অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কবিতা (সংগ্রহ)
*
বোঝাবুঝি
অশোক দত্ত


বইমেলা ঠাঁই-নাড়া হ'লি
বাবুদের খুব রাগ |

আর চোদ্দ পুরুষের ভিটে-মাটি,
চাষের জমি মাছের পুকুর,
আমাদের ঘর-গেরস্থালি
আমাদের রুটি-রুজি
বে-বাক কেড়ে নিবে
আমরা কিছু বলতে গে'লি---
লাঠি গ্যাস গুলি ;
শিশু কোলে মায়ের রক্তে ভিজতে থাকে
নিজের মায়ের মত চাষের জমি
জমে ওঠে লাশের পাহাড় |
মরা মানুষদের হাত ধরে, পা ধরে
টানতে টানতে নিয়ে যায়
লাশকাটা ঘরের দিকে |
বোধ হয় কলজে খুবলে দেখবে
লোকগুলো এমন আড়বুঝা,
এমন গোঁয়াড়, এমন বোকার হদ্দ ছিল কেন
যে বুঝল না--- বাবুরা যা চায়, ভালর জন্যই চায় |

চিরকাল চাষ হচ্ছে বলে
সিঙ্গুর-ভাঙ্গর-নন্দীগ্রাম
হাল চষে যাবে, ত 'কারখানা হবে কোথায়!

এসব বুঝতে চায় নি বলে
আমার বৌ-বাচ্ছা লাশ কাটা ঘরে,

আমার কোনও রাগ নাই |

অখচ, বইমেলা ঠাঁই-নাড়া হ'লি
বাবুদের খুব রাগ |

.        **************          
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ১৩ মে ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
বিশাক্ত বাঁশি
পরিমল বৈদ্য, ত্রিবেণী, হুগলী

বাজাতে চইছে কারা বৃন্দাবনের বাঁশি
নন্দীগ্রামের পথে?
বুকচাপা কান্না সেথায় স্বজন হারানোর
দুঃস্বপ্ন শুধুই সাথে!
তন্দ্রা কাটে গুলির শব্ দে
থরথর দেহ, ভয়ার্ত কিশোরীর প্রাণ
কোন নৈতিকতায়, বিশ্বায়নের কোন সুরে
শান্তির আনবে গান?
বহুদিন আগে ভেসে গেছে বাঁশি
ধূসর হয়েছে নদী
ভাটির স্রোতে ভাসে লাশ রাশি রাশি
প্রতিবাদ ওঠে যদি!
আক্রোশের ফেনা জমে আছে তীরে
শেয়ালেরা ঘুরছে দলে দলে
ফিসফিস শব্ দ  নিশীথ অন্ধকারে
শব্ দহীন পথ চলে!
ও বাঁশি প্রেমের নয় -- ছলনায় ভরা
হৃদয়ের বিষ নাশো
সত্যই শান্তি চাও? শান্তি আসবে ফিরে
জনতাকে ভালোবাসো |

.        **************          
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ১৮ মে ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
প্রজা"পতি" তন্ত্র
কৌশিক পাল, কলকাতা


তপ্ত দগ্ধ প্রাণ মোর
শব্ দ জব্ দ  কর্ণ ঘোর |
গুলি গোলা ছুটছে ওই
মন্ত্রীমশায় ভাবছে কই?
মত বিনিময় সর্ব দল
কে আসল কে বা খল?
নারী শিশু চোদ্দ লাশ
প্রজা"পতি" নাও সাবাশ |



.        **************          
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ১৮ মে ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
অনন্ত শয়নে
রাজীব কুমার ঘোষ, ধরমপুর, চুঁচুড়া, হুগলী

রয়েছি ক্ষীরোদ সমুদ্রে
অনন্ত শয়নে
কর্ণকুহরে ঢুকলেও আর্তনাদ
কীই বা করা যায়!
শরীরে শৈথিল্য, মৃদু উত্তাপ ওঠে
ত্বক হতে, ধীরে বহে শ্বাসবায়ু
শ্রবণে আসলেই বা আমি তো
অনন্ত শয়নে, দায় নেই কোনও ||
তোমাদেরই বা কী দায়?
সুনিশ্চিত হলে মৃত্যু
ভুলে যাওয়া ভালো
ভোরের শিউলি, হরিৎক্ষেত্র |
আর্তনাদ --- অর্থ নেই কোনও ||
কেবল ভেসে আসে
দূরাগত ধ্বনি --- কটু, তীব্র
হানা দেয় গলিত শব
ঠিকরে পড়ে রক্তনদী
এছাড়া উপদ্রব কিছু আর নেই
এখনও তাই অনন্ত শয়নেই ||

.        **************          
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ১৮ মে ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
সনির্বন্ধ আবেদন
অতনু দাস, বনমালীপুর, বারাসাত, উত্তর ২৪ পরগণা

আবার আসিস ফিরে সাধ যদি হয়
ফাগুন ফুরিয়ে আজ মাঠের দোতারা
একা একা বেজে যায় পাখি নীড়হারা
ধান আজ রক্তমাখা ধানের তো ভয়
দিশেহারা তালপাটি মন শবময়
বনে বনে কালপেঁচা দিতেছে পাহারা
জলক্ষেত গন্ধ নিয়ে মরে গেল যারা
আলপথে শুয়ে আছে তাদের হৃদয় ||
সবুজ করুণ মটি-বাউলের ভাতে
পুড়ে ছাই, হলুদ সন্ত্রাসী ক্ষমতায়
পোড়ে সুদর্শন, দীপ জ্বলে না সন্ধ্যায়
তুই মেয়ে বাঁধ রাখী ভগ্ন সেই হাতে
দল সব নতজানু হবে বাংলায়
তুই শান্তি, তুই প্রেম, শূণ্য বুকে আয়... ||

.        **************          
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ১৮ মে ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
ছাগফসলি বৈঠক
অচিন্ত্য সুরাল, কলকাতা

প্রথম দফায় ক্রুদ্ধ
তারপরে শুরু যুদ্ধ
নন্দীগ্রামের বীরবিক্রমে
সম্প্রতি বাকরুদ্ধ ||

এখন কি আছে উপায়
মুখটা কেমনে ছুপায়
হেল হয়ে গেল রাজা রাজা খেলা
হাঁটিবে কেমনে দু'পায় ||

এবারে সর্বদলীয়
বৈঠকপথ চলিও
বিপ্লবী পথ নিজেই খুঁড়েছি
নাইকো অন্ধগলিও ||

হে শরিক এসো বাঁচাও
খুলেছে পিরান কাছাও
ওগো বিদেশিনী প্যাঁচে পড়ে গেছি
অঙ্গুলি তোমার নাচাও ||

বলিও তাহারে বলিও
খেলিব প্রেমের হোলিও
দুশো পঁয়েত্রিশি ন্যাজের ডগায়
ফোটাব কুসুমকলিও ||

ভবী কি তাতেও ভুলবে?
প্রশ্ন যে কিছু ঝুলবে
কেন না প্রেমের গুলালে চতুর
আলকাতরাও গুলবে ||

তাছাড়া সোমেন মমতা
ওদের কীই বা ক্ষমতা
নন্দীগ্রামের মায়েরা আছেন
আছে উত্তাল জনতা ||

তারাই শান্তি আনবে
যেই দিন তারা জানবে
খুনি-ধর্ষক নেতে ও প্রণেতা
টানবেই ঘানি টানবে ||

বাকিরা কথাই বলবে
আখের গোছানো চলবে
বৈঠক শেষে ছাগের তৃতীয়
সন্তান কিছু ফলবে ||


.        **************          
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ১৮ মে ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
পালকির গান
প্রশান্ত বেরা

পালকি চলে পালকি চলে আগুন জ্বলে
(আসছে) ক্যাডার হন হনিয়ে
ছুঁড়ছে গুলি শন শনিয়ে ||
শিশুর দল ভয়ে ছোটে
কাঁদছে মাতা পুত্র শোকে ||
মরছে চাষি লাঠির ঘায়ে
বিমান হাসে খুশি হয়ে ||
শত সাধনার ১৪ তারিখ
লক্ষ্মণ শেঠের হয় তারিফ ||
নব সামন্তের পুকুর পাড়ে
কৌরবেরা বস্ত্র কাড়ে ||
ধরল যারা চুলের ঝুঁটি
কাটল যারা শিশুর টুঁটি,
ঘুরে বেড়ায় বুক ফুলিয়ে
সি আই ডি'র দল ভয়ে মরে ||


.        **************          
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ৪ জুন ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
রূপক কংগ্রেস
পুলক অধিকারী

আমরা হলাম রূপক কংগ্রেস
  রূপ মোদের অনেক
ঘোলা জলে মাছ ধরি
  কখনও ধরি ভেক ||

এবার মোরা ভাসাব
  আন্দোলনের তরী
"মাল" কামাতে কিন্তু ভাই
  বুদ্ধের চরণ ধরি |

"যুবক তুমি এগিয়ে চল
  আমরা তোমার পিছনে"
বিপদ দেখলে কেটে পড়ি
  দাঁড়াই নাকো সামনে ||

আরও আছে অনেক কিছু
   বলব এবার ভাই
সিঙ্গুর থেকে নন্দীগ্রামে
   আমরা আছি আবার নাই ||

কে বলল একা আছি
   একা মোরা নই
সি পি এম পাশে আছে
   আমাদের সত্ ভাই ||

কৃষিজমি মাতৃভূমি
   চুলোয় যায় যাক
আমাদের সাইন বোর্ড
   আমাদেরই থাক ||

.        **************          
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০০৭
এ প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
লড়াইয়ের তরজা
চন্দন সামন্ত, ভোগপুর, পূর্ব মেদিনীপুর

আমি কিন্তু জমি ছাড়া
পক্ষপাত-ই নই
সিঙ্গুর কিংবা নন্দীগ্রামে
করতাম হৈ চৈ ||
কিন্তু আমার পায়ে বাঁধা
বাম পায়েরও কাছে
ছুটতে গেলেই দেবে টান
পড়ব নাকি পাছে ?
তাই তো এখন সবুর করি
একটা রফা হবেই
তরজা লড়াই জমিয়ে দেব
দেখবে তখন সবেই ||
বেশ তো আমরা ভালই ছিলাম
"মধুভাণ্ড" লয়ে
ডানে বামের গাঁটছড়াটা
যাচ্ছিল বেশ সয়ে ||
কিন্তু কিসে কি যে হল
এস-ই-জেডের লাগাম
টান লাগাতেই বিগড়ে গেল
চাষা-বাম-অবাম ||
এখম তবে সামলে সুমলে
ফাটল দাগা চাই
গরিব গুর্বো জোট বাঁধলে
রক্ষা কারও নাই ||

.        **************          
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০০৭
এ প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
তোরা খুলে রাখিস দোর
মালবিকা গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা

নন্দীগ্রামের সই,
রক্তমাখা অন্ন দিলি
খেতে পারছি কই |

ঘরের ভেতর গভীর আঁধার
বাইরে ততোধিক
হারাধনের দশটি ছেলে
হারিয়েছে দশদিক ||

হারাধন ? ঘুমিয়ে আছে
বুলেট বুকে নিয়ে
বৌ হয়েছে আত্মঘাতী
গায়ে আগুন দিয়ে ||

নন্দীগ্রামের সই,
মাত্র তোরা ক'জন
তবু মাথা নোয়াস কই ?

কীসের জোরে লড়িস তোরা
আগলাস ঘর বাড়ি
চতুর্দিকে ছড়াচ্ছে বিষ
বিশ্বায়নের মারী ||

ওদের হাতে অস্ত্র আছে
অর্থ, আছে গদি
তোরা শুধুই মানুষ
তোরা নোসরে চতুষ্পদী ||

প্রমাণ দিলি সব হারিয়েও
শুধুই মনের জোরে
নতুন করে বাঁচার মন্ত্র
শিখিয়ে গেলি মরে ||

যার তাদের, আসবে ফিরে
হাওয়ায় ধানের শিষে
নীলকণ্ঠ হয়ে তোদের
বুকের মধ্যে মিশে ||

থাকবে ওরা, আনবে দেখিস
আনবে নতুন ভোর
নন্দীগ্রামের সই,
তোদের খুলে রাখিস দোর ||


.        **************          
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ২২ জুন ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
ব্যর্থ ইমাম
দুর্গাদাস মণ্ডল, বালিটিকুড়ি, হাওড়া

হঠকারী ও গায়ের জোরে
ঘটিয়ে অপকর্ম
এড়িয়ে চলে বুদ্ধবাবু
বিচার অন্যায় ধর্ম ||

হারিয়ে ফেলে অবহেলে
নিজের উপর আস্থা
খুঁজে বেড়ান নন্দীগ্রামে
শান্তি ফেরার রাস্তা ||

ভাবেন বসে বাঁচার উপায়
বিপদ থেকে মুক্তি
অবশেষে পেলেন খুঁজে
শান্তি আনার যুক্তি ||

আসেন যদি বুখারি সাহেব
আসবে ফিরে শান্তি
যাবে মিটে নন্দীগ্রামে
সমস্ত ভুল ভ্রান্তি ||

দিল্লী থেকে ইমাম এলেন
হল কচু ও ঘন্টা
নন্দীগ্রামে রয়েই গেল
চিন্তা ও উত্কণ্ঠা ||

হেথা হোথা যেথাই ছুটুক
সবই যাবে ভেস্তে
খাবেই পড়ে গড়াগড়ি
হাতুড়ি ও কাস্তে ||


.        **************          
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ২২ জুন ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
ফন্দিবাজি
অলোক কুমার মিত্র, কলকাতা

দিল্লী থেকে এলেন ইমাম
সৈয়দ আমেদ বুখারি
"পার্টির" কথায় করতে তামাম
নন্দীগ্রামকে ভিখারি ||

নিয়ে এলেন বিভেদ বাণী
হিন্দু-মুসলমানের
ক্যাডাররাজের ফন্দিবাজি
ভাসল জলে বাণের ||

মাটির মানুষ নন্দীগ্রামের
মিথ্য়া দিল দূর করি
একতা আর ভালবাসার
মন্ত্রে নিল জয় করি ||

নন্দীগ্রামেই মানুষ আছে
আছে যাদের মন প্রাণ
শান্তি মন্ত্র তাদেরই কাছে
ইমাম বুখারি শুনে যান ||


.        **************          
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ২২ জুন ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
মূল্যবোধের কথকতা
পীযূষকান্তি সরকার, কলকাতা

রাজার ডাকে এসে বুখারি
নিজেই বেসামাল
বুঝে গেলেন শেঠেরা কীভাবে
মিটিয়েছিল ঝাল ||

রক্ত দিয়ে লেখে যে ওরা
গণতন্ত্রের বুলি
ক্ষমতার দম্ভে রাজার
চোখে তখন ঠুলি ||

আলিমুদ্দিন স্ট্রীটের
প্রাসাদ যন্তরমন্তর
গণহত্যার নীলনকশার
হল যে স্বয়ম্ভর ||

পায়ে পায়ে শ্বাপদের দল
করেছিল কামাল
শিশু-নারীর রক্তে রাজার
ঝাণ্ডা লালে লাল ||

ডিভাইড এন্ড রুল - ব্রিটিশ
পলিসি নয় তো আর
গণতান্ত্রিক রাজতন্ত্রেও
প্রমাণ হল আবার ||

রাজনীতির স্বার্থে ধর্ম
ঘুলিয়ে দেয় মাথা
ধুতি পাঞ্জাবি পরা দাদাদের
মূল্যবোধের কথকতা ||


.        **************          
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ২২ জুন ২০০৭ এ
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
দিশাহারা সময়ের স্রোত
সোমেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী

দিশাহারা সময়ের স্রোত
রক্তরাগ মেখে নিরুপায়
ঘাতকের শাণিত কৃপাণে
অবিচল গুপ্ত অভিপ্রায়

মানুষের ভাব ভালবাসা
প্রাণে প্রাণে জীবন পিপাসা
আজ তার কিছু নেই-নেই
অন্ধকারে গভীর হতাশা,

অন্য কোনো অদূর প্রভাত
আগমনী দীপ্ত অভিঘাত ?

.        **************              
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                           সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       

এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে ২৫শে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
ময়দানবের বাড়ি
শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়

আগে ছিল জমিদার
লেঠেল --- এবং
গুমঘরে পড়েছিল
রায়তের লাশ---
একালে এসেছে নেতা
সেই চেনা ঢং
পিছনে ক্যাডার নিয়ে
স্বরূপ প্রকাশ |
ময়দানবের বাড়ি
বেলোয়াড়ী ঝাড়
নাচে থাকে রাঙামাটি
মানুষের হাড় !

.        **************              
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                           সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       

এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে ২৫শে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে
মৃদুল দাশগুপ্ত

ক্রন্দনরতা জননীর পাশে
        এখন যদি না থাকি
কেন তবে লেখা, কেন গান গাওয়া
        কেন তবে আঁকাআঁকি ?

নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে
        যদি না-ই হয় ক্রোধ
কেন ভালবাসা, কেন বা সমাজ
        কিসের মূল্যবোধ !

যে মেয়ে নিখোঁজ, ছিন্নভিন্ন
        জঙ্গলে তাকে পেয়ে
আমি কি তাকাব আকাশের দিকে
        বিধির বিচার চেয়ে ?

আমি তা পারি না | যা পারি কেবল
        সেই কবিতায় জাগে
আমার বিবেক, আমার বারুদ
        বিস্ফোরণের আগে |

.        **************              
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                           সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       

এই কবিতাটি 'পর্বান্তর' পত্রিকাতে মে-আগস্ট ২০০৭ এর সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
নন্দীগ্রাম
জহর সেন মজুমদার

পথে পথে কৃষিমুণ্ড পথে পথে আমাদের পরিত্যক্ত লাশ
এই মাত্র শেষ হল আমাদের প্রতিরোধ, স্বপ্নতিতাস |
লালঝাণ্ডা কমরেড, বাবা ছিল তেভাগার চাষি
কাস্তে হাতুড়ি তারা --- পরিবার পরিজন মাসি
সকলেই দেখছিল : ফেটে গেছে তলপেট, গাভী,
আমিও কি কমরেড ? সেই কথা সারাদিন ভাবি
পথে পথে কৃষিমুণ্ড, শকুনেরা মাংস খায় চিরে
পরিত্যক্ত আমরা পড়ে থাকি চুপচাপ মার্ক্সবাদী নীড়ে
মার্ক্সবাদ মার্ক্সবাদ, কাটা হাতে লাল ঝাণ্ডা তুলে
মাঝরাতে আমরাও চাষিদের কান দিই মুলে


.        **************                            
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       

এই কবিতাটি 'পর্বান্তর' পত্রিকাতে মে-আগস্ট ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
প্রতিরোধের সনেট
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

এতগুলি প্রাণ অকালে নিয়েছ, জেন
দিয়ে যেতে হবে একদিন তার দাম---
আপামর বুকে বেজেছে দামামা শোন
ইতিহাস-ব্যাপী হয়েছে নন্দীগ্রাম |

তিন দশকের ঘুমের খোলস ভাঙে
মুখর মৌন মিছিলে হাঁটে মানুষ ;
তাদের প্রতিবাদের উদ্গিরণে
দহন তৃষায় জ্বলছে দ্রোহের তুষ |

হাতির দাঁতের মিনার ছেড়ে তোমায়
নামতে হবেই উচ্চাসনের থেকে,
মুখে যে দরদ ... বুকে বিষের ধোঁয়ায়
তোমায় বিশেষ চিনেছি হে প্রত্যেকে !

ইশারায় নয়, চায় না কোনই রফা
এ সনেট চায় নিঃশর্ত ইস্তফা |


.        **************             
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                           সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       

এই কবিতাটি 'পর্বান্তর' পত্রিকাতে মে-আগস্ট ২০০৭ এর সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
দুঃখ
হিমালয় জানা

মেরেছিলাম, তার পরে তো
কষ্ট পেলাম নিভৃতে
এই ঘটনা দুঃখজনক---
বলেওছিলাম টিভিতে |

দুঃখ পাব, তাই বলে কি
থমকে যাবে উন্নয়ন ?
মিষ্টি কথায় না যদি পাই
কেড়েই নেব তোমার মন !

গুঁড়িয়ে দেব হাতের মুঠোয়
ঘিরবো তোমায় চার দিকে
কান্না চেপে মিহি গলায়
বলব আমার পার্টিকে---

ওদের লাইফ হেল করে দাও
গুম করে দাও ওদের লাশ
ওদের শিশুর মুণ্ডু ছেঁড়ো
যুবতীদের অন্তর্বাস

আমার হাতে পুলিশ আছে
আমার হাতে অন্ধকার
কেউ যাবে না বধ্যভূমে
কেউ পাবে না পথ ঢোকার

যতক্ষণ না শান্তি ফিরছে
রাজদ্রোহী সব গ্রামে
জল খাচ্ছে জ্যান্ত-মরা
একত্রে আমার নামে

আমার বুঝি দুঃখ হয় না ?
সূক্ষ্ম আমার সংবেদন...
মিষ্টি কথায় না যদি দাও
চাবকে নেব তোমার মন !


.        **************         
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                      সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       

এই কবিতাটি 'পর্বান্তর' পত্রিকাতে মে-আগস্ট ২০০৭ এর সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
এই রাজ্যে   
পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল

ট্রলার-ভর্তি লাশ কিছু যায় সাগরের দিকে
কিছু যায় নদীর কূলে |
রমণীপাচারে
এ-রাজ্য প্রথম, আর বলাত্কারে
দ্বিতীয় আছেই | লাশ গায়েবে তুমি কেন প্রথম হবে না ?
সব লাশ অনন্তের দিকে চলে যায়, এদিকে কাদের
শাশ্বত পতন হতে থাকে ;
শাশ্বত পতন হতে থাকে |
তা বলে ভেবো না, পরিস্থিতি খুব গুরুতর |
হাসির উপকরণ আছে ---
ওই দ্যাখো, প্রতিবাদীর সভায়
দুই কবিখ্যতিগ্রস্ত কেমন তত্পর, যা-ই ঘটুক
ওঁরা ঠিক গুডবয়, ফার্স্টবয় থাকেন | ওঁদের থাকতে হয় |
আমাদের পবিত্র ও সুবোধ সরকার
রুদালি-ও রেখেছেন কাগজ টিভিচ্যানেলে
কিছু খুলে দিয়ে |
শাশ্বত পতন হতে থাকে ;
শাশ্বত পতন হতে থাকে |
ট্রলার-ভর্তি লাশ যাবে, যাবে অনন্তের দিকে
সকালে, দুপুরে কিম্বা বিকেল বেলায়
সন্ধ্যা বা রাতে---
অকীর্তির বোধ আজও খেলা করে মানুষমাথাতে---
কীভাবে যে করে,
কৌতুহল হয়, কেন করে |


.        **************                            
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       

এই কবিতাটি 'নন্দীগ্রাম থেকে কলিঙ্গনগর' পত্রিকাতে মে ২০০৭ এর সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
তিনি বললেন   
প্রসূন ভৌমিক

আমার বলার কিছু ছিল না
চেয়ে চেয়ে দেখলাম তারা লাঠিচার্জ, কান্নাগ্যস
চেয়ে চেয়ে দেখলাম তারা গুলি করে, আর দূরে
শিশু আর নিরস্ত্র মায়েদের ধুপধাপ, আছাড়ি পিছাড়ি
আমার বলার কিছু ছিল না
আমরা তো জানতাম শিল্পচর্চার কাজে
রক্ত ঝরে, লাশ পড়ে | ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে...
হ্যাঁ তাতে দুঃখিত, এটা দুর্ভাগ্যজনক
আমরাও তো চিরকাল মৃদুমন্দ নরম মনেরই কাণ্ডারী

কিন্তু এত প্রতিবাদ, এত যে আগ্নেয়
এসবের মানে কী ? কারা কৃষি বুদ্ধিজীবী,
কোথা ছিল বাড়ি !


.        **************                            
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       

এই কবিতাটি 'নন্দীগ্রাম থেকে কলিঙ্গনগর' পত্রিকাতে মে ২০০৭ এর সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*