*
নন্দীগ্রাম কেন ?

জ্যোতিবাবু ও বুদ্ধবাবুর শাসনে       প্রতি পদে পদে কার্য এবং কথনে
বাংলাকে এঁরা আবার করেছে খণ্ডিত |
সি-পি-এম হলে 'আমাদের লোক'              অন্যথা হলে আছে দুর্ভোগ
বঞ্চিত হয়ে সর্ব সুযোগে, দণ্ডিত ||
বিরোধী পক্ষ ব'লে                                      যদি চিহ্নিত কভু হ'লে
ভগবানও এসে বাঁচাতে, পাবে অক্কা |
শহরাঞ্চলে নীরব আভাস                     গ্রামে গিয়ে দেখো, খোলা সন্ত্রাস
পার্টি-ধামা না ধরে দেখি, কেমনে পাও রক্ষা ||
সাংবিধানিক গণতন্ত্র                                 এ যে শুধু নয় ক্ষমতা-যন্ত্র
বুদ্ধবাবু কি মনে প্রাণে তা মানেন |
শাসনে আসতে গিয়ে                               ক'রে বিপ্লব, খিড়কি দিয়ে
'ভোটাধিক্য' সার কথা, তা বুঝেছেন ||
তাই, তিরিশ বছর ধরে                                    সংখ্যাধিক্য তরে
সর্বঘটে ঢুকিয়ে মাথা 'দখলি-স্বত্ব' গড়ে |
যখনি দেখেছে দখল হারায়                       সাম-দান-ডণ্ড-ভেদ ছড়ায়
তাতেই বাংলা জতুগৃহ-রূপ ধরে ||

আজ সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে                                       অলীক-শিল্পায়নে
সেই একই কর্ম করছে, খাটায়ে মুণ্ড |
বেশী জমিহারা হবে বিপক্ষ                  চাকরী যেকটা পাবে স্বপক্ষ
'আমাদের লোক' না হবার, এই দণ্ড ||

এ ছাড়া আছে আরো বহু গুণ             একটা যেমন, স্বজন পোষন
তাতে শুনি, জ্যোতিবাবুই শ্রেষ্ঠ |
বুদ্ধবাবু, পয়সা খান না               শুনি, টাকা-কড়ি হাতেও ছোঁন না
তাঁর শিল্পে মেশে কৃষকের তাজা রক্ত ||

দুই জনেরই শাসন কালে                        অপশাসন তুঙ্গে চলে
দুষ্ট কবি মিলন বলে সত্য |
জ্যোতি শুধু করতো মজা                 বুদ্ধ ভাঙ্গছে বাংলার মাজা
বাঙ্গালী এদের রাজ্য দেবার, করছে প্রায়শ্চিত্ত ||


.                    ************** কলকাতা ২৩/৩/২০০৭        
সূচি
পাতায়
ফেরত      


মিলনসাগর
*
মশাল জ্বলে                                    
দুষ্ট কবির কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন . . .        
"বাংলা জ্বলছে" অ্যালবাম থেকে এই গানটি দেবাশিস রায়ের সুরে ও কণ্ঠে শুনুন . . .    

হাতে তাঁর মশাল দেখি জ্বলে
মশালের আগুন কথা বলে
তার দামাল শিখার তালে
নাচে যত বাংলা মায়ের ছেলে ||

ওঠে তোর বেবাক কণ্ঠ গেয়ে
শুনে তা, লুণ্ঠিত যায় ধেয়ে
বাংলা মায়ের যত মেয়ের
ধরাতলে রক্ত যায় বয়ে ||

ঘুম ভাঙলো বিষাণ শুনে
কালো হাত তখনও জাল বোনে
জমে মেঘ মায়ের ঈশান কোণে
নির্ভিক, বলির প্রহর গোনে ||

মশালের আগুন কথা বলে
তার দামাল শিখার তালে
আগুনে ঝাঁপায় সবাই মিলে
লেখা, জয় হবেই, তাঁদের ভালে ||

হাতে তার মশাল জ্বলে দেখে
চমকে দাঁড়ায় দিকে দিকে
বাংলার এ-রূপ ছটা দেখে
ধন্য, দুষ্ট কবি লিখে ||

হাতে তাঁর মশাল দেখি জ্বলে
মশালের আগুন কথা বলে ||

.   ************** কলকাতা ২৭/৩/২০০৭          
সূচির পাতায় ফেরত      


মিলনসাগর
*
পুলিশ তুমি কার ?                                      আবৃত্তি শুনুন

পুলিশ তুমি কার?

যখনই বাড়ী ফিরে আসো
যাঁরা তোমাকে ডাকে বাবা বা আব্বা ব'লে---
তাদের গলার স্বর কি আজ কাল একটু কাঁপা কাঁপা শোনাচ্ছে?

সংসার ধর্মের ফাঁকে---
যে রমণী হাত বুলিয়ে দেন, তোমার দেহে লাগা আঘাতের উপর---
যে তোমার ওই সন্তানদের জননী---
তাঁর হাত কি ইদানিং কাঁপা কাঁপা ঠেকছে?

দাঁড়ি কামাতে গিয়ে আয়নায় নিজের মুখটা দেখে---
রেজার ধরা হাতটা কি আজকাল একটু বেশী কেঁপে কেঁপে যাচ্ছে?

কোনো নির্জন স্থানে ডিউটি দিতে গিয়ে যখন একা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়---
তখন বুকটা কি একটু বেশী দুরু দুরু কেঁপে উঠছে?

তা যদি লক্ষ্য করে থাকো,
তবে জানবে
তুমি এখনও বেঁচে আছো |
পুলিশ! তুমি এখনও মানুষ আছো, ভাই |
ওসব তারই প্রমাণ |

তাই প্রশ্ন কর --- তুমি কার?

শাসক দলের?
না বিশ্বায়নের ডানায় ভর করে এসে যাঁরা পুঁজি ভরা থলে ঝুন্ ঝুন্ করছেন, তাঁদের?
না সরকারের?
যে সরকার সকলের | শাসক দলের | বিরোধী দলের | ছা পোষার |
না দেশের আইনের?
না নিজের বিবেকের?
না তোমার পরিবারের সেই সব মানুষদের, যাঁদের জীবনটা তোমার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে
জড়িত?
না ভারতবর্ষ নামক এই বিশাল ভূখণ্ডের কোটি কোটি নির্বিরোধী মানুষের, যাদের
দেওয়ালে পিঠ না ঠেকলে, ক্ষেপে ওঠে না?

তুমি আসলে কার?
এদের কার কাছে তুমি কতটা দায়বদ্ধ---
তা ভেবে দেখার সময় এসেছে |

তুমি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক বা
এই দুষ্ট কবির মত অন্য কোনো জিবিকার মানুষ নও---
তোমার উপর স্বাধারণ মানুষের শান্তিতে বাঁচা, মরা, মরে বেঁচে থাকা, নির্ভর করছে!

তুমি পুলিশ |

পুলিশ তুমি কার?


.       ************** কলকাতা ২৬/৩/২০০৭                     
সূচির পাতায় ফেরত      
খবরে প্রকাশ, নন্দীগ্রাম গণহত্যার ঘটনার পর পুলিশের নিচু তলার কর্মিদের মধ্যে ভিষণ
ক্ষোভ দানা বেঁধেছে |

মিলনসাগর
শান্তি ও সংহতি চাই

চারিদিকে পড়ে গেছে ঢি ঢি |
নন্দীগ্রামে হলো এ কী |
আর কত কাল চুপ বসে থাকে ||
পড়ে রাঙা চশমা বা চোখ বুজি |
এতকাল তিলে তিলে জমা পুঁজি |
প্রতিবাদে ত্যাগিছেন একে একে ||

তাই দেখে রাজা বলে গেল গেল |
এই কৃতঘ্ন জ্ঞানী সব ওল্টালো |
দুই কান কাটা তাই আছি ভালো ||
এই জ্ঞানী-গুণী হাত-মুঠো রাখতে |
হলো ছলা-কলা ধলা-বেশ ধরতে |
গিয়ে সঙ্কটে ছেড়ে কি লাভ হলো ||

তাই ভরা চৈত্রের রোদে ঘেমে ঘেমে |
রাজ-সভা-কবি কুল পথে নেমে |
চান 'শান্তি ও সংহতি' অদ্য ||
কলকাতা নগরের জনপথে |
তাহাদের অতি প্রিয় রাজ-পদে |
জানালেন খোলা আনুগত্য ||

এই সভা-কবি কুল উপযুক্ত |
বলে - রাজা নির্দোষ, দায় মুক্ত |
এতো সংস্কৃতিবান রাজা কোথা আছে ||
দুষ্ট কবি বলে - এই কথা,
বল গিয়ে তাঁকে, যাঁর সব, সেথা,
রাজাদেশ-বলে গেছে ধুয়ে মুছে ||

. ************** কলকাতা ২৮/৩/২০০৭            
সূচি
পাতায়
ফেরত      
গতকাল সুনীল গাঙ্গুলির নেতৃত্বে 'শান্তি ও সংহতি মঞ্চ' নামে একদল
বুদ্ধিজীবী মৌন মিছিল করেন | নন্দীগ্রামের গণহত্যার জন্য
মূখ্যমন্ত্রীকে সম্পূর্ণভাবে দায়ী করে পদত্যাগ বা কোনো শাস্তির কথা
তাঁরা বলতে চাননি | তাঁদের মূল লক্ষ্য মনে হয়েছে মূখ্যমন্ত্রিকে
বিরোধী পক্ষের হাতে কোণঠাসা অবস্থা থেকে কিছুটা রেহাই
দেওয়া | গত কয়েক মাস ধরে এই রাজ্যে অনাহার বা জমি
অধিগ্রহণের নামে মৃত্যুর মিছিল নামলেও এই প্রথম তাঁদের কথা
শোনা গেল | বোঝাই যাচ্ছে যে অন্য কারও অঙ্গুলিহেলনে আজ
তাঁরা পথে নেমেছেন |

মিলনসাগর
*
সিঙ্গুরে যে লাগলো আগুন                আবৃত্তি শুনুন

সিঙ্গুরে যে লাগলো আগুন
ছুটলো বেগে তপ্ত দ্বিগুন
নন্দীগ্রামে পৌঁছে বিস্ফোরণ |

তার বহ্নিশিখায় মত্ত পবন
ভস্মিভূত সর্ব হবন
বাংলা জুড়ে যুদ্ধ মরণ-বাচন |

শিরস্ত্রাণে জড়িয়ে মরণ
রাজ-প্রহরার ঢুকতে বারণ
নির্বাসিত আস্থাবিহীন আইনের শাসন |

গ্রাম্য মানুষ অতি সাধারন
রুখলো রাজার সৈন্য অধম
নন্দীগ্রামে তুমুল মৃত্যু নাচন |

পাষাণরাজের টলছে আসন
থামছে না তাও মিথ্যা ভাষণ
লুকায় তাহার কলঙ্কিত আনন |

সিঙ্গুরে যে লাগলো আগুন
নন্দীগ্রামে বজ্রপতন
ত্রস্ত পলায় পঙ্কিল যত মন |

বাংলা মায়ের অঞ্চল-তন্
স্পর্শে যদি কভু দুর্জন
জানবে, তাহার মূল্য শুধু মরণ |

শিশু নর নারী মৃত্যু বরণ
সোনার-বাংলা চণ্ডিকা-রণ
ধন্য ব'ন্দে দুষ্ট কবির লিখন |

. ************** কলকাতা ২৯/৩/২০০৭            
সূচি
পাতায়
ফেরত      


মিলনসাগর
*
ক্ষতবিক্ষত বাংলার মুখ                  
দুষ্ট কবির কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন     
"বাংলা জ্বলছে" অ্যালবাম এর এই কবিতাটি শীলা চক্রবর্তীর কণ্ঠে শুনুন . . .        
              
ছিলি গভীর ঘুমের ঘোরে
রজনি-দিবস-বিকেল-ভোরে |
সুযোগে ছিন্ন মায়ের আঁচল
দেখি তাঁর চক্ষু ছল্ ছল্ |

বাংলা সহায়-হারা কাঁদে
রাজা তাঁর ডুবছে পুঁজির ফাঁদে |
দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি ভুলে
মাকে টেনে নিলাম মঞ্চে তোলে |

সহসা উঠলো বাংলা জেগে!
দেবে না চাষের জমি ভাগের |

হাজারো প্রশ্ন প'ড়ে কেন?
জানে না, কেউ জানে না, কেন---
---শিল্প শালি জমিকেই বাছে?
---মার্ক্সবাদ পুঁজির বাদ্যে নাচে?
---চাষী কে প্রহার কেন করা?
---কেন তাঁর ভিটা মাটি কাড়া?
---তাঁরা কোন দোষে জমিহারা?
---তাপসীর কেনই জ্বলে মরা?

বুকে যে আগুন ধিকি জ্বলে
ফাটে বোমা 'সিঙ্গুর' 'সিঙ্গুর' ব'লে |
ঝাড়া দিয়ে বাংলা দাঁড়ায় রুখে
তার আগুন ঝরে চোখে |
ধরা শক্ত মুঠোয়ে মশাল
কণ্ঠে স্বয়ং মহাকাল |
সেই মশাল-দাবানলে
বাংলা দাউ দাউ করে জ্বলে |

সিঙ্গুর লুঠের পরে
রাজার সাহস গেল বেড়ে |
তাই নানান ছলে নামে
লুঠতে জমি নন্দীগ্রামে |
মুসলিম আজান দেবার পাশে
হিন্দু পুজোয় যেথা বসে |
সেথা গণ-প্রতিরোধ দেখে
তুচ্ছ বিবেক তুলে রেখে |
নৃশংস হত্যালীলা চলে
নারীর ইজ্জত যায় দলে |
অসংখ্য নর-নারী-শিশু হত
বাংলা হিসাব জানবে না তো |
হলো রক্তে রাঙা ভূমি
তবুও ছাড়ে নি তিলেক জমি |

দুষ্ট কবির ব্যথা বুকে
ধন্য এই বীরগাথা লিখে |

ছায় ধিক্কার ভরা মেঘে আকাশ
গর্জে দামিনী জানায় হুতাশ
বাতাস ফেলিছে দীর্ঘশ্বাস
ভূমি বলে এ যে নরকের বাস
নদী বলে আমি করি হাস্-ফাস্
বয়ে বয়ে ছিন্ন দেহ অথবা পূর্ণ লাশ |

ক্ষতবিক্ষত আজ 'বাংলার মুখ'---
এই কাজ করে রাজা পেল কোন সুখ?

. ************** কলকাতা ৩০/৩/২০০৭            
সূচির পাতায় ফেরত      

মিলনসাগর
*
আমি নই কবি                                   আবৃত্তি শুনুন

আমি নই কবি
নই বুদ্ধিজীবী
আমি পরিযায়ী পাখীর মত
ঘর বার করি শুধু
বারে বারে ভেসে যাই
আবার ফিরে আসি
দু দিন পর
আবার ভেসে যাই
আবার ফিরি
আবার ফিরে যাই

কোনো বন্ধনই আমাকে বেঁধে রাখে না---
সন্তানের প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠা দেখার ঐশ্বরিক আনন্দ
প্রেয়সীর অশান্ত বাহুডোর
মায়ের মমতা ভরা অঞ্চলের ছায়া

নীল সমুদ্রের ঢেউয়ের চূড়া আমার আসল ঠিকানা
আমি বিজয় সিংহের মত ভেসে পড়ি
তাইতো তাঁর দেশ সিঙ্গুরে
রাজবাহিনীর লুণ্ঠন দেখে
এখনও পড়ে আছি
তারপর সেই লুঠের মিছিল পৌঁছলো নন্দীগ্রাম
তারপর দেগঙ্গা
তারপর ইতিহাস

লিখেছি
কবিতা
অন্তরের বেদনা, ক্ষোভ, ক্রোধ, জ্বালা উদ্ধতভাবে মিশিয়ে
তাই এ ধৃষ্ট কবিতা
তবু আমি নই কবি
নই বুদ্ধিজীবী
প্রতিটি বন্দরে নাকি আছে আমার ঘর
আমি চপল
খল
আমি দুষ্ট
তাই আমি দুষ্ট কবি

তবে যাবো
যেতে তো হবেই
না গেলে কি খাবো
আমার তো শিল্পও নেই কৃষিজমিও নেই

. ************** কলকাতা ৩০/৩/২০০৭            
সূচি
পাতায়
ফেরত      


মিলনসাগর
*
দায়                                             আবৃত্তি শুনুন  


দায় নিয়েছেন মাথায় রাজা
দায় নিয়েছেন মাথায়!
দায় নিয়েছেন নন্দীগ্রামে
'দুঃখজনক' ঘটায় !

ধন্য হলে বঙ্গবাসী
ধন্য তোমারা হলে!
রাজা মোদের ধন্য করেন
এই একটি কথা বলে!

মাসের পর মাস কেন
মানুষ ছিল ক্ষেপে?
তবু কেন ঢুকতে গেলে
রাষ্ট্রযন্ত্র চেপে?

কেন তাঁদের মাথায় দিলে
মিথ্যে অপবাদ?
মৌলবাদ আর মাওবাদের
আছে যাতায়াত?

কেন, সুবোধ পুলিশ সামনে রেখে
পিছনে হার্মাদ?
কার হুকুমে চললো গুলি
কেউ গেল না বাদ?

কারা লুঠলো সেদিন
শত শত নারীর লাজ?
কারা শিশু চিরে সেদিন
ভাসিয়ে সারে কাজ?

দায় নিয়েছ বললে বটে
শুভ্র বসন প'ড়ে |
তিলেক অনুতাপের আভাস
চোখে নাহি পড়ে |
যেন ধন্য করছো, ভাবটি এমন---
এতেই খুশি থাকো!
বাধা পেলে আবার হবে
সেইটে মনে রেখো!

দুষ্ট কবি বলে ---
আরো হাজার প্রশ্ন রবে |
আজ না হোক কাল তোমাকে
জবাব দিতেই হবে ||

. ************** কলকাতা ৩১/৩/২০০৭            
সূচি
পাতায়
ফেরত      
গত ২৮ মার্চ ২০০৭ তারিখে কলকাতার নেতাজী ইনডোর
স্টেডিয়ামে এক ভাষণকালে মূখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রামের ঘটনার জন্য দায়
স্বীকার করেছেন |

মিলনসাগর
*
আইনের শাসন!                                   

তোমার আইনের শাসন!

খাবার জল ঠিক নেই
রাস্তাঘাট নেই
ল্যাম্প পোস্ট আছে
বাতি নেই!
থানায় গেলে
দারোগা বলে
দাঁড়া! পার্টিকে দেখি ব'লে!
তবুও চুপ ছিলাম
কেনা গোলাম!
এত দিন ধরে তোমারই চিহ্নে
ছাপ দিয়ে তো এলাম!
তাই সবাই ভেবেছে
তোমার আইনের শাসনে
সব ঠিকঠাকই চলছে!
যেদিন চাইলে ভিটামাটিটুকু
আর থাকতে পারিনি
এই প্রথম তোমাকে বললাম - না!
তোমার ক্যাডার আর পুলিশ
তাতে মানলো না!
জীবন অসহ্য করে তুললে!
তাই নিজেদের কায়দায়
তোমাকে আটকেছিলাম |

ওমনি তোমার মনে হলো
আর নেই আইনের শাসন!
আইন চাই! আইন চাই!
বলে আমাদের কচুকাটা করলে!
হাতের সুখ মিটিয়ে নিলে!
মেটালে দেহের ক্ষুধা!

যতদিন তোমরা ঢুকতে পারোনি
কি খারাপ ছিলাম?

দুষ্ট কবি দেখলো--
'আইনের শাসন' বলতে বলতে
যেদিন এলে
সেদিনই
আইন হল ধর্ষিতা!
বাংলা হল কলঙ্কিত |

. ************** কলকাতা ২/৪/২০০৭               
সূচি
পাতায়
ফেরত      
১৪ই মার্চের গণহত্যার পর মূখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন
যে সেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতেই এই অভিযান করা হয় |

মিলনসাগর
*
পতন                                          আবৃত্তি শুনুন  

এখন কি পতনের সময় চলছে?

ভক্তির চূড়া থেকে
ভর্ত্সনার অতল গহ্বরে!

সত্যের ধ্রুব নক্ষত্রলোক থেকে
মিথ্যা-রাহুর করাল-গ্রাসে!

মনুষ্যত্বের দেবতুল্য পরাকাষ্ঠা থেকে
পিষাচ-তত্বের পঙ্কিলতায়!

শ্বেত-শুভ্র বসনের জ্যোতির্ময় ছটা থেকে
কালিমা-লিপ্ত কলঙ্কিত পরিধানে!

কিশোর কবির সর্বজন বন্দিত কাব্য থেকে
দুষ্ট কবির অজ্ঞাতকুলশীল ছন্দে!

. ************** কলকাতা ২/৪/২০০৭              
সূচি
পাতায়
ফেরত      

মিলনসাগর
*
প্রেমের কবিতা                           আবৃত্তি শুনুন

কত দিন হলো
প্রেমের কথা মুখে আনিনি |
সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রাম দেখার পর
অনেকেরই জীবন ওলট পালট হয়ে গেছে |
তবু তো বেঁচে থাকতে হবে,
এখনও বেঁচে আছি যখন!
আর, বাঁচতে হলে
ক্ষুধা-তৃষ্ণা-সুখ-দুঃখ
এসব তো আসবেই |
সঙ্গে অমোঘ আসার কথা 'প্রেম'!
তায় বসন্ত কাল জানান দিয়ে চলে গেল!

কোথায় প্রেমের কবিতা?
প্রেয়সীর হাত ধরতে গিয়ে---
নিজের থেকেই হাতটা মুঠো হয়ে
আকাশে উঠে যায় ধিক্কারে |
ওষ্ঠাধর চুম্বন করতে গিয়ে দেখতে পাই
ঠোঁটের কোণ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে |
শরীর স্পর্ষ করতে গিয়ে চোখে ভেসে ওঠে
সর্বাঙ্গে নির্যাতনের চিহ্ন |

জীবনের ভিতটাই নাড়িয়ে দিয়েছ তুমি |
তাই দুষ্ট কবির প্রেমের কবিতা এখন দূর অস্ত |

এখনও তোমাকে দেখি জনসভায় ভাষণ দিতে---
কৃষি মোদের ভিত্তি শিল্প মোদের ভবিষ্যত!

. ************** কলকাতা ২/৪/২০০৭              
সূচি
পাতায়
ফেরত      

মিলনসাগর
*
মিছিলে অরাজনীতি!                 আবৃত্তি শুনুন

এখন অরাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীদের মিছিলে
কলকাতা রোজ ছেয়ে যায় |
উত্তর থেকে দক্ষিণে
লাগে যানজট্ |
তবু কিছু বদলায় নি |
সেই কে বাম কে বাম নয়
তার তকমা বুকে এঁটেই তাঁরা আসে !
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অত রক্তও
সব ধুয়ে মুছে একাকার করতে পারে নি!

দুষ্ট কবি তাই যায়
এমন মিছিলে
যেখানে বাম ডান
চলে পাশাপাশি
তাঁদের পতাকা উড়িয়ে!

. ************** কলকাতা ২/৪/২০০৭              
সূচি
পাতায়
ফেরত      

মিলনসাগর
*
মিছিলে দুর্ভোগ!                        আবৃত্তি শুনুন

আজকাল যানজট্ বড্ড বেশী হচ্ছে
বড্ড কষ্ট হয় সবার |
নিত্যযাত্রীদের বড় দুর্ভোগ |

এত মিছিল দিয়ে কি হবে?
অনেকের তো পতাকাও নেই হাতে!
অনেক মিছিল আবার তাড়াতাড়ি পারও হয় না |
রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে কি সব আঁকে!
শালাদের মরণও হয় না
সব ব্যাটাকে নন্দীগ্রামে পাঠিয়ে দাও!

ওই যে নন্দীগ্রামের গণহত্যা---
তারই তো প্রতিবাদ করছে ওরা |

তা করুক না
প্রতিবাদ তো অন্য উপায়েও করতে পারে |
আজ্ঞে, কেমন অন্য উপায়, যদি একটু বলেন |
আমতা আমতা....তার পর কাট্ |

২৬দিন অনশনে বসেছিল ওরা |
তাতে কি চিঁড়ে ভিজেছিল?
তখন তো শালা মজা দেখছিলে!
খুনি সাম্রাজ্যবাদরাও লজ্জা পেয়েছে তাই দেখে!

তবুও আমাদের রাজা এখনও সুন্দর!
সব চেয়ে সুন্দর!
সুনীল গাঙ্গুলী যখন সেটা বলেন,
দুষ্ট কবির সেটা সত্য বলে মেনে নেওয়াই উচিত!

সুনীলবাবুও তো পথে নেমে
এক দিন যানজট্ করেছিলেন!


. ************** কলকাতা ২/৪/২০০৭              
সূচি
পাতায়
ফেরত      

মিলনসাগর
*
সুখী গৃহকোণে                             আবৃত্তি শুনুন

এঁরা দাঁড়িয়ে আছে উচ্চবিত্ত হবার
এস্কালেটরে নিরন্তর এগিয়ে যাবার স্রোতে
সুখী গৃহকোণ এঁদের ঠিকানা
দুষ্ট কবি এদের দেখতে পায়
পীক-আওয়ারের চার্টার্ড বাসে
বাড়ী টু অফিস
অফিস টু বাড়ী
একটু ফাঁকা পেলেই
শপিং মল নয়তো কোনো
ঝাঁ চকচকে মালের দোকান
বাড়ী ফেরার পথে বাইপাসের ধারে সস্তায়
ফুলকপি কিনতে গিয়ে
অথবা জব-সাইটে জগাদার চায়ের দোকানেও
ক্রেডিট কার্ড ফেসিলিটি চাই

সিঙ্গুর?
ওই তো মমতার জন্যই যত গণ্ডোগোল
শিল্প ছাড়া কি হবে দেশের বলুন তো
টাটা?
নো কমেন্টস
নন্দীগ্রাম?
ওটা আবার কোন ব্র্যাণ্ড
আমরা তো ভাই ব্র্যাণ্ড বুদ্ধ!


. ************** কলকাতা ২/৪/২০০৭              
সূচি
পাতায়
ফেরত      

মিলনসাগর
*
মিছিলে বুদ্ধিজীবী                       আবৃত্তি শুনুন

এখন অরাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীদের মিছিলে
কলকাতা রোজ ছেয়ে যায়
বুদ্ধিজীবী হবার এই বিপদ
এ শহরে কত রকমের জীবীকা
সুতরাং কত রকমের জীবী
কই তাদের তো কেউ বলে না পথে নামতে
যত দায় কেবল বুদ্ধিজীবীদের

অনেক বুদ্ধিজীবীর ফিরিয়ে দেবার মত কিছুই নেই
নাম নেই ধাম নেই
দুষ্ট কবির মত
ভাত টিপে দেখার মত পিশে ফেললে
কোনো অবিচুয়ারি কলামেও নাম উঠবে না
পরের নির্বাচনে তার ভোট ঠিকই পড়ে যাবে
তাঁদের ভয়ের কারণ থাকতেই পারে
পাড়ার চেনা কেউ যদি দেখে ফেলে এই সব মিছিলে

বামপন্থী মিছিলগুলো একটু সেফ সেদিক দিয়ে
নন্দীগ্রামে যা করলে
প্রতিবাদ না করে উপায় ছিল না
কিন্তু তবুও
হে রাজন
তোমার বিরোধী দলের সাথে যাই নি


. ************** কলকাতা ৩/৪/২০০৭              
সূচি
পাতায়
ফেরত      

মিলনসাগর
*
মিছিলে কবিতা                           আবৃত্তি শুনুন

কাগজ ভরিয়ে ফেলি লিখে লিখে
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা

সিঙ্গুরের মানুষের জমি চলে গেছে
তাদের মেয়ে জ্বলে গেছে
কৃষকের আত্মহনন শুরু
নন্দীগ্রামের মানুষের রাতে ঘুম নেই
সেদিনের পর
কত মানুষ এখনও হাস্পাতালে যুঝছে
কত মানুষ আর নেই
কতজনকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না কোনোদিন
কেউ কেউ ফিরে আসছে
পচা গলা অর্ধদগ্ধ মাংসপিণ্ড হয়ে
এ পোড়া কবিতা পাঠকের কাছে
পৌঁছে দেবার চেষ্টা করি
বই পাড়ায় বড় ছোট মেজ
প্রকাশকের দরজায় টোকা দিয়ে
ঘেয়ো কুকুরের মত বিতাড়িত হই
দুষ্ট কবি
নাম শুনিনি জন্মে
তার উপর সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা
যেন এইডস এর রুগী
ফিরে আসি চুপচাপ
বুঝি
তাদেরও এখানে থাকতে হবে

দিন বদলাবেই
আরও কবিতা লিখি
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা
এখন প্রতিবাদী মিছিলে
কলকাতা রোজ ছেয়ে যায়
এখন এইসব মিছিলে সিঙ্গুরের কবিতা
পড়ার মন নিয়ে মানুষ আসে
সেখানেই আমার কবিতা বিলি করে যাই


. ************** কলকাতা ৩/৪/২০০৭              
সূচি
পাতায়
ফেরত      
খবরে প্রকাশ গতকাল খেজুরি থেকে একটি শিশুর দেহাবশেষ
পাওয়া গেছে |

মিলনসাগর
*
কান্না-বিলাসী রাজা!                    আবৃত্তি শুনুন

তোমার দেশে ছিল কি সব
হরষে আত্মহারা ?
চোক্ষে পড়ে নি কি কভু
দুখের অশ্রুধারা?

জানি, তোমায় ঘিরে থাকে
আনন্দ বন্দন!
তোমার মুখোশ টাঙিয়ে রাখার ঘরের
নামও নন্দন!

তাই কি ভাবলে - দেখি, মানুষ
কাঁদলে কেমন লাগে?
মেরে কেটে উজার করলে--
যাতে, মানুষ কাঁদতে থাকে?

হে মহান রাজা! আসো যদি
নন্দীগ্রামে এখন
দেখবে সেথায় মোদের শুধু
শুষ্ক, ক্রুদ্ধ নয়ন |

এমন কান্না কাঁদালে বাপ্
চক্ষু অশ্রুহারা |
এমন তোমার কাঁদানে গ্যাস
দৃষ্টিই গেল হারা!

দুষ্ট কবির শোনা - যত হাসি
তত নাকি কান্না!
নিঠুর-রাজা কাঁদায় চাষি
যারা, সুদিন কভু পান না!


. ************** কলকাতা ৪/৪/২০০৭              
সূচি
পাতায়
ফেরত      
এখনও নন্দীগ্রাম ও খেজুরিতে বোমাবাজি, সন্ত্রাস চলছেই |

মিলনসাগর
*
রুখে দাঁড়াও!                               আবৃত্তি শুনুন  

অনেক সয়েছ
অনেক মেনেছ
এতকাল শুধু
চুপটি থেকেছ
এবার সবাই গা ঝাড়া দিয়ে গর্জে উঠে দাঁড়াও ||

তোমার ভাইকে মারছে
বোনকে লুঠছে
দিকে দিকে শুধু
শ্মশান বাড়ছে
সুখ-নীড় ছেড়ে, বৈরিতা ভুলে, একসাথে রুখে দাঁড়াও ||

শিল্প গড়ছে?
চাকরি বাড়ছে?
বাংলাকে নাকি
স্বর্গ করছে !?
এই মিথ্যা প্রচার, ছুড়ে ফেলে সোজা সত্যের মুখে দাঁড়াও ||

লাখো ঘর ছাড়া
চাষি জমিহারা
শিল্পের পথে
এত খুন ঝরা !?
'চাই না এমন উন্নতি' ব'লে এক জোট হয়ে দাঁড়াও ||

আর ক্ষমা নয়
দুষ্ট কবি কয়
আর দোষারোপ
ভর্ত্সনা নয়
এই নরমেধকারী জগদ্দলকে মসনদ থেকে তাড়াও ||


. ************** কলকাতা ৪/৪/২০০৭              
সূচি
পাতায়
ফেরত      
এখনও নন্দীগ্রাম ও খেজুরিতে গোলাগুলি, বোমাবাজি, সন্ত্রাস
চলছেই | সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের ভয়াবহ আন্দোলনে পিছু হটে, গতকাল
কেন্দ্রীয় সরকার সেজ-নীতির কিছু পরিবর্তন ঘোষণা করেছেন |
জমি নেওয়ার ব্যাপারে সরকারের আর কোন ভূমিকায় না থাকার
প্রস্তাবে, সিপিএম দল ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন |

মিলনসাগর
*
জমির দখল                                  

চায়ের কাপে
ঢেউ তুলছে?
নন্দীগ্রামে
নাকি চলছে
শুধু জমি দখল করার লড়াই?

সিঙ্গুর খেজুরি
নন্দীগ্রাম হয়ে
সারা বাংলায়
পড়ছে ছড়িয়ে
মানুষের আজ মরণ বাঁচন লড়াই!

বাংলার চাষী
দখল চায় না |
জমি বেঁচে বেঁচে
দালালি খায় না |
বলছে - তাঁদের গর্ব চাষ করাই |

বলছে তাঁরা
যা আছে তা থাক,
তাঁদের জীবন
জিরাত্ ও খাক |
বাঁচতে চান, কারো খবরদারী ছাড়াই!

আসল দখল
কাকে বলে?---
মগজ দখল
ইজম্ ছলে!
আধেক বাংলা চলছে নিজের বিবেক বুদ্ধি ছাড়াই!

মগজ ধোলাই
হয় নি যাদের,
ত্রাসের কুহেলী
ঘিরছে তাঁদের!
গ্রামে গঞ্জে শহরে পাড়ায় পাড়ায়!

জমির দখল
বাজে কথা |
জীবন দখল
রুখছে সেথা
বাংলা মায়ের বীর সন্তান তাঁরাই |

মিলনসাগরে
দুষ্ট কবি
ধৃষ্ট কাব্যে
লিখছে সবই
যাতে তাঁদের কথা কখনো না হারাই ||


. ************** কলকাতা ৮/৪/২০০৭              
সূচি
পাতায়
ফেরত      
এখনও নন্দীগ্রাম ও খেজুরিতে গোলাগুলি, বোমাবাজি, সন্ত্রাস
চলছেই | এটা কি পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জমি দখলের লড়াই!

মিলনসাগর
*
খাণ্ডবদাহন                                  আবৃত্তি শুনুন  
              

সিঙ্গুর থেকে নন্দীগ্রামের
খাণ্ডবদাহনে
নিজের হাতে
যে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করেছ
তার আঁচ এসে লাগছে
বাংলার সারা গায়ে
সেই আঁচ এসে লেগেছে
বাংলার নবযৌবনের গায়ে

এই দুষ্ট কবি জানে
এখন কারও সাধ্য নেই
এই দাবানলকে প্রতিহত করার

এই অগ্নি
তোমাকে গ্রাস না করে
তৃপ্ত হবে না


. ************** কলকাতা ৯/৪/২০০৭              
সূচি
পাতায়
ফেরত      
দুদিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্বাচনে শাসক দলের
ছাত্র সংঘটন SFI হেরে গেলে, যথারীতি মারামারির ঘটনা ঘটে
এবং এর জেরে একটি অগ্নিকাণ্ড ঘটে | সেই ছুতোয় SFI আজ সারা
রাজ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বন্ধের ডাক দিয়েছিল!

মিলনসাগর
*
কালবোশেখী
কালবোশেখী
           আবৃত্তি শুনুন                       

কাল বোশেখী কাল বোশেখী
আবার তুমি এলে |
এমন ভীষণ রূপের ঘটা
কাদের তুমি দিলে ||

দিবাকরের দাবদাহ
ছাড়ায় যখন সীমা,
তখন তোমার দৈত্য হয়ে
ধরাতলে নামা ||

চৈত্র শেষে তাই তো তোমায়
দেখে ভাবি আমি,
কারা যেন এমন বেশে
আগেই গেছে নামি!

রাজার অত্যাচারে দেশে
মানুষ গেছে ক্ষেপে |
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে সাজছে
কাল বোশেখী রূপে ||

কাল বোশেখী তাপকে ধুয়ে
ঠাণ্ডা করে দাও |
এই রাজাকে আঁস্তাকুড়ে
ছুঁড়ে ফেলে যাও ||

বাংলা মায়ের জুড়াবে বুক,
কৃষক জীবন ফিরে পাবে |
দুষ্ট কবির কাব্য লেখার
ছুটির সময় তখন হবে ||


. ************** কলকাতা ১১/৪/২০০৭             
সূচি
পাতায়
ফেরত      
গত পরশু প্রথম কালবৈশাখী ঝড় উঠেছিল |

মিলনসাগর
*
হে কালবৈশাখী                             আবৃত্তি শুনুন  

চৈত্রের শেষে ক্লান্তির বেশে
অবসাদ ভর করে |
প্রকৃতি হেসে শিতল করে
কালবৈশাখী ঝড়ে ||

হে কাল বৈশাখী
তোমার অঝোর ধারায় স্নান করিয়ে এসো
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের তৃষিত মানুষকে
তাঁরা রণক্লান্ত, শ্রান্ত ---

সূর্য যখন আকাশ থেকে
আগুন ঝরিয়ে মারে |
কাল বোশেখী ঝড়ের ঢালে
রক্ষা তাঁদের করে ||

হে কাল বৈশাখী
তোমার ভীষণ প্রতিরোধ শক্তির খানিকটা
দিয়ে যাও সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের মানুষকে
তাঁরা রাজশক্তির রোষানলে জ্বলছে ---

কাল বোশেখী যাবার পথে
চিহ্ন রেখে যায় |
উদ্ধত সব মস্তক যত
গুঁড়িয়ে দিয়ে যায় ||

হে কাল বৈশাখী
তোমার ঝড়ের মত, রাজ-শক্তিকে মাথা নত
করে রেখে যাবার শক্তি দিয়ে যাও
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের মানুষকে
তাঁরা নির্জাতিত, ধর্ষিত, লুণ্ঠিত, নিঃস্ব ---

দুষ্ট কবির এটাই প্রার্থনা ||


. ************** কলকাতা ১১/৪/২০০৭             
সূচি
পাতায়
ফেরত      
গত পরশু প্রথম কালবৈশাখী ঝড় উঠেছিল |

মিলনসাগর
*
শুভ নববর্ষ ১৪১৪                         বৃত্তি শুনুন
আজ শুভ নববরষে
গেয়ে সবে শান্তির জয়গান
বাঙ্গালী মাতো নব হরষে
নাও এগিয়ে প্রগতির রথযান ||

সুখ-শান্তিতে ভর ঘর-সংসার
কর্ম-ক্লান্তিতে দাও সুখ-নিদ্রা
নব জীবনের আঁকো নীল-নকশা
ঝেড়ে ফেলে আলস্য তন্দ্রা ||

ঝেড়ে ফ্যালো ক্ষুদ্র স্বার্থ
ঝাড়ো যত ভয়-ডর-শঙ্কা
মাথা উঁচু, শিরদাঁড়া সোজা করে
গর্বে বাজাও রণ-ডঙ্কা ||

এই 'চোদ্দো-শো-চোদ্দো' বর্ষ
জেন, বাংলায় ইতিহাস গড়ছে
বহুকাল পরে ফের বাংলা
জ্বলে, ভারতকে আলোকিত করছে ||

'শিল্প না কৃষি' এই বুজরুকি
সোজা ধরে ছুঁড়ে ফেলে দাও
কৃষকের রক্তে শিল্পের বুনিয়াদ
সমূলে উপড়ে ভেঙে দাও ||

দুষ্ট কবি বলে আজ শুভদিনে
হও নব দেশ গড়তে আগুয়ান
পুরাতনী রসে ধুয়ে আত্মা
নবীন কে কর তুমি আহ্বান ||

. ************** কলকাতা ১৫/৪/২০০৭             
সূচির পাতায় ফেরত
 
*
নির্বাণ                                             আবৃত্তি শুনুন

সিদ্ধার্থ কুমার জেন
জরা-ব্যাধি-মৃত্যু হেন
বিশ্ব জুড়ে হয় তা কেন
জানতে গিয়ে বসেন দীর্ঘ তপস্যায় |

কৃচ্ছসাধন চালিয়ে সেথা
নির্বাণ-লাভ পথের দেখা
পেয়ে হলেন 'বুদ্ধ' একা
বোধি বৃক্ষের তলায় বসে সাবেক বুদ্ধ গয়ায় |

আছেন বুদ্ধ মোদের বায়ে
পিতৃদত্ত নামটি গায়ে
মার্ক্স ঋষির শিষ্য হ'য়ে
সর্বহারার মোক্ষলাভের পথের খোঁজ করেন!

তেইশ বছর রাজের পরে
জ্যোতি যখন বিফল হেরে,  
পুঁজি-মাহাত্ম্য মনে ধ'রে
বুদ্ধও পুঁজিপতি ধরতে মাঠে নেমে পড়েন!

অবশেষে জ্ঞান হল তাঁর
পুঁজি-নিবেশের গোপন কথা
জ্ঞান চক্ষুর মালিক যথা
নির্বাণ লাভ ক'রে ভাবেন, তিনিও এখন 'বুদ্ধ'!

পুঁজিপতিদের দেখান ঘষ্টে
শাসক কত কঠোর হস্তে
প্রজা মারেন উঠতে বসতে
দেশের মানুষ সদাই ত্রাসে থাকে পুঁজির বাধ্য |

নির্বাণ পাওয়া রাজা যেথায়
দুষ্ট কবি থাকেন সেথায়
নিজের অবুঝ মোটা মাথায়
বোঝেন যেটা, লেখেন তিনি 'ধৃষ্ট কাব্য' নামে যথাসাধ্য |


. ************** কলকাতা ১৬/৪/২০০৭             
সূচি
পাতায়
ফেরত      
যখন বোদ্ধারা বলছেন যে জমি রক্ষা আন্দোলন পুঁজিপতিদের কাছে
ভুল বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে, তখন তাঁদের আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণিত
করে এই রাজ্যে নিত্য নতুন পুঁজি নিবেশের প্রস্তাব নিয়ে ভিড়
করছেন দেশী বিদেশী পুঁজিপতিরা | ১৪ তারিখের খবরে প্রকাশ এ
রাজ্যে কৃষিভিত্তিক শিল্পে আমেরিকান পুঁজিনিবেশের জন্যে একটি
দল এসেছিলেন!

মিলনসাগর
*
পুঁজি নিবেশের মাপকাঠি!               আবৃত্তি শুনুন  

মনে পড়ে?
তিয়ান-আন-মেন স্কোয়ার!
তিন হাজার তাজা প্রাণ!
দুনিয়া জুড়ে ধিক্কারের ঝড়
তারপরেই
বাঁধভাঙ্গা পুঁজি
চীনের প্রাচীর ডিঙিয়ে
ঢুকে যায় ফরবিড্ডেন সিটিতে!

মনে পড়ে?
গুজরাত!
তিন মাস ধরে
মৃত্যুর পদযাত্রা চলেছিল সেথা!
পুঁজির ঢল নেমেছে সেখানেও!

এটাই সত্য!

বাংলায় যবে থেকে
সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রাম!
তবে থেকে এখানেও লেগেছে
পুঁজির ভীড়!
দেশী-বিদেশী-আমেরিকান!

* * * * * * *  

হোলি খেলে প্রজার রক্তে
মত্ত যত নরপতি,
পুঁজির নিবেশ তত বাড়ে,
তাই, নিবেশের মাপকাঠি!
রাজ-সন্ত্রাস, বলে দুষ্ট কবি,
পুঁজি টানার চাবিকাঠি!

. ************** কলকাতা ১৬/৪/২০০৭             
সূচি
পাতায়
ফেরত      
যখন বোদ্ধারা বলছেন যে জমি রক্ষা আন্দোলন পুঁজিপতিদের কাছে
ভুল বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে, তখন তাঁদের আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণিত
করে এই রাজ্যে নিত্য নতুন পুঁজি নিবেশের প্রস্তাব নিয়ে ভিড়
করছেন দেশী বিদেশী পুঁজিপতিরা | ১৪ তারিখের খবরে প্রকাশ এ
রাজ্যে কৃষিভিত্তিক শিল্পে আমেরিকান পুঁজিনিবেশের জন্যে একটি
দল এসেছিলেন!

মিলনসাগর
*
দুষ্ট কবির ধৃষ্ট কবিতা