@font-face { font-family: Ekushey Sumit; font-style: normal; font-weight: normal; src: url(https://www.milansagar.com/eot/EKUSHEY0.eot); } -->
কবি রবিন গাঙ্গুলীর সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
রাজ সিংহাসন          
রবিন গাঙ্গুলী

সিঙ্গুরের কয়েক হাজার গরীব ভূমিহীন চাষীরা আজ উদ্বাস্তু, কাল কি খাবে জানে না
আর নন্দীগ্রামের গরীব চাষী ও নারীরা আজ বন্দুকের নলের সামনে : কত মানুষ গুলি
খেয়ে মরলো আর কত হারিয়ে গেছে, কেউ জানে না, কেউ জানে না, সে কথা
সেদিন তুমি ক্ষমতায় এসেছিলে গরীবের হাত ধরে,
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে অসময়ে তুমি গরীবের বন্ধু হবে,
কিন্তু আজ তুমি এ কি করলে, জালিয়ানওয়ালা বাগকেও হার মানালে,
সাহেবরা গুলি চালিয়েছিল পুরুষদের উপর, আর তুমি তো নারী ও শিশুদের উপর,
কি দোষ করেছিল তারা? দশ পুরুষ ধরে সেই জমিতে চাষ করে
অর্ধনগ্ন অবস্থায় দু বেলা দু মুঠো ভাত কাপড় জোটাতো |
তুমি ভাত দিতে পারো না, কিন্তু ভাত কেড়ে নিতে পারো
তুমি ভাতের বদলে মটোর গাড়ীর স্বপ্ন দেখাও
ফ্রান্স এ ফ্যামিন হলে বলেছিল, ব্রেড নেই তো কেক খাও
আর তুমি? একেবারে মটোর গাড়ীতে চলে গেলে,
তোমরাই তো বলে ছিলে প্রফুল্ল সেন কে "ভাত নেই বলে কাঁচকলা খেতে বলছে"
ধন্য তুমি, একবারও তো বল নি ভোটের আগে, যে ভোট পেলে এবার চাষ নয়
একেবারে মটোর গাড়ী হবে চাষের জায়গায় | সে কথা কি তাদের জানিয়েছিলে?
গরীবদের কাছে হাতজোড় করে ভোট চেয়ে ছিলে গুলি চালাবার জন্য |
মেঘনাদ সাহা ফার্স্ট ফাইভ ইয়ার প্ল্যান করেছিলেন, ড্যাম, ব্যারাজ ও ইরিগেশনাল
ক্যানাল হবে, গরীব মানুষ সারা বছর চাষ করতে পারবে, দেশের মানুষ
দু বেলা দুমুঠো খেয়ে বাঁচবে | তা হলে কি তারা বড়লোক হয়ে গেল?
ষাট বছর স্বাধীনতার পর গ্রামের মানুষের ছবিগুলো টিভি তে দেখলে, তাই কি
মনে হয় যারা গুলি খেয়ে মরলো, তাদের পাশে না গিয়ে আমরা সায়েন্স সিটিতে,
ধর্মতলায় সভা করছি, তাও আবার কতগুলো পরিচিত তেলুবাজদের নিয়ে | যারা
কোনোদিন না বলবে না, বরং ভালোই বলবে, সেই রকম লোকদের ধরে নিয়ে এসে
সভা করা কি দরকার, মানুষ কিন্তু সবই বোঝে, তারা বোকা নয় |
তারা কফি হাউসে আড্ডা মারে নি, নিজেদের আঁতেল বলে নি, কাঁধে কাপড়ের ব্যাগ ঝুলিয়ে
পার্টি অফিস যায় নি, তারাও আম জনতা | তারা বার বার আশা করছে দিন বদলাবে,
সেই ক্ষমতা দিয়েছিল টানা তিরিশ বছর, কারখানার মালিকের সঙ্গে সংগ্রাম করে
কাজ খুইয়েছে, এবার তোমাকে দশ বছর, কি হল গরীবের? প্রাণটাই তো গেল |
"মাসলো'জ হীরার্কী" কে তোমরা হার মানালে, সে বলেছিল "ব্রেড, ক্লথিং এন্ড শেল্টার" হল
বেসিক নীড ; বাংলায় "অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান" তার পরে এডুকেশন এন্ড স্যানিটেশান :
তাদের এখনো শিক্ষা নেই, নেই ঠিক মত বাসস্থান, তাদের তুমি করে দিলে
একেবারে উদ্বাস্তু | উদ্বাস্তু হওয়ার ব্যথা তো তুমি জানো বন্ধু, তাহলে?

.                           ************************                                                
উপরে
.                                                            অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                                     সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       

এই কবিতাটি রবিন গাঙ্গুলী আমাদের ইমেল করে পাঠিয়েছেন  ২৬ এপ্রিল ২০০৭ এ  |

মিলনসাগর
*
১।   রাজ সিংহাসন          
২।   
তাকা                            
৩।   
কৃষি বনাম শিল্প                 
৪।   
বহুরূপী               

       
পতাকা

তোমার পতাকার রং লাল আর
প্রতিক চিহ্ন হল কাস্তে ও হাতুড়ি,
কাস্তে ব্যবহার করে কৃষক
আর হাতুড়ি সে তো মজদুর |

মজদুর তো অনেক দিন হল কাজ ছাড়া
তোমার কথাতেই তো লড়েছিল মালিকের সাথে,
তুমিই তো বলেছিলে, "শ্রমিক ছাড়া মালিক একা কি করবে",
মালিক চলে গেছে অন্য দেশে
শ্মশান হয়ে গিয়েছে কারখানা,
বটগাছ গজিয়েছে সেথা,
ভাত জোটে নি বহুদিন, ঘটি বাটি বন্ধক রেখে,
ধার নিয়ে চালিয়েছি বহুদিন,
আশা ছিল কারখানা খুলবে এক দিন |
সে স্বপ্ন পুরণ হয় নি আজও|

ফিরে গেছি গ্রামে, অখ্যাত এক দেশে,
চাষের কাজ করে পেট চালাব বলে
চলছিল বহুদিন এক রকম, লুঙ্গি আর খালি গায়ে
আর বসতাম আলের ধারে,
বেঁচে ছিলাম এক বেলা খেয়ে
বেশ কয়েক বছর গেল কেটে
ছিলাম কোনো প্রকারে প্রাণে বেঁচে

চাষের জমিতে এতদিন ঝরাতাম ঘাম
এবার চাষের জমিতে একেবারে রক্ত,
না রদ্দুরে মুখ দিয়ে তোলা রক্ত নয়,
অসুখের রক্ত নয়,
গুলির জখমে বেরিয়েছে রক্ত
সেটা আবার আমার শরীর থেকে নয়
সেটা চাষীর রমণীর দেহ থেকে
সেটা বালক শিশুর দেহ থেকে |
ইতিহাসে যা হয় নি, তা হল আজ |

তোমার পতাকার রং লাল, আমার রক্তের রং লাল,
আর কত দাম দিতে হবে, তুমি তো শিখিয়েছিলে,
রক্ত দিয়ে নিতে হবে আমার বাঁচার অধিকার,
সে তো কারখানার মালিকের কাছ থেকে
খুইয়েছি হাতুড়ি, তাই এবার খোয়াতে চাই না কাস্তে,
এবার তোমার কাছ থেকে নিতে হবে সেই অধিকার |


.                **************          
.                                                                       
উপরে
.                                    অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                             সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি রবিন গাঙ্গুলী আমাদের ইমেল করে পাঠিয়েছেন  ২ মে
২০০৭ এ  |


মিলনসাগর
*
কৃষি বনাম শিল্প
     
বুয়া আজ সকালে তুমি জিজ্ঞাসা করলে
কৃষি আগে না শিল্প আগে ?

তারপরেই তুমি বললে
কৃষিকাজে সাহায্য করার জন্য শিল্প ,
কৃষির উৎপাদন বাড়াবার জন্য শিল্প ,
যেমন লাঙ্গল, ট্রাকটার, সার, ব্যারেজ, খাল কাটা,
ধান ঝাড়া মেসিন ইত্যাদি ইত্যাদি।
কৃষিকেই যদি তুলে দেওয়া হয়,
তাহলে শিল্প কোথায় লাগবে ?
শিল্পের প্রয়োজন কনজিউমার গুডস্ ও কৃষিকাজে ।

কনজিউমার গুডস্ ব্যবহার করার জন্য যে
শিল্প দরকার  সেগুলো তাহলে কোথায় যাবে ?
সে প্রশ্নের উত্তর আমাদেরই ঠিক করতে হবে,
নিশ্চয়ই তিনফসলি জমিতে নয় ।

আমরা কি সত্যজিত রায়ের অপুর সংসারের
অন্নাভাব, দারিদ্র, গ্রামের মানুষের আর্থিক সমস্যা
ভুলে গেলাম ? ১৯৪৩এর দুর্ভিক্ষের কথা ভুলে গেলাম ?
ভুলে গেলাম ১৯৫৮এর খাদ্য আন্দোলনের কথা ,
না প্রফুল্ল সেনের সময়ে ১৯৬৫এর খাদ্যাভাবের কথা ?
যখন পাড়ায় পাড়ায় ঝুলিয়েছিলাম কাঁচকলা আর কানা বেগুন ,
দড়ি বেধেঁ রাস্তার মোড়ে মোড়ে এ পার থেকে ওপারে ।

আজও গ্রামে নেই উন্নত মানের শিক্ষা ও উপযুক্ত স্বাস্থ্য
ব্যবস্থা, ষাট বছর হয়ে গেল কি করলাম আমরা ?
আজও গ্রামে শতকরা আশী জন মানুষ বাস করে ,
টানা পঁযত্রিশ বছর ক্ষমতায় রেখেছে তারা ,
কি পেয়েছে তারা ? অপারেশন বর্গা আর ল্যান্ড সিলিং বলে
লোভ দেখিয়ে ক্ষমতায় আছো তোমরা ।

রাজার বা জমিদারদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নিয়ে
ছোট চাষিদের দিয়েছিলে , তারা বলেছিল ‘লাল সেলাম’ ।
এখন তোমরা সেই ছোট চাষির কাছ থেকে জমি
কেড়ে নিতে চাইছ । কিন্তু হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছ
প্রথম কাজটা যতটা ছিল সহজ , দ্বিতীয় কাজটা ততটাই কঠিন ।
তখন কোন রক্ত ঝরাতে হয়নি আর এখন ?
এত দেখি শুধু ভাঙা আর গড়ার খেলা ।

এবার হিসাব নেওয়া যাক ,
হাজার একর জমিতে কতটা ধান আর কতটা আলু হয় জান ?
এক বিঘা জমিতে সাধারণ ভাবে ১০ মন ধান হয় বর্ষাকালে ,
তাহলে হাজার একর মানে তিন হাজার বিঘেতে
তিরিশ হাজার মন ধান , যেটা আর পাওয়া যাবে না ।

আবার ধর আলু , এক কাঠা জমিতে আলু হয় চার মন ,
তিন হাজার বিঘে মানে ষাট হাজার কাঠা ( কুড়ি কাঠায় এক বিঘে ),
কত আলু হবে ? সাত হাজার ইনটু চার মন , মানে
দু লক্ষ চল্লিশ হাজার মন আলু , যদি আশী পারসেন্টও ধরি
তাহলেও প্রায় দু লক্ষ মন আলু ।

এর পর আবার শীতকালের ধান আছে ।
তার হিসেব হল বিঘেতে কুড়ি মন ধান , যদিও খরচ বেশী হয়।
তিন হাজার বিঘের জায়গায় যদি এক হাজার বিঘেতেও
সেই চাষ হয় ,তাহলেও কুড়ি হাজার মন শীতকালের ধান পাওয়া যায় ।
এর পর আবার অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি আছে ।

কোথা থেকে এই ঘাটতি পুরণ হবে ?
কে রাখবে সেই হিসেব ? জানি না আমরা চলেছি কোথায়?
কাকে আমরা চলেছি সন্তুষ্ট করতে  ?



.                **************          
.                                                                       
উপরে
.                                    অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                             সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি রবিন গাঙ্গুলী আমাদের ইমেল করে পাঠিয়েছেন  ৪ মে
২০০৭ এ  |


মিলনসাগর
*
        বহুরূপী

কি প্রয়োজন ছিল জমিদার ও জোতদারদের থেকে জমি কেড়ে নেওয়া,
কি প্রয়োজন ছিল ল্যান্ড সিলিঙ্গ আক্ট তৈরী করা ,
কি প্রয়োজন ছিল ভূমিহীণদের জমি বিতরণ করা ,
কি প্রয়োজন ছিল অপারেশন্ বর্গা আইন তৈরী করা ,
কি প্রয়োজন ছিল জমিতে খাল কেটে ড্যাম থেকে জল আনার ,
কি প্রয়োজন ছিল একফসলি জমিকে তিনফসলি করার ,
কি প্রয়োজন ছিল কারখানার মজুরদের ক্ষ্যাপান,
কি প্রয়োজন ছিল কারখানা বন্ধ করে  দেওয়া ,
কি প্রয়োজন ছিল ইংরাজী শিক্ষা তুলে দেওয়া ,
কি প্রয়োজন ছিল কম্পুটার শিক্ষা পিছিয়ে দেওয়া ,
টাটার মত বড়লোকদের বিনা পয়সায় সেই জমি দেওয়া ।


আমরা কি চাষে উন্নতির সর্ব্বোচ্চশিখরে উঠে গেছি ,
আমরা কি নিজের স্টেট ছাড়া আরো দশটা স্টেটকে খাদ্যশস্য পাঠাচ্ছি ,
আমরা কি পাঞ্জাব/হরিয়ানার মত একশো দশ কোটি
                       মানুষকে একবেলা গম খাওয়াচ্ছি ,
আমরা কি বাংলার ছেলেদের শিক্ষিত করে , সব বাঙ্গালির ছেলেদের
                                    চাকরি দিয়েছি ,
আমরা কি বাংলায় পড়া বাঙ্গালির ছেলেদের উচ্চপদে চাকরি দিতে পেরেছি ,
আমরা কি কম্পুটার ছাড়াই আমাদের রাজ্যকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি।

আমরা কি এ সব ভুল করলাম্ ,
আমরা কি ভুল থেকে শিক্ষা লাভ করেই যাব ,
এত দিন মজদুর হয়েছে বেকার ,
এবার চাষি তোমার পালা বেকার হবার , উদ্বাস্তু হবার  ।  


.                **************          
.                                                                                    
উপরে
.                                                 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                          সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       

এই কবিতাটি পড়ে কবি প্রণব রায় চৌধুরী একটি জবাবী কবিতা লিখেছেন | সেই
কবিতা "বহুরূপীর জবাব"
পড়তে এখানে ক্লিক করুন |

এই কবিতাটি রবিন গাঙ্গুলী আমাদের ইমেল করে পাঠিয়েছেন  ১২ মে ২০০৭ এ  |


মিলনসাগর
*