আর চোদ্দ পুরুষের ভিটে-মাটি, চাষের জমি মাছের পুকুর, আমাদের ঘর-গেরস্থালি আমাদের রুটি-রুজি বে-বাক কেড়ে নিবে আমরা কিছু বলতে গে'লি--- লাঠি গ্যাস গুলি ; শিশু কোলে মায়ের রক্তে ভিজতে থাকে নিজের মায়ের মত চাষের জমি জমে ওঠে লাশের পাহাড় | মরা মানুষদের হাত ধরে, পা ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় লাশকাটা ঘরের দিকে | বোধ হয় কলজে খুবলে দেখবে লোকগুলো এমন আড়বুঝা, এমন গোঁয়াড়, এমন বোকার হদ্দ ছিল কেন যে বুঝল না--- বাবুরা যা চায়, ভালর জন্যই চায় |
চিরকাল চাষ হচ্ছে বলে সিঙ্গুর-ভাঙ্গর-নন্দীগ্রাম হাল চষে যাবে, ত 'কারখানা হবে কোথায়!
রয়েছি ক্ষীরোদ সমুদ্রে অনন্ত শয়নে কর্ণকুহরে ঢুকলেও আর্তনাদ কীই বা করা যায়! শরীরে শৈথিল্য, মৃদু উত্তাপ ওঠে ত্বক হতে, ধীরে বহে শ্বাসবায়ু শ্রবণে আসলেই বা আমি তো অনন্ত শয়নে, দায় নেই কোনও || তোমাদেরই বা কী দায়? সুনিশ্চিত হলে মৃত্যু ভুলে যাওয়া ভালো ভোরের শিউলি, হরিৎক্ষেত্র | আর্তনাদ --- অর্থ নেই কোনও || কেবল ভেসে আসে দূরাগত ধ্বনি --- কটু, তীব্র হানা দেয় গলিত শব ঠিকরে পড়ে রক্তনদী এছাড়া উপদ্রব কিছু আর নেই এখনও তাই অনন্ত শয়নেই ||
লড়াইয়ের তরজা চন্দন সামন্ত, ভোগপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
আমি কিন্তু জমি ছাড়া পক্ষপাত-ই নই সিঙ্গুর কিংবা নন্দীগ্রামে করতাম হৈ চৈ || কিন্তু আমার পায়ে বাঁধা বাম পায়েরও কাছে ছুটতে গেলেই দেবে টান পড়ব নাকি পাছে ? তাই তো এখন সবুর করি একটা রফা হবেই তরজা লড়াই জমিয়ে দেব দেখবে তখন সবেই || বেশ তো আমরা ভালই ছিলাম "মধুভাণ্ড" লয়ে ডানে বামের গাঁটছড়াটা যাচ্ছিল বেশ সয়ে || কিন্তু কিসে কি যে হল এস-ই-জেডের লাগাম টান লাগাতেই বিগড়ে গেল চাষা-বাম-অবাম || এখম তবে সামলে সুমলে ফাটল দাগা চাই গরিব গুর্বো জোট বাঁধলে রক্ষা কারও নাই ||
আগে ছিল জমিদার লেঠেল --- এবং গুমঘরে পড়েছিল রায়তের লাশ--- একালে এসেছে নেতা সেই চেনা ঢং পিছনে ক্যাডার নিয়ে স্বরূপ প্রকাশ | ময়দানবের বাড়ি বেলোয়াড়ী ঝাড় নাচে থাকে রাঙামাটি মানুষের হাড় !
পথে পথে কৃষিমুণ্ড পথে পথে আমাদের পরিত্যক্ত লাশ এই মাত্র শেষ হল আমাদের প্রতিরোধ, স্বপ্নতিতাস | লালঝাণ্ডা কমরেড, বাবা ছিল তেভাগার চাষি কাস্তে হাতুড়ি তারা --- পরিবার পরিজন মাসি সকলেই দেখছিল : ফেটে গেছে তলপেট, গাভী, আমিও কি কমরেড ? সেই কথা সারাদিন ভাবি পথে পথে কৃষিমুণ্ড, শকুনেরা মাংস খায় চিরে পরিত্যক্ত আমরা পড়ে থাকি চুপচাপ মার্ক্সবাদী নীড়ে মার্ক্সবাদ মার্ক্সবাদ, কাটা হাতে লাল ঝাণ্ডা তুলে মাঝরাতে আমরাও চাষিদের কান দিই মুলে
ট্রলার-ভর্তি লাশ কিছু যায় সাগরের দিকে কিছু যায় নদীর কূলে | রমণীপাচারে এ-রাজ্য প্রথম, আর বলাত্কারে দ্বিতীয় আছেই | লাশ গায়েবে তুমি কেন প্রথম হবে না ? সব লাশ অনন্তের দিকে চলে যায়, এদিকে কাদের শাশ্বত পতন হতে থাকে ; শাশ্বত পতন হতে থাকে | তা বলে ভেবো না, পরিস্থিতি খুব গুরুতর | হাসির উপকরণ আছে --- ওই দ্যাখো, প্রতিবাদীর সভায় দুই কবিখ্যতিগ্রস্ত কেমন তত্পর, যা-ই ঘটুক ওঁরা ঠিক গুডবয়, ফার্স্টবয় থাকেন | ওঁদের থাকতে হয় | আমাদের পবিত্র ও সুবোধ সরকার রুদালি-ও রেখেছেন কাগজ টিভিচ্যানেলে কিছু খুলে দিয়ে | শাশ্বত পতন হতে থাকে ; শাশ্বত পতন হতে থাকে | ট্রলার-ভর্তি লাশ যাবে, যাবে অনন্তের দিকে সকালে, দুপুরে কিম্বা বিকেল বেলায় সন্ধ্যা বা রাতে--- অকীর্তির বোধ আজও খেলা করে মানুষমাথাতে--- কীভাবে যে করে, কৌতুহল হয়, কেন করে |
আমার বলার কিছু ছিল না চেয়ে চেয়ে দেখলাম তারা লাঠিচার্জ, কান্নাগ্যস চেয়ে চেয়ে দেখলাম তারা গুলি করে, আর দূরে শিশু আর নিরস্ত্র মায়েদের ধুপধাপ, আছাড়ি পিছাড়ি আমার বলার কিছু ছিল না আমরা তো জানতাম শিল্পচর্চার কাজে রক্ত ঝরে, লাশ পড়ে | ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে... হ্যাঁ তাতে দুঃখিত, এটা দুর্ভাগ্যজনক আমরাও তো চিরকাল মৃদুমন্দ নরম মনেরই কাণ্ডারী
কিন্তু এত প্রতিবাদ, এত যে আগ্নেয় এসবের মানে কী ? কারা কৃষি বুদ্ধিজীবী, কোথা ছিল বাড়ি !