দিগন্তবিস্তৃত শস্যক্ষেত জুড়ে পড়ে আছে কাটা মুণ্ড, ধারালো শাসক,--- ঘুরে দাঁড়াবার কথা মনে হয় ? চিতার ভিতর যে পুড়েই যাচ্ছে তার নাম জমি না কি স্বয়ং শ্মশান, কবর, শান্তি, --- চোখের ভিতর দেখেছি কিশোরী এক ঘৃণা ... প্রতিটি শব্ দের পাশে আশ্চর্য চপার পড়ে আছে
কে ভেবেছিল এত তোমাদের রক্তের নেশা ! তোমরা রবীন্দ্রনাথ উচ্চারণ কর তারপরও গরিব সৃষ্টিশীল শান্ত তুলসীতলায় প্রদীপ দিয়ে যারা ঘরে যায় তাদেরকে খুন, বাচ্চাদের গলা টিপে ছুঁড়ে দিচ্ছ জলে, লুঠ করছ মা মেয়ের ইজ্জত তত্ত্বের নামে, শিল্পের অছিলায় ?
তোমাদের ক্যাডার নামধেয় ক্ষিপ্ত অপমানব পুলিশ সেজে ঘর পোড়ায় কবি সেজে সভা করে লেখক সেজে জ্ঞান দেয় কৃষক নেতার মুখোশ সেঁটে খিস্তি করে, আবার এই স্পিসিস্ রা তোমাদের মিছিলেও হাঁটে
মানুষ তোমাদের ঘেন্না করছে হিমালয় প্রমাণ ঘেন্না আরো বেশী করে জড়ো হচ্ছে ধানের দিকে পাটের দিকে |
তাদের বমি পাচ্ছে এই ভেবে যে তারা তোমাদের ভালোবালতে চেয়েছিলো
পরিত্যাজ্য বলে কিছু নেই এ জগতে কেউ কেউ বেঁচে থাকে অন্যের বর্জ্যতে | উদ্ভিদ মোচন করে অক্সিজেন গ্যাস প্রাণীকুল সেই গ্যেসে বাঁচে নিয়ে শ্বাস প্রাণীদের দেহ থেকে পরিত্যক্ত মল কীট আর মাছিদের বাঁচার সম্বল |
মানবতা মৃত দেখে যদি কেউ ক্ষোভে ত্যাগ করে সরকারী পদ, পুরস্কার পিছু পিছু পিছু লোক এসে যাবে লোভে যথা শীঘ্র সেই পদ কুড়িয়ে নেবার |
আমরা বল্ ক হাসপাতালে বসে | একটু পরেই ডাক্তারবাবু আমাদের এক এক করে ডাকবেন | আমাদের সকলের পেটেই বাচ্চা এসে গেছে | ওই যে-দুমাস আগে যে ঝামেলা হল পার্টিতে পার্টিতে, কত লোক মরল, সেই সময়েই আমরা ক-জন মেয়ে গর্ভবতী হয়ে গেছি | আমাদের উপর টর্চার হয়েছিল যে ! এখন আমরা সেই বিপদের চেয়েও আরও বড় বিপদে পড়েছি | সেইসময় তো নামটাম বেরিয়েছিল কাগজে | এখন সকলে ছি ছি করছে পেটে বাচ্চা এসে গেছে শুনে | আমরা তাই বড়দের পরামর্শে হাসপাতালে এসেছি পেট সাফ করতে | আমরা কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছি না | খুব ভয় করছে | যেন আমরা কোনও অপরাধ করতে এসেছি | লোকেরা আমাদের দেখে দেখে যাচ্ছে, হাসছে | কেউ আগ বাড়িয়ে জানতে চাইছে কেমন করে রেপ করা হল | লজ্জায় মরে যাচ্ছি | আমরা এক জায়গায় ভেড়ার মত গায়ে গা-ঠেকিয়ে বসে আছি | সকলের আগে আমাকে ডাকলেন ডাক্তারবাবু | আমি টেবিলে | কী করা হল জানি না | আমি আচ্ছন্নের মধ্যে | ক-ত-ক্ষ-ণ | তারপর ডাক্তারবাবু মুখের কাপড়টা সরিয়ে বললেন, "হয়ে গেল | যাক | আর ভয় নেই | এমন ব্যবস্থা করে দিলাম যে, এরপর হাজার বার রেপ করলেও তুমি আর প্রেগনেন্ট হবে না |"
বুলেটের পিতৃপরিচয় হয় না কখনও, আমার বুলেটে তোমার বুলেট যাই হোক এফোঁড় ওফোঁড় করে যাবে--- পুলিশের পিতৃপরিচয় হয় না কখনও তোমার পুলিশ যেদিন আমার হবে তোমাকেই পায়ে পিষে যাবে | অতএব সাবধান | ক্ষমতার আস্ফালন দুরারোগ্য নয় | অব্যর্থ অসুধ আছে সময়ের হাতে | হয়তো পুতুলগুলি মানুষের মত হলে কোনো দিন ভাবতেও পারে : নিরস্ত্র, নিরন্ন ওরা ছিল প্রতিরোধে ; ওদের বুকের দিকে, ওদের পিঠের দিকে, ওদের খুলির দিকে, ছুটে যেতে যেতে, হয়তো বা, বুলেটেরও কান্না পেয়েছিল.......
আপনাকে একটি চিঠি লিখছি আমি | কিন্তু কলমে আমি এক ফোঁটাও কালি ভরিনি | তার বদলে নন্দীগ্রাম থেকে নিয়ে এসেছি সেই সব মানুষদের রক্ত আপনার পুলিশ যাদের নির্বিচারে গুলি করে মেরেছে |
আমি জেনারেল ডায়ার কে দেখিনি, কিন্তু আপনাকে দেখেছি | আপনি ধবধবে সাদা একজন মানুষ, প্রাক্তন অধ্যাপক, অধুনা--- না, সে পরিচয় থাক | সংস্কৃতিমান মানুষের গায়ে এত রক্ত লাগলে সব কেমন ওলটপালট হয়ে যায় |
আপনার কন্যাকে আমি খুব শ্রদ্ধা করি | তিনি বন্য প্রাণীদের, পশুপাখীদের সযত্ন সংরক্ষণের জন্যে কত কী করেন !
আর আপনি ? কোনও আলোচনার ধার ধারেন না, রাষ্ট্রযন্ত্রের পোষ্য পুলিশ দিয়ে নিবীহ মানুষ মেরে কেড়ে নেন তাদের অন্নের জমি !
বড় ইচ্ছে করে আপনাকে লিখতে--- আপনার ছোট্ট মেয়েটির কাছে হাঁটুমুড়ে এক দিন খুব কাঁদবেন আপনি |
যাতে সেই চোখের জল এসে মিশে যায় সাবলীল আমাদের কান্নায় |
আর সেই অবধারিত নাচগানের ভিতর হামা দিয়ে ঢোকে রক্ত ও ঘামে ভেজা আমাদের নন্দীগ্রাম ওয়াচ টাওয়ার ভাঙছে হাতি, হাওয়াকল ও হাতঘড়ি বিকল ক্যাডার ও পুলিশ হয়ে ফিচেল হাসির দিকে বেলুন ওড়ায়,
মুখ্যমন্ত্রী হাসছেন, সন্ত্রস্ত শহরে একা, বোকার মতো
এখন গৃষ্মকাল, এখন আকাশে কালপুরুষের পাশে উজ্জ্বলতম লুব্ ধককে চিনতে অসুবিধা হচ্ছে না আমরা চিনে নিচ্ছি লুব্ ধককে, লুব্ ধক আমাদের চিনিয়ে দিচ্ছে, দেখিয়ে দিচ্ছে নন্দীগ্রাম নামক একটি সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যকে
মাছের খাবার প্রস্তুতকারক একদল বিশেষজ্ঞ এসেছিল নন্দীগ্রামে তাদের আনা হয়েছিল, তাদের কৃৎকৌশলকে আনা হয়েছিল
তারা মৃতদেহগুলির পেট চিরে ভেতরের যাবতীয়কে ছুঁড়ে ফেলেছিল জলে তারপর শরীরটাকে
এই কৃৎকৌশলের জন্য একটি মৃতদেহও ভেসে ওঠে নি ভেসে উঠতে পারে নি, সবটাই মাছের খাবার হয়ে গেছে
এসবই লুব্ ধক দেখিয়ে দিয়েছে, তাই আমরা দেখেছি
বুদ্ধদেবের খাদ্যতালিকায় এই মাছ কবে স্থান করে নেবে তা জানার, দেখার জন্য অপেক্ষা করছি আমার বিশ্বাস লুব্ ধক আও দেখিয়ে দেবে, এবং অচিরেই
কখনো গুলি খাইনি তাই বলে কি গুলি খাওয়া লোকের কষ্ট বুঝিনা | বুঝিনা, কত ধানে কতো চাল হ'লে ঝ'রে পড়ে গৃহস্থের সুখ সুমন বলবে তার পরে চিনবো, শালী জমি কাকে বলে কেন, বাপ ঠাকুরদা কি শেখায়নি কিছু শেখায়নি, জমি গেলে হাতে থাকে শুধু পেনসিল যার শিষ বেয়ে ঝ'রে পড়া রক্তের দাগ রেখেছে কমরেড করে মানুষ করেনি |
যুদ্ধে যাইনি কখনো তাই বলে কখনো শিখিনি, নাকি যুদ্ধের হিসেব প্তিদিন যত প্রবঞ্চনা শিস্ দিয়ে তুলে নেয় কর্পোরেশন যতো জঞ্জাল আলগোছে তুলে নেয় পঞ্চায়েত ইংরেজ আমল থেকে যতটুকু দাসত্ব দিয়ে তৈরি হয় পায়ের নূপুর ভেবেছ হিসেব তার নেইনি কখনো যুদ্ধে যাইনি বলে সংগ্রাম করি না ? সবটুকু লিখে রাখি খাতার পাতায়, পাছে ভুলে যাই, পাছে জল এসে ধুয়ে দেয়, পাতার ওপর আঁকা রঙের আঁচড় |
কখনো জন্মাইনি নন্দীগ্রামে তাই বলে, কে বলেছে তোমাদের সাথে নেই ? কে বলেছে, সময় অস্পষ্ট হলে মানুষ কাঁদে না ? তেমন তেমন হলে বাড়ি ঘর বেচে চলে যাবো সোনাচূড়া ডালে চালে ফুটিয়ে তুমুল রান্না হবে খেজুরির ব্রিজের ওপর স্কুল থেকে ফিরে ছেলে মেয়েগুলো দুটো খেয়ে না হয় ঘুমোতে যাবে সরকারি বুলেটে
চুল্লিতে আজ আগুন কোথায় ধান ফলে নি মাঠে, শ্মশানে বসানো হাট সুয্যি গেলে পাটে | এখানে ওখানে ভাসে গরিবের লাশ কংকাল ব্যবসায়ী ধোয়ে তার হাড়মাস | কাটা পথ খাল হলো কুমীরেরা হাসে কালো গাড়ি এলে পথে বোমা ফাটে ঘাসে | কাটা স্তন ফাটা ঠোঁট শুয়ে আছে কিশোরী দোয়েল চড়ুই ভাবে --- "একে নিয়ে কি করি?"
আজ যমুনার পাকা দেখা কাল যমুনার বিয়ে বরের ঘরে আগুন লাগাও নন্দীগ্রামে গিয়ে, কে মেরেছে কে মেরেছে পুলিশ মেরেছে মরচে ধরা বন্দুকেতে ছররা পুড়েছে--- কে দেখেছে কে দেখেছে দাদা দেখেছে সত্যি মিথ্যা সাক্ষীরা সব কোমর বেঁধেছে | উনুন ভাঙা রান্না না হোক কান্না উঠুক রাতে যমুনার ভাই আর যাবে না কাস্তে নিতে হাতে |
চুল্লিতে আজ কোথায় আগুন, আগুন পোড়ায় গ্রাম, শিল্প আমার মাতা-পিতা শিল্প গোলকধাম, শিল্প-শিল্প বলো সবে কৃষি আজ মিছে, বিশ্বায়নে বিশ্বগ্রাম কুবেরেরা পিছে--- শিল্পায়ন মহাকাব্য অমৃত সমান লাঠি বাঁধা মূলো মাথে গাধা টান টান--- যতো ছোটে ততো মূলো সামনেতে ঝোলে গাধা ভাবে কাল যাবো ভেরেন্ডা জঙ্গলে |
নিরাপদ আশ্রয় জেনে শিশুটি আঁকড়ে ছিল মায়ের আঁচল, মা-ও বুঝি তাই ভেবেছিল মুহুর্তে সবকিছু বুঝবার আগে শিশুটির গলাকাটা লাশ মায়েল কোলের কাছে রেখে গেল হার্মাদ বাহিনী |
ওগো উতল হাওয়া তুমি কি জানো ওই মায়ের আর্তনাদের কোনো সান্ত্বনার ভাষা ! তুমি কি পারো ধর্ষিতা রমণী ও কিশোরীর লজ্জা মুছে দিতে তুমি কি বুলেটবিদ্ধ ক্ষতে বাড়াতে জানো শুশ্রূষার হাত খুঁজে দিতে পারো নিখোঁজ মানুষের ঘর ও বাহির
ওগো উতল হাওয়া তুমি কি তাড়াতে জানো সন্ত্রাসের ভয়াল আঁধার
এই চৈতালী দিনের থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরে পড়ে বুকের উপর সেই থেকে বোধহীন ভাষাহীন দেখে যাচ্ছি মানুষের মুখ ; তলানির মতো হলেও মানুষের মধ্যে মানবিকতা বলে কোনো বস্তু আছে কি না ?
যে শিল্প এতগুলো মানুষ হত্যা করে ফেলে রাখল ঝোপঝাড়ে, জলকাদায় ... তারা কি প্রকৃত জানে শিল্প কাকে বলে যারা মাটি ছাড়া অন্য কিছু চেনে না জীবনে যাদের ধানফুলের গন্ধ, গরমভাত ছাড়া অন্য কোন স্বপ্ন নেই ; তাদের রক্ত গড়ে উঠবে শিল্পময় দেশ !
এই দিনটাই হোক আমাদের চোখ মেলবার দিন | এই দিনটাই হোক আমাদের বোধোদয়ের দিন এই দিন আমাদের বিষন্নতার দিন, লজ্জার দিন ... হে কাদার জীবন, হে আগামী প্রজন্মের রোদ্দুর, শোন যদি এই দিনটা কখনও ভুলতে না পারি, কিংবা ভুলেই যাই, তবে আমাকেও তোমরা হা-ভাতেদের মতো ঝুলিয়ে দিও রক্তাক্ত বাঁশের মাথায় ... কিংবা শাসকের গুলির সামনে দাঁড় করিয়ে দিও ...
তোমার বরফ চোখ, স্থির স্থবির ওটুকুই নন্দীগ্রাম তোমার নবান্ন উত্সব, পয়লা বৈশাখ ওটুকুই নন্দীগ্রাম আমরা থাকবো গ্রামে, ক্যাম্পে, বন্দুকে, দাবানলে ওটুকুই নন্দীগ্রাম আমরা থাকবো আর অন্যেরা থাকবে না চাষে বাসে ওটুকুই নন্দীগ্রাম সবুজ থাকবে না প্রাণে, নারীর সিঁদুরটুকু---তাও থাকবে না ওটুকুই নন্দীগ্রাম আমার স্বার্থ আর আমার পতাকা ছাড়া কোন পুষ্পে, প্রাণে লাল থাকবে না ওটুকুই নন্দীগ্রাম
নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে নিহত কোন এক কৃষাণীর প্রতি রুদ্র পতি
তোমার শরীরে থ্রি নট থ্রি এ কী তুমি সেজেছ বিশ্রি ! রক্তে ভিজে যাচ্ছে জমি এ জমি জোর করে কেড়ে নিতে চেয়েছে সরকার ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে নিথর তোমার লাশ ফাল্গুন ফুরিয়ে গেল চৈত্রে সর্বনাশ !
তোমার শরীরে থ্রি নট থ্রি কে ছুঁড়েছে পুলিশ না কমরেডস ? তদন্ত করছে সি.বি.আই তোমার শহিদ রক্তে মাটি ভিজে যায় |
সার্কাসের তাঁবু তুমি, তুমি এই রাজ্য রাজনীতি ; বসন্ত তোমার নয় ! ভালবাসো কুয়াসা সম্প্রীতি ! কাদের সুখের জন্য ? কাদের বা চরম উচ্ছেদে ? তোমার হৃদয় ফেরে --- মন যায় বিভেদের স্বাদে --- ওপরে চটুল বাক্য ; প্রীতিপূর্ণ কনভয় যেন ভেতরে জটিল অঙ্ক, দর্শক ও ভাবেন সাহারা | এই কি মানুষ আর --- এই তার ক্রম অগ্রগতি !
অন্ধকার হরিনাম --- ভুল ভাল আলোক সম্পাতে ; গ্যালারি নিস্তব্ ধ আজ --- প্রতি দৃশ্যে সেই ক্লাউনেরা |
মৃত্যুর মিছিলে তখন মা অন্নপূর্ণা ভাইবোন বাকরুদ্ধ বউ ছেলের রক্তে আলুখেতের সবুজ গাছ পুকুরের জল লাল টকটকে একফালি ধনজমি লক্ষ্মীর দান তরম দুর্দিনেও মা বেচতে দেননি বাবাকে বোঝাতেন, বলতেন লক্ষ্মী চলে গেলে খোকাকে মানুষ করবো কীভাবে শুনতুম আর ভাবতুম মানুষ কাকে বলে স্নান সেরে লক্ষ্মীর হাঁড়িতে নবান্নের ধান ভরে, সিঁদুরের স্পর্ষ দিয়ে কুলুঙ্গিতে রেখে দিতেন অভাবের সন্ধ্যাতেও মায়ের কণ্ঠে লক্ষ্মীর পাঁচালি... মনে হত বেঁচে থাকার সার্থকতা মনে হত সার্থক জনম আর ... তখন অসম্ভব শৈশব
লক্ষ্মীর পাঁচালি ছুঁয়ে ভোট দিয়ে দুধ সাদা রাজাকে এনে বলেছিল এ আমাদের মা-বাপ ভগবান, মাথায় তুলে রাখিস চাষার মা ইতিহাস পড়ে নি এনাটমিও তার জানা নেই তাই দুধ সাদা পোশাক আসলে কঙ্কালে ঢাকা রাজবস্ত্র আসলে রাজবস্ত্রই বোঝেনি কোনোদিন বোঝেনি কঙ্কাল ক্ষমতালোভি রক্তপিপাসু ভাঙাবেড়ায় গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূর সামনেই মায়ের বুক চিরে রক্ত খাবে
মা তোদের বাঁচাতে পারিনি নদী থেকে রক্ত তুলে এনে যে লক্ষ্মীর হাঁড়িতে সিঁদুর লাগাতিস সেই হাঁড়িতে তোর চিহ্ন লাগাবো রাজাকে বলব--- রাজা, তুই যদি রক্তই খেতে চাস, ওই সাদা পোশাকের কি দরকার ?
ভোরের আলো ফোটার আগেই ছোটে হাতে লণ্ঠন দ্রুত চলা ভীরু তাপসী অন্ধকারের আবরণটুকু সাহারা শাতার্ত ক্ষণে চোরকাঁটা ব্যথা পায়ে আরো কত দূরে আব্রু রাখার সিমানা আকাশে তারা অপেক্ষারত পাহারা |
এ যুগেও মরে কত শত চেনা তাপসী ! কত ভাবে কত মরণ জ্বালায় স্তব্ ধ রক্তের লেখা মাটিতে ধুলোতে অদেখা ঘিরে থাকে শুধু দীর্ঘশ্বাসের দিন অশনি আলোয় শপথ স্পর্শ জীবনে প্রতিশোধ নেবে এ যুগের যত কলিকা |
ঢেউ আছড়ে পড়ে সমুদ্রের তট জলোচ্ছাস --- দম্ভ তুমি বেড়ে বেড়ে পাহাড় চূড়ায়, নীচে তাকালে ভিতের মাটি চোখেও পড়ে না ---
ফসল সরিয়ে সভ্যতা উন্নত হবে, মানুষের মর্ম-অশ্রু শিল্পের উত্তাপে বাষ্প হবে বিস্ফোরণ শেষে গুলি ধোঁয়া হয়ে যায় নিরপরাধ ঘুমে ঘুমিয়ে পড়ে শিশু নারী ক্ষণজীবী মানুষ --- সাদা কাপড়ে ঢেকে যায় এ জন্মের দেহ চোখমুখ
তুমি এ কোন্ সর্বনাশা চূড়ায় উঠেছ পতাকার পাথরে সাফল্যের দিনলিপি, আমরা জেনেছি মৃত্যুই শেষ শিল্প সভ্যতার শিখর শিকড় উপড়ে ফেলে গড়ে তোলা দম্ভের মিনার |
সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়া আর সোনাচূড়ার বড় মিল, দু'গ্রামের মাটির নিচে এখন এক তাপসী অন্য পায়েল হাত ধরছে অন্য ছোট্ট বোনদের | ক্ষমতার জমি রাখতে--- মাটির ওপরে রাজা-মন্ত্রীদের দম্ভ আর বর্বর দাপাদাপিতে--- নিচের পৃথিবী এখন শান্ত নীরব | বেড়াবেড়ির জমিহারা বৃদ্ধ হারাধন ভাঙাবেড়ার ইমাদুলকে একমুঠো বীজধান দিয়ে বলল, রেখে দাও, চাষ না হলে মানুষ খাবে কি ?
মাটির ওপরে এখন বারুদগন্ধে ভারী বাতাসে কান্নার সুর, রাস্তায়-উঠোনে রক্তের স্রোতে মাছি--- সন্দেহ আর হাহাকার হাঁটছে পাশাপাশি--- ঘৃণায় স্কব্ ধ হলদি নদীর জল |
গোপালনগর আর গোকুলনগর যেন জমজ, মাটির নিচে ঘুমিয়ে পড়া কচিকাচার দল এখন খুঁজছে মৃত মায়ের কোল | দুই নাতনীর হাত ধরে সোনাচূড়ায় পূর্ণিমা মণ্ডলও খুঁজছে একমাত্র সন্তান-- বৃদ্ধার হতবাক মুখে থমকে গেছে সভ্যতা...