বহ্নিশিখা কোথায় ছুঁলে...
সাগরিকা হোড়-এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন
বহ্নিশিখা কোথায় ছুঁলে
মানবে, আগুন জ্বলছে !
আর কত বার মারলে আমায়
মানবে, আমায় মারছে!
আমি তোমার পাশের বাড়ি ---
সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম!
আজকে শুধু জ্বলছি আমি,
জ্বলবে কাল তোমার ধাম!
হে বাঙালী! আবার ভাবো---
আগুন কিন্তু ছড়ায়!
দাঁড়ায় না সে জাত-বিচারে,
সব্বাইকে জড়ায় |
আগুন যখন মাথায় খাটো,
যদি না ঝাঁপিয়ে কাটো,
সর্বভুকের মতো বেড়ে,
গিলবে তোমায় সে তো!
দুষ্ট কবির দুষ্ট চিত্ত,
বলে --- "বাংলা আরও জ্বলুক!
সেই আগুনে এক হয়ে যাক
'আমার' - 'তোমার' তালুক |"
তবেই যদি সবাই মিলে
পথে নেমে পড়ে,
আর গণহত্যার নায়কদের
বাংলা ছাড়া করে |
. **************
কলকাতা ১১/১২/২০০৭ সূচির পাতায় ফেরত
আর একটি নতুন কবরের সন্ধান পাওয়া গেছে নন্দীগ্রামের
মহেশপুরের কাছে পারুলবাড়িতে ধান ক্ষেতের ভেতর !
মিলনসাগর
খল রাজা
রাজা তুই মিথ্যেবাদী খল!
রাজা তোর সর্বনেশে দল!
রাজা তুই করবি কত ছল?
এখন খুলেই সেটা বল!
সুদিনের কথা ব'লে এলি!
গদিতে ব'সেই পাল্টি খেলি!
মিষ্টি পুঁজির স্বাদে ভুলে
ঝরাস প্রজার চোখের জল |
সদা নাড়িস কাঠি-কল!
তোর মন্ত্রে হলাহল!
গণতন্ত্রের আড়ে পাঠাস
বিরোধীদের অস্তাচল!
বাঙালী গ্রামে গঞ্জে দখল
লুঠ তরাসে হৃতবল |
হার্মাদ নামী স্যাঙ্গাৎ, তোর,
মানুষ মারার কল!
ঝুলিয়ে তালা কারখানা-কল
ফন্দি মারার, শ্রমিক সকল!
বর্গা চাষার কাড়িস জমি,
ঠেকিয়ে বন্দুকের নল!
বলেন মহান টাটা সালেম
পুঁজি নিবেশের স্বর্গে এলেম
এমন রক্ত-চোষা-রাজার
দেশেই ঢালি পুঁজির ঢল!
গায়ে প্রগতির নামাবলি
মুক্তবায়ুর কবর দিলি
ঢাকতে তামাম কালো ক্ষতে
ঢাললি মৌলবাদের জল!
বলে দুষ্ট কবি --- শোন্,
তোর শাসনের দিন গোন্,
আর কতকাল সইবে, তোকে
ভোটে আনার পাপের ফল?
. **************
কলকাতা ১১/১২/২০০৭ সূচির পাতায় ফেরত
আর একটি নতুন কবরের সন্ধান পাওয়া গেছে নন্দীগ্রামের
মহেশপুরের কাছে পারুলবাড়িতে ধান ক্ষেতের ভেতর !
মিলনসাগর
কতজনকে তোমরা স্তব্ধ করবে!
সাগরিকা হোড়-এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন
মৌলবাদকে বিকিয়ে মাথা,
তাদের সুরে মিলিয়ে কথা,
কতজনকে তোমরা স্তব্ধ করবে!
কতজনকে ফাঁস দিয়ে গলে,
তাদেরই সুরক্ষার ছলে,
আসলে তোমরা তাদের বন্দী করবে!?
জ্বালিয়ে যানবাহন পথে,
রচিয়ে জবর নাটক, যাতে
মনে হয় - এই, দাঙ্গা বুঝি লাগবে!
সেই আগুনেই মৌলবাদীর
ফতোয়ায় মাথা নোয়াও যদি,
ভাবছো, তোমরা ভোটের বাক্স ভরবে!?
ওই দ্যাখো ওঁরা নামছে পথে,
দুষ্ট কবিও তাঁদের সাথে,
এখন তাঁরা মৌন মিছিল করবে |
ওঁরা কণ্ঠ ছেড়েই বাঁচতে জানে,
শাসক যদি সে কথা না মানে ,
এর পর তাঁরা গর্জ্জে পথ চলবে!
চললে ছলের এ পথ ধরে,
“এই মহামানবের সাগর তীরে”**-র
সোনা-বেলায় শুধু পঙ্করাশিই খেলবে!
কোটি কোটি রুদ্ধ কণ্ঠ,
হয়ে নির্ভিক, হয়ে অশান্ত,
একই স্বরে গর্জ্জে কথা বলবে!
একই স্বরে গর্জ্জে পথ চলবে!
. ************** কলকাতা ২৩/১২/২০০৭ সূচির পাতায় ফেরত
** এই লাইনটি রবীন্দ্রনাথের ভারত তীর্থ কবিতা থেকে উদ্ধৃত
লেখিকা তসলিমা নাসরিন কে এ দেশ থেকে বিতাড়িত করার জন্য ২১শে নভেম্বর ২০০৭ তারিখে
পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং মৌলবাদীদের আঁতাতের ফলে একটি আপাত-দাঙ্গার সৃষ্টি করা হয় পার্ক
সার্কাস অঞ্চলে | মাত্র চার ঘন্টার ঢিল ছোঁড়াছুঁড়ি ও ডজন খানেক যানবাহন জ্বালিয়ে দেবার পর সেনা
তলব করা হয়! যেখানে নন্দীগ্রামে ১১ মাস তথাকথিত আইনের শাসন না থাকলেও সেনা তলব করার
কথা না ভেবে সরকার শাসকদলের ক্যাডার তলব ক'রে মূখ্যমন্ত্রীর ভাষায় "...paid back their own coin..."
করেছিলেন!
ক'দিন আগে একটি টিভি চ্যানেলের কাছে তসলিমা জানিয়েছিলেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা তিনি
কার্যত গৃহবন্দী | তাঁকে সুরক্ষা দেওয়ার নামে মৌলবাদীদের দিকের ঝোল টেনে তাঁকেই গৃহবন্দী করে
রেখে শাসানি দেওয়া যে হয় এইভাবেই থাকো নয়তো দেশ ছেড়ে চলে যাও | এটা মেনে নেওয়া যায় না |
এর প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে তসলিমাকে কলকাতায় ফেরানো এবং তাঁর ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর
দাবীতে, ২২শে ডিসেমবর কলকাতার একাদেমি অফ ফাইন আর্টস থেকে শিল্পী-সাহিত্যিক এবং সাধারণ
মানুষ একটি মৌন মিছিল করেন ধর্মতলার নন্দীগ্রাম মঞ্চ পর্যন্ত |
এই ঘটনা বা কবিতাটির সম্বন্ধে আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে এখানে ক্লিক করুন ...
মিলনসাগর
সবুজে সবুজ ছিল
সোনালী সেনগুপ্ত-র কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন
সবুজে সবুজ ছিল নীলে ঘন নীল,
নির্মল জল ছিল বায়ু অনাবিল |
গোলাভরা ধান ছিল মাছভরা বীল,
উঠোনে চড়ুই কাক আসমানে চিল |
হয়তো ছিল না বাড়ি সাত মঞ্জিল,
সাধারণ ঘরে ছিল দরিয়ার দিল |
যদিও ছিল না সেথা কুবেরের মেহেফিল,
জীবনের দুখে ছিল সুখও সামিল |
কত মান অভিমান কত মুশকিল,
তারই মাঝে মাঝে ছিল হাসি খিল্ খিল্ |
মায়ে ঝিয়ে ঝগড়ার মাঝে চড় কিল্,
তবু ভালোবাসা ছিল মনে ছিল মিল |
ছিল না লাভার্স লেন, পার্ক কিবা ঝিল,
তবু সেথা প্রেম ছিল মনে স্বপ্নীল |
শহরের স্টেডিয়াম গ্যালারি অমিল,
খেলা ছিল খোলা মাঠে, পথে সর্পীল |
হঠাৎ এলো সে দেশে রাজা দর্পীল,
পুঁজি ধোয়া জামা গায়ে, মন পঙ্কিল |
ধানক্ষেতে গাড়ি চাই হাঁকিয়া কহিল্
ছিনিয়ে সে সব কিছু তুলিলো পাঁচিল |
দুষ্ট কবির ঘর অতল সলিল,
সব ফেলে গায় সে এ দুখের দলিল |
. **************
কলকাতা ৩০/১২/২০০৭ সূচির পাতায় ফেরত
মিলনসাগর
এই বাঙালী শোন!
দেবাশিস রায়-এর সুরে ও কণ্ঠে "ভাঙো বাস্তিল" অ্যালবামের এই গানটির
এক ঝলক শুনুন এখানে ক্লিক করে . . .
এই বাঙালী শোন!
তোকে গুণ করেছে কোন্
অল্প কিছু পাইয়ে দেবার
নামের কপট-ছল ?
তোর চিত্ত আজ বিকল |
হ'রেছে তোর মান ইজ্জৎ,
মগজ ধুয়ে সাফ ক'রে তোর
বঙ্গজ আত্মাটিকে
করেছে দখল!
তবুও তোরা দেখেই চলিস
ফ্লাই ওভার, শপিং মল!
সেই সুযোগে পুলিশটাকে,
পাঠিয়ে সোজা মায়ের ভোগে,
গণহত্যার মিছিল করে
তোদের শাসক দল!
তোরা শুধু দেখেই চলিস
ফ্লাই ওভার, শপিং মল!
চোখের উপর দিন দুপুরে,
গ্রাম কে গ্রাম উজাড় ক'রে,
নির্বিচারে গণধর্ষণ,
চালায় এখন, যখন তখন,
দুঃশাসনের নবীন আদল
তোদের শাসক দল!
তবুও তোরা দেখেই চলিস
ফ্লাই ওভার, শপিং মল!
ওরে, গা ঝাড়া দিয়ে জাগ্!
জ্বালা বুকের আগ!
আর কতকাল থাকবি ভুলে,
মান ইজ্জৎ শিকেয় তুলে,
এই বেলা তুই বল!
মিথ্যা শান্তি-স্বপ্ন কাটিয়ে,
বাঙালী, তুই ঘুড়ে দাঁড়িয়ে
আবার মাথা তোল |
আর কত কাল দেখেই যাবি
ফ্লাই ওভার, শপিং মল!
পিশাচ-রাজার আসন ধরে
দে সজোরে দোল!
বহুকাল পর আবার তুই
মনের দরজা খোল!
চেয়ে দেখ, তোর বাংলা মায়ের
রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুণপোকার ছল!
পরের মাটি জীবন কেড়ে,
তাতে নতুন ভূবন গ'ড়ে,
নিজের সুখের দুধে-ভাতেই
থাকলে হবে বল ?
তোরা কি সব দেখেই যাবি
ফ্লাই ওভার, শপিং মল ?
দুষ্ট কবি নিত্য বলছে---
মাকে এরা বিকিয়ে দিচ্ছে,
প্রতিরোধ গড়ে তোল |
বরফের যুগ কাটিয়ে বুকে
আগুন জ্বালিয়ে তোল!
আর কত কাল দেখেই যাবি
ফ্লাই ওভার, শপিং মল ?
. ************** কলকাতা ৩০/১২/২০০৭
. সূচির পাতায় ফেরত
মিলনসাগর
নন্দীগ্রাম! কবিকণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন
স্বাধীন দেশে স্বাধীন জীবন!
জীবন থাকতে জীবন-মরণ,
জীবন-মরণ পণ করেছে,
মাথা ঝুঁকবে না !
নোয়াতে মাথা কাটতে হবে!
কাটতে হবে, কাটতে হবে!
কাটবে মাথা ক'বার দেখি,
তবুও ঝুঁকবে না!
ধরায়ে শায়িত কাটা মাথায়,
আসুক শান্তি (!), আসুক সূর্যোদয় (!)
জানবে তবু, সেই মাথাটি
শুধু ছিন্ন হয়ে চুমেছে তাঁর মাটি!
ঝোঁকে নি সে জীবন থাকতে---
এখনো ঝুঁকবে না!
দুষ্ট কবি ধন্য গেয়ে
এমন ভারতবাসীর জয়গান,
শত শোষন, শত শাসন,
শত রক্ত চক্ষু, ত্রাসন
তলেও যাদের মাথা ঝোঁকে না!
জীবন-মরণ পণ করেছে,
মাথা ঝুঁকবে না !
. **************
কলকাতা ১২/১/২০০৮ সূচির পাতায় ফেরত
দ্বিতীয় গণহত্যার পর নন্দীগ্রাম ঘুরে এসে দুষ্ট কবির এই
প্রতিক্রিয়া |
মিলনসাগর
নন্দীগ্রামের মাটি
নন্দীগ্রামের মাটি,
কী সুধা যে আছে তোমাতে ?
তোমার কেমন স্নিগ্ধ ছায়া ?
তাঁদের কেমন মুগ্ধ হিয়া ?
মানুষ বেঁধেছো তুমি
এ কোন মায়ার মায়াতে ?
নন্দীগ্রামের মাটি,
তোমার ফসল কেমন খাঁটি ?
কোন রসায়ণ ঢালো তাহাতে ?
এত রক্ত! এত খুন!
এত লুঠ! এত আগুন!
তারপরেতেও তোমার ছেলেরা,
তোমার মেয়েরা, মায়েরা, শিশুরা
কোন সাহসে বুক চিতিয়ে,
আগলে রাখে জীবন দিয়ে ?
কিসের মধু তোমার মাটির প'রে ?
কিসের এই পিছু টানা ?
কিসের সোনা ? কিসের দানা ?
কিসের রতন ? কিসের মানিক হিরে ?
দুষ্ট কবি অবাক ভাবে,
এমন গাঁয়েই থাকবে তবে
স্বাধীনতার কেতন শিখরে |
হোক না নাচন কোঁদন হাজার,
লাখো চেষ্টা পিষাচ রাজার,
কার সাধ্য, আজ নন্দীগ্রামকে কাড়ে ?
দেখি, কাদের ক'টা মাথা ঘাড়ে ?
. ************** কলকাতা ১২/১/২০০৮ সূচির পাতায় ফেরত
দ্বিতীয় গণহত্যার পর নন্দীগ্রাম ঘুরে এসে দুষ্ট কবির প্রতিক্রিয়া |
মিলনসাগর
মুক্তির দামামা বাজা কবিকণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন
মুক্তির দামামা বাজা আজ
বাংলার আকাশে বাতাসে |
সব কিছু কেড়ে নিতে চাইছে ওরা,
ক্ষমতার করাল গ্রাসে |
ওরা দাপিয়ে বেড়ায় তোর ভূমি |
বাংলার মায়াময়
আলোছায়া নদী মাঠ
স্বর্ণ-শস্য-প্রসবিনী |
চকচকে পৃথিবীর শকুনেরা এসে
এক হাতে কিনেছে তাদের, যারা
বসে আছে বিধাতার বেশে,
অপর হাতের থাবা বসাবেই বসাবে
বাংলার জল বায়ু মাঠ আর
অসহায় মানুষের মুখের গ্রাসে |
দুই চোখ মন খুলে, রোখ এই লুণ্ঠন
না বসে থেকে গৃহকোণে ত্রাসে |
দুষ্ট কবি বলে মুক্তির দামামা
বাজা আজ আকাশে বাতাসে |
********
কলকাতা ২৪/০১/২০০৮ সূচির পাতায় ফেরত
মিলনসাগর
মনের আগুন জ্বালা কবিকণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন
মনের আগুন জ্বালা,
তোরা মনের আগুন জ্বালা |
তিলে তিলে জমা ক্ষোভের পাহাড়ে
এই তো বিষ্ফোরণের বেলা !
সুভাষ - ভগত - ক্ষুদিরামেরা
জীবনের বাজী হেসে ধ’রে যান |
মায়ের শিকল ভেঙে মোদের
“স্বাধীনতার” মন্ত্র শেখান |
পড়ে পাওয়া সেই চোদ্দো আনা
হারিয়েছি আজ নিজের দোষেই |
বিকিয়ে মাথা, বিবেক, আবার
হয়েছি দাস স্বাধীন দেশেই |
ধিকি ধিকি রাগ,
ছাই-চাপা আগ,
দাউ দাউ ক’রে জ্বালা |
দুষ্ট কবির ছন্দে মেতে,
দাসখত ছিঁড়ে মুক্ত হ'তে,
মনের আগুন জ্বালা |
************
কলকাতা ২৭/০১/২০০৮ সূচির পাতায় ফেরত
মিলনসাগর
শাসক মহাত্রাস! কবিকণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন
শুধু আমিই থাকবো, আমি!
এই শোনো মোর বাণী!
আর কেউ যদি দেশে মাথা তোলে,
অথবা অন্য কোনো মত-এ চলে,
জেনে রাখো ---
তার ঘুচে যাবে বসবাস!
আমি শাসক মহাত্রাস!
আম-জনতার দরবারে গিয়ে,
হাত জোড় ক’রে, নাকে খত দিয়ে,
হয় সোজা পথে, নয় পেশি দেখিয়ে,
অথবা কুহক-মায়াজাল দিয়ে,
ভোট কে করেছি দাস!
আমি শাসক মহাত্রাস!
সেই মানুষেরই জীবন পুড়িয়ে,
“উন্নয়ন”-এর ফানুস উড়িয়ে,
হাড়িকাঠে মাথা ঠুসে দিয়ে দেখো---
নারকীয় উল্লাস!
আমি শাসক মহাত্রাস!
আমার অবাধ্য যত নর নারী,
তাদের ঠেঙিয়ে জমিজমা কাড়ি,
পড়িয়েছি আমি শিশুদেরও পায়ে
মামলার নাগপাশ!
আমি শাসক মহাত্রাস!
শুধু আমিই থাকবো, আমি!
শোনো অন্তর্যামী!
এতকাল আমি বিরোধীরে মেরে,
তাদের রক্তে জয়স্নান সেরে,
চির-বিজয়ীর ভূষণে তেড়ে
মাতিয়েছি লালাকাশ!
আমি শাসক মহাত্রাস!
এখন, যত “সহ-শাসক”!
চাই না, তারা উদ্ধত হোক!
হোক না তারা শরিক মোদের,
ঝরাই রক্ত নিমেষে তাদেরও,
নাহি ক’রে হাহুতাস!
আমি শাসক মহাত্রাস!
আমার পুলিশে, বেশিটাই আজ
আমাতেই মশগুল!
তাদের ট্রিগারে আঙ্গুল!
সুস্বাদু-প্রজা-রক্ত ঝরাতে
তারা যে শার্দুল!
পায়ের বদলে মাথায় নিশানা
দাগে সদা, নির্ভুল!
তিরিশ বছরে দেওয়া-নেওয়া ফলে
করেছি দলদাস!
আমি শাসক মহাত্রাস!
দুষ্ট কবি যতই করুক
কুত্সা, পরিহাস!
আমি দিচ্ছি এ আশ্বাস!
আমার রাজ্যে যদি কেউ ভুলে,
যদি কোনো দিন কেউ মাথা তোলে,
জেনে রাখো তার জ্বালাবো হাড়মাস!
”লাইফ হেল” করে তার পরিনতি---
অখণ্ড নরক-বাস!
আমি শাসক মহাত্রাস!
*************
কলকাতা ০৮/০২/২০০৮ সূচির পাতায় ফেরত
০৫/০২/২০০৮ তারিখে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটায়,
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর পুলিশের দ্বারা পাঁচজন ফরওয়ার্ড ব্লক
আন্দোলনকারীর গুলি করে হত্যার পর দুষ্ট কবির এই প্রতিক্রিয়া!
যদিও রাজ্যস্তরের ফরওয়ার্ড ব্লক নেতাদের এখনো মনে হয়নি যে
তাদের বামফ্রন্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে! এই ঘটনায় শেষ
পর্যন্ত পাঁচজন আন্দোলনকারী, একজন পুলিশ কর্মী মারা যান এবং
মৃতদের একজনের বাগদত্তা আত্মহত্যা করেন | তাঁদের এ মাসেই বিয়ে
হবার কথা ছিল |
মিলনসাগর
প্রতিরোধ কর
প্রতিরোধ কর প্রতিরোধ কর
যতদিন রবে শ্বাস |
ছেড়ো না জমি, দৃঢ় হাতে ধর
আন্দোলনের রাশ |
লুণ্ঠিত আজ স্বাধীনতা
দ্যাখো মায়ের মলিন বেশ |
নিজেদেরই রাজা নিজ হাতে লোঠে
নিজেদেরই গড়া দেশ |
লুণ্ঠিত আজ বাংলার মাটি
লুণ্ঠিত জমি জল |
লুণ্ঠিত নর লুণ্ঠিত নারী
তবু দ্যাখো মনোবল |
নিশ্চিত জয় | দুষ্ট কবির
এই স্থির বিশ্বাস |
ছেড়ো না জমি, দৃঢ় হাতে ধর
আন্দোলনের রাশ |
প্রতিরোধ কর প্রতিরোধ কর
যতদিন রবে শ্বাস |
************* কলকাতা ২০/০৩/২০০৮
. সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
মিলনসাগর
মনোবল কাকে বলে? কবিকণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন
আন্দোলনের মনোবলে ভাটা
এই কথা কে বলে?
তোমরা কি জানো
মনোবল কাকে বলে?
যখন
রাজদস্যু এসে ছলে বলে
পরিয়ে যায় শৃঙ্খল গলে |
কেড়ে নেয় ভিটা
কেড়ে নেয় জমি
নির্বিচারে সবারেই পোরে জেলে |
যখন
স্বাধীন দেশে
রক্ষক এসে
ঘরের দরোজা লাথিমেরে ভাঙে
শিশু কোলে মা
দাদু দিদিমা
একাধারে সবে প্রকাশ্যে হানে
রীতি নীতি সব ভুলে |
অপরাধ শুধু
খেটে দিনভর
নিজের পায়ে দাঁড়াতে জাওয়া
স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাওয়া
গরবে মাথা তুলে |
বিচার চাইতে
ঘোরে দ্বারে দ্বারে
সেখানেও রাজা কলকাঠি নাড়ে
এখনও অজানা, কি আছে কপালে!
বিচারের বাণী হয়ে বারি ধারা
মেটায় তেষ্টা যারা ন্যায়হারা
তৃষিত ধরায় বর্ষা যেমন খেলে |
কোথা সেই বাণী?
আশা হাতছানি!
এই পোড়া দেশে
বৃথা হয়রানি |
বলে,
এই লুঠ নাকি হয়েছে আইন বলে!
তবু তাঁরা রোজ
ধরিয়া ধীরজ
আশার কথা বলে |
খুইয়ে জীবন জীবিকা জমি
কোনো মতে দিন চলে |
দাঁতে দাঁত চিপে বেঁচে থাকে তাঁরা
ইষ্পাত মনোবলে!
দুষ্ট কবি সরবে ভাবে
এখনও কি ক'বে
পড়েছে ভাটা
সিঙ্গুরের মনোবলে ?
************* কলকাতা ২১/০৩/২০০৮
. সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
মিলনসাগর
দিচ্ছি না সিঙ্গুর কবিকণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন
আসুক ঝঞ্ঝা আগামীতে, পথ
হোক শত বন্ধুর |
দিচ্ছি না জমি, দিচ্ছি না জমি
দিচ্ছি না সিঙ্গুর |
অন্য কাহারো জীবন জমি
আমরা তো ভাই কাড়ছি না |
অন্য কাহারো পাকা ধানে মই
আমরা তো ভাই দিচ্ছি না |
আইন আদালত ন্যায় দিক তবে
কিছু চাহি নে কো আর |
প্রার্থনা নয়, স্বাধীন দেশের
ন্যুনতম অধিকার |
পরোয়া করি না চোখ রাঙানী
রাজার রক্ত চক্ষুর |
দিচ্ছি না জমি, দিচ্ছি না জমি
দিচ্ছি না সিঙ্গুর |
দুষ্ট কবিও এক স্বরে বলে
দিচ্ছি না সিঙ্গুর |
দিচ্ছি না জমি, দিচ্ছি না জমি
দিচ্ছি না সিঙ্গুর |
আসুক ঝঞ্ঝা আগামীতে পথ
হোক শত বন্ধুর |
দিচ্ছি না জমি, দিচ্ছি না জমি
দিচ্ছি না সিঙ্গুর |
************* কলকাতা ২১/০৩/২০০৮
. সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
মিলনসাগর
বাংলা! তোমার চোখের জলের সময় হয়েছে শেষ
. ---কবি কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন
বাংলা! তোমার চোখের জলের
সময় হয়েছে শেষ |
পুঞ্জিত করে দুঃখ-বেদনা,
পুঞ্জিত করে গঞ্জনা,
পুঞ্জিত করে বঙ্গনারীর
অহরহ শত লাঞ্ছনা,
জ্বালাও মনের লেলিহান শিখা
পুড়ে হোক সব শেষ |
বাংলা! তোমার চোখের জলের
সময় হয়েছে শেষ |
শাসকের চোখে,
লালসা ঝলকে,
লক্ লকে জিভে জল!
বঙ্গের বধূ, শুধু যেন তার
ক্ষুধা মেটানোর ফল!
মোছো মা অশ্রু,
ঝাড়া দিয়ে ধরো
ভীষণ রুদ্র-বেশ |
বাংলা! তোমার চোখের জলের
সময় হয়েছে শেষ |
পাশবিক মনে অচেনা কৃষ্টি,
সর্বগ্রাসী অনাসৃষ্টি |
মাগো, কোন ভুলে
জঠরেতে দিলে
এদেরও যতনে ঠাঁই?
দয়ামায়া হারা, নরাধম তারা,
বাঙালীর লেশ নাই!
মুছে আঁখিজল,
জ্বেলে ক্রোধানল,
এই পাপ করো শেষ |
বাংলা! তোমার চোখের জলের
সময় হয়েছে শেষ |
কেউ নেই পাশে,
আধা চুপ ত্রাসে,
কেউ পিঠে দাগে হুল |
করো সবে মিলে,
একসাথে জ্বলে,
এ বালাই নির্মূল |
জ্বলো হে বাংলা! কঠিন হৃদয়ে
ঝেড়ে সকল আবেশ |
বাংলা! তোমার চোখের জলের
সময় হয়েছে শেষ |
দুষ্ট কবির সহে না আর
এই নরকের পরিবেশ |
জ্বালাও মনের লেলিহান শিখা
পুড়ে হোক সব শেষ |
বাংলা! তোমার চোখের জলের
সময় হয়েছে শেষ |
************* কলকাতা, ২০/০৪/২০০৮
. সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
গতকাল খবরে প্রকাশ যে নন্দীগ্রামে স্বামী ও ছেলেকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে,
রাধারাণী আড়ি নামের এক মহিলাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে দিনের আলোয়! এই
রাধারাণী আড়ি কেই ২০০৭ সালের ১৪ই মার্চ এর গণহত্যার সময়েও গণধর্ষণ করা
হয় | শাসক দলের (CPIM) একই লোকজন এবারও এই কাজটি সম্পন্ন করেছে |
একটি মিছিল করতে করতে সেই এলাকায় ঢুকে হঠাতই এরা রাধারাণী দেবীর
বাড়িতে চড়াও হয় এবং স্বামী ও ছেলেকে পিটিয়ে তাঁকে গণধর্ষণ করে |
এদিকে রাজ্য জুড়ে সন্ত্রাসের ফলে প্রায় ১০০০ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আসনে
বিরোধীরা কোনো প্রতিনীধি দাঁড় করাতে পারে নি |
মিলনসাগর
অবরোধ
জন-সমুদ্র করিয়াছে অবরোধ |
লুণ্ঠিত-ভূমি, ফেরাতে এবারে,
লুণ্ঠিত-জনে ঘেরে চারিধারে,
ছাড়িবে না বুঝি সূচাগ্র জমি,
আমরণ প্রতিরোধ |
জন-সমুদ্র করিয়াছে অবরোধ |
অগণিত তাঁরা মহা-সমাবেশে
সংযত হয়ে বসিয়া রহিছে,
দুই চোখে যেন আগুন ঝরিছে,
শত অন্যায় অবিচারে আজ
তুলিবেই প্রতিশোধ |
জন-সমুদ্র করিয়াছে অবরোধ |
দুই চোখ মেলে দেখ যত দূরে,
রাজপথ ধরে হাজারে হাজারে,
রাজার প্রহরী ঠায় চূপিসারে,
জানে তারা আজ পারিবেনা আর
ভাঙিতে অবরোধ |
জন-সমুদ্র করিয়াছে অবরোধ |
কাণ্ডারির ওই হুংকারে কাঁপে,
অত্যাচারীর তরবারি, খাপে |
জন-সমুদ্র গর্জ্জন-ধ্বনি,
দুষ্ট কবি দূর-দেশে ’শুনি---
কুর্নিশ ক’রে হর্ষিত করে বোধ |
জন-সমুদ্র করিয়াছে অবরোধ |
********** এস. এস. রিভার এম্বলে, নোঙরে, উইপা, অস্ট্রেলিয়া, ২৬ অগাস্ট ২০০৮
. সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
জীবিকার দায়ে কবি সেই সময় জাহাজে কর্মরত অবস্থায় | সিঙ্গুরে টাটার
কারখানা অবরোধের বর্ণনা পরিবারের কাছে শুনে এবং ইন্টারনেটে খবর পড়ে
এই কবিতাটি লেখেন |
মিলনসাগর
ভাঙো বাস্তিল!
দেবাশিস রায়-এর সুরে ও কণ্ঠে "ভাঙো বাস্তিল" অ্যালবামের এই গানটির এক ঝলক শুনুন এখানে
ক্লিক করে . . .
বাংলা মায়ের আঁচল ছিঁড়ে,
শষ্য-শ্যামলা বসুমতী কেড়ে,
গড়ছে যেন বাংলার বাস্তিল!
তাই সমাবেত আজ লাখে লাখে,
সংঘবদ্ধ হুংকারে হাঁকে---
“ভাঙো বাস্তিল! ভাঙো বাস্তিল!
ভাঙো হে ভাঙো বাংলার বাস্তিল!”
এতকাল-ভয়ে স্তব্ধ জনতা,
সঞ্চিত করে যত ক্ষোভ-ব্যথা,
ফিরে পাওয়া নব কণ্ঠ-স্বরে
আকাশ বাতাস নিনাদিত ক’রে,
কয় রাজারে “ভাঙো তোমার পাঁচিল!”
“ভাঙো বাস্তিল! ভাঙো বাস্তিল!
ভাঙো হে ভাঙো বাংলার বাস্তিল!”
ভাঙো শোষণের বজ্র আঁটুনি,
ভাঙো সন্ত্রাস, রোখো হানাহানি,
ভাঙো সবগ্রাসী কায়েমী স্বার্থ,
ভাঙো অসত্য, ভাঙো অনর্থ,
রাজার আদেশ ধুলায় করো বাতিল!
“ভাঙো বাস্তিল! ভাঙো বাস্তিল!
ভাঙো হে ভাঙো বাংলার বাস্তিল!”
কত তাজা প্রাণ ঝরে গেছে হেথা,
ধানক্ষেত ঘিরে দেওয়াল গাঁথা!
ঘেরা জমি আজ ছিনে নিতে চায়,
দুষ্টকবিও কণ্ঠ মেলায়---
“গুঁড়িয়ে দাও! গুঁড়িয়ে দাও!
গুঁড়িয়ে দাও এই বাংলার বাস্তিল!”
“ভাঙো বাস্তিল! ভাঙো বাস্তিল!
ভাঙো হে ভাঙো বাংলার বাস্তিল!”
************ ৩১ অগাস্ট ২০০৮, এস. এস. রিভার এম্বলে, অস্ট্রেলিয়া,
. সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
টাটার কারখানা যে ভাবে দুর্গের মতো গড়ে তোলা হয়েছে, সেই কারখানার
অবরোধকে দুষ্টকবি ফরাসী বিপ্লবের সময়কার রাজ-কারাগার বাস্তিল এর
অবোরোধের সাথে তুলনা করেছেন |
মিলনসাগর
ওই দেওয়ালেরই ’পারে…
ওই দেওয়ালেরই ’পারে যে মেয়েটা পড়ে ছিল
তাঁকে কি তোমাদের মনে পড়ে ?
ওই দেওয়ালেরই ’পারে যে মেয়েটা পড়ে ছিল
সে তো আর ফিরবে না ঘরে |
কখনও গাঁয়ের পথে তাঁর বাবা কে দেখি
অন্য সবার মতো সেও আজ চলা ফেরা করে |
পড়ন্ত রোদে মাঠে, আর পাঁচজনা সাথে,
সেও বসে আড্ডার ভীড়ে |
খেলা সাঙ্গ করে অথবা কোচিং সেরে
পাড়ার মেয়েরা ঘরে ফেরে |
বুক ভরা ব্যথা নিয়ে সে তো শুধু পখ দেখে---
তার মেয়ে তো আর ফিরবে না ঘরে |
যার মেয়ে খোয়া গেল, তার মনের ব্যথা
রাজা তো শুনতেই চায় নি |
মান কবুল করে পারিষদে বলে গেছে---
“মিছে তোরা কেন গাস্ কাঁদুনি!
নিজেরাই মেরে মেয়েকে, মিছে কেন দোষ দিস্---
ভালো মানুষ তারা যত |”
বিকে যাওয়া পেয়াদারা বাড়ি বয়ে এসে
তদন্ত করে গেছে কত,
আসল আসামীদের আড়াল কি ভাবে করা
তারই ঘোঁট পাকিয়েছে শত |
কতভাবে মেয়েটিকে বদনাম করা যায়
তারই তরে থেকেছে অবিরত |
প্রতিবাদ ভেঙে দিতে, একদা-বিপ্লবী,
তাঁকে পাঠিয়েছে মরণের পারে |
“উপেন আছিস্ যত, জেনে রাখ্ তোরা সবে---
তোদেরও এ হাল হতে পারে!”
দুষ্ট কবি হাসে! মগজ ধোলাই কত
হলে এ কথা কেউ বলতে পারে!
কেনই বা বিপ্লব!? কাকে নিয়ে বিপ্লব!?
সে জবাবদিহি আজ কে করে ?
ওই দেওয়ালেরই ’পারে যে মেয়েটা পড়ে ছিল
সে তো আর ফিরবে না ঘরে |
. ********** এস. এস. রিভার এম্বলে, নোঙরে, গ্ল্যাডস্টোন, অস্ট্রেলিয়া,
. ১ সেপ্টেম্বর ২০০৮
. সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
মিলনসাগর
আমি বাঙালী ছিলাম!
আমি বাঙালী ছিলাম!
আমি বাঙালী ছিলাম! এখন আমি শুধুই বিশ্ববাসী!
সারা বিশ্বের খবর রাখি, কোথায় কে আগ্রাসী!
বছর ভর গ্রাম ঘিরে মারে সূর্যোদয়ের তরে
আমি ব্যস্ত থাকি মেলার মেলায় রাজ-প্রসাদের বরে!
রাজার দেওয়া চশমায় দেখি যতদূর অনুমতি
আমি বাঙালী ছিলাম! এখন বিবেক, ঠুলি পরা দিবারাতি !
আমি বাঙালী ছিলাম! এক কালে গলে ফাঁসীর আভরণ!
স্বাধীনতা দিতে শত ক্ষুদিরাম লড়ে গেছে আমরণ |
এখন আমি স্বাধীনতা কেড়ে বেচে দিতে চাই দেশ!
জমির দালালী, পুঁজির পাঁচালী, এতেই রয়েছি বেশ!
নিজ দেশে সারি নিজেদেরই মেরে দখল-অভিযান!
আমি বাঙালী ছিলাম! এখন আমার “হার্মাদ” নব-নাম!
আমি বাঙালী ছিলাম! অবসরে বাপ পেয়েছিল কিছু টাকা |
কত বুঝিয়েছি - বিপ্লবে ঢালো, রাখে নি সে কথা, বোকা!
দাদাদের বাণী, তাই আমি মেনে করেছি সে কাজ শেষ,
বুড়োটাকে মেরে টাকা কড়ি কেড়ে, তহবিলে করি পেশ |
রক্তীম অভিনন্দনে গাঁথি কৃষক থেকে কবি |
আমি বাঙালী ছিলাম! এখন আমি শুধু মহা-বিপ্লবী |
আমি বাঙালী ছিলাম! এতকাল শুধু ব্যস্ত আন্দোলনে!
কার জন্য ? কেন বিপ্লব ? সে কথা কে রাখে মনে!?
আন্দোলনের প্রয়োজনে করি গ্রাম কে গ্রাম সাবাড়!
কচুকাটা করে বস্তায় ভরে লাশ ফেলি পারাবার!
ধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারি, তুলি চায়ের কাপে ঝড়!
আমি বাঙালী ছিলাম! এখন নিজেই খুঁড়ি নিজের কবর!
আমি বাঙালী ছিলাম! রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ভেঙে খাই!
চোখের উপরে নোবেল হাপিস! কার কি গেল রে ভাই ?
ভোটের আগে “বাংলা-বাঁচাও”, করি মাঝে মাঝে চিত্কার!
নির্বাচনের শেষে ঝেড়ে ফেলি শত “প্রতিশ্রুতি”-র ভার!
ভোট! শুধু ভোটেরই জন্য মরণ-বাঁচন সবার!
আমি বাঙালী ছিলাম! এখন শুধুই লিডার অথবা ক্যাডার!
আমি বাঙালী ছিলাম, বাংলাকে তাই দেখাই - ভালোবাসি!
বাংলাতে কাজ করতে বললে শত প্রতিবাদে ভাসি!
আমি বাঙালী পুলিশ - গাড়ি আটকিয়ে, যদি কিছুই নাহি পাই ---
বাংলাতে লেখা নম্বর কেন ? জরিমানা ঠেকাই!
আমি সগৌরবে বাঙালীকে দেই বাংলারই পথে বাঁশ!
আমি বাঙালী ছিলাম! এখন শুধুই হয়েছি কৃতদাস!
আমি বাঙালী ছিলাম! বাংলার বুকে বার বার ফিরে আসা
“...শঙ্খচীল শালিকের বেশে”, তবু হেথা ফিরে আসা |
করেছি দেশের এমন হালৎ ঘোলা-রাজনীতি-নামে,
বহু কাল ধরে স্থবির বাংলা, হৃদ-স্পন্দন গেছে থেমে!
আম জনতা সুযোগ পেলেই দেয় ছুট্ পরবাসে,
আমি বাঙালী ছিলাম! এখন আমার নাম - প্রায় ইতিহাসে!
আমি বাঙালী ছিলাম! আখের গুছাতে বাংলাকে করি ঢাল!
ঠেঙিয়ে কিছু ভিন-ভাষী, মোরা মেটাই মনের ঝাল!
ভুলে যাই মোরা, বাংলাকে “শেষ” করেছি আমরা নিজে!
ভুলে যাই হেথা, ভিন-ভাষীদেরও সম-অধিকার আছে |
রাজনীতি, ভাষা, ধর্ম, জাতের ভেদাভেদে জেরবার!
আমি বাঙালী ছিলাম! এখন কালের পাঁকে ডুবে যাওয়া সার!
ক্ষম হে বাঙালী দুষ্ট কবিরে, বুকে শেল যদি বিঁধে!
আমি বাঙালী ছিলাম! এখনও বাঙালী, তাই লিখি কথা সিধে |
. ********** এস. এস. রিভার এম্বলে, গ্ল্যাডস্টোন থেকে উইপা,
. অস্ট্রেলিয়া, ৫ অক্টোবর ২০০৮
. সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
ইট্যালিকস্ এ লেখা অংশটি কবি জীবনানন্দের “আবার আসিব ফিরে” থেকে
নেওয়া |
মিলনসাগর
গেলে যাক্
দেবাশিস রায়-এর সুরে ও কণ্ঠে "ভাঙো বাস্তিল" অ্যালবামের এই গানটির এক ঝলক শুনুন এখানে
ক্লিক করে . . .
যারা ফিরে যেতে চায় তারা যাক্
গেলে যাক্ গেলে যাক্ গেলে যাক্
তারা স্বর্গে গিয়ে গলা সাধুক্
আকাশগঙ্গা তীরে, অপ্সরাদের ভীড়ে
চক্-চকে দেশে বাসা বাঁধুক্
যারা ফিরে যেতে চায় তারা যাক্
গেলে যাক্ গেলে যাক্ গেলে যাক্
তারা যত খুশি মুখে রং চড়াক্
তারা যত ছোট গাড়ি চরে বেড়াক্
বাংলার মাটি নিয়ে ছিনিমিনি নয় আর
এই কথা তারা বুঝে যাক্
একমুঠো দিয়ে যারা “জীবন” কিনতে চায়
এমন লক্ষ্মীছাড়া যাক্
গেলে যাক্ গেলে যাক্ গেলে যাক্
যারা গেল গেল রবে কেঁদে ভাসে
তারা হাহুতাশে যাক্ ভেসে যাক্
যেনে রাখো “দেশ” বড় ব্যক্তি-বিশেষ থেকে
হোক তার টাকা ঝাঁকে ঝাঁক্
“সোনার হরিণ” দিয়ে দেশ কিনে নিতে চায়
তারা জাহান্নামের পথে যাক্
গেলে যাক্ গেলে যাক্ গেলে যাক্
দুষ্ট কবি বলে এ আপদ গিয়ে দেশ
রাহু-মুক্ত হয়ে যাক্
শিল্পের বুনিয়াদে কৃষকের রক্ত
এই দুনিয়ায় মুছে যাক্
নিজের শর্তে মোরা গড়বো নিজের দেশ
সে কথা না কেউ ভুলে যাক্
যারা ফিরে যেতে চায় তারা যাক্
গেলে যাক্ গেলে যাক্ গেলে যাক্
. ********** এস. এস. রিভার এম্বলে, উইপা থেকে গ্ল্যাডস্টোন,
. অস্ট্রেলিয়া, ১০ অক্টোবর ২০০৮
. সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
খবরে প্রকাশ - শ্রী রতন টাটা বলেছেন যে তাঁরা বাংলা থেকে ফিরে যাবেন |
মিলনসাগর
টাটা পালালো পাড়া জুড়ালো
টাটা পালালো পাড়া জুড়ালো স্বস্তি এলো দেশে |
ছয়-দুহাজার-ভোটে ছিলই টাটার কড়ি মিশে |
দালালীতে মান খুয়ে কী হিসেব দেবো শেষে |
এখন কড়ি চাইলে ফেরত, শুধবো রে ভাই কিসে?!
কত নাচন, কত কোঁদন, কত পাচন পিষে,
সবই গেল বাংলা দেশের মাটির সাথে মিশে |
টাটা গেল চুক্তি করতে নরেন মোদীর দেশে
ভুলেও তারে কয় না এখন মৌলবাদীর পিশে!
এতই যদি দেমাক, কেন করলি চুক্তি বসে ?
বুদ্ধ-মমতা-চুক্তি কেন মানলি না রে শেষে ?
দুশো পঁয়তিরিশ বনাম পঁয়তিরিশের দেশে
হিসেব কেন চটকে গেল ? দেখ্ তো আবার কষে!
নন্দীগ্রামের মাটি গেল, গেল সিঙ্গুর বসে!
উত্তরেতে যাই যাই রব করছে গোর্খা-দেশে!
সমতলের কোচ-রা বলে আমরা কম কিসে ?
মোদেশীয় ভাইরা চলে কামতাপুরি দেশে!
চা-বাগানের শ্রমিক মরে অনাহারে-ক্লেশে |
বন্ধ-কলের শ্রমিক পেটের দায়ে ভিক্ষু-বেশে |
কৃষিজীবীর রাতের ঘুম উধাও ভয়ে ত্রাসে---
এই বুঝি কাল হার্মাদ-রাজ কাড়বে জমি এসে!
মানুষ ক্ষেপে আগুন, ছৌ-লালমাটির দেশে!
হানাহানি খুন-খারাবী নিত্য চতুর্দিশে |
মানুষ কেন তুলছে হাতে অস্ত্র, জঙ্গী বেশে?
"মাওবাদী সব" বলেই খালাস, রাজা পরিশেষে!
বঙ্গেশ্বর বুদ্ধবাবু তথা বিমানবাবুর দেশে,
ভিসি থেকে পিওন পেয়াদা, তফাৎ উনিশ বিশে !
চালকলাটা তাদের কেবল, যারা “মোদের পাশে”,
“আমাদের লোক” না হলে ভাই থাকো আঙুল চুষে!
আর কতকাল এমনি করে চলবে খেলে-হেসে ?!
বাংলাদেশের ধৈর্য্য ঠেকেছে তলানিতে এসে!
বেশ তো ছিল তিরিশ বছর নিদ্রা-সর্বনেশে!
ভেতো-বাঙালী এমন করে জাগলো হঠাৎ কিসে ?!
একজনকে বোকা বানাস রোজ বসে বসে |
সব্বাইকে বোকা বানাস কয়েকটি বার, কশে |
সব্বাইকে সর্বসময় ধোকা দিবি কিসে ?!
শ্লেষ্মা দিয়ে দুষ্ট কবি জিঘায় কাষ্ঠ হেসে!
. ********** এস. এস. রিভার এম্বলে, উইপা থেকে গ্ল্যাডস্টোন, অস্ট্রেলিয়া,
. ১২ অক্টোবর ২০০৮
. সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
মিলনসাগর