অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কবিতা (সংগ্রহ)
*
অভিশাপ
হিন্দোল ভট্টাচার্য

প্রতিটি শব্ দের সঙ্গে রক্ত পড়ছে অক্ষরের গায়ে
    তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে নারী-শিশু-বন্দুক-বুলেট
দেওয়ালের গায়ে কার ফ্রক ? মাটির ভেতরে কার দেহ ?

দিগন্তবিস্তৃত শস্যক্ষেত জুড়ে পড়ে আছে কাটা মুণ্ড, ধারালো শাসক,---
               ঘুরে দাঁড়াবার কথা মনে হয় ? চিতার ভিতর
যে পুড়েই যাচ্ছে তার নাম জমি না কি স্বয়ং
শ্মশান, কবর, শান্তি, --- চোখের ভিতর
               দেখেছি কিশোরী এক ঘৃণা ...
প্রতিটি শব্ দের পাশে আশ্চর্য চপার পড়ে আছে


.                        **************                 
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                               সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'নন্দীগ্রাম থেকে কলিঙ্গনগর' পুস্তিকাতে মে ২০০৭ এ প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
দলগন্ড
শ্যামল ভট্টাচার্য

"শিল্পের প্রস্রাব রসে পাকে গন্ড পাকে গুহ্যদেশ"
উন্নয়ন যজ্ঞে চাই গণহত্যা : দলের নির্দেশ

যদি না পালন করো তবে জেনো হাতে কাটবো মাথা
দল-ই বিজ্ঞান, মানে সত্য, মানে দলই বিধাতা

যারা মরে গেল জানবে মরাটাই তাদের নিয়তি
ধর্ষিতা হয়েছে যারা তারাও কি আদপেই সতী

ভিন্নকণ্ঠ হুশিয়ার, আমাদের হুকুমত্-ই শেষ
"শিল্পের প্রস্রাব রসে পাকে গন্ড পাকে গুহ্যদেশ"

হায়, এদের চক্ষুও নেই এদের লজ্জারও নেই লেশ |


.           **************                 
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                  সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       

(উদ্ধৃত পংক্তিটি কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের)

এই কবিতাটি 'নন্দীগ্রাম থেকে কলিঙ্গনগর' পুস্তিকাতে মে ২০০৭ এ প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
দ্বৈরথ
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়

ক্রোধ : মানো যা ঈশান কোণে ধনায়
ক্রোধ : মানে যা হলদি নদীর বাঁক
ক্রোধের আগুন পুড়িয়ে দিল ঘর
এবার তোরা শিল্পে বেঁচে থাক

ধানের চারা দোলে না এই দেশে
এদেশ ভরা শিশুর লাশে লাশে
কবন্ধেরা অস্ত্র চালায় শুধু
ধাতুর নিচে নিহিত উল্লাসে

আমারও হাত নিশপিশিয়ে ওঠে
আমার হাতে, একটি ধানের শিষ
লাল পতাকা উড়িয়ে নিল হাওয়ায়
ভয়ের মত বাঁচা অহর্নিশ

ভয় : মানে যা আবার ফিরে আসা
ভয় : মানে যা হলদি নদীর বাঁকে
প্রত্যাঘাত, ঘনিয়ে আসা মেঘ
সব শেষে আর ভয় পাবে কে কাকে


.           **************                 
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                  সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'নন্দীগ্রাম থেকে কলিঙ্গনগর' পুস্তিকাতে মে ২০০৭ এ প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
যেদিন চৈত্রমাস
প্রণব কুমার মুখোপাধ্যায়

কে যে কাকে শাস্তি দেবে ! আর
যদি কেউ না-ই পারে দিতে,
অপরাধ অপরাধ নয় |
তার নাম, বলতে পারো, পাপ |

এমনটাই "রক্তকরবী"তে
নন্দিনীকে বলছেন কেউ
সে কি অধ্যাপক মহাশয় ?
ঠিক মনে নেই | তার ঢেউ

তবে ফের এনেছে জোয়ার |
ফাল্গুনে, যেদিন চৈত্রমাস,
একচক্ষু বর্বর প্রতাপ
যেদিন দুঃসহ সর্বনাশ |


.           **************                 
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                  সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
দুঃসময়
অনুভব সরকার

ত্রিশ বছর ওরা তো ওদের সবুজ বিবেক
বন্ধক রেখেছিল আপনারই কাছে

ত্রইশ বছর ওরা তো নির্বোধ
থেকেছে আপনারই হাত শক্ত করতে

ওদেরই ভাই কিংবা কেউ এতদিন আপনার
হার্মাদ-দলে লিখিয়েছে নাম

তবু কেন এত লাশ, কেন এত ঘৃণ্য মৃত্যু
১৪ মার্চ---নন্দীগ্রামের মাটিতে ?

প্লিজ স্যার, একবার অন্তত বলুন
এটা আপনার কোনো নাটকের কততম দৃশ্য ?


.           **************                 
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                  সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
কৃষ্ণচূড়া
গৌতম ঘোষদস্তিদার

রাজার পোষাকে আজ রক্তের দাগ
রাজা ভ্রুক্ষেপহীন, অনুতাপ নেই মনে
সভাকবিরা বলেই দিয়েছেন
তাঁরা তো আছেন এই চিররণে |

রাজা আজ তাই পরম প্রীত
রক্তের দাগ পলকে কৃষ্ণচূড়া
পারিযদদল আজ দামামা বাজায়
"মরেছে, মরুক যত-সব হাভাতেরা" |

.           **************                 
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                  সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
সরে যাচ্ছে
অর্ধেন্দু চক্রবর্তী

কে ভেবেছিল
এত তোমাদের রক্তের নেশা !
তোমরা রবীন্দ্রনাথ উচ্চারণ কর
তারপরও গরিব সৃষ্টিশীল শান্ত
তুলসীতলায় প্রদীপ দিয়ে যারা
ঘরে যায়
তাদেরকে খুন, বাচ্চাদের গলা টিপে
ছুঁড়ে দিচ্ছ জলে, লুঠ করছ
মা মেয়ের ইজ্জত
তত্ত্বের নামে, শিল্পের অছিলায় ?

তোমাদের ক্যাডার নামধেয় ক্ষিপ্ত অপমানব
পুলিশ সেজে ঘর পোড়ায়
কবি সেজে সভা করে
লেখক সেজে জ্ঞান দেয়
কৃষক নেতার মুখোশ সেঁটে
    খিস্তি করে,
আবার এই স্পিসিস্ রা তোমাদের মিছিলেও হাঁটে

মানুষ তোমাদের ঘেন্না করছে
হিমালয় প্রমাণ ঘেন্না
আরো বেশী করে জড়ো হচ্ছে
ধানের দিকে পাটের দিকে |

তাদের বমি পাচ্ছে এই ভেবে যে
তারা তোমাদের ভালোবালতে চেয়েছিলো


.           **************                 
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                  সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
পলাশীর পদধ্বনি
অনুপ মুখোপাধ্যায়

সিঙ্গুর যেন ভৃঙ্গিগ্রাম !

নন্দী আর ভৃঙ্গি
মাল্টিন্যাশ' ভঙ্গী
ছাড়ছে বন্য সাপাট তান উচ্চ গ্রাণে
 নন্দীগ্রাম আর আর ভৃঙ্গিগ্রামে
                   নাচছে জোর ধিঙ্গী ...
ফের বণিকের মানদণ্ডকে
পাল্টে দিতে রাজদণ্ডে
কথকতার "হিস্ট্রি-রিপিটে"
হাতে বোমা আর রাইফেল পিঠে
          নয়া পলাশীর ফিরিঙ্গী !


.           **************                 
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                  সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'পর্বান্তর' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
বাস্তুতন্ত্র
সোমনাথ ভট্টাচার্য

পরিত্যাজ্য বলে কিছু নেই এ জগতে
কেউ কেউ বেঁচে থাকে অন্যের বর্জ্যতে |
উদ্ভিদ মোচন করে অক্সিজেন গ্যাস
প্রাণীকুল সেই গ্যেসে বাঁচে নিয়ে শ্বাস
প্রাণীদের দেহ থেকে পরিত্যক্ত মল
কীট আর মাছিদের বাঁচার সম্বল |

মানবতা মৃত দেখে যদি কেউ ক্ষোভে
ত্যাগ করে সরকারী পদ, পুরস্কার
পিছু পিছু পিছু লোক এসে যাবে লোভে
যথা শীঘ্র সেই পদ কুড়িয়ে নেবার |


.           **************                 
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                  সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'পর্বান্তর' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে
অমর নস্কর

আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে
মাঠে খাটা চাষিরে তোর সুদিন আসে
চিমনী দিয়ে উঠবে ধোঁয়া বারোমাসে
চাষির ছেলে শ্রমিক হবার স্বপ্নে ভাসে

আহা কি আনন্দ ......................

দেশের যত চালু শিল্পে শ্রমিক ছাঁটাই
সব কাজই আজ মানুষ করে শ্রমিক তো নেই
এমন সময় রাজার আদেশ চাকরী দেবেন
যেথায় যত সরেশ জমি কিনে নেবেন রাষ্ট্র ত্রাসে---

আহা কি আনন্দ .....................

বিশ্ব এখন ব্যবসা ক্ষেত্রে মেলছে ডানা
তৃতীয় বিশ্বে তাইতো ওদের লোলুপ হানা
সস্তা শ্রম - সস্তা জমি - সস্তা শাসক
ঋণের জালে জড়িয়ে রেখেও কাষ্ঠ হাসে

আহা কি আনন্দ .....................

মানুষ মারছ দেখেও মানুষ আর কতকাল
গোলকধাঁধায় আটক রবে মাকড়শার জাল
তাই কি সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে ফুটছে লোহা
গরম থাকতে সেই লোহা হোক অস্ত্র ধাঁচে

আহা কি আনন্দ ...................


.           **************                 
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                  সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'পর্বান্তর' পত্রিকাতে মে-আগস্ট ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
তোমারই তাপসী
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

যখন অধর্ম অনাচার ছায় আকাশ-বাতাস-মাটি-জল
প্রতিটি তৃণের মূল ; শ্বাসরুদ্ধ করে বিষে সমাজ-সংঘকে
তখনই আত্মায় নামে অন্তর্গত বিশ্বাসের ঢল
বিচারের আশায় ... অবতীর্ণ হবে ব'লে প্রতীক্ষায় থাকে |
কান পেতে থাকে যদি ধুলিকণায় সন্ত্রস্ত পল্লবে ক্ষণিক
ধরা দেয় তোমার নিক্কন ধ্বনি অথবা অস্ত্রের ঝংকার,
দিগন্তে ঘর পোড়া সিঁদুরে মেঘের গর্ভে আশায় মালিক
তন্ন তন্ন তলাশ করে তোমার বরাভয় জ্যোতি ধর্মাঙ্গীকার ...
প্রার্থনায় একাগ্র হয় আত্মা তাই, বুক বাঁধে এই দুঃসময়ে |
নতুবা তার বিস্মরণে ওঁৎ পাতে নথ শানায় শিকারীর থাবা ---
জোত-জমি লুঠ করে, ঘরবাড়ি পোড়ায় | কাটা ঘায়ে
নুনের মত বুলেট ছড়িয়ে দেয়, টিয়ার গ্যাস --- কুড়োয় বাহবা
পুঁজিপতি পিশাচের সভায় ... দেখ পড়ে আছে বিচার প্রত্যাশী
লাঞ্ছিত কিশোরীর শরীর, অর্ধদগ্ধ তোমারই তাপসী !



.           **************                        
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'নন্দীগ্রাম থেকে কলিঙ্গনগর' পত্রিকাতে মে-আগস্ট ২০০৭ এর
সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
খালাস
লীনা চাকী

আমরা বল্ ক হাসপাতালে বসে | একটু পরেই ডাক্তারবাবু আমাদের এক এক
করে ডাকবেন | আমাদের সকলের পেটেই বাচ্চা এসে গেছে | ওই যে-দুমাস
আগে যে ঝামেলা হল পার্টিতে পার্টিতে, কত লোক মরল, সেই সময়েই
আমরা ক-জন মেয়ে গর্ভবতী হয়ে গেছি | আমাদের উপর টর্চার হয়েছিল
যে !
এখন আমরা সেই বিপদের চেয়েও আরও বড় বিপদে পড়েছি | সেইসময়
তো নামটাম বেরিয়েছিল কাগজে | এখন সকলে ছি ছি করছে পেটে বাচ্চা
এসে গেছে শুনে | আমরা তাই বড়দের পরামর্শে হাসপাতালে এসেছি
পেট সাফ করতে |
আমরা কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছি না | খুব ভয় করছে | যেন আমরা
কোনও অপরাধ করতে এসেছি | লোকেরা আমাদের দেখে দেখে যাচ্ছে, হাসছে |  
কেউ আগ বাড়িয়ে জানতে চাইছে কেমন করে রেপ করা হল | লজ্জায় মরে
যাচ্ছি | আমরা এক জায়গায় ভেড়ার মত গায়ে গা-ঠেকিয়ে বসে আছি |
সকলের আগে আমাকে ডাকলেন ডাক্তারবাবু |
আমি টেবিলে | কী করা হল জানি না | আমি আচ্ছন্নের মধ্যে |
ক-ত-ক্ষ-ণ |
তারপর ডাক্তারবাবু মুখের কাপড়টা সরিয়ে বললেন, "হয়ে
গেল | যাক | আর ভয় নেই | এমন ব্যবস্থা করে দিলাম যে, এরপর
হাজার বার রেপ করলেও তুমি আর প্রেগনেন্ট হবে না |"



.                      **************                        
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                                    সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
বুলেরও কান্না পেয়েছিল
বাপন চক্রবর্তী

বুলেটের পিতৃপরিচয় হয় না কখনও,
আমার বুলেটে তোমার বুলেট যাই হোক
এফোঁড় ওফোঁড় করে যাবে---
পুলিশের পিতৃপরিচয় হয় না কখনও
তোমার পুলিশ যেদিন আমার হবে
     তোমাকেই পায়ে পিষে যাবে |
অতএব সাবধান | ক্ষমতার আস্ফালন দুরারোগ্য নয় |
অব্যর্থ অসুধ আছে সময়ের হাতে |
     হয়তো পুতুলগুলি মানুষের মত হলে
          কোনো দিন ভাবতেও পারে :
নিরস্ত্র, নিরন্ন ওরা ছিল প্রতিরোধে ;
          ওদের বুকের দিকে,
          ওদের পিঠের দিকে,
          ওদের খুলির দিকে,
ছুটে যেতে যেতে, হয়তো বা, বুলেটেরও কান্না পেয়েছিল.......



.           **************                        
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
কাঁদবেন তো ?
প্রমোদ বসু

আপনাকে একটি চিঠি লিখছি আমি |
কিন্তু কলমে আমি এক ফোঁটাও কালি ভরিনি |
তার বদলে নন্দীগ্রাম থেকে নিয়ে এসেছি
                 সেই সব মানুষদের রক্ত
আপনার পুলিশ যাদের নির্বিচারে গুলি করে মেরেছে |

আমি জেনারেল ডায়ার কে দেখিনি,
কিন্তু আপনাকে দেখেছি |
আপনি ধবধবে সাদা একজন মানুষ, প্রাক্তন অধ্যাপক,
অধুনা---
না, সে পরিচয় থাক |
সংস্কৃতিমান মানুষের গায়ে এত রক্ত লাগলে
সব কেমন ওলটপালট হয়ে যায় |

আপনার কন্যাকে আমি খুব শ্রদ্ধা করি |
তিনি বন্য প্রাণীদের, পশুপাখীদের সযত্ন সংরক্ষণের জন্যে
কত কী করেন !

আর আপনি ?
কোনও আলোচনার ধার ধারেন না, রাষ্ট্রযন্ত্রের
পোষ্য পুলিশ দিয়ে নিবীহ মানুষ মেরে
কেড়ে নেন তাদের অন্নের জমি !

বড় ইচ্ছে করে আপনাকে লিখতে---
আপনার ছোট্ট মেয়েটির কাছে হাঁটুমুড়ে এক দিন
      খুব কাঁদবেন আপনি |

যাতে সেই চোখের জল এসে মিশে যায় সাবলীল
আমাদের কান্নায় |

কাঁদবেন তো ?



.           **************                        
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                        সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
জাগ্রত মানবশক্তি
শ্যামল কান্তি দাশ

১.
মারের বদলে মার, ক্ষমা নয় আর
জাগ্রত মানবশক্তি উঠে দাঁড়িয়েছে---
তোমার, আমার !

২.
মেরেছ অদ্ভুতভাবে এতদিন, সেই মার
আজ আরও তীব্র নিবিড় হয়ে
তোমাকেও পাল্টা মার দেবে
জাগ্রত মানবশক্তি উঠে দাঁড়িয়েছে---
নখে, দাঁতে সংসারের পালা শুরু
               ---জিভ ছিঁড়ে নেবে!

৩.
কুমির আনবে বলে মাঠ ঘাট পরিষ্কার,
বানিয়েছ অবরুদ্ধ খাল
জাগ্রত মানব শক্তি, উঠে দাঁড়িয়েছে---
স্রোত বড় প্রতিকুল,
             সরে যাও শিল্পের দালাল !


.           **************           
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                           সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
ওরা এসেছিল
মণীশ মৌলিক

ওরা এসেছিল যত
সকলে বহিরাগত |

খুন, লুটপাট, গণধর্ষণে
ইতিহাস গড়ে দিয়ে
যারা এসেছিল ফিরে গেছে সব
পশু অপবাদ নিয়ে |

ওরা এসেছিল যত
মুখগুলো ছিল অর্ধেক ঢাকা ;
ঠিক মানুষের মত |


.    **************            
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                      সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর
সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
মুখ্যমন্ত্রী হাসছেন
সুবীর সরকার

আর সেই অবধারিত নাচগানের ভিতর হামা দিয়ে
                                  ঢোকে
রক্ত ও ঘামে ভেজা আমাদের নন্দীগ্রাম
ওয়াচ টাওয়ার ভাঙছে হাতি, হাওয়াকল ও হাতঘড়ি
                                 বিকল
ক্যাডার ও পুলিশ হয়ে ফিচেল হাসির দিকে
বেলুন ওড়ায়,

মুখ্যমন্ত্রী হাসছেন, সন্ত্রস্ত শহরে একা, বোকার
                                  মতো


.           **************                     
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                     সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
লুব্ ধক
প্রভাত চৌধুরী

(গৃষ্ম কালে লুব্ ধক নামক নক্ষত্র,... আকাশমার্গে উদিত হইলে, তাহার ধক্ ধক্
কিরণজালে চতুর্দিক প্রজ্জ্বলিত হয় ---  শ্রীমধুসূদন)

এখন গৃষ্মকাল, এখন আকাশে কালপুরুষের পাশে উজ্জ্বলতম লুব্ ধককে
চিনতে অসুবিধা হচ্ছে না
আমরা চিনে নিচ্ছি লুব্ ধককে, লুব্ ধক আমাদের চিনিয়ে দিচ্ছে, দেখিয়ে দিচ্ছে
নন্দীগ্রাম নামক একটি সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যকে

মাছের খাবার প্রস্তুতকারক একদল বিশেষজ্ঞ এসেছিল নন্দীগ্রামে
তাদের আনা হয়েছিল, তাদের কৃৎকৌশলকে আনা হয়েছিল

তারা মৃতদেহগুলির পেট চিরে ভেতরের যাবতীয়কে ছুঁড়ে ফেলেছিল জলে
তারপর শরীরটাকে

এই কৃৎকৌশলের জন্য একটি মৃতদেহও ভেসে ওঠে নি
ভেসে উঠতে পারে নি, সবটাই মাছের খাবার হয়ে গেছে

এসবই লুব্ ধক দেখিয়ে দিয়েছে, তাই আমরা দেখেছি

বুদ্ধদেবের খাদ্যতালিকায় এই মাছ কবে স্থান করে নেবে
তা জানার, দেখার জন্য অপেক্ষা করছি
আমার বিশ্বাস লুব্ ধক আও দেখিয়ে দেবে, এবং অচিরেই



.                        **************                           
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
কাদের তুমি কমিউনিস্ট করেছ
সৌমিত বসু

কখনো গুলি খাইনি তাই বলে কি গুলি খাওয়া লোকের কষ্ট বুঝিনা |
বুঝিনা, কত ধানে কতো চাল হ'লে ঝ'রে পড়ে গৃহস্থের সুখ
সুমন বলবে তার পরে চিনবো, শালী জমি কাকে বলে
কেন, বাপ ঠাকুরদা কি শেখায়নি কিছু
শেখায়নি, জমি গেলে হাতে থাকে শুধু পেনসিল
যার শিষ বেয়ে ঝ'রে পড়া রক্তের দাগ
রেখেছে কমরেড করে মানুষ করেনি |

যুদ্ধে যাইনি কখনো তাই বলে কখনো শিখিনি, নাকি যুদ্ধের হিসেব
প্তিদিন যত প্রবঞ্চনা শিস্ দিয়ে তুলে নেয় কর্পোরেশন
যতো জঞ্জাল আলগোছে তুলে নেয় পঞ্চায়েত
ইংরেজ আমল থেকে যতটুকু দাসত্ব দিয়ে তৈরি হয় পায়ের নূপুর
ভেবেছ হিসেব তার নেইনি কখনো
যুদ্ধে যাইনি বলে সংগ্রাম করি না ? সবটুকু লিখে রাখি
খাতার পাতায়, পাছে ভুলে যাই, পাছে জল এসে
ধুয়ে দেয়, পাতার ওপর আঁকা রঙের আঁচড় |

কখনো জন্মাইনি নন্দীগ্রামে
তাই বলে, কে বলেছে তোমাদের সাথে নেই ?
কে বলেছে, সময় অস্পষ্ট হলে মানুষ কাঁদে না ?
তেমন তেমন হলে বাড়ি ঘর বেচে চলে যাবো সোনাচূড়া
ডালে চালে ফুটিয়ে তুমুল রান্না হবে খেজুরির ব্রিজের ওপর
স্কুল থেকে ফিরে ছেলে মেয়েগুলো দুটো খেয়ে
না হয় ঘুমোতে যাবে সরকারি বুলেটে


.             **************                       
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
এ দিনের পদ্য
রাণা চট্টোপাধ্যায়

চুল্লিতে আজ আগুন কোথায় ধান ফলে নি মাঠে,
শ্মশানে বসানো হাট সুয্যি গেলে পাটে |
এখানে ওখানে ভাসে গরিবের লাশ
কংকাল ব্যবসায়ী ধোয়ে তার হাড়মাস |
কাটা পথ খাল হলো কুমীরেরা হাসে
কালো গাড়ি এলে পথে বোমা ফাটে ঘাসে |
কাটা স্তন ফাটা ঠোঁট শুয়ে আছে কিশোরী
দোয়েল চড়ুই ভাবে --- "একে নিয়ে কি করি?"

আজ যমুনার পাকা দেখা কাল যমুনার বিয়ে
বরের ঘরে আগুন লাগাও নন্দীগ্রামে গিয়ে,
কে মেরেছে কে মেরেছে পুলিশ মেরেছে
মরচে ধরা বন্দুকেতে ছররা পুড়েছে---
কে দেখেছে কে দেখেছে দাদা দেখেছে
সত্যি মিথ্যা সাক্ষীরা সব কোমর বেঁধেছে |
উনুন ভাঙা রান্না না হোক কান্না উঠুক রাতে
যমুনার ভাই আর যাবে না কাস্তে নিতে হাতে |

চুল্লিতে আজ কোথায় আগুন, আগুন পোড়ায় গ্রাম,
শিল্প আমার মাতা-পিতা শিল্প গোলকধাম,
শিল্প-শিল্প বলো সবে কৃষি আজ মিছে,
বিশ্বায়নে বিশ্বগ্রাম কুবেরেরা পিছে---
শিল্পায়ন মহাকাব্য অমৃত সমান
লাঠি বাঁধা মূলো মাথে গাধা টান টান---
যতো ছোটে ততো মূলো সামনেতে ঝোলে
গাধা ভাবে কাল যাবো ভেরেন্ডা জঙ্গলে |


.             **************                       
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
ওগো উতল হাওয়া
নমিতা চৌধুরী

নিরাপদ আশ্রয় জেনে শিশুটি আঁকড়ে ছিল
মায়ের আঁচল, মা-ও বুঝি তাই ভেবেছিল
মুহুর্তে সবকিছু বুঝবার আগে
শিশুটির গলাকাটা লাশ মায়েল কোলের কাছে
রেখে গেল হার্মাদ বাহিনী |

ওগো উতল হাওয়া তুমি কি জানো
ওই মায়ের আর্তনাদের কোনো সান্ত্বনার ভাষা !
তুমি কি পারো ধর্ষিতা রমণী ও কিশোরীর
লজ্জা মুছে দিতে
তুমি কি বুলেটবিদ্ধ ক্ষতে বাড়াতে জানো
শুশ্রূষার হাত
খুঁজে দিতে পারো নিখোঁজ মানুষের ঘর ও বাহির

ওগো উতল হাওয়া
তুমি কি তাড়াতে জানো
সন্ত্রাসের ভয়াল আঁধার


.             **************                       
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
১৪ মার্চ, ২০০৭
আবদুস শুকুর খান

এই চৈতালী দিনের থেকে ফোঁটা ফোঁটা
রক্ত ঝরে পড়ে বুকের উপর
সেই থেকে বোধহীন ভাষাহীন দেখে যাচ্ছি
মানুষের মুখ ;
তলানির মতো হলেও মানুষের মধ্যে
মানবিকতা বলে কোনো বস্তু আছে কি না ?

যে শিল্প এতগুলো মানুষ হত্যা করে
ফেলে রাখল ঝোপঝাড়ে, জলকাদায় ...
তারা কি প্রকৃত জানে শিল্প কাকে বলে
যারা মাটি ছাড়া অন্য কিছু চেনে না জীবনে
যাদের ধানফুলের গন্ধ, গরমভাত ছাড়া
অন্য কোন স্বপ্ন নেই ;
তাদের রক্ত গড়ে উঠবে শিল্পময় দেশ !

এই দিনটাই হোক আমাদের চোখ মেলবার দিন |
এই দিনটাই হোক আমাদের বোধোদয়ের দিন
এই দিন আমাদের বিষন্নতার দিন, লজ্জার দিন ...
হে কাদার জীবন, হে আগামী প্রজন্মের রোদ্দুর, শোন
যদি এই দিনটা কখনও ভুলতে না পারি, কিংবা
ভুলেই যাই, তবে আমাকেও
তোমরা হা-ভাতেদের মতো ঝুলিয়ে দিও
                    রক্তাক্ত বাঁশের মাথায় ...
কিংবা শাসকের গুলির সামনে দাঁড় করিয়ে দিও ...


.             **************                       
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
নন্দীগ্রাম আজ
নাসিম এ আলম

তোমার বরফ চোখ, স্থির স্থবির
                   ওটুকুই নন্দীগ্রাম
তোমার নবান্ন উত্সব, পয়লা বৈশাখ
                   ওটুকুই নন্দীগ্রাম
আমরা থাকবো গ্রামে, ক্যাম্পে, বন্দুকে, দাবানলে
                   ওটুকুই নন্দীগ্রাম
আমরা থাকবো আর অন্যেরা থাকবে না চাষে বাসে
                   ওটুকুই নন্দীগ্রাম
সবুজ থাকবে না প্রাণে, নারীর সিঁদুরটুকু---তাও থাকবে না
                   ওটুকুই নন্দীগ্রাম
আমার স্বার্থ আর আমার পতাকা ছাড়া
কোন পুষ্পে, প্রাণে লাল থাকবে না
                   ওটুকুই নন্দীগ্রাম


.             **************                       
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে নিহত কোন এক কৃষাণীর প্রতি
রুদ্র পতি

তোমার শরীরে থ্রি নট থ্রি
এ কী তুমি সেজেছ বিশ্রি !
রক্তে ভিজে যাচ্ছে জমি
এ জমি জোর করে কেড়ে নিতে চেয়েছে সরকার
১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে নিথর তোমার লাশ
ফাল্গুন ফুরিয়ে গেল চৈত্রে সর্বনাশ !

তোমার শরীরে থ্রি নট থ্রি
কে ছুঁড়েছে পুলিশ না কমরেডস ?
তদন্ত করছে সি.বি.আই
তোমার শহিদ রক্তে মাটি ভিজে যায় |


.             **************                       
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
অন্ধকার এরিনায়
তীর্থঙ্কর মৈত্র

সার্কাসের তাঁবু তুমি, তুমি এই রাজ্য রাজনীতি ;
বসন্ত তোমার নয় ! ভালবাসো কুয়াসা সম্প্রীতি !
কাদের সুখের জন্য ? কাদের বা চরম উচ্ছেদে ?
তোমার হৃদয় ফেরে --- মন যায় বিভেদের স্বাদে ---
ওপরে চটুল বাক্য ; প্রীতিপূর্ণ কনভয় যেন
ভেতরে জটিল অঙ্ক, দর্শক ও ভাবেন সাহারা |
এই কি মানুষ আর --- এই তার ক্রম অগ্রগতি !

অন্ধকার হরিনাম --- ভুল ভাল আলোক সম্পাতে ;
গ্যালারি নিস্তব্ ধ  আজ --- প্রতি দৃশ্যে সেই ক্লাউনেরা |


.             **************                       
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
আদালতনামা
চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য

এক নারী বহু পুরুষের সঙ্গিনী হওয়ার কথা
অকপটে স্বকলমে লিখে ফেলায়
নিষিদ্ধ হয়েছিল তার বই
অবশেষে আদালত এসে সে'বই
মানুষের হাতে তুলে দিল |

ভাগ্যিস আদালত ছিল !

আর, এক দল
বহু নারীকে গণধর্ষণের পর
সব কথা গোপন করতে
নিষিদ্ধ হয়েছিল সে'গ্রামে প্রবেশ
অবশেষে আদালত এসে সে'কাহিনী
মানুষের হাতে তুলে দিল |

ভাগ্যিস আদালত ছিল !


.             **************                       
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
জমিন জননী জন্মভূমি
ঠাকুরদাস চট্টোপাধ্যায়

মৃত্যুর মিছিলে তখন মা অন্নপূর্ণা ভাইবোন
বাকরুদ্ধ বউ
ছেলের রক্তে আলুখেতের সবুজ গাছ পুকুরের জল লাল টকটকে
একফালি ধনজমি লক্ষ্মীর দান
তরম দুর্দিনেও মা বেচতে দেননি
বাবাকে বোঝাতেন, বলতেন লক্ষ্মী চলে গেলে
খোকাকে মানুষ করবো কীভাবে
শুনতুম আর ভাবতুম মানুষ কাকে বলে
স্নান সেরে লক্ষ্মীর হাঁড়িতে নবান্নের ধান ভরে, সিঁদুরের স্পর্ষ দিয়ে
কুলুঙ্গিতে রেখে দিতেন
অভাবের সন্ধ্যাতেও মায়ের কণ্ঠে লক্ষ্মীর পাঁচালি...
মনে হত বেঁচে থাকার সার্থকতা
মনে হত সার্থক জনম আর ... তখন অসম্ভব শৈশব

লক্ষ্মীর পাঁচালি ছুঁয়ে ভোট দিয়ে দুধ সাদা রাজাকে এনে বলেছিল
এ আমাদের মা-বাপ ভগবান, মাথায় তুলে রাখিস
চাষার মা ইতিহাস পড়ে নি
এনাটমিও তার জানা নেই
তাই দুধ সাদা পোশাক আসলে কঙ্কালে ঢাকা
রাজবস্ত্র আসলে রাজবস্ত্রই বোঝেনি কোনোদিন
বোঝেনি কঙ্কাল ক্ষমতালোভি রক্তপিপাসু
ভাঙাবেড়ায় গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূর সামনেই মায়ের বুক চিরে রক্ত খাবে

মা তোদের বাঁচাতে পারিনি
নদী থেকে রক্ত তুলে এনে
যে লক্ষ্মীর হাঁড়িতে সিঁদুর লাগাতিস
সেই হাঁড়িতে তোর চিহ্ন লাগাবো
রাজাকে বলব---
রাজা, তুই যদি রক্তই খেতে চাস, ওই সাদা পোশাকের কি দরকার ?


.             **************                       
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
দীর্ঘশ্বাসের দিন
রমা চট্টোপাধ্যায়

ভোরের আলো ফোটার আগেই ছোটে
হাতে লণ্ঠন দ্রুত চলা ভীরু তাপসী
অন্ধকারের আবরণটুকু সাহারা
শাতার্ত ক্ষণে চোরকাঁটা ব্যথা পায়ে
আরো কত দূরে আব্রু রাখার সিমানা
আকাশে তারা অপেক্ষারত পাহারা |

হঠাৎ কখন মেঠো শৃগালেরা ঘেরে
নিঃসম্বল নারীর কাড়তে সম্পদ
মানুষ না ওরা চোখ জ্বলে লোভী দহনে
বেড়া দেওয়া মাঠে মাংসের চেনা গন্ধ
ছিঁড়ে খেতে চায় আগ্রাসী খিদে নিয়ে
হাহাকার থামে মৃত্যু আরতি জ্বলনে |

এ যুগেও মরে কত শত চেনা তাপসী !
কত ভাবে কত মরণ জ্বালায় স্তব্ ধ
রক্তের লেখা মাটিতে ধুলোতে অদেখা
ঘিরে থাকে শুধু দীর্ঘশ্বাসের দিন
অশনি আলোয় শপথ স্পর্শ জীবনে
প্রতিশোধ নেবে এ যুগের যত কলিকা |


.             **************                       
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
ভয়
প্রত্যুষপ্রসূন ঘোষ

ঢেউ আছড়ে পড়ে সমুদ্রের তট জলোচ্ছাস ---
দম্ভ তুমি বেড়ে বেড়ে পাহাড় চূড়ায়,
নীচে তাকালে ভিতের মাটি চোখেও পড়ে না ---

ফসল সরিয়ে সভ্যতা উন্নত হবে,
মানুষের মর্ম-অশ্রু শিল্পের উত্তাপে বাষ্প হবে
বিস্ফোরণ শেষে গুলি ধোঁয়া হয়ে যায়
নিরপরাধ ঘুমে ঘুমিয়ে পড়ে শিশু নারী ক্ষণজীবী মানুষ ---
সাদা কাপড়ে ঢেকে যায় এ জন্মের দেহ চোখমুখ

তুমি এ কোন্ সর্বনাশা চূড়ায় উঠেছ
পতাকার পাথরে সাফল্যের দিনলিপি,
আমরা জেনেছি মৃত্যুই শেষ শিল্প সভ্যতার শিখর
শিকড় উপড়ে ফেলে গড়ে তোলা দম্ভের মিনার |


.             **************                       
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর
*
ওরা খুঁজছে---ধান
তপন বসু

সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়া আর সোনাচূড়ার বড় মিল,
দু'গ্রামের মাটির নিচে এখন এক তাপসী
অন্য পায়েল হাত ধরছে অন্য ছোট্ট বোনদের |
ক্ষমতার জমি রাখতে---
মাটির ওপরে রাজা-মন্ত্রীদের দম্ভ আর বর্বর দাপাদাপিতে---
নিচের পৃথিবী এখন শান্ত নীরব |
বেড়াবেড়ির জমিহারা বৃদ্ধ হারাধন
ভাঙাবেড়ার ইমাদুলকে একমুঠো বীজধান দিয়ে বলল,
রেখে দাও, চাষ না হলে মানুষ খাবে কি ?

মাটির ওপরে এখন বারুদগন্ধে ভারী বাতাসে কান্নার সুর,
রাস্তায়-উঠোনে রক্তের স্রোতে মাছি---
সন্দেহ আর হাহাকার হাঁটছে পাশাপাশি---
ঘৃণায় স্কব্ ধ হলদি নদীর জল |

গোপালনগর আর গোকুলনগর যেন জমজ,
মাটির নিচে ঘুমিয়ে পড়া কচিকাচার দল
এখন খুঁজছে মৃত মায়ের কোল |
দুই নাতনীর হাত ধরে
সোনাচূড়ায় পূর্ণিমা মণ্ডলও খুঁজছে একমাত্র সন্তান--
বৃদ্ধার হতবাক মুখে থমকে গেছে সভ্যতা...


.             **************                       
 অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                         সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


এই কবিতাটি 'লুব্ ধক' পত্রিকাতে পঁচিশে বৈশাখ ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |

মিলনসাগর