অন্তবিহীন পথ চলাই জীবন শুধু জীবনের কথা বলাই জীবন। জীবন প্রসব করে চলাই জীবন, শুধু যোগ বিয়োগের খেলাই জীবন।
শুধু সূর্যের পানে দেখাই জীবন, জীবনকে ভোগ করে একাই জীবন, একই কক্ষ্যপথে ঘোরাই জীবন, স্বপনের সমাধি খোড়াই জীবন, মনের গোপন ঘরে, যে শাপদ ঘর করে, তাকেই লালন করে চলাই জীবন।
ফুটপাথে বেওয়ারিশ শিশুরা জীবন, রাম, ইসলাম আর যিশুরা জীবন, অষুধের বিষপান করাই জীবন, চিকিত্ সাহীন হয়ে মরাই জীবন। যে মেয়েটা রোজ রাতে, বদলায় হাতে হাতে, তার অভিশাপ নিয়ে চলাই জীবন।
প্রতিবাদ প্রতিরোধে নামাই জীবন, লক্ষ্যে পৌঁছে তবে থামাই জীবন, স্বপ্নে বেচা কেনা করাই জীবন, দেয়ালে ঠেকলে পিঠ লড়া ই জীবন, প্রতিদিন ঘরে ফিরে, অনেক হিসেব করে, 'এ জীবন চাই না', তা বলাই জীবন।
আমার পরিচয় - বেকার যুবক আমি, সম্বল একটাই দৈন্য। ডিগ্রির ভাঁড়ারেতে তবু কিছু মাল আছে, পকেটের ভাঁড়ারটা শুন্য। যেদিকেই তাকাই না, দেখি জন-অরণ্য,সে অরণ্যেই দেখি মানুষেরা পণ্য, বধুকে পোড়ানো হয়, অধর্ম জয়ী হয়, মানুষের রক্তে দিনলিপি সই হয় । হাস্পাতালের বেডে টিবি রোগীর সাথে খেলা করে শুয়োরের বাচ্চা। তবু রেডিওটা টিভিটার সাথে সুর ধরে - সারে যাঁহা সে আচ্ছা।
লাঞ্ছনা গঞ্জনা মাখা অভিযোজনে রপ্ত করেছি নিজেকে, অসত্ হবার বহু বহু প্রচেষ্টায়, ব্যর্থ করেছি নিজেকে। চাকরির স্ন্ধানে সুখতলা খয়ে যায়,গঙ্গার জল তবু একই ভাবে বয়ে যায়, ঘুশ্, ঘুশ্,ঘুশের এক ঘুস-ঘুসে জ্বরে, গোটা দেশ চিত্কার করে ডাকে 'ডাক্তার', ডাক্তার উড়ে আসে ঋণের অষুধ নিয়ে, গঙ্গার পুজো হয় গঙ্গার জল দিয়ে। বছরের অন্তে, বাজেটের যন্ত্রে পিশে দেই জীবনটা, গচ্চা। তবু রেডিওটা টিভিটার সাথে সুর ধরে - সারে যাঁহা সে আচ্ছা।
প্রার্থির যোগ্যতা অথবা অভিজ্ঞতা, এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের দীনতা, কোনো কিছুই কোনো কিছুকেই ঢাকে না। আর, 'লোক' অথবা 'বিধান' যে দিকেই তাকান, রাজনিতিজ্ঞ হতে যোগ্যতা লাগে না। হাজার প্রতিশ্রুতি বাতাসেই বয়ে যায়, 'চলছে না, চলবে না', তবু তাই হয়ে যায়। কত শত শয়তান, হতে চায় ভগবান, আল্লা না বড় রাম, এই চলে অবিরাম। খুনোখুনি লাঠালাঠি, অবিরাম অনুক্ষণ,এদিকে তোমার আমার পেটেতে ছুঁচোর ডন। সমাজ বিরোধি কিছু, করে বলে মাথা উঁচু, সমাজবাদের পথই সাচ্চা। তবু রেডিওটা টিভিটার সাথে সুর ধরে - সারে যাঁহা সে আচ্ছা।
ভিড় করে ইমারত, আকাশটা ঢেকে দিয়ে, চুরি করে নিয়ে যায় বিকেলের সোনা রোদ। ছোটো ছোটো শিশুদের শৈশব চুরি ক'রে, গ্রন্থ-কীটের দল বানায় নির্বোধ। এরপর চুরি গেলে বাবুদের ব্রীফ-কেস অথবা গৃহিণীদের সোনার নেকলেস, সকলে সমস্বরে, একরাশ ঘৃণা ভরে চিত্কার করে বলে --- চোর, চোর, চোর, চোর, চোর।
প্রতিদিন চুরি যায় মূল্যবোধের সোনা, আমাদের স্বপ্ন, আমাদের চেতনা। কিছুটা মূল্য পেয়ে ভাবি বুঝি শোধ-বোধ, ন্যায় নীতি ত্যাগ করে, মানুষ আপোস ক'রে, চুরি গেছে আমাদের সব প্রতিরোধ। এর পর কোনো রাতে, চাকরটা অজ্ঞাতে, সামান্য টাকা নিয়ে ধরা প'ড়ে হাতে নাতে। সকলে সমস্বরে, একরাশ ঘৃণা ভরে চিত্কার করে বলে --- চোর, চোর, চোর, চোর, চোর।
প্রতিদিন চুরি যায় দিন বদলের আশা, প্রতিদিন চুরি যায় আমাদের ভালবাসা। জীবনী শক্তি চুরি গিয়ে আসে নিরাশা, সংঘাত্ প্রতিঘাত্ দেয়ালে দেয়ালে আঁকা, তবু চুরি যায় প্রতিবাদের ভাষা। কখনো বাজারে গেলে, দোকানী কিশোর ছেলে, কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে, ওজনেতে কম দিলে, সকলে সমস্বরে, একরাশ ঘৃণা ভরে চিত্কার করে বলে --- চোর, চোর, চোর, চোর, চোর।
যদি চাও সফলতা, মেনে নাও এই সিস্টেম, ফেলে দাও শ্রোতের মুখে, আদর্শ বিবেক ও প্রেম। এ সমাজ মানবে তোমায়, গাইবে তোমারই জয়গান।
আমি কোনে বাউল হব, এটাই আমার এমবিশান্।
বড় যদি চাইবে হতে, সেখানেও লোক ঠকানো। সতভাবে বাঁচো বাঁচাও, একথা লোক ঠকানো। সতভাবে যাবে বাঁচা, বড় হওয়া যাবে নাকো। শুধু কথা না শুনে, বড়দের দেখেই শেখ। এ সবই থাক তোমাদের, আমি বড় চাই না হতে, ধুলো মাখা পথই আমার, তুমি চোড়ো জয়োরথে। শত লাঞ্ছণা দিও, কোরো আমায় অসম্মান।
তবু আমি বোকাই হব, এটাই আমার এমবিশান্।
কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ বা ইঞ্জিনিয়ার, কেউ হতে চায় ব্যবসায়ী, কেউ বা ব্যারিস্টার, কেউ চায় বেচতে রূপোয়, রূপের বাহার চুলের ফ্যাশান।
আমি ভবঘুরেই হব, এটাই আমার এমবিশান্। আমি কোনে বাউল হব, এটাই আমার এমবিশান্। তবু আমি বোকাই হব, এটাই আমার এমবিশান্।
বারোটায় অফিস আসি, দুটোয় টিফিন। তিনটেয়ে যদি দেখি সিগন্যাল গ্রীন, চটিটা গলিয়ে পায়ে, নিপাট নির্দ্বিধায় চেয়ারটা কোনোমতে ছাড়ি। কোনো কথা না বাড়িয়ে, ধীরে ধীরে পা বড়িয়ে চারটেয় চলে আসি বাড়ি। আমি সরকারি কর্মচারী। আমি সরকারি কর্মচারী।
আমি অফিসেতে বসে বসে আনন্দলোক পড়ি, টাডা থেকে ছাড়া পেল সঞ্জয়। আর টেবিলেতে ফাইল এসে জমে জমে দূর থেকে মনে হয় হিমালয় ! হপ্তায় হপ্তায় আন্দোলনের খেলা, টি-এ, ডি-এ বাড়ানোর জন্য। ফি মাসে মাসে যদি এক দিনও কাজ করি, অফিসটা হয়ে যায় ধন্য। কারো ফাইল পাস্ করে নির্লজ্জের মতো হাতখানা পেতে দিতে পারি। আমি সরকারি কর্মচারী। আমি সরকারি কর্মচারী।
(মা, মাগো, জগত্ জননী, অন্নদায়িনী মা আমার রক্ষা কোরো ! ) ঘুশ আমার ধর্ম ঘুশ আমার কর্ম ঘুশ নিতে কি শংসয় ? প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া এই দেশে অপরাধ ঘুশ খাওয়া কখনই নয়। তাই কারো ফইল পাস্ করে নির্লজ্জের মত হাত খানা পেতে দিতে পারি। আমি সরকারি কর্মচারী। আমি সরকারি কর্মচারী।
এই বেশ ভাল আছি। এই বেশ ভাল আছি। এই বেশ ভাল আছি, কর্ম কাজ নেই, গাড়ি ঘোড়া কিছু নেই, অফিস কাছারি নেই, হাজিরা কামাই নেই, শব্ দ বা পরিবেশ দূশন বালাই নেই, সময় দেই না বলে তেলে বেগুণ জ্বলে গিন্নীর রাগ নেই, টেলিফোনে ডাক নেই, শহরেতে কারফিউ, লোকজন কেউ নেই, এক-চার-চার ধারা, ফুটপাথে থাকে যারা, কেউ কোথ্ থাও নেই, নেই নেই কিছু নেই, তবুও তো আছে কিছু, বলতে যা বাধা নেই--
দু নয়নে ভয় আছে, মনে সংশয় আছে, ঐ ধর্মের বাঘ হেসে, আবার উঠোনে এসে, আশ্রয় চেয়ে যায় মানুষেরই কাছে। তাই, ভয় আছে দু নয়নে ভয় আছে, মনে সংশয় আছে।
ভেঙে গেলে জোড়া যায় মন্দির মসজিদ, ভাঙা কাঁচ, ভাঙা মন যায় না, রাম আছে, শ্যাম আছে, কোরাণী সেলাম আছে, রক্তলোলুপ কিছু হয় না। এদেশ টা ফাঁকা আছে, বিদেশের টাকা আছে, ধর্ম না গ্রাস করে আমাদের পাছে।
তাই, ভয় আছে দু নয়নে ভয় আছে, মনে সংশয় আছে।
এই বেশ ভাল আছি। এই বেশ ভাল আছি। এই বেশ ভাল আছি, ভাবার সময় আছে, তবুও ভাবনা নেই, পার্কে তে ঘোরা নেই, সিনেমায় যাওয়া নেই, উঠতি যুবকদের যাতনার সীমা নেই, শিহরণ আনে প্রেমে এমন বাতাস নেই, যুবতীর কটাক্ষ, চীরে দেয় এ বক্ষ, হায়রে এমন দিনে সেই অবকাশ নেই, চাল নেই, ডাল নেই, পয়সার দাম নেই, তবুও টিভির স্ক্রীনে খেলার বিরাম নেই। নেই নেই কিছু নেই, তবুও তো আছে কিছু, বলতে যা বাধা নেই--