অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কবিতা (সংগ্রহ)
|
অহল্যা উত্থান
বিমল রায়
কেউ নেই চারিদিকে রাত্রির
শুনসান নিজস্ব উঠান
কতিপয় লোক বসে, অপেক্ষায়
অহল্যা পাথর ভোর রাতে
নৌকা বেয়ে প্রকাশের ডাক আসে
ভূমিজরা জেনে গেছে কীভাবে
মিশাইলের বিপরিতে শিকড় আঁকড়ে
ফিরিয়ে দিতে হয় বিশ্বায়ন ঘোড়া
রাত শেষ কিছুদূরে মাঠে
শিয়াল লুকাচ্ছে গর্তে
ধানিলংকার সন্নিবদ্ধ শিমুলবৃন্তে
প্রতিবাদের খবর ছড়িয়ে পড়ছে দূরান্তে |
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি 'একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি'-র পত্রিকার ১ জুলাই ২০০৭
এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
জাতক কাহিনি
সৌমিত বসু
সেই শরণাগতকে বুদ্ধদেব কহিলেন...
তোমাকে দেখেছি আকাশের নীল তারায়
তোমাকে দেখেছি আগুনে জাহান্নামে
চোখ ফেটে জল বিশ্বাসহীনতার
গুলিবিদ্ধের দুই গাল বেয়ে নামে
রাখোনি তোমার ভালো রাখবার কথা
মরেছ, আমায় মেরেছ অহংকারে
বুশ আর তুমি একই চেয়ারে ব্ লেয়ার
তোমায় ভুলতে কেন যে কষ্ট পাই ?
ওই মুখ যেন হয় নাকো বিহ্বল
রবীন্দ্র আর জীবনানন্দ ভাষায়
মায়কোভস্কি মুখোশের এক নাম
তুমি যেই হও আমাদের কেউ নও
তুমি রেখেছ তোমার উজ্জ্বল কথাগুলো
ঘাসের উপর শোয়ানো শিশুর লাশে
যে দাগ লেগেছে বিশ্বাসহীনতার
কী ভাবে মুছবে সেই দাগ আজ ভাবো...
( ষোলোই মার্চ সন্ধে সাতটা শূণ্য সাত )
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি 'একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি'-র পত্রিকার ১ জুলাই
২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
১৪ মার্চ (এক)
মন্দার মুখোপাধ্যায়
সোজাসুজিই লিখি যে সমস্ত দাঁড়ি-কমা
সমেত, এ এক দীর্ঘ প্রলাপ, কারণ,
আমি জানি না, ডানহাতি যে গুলির ছররা
তাকে কি জীবনানন্দ বলব ? বাঁ দিকে মায়াকোভস্কি ?
ঈশান ও নৈঋতে নেরুদা ও সুকান্ত ? রক্তমাখা
জমি আর গুলি খাওয়া লাশে
ফেঁপে ওঠা হাওয়া, ফুলে ওঠা পুকুর ---
সবই কি কবিতার বীজভূমি ! ঝুঁকে আছে
গাছ, ধুঁকে আছে মাঠ |
এই দু একটা শব্ দ
ক্রমাগত নেড়েচেড়ে দেখছি---
দেখছি আর দেখছি---
গুলি নয়তো!
এতেও যে রক্ত লেগে আছে!
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি 'একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি'-র পত্রিকার ১ জুলাই
২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
১৪ মার্চ (দুই)
মন্দার মুখোপাধ্যায়
আমরা ভীষণ ব্যস্ত
পাঁচটা কাগজ আর চ্যানেল নিউজ---
এ চ্যানেলে লাল শাড়ি ও চ্যানেলে ধুতি
মাঝে শুধু হেডলাইনস---ছবি
পাতলা কাঙাল চেহারায় গামছা জড়ানো
খেঁটো শাড়ি --- চেক লুঙ্গি পরনে
এরা প্রতিরোধী ? প্রতিস্পর্ধী শিল্পায়নের পথে ?
ড্যাবড্যাবে চোখে শিশুমুখ---
--- মা কোথায় তোর ?
--- মরো গেছে ?
--- কী করে ? কবে ?
--- গুলি খেয়ে | কাল | হারানের দাদা পুলিশ সেজেছিল |
--- বাবা কোথায় ?
--- চলে গেছে | কবে মনে নেই, গ্রামছাড়া |
--- ইশকুল ? দোকান ?
--- সব বন্ধ হয়ে আছে |
--- খাবি কী ? কী করে বেঁচেছিস ?
--- কালকেই আমরাও মরে যাবো,
এই শেষ ইন্টারভ্যু কাগজে কাগজে |
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি 'একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি'-র পত্রিকার ১ জুলাই
২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
উত্তরসূরিদের পাশে দাঁড়াও
দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
চিতা থেকে উঠে এসো
আগুনের পোশাক পরে
কবর থেকে উঠে এসো
মাটির গন্ধ মেখে
এই মুহুর্তে
তোমরা কেউ মৃত নও
ছেচল্লিশের কৃষক
তোমাদের জাগিয়ে তুলেছে
সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম |
শ্রমিকের সঙ্গে কৃষকের
কোনও সংঘাত নেই
শিল্পের সঙ্গে কৃষির বিরোধ নেই
কিন্তু, শোষণের সঙ্গে
বিদ্রোহ কখনও আপোস করে না
সে কারণে, তোমাদের পথ ধরে
ধীর পায়ে হাঁটে উত্তরসূরি |
টাটা সালেম সান্তোসা
এরা সব ছেচল্লিশের জমিদার
ওদের লাঠিয়াল বাংলার মাঠে মাঠে
ইংরেজ প্রভু রক্তনেশায়
সন্ত্রাসে শান্তি খোঁজে,
এমন দিনে জেগে ওঠো
ছেচল্লিশের কৃষক
উত্তরসূরি ডাকছে তোমায়
কাস্তেতে দাও শাণ
নতুন করে গাইতে হবে
ধান বাঁচানোর গান |
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি 'একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি'-র পত্রিকার ১ জুলাই
২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
কৃষিসভ্যতা
রুদ্রশংকর
যন্ত্রটা রেখে দিয়ে গুদামে
তুলে নাও নাও লাঙ্গল বন্ধু,
দেশ নয় আমাদের শিল্পের
কৃষিটাই ধরে রেখো বন্ধু |
চোখ মেলে দেখছো কি সেখানে ?
তারা সব শিল্পের মজদুর
গাছেদের ভালোবেসো বন্ধু
থাক পড়ে যন্ত্র বহুদূর |
সবুজের ছোঁয়া তুমি একবার
নিয়ে দেখো শরীরের আনাচে,
মুছে যাবে মলিনতা মানুষের
বাসা করে যত ছিল কানাচে |
তাই আজ হাল দিয়ে মাটিতে
ভেদাভেদ ভুলে যাও বন্ধু,
তারা বুঝি কারখানা খুঁজছে
তুমি খোঁজো মাঠঘাট বন্ধু |
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি 'একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি'-র পত্রিকার ১ জুলাই
২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
তোকে খুঁজি---বেহুলা
শুক্লা দত্ত
বহু পুরাতন স্বপ্ন বুঝি
ফিরে আসে---
মুলাদির জল নাকি হয়েছিল লাল
বহু শব গিয়েছিল ভেসে---
সে এক শোকগাথা বহুশ্রুত---
পরনকথা হয়ে ভাসে আকাশে বাতাসে
শুধু খুঁজি তোকে
এখন তো তোকেই চাই---বেহুলা
আমার শিশুর শব
ভেসে গেছে খালে, বিলে
হলদির জলে---
ওদের ফিরিয়ে আনি
এ দায়
কাকে দিই আর তোকে ছাড়া
এখন শুধু তোকেই চাই---বেহুলা আমার
আঁকতে চেয়েছি বালকের ছবি
ঘাসরঙে
মাথায় মুকুট কাঁঠালপাতার
হাতে ধানশিষ---
খুঁজে পাই তাকে
পানের বরজে
আধপোড়া শবে
তাকে ফিরিয়ে আনার দায়
এই বাংলায়
তোর হাতে সঁপি
বেহুলা
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি 'একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি'-র পত্রিকার ১ জুলাই
২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
শেঠকাহিনি
অজাতশত্রু (২য়)
শেঠের বাছার দিঘল পেট কাজেই মাথা হয় না হেঁট |
পেটের ভালো নাম তো উদর
হলদি নদীর ঘোড়েল কুমীর শেঠের সোদর |
কোথায় ভরত কোথায় রাম লক্ষ্মণেরই নন্দীগ্রাম |
তার লাগোয়া খেজুরি মানুষ মারার মজুরি
ক্যাম্পে বসে খেলবি দাবা পাহারা দেবে পুলিশবাবা |
ধর্ষণে রেট ডাবল পাবি শেঠের বাছার মুঠোয় চাবি |
নন্দীগ্রামে কীসের চাষ ? মাটির তলায় শিশুর লাশ |
হলদি নদীর কুম্ভীরে লাশ খেয়েছে পেট চিরে |
এল ট্রলার এল নাও, যত লশ নে' যাও---
ফেলবে নিয়ে সাগরে মহোচ্ছব হোক হাঙরের |
শেঠের বাছা হলদিয়ার উত্সবে সব চল, গিয়া---
কবিতা, গান, নাচ করি | প্রতিশ্রুতির ক্যাচ ধরি |
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি 'একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি'-র পত্রিকার ১ জুলাই ২০০৭
এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
এত রক্ত কেন? উন্নয়ন
মধুমঙ্গল বিশ্বাস
একুশে ফেব্রুয়ারি যদি বাংলা ভাষার গৌরবের দিন
তবে আজ ১৪ মার্চ
গোটা বাঙালী জাতির কলঙ্কের দিন
আকাশের তারারা আজ ফুটবে না
পলাশ বলেছে আর রাঙাবে না
পাখিরা বলেছে, কোন লজ্জায় গাই গান
"এত রক্ত কেন"-র ভণ্ড পাঠক-ভাবে
রক্তনদীর এপারে দাঁড়িয়ে দেখি
বাংলার মাঠঘাট আজ শিল্পের কতখানি হল
অভাগা গাঁয়ের ছোট লোকজন ভাবে
বাংলার বিখ্যাত বুদ্ধিজীবীরা কেমন সহজে বুদ্ধজীবী বনে যায় অথচ আমরা!
নচ্ছার কৃষিজীবী থেকে ঢাক ঢোলের শিল্পজীবী হতে পারলাম না!
হক কথা কজনে-বা জানে
পুরুলিয়া মানভূম কজনে-বা চেনে
সকলেই জ্ঞানপাপী তবে!
নিরাপত্তার ঘেরাটোপ ওদিকে যে ফর্দাফাঁই
একথা জেনেছে যে খুনি, নন্দনের ওড়নায় সে ঢেকেছে হিংসার মুখ
কবিতায় নাটকে তিনি ভণ্ডবুদ্ধ
ধ্যানে-জ্ঞানে-বোধিতে মতিচ্ছন্ন
ধর্ষকের হাতে আজ রাষ্ট্রীয় রাইফেল
মাস্তানি-ধর্ষণ-রাহাজানি-ধেনোমদ বাংলার নব্যসংস্কৃতি
কবি হলে খুনি ষোলোকলা পূর্ণ হয় পাপে
সেই লজ্জায় মূক হয়ে যারা আছি
বদ্ধবাণে হবে না বিজয়, কদমে কদম মেলাও
বোধির অস্ত্রে বধ হোক আজ প্রতারক রাজাকার |
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি 'একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি'-র পত্রিকার ১ জুলাই ২০০৭ এর
সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
এখনও যদি
গুঞ্জন দত্ত
এখনও যদি চুপ করে বসে থাকি
এখনও যদি দেখে না দেখার ভান করি
এখনও যদি ঘাতককে স্পষ্ট চিনতে ভুল করি
এখনও যদি প্রচণ্ড ক্রোধে ফেটে না পড়ি
তবে একদিন দেখবে
জল্লাদরা তোমার দরজায় এসে কড়া নাড়ছে
তাদের বজ্রকঠিন হাত তোমার গলা টিপে ধরছে
তোমার স্ত্রীকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে
তোমার শিশুটিকে আগুনে নিক্ষেপ করছে
এখনও যদি চুপ করে বসে থাকি |
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি 'একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি'-র পত্রিকার ১ জুলাই
২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
দখলদার
বিশ্বামিত্র
"নতুন সূর্য উঠছে দেখো"
জল্লাদরা হেঁকে বলে,
বারুদ ধোঁয়ায় ঢাকা আকাশ
সূর্য কোথায়, চিতা জ্বলে |
স্বজনহারা বারুদ বুকে
জ্বলছে চিতা, উড়ছে ছাই,
জল্লাদরা মন্ত্র পড়ে
ভাইয়ের হাতে মরে ভাই |
জ্বলেই গেছে ভিটে বাড়ি
বিশ্বাসেরও জ্বলছে ঘর,
শাসক ঝাণ্ডা চিনিয়ে দিচ্ছে
কে আপন কে-ই বা পর |
রুমাল ঢাকা রাষ্ট্র আসে
রাষ্ট্র আসে উর্দি পড়ে,
ধু ধু শূণ্য এই শ্মশানে
গণতান্ত্রিক শান্তি ঝরে |
ঘর ছাড়ারা ঘরে ফেরে
ঘরের মানুষ ছাড়ে ঘর,
জল্লাদেরা মন্ত্র বলে,
"হয় মার নয় নিজে মর" |
লড়িয়ে দিয়ে ভায়ে ভায়ে
শাসক করে যোগ ও ভাগ,
মিডিয়াতে তর্ক জমে
সিবিআই না বিচার বিভাগ |
দখল হওয়া গাঁ গেরাম
দখল হওয়া ঘর দুয়ার,
নেতার আসন দখল করা
শাসক নামের দখলদার |
এ হাত থেকে ও হাত
হবে এভাবেই কি জনগণ---
নাকি বাঁচার দখল নিতে
গড়ে তুলবে ভীষণ রণ ?
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি ৩০, বিধান সরণী, কলকাতা থেকে ত্রিদিব বসু
কর্তৃক সম্পাদিত, "আন্দোলনের সাথী" পত্রিকার ১৪ নভেম্বর
২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
হিংস্র পশুরা ছিঁড়ে খাচ্ছে
কমল ভৌমিক
হাত তো তুলেই আছি---
ট্রিগার থেকে আঙুলটা সরাও |
আমায় মারলে পৃথিবী
ভারমুক্ত হবে না একটুও
একটা বুলেটই বাজে খরচ |
বরং ওটা তরতাজা রাখো
ঘৃণা আর ক্রোধের আঁচে
দেখো হিংস্র পশুরা ছিঁড়ে খাচ্ছে
মায়ের পবিত্র শরীর |
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি ১৪৪, জজবাগান, কলকাতা থেকে অরুণ ভট্টাচার্য
কর্তৃক প্রকাশিত, "আন্দোলনের সাথী" পত্রিকার ২৫ বৈশাখ ১৪১৪
এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
অহল্যা
শতদল মিত্র
যার ঘর নেই
তার ঘর পুড়বার ভয় নেই
তাই সিঁদুরে মেঘ দেখলে সে ডরায় না---
আর জমি কারও বাপের নয়
জমি হল দাপের
তাই রাজা পতাকা গেঁথে দেন মাঠে
অযুত সৈন্যের পদভারে কেঁপে ওঠে জমি
আঁধার নামিয়ে ধুলোর মেঘ জমে ওঠে আকাশে
কিছু মৃত
কিছু জীবন্মৃত
চরণামৃত সেবি কিছু বেশি জীবিত
আওয়াজ তোলে --- ভোর হুয়া, ভোর হুয়া!
যার ঘর নেই
তার ঘর পুড়বার ভয় নেই
তাই সিঁদুরে সেই লাল মেঘে
মাটি কামড়ে পড়ে থাকে সে
আর পোয়াতি মাটির শরীরে কান পেতে বলে---
বুঝলি বৌ এবারেও যদি মেয়ে হয়
তার নাম রাখবো অহল্যা |
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি ১৪৪, জজবাগান, কলকাতা থেকে অরুণ ভট্টাচার্য কর্তৃক
প্রকাশিত, "আন্দোলনের সাথী" পত্রিকার ২৫ বৈশাখ ১৪১৪ এর সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
অকৃপণ দক্ষিণা
শিশুতোষ ধাওয়া
বৈঠকের পর বৈঠক হল
পরিণামে কিছুই পেল না ওরা ;
বিষ ধোঁয়া ভরাট করল শূণ্যতা
টিয়ার গ্যাসে --- ফায়ারিং-এ
কেউ মরল---
কেউ আহত --- হাসপাতালের
মেজেতে শুল,
কিন্তু
আন্দোলন-প্রতিবাদ
চলছে --- চলছেই |
তুমি বললে, ---
তোমাদের ভরিয়ে দেব ঘর, ---
পশ্চিমের শিল্প শোভা
দক্ষিণের মলয়,
আর,
লালাঝরা জিবে
দেবো
পিঠে-পুলির পৌষালী গন্ধ
শীতে --- উত্তুরে হাওয়ায় ;
আরো দেবো,
অঢেল টাকা
ঈর্ষা জাগানো ঘর-দোরের জন্য,
জমি-জরু
হাল-গরু ---
ভর ভর হবে সংসার |
শুধু দাও !
কি ?
ওই জমিটুকু!
("বুঝেছ উপেন? ............" ছিনে )
তোমার আরো পুঁজির
বাড়-বাড়ন্ত হবে ওই থেকে !
আমি বললাম, --- মাত্র এই !
আরো বেশি কিছু গেবো ---
শোনো, ---
জমির সঙ্গে রক্ত !
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি ১৪৪, জজবাগান, কলকাতা থেকে অরুণ ভট্টাচার্য
কর্তৃক প্রকাশিত, "আন্দোলনের সাথী" পত্রিকার ২৫ বৈশাখ ১৪১৪
এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
জীবন্ত শহীদ
চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য
ছেলেটা বলছিল : আমার সামনে হঠাৎ
ঘাড়ে চপারের কোপ ! উফ ! দাদা শেষ তত্ক্ষণাৎ
তারপর বৌদিকে টেনে নিল, মুহুর্তে বস্ত্রহীন
চেন খোলা নেড়িকুত্তা এক দুই তিন...
লাঠি, বুট পিষছিল তার বুক, পিঠে
সারা অঙ্গে আজও কালশিটে...
হঠাৎ নিজের কব্জিহীন রক্তাক্ত হাত দিয়ে
বৌদির পা ছুঁয়ে কান্না-শপথে গণগণ
ছেলেটি চেঁচিয়ে ওঠে : "দাদা তো শহীদ!
আর এই মৃত্যুহীন নির্যাতিতা নারী
এই জীবন্ত শহীদ-ই আজ গাঁয়ের সম্মান |"
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি ১৪৪, জজবাগান, কলকাতা থেকে অরুণ ভট্টাচার্য
কর্তৃক প্রকাশিত, "আন্দোলনের সাথী" পত্রিকার ২৫ বৈশাখ ১৪১৪
এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
ছড়া
সৃজন সেন
১.
দেশের মধ্যে গড়ছে বিদেশ
হচ্ছে দখল দেশের মাটি,
"শিল্পায়ন", "উন্নয়ন" ---
সবই সোনার পাথর বাটি |
এ রাজ্যে সেই আজব বাটি
করছে যারা ফেরি,
দ্রুত চিনছে তাদের মানুষ,
হবে না বেশী দেরী |
২.
দেশটাকে বেচে যারা
কমিশন খায়
দিকে দিকে কৃষকের
যারা রক্ত চায়,
তাদের সমর্থন
বলুন তো আপনারা
কভু করা যায় ?
.
৩.
"জমি দেবো না" বলছে যারা
তাদের মেরে গুড়িয়ে দাও,
অবাধ্য সব গ্রামগুলোকে
ঘিরে ফেলে পুড়িয়ে দাও,
তারপরে সব জমিগুলো
সালিম-টাটায় বিলিয়ে দাও,
শিল্পায়নের রক্ত ধ্বজা
চতুর্দিকে উড়িয়ে দাও |
৪.
ক'টাকা পাস্ এই চাষারা
চাষ করে?
টাটা-সালিম পাদপদ্মে
সব জমিটা দে ধরে |
সুদখোরেরা যেমন করে
জীবনটাকে ভোগ করে
তেমনি তখন্ কাটাবি জীবন
তোরা সবাই মৌজ করে |
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি ১৪৪, জজবাগান, কলকাতা থেকে অরুণ ভট্টাচার্য কর্তৃক প্রকাশিত,
"আন্দোলনের সাথী" পত্রিকার ২৫ বৈশাখ ১৪১৪ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
ঘরের ছেলে
দীপ মুখোপাধ্যায়
রক্তে ভেজা নন্দীগ্রাম
থামাও তোমার তুলকালাম
দুষ্টু লোকের বিদায় হোক
কান্না মুছুক মায়ের চোখ |
বাপ মা চালায় চায়ের ঠেক
ইস্কুল নেই মাস তিনেক
মাথার উপর শকুন, চিল
বন্ধ এখন মিড ডে মিল |
দেয় দুমুঠো ত্রাণ শিবির
গাংরাচরে জটলা ভীড়
সামনে আরও অন্ধকার
কান্না ভেজা নদীর ধার |
নল দেখেছি বন্দুকের
সঙ্গে গোলাগুলির জের
রাস্তা কাটা পথ বেঠিক
নেই বাতি নেই ইলেক্ট্রিক |
বন্ধু গেছে অনেক দূর
মামার বাড়ি পটাশপুর
নতুন করে বাঁধবো বুক
ঘরের ছেলে ঘরে ফিরুক |
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি আন্দামান থেকে প্রকাশিত, "দ্বীপবাণী" পত্রিকার
১৪১৪ এর শারদীয়া সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
একজন কৃষকবউ জিগ্যেস করছে
জলধি হালদার
গতবারও লালে ভোট
বুথে বুথে আবির মেখেছি |
শ্বশুর কাস্তে-ধানে ছিলেন,
আমরা কাস্তে-হাতুড়ি-তারা |
শ্বশুরের ফটোর পাশে লেনিন
স্বামী কোথাও যাওয়ার আগে
দু'জনকেই প্রণাম করত |
হঠাৎ জমি কেড়ে নেওয়ার নোটিশ
হঠাৎ জমি হারানোর ভয় ---
এ কি মগের মুল্লুক?
মিছিলে মিছিলে বললাম, জমি দেব না |
যেদিন এলাকা দখল
দলে দলে সশস্ত্র পুলিশ, ক্যাডার
ছাড়পত্র পেয়েছে তারা মানুষ মারার |
স্বামী ও ছেলে গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ল
আরও কত লোক, কত বউ বাচ্চা....
আপনারা তো এখন এলেন, চলে যাবেন
ঠাণ্ডা ঘরে বসে ভোটের আখের গোছাবেন |
আমরা এক দলা পোড়া ছাই
কে বলতে পারো
সালিম কি লেনিনের চেয়ে বড়?
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি আন্দামান থেকে প্রকাশিত, "বাক্প্রতিমা" পত্রিকার ১৪১৪ এর
শারদীয়া সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
স্থিরচিত্র : নন্দীগ্রাম
দ্বিজেন আচার্য, শ্যামনগর, উঃ ২৪ পরগনা
পথের ধারে বুলেট বিদ্ধ শব
তাকে ঘিরে কাকের কলরব
কেউ জানে না কি যেন তার নাম
বাড়ি তাহার সাবেক নন্দীগ্রাম ||
সাধারণ সে, নেই কোনো তাই শোক
যায় নি জানা কোন পার্টির লোক
দ্রুত সরে যাচ্ছে মিছিল ধ্বনি
প্রহর গোনে স্তব্ ধ চোখের মণি ||
কেউ নেয় না শব দেহটির দায়
ছবি তোলে কেবল মিডিয়ায়
দেখে, রেগে গর্জে ওঠে পুলিশ
মরছে --- মরুক, ছবি কেন তুলিস ||
অনেক দূরে --- একটা আলোর রেখা
অতি ক্ষীণ, যায় না ভালো দেখা
এলো মেলো শীর্ণ একটা ছায়া
খুঁজছে কেবল আপন জনের কায়া ||
পথের ধারে বুলেট বিদ্ধ শব
তাকে ঘিরে শেয়ালের উত্সব
কেউ জানে না কি যেন তার নাম
বাড়ি তাহার সাবেক নন্দীগ্রাম ||
কেউ নেয় না শব দেহটির দায়
ছবি তোলে কেবল মিডিয়ায়
গর্জে ওঠে উর্দিপরা পুলিশ
মরছে --- মরুক, ছবি কেন তুলিস ||
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত, "দৈনিক স্টেটসম্যান"
পত্রিকার ১৬ নভেম্বর ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
আঁধার এখন
শর্মিলা ঘোষ, শ্রীরামপুর, হুগলী
প্রতিদিন ঘুম ভাঙে
অনাস্থা---অপ্রেম---রক্তপাতে
অন্ধকার দৃঢ় হয়
দুঃশাসন ক্ষমতার ত্রাসে ||
ক্ষোভে ক্রোধে প্রতিবাদে
রাজপথে মোমবাতি পোড়ে
জননী যন্ত্রণা নিয়ে
কিসওয়ার জাহান ঘরে ঘরে ||
কাস্তের দিন শেষ
হাতুড়িটা বড় বেশি ভারী
সিঙ্গুর --- নন্দীগ্রাম
দাবার চালের লুকোচুরি ||
আমাদেরও বুকে ক্ষোভ
রণভূমি ক্রোশ ক্রোশ
মিছিলে মিছিলে হাঁটি,
স্লোগানে স্লোগানে ঢালি রোষ ||
হয়েছি দিতির সন্তান
বারুদের স্তুপে বসে আছি
ভয়হীন, বলে যেতে চাই---
রাজা, তোর সারা গায়ে মাছি ||
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত, "দৈনিক স্টেটসম্যান" পত্রিকার ১৬
নভেম্বর ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
উন্নততর ফাঁকি
শুভেন্দু মজুমদার, চুঁচুড়া, হুগলী
উন্নততর পুলিশ এখানে
উন্নততর হার্মাদ
চটি পরে তারা মানুষ মারে
শ্বাপদ পেয়েছে রক্তস্বাদ ||
পুলিশ এখানে পার্টি-কর্মী
পুলিশ এখানে কমরেড
পুলিশ এখানে সালিম-সহায়
পুলিশ গড়েছে ব্যারিকেড ||
জমি কেড়ে নেয় গরিব চাষির
মিথ্যা বুলির প্রশ্রয়
বাধা দিতে গেলে রুখে ওঠে ওই
বাধাহীন গুলি শ'য় শ'য় ||
আর কত জান নেবে হার্মাদ
আর ক'টা লাশ বাকি?
এ কোন আঁধার আলোর অধিক
উন্নততর ফাঁকি ||
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত, "দৈনিক স্টেটসম্যান" পত্রিকার ১৬
নভেম্বর ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
উলঙ্গ রাজার দেশ
সলিল কুমার গুহ, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগণা
দৃশ্য মেধা অনুরাধার
কেষ আকর্ষণের
মনে করায় বস্ত্র হরণ
পাপী দুঃশাসনের ||
আইন ছিল না শাসন ছিল
দুর্যোধনের হাতেই
হাত-পা বাঁধা অন্ধ রাজা
ছিলেন পাপীর সাথেই ||
কুরুবংশ ধ্বংস হল
কুরুক্ষেত্র রণে
পড়ছে কি না সেই কাহিনি
সিপিএম এর মনে ?
কোনও পোষাক নেই অঙ্গে
উলঙ্গ যে রাজা!
তাতেই খুশি মূর্খ রাজা
পাগল ভাবে প্রজা ||
সিঙ্গুর থেকে নন্দীগ্রাম
রেশন রিজওয়ান
ন্যায়ের যুদ্ধে আজকে সামিল
হাজার হাজার প্রাণ ||
আইন এখানে শৃঙ্খলিত
শাসন নজরবন্দি
দুঃশাসনরা আসর বসায়
আঁটতে নতুন ফন্দি ||
নন্দীগ্রামের জমির লড়াই
আজকে বাঁচার যুদ্ধ
হার্মাদেরা দখল নিলেই
জিতে যাবেন বুদ্ধ ||
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত, "দৈনিক স্টেটসম্যান" পত্রিকার ১৬
নভেম্বর ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
রুলস ফর ফুলস
বিশ্বেশ্বর রায়, কলকাতা
আইন আইন করছে মানুষ
কোন মুলুকে গেলি তুই!
বর্গী এসে ভেঙেছে ঘর
পরাণটারে কোথা থুই ||
ঠাঁই ঠাঁই ঠাঁই ছুড়ছে গুলি
মরছে মানুষ অসহায়
প্রাণের ভয়ে পালায় মানুষ
পুলিশ গেছে কাদের নায়!
সাংবাদিক বা সমাজসেবী
বুদ্ধিজীবী, এন জি ও-র
প্রবেশ নিষেধ নন্দীগ্রামে
শান্তি প্রয়াস চলছে জোর ||
করল দখল বর্গীরা সব
জনমানবশূণ্য গ্রাম
তারাই আইন, তারাই শাসক
সমাজতন্ত্র এরই নাম ||
ত্রাণশিবিরে ভিড় করেছে
হাজার হাজার গ্রামবাসী
খবর পেয়ে রাজার মুখে
উপচে পড়ে সুখের হাসি ||
এতদিনে নন্দীগ্রামে
আনল শান্তি তাঁদের দল
আইন এবং সুশাসনের
এমন স্বর্গ কোখায় বল!
নন্দীগ্রামের মানুষ শোনো
গ্রামেই যদি থাকতে চাও
শান্তিপ্রিয় বর্গীদলের
সব আবদার মেনে নাও ||
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত, "দৈনিক স্টেটসম্যান" পত্রিকার ১৬
নভেম্বর ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
বন্ধ্যা কানুন
শ্রীমন্ত চট্টোপাধ্যায়, হাওড়া
শাসন থেকেই অপশাসন
পচন আসে পাকলে পরে
ধরলে পচন রতন হলেও
আস্তানা তার আস্তাকুঁড়ে ||
মহাবলির পদস্খলন
অহমিকার চশমা পরে
ঢাকতে প্রয়াস এক অপরাধ
লাখো অপরাধ জড়িয়ে ধরে ||
গরল ভরা অন্তর যার
হয় কি সরল আচ্ছাদনে
খোস-পাঁজরার বহিঃপ্রকাশ
নিজ নিজ কর্মগুণে ||
রাজার ধর্ম প্রজাপালন
নয়কো নিধন বাহুবলে
অন্ধ রাজার বন্ধ্যা কানুন
নন্দীগ্রামে বহ্নি জ্বলে ||
রাজাদেশে রাজ সন্ত্রাস
কৃষক নিধন শ'য়ে শ'য়ে
পরম তৃপ্তি বঙ্গ রাজার
নন্দীগ্রামের দখল পেয়ে ||
ঢিলের জবাব পাটকেলে দিই
মুখ্যমন্ত্রীর উদার বাণী
সংস্কৃতিমনা পুলিশমন্ত্রী
ত্রাস-সন্ত্রাসে মহা খানদানি ||
বুদ্ধিজীবীর মিছিল পরে
উর্দিধারীর হানা
খুনি, সশস্ত্র বর্বরদের
ধরতে আছে মানা ||
বর্জ্য তুল্য আইন কানুন
বুদ্ধবাবুর মরুদ্যানে
বিশ্বব্যাপী স্বাক্ষ্য বহে
নন্দীগ্রামের প্রহসনে ||
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত, "দৈনিক স্টেটসম্যান" পত্রিকার ১৬
নভেম্বর ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
আমরা-ওরা
অচিন্ত্য সুরাল, ঢাকুরিয়া, কলকাতা
আমরা অশোক তোডি
আমরা সব পাইক
আমরা মানে লাইফ হেলের
লাল ফেট্টি বাইক ||
আমরা হেতাল পারেখ
আমরা ভুজ্জিওলা
আমরা মানে রেশন ডিলার
আমরা তুলি তোলা ||
আমরা ওরার মানে টা কী
এই কথাটা বুঝতে
চশমা নাকে তিরিশ বছর
পেরোয় খুঁজতে খুঁজতে ||
ওরা রিজওয়ান
ওরা চা-বাগান
ওরা আমলাশোলের ভুত
জলঙ্গিরই প্রাণ ||
ওরা লেখক কবি
শিল্পী জনগণ
চায় না হতে বিক্রী ওরা
ওদের কঠিন পণ ||
আমরা ওরার মানেটা কি
এই কথাটা বুঝতে
ননেদীগ্রাম আর সিঙ্গুর জানে
জীবন যুঝতে যুঝতে ||
'আমরা'র আছে মুখ্যমন্ত্রী
'ওরা'র কেন নাই
বঙ্গদেশে এবার দুটি
মুখ্যমন্ত্রী চাই ||
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত, "দৈনিক স্টেটসম্যান" পত্রিকার ২৩
নভেম্বর ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
সিপিএমের মূর্খমন্ত্রী
অরুণকিরণ চট্টোপাধ্যায়, পূঁড়াবাজার
"চোরের দলে থাকবো না" বলে
"দুঃসময়"-এর নাটক,
লিখে সে দলের থলে ধরেছেন
কে বলুন তো পাঠক?
"মোদীর" পথেই বোধি পেতে
বোধিবৃক্ষ ছেড়ে
এখন তিনি ধ্যানে বসেন
টাটার চরণ ধরে ||
এসং টাটাং, বোসং টাটাং
বোল না তুমি টা-টাং
তপন-সুকুর আছেই
সাখে পোষ্য লক্ষ পাঠাং ||
কৌপিন নয়, ধুতিই
আহা! আঁতেল মার্কা কায়া
উড়োজাহাজ সখাও সাথে
যেন ঢাকের বাঁয়া |
নন্দীগ্রাম ১৪ই মার্চ
রক্তে গেল ধুয়ে
শেঠ লক্ষ্মণ গান ধরেছেন
"ঐ তো ওয়ে, ওয়ে..." ||
খেলনা গাড়ির স্বপ্নে মজে
বনেট-টাতে শুয়ে
আঁতেল হিরোর গাড়ি চলবে
শবের উপর দিয়ে ||
এ হেন যে ময়ূরপুচ্ছধারী
ধার্মিক বক
বকয়ূর বা কাকয়ুর নন
তিনি নপুংসক ||
শপথ ভুলে আজকে তিনি
মন্ত্রী ষড়যন্ত্রী
রাজ্যের নয়, থুড়ি,
সি পি এমের মূর্খমন্ত্রী ||
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত, "দৈনিক স্টেটসম্যান" পত্রিকার ২৩
নভেম্বর ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
বুদ্ধ উবাচ
ছন্দা বাগচি, কলকাতা
মুখ্যু বড়ই আমজনতা
বুদ্ধি বেজায় অল্প
গণতন্ত্রের বেফাঁস গেরোয়
বেঁধেছি যে গল্প ||
সবহারাদের কথা বলে
সবপাওয়াদের দলে
মার্কস বাবজীর দিক্ষা নিয়ে
দলটা ভালোই চলে ||
দলের জন্য বাড়ি গাড়ি
দলের জন্য বাঁচা
ভাগ্য ভালো অন্যরা
এই অঙ্কে বড়ই কাঁচা ||
ওরা জানে মুখ্যমন্ত্রী
জনগণের জন্য
আমার কাছে দলই বড়
আমজনতা পণ্য ||
ওদের উপর হোক জুলুম
চাই না ওদের ভোট
ক্যাডার আছে, পুলিশ আছে
রয়েছে বাম জোট ||
হোলটাইমার, "দুঃসময়"
কাটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী
বুর্জোয়ারা মিথ্যে রটায়
সবাই ষড়যন্ত্রী ||
আমার দলে থাকনা যতই
দানব অসুর দত্যি
আমিই দলের মুখ্যমন্ত্রী
এটাই চরম সত্যি ||
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত, "দৈনিক স্টেটসম্যান" পত্রিকার ২৩
নভেম্বর ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
দলই মুখ্য-মন্ত্র
হারাধন ভট্টাচার্য, আনন্দপল্লী, কলকাতা
সাপ দেখেছি দুমুখো
বুদ্ধবাবুও তাই
যখন তখন পাল্টি খেতে
তাঁহার জুড়ি নাই ||
মুখোশটা তার এতদিনে
খুলল সবার কাছে
সবাই এবার দেখল তাতে
আসলটা যা আছে ||
বিনাশকালে বুদ্ধিনষ্ট
একথা মিথ্যে নয়
দিনে দিনে রাজ্যবাসীর
বাড়ছে তাতেই ভয় ||
দলেরই তিনি মুখ্যমন্ত্রী
কথায় প্রমাণ হয়
দল গুণ্ডায় সাঙ্গ করেন
নন্দীগ্রামের জয় ||
ভারসাম্য হারিয়ে এখন
উল্টো পাল্টা বলেন
দল-কর্মির সমর্থনে
দলের লাইনে চলেন ||
দল স্বর্গ, দল ধর্ম
দলই মুখ্য-মন্ত্র
দলের কর্মী বাঁচাতে তাই
তাঁরই এই ষড়যন্ত্র ||
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত, "দৈনিক স্টেটসম্যান" পত্রিকার ২৩
নভেম্বর ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
পার্টিশ্বর
শুভেন্দু মজুমদার, চুঁচুড়া, হুগলী
পার্টি আমার ধর্মাধর্ম
পার্টি আমার প্রাণ
ইহকালের সহায় পার্টি
পরকালের ত্রাণ ||
পার্টি আমার মহেশ্বর
মহম্মদও তিনি
পার্টি আমায় ভাত দেয়
তার কাছেই ঋণী ||
পার্টি আমার শৈশবের
ধানখেতে কচি অসভ্যতা
পার্টি আমার যৌবনের
উপবনে সংগ্রামের হোতা ||
পার্টি আমার বার্ধক্যের
বিপ্লবী প্যারী
পার্টির নন্দন বনে
শোভে সুরা, নারী ||
পার্টির মহিমারাশি
দিক্ দিগন্তরে
প্রচারিত হবে জেনো
প্রতি ঘরে ঘরে ||
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী
পার্টির নয় কি তিনি ?
নির্বোধ ছাড়া তাঁকে
সকলেই চিনি ||
পার্টি নাম সত্ হ্যায়
প্রটি তাঁরই দান
পার্টিশ্বর ভট্টাচার্যের
গাও গুণগান ||
. **************
. অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
এই কবিতাটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত, "দৈনিক স্টেটসম্যান" পত্রিকার ২৩
নভেম্বর ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর