এরা কারা তপন চক্রবর্তী
শেখায় বিপ্লবের ভাষা মূক জনতা কে, চিহ্নিত করে শ্রেণী শত্রু, বলে শ্রেণী বৈষম্যের কথা | উত্তাপ ছড়ায় - কিন্তু বাস করে বিক্ষোভের আঁচ থেকে নিরাপদ দূরত্বে, এক সঙ্কীর্ণ, গণ্ডিবদ্ধ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দুর্গে | উত্তপ্ত জনতার থেকে বহু দূরে |
হয়তো বা, জনতার মাঝে থেকেও এরা জনতার কেউ নয় | --- নীল রক্ত অভিজাত অথবা দূর্ত নীল শেয়াল |
এরা বিদ্রোহের গান গায়, বন্দুকের কথা বলে | ব্যবহার করে না নিজেরা কখনও, সমাজশুদ্ধি, শোষণমুক্তির অজুহাতে প্রয়োজন মত বন্দুক তুলে দেয় এর-তার হাতে |
এরা বিদ্রোহের গান গায় | নিদেনপক্ষে বলে জনগণতান্ত্রিক ব্যালট বিপ্লব | করে ঘেরাও, বন্ধ, হরতাল | দায়বদ্ধ এরাই আবার --- অশুভ, কায়েমী, স্বার্থপর, অন্ধকার আঁতাতের |
এরা বিদ্রোহের গান গায় | তৈরী করে ক্যাডার আর ভুতুরে ভোটার | এদের গল্প - মার্ক্স, লেনিন, হোচিমিন | গর্ব - নানুর, চেসেস্কু আর ওয়াল বার্লিন |
এদের সমাজতন্ত্র - এদের হাতে ধরা গ্রাসে চিল্ ড বিয়ারের বুদবুদের মত অলীক | এদের বিপ্লব - কাগুজে জনগণতান্ত্রিক, সীমাবদ্ধ স্লোগানে আর দেওয়াল লিখনে |
************
|
মুখ আর মুখোশ
ইন্দ্রজিত্ ঘোষ
হরিয়ানার কৃষি জমি, শিল্প জমি, শিল্প করা যাবে না |
বাংলার কৃষিজমি , কৃষক তুমি পাবে না ||
মহারাষ্ট্রের কৃষিজমি কৃষকের থাকবে |
বাংলার কৃষিজমি বারোভুতে লুঠবে ||
গুজরাটের কৃষিজমি, কৃষিকাজ করবে |
বাংলার কৃষকের পেটে, তুমি লাথি মারবে ||
বিপ্লবী নেতাদের এই হ'ল মতবাদ |
এরা বাংলায় বসে লিখছে নতুন মার্ক্সবাদ ||
পুঁজিপতি আর বুর্জোয়ারা এদের নতুন বন্ধু |
মুখোশেতে, মুখটা লুকিয়ে, ভাবছে পার হবে ভব সিন্ধু ||
বাংলাতে একনীতি, বাইরেতে অন্য |
দ্বিচারিতা আর মিথ্যা কথায় এরা হ'ল অনন্যা ||
************
প্রতিবাদ
সঞ্জিত্ বোস
সিঙ্গুর নিয়ে কোন্দল যত
চাষির মাথায় হাত,
দুদিন পরে আমাদেরও
জুটবে না আর ভাত |
কাস্তে ছিল চাষির হাতে
চাষি ছিল মাঠে,
আজ সে মাঠে কমরেডরা
চাষির গলাই কাটে |
বাদ যায় নি সাংবাদিকও
জানিনা কি দোষ তার,
সত্যটাকে করে নি গোপন
তাই খেল সে মার |
রমরমিয়ে ব্যবসা চলে
প্রোমোটারির নামে,
দালালেরা বেজায় খুশি
নাম লিখিয়ে বামে |
গণতন্ত্রের নামে হেথায়
শোষণ নীতি চলে,
জোর যার মুলুক তার
বুদ্ধবাবু বলে |
অন্যদিকে মমতাদি
ক্লান্ত অনশনে,
সেই কারণেই বুদ্ধবাবুর
শান্তি যে নেই মনে |
তবু বলেন বুদ্ধবাবু
সিঙ্গুর আমার চাই,
বাংলা মরুক অনাহারে
টাটা-ই আমার ভাই |
তৃণমূলও জেদ ধরেছে
সিঙ্গুর ছাড়বো না,
অনশনে মরবো মোরা
তবু হারবো না |
শিল্প নয় শস্য চাই
শোন এই বেলা,
বাম সরকার বন্ধ কর
অত্যাচারের খেলা |
অধিগ্রহণ বন্ধ হলে
ফিরবে ঘরে চাষি,
অনশন উঠিয়ে নেব
ফুটবে মুখে হাসি ||
********
অলীক শিল্প
হারাধন ভট্টাচার্য
আকাশ বাংলা জুড়ে এখন
শিল্প বেলুন উড়ছে
অলীক শিল্প গড়তে গিয়ে
চাষির কপাল পুড়ছে |
সংখ্যাধিক্যে মত্ত হয়ে
রাজা এখন ভাসছে |
প্রতি দিনই বলেন তিনি
শিল্প পতি আসছে |
সালিম টাটা জায়গা নিলে
কৃষকরা সব চটবে,
তার থেকেও বড় সত্যি
খাদ্যাভাব যে ঘটবে |
হোক না শিল্প ভালই তো
বন্ধ কারখানাতে---
কপাল পোড়া শ্রমিকগুলো
খাবার পাবে পাতে ||
********
সিঙ্গুর বিদ্রোহ
অশোক মুখার্জী
বিস্তীর্ণ সিঙ্গুরে, অসংখ্য কৃষকের জমি কেড়ে নেওয়া
বুদ্ধ দানবে, সংহার করে
অনাহারী চাষি, তুমি জমি নিতে দেবে না যেন?
বিস্তীর্ণ সিঙ্গুরে ...
রক্ত ঝরানো এই সিঙ্গুরে,
লক্ষ কৃষকের, রক্তে রাঙানো
ওই বিজয় পতাকা,
আমরা ওড়াবো জেনো |(২)
বিস্তীর্ণ .......
বুদ্ধিজীবিরা আজ কথা কও,
বিবেকের দংশনে দাও সারা দাও |(২)
বর্বর বুদ্ধকে আঘাত হানা
বিস্তীর্ণ ......
সোনা ফলা সিঙ্গুরের, জমিহারাদের
খাদ্যবিহীন, নাগরিকের,
জীবন বাঁচাতে মোরা মরবো জেন |
বিস্তীর্ণ .....
টাটার দালাল, বুদ্ধ কাঙাল,
বাংলাকে বেচবার করেছে যে তাল
পুলিশ ক্যাডার দিয়ে মারছে কৃষক,
জীবন দিয়েও মোরা, ধরবো যে হাল |
তাই তো বলি, শোনরে কৃষক, শোনরে সর্বহারা,
এই বুদ্ধ-বিমান-নিরুপম'দের
এই বাংলা থেকে তাড়া |
এই অনশনের মঞ্চ থেকে
শপথ নিলাম আজ,
লাঙল যার জমি তাকে
দেওয়াই হবে কাজ |
ধান সামলে, কাস্তেটাকে দিচ্ছি মোরা শান,
অনশনে আছেন মোদের প্রতীক ভগবান |
********
বিশ্বমানবাধিকার দিবস (১০/১২/২০০৬)
মীনা
সত্যাগ্রহী --- অনশন মঞ্চে
দিদি, নয়তো তুমি একা
নব চেতনায় উদ্ভাসিত
বাঙালী দিয়েছে দেখা |
জেগেছে কৃষক, এসেছে যুবক
জাগছে ছাত্র আজ
বাংলা থেকে দূর করো
এই জমি লুঠেরা রাজ |
জমি বাঁচাও, জীবন বাঁচাও
জনগণতান্ত্রিক স্লোগান
অহং বুদ্ধের মনগড়া রথের
গল্প করবে ম্লান |
অম্লান রবে বাংলার বুকে
মা, মাটি, মানুষের গান
মমতাময়ীর সাথে চলে মোরা
বাঁচাবো বাংলা মায়ের মান |
********
সে এক দেশ
জয়দেব মণ্ডল
যেখানে চক্রান্তের জাল পেতেছে সর্বত্র ঐ
ভদ্র রাজ চক্রবর্তী মানুষ |
রক্ত শোসণ করে মেটে নাই ক্ষুধা
হাড় চিবিয়ে চিবিয়ে চলেছে ঐ
সকল বিধাতা পুরুষ ||
আর সেই কঙ্কাল-সার গণ দেহগুলোকে
টানতে টানতে নিয়ে চলেছে কাঁটা
বিছানো পথ দিয়ে ||
অনেক কষ্টে বেঁধে ছিল ঘর, মেহনতী মানুষ
নিমেষে ভাঙিল সে ঘর, লাল শাসকের
লাঠি |
এ হেন দেশে আছে যারা, মাঠে ময়দানে
দলিত হয়েছে পদ পিষ্ঠে শত সহস্র নরনারী |
তবুও তাঁদের পাঁজরে পাঁজরে বেজে ওঠে
বাঁচার শঙ্খ ধ্বনি |
বাঁচবে তাঁরা, বাঁচবে কৃষি, গড়বে নতুন দেশ |
ধন ধান্যে পূর্ণ হবে এই কাঙালি দেশ ||
********
কুয়াশা
বৈদ্যনাথ বিশ্বাস
পুড়ে পুড়ে যা আছে
সব ছাই হয়ে যাক,
অতীত বর্তমান ভবিষ্যত্
নাই থাকে থাক,
আশ্চর্য দহনে
জ্বলে পুড়ে যাই
বিন্দু বিন্দু বারি
কোন খানে নাই |
হে ঈশ্বর তোমার মহিমা
কোন শূণ্যতায় ওরা
বড় বিস্ময় জাগে
অব্যক্ত ব্যথায় |
তুমি বল ভালোবাস,
ভালোবাসিলাম
অস্পষ্ট আলোকে
তাই হারিয়ে গেলাম |
চেতনা ইন্দ্রজাল বোনে
ফুল তারা চাঁদ |
আশ্চর্য প্রহসন সব
অদৃশ্য ফাঁদ,
সব সত্য বলে
ধরে নিলাম আজ |
********
সিঙ্গুরের চাষিভাইদের কথা
অশোক বন্ধ্যোপাধ্যায়
খাঁটি সোনাই ভেবেছিলাম
এই বাংলার মাটি,
ফলিয়েছিলাম সোনার ফসল
আজ পুলিশের লাঠি |
রক্ত হোথায় জল করেছি
রক্ত ঝরে আজ,
বঙ্গ বুকে বলো দেখি
এলো কাদের রাজ |
বক্ষে এরাই টেনেছিল
ভরসা ছিল বেশ,
জমি ছাড়তে বলছে এরাই
ধরণা আজ শেষ |
শীতে কেঁপে রোদে পুড়ে
ফলিয়েছিলাম ধান,
ভিজে ভিজে চাষ করেছি
আঘাত পেলো প্রাণ |
ফলিয়েছিলাম আলুর রাশি
আমরা চাষির দল,
গাড়ি হোথায় তৈরী হবে
তাইতো প্রয়োগ বল |
কৃষক'ও ছিল বন্ধু ওদের
শ্রমিকই এখন প্রিয়,
লাল ঝাণ্ডা মোদের থেকে
তাই ফিরিয়ে নিও |
মিছিল করে যেতাম কত
আজকে হলাম পর,
আজ পুলিশে মারছে লাঠি
লাথি এবং চড় ||
********
নবান্ন
রমাকান্ত করণ
নিশুতি আকাশে তারাদের চেয়ে চেয়ে
মুখ টিপে হামা, নিশাচর পাখিদের
কর্কশ আওয়াজ, সোনালী ধানের শীষে
হিমের পরশ, কামার শালে কাস্তেতে শান দেওয়া---
ধান কাটার আগাম খবর এনে দেয় |
মা ডেকে কয়, সোনা, আর ভয় নেই,
ক'দিন পরেই হবে নবান্ন উত্সব |
শীতে জুবুথুবু হয়ে কাঁপতে হবে না নিরন্ন পেটে |
ধান কুড়োতে কুড়োতে সোনালী রোদের তাপে
গা উঠবে গরম হয়ে, মনে আসবে
খুশীর জোয়ার - আঃ কী আরাম
কতদিন পাইনি এমন তাপ |
তেলবিহীন রুক্ষ গায়ে খড়ার ঘষা লেগে
কত অজস্র ম্যাপ আঁকা | তারি মাঝে
ছোট ছোট হাতে ধান কুড়িয়ে নেওয়া,
হুড়োহুড়ি, ঠেলাঠেলি, মারামারি
শেষকালে হেরে গিয়ে জুড়ে দেবে কান্না |
দা এর খসখস, শ্রমিকের গান গাওয়া
মাথায় বোঝা নিয়ে উত্ফুল্লমনে বাড়ির পানে
ছুটে চলা --- এ বছর ফসল হয়েছে ভালো |
নতুন নলেন গুড়ের পিঠে পায়েস ---
আঃ, জিভে আসে জল |
কিন্তু একি খবর!
সরকার বাহাদুর সেই জমিতে নাকি
বসাবে কল, গড়বে সৌধ
বড় বড় বাবুদের জন্য |
আর হবে না চাষ, ফলবে না ফসল
লাগবে না ধান কাটার হিড়িক
হাজারে হাজারে মানুষ হবে নিরাশ্রয় নিরন্ন |
ও মা বলনা--- কোথায় যাব ধান কুড়াতে,
কী খাব মা ক্ষুধা পেলে,
আর হবে না নবান্নের উত্সব ?
উদাস চোখে আকাশ পানে চেয়ে
কাতর মুখে কী যে বলে মা
কিছুই বোঝা যায় না |
********
জনৈক ভক্তের বুদ্ধ-বন্দনা
কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়
নন্দনে আনন্দ তুমি বুদ্ধ মহারাজ |
তোমার বন্দনা করি জোড়হস্তে আজ ||
শ্বেতশুভ্র পোষাকে তুমি শান্তির দূত |
বোধগম্য না হয় তোমার মতি অদ্ভুত ||
সগর্বে নিজেরে কহ অতি কৃষক দরদী |
তথাপি সিঙ্গুরে কেন বহে রক্তের নদী ||
নিরস্ত্র চাষির ঘরে সশস্ত্র পুলিশ তব |
অজো কি কৃষকপ্রেমীর রঙ্গ নব নব ||
যে ক্ষেতে সোনালী ধান দোলাইত শির |
অচিরে তোমার দাক্ষিণ্যে হইবে টাটার জাগির ||
তোমার পুলিশ বুঝি অতি সুবোধ বালক |
তাহাদের পিতা তুমি সুচতুর বঙ্গের চালক ||
এক হস্তে ধরে তারা রমনীর কেশ |
মুহুর্তে ছিঁড়িয়া লয় তাহাদের অঙ্গের বেশ ||
যবে সহস্র পুলিশ সিঙ্গুরে কাঁপায় মেদিনি |
শোনো নাই কান্দে কত অসহায় কৃষক রমণী ||
টাটার মোটর যবে তোমায় দেখায় স্বপন |
তখন তোমারই খুল্লতাতের কথা তোমায় করাই স্মরণ ||
সুকান্ত নামে সে কবি কবিতা রচিল কবে |
ধনীর মোটরে গরীব চাপা কেন রবে ||
তোমার রাজত্বে এক রমণীর অদ্ভুত আর্জি |
কালীঘাট নিবাসী নাম মমতা ব্যানার্জী ||
মৃতপ্রায় সেই নারী অভুক্ত দিবসরাতি |
আবেদন কৃষিকার্যে তব হয় যেন মতি ||
অতি বিদ্বান তুমি বুদ্ধ বিনয় অবতার |
দুর্যোধন সম সিঙ্গুরে দিবে না সূচাগ্র মেদিনীর ছাড় ||
তোমার মধুর মুখে শুনি অমৃত বাণী |
সিঙ্গুরে রচিত হইল তোমার বীরত্ব কাহিনী ||
শোন শোন লাল ভক্ত শোন দিয়া মন |
বুদ্ধের বন্দনা এবে করি সমাপন ||
ধর্নামঞ্চে মমতার যাক প্রাণ বিসর্জন |
রাইটার্সে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম দাও সর্বজন ||
********
আছি হাঁটাহাঁটিতে
বিপুল চক্রবর্তী
কেউ যায় ইংল্যান্ড, কেউ যায় ফ্রান্সে
গান আনে গান গায় জমকালো গান সে
কেউ যায় আমেরিকা, কেউ যায় ইটালি
আমি চাই, বাংলায় বাংলার মিতালি
বিশ্ব-ও চাই আমি আমাদের আকাশে
শিমূলে-শিরীষে চাই কুয়াসায় ঢাকা সে
বিশ্বকে চাই আমি, চাই এই মাটিতে
আজও তাই হেঁটা যাই, আছি হাঁটাহাঁটিতে |
********
এই কবিতাটি কানোরিয়া জুট এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সংগ্রামী
শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে প্রকাশিত, দোলা সেন সম্পাদিত, 'কানোরিয়ার
পর সিঙ্গুর' পুস্তিকায় ১৭ নভেম্বর ২০০৭ এ প্রকাশিত |
মানুষ ক্ষমতায় ফিরছে
বাসুদেব বিষ্ণু
নন্দীগ্রামের বৃষ্টিতে
এখন আগুনের স্ফুলিঙ্গ
বাতাসে প্রতিবাদী স্বর---
রং লেগেছে সাদা কাগজের পাতায়
অসহায় মানুষ
তমসাচ্ছন্ন অন্ধকারে অপলক
চিতার ছবি এঁকে চলেছে---
গাঢ় নীল চিতার!!
মানুষ ক্ষমতায় ফিরছে
ভূমিপুত্ররা শুয়ে আছে
স্নেহে ভরা মাতৃক্রোড়ে---
মন্দিরে কাঁসর-ঘন্টার আওয়াজ
চাপা পড়ে আছে
শোকাতুর মায়ের নিভৃতের ক্রন্দন!!
অবশেষে 'ভুল' শব্ দটা বিতর্কের জালে
আটকে---
ভরিয়ে তুলেছে জনসমুদ্রের
এক গভীর অংশকে
ততক্ষণে কইমাছগুলো
ডাঙ্গায় ছটফট করছে
আকাশে সিঁদুরে মেঘ---
বৃষ্টির সম্ভাবনা
মানুষ ক্ষমতায় ফিরছে!!
********
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন চলা কালীন এই
কবিতাটি ১৯ জানুয়ারী ২০০৭ এর দৈনিক
স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত হয় |
দেওয়াল লিখন ১
তু এত কাদা নিলি
সাদা কাপড়ে
কাদা জল ঢেলে দিলি
ভাজা পাঁপড়ে
টাটার ট্যাকা আগাম নিয়ে
পড়লি ফাঁপরে
গরিবের মিতে গো মিতে
তু কেন হাত বাড়ালি
আওল জমিতে
বাংলা ছেয়ে গেল ছিঃ, ছিঃ, ছি-তে
গরিবের মিতে গো মিতে
তু চাপলি কেন সাদা হাতিতে
এখন লাগ ভেলকি লাগ ভেলকি
মহাশ্বেতার লাথিতে
লাগ ভেলকি লাগ ভেলকি
সিঙ্গুরের চাষির চাপড়ে |
********
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন চলা কালীন, গ্রাম
বাংলার একটি চায়ের দোকানের দেওয়ালে সাঁটা,
জনৈক অজ্ঞাত কবির, এই কবিতাটির সংগাহক
পরাণচন্দ্র রুইদাস | কবিতাটি ২২ জানুয়ারী ২০০৭
এর দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত হয় |
দেওয়াল লিখন ২
সিঙ্গুরে মেঘ গুড় গুড় করে গো
লাল জমিচোর দালাল কাঁপে
মা-বোনেদের ডরে গো |
আলু, ধান, সবজি ও শাক
এ জমি ফলায় না আখ
তাও সে কোন গুড়ের তরে গো
বাবুদের লোভের লালা ঝরে গো...
( অসমাপ্ত )
********
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন চলা কালীন, গ্রাম
বাংলার একটি চায়ের দোকানের দেওয়ালে সাঁটা,
জনৈক অজ্ঞাত কবির, এই কবিতাটির সংগাহক
পরাণচন্দ্র রুইদাস | কবিতাটি ২২ জানুয়ারী ২০০৭
এর দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত হয় |
এই কবিতাটি পুরোপুরি লেখা সম্ভব হয় নি কারণ
পার্টির ছেলেরা গিয়ে তখন সেই দোকাটিকেই
ভেঙে ফেলেছিল এবং দাকানদারকে কান ধরে ওঠ-
বসও করানো হয় |
সিঙ্গুর
সিঙ্গুরের মাটি লাল হলো যবে মা বোনেদের রক্তে সারা বাংলা ধিক্কার দিল লজ্জায় মুখ ঢাকতে শোন হে শাসক দল নারীর রক্তে স্নান করে ভাব কাটবে চিরটা কাল? লঙ্কা জ্বলেছে রাবণের ভুলে কৌরব হারে দ্রৌপদীর চুলে ট্রয়ের ধ্বংস হেলেনের তরে ভুলো না এ সকলে | ইতিহাস বলে তোমরাও যাবে সিঙ্গুরের মাটি সেদিন হাসিবে হবে না বিফল নিশ্চিত জেনো নারীর চোখের জল
******** কলকাতার সন্তোষপুর বাজারের সামনে টাঙানো একটি তূণমূল কংগ্রেস পার্টির মহিলা শাখার ব্যানারে লেখা
|
মালিক বন্ধু জয় সিংহ
সিপিএম মানে মালিক বন্ধু চাষিকে ফকির করার কল সিপিএম মানে মিথ্যাভাষণ বুজরুকি আর চাতুরি ছল | সিপিএম মানে নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুরের পর বলাত্কার টাটা-আম্বানির দাসানুদাস আর বিদেষী বণিক তোষণকার | বিরোধী মানে বাংলার চাষি সাহসী লড়াকু তাপসীর প্রাণ বিরোধীরা মানে অম্লান লেখা জয়ের কবিতা সুমনের গান |
******** সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন চলা কালীন, কবিতাটি ২৯ জানুয়ারী ২০০৭ এর দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত হয় |
|
সিঙ্গুর
তরুণকুমার চক্রবর্তী
বুদ্ধ বিমান জেদ ধরেছে সিঙ্গুরট যে চাই,
মরুক কৃষক, মরুক শ্রমিক কুছ পরোয়া নাই |
আছে পুলিশ, আছে গুলি, ক্যাডার আছে সঙ্গে
মা-বোনেদের সম্মান আর থাকবে না এই বঙ্গে |
মা-বোনেদের ইজ্জত আজ লুটবে পুলিশ ক্যাডারে
হিটলারকেও লজ্জা দেবে, বলবে সবাই বাবারে |
আসছে টাটা, আসছে সালিম বাদ সেধো না শরিক ভাই
অল্প হলেও ভাগ পাবে যে ফ্রন্ট ছেড়ো না বলছি তাই |
বুদ্ধ-বিমান চেয়ে আছে সালিম এবং টাটার পানে
বেচবে কেন চাষের জমি, এই কথাটা ওরাই জানে |
উন্নয়নের মধ্য দিয়ে মিথ্যা কথা বলার চালে
গোয়েবেলসও হার মেনেছে সিপিএমের কলে |
ব্যাপারটা যে ট্রেড সিক্রেট এই কথাটা শোন
টাটা সালিম আসলে পরে হবেই রাজ্যে উন্নয়ন |
নেতারা যে থাকবে ভালো বুঝবি কখন হাঁদার দল?
এই সময়ে থাক পাশে সব, বাড়বে তাতে নেতার বল |
**************************
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন চলা কালীন, ২৯ ডিসেম্বর
২০০৬ এর দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকায় কবিতাটি
প্রকাশিত হয় |