*
নেই ভরসা পুলিশে
শ্রীবাস চন্দ্র সাউ, খেজুরি, পূর্ব মেদিনীপুর


জমি আঁকড়ে আছে চাষি
যেমন জল থাকে কলসে
কক্ষক তো ভক্ষক আজ
নেই ভরসা পুলিশে ||

বুলেট আর কার্তুজের খেলা
বঙ্গে এটাই কি শান্তিশৃঙ্খলা
এত গ্লানি এত ক্লেশ
এত বিবাদ কেন এত দ্বেষ ||

মা বোনের ইজ্জত মিশেছে ধুলোয়
চলছে কোলাহল
মা বাব নেই... চতুর্দশী শান্তির
ঝরছে চোখের জল ||

কার ইঙ্গিতে কার শাসনে
চলছে আজ কারা?
চাষের মাঠে জল... রক্ত
বারুদ হয়েছে চারা ||

.        **************          
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      

এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ৩০ মার্চ ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
পুলিশ তোমাকে সেলাম
অতনু কুণ্ডু, কাঁটাপাহাড়ি, বাঁকুড়া

পুলিশ তোমাকে সেলাম
তোমার কাছে নেই অসহায় মানুষের দাম
পুলিশ তোমাকে সেলাম!
খুলে দিলে তুমি মিথ্যার মুখোশ
অন্যায়ের সঙ্গে করোনিকো আপোষ
দেখিয়ে দিলে খাকি পোষাকের সাহস
বিরাট তোমার নাম
পুলিশ তোমাকে সেলাম ||
সাংবাদিকরা খেয়েছে ধাক্কা
দুধের শিশুও পায়নি রক্ষা
নেই তো তোমার কোনো সখা
দিতে গণতন্ত্রের দাম
পুলিশ তোমাকে সেলাম |
অন্যায়ের রাস্তা ধরে
সিঙ্গুর দিলে বেড়া কাঠে মুড়ে
গুলি চালালে নন্দীগ্রামের ওপরে
ডুবলো তোমার নাম
পুলিশ তোমাকে সেলাম ||

.       **************            
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      

এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ৩০ মার্চ ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
দখলদার
সলিল কুমার গুহ, শ্যামনগর, উঃ চব্বিশ পরগনা

যে লড়াই দেখছো সবাই
জমি রক্ষার থোড়াই
নন্দীগ্রামে লক্ষ্য এখন
জমি দখল করাই ||

চাষের জমির রক্ষাকারী
কৃষক পরিবার
রক্ত দিল, জীবন দিল
রুখতে দখলদার ||

পুলিশ, ক্যাডার ক্লান্ত ভীষণ
সয়না যে আর ধকল
পায়ের তলার শক্ত জমি
রক্তে হল তরল ||

চাষির জমি ভোটের জমি
তুলতে ফসল ভোটে
সাঙ্গ হলেই মারণ খেলা
সবাই এসে জোটে |

তাকিয়ে থাকে জমির দিকে
বুক ভেসে যায় শোকে
ফন্দি খোঁজে কেমন করে
মনের ভেতর ঢোকে ||

দখল তো নয় এতই সহজ
আসবে সবাই তেড়ে
রাত পাহারা দিচ্ছে ওরা
পেলেই দেবে মেরে ||

.        **************            
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      
এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ১৩ এপ্রিল ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
শুধুই দখলদারী
বলরাম চতুর্বেদী, কলকাতা

নন্দীগ্রামের জমি নিয়ে
চলছে শুধুই যুদ্ধ
রক্তবন্যা দেখেও নীরব
বিমান এবং বুদ্ধ ||

স্বপ্ন বুঝি আজ ফ্যাকাশে
হায় কেমিকেল হাব রে
বুদ্ধিজীবী, সব জনতাই
ঠিক দিয়েছেন দাবড়ে ||

ফুলিশ ক্যাডার সব নামিয়েও
হল না শেষ রক্ষা
মাঝখানে নির্দোষীরাই
পেল যে হায় অক্কা ||

এমনি করে আর কতকাল
দখলদারী চলবে?
শাসকদলের রক্তচক্ষু
বিরামহীন জ্বলবে?

.        **************            
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      
এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ১৩ এপ্রিল ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
শোনরে বুদ্ধ শোনরে বিমান
সম্বিত মিত্র

শোনরে বুদ্ধ, শোনরে বিমান
তোদের প্রসাদে জমা হল কত
মৃত মানুষের হাড়
হিসাব দিবি কি তার |
তাপসীকে মোদের কেড়েছিস তোরা
ভেঙেছিস ঘরবাড়ি,
সে কথা কি মোরা জীবনে মরণে
কখনও ভুলতে পারি |
আদিম হিংস্র মানবিকতার
যদি মোরা কেউ হই,
স্বজন হারানো শ্মশানে তোদের
চিতায় আমরা তুলবোই |

.        **************            
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      
এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ১৬ এপ্রিল ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
ক্ষমতার পিরামিড
অপরাজিতা গোপ্পী
(রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, ফরওয়ার্ড ব্ লক)

ফাগুণের আকাশভরা এত আনন্দ
পলাশের রঙে অরণ্য উঠেছে রাঙা হয়ে
কোকিলের কুহুতান রোমাঞ্চিত প্রকৃতি |
কিন্তু হঠাত্ এত শোনিতধারা
কোথা থেকে বয়ে আনে জিঘাংসার ভয়ঙ্কর বার্তা?
সবুজ ধানের ক্ষেত হয়ে ওঠে রক্তনদী |
এ নদী কোনদিকে হবে প্রবাহিত?
রুদ্ধ হবে স্রোত, নাকি সমুদ্রে হবে হারা?
ফাগুনের আগুন হয়ে ঝরে পড়ছে
বুলেটবিদ্ধ মানুষের আর্তনাদ---
মৃত্যুর মিছিলে অরণ্যের অন্ধকারে
শকুনের ডানা ঝাপটার শব্ দ |
এ কোন গ্রহ? কোন গ্রহের অধিবাসী আমরা?
নরমেধ যজ্ঞের আগুনে ধরিত্রী আজ ধর্ষিতা |
গড়ে উঠেছে পিরামিড সাম্যবাদ-পুঁজিবাদের সমন্বয়ে,
কৃষকের মৃতদেহের উপর গড়ে ওঠা
পিরামিড বেয়ে কারা যেন চূড়ায় উঠছে |
চূড়ায় বসে দূরবীন নিয়ে রাজা
নব আবিষ্কারে আহ্লাদিত
পারিষদ-বেষ্টিত কস্তুরীর গন্ধে বিমোহিত |


গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে রকেট ছুটছে
দূরবীনে দৃশ্যের পর দৃশ্য ভেসে উঠছে |
অদূরে ওরা কারা? কতগুলি উলঙ্গ নারীদেহ
বুলেটে বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে মুখ থুবড়ে
পড়ে আছে রক্তমাখা সবুজ ধান ক্ষেতে,
স্বপ্নের দিশারী অর্ধউলঙ্গ শিশুরা
রক্তের নিরানি দিয়ে ফসলের উত্সবে উঠেছে মেতে |
নারী-শিশুর রক্তে সোনালী ধানক্ষেত হয়ে ওঠে
ফাগুনের আগুনঝরা বিদ্রোহের বহ্নিশিখা,
পিরামিড ঘিরে পড়ে থাকে সারি সারি লাশ!
সমাজতন্ত্রের কবরের উপর
জ্বলে ওঠে পুঁজিবাদের পিলসুজ!

 ৩
রাজা তুমি কি শুনতে পাচ্ছ
স্বৈরাচারী শাসকের পাশবিক উল্লাস?
শুনতে পাচ্ছ, অত্যাচারিত পদদলিত
মানুষের কান্নার হাহাকার?
সমতলের অরণ্য অন্ধকারে ধর্ষিতা নারীর
আগুনে ঝলসানো মৃতদেহ দেখতে পাচ্ছ?
দেখতে পাচ্ছ মাতৃত্বের নিরাভরণ বিমুক্তি?
জীবিতাবস্থায় যাদের ছবি
কেউ তোলে না তারা আজ টিভি-র পর্দায়
সংবাদপত্রের পৃষ্ঠায় জ্বলজ্বল করছে |
রাজা, পিরামিডের চূড়া কি আকাশ ছুঁয়েছে?
সূর্যের আলো কি রক্তনদীর বুকে রামধনুর
মতো দৃষ্টি নন্দন হয়ে উঠেছে?
রক্ত ঝরছে, অন্ধকারে ঢেকে গেছে ধরিত্রী,
ধর্ষিতা নারীর মৃতদেহ বেওয়ারিশ লাশ
হয়ে পড়ে আছে মাঠের গহ্বরে |
আর রাজা পিরামিডের চূড়ায় বসে স্বপ্ন দেখছে---
রাশি রাশি লাশ মানে রাশি রাশি অর্থ, রাশি রাশি বুলেট
এবং প্রচুর উল্লাস |


.        **************            
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      
এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ১৯ এপ্রিল ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |
এই কবিতাটি, কবিতার নিরিখে নিঃসন্দেহে একটি অনবদ্য সৃষ্টি |
কিন্তু কবির মনে এই রকম ভাবনা চিন্তা থাকলেও তাঁর দল এখনও
(২১/৪/২০০৭), এই কবিতায় উল্লেখিত 'রাজার' সরকারেরই শরিক,
অতএব এই কর্মেরও...!

মিলনসাগর
*
বর্গি হানা ২০০৬
মৃদুল দাশগুপ্ত

ওরা যদি এসে গায়ে হাত দেয়
মা-র কোল থেকে শিশু কেড়ে নেয়
শুরু হলে সেই কালো অধ্যায়
আমি বলবোই --- এটা অন্যায় |

সেই যুগ যদি এই যুগে আসে
গ্রামগুলি কাঁপে খাকি সন্ত্রাসে
ঘোরতর সেই সর্বনাশে
কৃষিজমি যায় নগরের গ্রাসে
আমি বলবোই --- সেটা অন্যায় |

ধনখেতে যদি নামে রাজ হাতি
অতি বিদ্যুতে নেভে দীপবাতি
শুরু হয়ে যায় বর্গী ডাকাতি
ফের এলে সেই কালো অধ্যায়
আমি বলবোই --- সেটা অন্যায় |

.        **************            
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      
এই কবিতাটি হুগলী জেলা থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক 'প্রতিপক্ষ'
পত্রিকাতে ১৬ - ৩০ এপ্রিল ২০০৭ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
নাকের বদলে নরুণ
অজাতশত্রু

প্রাকার প্রাচীর চারিদিক থেকে
সিঙ্গুর ঘিরে ফেললো
হবেই টাটার কারখানাটা
বুদ্ধের কথা মিললো |
দশ ফুট বাই ইঞ্চির
বাউণ্ডারি প্রায় শেষ
একলাখী গাড়ি চাষ জমিতে
তৈরী হবে বেশ |
সাতের শেষে সিঙ্গুর চিত্র
আমূল বদলে যাবে
লাঙল ফেলে চাষিরা সব
কারখানাতে যাবে |
এক লাখেতে মোটর গাড়ি
বড়ই মজার জিনিষ
ইউরিয়া সার না কিনে ভাই
গাড়ি একটা কিনিস |
ঘরে ঘরে মোটর গাড়ি
কেউ কি ভেবেছিলি?
নাড়ির টানের জমিটা তাই
সরকারকে দিয়ে দিলি |
অর্থনীতি চাঙ্গা হবে
শিল্পায়নের ফলে
চাষির দিন কাটবে এবার
টাটার মোটরকলে |
দেশের তরে ক্ষুদ্র স্বার্থ
না হয় ভুলে গেলি
নাকের বদলে নরুণ গোছের
কিছুতো একটা পেলি |

.        **************            
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      
এই কবিতাটি হুগলী জেলা থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক 'প্রতিপক্ষ'
পত্রিকাতে ১৬ - ৩০ এপ্রিল ২০০৭ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
অভাগীর স্বর্গ
নবারুণ ভট্টাচার্য

(
নন্দীগ্রামের সেই মাকে আমরা দেখেছি টিভিতে | মাথায় ব্যাণ্ডেজ
জড়ানো | নিষ্প্রাণ | চোখ খোলা |
)

কেন চেয়ে আছ গো মা
চিত্ হয়ে শুয়ে টেবিলের ওপরে
মাথায় রক্তমাথা, ব্যাণ্ডেজ না পতাকা
কিছু কি দেখছো তুমি? ক্ষুব্ ধ  জন্মভূমি!
শুনতে পাচ্ছ? বলতে চাইছো কোন কথা?
না কি শব্ দহীন মর্গে দৃশ্যমান ঠাণ্ডা নিরবতা |
না-শোনাই ভাল ওই ঘাতকের নির্লজ্জ্ দামামা
কেন চেয়ে আছ গো মা
ওরা কিছু দেবা না তোমাকে এমনটা নয়
এতটা অকৃতজ্ঞ ওরা? না কি দেদারে সদয়
হার্মাদ আদরে ওরা বিলিয়েছে
সরকারি বা বেসরকারি টোটা
খুলিফাটা --- যার শব্ দে  উড়ে গিয়েছিল
মাছরাঙা, আয়নাপক্ষি, গাংশালিক, শ্যামা,
কেন চেয়ে আছ গো মা
পুলিশ ছিল শিরস্ত্রাণে, সঙ্গে ছিল বস্ত্রে-মুখ-আবৃত খুনে
তখন কি গ্রহণে টেকেছিল কৃষ্ণছায়া চরাচর
তত্পর হয়েছিল তখন কি নরকের বাসিন্দারা
ভূপৃষ্ঠে নেমেছিল কীচক-পিশাচবুদ্ধি যৌথবাহিনী
মুখে হায়নার মত ডাক, বুট পায়ে চটি পায়ে ছোটে
এ-ভাবে কি হানা দিত বর্গি বা সন্ত্রাসী বোম্বেটে
রাইফেল, রিভলভার, লাঠি, ছুরি, পাইপগান, বোমা
ট্রিগারে দক্ষ টান, খান খান মুহুর্ত বা চূর্ণ লহমা
কেন চেয়ে আছ গো মা
যে-ট্রলারে চেপে সমুদ্র থেকে আসে খুন করা মাছ
সে-ট্রলারে খুন হওয়া ছেলে সমুদ্র গভীরে চলে যায়
মাটির পাহাড় ঢাকে দগ্ধ মৃত শিশু
চাপ চাপ রক্ত চাটে রৌদ্র জিভ, ওরে বুদ্ধিজীব মাছি
ধর্ষিত মেয়েদের রুধিরাক্ত চুল, অন্তর্বাস, ওড়না
নখে দাঁতে ছেঁড়া শাড়ি
তার মধ্যো দেখা যায় একরত্তি ইউনিফর্ম---
নিতান্ত স্কুলবালিকার জামা
কেন চেয়ে আছ গো মা
বৃষ্টির ঝালর, কনে দেখবার আলো,
কোকতুর পাখির ডাক
সব তোমার
কষ্ণকের হলুদ,আকাশে বাটনার ছোপ,
শিলাবর্ষণের ডগর
সব তোমার
শিশির ফোঁটার ছোট-ছোট হাত পা,
চমকানো গঙ্গাফড়িং
মেঘলোকে উড়ন্ত বিদ্যুত্
সব তোমার
সমুদ্র থেকে উঠে আসা শাঁখা,
দুধ ও কাজলের দেয়ালা
গঙ্গাপুজোর মেলার আলো
সব তোমার
সব তোমার সব তোমার সব তোমার সব তোমার
তোমার মুখপানে চেয়ে  রূপকথা বলে যাবে
ব্যাঙ্গমী ব্যাঙ্গমা
কেন চেয়ে আছ গো মা
তোমারই স্মরণে দেখ আকাশ প্রদীপ জ্বলে কত
চাঁদ, গ্রহ, তারা --- চোখ বোজো
কুয়াসার আচ্ছাদন ঢাকুক তোমায়
চোখ বোজো
ধান, খই, ফুল, নদী জড়াবে তোমায়
চোখ বোজো
আরতি ও আজানে জেন বড় শান্তি আনে
চোখ বোজো
চোখ বোজো চোখ বোজো চোখ বোজো চোখ বোজো
তুমি কি
প্রত্যেকবুদ্ধ, খোলা চোখে করুণা না ক্ষমা
কেন চেয়ে আছ গো মা
সূর্য রোজ তোমার হয়ে
আকাশে জমা দেবে রক্তমাখা হলফনামা
কেন চেয়ে আছ গো মা
কেন চেয়ে আছ গো মা

.        **************            
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      
প্রত্যেকবুদ্ধ - বিশ্বে যখন বুদ্ধ অনুপস্থিত থাকেন, ধর্ম যখন লুপ্ত
হয়ে যায়, তখন খণ্ডমহিমা নিয়ে যাঁরা পথ দেখেন, তাঁরা
প্রত্যেকবুদ্ধ | --- সূত্র নাগার্জুন |

এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ২০ এপ্রিল ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
দুকান কাটা
হারাধন ভট্টাচার্য

নির্লজ্জের লজ্জা হবে
এটা ভাবই ভুল
দু'কান কাটার লজ্জা
ভুল সেটা বিলকুল |
শ্বেত শুভ্র পোষাকে তার
লেগেছে রক্ত ছিটে,
বন্দুক তার উদ্যত আজ
কেড়ে নিতে জমি ভিটে |
আইনি শাসন আনতে গিয়ে
বেআইনি কাজ,
তারই ফলে নন্দীগ্রাম
রক্ত-স্নাত আজ |
ইঁটের বদলে পাটকেল
প্রতিবাদ ছিল এটা,
বুদ্ধরাজের পুলিশ এবার
পাল্টে দিল সেটা |
নির্মমভাবে চালাল পুলিশ
ইঁটের বদলে গুলি,
মা, মাটি বাঁচাতে গিয়ে
ফাটলো মাথার খুলি |
নন্দীগ্রামের ঘরে ঘরে তাই
শুধু কান্নার রোল,
স্বজন হারানো বেদনায় আজ
হার্য়েছে তারা বোল |
পুত্র হারিয়ে মা কাঁদে হায়
ভাই হারিয়ে ভাই,
শিল্প গড়তে এমন খুনের
নজির কোথাও নেই |
দিশেহারা হয়ে স্বজনের ---
খোঁজে নন্দীগ্রাম ভাসছে,
তবুও রাজা বলছে হেসে
সিঙ্গুরে টাটা আসছে |
ক্লাসিকাল উন্নয়নের---
এটাই বুঝ ধরন,
জমি জিরেত ছাড়তে হবে
মইলে হবে মরণ |

.        **************            
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      
এই কবিতাটি 'জাগো বাংলা' পত্রিকাতে ২০ এপ্রিল ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
রাজা বাংলাকে করোনা উলঙ্গ          
তারকনাথ দে

রাজা বাংলাকে আর করোনা উলঙ্গ
তোমার কাজে মানুষের মোহভঙ্গ |
তোমার সর্বনাশা বুদ্ধি নাশ
আজ কৃষকের হচ্ছে সর্বনাশ |

শিল্পের জন্য হয়েছ উন্মাদ
তাই আজ কৃষকের আর্তনাদ |
তাদের সাজানো চাষের জমি
জন্মভূমি প্রাণের চেয়েও দামি |

সবুজ সুফলা শস্যে ভরা
কত কষ্টের তৈরি করা |
ফলে কত সব সবজি সোনার ধান
সেই মাটিতে যাচ্ছে তাদের প্রাণ |

যে জমিতে ছিল সোদা মাটির গন্ধ
সেই মাটিতে আজ গুলি বারুদের গন্ধ |
সজন হারা কৃষকদের হাহাকার
কান পেতে শুনবেন কি সরকার |

সবুজ রাঙিয়ে রক্ত নদীর ধারা
কি অন্যায় করেছে আজ তারা |
আর কত কৃষকের রক্ত ঝরা
রক্ত নদীর উপর যায় কি শিল্প গড়া |

.        **************            
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      
এই কবিতাটি 'জাগো বাংলা' পত্রিকাতে ২০ এপ্রিল ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
প্রলয় নাচন          
সুনন্দ চট্টোপাধ্যায়

হাবা, হবলার ভব নাকি ভাই,
বোঝায়, জানায়, গল্প শোনায়
শিল্প শিল্প মিথ্যাচারে,
শরীর মাঝে বুলেট হানায় |
একী মেজাজ, একী রাগ |
অস্তিত্ব বিপন্ন আজ |
আমার তোমার বাম-জমানায়,
প্রলয় নাচন, আজব রাজ |
শবদেহের কারবারী সব,
নরখাদক পশুর দল,
আগ্রাসনের গনগনে আঁচ ---
পুঁজিবাদ, এগিয়ে চল |
নতুন দিনের আশায় বাঁচা,
ঝড় থামার পূর্বাভাস, (যখন)
যখন কি তাই চলছে এখন,
নতুন চলার বাঁচার শ্বাস |

.        **************            
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      
এই কবিতাটি 'জাগো বাংলা' পত্রিকাতে ২০ এপ্রিল ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
তাপসী          
সুবীর কুমার দে

তাপসী তুমি কি চিনতে পেরেছ
তোমার ধর্ষক, খুনি কারা?
পোষা প্রভুভক্ত পুলিশ, নাকি দালাল রক্ষক তারা |
'তাপসী' তুমি কি করেছিলে
জমি দেবে না, তাই বলেছিলে,
তাতেই ধর্ষণে ওরা প্রাণ কেড়ে নিলে |
কত 'তাপসী'র প্রাণ নেবে ওরা,
কত 'তাপসী'র মান |
ওই শয়তানদের ঘরেও মা বোন আছে
ওদেরও আছে সম্মান |
করি 'তাপসী'র আত্মার শান্তি কামনা,
ধরা পড়ুক খুনি, শাস্তি হোক,
শুধু মোর এই বাসনা |
জানি না আদৌ, সেটা হবে কি না?

.        **************            
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      
এই কবিতাটি 'জাগো বাংলা' পত্রিকাতে ২০ এপ্রিল ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
*
নন্দীগ্রাম          
রবি গুপ্ত

সাপধরে দূর বনে খেতে
সাপের খেলা দেখায় বেদে |
আচমকা সে খেল ছোবল
সামলে নিল বিষের ধকল
কী করবে সাপের বিষে
জানা আছে কাটান কীসে
বললে হেসে ; ঘোর কলি
শেষ কালে তুই "বুদ্ধ" হলি |


.        **************            
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      
এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ২৩ এপ্রিল ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
গান          
সিঙ্গুরের মায়েদের কণ্ঠে শোনা

জমি আমাদের মান
জমি আমাদের প্রাণ
জমি আমাদের জন্মভূমি
হায়রে
টাটার দল আসিয়া
জমি নিচ্ছে কাড়িয়া
কেমনেতে বুক ধরি |

টাটা তোরা ফিরে যা
সোনার জমি রেখে যা
মারিস না বুকে আর ছুরি
হায়রে
টাটার দল আসিয়া
জমি নিচ্ছে কাড়িয়া
কেমনেতে বুক ধরি |

.        **************            
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      

মিলনসাগর
*
শহীদ তাপসী          
অশোক মুখার্জী, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা, বেলঘরিয়া

শহীদ হলে তাপসী তুমি সৃর্যোদয়ের ভোরে |
পুড়িয়ে তোমায় মারলো যারা
বুঝলো না তো কেউ তো তারা |
জ্বালিয়ে দেব আমরা তাদের বিদ্রোহী সিঙ্গুরে |
প্রতিবাদে প্রতিরোধে জীবন ছিল পণ
ক্লান্ত তুমি জন্মভূমি সবার আপনজন |
বুদ্ধ বিনয় বিমানেরই সুযোগ্য সব চেলা |
হরণ করলো তোমায় তাপসী
সেই কালো ভোরবেলা |
ধর্ষণ করে ওরা তোমার পুড়িয়ে দিল দেহ |
তোমার আর্তনাদের ভাষা শুনলো না তো কেহ |
জ্বালিয়ে দেব আমরা ওদের
রাখলাম এই সর্ত |
বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি
বুঝে নিক দুর্বৃত্ত |


.        **************            
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      
এই কবির অন্য একটি কবিতা "সিঙ্গুর বিদ্রোহ"
পড়ুন এখানে ক্লিক
করে |

মিলনসাগর
*
সভ্যতার সঙ্কট ১৪/০৩/০৭ নন্দীগ্রাম
সিদ্ধেশ্বর সেন

("একজন বিশিষ্ট উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি বলছেন সকলকে ধনী করব |          
আমি দুঃখিত, তাঁর সঙ্গে একমত গতে পারছি না | ধনী নয়, উচ্চাকাঙ্ক্ষা
    হওয়া উচিত হৃদয়বান হওয়ার
জন্য |"                                                                                     ---
রাজ্যপাল শ্রী গোপালকৃষ্ণ গান্ধী,
             বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন, মেদিনীপুর |)


ইতিহাসে পরালে কলুষ
কেন, কোন পাশবিক,
হিংশ্র, বর্বরতাতে

কবিগুরু শান্তি নেই,
ধিক্কার হানো---
এই স্বৈরাচারে
অহং -এর ক্ষমতাদম্ভের---
ফের তোমার সভ্যতার সঙ্কটে |

দাও তোমার "মাভৈঃ" ---
"শেষ জন্মদিনে শান্তিনিকেতনে
দিলে ১লা বৈশাখে
সেই "মানুষেরই বিশ্বাসের" সত্যে---
তোমার অমোঘ বাণীতে

১৪/০৩-এ ভয়ঙ্কর "কালো দিনে"
কৃষক-রমণী-শিশু নিরস্ত্রের নন্দীগ্রামে
পালাতে পালাতে
পিঠে গুলি, মাথায় গুলিতে
কার নির্দেশে, রাষ্ট্রিক সন্ত্রাস অস্ত্রধারীর
---এ অমানুষিক গণহত্যা ঘটে |

(জ্যোতি বসুও এমনকি প্রকাশ্যেই জানতে চান
গুলি কেন লাগে মেয়েদের পিঠে!)

তবু, রক্তের ছিটে
চুস্ত সাদা ধুতি-পাঞ্জাবিতে লাগে নি কোথাও!
নাকি মিথ্যেয় ঢেকেছে

নিষ্পাপ শিশুর শবের মত নিষ্পন্দ
হৃদয়বত্তাও,
তাই ভেসে যায় হলদি নদীতে

পরিশিষ্ট : খুঁজেও পাইনি আমি কে চাইল ফ্রন্টে "ক্ষমা", কিম্বা পদ ছেড়ে নামা,
শুধু "আমি দায়ী" "আমি দায়ী" ঘোষণায় বলে,
তবু আজও বেশ---
ধোপ-দুরস্থ হৃদয়ে-শ্বেত-শুভ্র পরিধেয়ে, দায়হীন বুদ্ধি বিবেকে ||


.       **************

.                                                         
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                                  সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায়
ফেরত
      
এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ৫ মে ২০০৭ এ প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর