প্রণব রায় চৌধুরীর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
ভাবী  প্রজন্মের জন্য         

ষাট বছরে বয়সে চেষ্টা করেও আর জোয়ান হওয়া যায় না
এখন মরার পরিকল্পনা করা উচিৎ কিন্তু বাঁচার স্বপ্ন না ।
যাদের এখন বয়স কম তারাই তো আরো দিন এ দেশে বাঁচবে,
তাদের  জন্যইতো আমাদের কুশলতা ও অভিজ্ঞতা লাগবে,       
যাতে আমাদের থেকে আরও আনন্দে তারা দিন কাটাতে পারে,  
ক্ষুদ্র স্বার্থ ভুলে গিয়ে  বৃহত্তর স্বার্থ আস্বাদ  করে ।
পার্থিব উন্নতির থেকে  তাদের বেশী দরকার মানসিক শান্তি  
যাতে তারা  পায় তাদের  জীবনে সুখ আনন্দ পূর্ণ পরিতৃপ্তি ।
এখন চাকরীর খাতায় নাম নেই আর কিছু পয়সা কামাই না বলে
খালি সময় কাটাবার জন্য কি আর দেশের উন্নতি করলে চলে  ।
তাইতো সে কাজ হয়ে যায় যেন  ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ান
নিজেকে নিজের বিবেকের কাছ থেকে যতটা পারা যায় বাঁচান ।
এটা  সত্যি বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা, যথেষ্টসময়   আছে আমাদের
তা  কাজে লাগান  ভাবী  প্রজন্মের জন্য, তাই তো আনন্দের ।
আমাদের বয়স হয়েছে এখন আমরা এ কথা নিশ্চয় বুঝতে পারি
জীবনে আর কি হলে জীবনটা হ’ত পারত আরও আনন্দেরই।
কায় মনোবাক্যে তাই সবাই মিলে এই চেষ্টা করা কি ভাল না
ভাবী প্রজন্ম যেন  সমষ্টির জন্য কাজ করে নিজের জন্য না ।
কাজ এমন হবে যেন  নিজের গোয়ালের গরুর দুধ নিজেই দুইছি  
তারপর নিজের হাতেই তা নিজের বাড়ীর লোককে খাওয়াচ্ছি ।                          

           
(
কবি বীতশঙ্কের লেখা ‘স্বাধীনতার পরে চাই সমোন্নতির স্বপ্ন’ কবিতাটির  
উপরে
)    


.        ***************************                                            
উপরে
*
কার্সিয়াং ভ্রমণ  

বর্ষার মধ্যে কদিনের  জন্য গিয়েছিলাম   উত্তরবঙ্গে
মেঘ বৃষ্টি যেখানে  পাহাড়ের সঙ্গে খেলে নানা  রঙ্গে ।
পথে যেতে  যেতে দেখলাম কিষাণগঞ্জের থেকে  কাছে  
ট্রেনলাইনে মালগাড়ির  আটটা  ওয়াগন  উলটে পড়ে আছে ।
এনজেপি  থেকে  শিলিগুড়ি   হয়ে  জীপে  গেলাম  কার্সিয়াং
সন্ধ্যার পথে  জোর  বৃষ্টির ছাঁট যেন সেতারের  টুঁ - টাং ।
ভয়ে ভয়ে ট্যুরিষ্ট লজে গিয়ে দেখি অনেক অনেক  জায়গা
একটা সুন্দর ঘর পেলাম  যেখান থেকে পাহাড়  দেখা  যায়গা ।
সারা দিন অভুক্ত,  ওদের ডাইনিং হলে  গিয়ে  ভাল খেলাম
বাইরে  বৃষ্টি ছিল  তাই বেশ  তাড়াতাড়ি  ঘুমিয়ে   পড়লাম ।
পরের দিন ভোর না হতেই ঘুম ভেঙ্গে দেখি আকাশ পরিস্কার
জানালা  দিয়ে দেখা যায় চাবাগান  লম্বা গাছ আর বড় পাহাড় ।
তলায়  স্কুল সেখানে  মাঠে  কিছু  ছেলে  বল নিয়ে  খেলছে
বলা  মাত্র লজ থেকে  সুবাসিত   গরম  চা  দিয়ে  গিয়েছে ।
গরম  জলে  চান  করে প্রাতরাস সেরে  পড়লাম  বেরিয়ে   
হাঁটা পথে সবুজের সমারোহ  নানা  স্কুল দিল চোখ  জুড়িয়ে  ।
গাড়ি  ভাড়া করলাম কাছাকাছি   জায়গা গুলো   ঘুরে দেখতে
ডাউহিল  পাহাড়ে  ছেলে  মেয়েদের স্কুল কলেজ  ঘুরতে ।
সুন্দর সাজান  ডিয়ার  পার্ক আর ফরেস্টের   মিউজিয়াম  
সংরক্ষিত লুপ্তপ্রায় মৃত প্রাণীপাখী প্রজাপতি দেখলাম ।
এর পরে  গিদ্দাপাহাড়ে গিয়ে দেখলাম  শরৎ  বসুদের  বাড়ি
যেখানে  হয় সুভাষ বসু র রাজনৈতিক জীবনের হাতে খড়ি ।
এখন হয়েছে নেতাজী  ইন্‌স্টিটিউট পরিচালিত  সংগ্রহশালা
এখনও যা উদ্বুদ্ধকরে ও বোঝায়  দেশপ্রেমের কি জ্বালা !
নামার  পথে  দেখি  রাস্তার ধারে  হয়েছে  ভিঁড়  লোকের   
এ পথ  নাকি  প্রশান্ত্ তামাঙ্গের দার্জিলিঙ্গে যাবার ।
বলতে কি হবে নাকি  প্রশান্ত্‌তামাঙ্গের সঠিক  পরিচয়   
বলেই দিই, ও নাকি অবশ্যম্ভাবী ইন্ডিয়ান আইডল হয়।
ওর  যে কি জনপ্রিয়তা তা না দেখলে  বিশ্বাস হতো  না
ছেলে মেয়ে বুড়ো বুড়ির এমন ভিড় যা বড় নেতা ও পান না ।
পুরো  টয়  ট্রেন লাইন  সুদৃশ্য ফুলদানী তে ফুল  দিয়ে সাজান
স্কুলের ছেলে মেয়েরা স্কুলড্রেস পরে লাইন করে দাঁড়ান ।
ধারের  বাড়ির  ছাদে বারান্দায় নেই  তিল ধারণের  জায়গা
চারিধারে  খালি  চেঁচামেচি  হট্টোগোল ‘আভি আ যায়েগা ‘ ।
এল  প্রশান্ত্‌তামাং অনেক  পরে  হুড খোলা  গাড়িতে  চড়ে
আগে পিছে  গোটা  দশেক  মোটরবাইক ও অন্য গাড়ি  ঘোরে ।
ওদের অঞ্চলের সংস্কৃতি অনুযায়ী সব ছোট  চাদর ছুঁড়ে দেয়
তামাং তা গাড়ির উপর জমিয়ে আবার  লোকেদের  ছুঁড়ে দেয়।
চাদরের ও হাত মেলানোর  জন্য লোকের কাড়াকাড়ি  যায় পড়ে
আর  অল্পবয়সী তামাং গরম  ও পরিশ্রমে অসুস্থ হয়ে পড়ে ।
কম্যান্ডোরা মিছিল থামিয়ে তাকে অন্য গাড়িতে  তুলে নেয়
ভিড়ের মধ্যে মিছিল আস্তে আস্তে কার্সিয়াং ছাড়িয়ে  যায় ।
আমাদের গাড়ি রাস্তার জ্যামে আটকালে এক বুড়ি আমায় বলে
‘You must vote for Tamang’ ও আমাদের  অঞ্চলেরছেলে বোলে ।
আমি সায় দিতেই  বুড়ি বলে
‘You will say that” তাহলে  কি  চলে ,
‘you must promise to vote for Tamang’ বলে গাড়ি আটকিয়ে  দিলে ।
আমি
‘I promise’ বললে হেসে বুড়ি গাড়ি চালাতে বলে ড্রাইভারকে
ফ্ল্যাগ নাড়িয়ে  এর মধ্যে নাচতে থাকে নিয়ে নিজের নাতনিকে ।
আমি ভাবি এক এক অঞ্চলে এক এক জন অধিবাসীকে  না নিয়ে
দেশের সব লোক  এই রকম করত প্রশান্ত তামাংকে  নিয়ে ,
প্রাদেশিক দেশীয় স্বার্থ মিলে  উদ্বুদ্ধ  করত  দেশপ্রেমকে
ভারত বহুদিন  আগেই সার্থক করত সুভাষ গান্ধীর স্বপ্নকে ।
যাই হোক  যা চাওয়া  যায়  তাই  তো  সবসময় পাওয়া  যায় না
দুঃখ  ভুলে আবার  বেড়াই  নয়তো  আনন্দ পাওয়া  যায়  না ।
পরের দিন সকালে  উঠে যাই দার্জিলিং ঘুম আর বাতাসিয়া  হয়ে
সারা পথেই এমন বৃষ্টিযে প্রকৃতি দর্শন হয় না, সময় যায় বয়ে ।
বেশ রাত্তিরে কার্সিয়াং লজে ফিরে খেয়ে দেয়ে জবর ঘুম দেই
পরের দুপুরে বেরিয়ে শিলিগুড়ি হয়ে এনজিপিতে রেলে পা দিই ।




.                 ***************************                                            
উপরে
*
দেশপ্রেম                         

দেশের আজ যা অবস্থা তাতে দেশ কোনটা তাই বোঝা দায়,
সবাই এখন ভারি একা, একসাথে থাকাতে নেই কারুর সায়।
কিন্তু যখন আমরা মানুষ, বাঁচতে গেলে জোট বাঁধতেই হয়,
তাই একটা দেখন মিলিত বাঁচা, সবাই যে যার ফায়দা চায়।
এটা সত্যি কথা যে আমরা প্রত্যেকেই জন্মগত ভাবে স্বার্থপর,
কিন্তু স্বার্থ রক্ষা করতেই আমাদের হতে হয়েছে গোষ্ঠী নির্ভর।
সেখান থেকে শুরু পরিবার, সেখান থেকে সমাজ আর দেশ,
ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষিত হবে যদি সবাই মিলিত স্বার্থ রাখে বেশ।
মিলিত স্বার্থ থাকতে পারে না যে যার নিজের স্বার্থ দেখলে,
মিলিত স্বার্থ নিজের স্বার্থ হয় সমাজ দেশকে নিজের ভাবলে।
নিজের স্বার্থ আর মিলিত স্বার্থের দ্বন্দ্ব চেষ্টা করে কমাতে  হবে,
দেশের লোকের এক সমাজ ও এক আচার আচরণ হতে হবে।
যেহেতু ভাবের আদানপ্রদান আর ধর্ম্ম মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট্য,
এক ভাষায় কথা বলা ও এক ধর্ম্মিয় অনুশাসন প্রথম অভিষ্ঠ।
আমাদের মত যেখানে লোকেদের নানা সমাজ, নানা ভাষা আর
নানা ধর্ম্ম, নানা ভৌগলিক বিভিন্নতা ও বিভিন্ন ব্যক্তিগত স্বার্থ
সেখানে এইসব বিভিন্নতা কমাতে মানসিকভাবে হতে হবে ব্যস্ত।
সারা দেশের লোককে এ মানসিকতা এক দেশপ্রেমই দিতে পারে,
দেশপ্রেমই মিলিত স্বার্থকে করে মুখ্য, ব্যক্তি স্বার্থকে গৌণ ক’রে।
বিভিন্নতা সৃষ্টি হতে লেগেছে সময়, অভিন্ন হতেও লাগবে সময়,
কিন্তু প্রক্রিয়া হতে হবে ইতিবাচক যাতে ধীরে ধীরে হয় সমণ্বয়।
সারা ভারতের যখন এক ভাষা এক মত কিন্তু নানা পরিধান হবে ,
দেশপ্রেম বিবিধের মাঝে মিলন এনে তখন দেশকে মহান করবে।


.                 ***************************                                            
উপরে
*
মানুষ               

কেউ আসে না , কেউ যায় না , চলে যায় শুধু দিন
আজ জন্মালাম , কাল বড় হলাম , পরশু মৃত্যুদিন ।
তবু তো দেখা যায়, কাল যে ছিল হোমো ইরেক্‌টাস্‌  
আজ সে রকেট স্পুট্‌নিকে চড়ে ছাড়িয়ে যায় আকাশ।
সূর্য্য নাকি অনেক তারার মধ্যে একটি ছোট্ট তারা
আগে নাকি তার গ্রহ ছিল না , শুধু জ্বলজ্বল করা ।
তারপরে কবে সৃষ্টি হয়েছে গ্রহ উপগ্রহ আর উল্কার
তখন নাকি ছিল না পৃথিবীতে উপায় কারুর বাঁচার  ।
ডাইনসরকেও হারিয়ে দিয়ে কবে নাকি মানুষ এসেছে
চোটখাট এক নিরীহ জীব কিন্তু সবাই হেরে গেছে ।
নিজের বাঁচার তাগিদে গড়েছে সমাজ ও পরিবার
কিন্তু নিজের কাছেই হেরে মরছে পদে পদে বারবার ।
যবে সে বুঝবে সবার এক হয়েই বাঁচতে তাকে হবে
তখনই মানুষ এক জন্তু না হয়ে সত্যি মানুষ হবে ।
                                               বুয়া -১/৩/০৮



.                 ***************************                                            
উপরে