শুধু গোলা আর বারুদ গ্রাম ঢেকে যাচ্ছে ধোঁয়ার আস্তরনে মানুষ মানুষকে ধাওয়া করছে বন্দুক হাতিয়ারে কেউ কেউ টিলার ওপার থেকে টপকে দিচ্ছে মলোটভ ককটেল কয়েকজন নির্দেশ দিচ্ছে আক্রমণ কি ভাবে তুঙ্গে নেবে স্ত্রী পুরুষ শিশুরা ভীত হরিণের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে চার পাশে লাশ পড়ছে কাটা কলাগাছের মতো আর শুধু দেখছি রক্তে ছয়লাপ যেন দ্রোহময় দিনগুলি ফিরে এসেছে মানুষে জ্বালিয়ে দিচ্ছে পড়শির ঘর পশ্চিম বাংলা যেন সম্রাট নিরোর জতুগৃহ কৃষকের জমি ছিনিয়ে নিচ্ছে যারা একদিন বর্গা আর পাট্টা দিয়েছিল তারা যুগ যুগ জিও ফ্যাসিবাদ ঢুক ঢুক পিও মার্ক্সবাদ সবুজ ধানক্ষেত হয়ে যাচ্ছে রক্তাক্ত কার্পেট এখন আমরা কি নিয়ে বাঁচব বলো কৃষিকাজ না বন্দুকরাজ ?
আর পারিনা মাননীয় সিনর--- আপনার হয়ে আর কত লড়বো ? আপনি তো জানেন, এতদিন অবধি কি কি করেছি, কীভাবে সব "না" বলা মুখগুলোকে হ্যাঁ বলিয়েছি কীভাবে গাইতে বাধ্য করেছি আপনার জয়গান, আপনার দেখা স্বপ্নকে সত্যে পরিনত করে চলেছি কীভাবে কীভাবে কীভাবে...
তবু আপনি আমাকে দেখছেন না মাননীয় সিনর | নিজের স্ত্রীর থেকে দেখুন দূরে সরে আছি কতকাল সন্তাদের সঙ্গে কাটাই বছরে মাত্র কয়েকটা দিন সব শখ-আহ্লাদ আহুতি দিয়েছি আপনাদেরই চরণে তবু আপনি ... "নাদের আলি" কথা রাখে নি, আপনিও কি রাখবেন না ?
আপনার বিরুদ্ধে কেউ ফোঁস করলেই তাকে তত্ক্ষণাৎ শিখিয়ে দিয়েছি ধারাপাত, রাতের পর রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি আপনার কল্পিত বাগান, কেউ ট্যাঁ ফো করলেই পালিশ করে দিচ্ছি তার পিঠের চামড়া, যৌনাঙ্গের হরফ তবুও আপনি ...
আপনার ভাবশিষ্যদের হয়ে আমি লড়ে যাচ্ছি আপনার প্রিয় দালালদের হয়ে আমি লড়ে যাচ্ছি কতকাল তবু, একটু ভাল কিছু, অন্তত শাঁসালো "ইনাম" এখনো আমার জন্য বরাদ্য করলেন না, মাননীয় সিনর ! আপনার হয়ে আর কত লড়বো ? আর পারি না---
উদ্যোগীদের বিশ্বহাটে হল্লা পাকায় এক বখাটে --- ছক নকশা মালিকানা দরদস্তুর বেচাকেনা জলের জিনের বাটোয়ারা করতে আসো তোমরা কারা ? উন্নয়ন ? কার বা কিসের ? জীব ও জমির, বনভূমির ? গাছ-গাছালি পাখ-পাখালি পোকামাকড়, মাছ-মাছালি আর যতো সব জীব প্রজাতি আমরা যারা মূল আবাসী হাজার বছর এক সাথে সব এই আবাসে যুক্ত আছি ? বলছো কি গো, দাম ও দেবে ? বাজার দরের চেয়েও বেশী ? জীব-পালনী, বিষ কাটানি জল-ভরানি জল নিকাশি শহর নগর বাঁচিয়ে রাখি, নিজেও বাঁচি এসব কিছুর দাম জানো কি ? কোন নিলামে কে চড়ালো কোন বাজারে, সে কোন দেশী ? কেমন তোমার উন্নয়ন ? বিলোপ হবার বিলোপ করার বীজবপন ? লুঠতরাজের বিশ্বায়ন ?
হল্লা মচায় বিশ্বহাটে এক দুই তিন .... লাখ বখাটে এ তল্লাটে, সে তল্লাটে দালালি কি উঠবে লাটে ?
বিশ্বাস ও মাটির ওম থেকে ওপড়ানো বিশাল শিকড় আজ গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে শুণ্য থেকে শুণ্যে তালগোল পাকানো হাড় ও মাংসের এই উত্সবে কে তোমার নাম ধরে ডাকে ? কে তোমাকে বার বার ঘরে ফেরার তাগাদা দেয় ? মেঘের ফাটলে ফাটলে উড়ছে উলুখাগড়াদের চেরা জিভ, উপড়ে নেওয়া নখ, বিস্মিত চোখের তারা ...
যারা চামচে হয়ে বাঁচতে চায় বাঁচুক হাত আমাদের ফ্যাসিস্তদের রুখবে যে হাতে সাহিত্যচর্চা, ছবি লেখা --- গান সেই হাত উদ্যত রেখে নিশ্চিত রেখে নিশিচিত জানাতে পারি যেন মানুষের বাঁচার স্লোগান --- সেই হাত লড়াইয়েরও, প্রয়োজনে অস্ত্র তুলে নেবে নিরন্ত সংগ্রামরত কৃষকের পাশে আর শ্রমিকের পাশে সারিবদ্ধ আমাদের হাতগুলি সংহতি জানাবে না হলে কবিতা নয়, বৃথা শিল্প, বাঁজা গদ্যকথা চাটুকার, রাজন্যপ্রথায় বেঁচে থাকা যারা তাকবে আঁস্তাকুড় তাদের ঠিকানা আর অবিমৃষ্যকারিতা ... ইতিহাসে যেরকম দেখা, সমাজতন্ত্রের ছদ্মবেশে ঘুরে ফিরে প্রকৌশলে ফ্যাসিবাদ আসে মরিচঝাঁপির পথে যে মত বিশ্বায়নে এখন সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আর গণহত্যা সঙ্ঘটিত করে ব্যর্থতার তিরিশ বছর পরে ভণ্ড বামপন্থীদের ঔদ্ধত্বে ও অগৌরবে একে একে বন্ধ-হয়ে-যাওয়া শিল্প কল কারখানায় ক্রমশ পশ্চাদবর্তী বাংলা ও বাঙালির অসাধু ঘুষখোর মন্ত্রী কিংবা নেতাদের ট্র্যাজিক উল্লাসে মানবতা-হত্যাকারী আর ভ্রষ্টাচারী স্বৈরতন্ত্রী দানবের সময়ের সাক্ষী হয়ে আমাদেরও সঙ্ঘবদ্ধ হাত আর সৃজনের দুর্মর প্রয়াস না যদি তা প্রতিহত করে প্রজন্মের অকল্যাণ হবে
এখানে সুন্দর রাত | মশারির মধ্যে হাতপাখা | পালঙ্ক গড়িয়ে নামছে পণ্যের জল, লিঙ্গ অনুযায়ী | এখানে মাল্টিপ্লেক্সে একরাশ সিরিয়াস সিনেমা চলছে | এখানে পাঁঠার ঝোল রাঁধতে-রাঁধতে আলোচনা চড়িয়েছি ভূমিহীন চাষিদের নিয়ে |
দূর থেকে জানাই দুঃখ, তিন বা চার ফসলা জমিগুলিকে | যেখানে, ধর্ষণের পর নেতিয়ে রয়েছে বীর্য, আর, মানুষ মারার পরেও গজিয়ে উঠছে শস্যগাছ | দূর থেকে জানাই দুঃখ, কাছে গেলে, মাটি তার বাস্তবসুদ্ধ উপড়ে উঠে এসে আমাকে লজ্জায় ফেলে দেবে |
আমি তো জেনেছিলাম মধ্যযুগ কবে পেরিয়েছি মানুষেরা মি তো জেনেছিলাম, স্বৈরাচার নিভুনিভু হয়ে এসেছে এ দুনিয়ায় আর মানুষ-ই ঈশ্বর --- নিষ্কম্প হয়েছে সেই সত্য অনেকাংশে আজ --- সব ভুল সে, কী লজ্জা, জানতে হলো নিজের ঘরেই ? আর আলোর উদ্ভাস দেখে একবারও মনে হলো না নেপথ্যে যত সস্তার হাউই ? মানবতা খুন করে মানবদরদী সেজে ওঠে ওরা নিমেষেই --- যে ভুল জেনেছিলাম, নিজের কাছে কি ক্ষমা পাবো আমি ? --- যেন পাই নন্দীগ্রাম, সাহসে চোখের জলে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকো অস্তিত্বে আমার |
এই সেই মৃত্যু যার অন্রালে ধানের শোণিত প্রবাহিত হয়েছিল | এই মৃত্যু যার পূর্বাপরে কোনো রাজনীতি সমৃদ্ধি হয়েছে এ'যেন গ্রামীণ, কোনো নিরক্ষর ব্যক্তির উদ্দেশে নিবেদিত অন্তিম গোধূলি
আবার মাঠের দিকে রাতের অপার শুভ্রটিকে তরুণ নক্ষত্র, যদি মনে পড়ে, ফিরে আসবে | কালপুরুষের তিরের আঘাত থেকে বিস্ফারিত প্রশ্ন আর প্রশ্নের সম্মান কেন, মৃত্যু কেন
বলুন তো ভাই, রাক্ষসের হাতে কেন মানুষেরা বার বার পরাজিত হয়ে অঘোরে ঘুমোয় কেন-ই বা তারা ওই বেহুঁশ অবস্থা থেকেগ্লানিকর বিষ বিঁধে দিচ্ছে সময়ের ঘাড়ে অসম্ভব, সময় নিজেকে নিজে এরকম অসুস্থ করে না এসব ঘুমন্ত মানুষেরই বেফাঁস কথার ফাঁকে রাক্ষসেরা হাতে নিচ্ছে মানুষের নিয়ন্ত্রণ ভার
সহ্যের সামর্থ-ভাঙা অশান্তির জলন্ত তাণ্ডবে সত্য পুড়ে ছাই হওয়া মাত্র ইতিহাস নিয়ে নিচ্ছে কোলে ওড়াক না আততায়ী, ইতিবৃত্ত হত্যা করে বিজয়ের সগর্ব নিশান ইতিহাস খুন হলে দীর্ঘজীবী হয় |
কোনো এক রক্তাক্ত উন্মত্ততার ঘোর কাজ করে | মাথার ভিতরে ---গিজ গিজ করে পলাতকের যন্ত্রণা | না জানি কিভাবে শুয়ে আছে রক্তাক্ত লাশ মাঠের ওপারে--- রোদ হীম মেখে ফাগুনের ঘাসে | সঙ্গী সাথী ভাই--- প্রাণের চেয়ে বড় কিছু নাই সেই লোভে সংগ্রামী ভাইদের ছেড়ে এসেছি পালিয়ে অন্ধকারে চুপি চুপি--- কাপুরুষের মত এসেছি দাঁড়ায়ে মর্গের পাশে--- যদি কোনো খোঁজ পাই হাসপাতালে অসংখ্য মৃতের সাথে--- শুয়ে থাকে পরম আদরে সফেদ চাদরে ঢাকা হয়ে--- সঙ্গী সাথী ভাই | না না --- তারা ধরা দেবে না তারা দেখা দেবা না ; কারণ তাদের যে রক্তমাখা শরীরের প্রতিশোধ চাই |
গানটি নন্দীগ্রামের ওসমানচকে মেয়েদের কণ্ঠে শোনা | সংকলক মুহাম্মদ হেলালউদ্দীন, ক্রীক রো, কলকাতা থেকে প্রকাশিত, 'আমাদের কথা' পত্রিকার ষষ্ঠ বর্ষ, অগাস্ট ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
জমি হারাবে চাষি ঘুমাবে শিল্প হবে দেশে, রাজামশাই আদেশ দিলেন "ক্ষেত ছেড়ে দে হেসে ক্ষেত দিবি না চেক নিবি না কেমন রাজার ভক্ত চাষি দমন করতে হবে একটু হয়েই শক্ত | চিরকালের উপেন তোরা এমন দেবো সাজা জানিস না কি বোকা চাষি আমিই দেশের রাজা, তোদের দমন করতে হবে হতেই হবে শক্ত যতই করিস বিদ্রোহ, আর যতই ঝড়ুক রক্ত | না থাক ঘরে ভাতের হাঁড়ি অল্প টাকায় চড়বি গাড়ী দেশটা আমার জমিদারী বুঝিস না কি বোকা উপেন আমি কাদের ভক্ত!" এই না ব'লে রাজা মশাই পাঠিয়ে হাজার হাজার সেপাই শাল খুঁটি আর তারকাঁটাতে জমি নিলেন ঘিরে রাজার মুখোশ পড়লো ছিঁড়ে পেটে আগুন বুকে আগুন দলে দলে উপেনরা আজ শপথ নিয়ে তুলছে আওয়াজ পায়ে পায়ে মিলছে তারা আন্দোলনের ভিড়ে ||
মাঠের পাশে খুরপী হাতে অপেক্ষায় ছিল যুবক আরেকটু আলো ফুটলেই সে কাজ শেষ করবে ওর দিদি ধান্য কুড়িয়া ছিল রেখে গেছে ধান যেদিন রক্ত ছিল ধানের শীষে | ওর বসার ভঙ্গিটি অদ্ভুত নির্জন ঠিক ঠাকুরদার মত আনত ঋজু | আজ ভোরে মহাজনের কেড়ে নেওয়া জমির খুটি ঘরে ঝাঁকায় আর চেঁচায় ওর বোবা ভাই আর দুর্গাখুড়ি শুকনো গর্তে নেমে তাপসি মালির গন্ধ খোঁজে অলক্ষে চণ্ডাল বৃত্তাকারে মাঠ জুড়ে টহল দিচ্ছে অরণ্য পঙ্গু করে যে কাঠ আসছে তা দিয়ে চণ্ডাল চিতা না খুটি, কি সাজাবে ?
দু-হাতে দু ঠাং ধরে যে মানুষ ফালা করে শিশু তার চোখে কোনোদিন নেমে আসে ঘুম ? সে কখনো ওই হাতে জল খেতে পারে ? অথচ এখনো দিব্যি উন্মাদ না হয়ে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে মটর সাইকেলে চেপে মাথায় হেলমেট পরে জনসমর্থনে ! এখনো যে শিশুকন্যা নারী হয়ে ওঠে নি শরীরে তার প্রতি যার কাম ফলা হয়ে ছোটে ফুলের সুগন্ধ তাকে কোনোদিন ছোঁবে ? গাছের তলায় গেলে কোনো শাখা ছায়া দেবে তাকে ? অথচ সে ভীষণ নিশ্চিন্তে বসে গণকবরের মাটি খোড়ে পৌরুষ পরিসেবায় সেও সুরক্ষিত থাকে জনসমর্থনে !
এই কালো দিন আমরা মনে রাখছি এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, এই গণহত্যা, এই রক্তভেজা মাটি, এই চোখের জল আমরা মনে রাখছি পশ্চিমবঙ্গের তখ্ৎ-এ-তাউসে বসে আছেন সাদা পোশাকে একজন খুনী
শোকার্ত যন্ত্রণার ভেতর প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে অগ্নি অগ্নি তুমি সাক্ষী কবির লেখনী যদি সত্য ছুঁয়ে থাকে ভবিষ্যতের একটা আগাম ছবি সে দেখতে পায় সে দেখতে পায় দম্ভের মিনার গুঁড়িয়ে এই সব খুনীদের মহাপতনের সূচনা দিন ১৮ মার্চ ২০০৭
ক্ষতবিক্ষত বিনিদ্র রাত্রির স্তব্ ধতার মধ্যে সে দেখতে পায় মানুষ দৃঢ় করেছে তার হাতের মুঠো ঘৃণায় আর ভালোবাসার অঙ্গীকারে
এই কালো দিন আমরা মনে রাখছি এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, এই গণহত্যা, এই রক্তভেজা মাটি, এই চোখের জল
বাবা বলেছিল আজ আর স্কুলে যেতে হবে না নুন আনতে হবে না হরিদার দোকান থেকে, সবাইকে ডেকেছে ছোটরাও সামনে গিয়ে দাঁড়াবি চল্ ঐ তো ওদিকে গণেশ, নাসিমা ভোলারাও | লাফাতে লাফেতে আকাশী ফুলের ফ্রক সামনের লাইনে তারপরই চিত্কার, রক্ত তারপরই বাঁশবনের পাশ দিয়ে সার বেঁধে দুলতে দুলতে রক্তমাখা আটপৌরে শাড়ি চেকলুঙ্গি, বোতাম ছেঁড়া শার্ট ট্রলার বোঝাই লাশ গঙ্গাসাগরের দিকে ট্রেকার ভর্তি হয়ে হলদিয়ার দিকে |
ট্রলারে লাশের গাদায় আকাশী ফুলের জামা সাগরের দিকে হাওয়া কাটে, কাটা ডান হাতখানা অন্য গাড়িতে হলদিয়ায় সমুদ্রের হাওয়ায় ওড়ে জামার শূণ্য হাতা | প্রান্তরে মিলায় লোকালয় শহরের সেমিনারে এক মিনিট নীরবতা - "সব মৃত্যুই দুঃখের" বলে | মাথার উপর নিঃসীম নীলাকাশ, ক্রমশঃ আরো নীলাকাশ সেখানে কোথাও কোনো হরিদার দোকান নেই কোনো ইস্কুল নেই শুধু এক চিল ওড়ে বহুদূরে পৃথিবীতে আর কোনো শব্ দ নেই, দৃশ্য নেই আর কোনো দিন জেগে ওঠা নেই |
ও কাদের শিশু যার ছিন্নভিন্ন লাশ প'ড়ে মাঠের উরে ? ও কাদের শিশু যার লাশে আর মাথাটা-ও নেই ? ও কাদের আদরের শিশু ?
হাত চালাও দোস্ত্ ! ...হাত চালাও যতটা দ্রুত পারো ! ... আরো দুই ডজনের লাশ ঢেকে দিতে হবে মাটির তলায় ... তবে তো নির্দায় হবে মাটি ... আমাদের যেতে হবে এ সব ছেঁড়া খোঁড়া লাশের জঞ্জাল পার হয়ে ... এখানে বাগান হবে ... ঝক্ ঝকে বাজার হবে ... গড়ে উঠবে স্বপ্নদের বিচিত্র ফোয়ারা ... হাসি আর হুল্লোড়ের শব্ দ নিয়ে ছুটে আসবে দ্রুতগামী আশ্চর্য শকট ... আর, সে শকট থেকে নেমে আসবে অনাগত উজ্জ্বল শিশুরা ... উন্নয়ন ! উন্নয়ন হবে !
শুধু দুটো প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে কমরেড ... ওই যে শিশুর লাশ --- মাথাটাও নেই যার দেহে ... ওকে কারও মনে পড়বে না তে কোনোদিন ? আর, আমাদের মধ্যে যার সমব্যথী হাত নিষ্কৃতি দিয়েছে ওকে --- এ-হতাশ জীবন থেকে, তারও মনে পড়বে না তো এই অনাগত শিশুদের ? কোনোদিন ? |
শুধু বলি এভাবে কখনও হয় না | যেটুকু নিয়ম মানি ঘৃণাদাগ যায় না সহজে | এখন আদর্শ মানে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি এখন মতাদর্শ শান্তিপূর্ণ চৌকাঠ ঘিরে থাকে আমরা এখন শুধু নিয়ে বড়, দিয়ে নয় এত খিদে, চারিদিকে পাখির পালক, অস্ত্র সংযোগ বেঁচে থাকবার মতো অনিয়ম শেষে হে জীবন আর কত পংক্তি দিয়ে আড়াল করব দগদগে ক্ষত, পুঁজ, হাহাকারের যতিচিহ্ন ?