মুন্সী কায়কোবাদের কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। |
প্রণয়ের প্রথম চুম্বন ( ১ ) মনে কি পড়ে গো সেই প্রথম চুম্বন! যবে তুমি মুক্ত কেশে, ফুলরাণী বেশে এসে, করেছিলে মোরে প্রিয় স্নেহ-আলিঙ্গন! মনে কি পড়ে গো সেই প্রথম চুম্বন? ( ২ ) প্রথম চুম্বন! মানব জীবনে আহা শান্তি-প্রস্রবণ! কত প্রেম কত আশা, কত স্নেহ ভালবাসা, বিরাজে তাহায়, সে যে অপার্থিব ধন! মনে কি পড়ে গো সেই প্রথম চুম্বন! ( ৩ ) হায় সে চুম্বনে কত সুখ দুঃখে কত অশ্রু বরিষণ! কত হাসি, কত ব্যথা, আকুলতা, ব্যাকুলতা, প্রাণে প্রাণে কত কথা, কত সম্ভাষণ! মনে কি পড়ে গো সেই প্রথম চুম্বন! ( ৪ ) সে চুম্বন, আলিঙ্গন, প্রেম-সম্ভাষণ, অতৃপ্ত হৃদয় মূলে ভীষণ ঝটিকা তুলে, উন্মত্ততা, মাদকতা ভরা অনুক্ষণ, মনে কি পড়ে গো সেই প্রথম চুম্বন! ********************* |
বিদায়ের শেষ চুম্বন ( ১ ) আবার, আবার সেই বিদায়-চুম্বন, আলেয়ার আলো প্রায়, আঁধারে ডুবায়ে যায়, স্মৃতিটি রাখিয়া হায় করিতে দাহন! ( ২ ) বিদায়-চুম্বন, উভয়েরি প্রাণে করে অগ্নি বরিষণ, উভয়ে উভয় তরে, আকুলি ব্যাকুলি করে, উভয়েরি হৃদিস্তরে যাতনা-ভীষণ! এমনি কঠোর হায় বিদায়-চুম্বন! ( ৩ ) প্রণয়ের মধুমাখা প্রথম চুম্বনে, শুধু সুখ সমুল্লাস ; এতে ঘন হাহুতাশ, কেবলি যে বহে হায় উভয়েরি মনে! ( ৪ ) সে চুম্বনে এ চুম্বনে কি দিব তুলনা, সে স্বর্গের পরিমল, এ মর্তের হলাহল, তাহাতে উল্লাস, এতে কেবলি যাতনা! ( ৫ ) সে যে শরতের স্নিগ্ধ সুধাংশু-কিরণ, মুহুর্তে মাতায় ধরা, এ যে শুধু ক্লেশ ভরা বৈশাখের ঘন ঘোর ঝটিকা ভীষণ! *********************** |
প্রেম-প্রতিমা ( ১ ) আমি দেখিতাম শুধু তারে! মধুর চাঁদনীময়ী মধুরা যামিনী, শশধর হাসিত অম্বরে! সে থখন ধীরে ধীরে, এসে এই নদীতীরে, গাইত প্রেমের গীত মাতায়ে ধরণী ; তাহার মধুর স্বরে মুকুতা পড়িত ঝ'রে নীরবে বহিয়া যেত আকুলা তটিনী! আমি দেখিতাম শুধু তারে! ( ২ ) সে আমার সুখে দুঃখে প্রাণের সঙ্গিনী! তারি তরে বেঁচে আছি ভবে! জীবন-জলধি-পাড়ে, আর কি পাইব তারে এক দুই করে আমি মাসদিন গণি! সে চাঁদ ওঠে না আর, ঢালে না সে সুধা ধার, আমি তার সে আমার --- শুধু এই জানি! সে আসিবে কবে! ( ৩ ) তাহারি চরণ চুমি বনকমলিনী ফুটিয়া উঠিত থরে থরে! সে নিতি উন্মুক্ত কেশে, ফুলরাণী-বেশে এসে দাঁড়াইয়া এই সরঃতীরে গাইত প্রেমের গান, আকুল করিয়া প্রাণ বিহগ শিখিত সেই প্রেমের রাগিনী! আমি দেখিতাম শুধু তারে! ( ৪ ) সে সদা কুসুম-সাজে এলাইয়া বেণী আমার এ প্রাণ নিত কেড়ে! চারিধারে পুষ্প-তরু, বায়ু ব'ত ঝুরু ঝুরু কোকিল তুলিত কত কুহু কুহু ধ্বনি! হেরি তার রূপরাশি, হেরি তার প্রেমহাসি, পাপিয়া আকুল প্রাণে হ'ত পাগলিনী! আমি দেখিতাম শুধু তারে! ( ৫ ) তাহারি রূপের ছটা উজলি ধরণী ঝরিয়া পড়িত চারি ধারে! আকাশে চন্দ্রমা-তারা, তারি প্রেমে মাতোয়ারা নয়নে খেলিত তার চঞ্চলা দামিনী! বুকেতে অমৃত-খনি কণ্ঠে সুধা-নির্ঝরণী সৌন্দর্য-সরসে সে যে ফুটন্ত নলিনী! আমি দেখিতাম শুধু তারে! ******************* |
কে তুমি ( ১ ) কে তুমি? --- কে তুমি? ওগো প্রাণময়ী, কে তুমি রমণী-মণি! তুমি কি আমার, হৃদি-পুষ্প-হার প্রেমের অমিয় খনি! কে তুমি রমণী-মণি? ( ২ ) কে তুমি?--- তুমি কি চম্পক-কলি? গোলাপ মতি তুমি কি মল্লিকা যুথী ফুল্ল কুমুদিনী? সৌন্দর্যের সুধাসিন্ধু, শরতের পূর্ণ ইন্দু আঁধার জীবন মাঝে পূর্ণিমা রজনী! কে তুমি রমণী-মণি? ( ৩ ) কে তুমি? --- তুমি কি সন্ধ্যার তারা, সুধাংশু সুধা-ধারা পারিজাত পুষ্পকলি বিশ্ব বিমোহিনী অথবা শিশির স্নাতা, অর্ধস্ফুট, অনাঘ্রাতা প্রণয়-পীযূষ ভরা,সোনার নলিনী! কে তুমি রমণী-মণি? ( ৪ ) কে তুমি?--- তুমি কি বসন্ত-বালা, অথবা প্রেমের ডালা, প্রাণের নিভৃত কুঞ্জে সুধা-নির্ঝরিনী! অথবা প্রেমাশ্রু-ধারা, শোকে দুঃখে আত্মহারা প্রেমের অতীত স্মৃতি, বিধবা রমণী! কে তুমি রমণী-মণি? ( ৫ ) কে তুমি?--- তুমি কি আমার সেই হৃদয়-মোহিনী? সেই যদি,---কেন দূরে? এস, এই হৃদি-পুরে এস' প্রিয়ে প্রাণময়ী, এস' সুহাসিনী! এস' যাই সেই দেশে,---ফুল ফুটে চাঁদ হাসে দয়েলা কোয়েলা গায় প্রাণের রাগিণী! জরা নাই---মৃত্যু নাই, প্রণয়ে কলঙ্ক নাই চল যাই সেই দেশে এস' সোহাগিনী! কে তুমি রমণী-মণি? ******************* |