কেড়ে নেওয়া জমিতে
কারখানা চাই না |
হে টাটাকুলপতি!
তুমি কি তা শুনতে পাও নি?
না কি তোমাকে তা শুনতে দেওয়া হয় নি?
না কি তুমি নিজেই তা শুনতে চাও নি?
তোমার মারাত্বক অভিযোগ শুনলাম |
এরা নাকি তোমার শত্রুদের প্ররোচনায় আন্দোলন করছে |
যাঁরা পঁচিশ দিন ধরে অনশন করে আছে,
যাঁরা বাংলার মানুষের জন্য
নিজের রক্ত ঝরাতে পিছপা হন না,
যাঁরা বাংলার মানুষের জন্য
নিজের জীবন বাজি ধরে এই রাজপথে বসে আছেন,
তাঁরাই নাকি তোমার শত্রুদের টাকা খেয়ে
এ কাজ করছেন!
শুধু কিছু টাকার জন্য সিঙ্গুরের মানুষ
যদি--
রাজ বাহিনীর অশ্রাব্য গালি-গালাজ, খিস্তি-খেউর,
নির্মম-প্রহার খেয়ে গ্রামছাড়া হতে পারে,
জমি হারা হতে পারে,
ধর্ষিতা হয়ে প্রাণ হারাতে পারে,
তাহলে
এই দুষ্ট কবি মিলনের মনে আজ প্রশ্ন জাগছে---
কোন যাদুর বলে
তুমি তোমার জন্য, দেশের সংসকৃতিবান রাজাকে দানবে পরিনত
করে, সিঙ্গুরের চাষিদের থেকে জমি কেড়ে নিতে বাধ্য করলে?
কোন যাদুর বলে একটি সংগ্রামী, পুঁজিপতি-বিরোধী, সর্বহারা-দরদী
কমিউনিস্ট দলকে তোমার আজ্ঞাবহ দাসে পরিনত করলে?
এই যাদুর প্রয়োগ কি গত নির্বাচনের আগেই করা হয়েছিল?!
**********২৮/১২/২০০৬, কলকাতা
অনশনের আজ ২৫ দিন | মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে অক্সিজেন দেওয়া
চলছেই | গত কাল খবরে প্রকাশ - রতন টাটা অভিযোগ করেছেন যে
সিঙ্গুর আনদোলনের পেছনে তার প্রতিযোগী গাড়ী নির্মাতাদের মদত
আছে এবং তিনি কোনো ভাবেই সিঙ্গুর ছেড়ে যাবেন না |
আগুন নিয়ে খেলছে!
ধর্মতলা,
এই শীতেও এখানে এত গরম কেন?
হাজার হাজার মানুষ
কেন সেখানে ভীড় করছে?
গণমাধ্যমগুলি কোন সংবাদের আশায়
এখানে তীর্থের কাকের মত দিনরাত অপেক্ষা করছে?
কোন আশঙ্কায় এখানে
দাঙ্গা রুখবার সরকারী আয়োজন সেরে রাখা হয়েছে?
কি কারণে বাংলার রাজ্যপাল
এখানে বার বার ছুটে আসছেন?
ভারতের প্রধাণ বিরোধী জোট
কোন সর্বনাশের কথা কল্পনা করে
রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করতে বাধ্য হয়েছেন?
এই ধর্মতালার মঞ্চের মানুষরা কি চাইছেন?
কৃষিজমি বাঁচাও কমিটির নেতারা কি
টাটার খরচায় পুনে সফর করে আসতে চাইছেন?
তাঁরা কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য
ঝাঁ চকচকে একটি মাল্টিপ্লেক্স তৈরি করার দাবী করছেন?
তাঁরা কি নিখরচায় বিদেশ ভ্রমণ বা
সুইস ব্যাঙ্কের খাতা খোলার দাবী করছেন?
তাঁদের মূল দাবী তো শুধু এই যে
সিঙ্গুরের যে মানুষ
স্বেচ্ছায় তাঁদের অন্নদাত্রী জমি দিতে চান নি,
তাঁদের জমি ফিরিয়ে দিতে হবে |
স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে
নিজের প্রাণ-ধন-সম্পত্তি নিজেরই নির্বাচিত
সরকার দ্বারা কেড়ে নেওয়া হলে
তাঁর কি কোনো প্রতিকার নেই ?
দেশের আইন নাকি এরকমই |
জ্বালিয়ে দাও
এই মানবতা বিরোধী আইন?
এই মুহুর্তেই দেশের মানুষের কথা ভেবে
নতুন আইন কেন লেখা হবে না?
কার স্বার্থের কথা ভেবে?
যারা আজ ভারতের মসনদে এবং এই অঙ্গরাজ্যের
গদি অলংকৃত করে আছেন ---
তারা কাদের স্বার্থে জনতার দরবারে মিথ্যা ভাষণ করেছিলেন?
কেন মানুষকে বুঝিয়েছিলেন যে তাঁরা একে অপরের প্রতিপক্ষ?
তাঁরা কোন মুখে আজ বলবেন যে
তাঁরা একই মুদ্রার দুই পিঠ নন?
ধর্মতলার এই মঞ্চের কণ্ঠরোধ করতে
সেনাবাহিনীকে কার বিবেচনায় ডেকে আনার কথা শোনা যাচ্ছে?
অঙ্গরাজকে, তাঁরই সৃষ্ট চক্রব্যুহ থেকে উদ্ধার করার এই পরিকল্পনা
কাদের?
বাংলার অসহায় মানুষের পাশে তাঁরা আজ নেই কেন?
ইতিহাসের কি আজ পুনরাবৃত্তি হচ্ছে?
আড়াই শ বছর আগে
এই বাংলাতেই--
ঠিক এই ভাবেই ---
বিদেশী বনিকদের ডেকে আনার একটা সফল ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল?
আজ এই ধর্মতলার পলাশির প্রাঙ্গণে, কি নতুন ইতিহাস রচণা হবে?
সেই খবরের অপেক্ষায় কি এখানে এত ভীড়?
সিঙুরের ক্ষেতে, মাঠে, ঘাটে, ধানের গোলায়
যে আগুন লাগিয়েছে,
তাঁরই আঁচে আজ ধর্মতলা এত গরম |
তাঁরই আঁচ আজ সারা বাংলায় ছড়িয়েছে |
তাঁরই আঁচ দিল্লীর মসনদকে এত গরম করে দিয়েছে,
যে তাঁরা এখন সেই গদ্দিতে আর শান্তিতে বসতে পারছে না |
সিঙ্গুরের মানুষের গায়ে যারা আগুন দিয়েছে,
তাঁরা নিজেরাও সেই আগুন থেকে রক্ষা পাবে না |
আজ তারা
আগুন নিয়ে খেলছে |
**********২৮/১২/২০০৬, কলকাতা
অনশনের আজ ২৫ দিন | মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে অক্সিজেন দেওয়া
চলছেই | গত কাল খবরে প্রকাশ - রতন টাটা অভিযোগ করেছেন যে
সিঙ্গুর আনদোলনের পেছনে তার প্রতিযোগী গাড়ী নির্মাতাদের মদত আছে
এবং তিনি কোনো ভাবেই সিঙ্গুর ছেড়ে যাবেন না | শোনা যাচ্ছে যে সেনা
বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে |
দুষ্ট কবির ধৃষ্ট কবিতা!
রাজা যাদের পালন করেন, তারাই হল শিষ্ট! রাজা যাদের দমন করেন, তারাই কিন্তু দুষ্ট! সিঙ্গুর গ্রামের বিদ্রোহে আজ, রাজা বেজায় রুষ্ট! শান্ত শিষ্ট প্রজাও এখন, রাজার চোখে দুষ্ট! সেই দুষ্ট প্রজার দমন দেখে, র'চে কাব্য ধৃষ্ট, "দুষ্ট কবি" নামে লিখেই, থাকি আমি তুষ্ট!
দুষ্ট কবির কাব্যে হাসুক, বোদ্ধা মস্ত মস্ত! সভা-কবি-কুল থাকুক, রাজার স্তবে ব্যস্ত! যদি, ভাবীকালের বিচারে হই, আস্তাকুঁড়ে ন্যস্ত! দুঃখ কেন করবো? বলি দুষ্ট কবি স্পষ্ট! কালের ডাকের সাড়ায় লিখেই, হয়েছিলাম হৃষ্ট! সকল মানুষ থাকুক স্বাধীন, থাকুক হৃষ্ট, পুষ্ট!
**********২৮/১২/২০০৬, কলকাতা
|
এখনও অনেক কাজ বাকি
তুমি সবাইকে হার মানালে |
একে একে সব্বাইকে
সবিনয়ে ফিরিয়ে দিলে |
আমরা দেখলাম
কেউই তোমার চাওয়া পাওয়া নিয়ে
মাথা ঘামায় নি |
তুমিও না |
না হলে,
তোমার নিজের জীবনটাকে
শুধু অন্যের জন্য
এভাবে নিংড়ে উত্সর্গ করতে পারতে না |
কিন্তু বাঁধ সাধলো সেই মানুষটা,
যে এই সসাগরা ভারতবর্ষের
এক মাত্র মানুষ,
যে কি না মানুষকে জীবন দান করতে পারে |
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তও তাঁর বরাভয়ে ফিরে পায় প্রাণ |
যে সকল তর্কের ঊর্ধ্বে
তাঁর হৃদয় তোমার অনশনে স্থির থাকতে পারে নি |
নিজে করেছে অনুরোধ |
সে কথা দিয়েছে---
তোমার কথা শোনা হবে |
তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারো নি |
তাঁর কথা রেখে সংবিধানের মর্যাদা রেখেছো |
এই পঁচিশটা দিন অনাহারে থেকে
সিঙ্গুরকে তুমি হুগলী থেকে তুলে নিয়ে
সোজা বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছ |
জমির অধিকার-অধিগ্রহণে এক নতুন মাত্রা জুড়ে দিয়েছ |
অনশন তোলার খবরে,
তোমাকে যারা সব চেয়ে বেশী ভালোবাসে,
সেই অতি সাধারণ মাটির কাছের মানুষগুলো,
যারা রুদ্ধস্বাসে তোমার দিকে এত দিন তাকিয়ে ছিল,
অশ্রুসজল নয়নে, স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলেছে |
এই জেনে যে,
তুমি থাকবে,
সশরীরে তাঁদের মাঝে, তাঁদের মনে,
ইতিহাসের পাতায়, স্বর্ণাক্ষরে |
সেরে উঠে আবার
নতুন উদ্যমে
মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবে |
সিঙ্গুরের মানুষকে তাঁর অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে না?
এই দুষ্ট কবি কে আরও লিখে যেতে হবে না?
যে বাংলার মানুষ আজ প্রতিবাদের ভাষাই ভুলে গেছে,
তাদের সেটা মনে করিয়ে দিতে হবে না?
আরও অনেক কিছুই যে তোমাকে করতে হবে |
এখনও অনেক কাজ বাকি ||
**********২৯/১২/২০০৬, কলকাতা
অনশনের ২৫ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
রাষ্ট্রপতি এবং প্রধাণ মন্ত্রীর অনুরোধে গত কাল মাঝ রাতে তাঁর
অনশন সমাপ্ত করেন | তাঁকে সেখান থেকে সাউদার্ন এভিনিউতে একটি
নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হয় | আজই সরকার থেকে ঘোষণা করা হয়
যে সিঙ্গুরে ১৪৪ ধারা আরও ২০ দিনের জন্য বাড়িয়ে দেওয়া হল!
ওরে সিঙ্গুর নাওয়ের মাঝি
ওরে সিঙ্গুর নাওয়ের মাঝি এ কি বৃথা নৌকা বাওয়া? বুঝি ছল করে তোর সাথে রাজা কাড়লো পালের হাওয়া?
ওরে ভাবিস না রে এ সব, তুই দেখরে আকাশ পানে | ঝড়-বাতাসের আভাস তোকে আসছে নিতে টেনে |
তুই ভাবিস নারে কভু তুই একলা হলি, যখন অনশনের শেষে রাজা খেলাপ করল কথন |
অধিকারের লড়াই, হাতের মোয়া কোন্ কালে? অনেক রক্ত ঝরলে তবেই মুক্তি-দুয়ার খোলে |
এতটা পথ সাথে তোর কাণ্ডারিকে পেলি | সে তো একাই লগি ঠেলে তোকে টানলো এপার তুলি |
তুই স্হির বসে থাক্ নাওয়ে শক্ত ধরে সুকান | কাণ্ডারী তোর আসবে ঠিকই বাইতে সাথে উজান |
আর একটু ধীরজ ধরে চল পথের যাতন ভুলি | বঙ্গবাসী জাগছে সবে সুখের শয্যা ঠেলি |
আগামীতে এমন হাওয়া লাগবে তোদের পালে, তরিয়ে নেবেই তোদের তরি দুষ্ট কবি বলে ||
**********৩১/১২/২০০৬, কলকাতা
অনশনের ২৫ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর ২৯/১২/২০০৬ তারিখের মধ্যরাত্রে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধাণ মন্ত্রীর অনুরোধে তাঁর অনশন সমাপ্ত করেন | তাঁকে সেখান থেকে সাউদার্ন এভিনিউতে একটি নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হয় | সেদিনই সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয় যে সিঙ্গুরে ১৪৪ ধারা আরও ২০ দিনের জন্য বাড়িয়ে দেওয়া হল! এ এক অভূতপূর্ব পরিবেশ!
|
সিঙ্গুর! এখন তুমি সবে নন্দীগ্রামে
সিঙ্গুর
এখন তুমি নন্দীগ্রামে |
সেই আঁচ, সেই তাপ,
আরও জোর সে!
এবার তোমার অস্ত্র যেন এনীল করা!
ফিসফিসিয়ে জমি কাড়ার খবরেই
দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলে, নন্দীগ্রাম!
নন্দীগ্রাম
এই দাবানলের মানচিত্রে
তুমিও উঠে এলে
সিঙ্গুরের পাশে!
ক্ষেতে, মাঠে, ঘাটে, গ্রামে, গ্রামে
এ কিসের আগুন?
এ কেমন আগুন?
যে আগুন জাতি-ধর্ম-ভাষা-বর্ণ এমন কি
রাজনৈতিক ভাবধারার আল কেটে সমান করে ফেলে
এক নতুন অখণ্ড শালি জমির জন্ম দিয়েছে!
হে সেই সব মানুষ!
যাদের নাম লেখা হয়ে গেছে
রাজ-স্বপ্নের শিল্প-নগরের পাশেই
মরে বেঁচে থাকা হাঘরেদের দলে!
হে সিঙ্গুরের মানুষ!
হে নন্দীগ্রামের মানুষ!
হে বাংলার মানুষ!
হে ভারতবর্ষের মানুষ!
স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার
অধিকার আবার আজ কেঁড়ে নেওয়ার
ষড়যন্ত্র হচ্ছে!
ব্রিটিশের করা আইনের
দোহাই দিয়ে লুঠের রাজত্য কায়েম হচ্ছে!
জ্বালিয়ে দাও সেই আইন!
জ্বালিয়ে দাও সেই হাতগুলো
এই আইনকে যারা হাতিয়ার করেছে!
বানাও নতুন আইন |
রাজ-স্বপ্নের শিল্প-তালুকের এই নীল-নকশায়
তোমাদের স্থান খুঁজে দেখাতো পারো?
না, তা পারবে না |
তাই,
যদি আজও ঘুম থেকে না জাগো---
কাল হয়তো দেখবে,
সেই শিল্পের মায়া নগরীতে
তোমাদের মা বোনেরা পণ্য হয়ে গেছে!
আর তোমরা তাদের যোগানদার!
সিঙ্গুর! এখন তুমি সবে নন্দীগ্রামে!
এখনও আরও পথ যেতে হবে |
এই দুষ্ট কবি তোমার সাথেই আছে ||
**********৪/১/২০০৭, কলকাতা
সিঙ্গুরের জমির বিবাদের সুরাহা হবার আগেই, গতকাল,
সালেম গোষ্ঠির জন্য জমি অধিগ্রহণের নোটিস পড়ার উড়ো
খবরে বিশাল ক্ষিপ্ত জনতার সমাবেশ হয় মেদিনীপুরের
নন্দীগ্রামে | পুলিশের হঠকারীতার ফলস্বরূপ সেখানে ১৫ রাউণ্ড
গুলি চলে | দুপক্ষেই গুরুতর আহত অনেক | জনতার রোষের
এই প্রকাশ কি একটাই কথা বলে না? যে তাঁরা যে কোনো
মূল্যে জমি হাতছাড়া করবে না | সরকার এখনও বলছে যে
সবাই স্বেচ্ছায় জমি দেবে!
এনীল (anneal) - লৌহধাতু কে বিশেষ পদ্ধতিতে আরও শক্ত
করার প্রক্রিয়া | এতে অস্ত্র সহজে ভোঁতা হয় না |