সাগরিকা দাশগুপ্তের কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
১।    দোল সন্ধ্যায়  
২।    
জ্বালা            
৩।    
সুখ     
৪।    
চাহিদার ভার         
৫।    
মায়ের জন্মদিনে     
৬।   
মাদ্রাজের দুর্গা পূজা         
৭।   
বদলে যায় একটি বছর        


 
*
*
জ্বালা

আজ আবার কত দিন পর
মনটা বড়ই ক্লান্ত লাগে---
আকাশের ঘোলা রং, মনের জানলায় করে ছায়াপাত
বড়ই ব্যথা, বেদনা বাজে, চেতনাহীন
অচেনা লাগে নিজেকে - অকারণ এক অব্যক্ত অনুভূতি
দাপাদাদাপি করে বুকের ভেতর -
কত অশান্তি, অরাজকতা, কষ্ট এই দুনিয়ায়
কিছুই না করতে পারার অপারকতা আমার কষ্ট বাড়ায়
ফুটপাথের ছোট্ট শিশুটাকে কোলে নিতে না পারা
হাড়ভাঙা খাটুনির পর যে মেয়েটি অভুক্ত, ক্লান্ত -
ঝোপড়ায় ফেরে - তার ব্যাথা নিতে না পারা
লজ্জিতা কুমারী মা - যার জরায়ুতে জ্বলছে একটা
অসহায়, লাঞ্ছিত ছোট্ট একটা প্রাণ - তার অসহ্য প্রসব
বেদনায় আমার উপায়হীন নীরব, সাহায্য করতে না পারা ব্যথা -
উপায়হীন আমি - জ্বলে আমার সারা দেহ -
উড়ে যায় সব সুখ-আনন্দ-পাচতারা
হোটেলের "বুফে" লাগে বিষাক্ত | আমিও অপাংত্তেয়
হয়ে যাই আমার কাছে |
নিদারুণ লজ্জায়, ঘৃণায় রি রি করে সারা দেহ
পূতিগন্ধময় নর্দমার ফেনা ওঠা পাঁক জ্বলে যেন
গা ধুয়ে এসেছি এই মাত্র -
এই সভ্যতা - এই আমাদের উন্নত সমাজ
যা ছিল শ, হাজার বছর আগে, তার থেকে
আমরা উঠছি ? নেমেছি, নেমে গেছি আরও পাঁকে
দুর্মূল্য, অবাধ্যতা, মিথ্যচার, নগ্নতা, নিষ্ঠুরতার
আবর্জনার সমাজ পঙ্কিল - হাজার নিয়নবাতির আলো
তবুও পৃথিবী অন্ধকার !
পৌঁছায় না এখানে মসৃণ চাঁদের স্নিগ্ধ আলো
সূর্যের প্রখর রোদ্দুরে ঝলসায় মাটি শুধু
প্রাণ প্রাচুর্য ছড়ায় না তাতে -
সারা জগৎ জুড়ে যেখানে নোংরামি, দুষ্টতা,
পুরুষের হাতে নৃশংস ধর্ষণের কালো ছোরা
নারীদের অবাধ নির্লজ্জতা - গা দেখানো
সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা - তাতে দেয় আরও ধুনো |
আমরা বাস করি সেই জগতে, যেখানে আজও
করুণাময়ী পতিতপাবনী "গঙ্গা" তার নির্মল ধারায় বয়ে যায় -
তাকেও করেছে বিষাক্ত, ক্লেদময় এই মানুষ - আবার প্রাণ ফাটানো
চিত্কারে, জ্বালাময়ী ভাষণে করেছে নিজেকে দায়হীন - "গঙ্গা বাঁচাও" -
যেখানে পুরুষের বীর্য - শৌর্য ছিল অহংকার
 অন্যায়ের বিরুদ্ধে
ছিল নারীর সলজ্জ অথছ দৃঢ়তাপূর্ণ মমত্ব -
তখনও ছিল নারীত্বের অপমান - এখনও আছে
তখনও ছিল অনীতি - সামাজিক দায়বদ্ধতার উল্লঙ্ঘন - এখনও আছে
তখনও ছিল সামাজিক বৈষম্য - আজও আছে - এখনও
 শেষ হয়নি |
কবে ভরবে এ পৃথিবী ভালবাসায়, স্নিগ্ধতায়, সাম্যে
সেদিনই যাবে আমার এই জ্বালা -
এই উগ্র প্রাণ ফাটানো
অপ্রশমিত মনের জ্বালা |


.                       **************                                              
উপরে  


এই কবিতাটি "নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন, মাদ্রাজ শাখা" থেকে প্রকাশিত
পত্রিকা "সাগরী" তে প্রথম প্রকাশিত হয়
*
সুখ

সুখ-সে এক মিশতি অনুভব,
কথায় পাওয়া যায়?
মনের গ হ নে নাকি অন্ত রের অন্ত স্থলে
হয়ত বা
অন্যের মনের সাথে মনের মিলে!
আমার কাছে সুখ মানে অপারথিব কিছু নয়
যা চাই তাই পাই-যা ভাবি তাই করি
এই কি সুখের বয়ান
তাহলে...... ||
যখন একা ছিলাম-মনে হত
আহা কি সুখ সকলের মাঝে থাকার
সবার ছওয়া পাবার
সরাসরি কথা কইবার –
এখন আমি সত্যি সত্যি ‘সুখ’ চিনেছি |
যখন এইটুকু একটু সুখ পাবার আশায়
ফিরে এলাম |

.               **************                                              
উপরে  

*
চাহিদার ভার

মানুষ চায় – ঘর বাড়ী টাকা-পয়সা
খ্যাতি প্রতিপত্তি
চাহিদার কোন কমা সেমিকোলন দাঁড়ি নেই।
কিন্তু যখন ঘর পায় তখন ছাদ চায়,
বাড়ী পায় অথচ অনুশোচনা – হায় হায়
জমি নেই।
টাকাপয়সা বিস্তর – তবু মুখ শুকনো -
খরচ হয়ে যায়,বেহিশেবী-অঙ্ক মেলে না
খ্যাতি-প্রতিপত্তি পাওয়া হল
তবু কি যেন নেই-শান্তি! কোথায়?
একটু ভেবে দেখ! উঁকি দাও মনের গহনে-অন্দর-মহলে,
বার বার কি চাই আমি-কেন চাই? যা আমার নয় ,
তাই আমি চাই.........
যা অপ্রয়োজনীয় তার জন্য উদগ্রীব আমি
যা অনিত্য –নিত্য তার পেছনে ধাওয়া,
কতটুকু দরকার কি দরকার,কখন –
কিছু না জেনেই শুধু চাওয়া-চাহিদার অন্ত নেই,
ক্ষান্ত হও – বেহিসেবী হয়োনা
যা চাও যতটুকু প্রয়োজন তাই নাও
আর যা পেয়েছ – যা আছে
তার জন্য হও ধন্য-জানাও ধন্যবাদ।

.              **************                                              
উপরে  

*
মাদ্রাজের দূর্গাপুজা    

বাঙ্গালীর সবচেয়ে প্রিয় দূগ্গাপূজা, তার চাইতেও বোধহয় প্রিয় আড্ডা তাজা।
রকম সকম কাপড়-জামা চটি জুতো, পূজোর সময় পরবে সবাই খোঁজে ছুতো।
বাবু-বিবি বাচ্চা সবাই মাতে মজায়, কোথায় গেলে ভোগটা আগে পরবে পাতায়।
বেঙ্গল-এসোসিয়েশন না আন্নানগর, মীনম্বাকম্ আবাদী না বেসান্ত-নগর?
কবে কোথায় যাবে,কবে কোথায় খাবে, মাসখানেকের পরিকল্পনায় সেটাই ভাবে।
কোথাকার আড্ডাটা বেশ জম্বে ভালো, কোথায় গেলে প্রোগ্রামগুলি হবে ভালো।
এসব ভেবে অফিসে দেয় ছুটির আপিল, টিনগর আর লাজ বাজারে কেনার মিছিল।
দুপুরের ভোগের কুপন রাতের বেলা খাবার কুপন, যোগার করতেই বেলা কাবার পুজো আবার দেখবে কখন?
ষষ্ঠীর বোধন পূজো সপ্তমীর আরতি, অষ্টমীর অঞ্জলি ,সবেতেই হাতাহাতি।
উপচে পড়া লোকের ভীড়ে আশ্বিন মাসের গ্রীষ্মকালে মদ্রদেশের দূর্গা পুজায়
জমে মজা কেমন করে?
তার মধ্যে হঠাৎ আবার জোর ঝাপটায় বৃষ্টি এসে, জলে কাদায় মাখামাখি,
ভাবল সবাই পূজো বুঝি ডুবল শেষে।
তবুও এর মধ্যেই খোকা-খুকু ছেলে-মেয়ে, পুজোর অনুষ্ঠানে নেচেগেয়ে
তৈরী করে নাটক গীতিনাট্য কত রকম, অলিখিত প্রতিযোগিতা চলে ভাই জোরকদম।
যুব সমাজ ভলানটিয়র মন দিয়ে হল সাজায়, রোশনাইটা কেমন হবে এই নিয়ে মত শানায়।
কারও আবার মাথা গরম কেউ আবার বেশ অলস, সবাই মিলে একসাথে তাও কাজ হয়ে যায় বেশ সরস।
এবারের পূজো ভাই দারুন জমেছিল, “জন্মভূমির” পাঞ্জাবী বেশ অনেকেই পরেছিল।
‘খাদিমের’ জুতো ছিল সকলেরই পায় পায়, তাঁতের শাড়ির স্থানে চূড়িদার ছিল গায়।
সিঙ্গারা চপ গজার সাথে ছিল রাজকচুরী, মোগলাই পরোটা আর ইলিশ মাছের পাতুরী।
কি বললেন? কেমন খেলাম,পাতে আর পরল কই!
শুধু গোনাগুনতি প্লেট খেয়ে এলাম কাটা রুই।
ভালই কাটল দুর্গা পূজার দিন কটা, আগামী বছর আবার হবে,
তখন খাব ইলিশ আর মোগলাই পরোটা।  

.        ***************                   
.                      ২০০৪/০৫ সালে লেখা যখন “জন্মভূমি” সিরিয়ালটি প্রচারিত হচ্ছিল।


এই কবিতাটি এখানেই প্রথম প্রকাশিত হল।



.                                                                                                 উপরে  
*
মায়ের জন্মদিনে  


.                জীবন সফল হল তোমার মাঝে,
.                মাগো, তুমি আমারি মা যে।
.                তোমার জন্মদিনে কি দেব তোমায়
.                অন্তর মাঝে ভরে আছে ভালবাসা।
.                তোমায় আমি দিলাম তাই, তুমি নেবে ভালবেসে
.                মোর এই আশা।।
ছোট্ট একটি শব্দ এটি, সবার সেরা নাম,
সবার সেরা সম্বোধন, মধুর মত নাম।
সে হল যে “মা,” কি সুন্দর নাম।
মা,তোমার জন্মদিনে পাঠাই তোমারি নাম ।
এ নামেতে জড়িয়ে আছে আমার পরিচয়,
এই নামের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়।
.                মা, তোমার জন্মদিন, শুভ জন্মদিন তাই,
.                রাশি রাশি ভালবাসা প্রণাম জানাই।।   


.                     *****************               নভেম্বর ২০০৬।

এই কবিতাটি এখানেই প্রথম প্রকাশিত হল।


.                                                                                         উপরে  
বদলে যায় একটি বছর    
(এই কবিতাটি পোর্টব্লেয়ারের রবীন্দ্রবাংলা বিদ্যালয়ের প্রক্তনী সংসদের পত্রিকা
"রবির আলো"-র প্রথম সংখ্যায় (জানুয়ারী ২০১১) প্রকাশিত হয়েছিল )


যখন তপ্ত তপন আকাশের জানালা দিয়ে এসে
.        প্রঙ্গন করে তোলে দগ্ধ
চৈতালী বেলাকে মনে হয় কি বিরাট!
সন্ধ্যাতারার আশায় বসে থাকি - একটু ঝিরঝির বাতাসের
.        প্রতীক্ষা করি |
অলস মধ্যাহ্নে একরাশ উষরতা নিয়ে |
.        এই দিনগুলি কেন আসে না পৌষালী বেলায় ?
.        শিরশির আমেজে যখন ফুলগুলি ক্লান্ত - আর
.        শীতের নিষ্ঠুর আঘাতে পাতাগুলি ঝরে যায় |
.        নিঃস্ব - নিসম্বল গাছগুলিকে মনে হয় বড় আকুলিত |
তখন আবার মনে পড়ে --
.        বর্ষার ঝরঝর শব্দ - প্রাঙ্গণময় এলোপাথারি
.                                        হাওয়ার আনাগোনা
আহত ফুল আর কুঁড়িদের উড়ে যাওয়া---
নিঃশব্দ | নিথর আর পরাস্ত গাছগুলির নত মাথা
কি এক অজানা কারণে মনে হয় বড় আকুলিত |
.        বসন্ত, এই ফুল, গাছ, পাতাদের মর্মরধ্বনির শব্দ
.        মনকে করে তুলেছিল উদাসী স্বপ্নিল --
সারা প্রকৃতি সেজেছিল বাসন্তী আর লাল রঙে
কুহু-কেকা রবে সারা নিখিল ভরেছিল | সঙ্গে এ মনটা
.        এবার যাবার পালা --
সবাই একে একে চলে গেছে -- যাবে বসন্ত ও আর ফুল
.                ফোটানোর পালা সাঙ্গ করে --
সেও যাবে -- রয়ে যাবে চৈত্রের ঝরা পাতা --
শাল সেগুনে গল্পে মাখামাখি কিছু স্মৃতি |
আবার এক অজানা, অচেনা বর্ষের প্রতীক্ষা
.        নিয়ে বসে থাকি আমরা |
আবার ফুটবে ফুল, আবার ভরবে দীঘি
আবার কোকিল তার মিষ্টি কুহু রবে ভরাবে জগৎ |
.        আবার বাজবে আগমনীর সুর আকাশে বাতাসে
.        কাশ ও শেফালী ফুলের জলসায় শরতের
.                আকাশ বাতাস ভরে যাবে |
আবার দেখা দেবে এক নতুব ১লা বৈশাখ |


.        ***************                   
.                    



.                                                                                                 
উপরে  
*