মুন্সী কায়কোবাদের কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
১।  প্রণয়ের প্রথম চুম্বন   
২।  
বিদায়ের শেষ চুম্বন              
৩।  
সায়াহ্নে             
৪।  
প্রেম প্রতিমা   
৫।  
কে তুমি   
৬।  
দেশের বাণী          
  
      
      
*
প্রণয়ের প্রথম চুম্বন
( ১ )

মনে কি পড়ে গো সেই প্রথম চুম্বন!
যবে তুমি মুক্ত কেশে,
ফুলরাণী বেশে এসে,
করেছিলে মোরে প্রিয় স্নেহ-আলিঙ্গন!
মনে কি পড়ে গো সেই প্রথম চুম্বন?

( ২ )
প্রথম চুম্বন!
মানব জীবনে আহা শান্তি-প্রস্রবণ!
কত প্রেম কত আশা,
কত স্নেহ ভালবাসা,
বিরাজে তাহায়, সে যে অপার্থিব ধন!
মনে কি পড়ে গো সেই প্রথম চুম্বন!

( ৩ )
হায় সে চুম্বনে
কত সুখ দুঃখে কত অশ্রু বরিষণ!
কত হাসি, কত ব্যথা,
আকুলতা, ব্যাকুলতা,
প্রাণে প্রাণে কত কথা, কত সম্ভাষণ!
মনে কি পড়ে গো সেই প্রথম চুম্বন!

( ৪ )
সে চুম্বন, আলিঙ্গন, প্রেম-সম্ভাষণ,
অতৃপ্ত হৃদয় মূলে
ভীষণ ঝটিকা তুলে,
উন্মত্ততা, মাদকতা ভরা অনুক্ষণ,
মনে কি পড়ে গো সেই প্রথম চুম্বন!

*********************
বিদায়ের শেষ চুম্বন
( ১ )

আবার, আবার সেই বিদায়-চুম্বন,
আলেয়ার আলো প্রায়,
আঁধারে ডুবায়ে যায়,
স্মৃতিটি রাখিয়া হায় করিতে দাহন!

( ২ )
বিদায়-চুম্বন,
উভয়েরি প্রাণে করে অগ্নি বরিষণ,
উভয়ে উভয় তরে,
আকুলি ব্যাকুলি করে,
উভয়েরি হৃদিস্তরে যাতনা-ভীষণ!
এমনি কঠোর হায় বিদায়-চুম্বন!

( ৩ )
প্রণয়ের মধুমাখা প্রথম চুম্বনে,
শুধু সুখ সমুল্লাস ;
এতে ঘন হাহুতাশ,
কেবলি যে বহে হায় উভয়েরি মনে!

( ৪ )
সে চুম্বনে এ চুম্বনে কি দিব তুলনা,
সে স্বর্গের পরিমল,
এ মর্তের হলাহল,
তাহাতে উল্লাস, এতে কেবলি যাতনা!

( ৫ )
সে যে শরতের স্নিগ্ধ সুধাংশু-কিরণ,
মুহুর্তে মাতায় ধরা,
এ যে শুধু ক্লেশ ভরা
বৈশাখের ঘন ঘোর ঝটিকা ভীষণ!

***********************
 সায়াহ্নে

হে পান্থ, কোথায় যাও কোন্ দূরদেশে
কার আশে? সে কি তোমা করিছে আহ্বান?
সম্মুখে তামসী নিশা রাক্ষসীর বেশে
শোন না কি চারিদিকে মরণের তান!
সে তোমারে ওহে পান্থ, হাসিমুখে এসে,
সে তোমারে ছলে বলে গ্রাসিবে এখনি |
যেয়োনা একাকী পান্থ, সে দূর বিদেশে,
ফিরে এসো, ওহে পান্থ, ফিরে এসো তুমি |
এ ক্ষুদ্র জীবন লয়ে কেন এত আশা?
জান না কি এ জগত্ নিশার স্বপন?
মায়া মরীচিকী প্রায় স্নেহ ভালবাসা---
জীবনের পাছে ওই রয়েছে মরণ
হে পান্থ হেথায় শুরু আঁধারের স্তর ;
মৃত্যুর উপর মৃত্যু, মৃত্যু তার পর!

   ***********************
প্রেম-প্রতিমা

( ১ )
আমি দেখিতাম শুধু তারে!
মধুর চাঁদনীময়ী                          মধুরা যামিনী,
শশধর হাসিত অম্বরে!
সে থখন ধীরে ধীরে,                  এসে এই নদীতীরে,
গাইত প্রেমের গীত মাতায়ে ধরণী ;
তাহার মধুর স্বরে                   মুকুতা পড়িত ঝ'রে
নীরবে বহিয়া যেত আকুলা তটিনী!
আমি দেখিতাম শুধু তারে!

( ২ )
সে আমার সুখে দুঃখে প্রাণের সঙ্গিনী!
তারি তরে বেঁচে আছি ভবে!
জীবন-জলধি-পাড়ে,            আর কি পাইব তারে
এক দুই করে আমি মাসদিন গণি!
সে চাঁদ ওঠে না আর,            ঢালে না সে সুধা ধার,
আমি তার সে আমার --- শুধু এই জানি!
সে আসিবে কবে!

( ৩ )
তাহারি চরণ চুমি বনকমলিনী
ফুটিয়া উঠিত থরে থরে!
সে নিতি উন্মুক্ত কেশে,              ফুলরাণী-বেশে এসে
দাঁড়াইয়া এই সরঃতীরে
গাইত প্রেমের গান,                  আকুল করিয়া প্রাণ
বিহগ শিখিত সেই প্রেমের রাগিনী!
আমি দেখিতাম শুধু তারে!

( ৪ )
সে সদা কুসুম-সাজে এলাইয়া বেণী
আমার এ প্রাণ নিত কেড়ে!
চারিধারে পুষ্প-তরু,                 বায়ু ব'ত ঝুরু ঝুরু
কোকিল তুলিত কত কুহু কুহু ধ্বনি!
হেরি তার রূপরাশি,               হেরি তার প্রেমহাসি,
পাপিয়া আকুল প্রাণে হ'ত পাগলিনী!
আমি দেখিতাম শুধু তারে!

( ৫ )
তাহারি রূপের ছটা উজলি ধরণী
ঝরিয়া পড়িত চারি ধারে!
আকাশে চন্দ্রমা-তারা,         তারি প্রেমে মাতোয়ারা
নয়নে খেলিত তার চঞ্চলা দামিনী!
বুকেতে অমৃত-খনি                   কণ্ঠে সুধা-নির্ঝরণী
সৌন্দর্য-সরসে সে যে ফুটন্ত নলিনী!
আমি দেখিতাম শুধু তারে!

*******************
*
কে তুমি

( ১ )
কে তুমি? --- কে তুমি?
ওগো প্রাণময়ী,
কে তুমি রমণী-মণি!
তুমি কি আমার,      হৃদি-পুষ্প-হার
প্রেমের অমিয় খনি!
কে তুমি রমণী-মণি?

( ২ )
কে তুমি?---
তুমি কি চম্পক-কলি?
গোলাপ মতি
তুমি কি মল্লিকা যুথী ফুল্ল কুমুদিনী?
সৌন্দর্যের সুধাসিন্ধু,
শরতের পূর্ণ ইন্দু
আঁধার জীবন মাঝে পূর্ণিমা রজনী!
কে তুমি রমণী-মণি?

( ৩ )
কে তুমি? ---
তুমি কি সন্ধ্যার তারা,   সুধাংশু সুধা-ধারা
পারিজাত পুষ্পকলি
বিশ্ব বিমোহিনী
অথবা শিশির স্নাতা,    অর্ধস্ফুট, অনাঘ্রাতা
প্রণয়-পীযূষ ভরা,সোনার নলিনী!
কে তুমি রমণী-মণি?

( ৪ )
কে তুমি?---
তুমি কি বসন্ত-বালা,    অথবা প্রেমের ডালা,
প্রাণের নিভৃত কুঞ্জে
সুধা-নির্ঝরিনী!
অথবা প্রেমাশ্রু-ধারা,    শোকে দুঃখে আত্মহারা
প্রেমের অতীত স্মৃতি,
বিধবা রমণী!
কে তুমি রমণী-মণি?

( ৫ )
কে তুমি?---
তুমি কি আমার সেই
হৃদয়-মোহিনী?
সেই যদি,---কেন দূরে? এস, এই হৃদি-পুরে
এস' প্রিয়ে প্রাণময়ী,
এস' সুহাসিনী!
এস' যাই সেই দেশে,---ফুল ফুটে চাঁদ হাসে
দয়েলা কোয়েলা গায়
প্রাণের রাগিণী!
জরা নাই---মৃত্যু নাই, প্রণয়ে কলঙ্ক নাই
চল যাই সেই দেশে
এস' সোহাগিনী!
কে তুমি রমণী-মণি?

*******************
*
দেশের বাণী

কে আর বুঝিবে হায় এ দেশের বাণী?
          এ দেশের লোক যারা,
          সকলইতো গেছে মারা,
আছে শুধু কতগুলি শৃগাল শকুনি!
          সে কথা ভাবিতে হায়
          এ প্রাণ যে ফেটে যায়,
হৃদয় ছাপিয়ে উঠে --- চোখ ভরা পানি |
কে আর বুঝিবে হায় এ দেশের বাণী!
          এ দেশের লোক যত
          বিলাস ব্যসনে রত
এ দেশের দুঃখ কিছু নাহি বুঝে তারা |
          দেশ গেল ছারেখারে,
          এ কথা বলিব কারে?
ভেবে ভেবে তবু মোর হয়ে গেছে সারা!
          প্রাণভরা হাহাকার
          চোখ ভরা অশ্রুধার,
এ হৃদি যে হয়ে গেছে মরুভূমি-পারা!
এ দেশের দুঃখ কিছু নাহি বুঝে তারা?

            *******************