মনোহর তীর্থস্থান দ্বারকানগরী | যদুকুল-বাস তথা যেন স্বর্গপুরী || সাগর-মেখলা পুরী পরম সুন্দর | হিন্দুর প্রধান তীর্থ খ্যাত চরাচর || সুবিখ্যাত যদুবংশ বসতি তথায় | শোক দুঃখ নাহি তথা পূণ্যের আলয় || যেখানে শ্রীকৃষ্ণ রাজা প্রজা যদুকুল | সম্পদ সেখানে সদা সব অনুকূল || বন উপবন কত শোভে স্থানে স্থানে | মনোহর সরোবর কত শোভা দানে || কারন্ডব হংস আদি বিহঙ্গমকুল | মনের সুখেতে তারা খেলায় আকুল || সরোবরে প্রস্ফুটিত কমলনিকরে | মনোসুখে অলিকুল মধুপান করে || মালতী মল্লিকা যুথী কুসুমনিচয় | বন উপবনে তারা কত শোভা পায় || মন্দ মন্দ গন্ধবহ রহে প্রতিক্ষণ | সুগন্ধ কুসুম গন্ধ বহিছে পবন || তপোবনে মুনিঋষি যত তপস্যায় | বেদধ্বনি নিনাদিত হ’তেছে তথায় || জলধি কল্লোল কিবা অতি সুমধুর | মোহিত মানব মন হ’তেছে প্রচুর || এ-হেন দ্বারকাপুরে শাম্বের বসতি | যদুবংশ-জাত তিনি ধীর মহামতি || কর্ম্মফলে সেই শাম্ব হ’য়ে রোগগ্রস্ত | কি হবে উপায় ভাবি হইলেন ত্রস্ত || ক্রমে হ’ল ক্ষীণ-দেহ জীর্ণ অতিশয় | হেরিয়া তাহাকে কৃষ্ণ বলেন উপায় || শুন বলি শুন বত্স আমার বচন | ভক্তিভরে সূর্য্যদেবে কর আরাধন || তিনিই আরোগ্যদাতা নিখিল জগতে | তাঁহার কৃপায় মুক্ত হবে রোগ হ’তে || জগতের বন্ধু তিনি দেব-দিবাকর | সুখমোক্ষদাতা তিনি দয়ার সাগর || কৃষ্ণ উপদেশ শুনি শাম্ব মতিমান্ | নির্জ্জন কানন দেশে করিল প্রয়াণ || পবিত্র বিজন স্থানে করিয়া গমন | সূর্য্য আরাধনা হেতু করিলা আসন || সংযত অন্তরে বসি শাম্ব মহামতি | কায়মনে ভক্তিভরে করিছেন স্তুতি || বাহ্যজ্ঞানশৃন্য তাঁর জপে সদা রত | কিছুদিন এইভাবে হইল বিগত || দিবাকর পরিতুষ্ট হইয়া তখন | আবির্ভূত হইলেন শাম্বের সদন || কহিলেন শুন, শুন শাম্ব তপোধন | নয়ন মেলিয়া তুমি কর দরশন || পরিতুষ্ট হইয়াছি তোমার স্তবেতে | মনোমত বর লও যা আছে মনেতে || যে বর চাহিবে তুমি দিব সেই বর | নির্ভয়ে বলহ ওহে তাপস-প্রবর || দিবাকর-বাক্য শুনি শাম্ব তপোধন | চক্ষু মেলি সূর্য্যদেবে করেন দর্শন || ভুলুন্ঠিত হ’য়ে শাম্ব করিয়া প্রণতি | ভক্তিগদগদচিত্তে করিছেন স্তুতি || তুমি দেব দিবাকর সূর্য্য নারায়ণ | তুমি ব্রহ্মা তুমি বিষ্ণু তুমি ত্রিলোচন || যদি তুষ্ট হ’য়ে থাক আমার স্তবেতে | ব্যাধিমুক্ত কর মোরে দুষ্ট রোগ হ’তে || দিননাথ হাসিমুখে বলেন তখন | বলিতেছি যাহা তাহা করহ পালন || অষ্টোত্তর শতনাম আছয়ে আমার | পাঠ কর প্রতিদিন ওহে গুণাধার || ইহার প্রসাদে তুমি ব্যাধি মুক্ত হবে | দুঃখ -কষ্ট রোগ-শোক সব দূরে যাবে || অষ্টোত্তর শতনাম করহ শ্রবণ | সূচিতে . . .
শতনাম স্তোত্র
ভাস্কর প্রথম নাম শুন যাদুধন || ১ আমার দ্বিতীয় নাম হয় দিবাকর | ২ তৃতীয় আমার নাম সর্ব্বরোগ হর || ৩ চতুর্থ আমার নাম হয় বিকর্ত্তন | ৪ তাপ দান করি বলে পঞ্চম তপন || ৫ জানিবে আমার ষষ্ট নাম বিবস্বান্ | ৬ মার্কন্ড সপ্তম নাম শুন মতিমান্ || ৭ লোক-প্রকাশক নাম অষ্টম জানিবে | ৮ লোকসাক্ষী নাম মোর নবম হইবে || ৯ গ্রহশ্রেষ্ঠ বলি নাম হ’ল গ্রহেশ্বর | ১০ একাদশ নাম মোর হয় যে ভূধর || ১১ আমার দ্বাদশ নাম তপন হইল | ১২ অশুদ্ধে করিয়ে শুদ্ধ শুচি নাম হ’ল || ১৩ সপ্ত অশ্বে চড়ি তাই সপ্তাশ্ববাহন | ১৪ শ্রীগভস্তিহস্ত নাম জানে সর্ব্বজন || ১৫ রবি নামে খ্যাত আমি নিখিল-ভুবনে | ১৬ শ্রীমান্ নামেতে মোর দেবগণ ভণে || ১৭ ব্রহ্মাও আমার নাম জেনো সর্ব্বজনে | ১৮ তীক্ষ্ণ-রশ্মি নাম হ’ল সুতীক্ষ্ণ কিরণে || ১৯ সর্ব্বদেব-নমস্কৃত নামটি আমার | ২০ গ্রহপতি নাম মোর জগতে প্রচার || ২১ আমার দ্বাবিংশ নাম জগৎ-সহায় | ২২ ঊর্দ্ধরতি ত্রয়োবিংশ নাম যদুরায় || ২৩ কিরণ আছয়ে বলি নাম রশ্মিমালী | ২৪ শূন্যেতে আমার বাস তাই শূন্যাচারী || ২৫ ত্রিভুবন ভ্রমি তাই বিশ্বব্যাপী নাম | ২৬ সর্ব্বসাক্ষী নামে মোরে করিবে প্রণাম || ২৭ হরিও আমার নাম জেনো তপোধন | ২৮ কালজয়ী নাম মোর দেবতা ভবন || ২৯ সকলেরে করি জয় তাইত অজেয় | ৩০ সর্ব্বতেজা নামটিও হইল বিধেয় || ৩১ শক্তির আধার তাই নাম পূর্ণশক্তি | ৩২ ভক্তিভাবে ডাকে যেই তারে করি মুক্তি || তমোহন্তা নামে আমি আঁধার ঘুচাই | ৩৩ তমিস্রহা নামে তাই পূজে সর্ব্ব ঠাঁই || ৩৪ ধ্বান্তনাশী নাম হ’ল অন্ধকার নাশি | ৩৫ হর্ত্তা নাম তাই বিশ্ব প্রলয়ে বিনাশি || ৩৬ কর্ত্তা নামে আমি পুনঃ জগতে উদ্ধারি | ৩৭ কমলিনী-পতি বলে ভকত লহরী || ৩৮ পদ্মিনী-জীবন নাম বলে সর্ব্বলোক | ৩৯ শুষ্ক করি সব তাই নামটি শোষক || ৪০ সকলের গতি করে অগতির গতি | ৪১ সূর্য্যবংশস্রষ্টা ব’লে আমারই খ্যাতি || ৪২ সূর্য্যকুলপতি ব’লে আমিই বিখ্যাত | ৪৩ বুধপ্রিয় নাম মোর জগতে বিদিত || ৪৪ গতিশীল বলি মোর ইন নামে খ্যাতি | ৪৫ ভয়হারী নামে ডাকে ভকত সংহতি || ৪৬ ব্রাহ্মণ-রক্ষক নাম সর্ব্বলোকে জানে | ৪৭ ভক্তিপ্রিয় বলি মোরে ভক্তগণ ভণে || ৪৮ বরদান করি ব’লে নাম বরদাতা | ৪৯ বসুধা-ঈশ্বর নামে জগতের ধাতা || ৫০ আর এক নাম মম সংক্রান্তির পতি | ৫১ বশিষ্ঠ আমার নাম অগতির গতি || ৫২ গরিষ্ঠ নামেতে মোরে সর্ব্বজনে ভজে | ৫৩ অনাদি বলিয়া মোরে সকলেই পূজে || ৫৪ আমার অনন্ত নাম সর্ব্বলোকে খ্যাত | ৫৫ বদান্য নামেতে আমি সর্ব্বত্র পূজিত || ৫৬ বসুদাতা বলে মোরে সব সুধীজন | ৫৭ মহাবল ব’লে ডাকে যত বীরগণ || ৫৮ মহামানী নামে মোরে সর্ব্বলোকে ভণে | ৫৯ পঞ্চভূতাত্মক নাম সকলেই জানে || ৬০ শূন্যেতে ভ্রমণ করি তাই শূন্যপতি | ৬১ পদ্মেশ্বর নাম মোর কমলার প্রতি || ৬২ সুন্দর নয়নে পদ্মপলাশ-লোচন | ৬৩ পদ্মিনী-পূঁজিত নাম বিদিত ভুবন || ৬৪ প্রপঞ্চনায়ক বলে যত মুনিগণ | ৬৫ ধর্মাত্মা নামেতে খ্যাতি নিখিল ভুবন | ৬৬ ধর্ম্মের রক্ষক হেতু নাম ধর্ম্মপাল | ৬৭ পূর্ণানন্দ বলে মোরে ঠাকুর গোপাল || ৬৮ তেজের স্বরূপ তাই তেজোমূর্তি নাম | ৬৯ ভবভূতি নামে আমি পুরি মনস্কাম || ৭০ অভয় প্রদান হেতু অভয়-প্রদাতা | ৭১ কৃষকেরা বলে মোরে শস্যোর বিধাতা || ৭২ মনুষ্যলোকেতে নাম সংসার-তারণ | ৭৩ ধ্যেয় নামে পূজে মোরে তাপস সুজন || ৭৪ জ্ঞেয় নামে পূজে মোরে ভকত-নিকর | ৭৫ অনন্তমহিম নাম জ্ঞাত চরাচর || ৭৬ জ্বলম্মূর্তি বলে মোরে যত সৌরগণ | ৭৭ দন্ডধর নাম মোর যমের ভবন || ৭৮ নাগগণ-মাঝে আমি হই নাগপতি | ৭৯ ভূধর নায়ক বলে মহীধর-পতি || ৮০ দর্প চুর্ণ করি ব’লে নাম দর্পহারী | ৮১ পরাত্পর নামে আমি গগনবিহারী || ৮২ পঞ্চবায়ু নামে মোরে জানে সর্ব্বজন | ৮৩ মেঘ নাশি ব’লে ঘন গর্জ্জন-বারণ || ৮৪ বিক্রম অতুল ব’লে অতুল বিক্রম | ৮৫ দেবগুহ্য নামে আমি দেবের উত্তম || ৮৬ বৈরীর নিধনে আর অরাতির অরি | ৮৭ সচ্চিদ-আনন্দ নামে গোলোকবিহার || ৮৮ তীর্থেতে নিবাস হেতু সর্ব্বতীর্থময় | ৮৯ শ্রীযজ্ঞ-রক্ষক নাম যজ্ঞস্থলে হয় || ৯০ অনন্তে বিহার তাই অনন্তবিহারী | ৯১ অসীম আমার নাম সীমা দিতে নারি || ৯২ কৈলাসে আমিই হই কৈলাস রক্ষক | ৯৩ শান্তিকৃত হই আমি সকলভক্ষক || ৯৪ শঙ্খধ্বনি-প্রিয় নাম জানে মুনিগণ | ৯৫ জবাকুসুম-সঙ্কাশ বলে গুণীজন || ৯৬ বিনাশি আঁধার তাই বলে যে ধ্বান্তরি | ৯৭ কাশ্যপেয় নামে আমি জগতবিহারী || ৯৮ দীপ্তিময় সদা তাই নাম মহাদ্যুতি | ৯৯ সর্ব্বপাপ-বিনাশন হয় মোর খ্যাতি || ১০০ পতিতপাবন মোরে সকলেই বলে | ১০১ সত্যবান নামে আমি থাকি সর্ব্বস্থলে || ১০২ সুখদান করি ব’লে নাম সুখদাতা | ১০৩ জবাপুষ্পপ্রিয় নামে পাদপ-প্রপাতা || ১০৪ জগৎ-আলোক লোকে আমাকেই বলে | ১০৫ সর্ব্বসিদ্ধিদাতা নাম হয় যজ্ঞস্থলে || ১০৬ যোগীশ্বর নামে পূজে যত মুনিচয় | ১০৭ সর্ব্বমঙ্গল-মঙ্গল্য নাম মোর হয় || ১০৮ সূচিতে . . .
এই শতনাম স্তব বলিনু তোমায় | ইহার পাঠেতে নাহি থাকে রোগভয় || আমার বরেতে তুমি রোগমুক্ত হবে | অবনী-মাঝারে তব সুযশ রটিবে || এতেক বলিয়া সূর্য্য হন অন্তর্হিত | তপোক্লান্ত শাম্ব হন পুলকে পূরিত || বর্ষব্যাপী স্তবপাঠ করি ভক্তিভরে | রোগমুক্ত হইলেন শাম্ব অতঃপরে || সূর্য্য-শতনাম স্তব যেই ভক্তিভরে | সুসংযত চিত্ত হ’য়ে নিত্য পাঠ করে || অথবা শ্রবণ করে যেই ভক্তজন | রোগ শোক পরিতাপ না রহে কখন || ইহধামে সুখভোগ করি সেইজন | অন্তিমে সুখেতে যায় বৈকুন্ঠ-ভবন ||