*
হিন্দু দেব-দেবীদের কবিতায় অষ্টোত্তর শতনাম
শ্রীশ্রী সূর্য্যের অষ্টোত্তর শতনাম
পণ্ডিত শ্রী কালীপ্রসন্ন বিদ্যারত্ন বিরচিত

মনোহর তীর্থস্থান দ্বারকানগরী  |
যদুকুল-বাস তথা যেন স্বর্গপুরী  ||
সাগর-মেখলা পুরী পরম সুন্দর |
হিন্দুর প্রধান তীর্থ খ্যাত চরাচর ||
সুবিখ্যাত যদুবংশ বসতি তথায় |
শোক দুঃখ নাহি তথা পূণ্যের আলয় ||
যেখানে শ্রীকৃষ্ণ রাজা প্রজা যদুকুল  |
সম্পদ সেখানে সদা সব অনুকূল  ||
বন উপবন কত শোভে স্থানে স্থানে |
মনোহর সরোবর কত শোভা দানে ||
কারন্ডব হংস আদি বিহঙ্গমকুল |
মনের সুখেতে তারা খেলায় আকুল ||
সরোবরে প্রস্ফুটিত কমলনিকরে |
মনোসুখে অলিকুল মধুপান করে ||
মালতী মল্লিকা যুথী কুসুমনিচয়  |
বন উপবনে তারা কত শোভা পায় ||
মন্দ মন্দ গন্ধবহ রহে প্রতিক্ষণ |
সুগন্ধ কুসুম গন্ধ বহিছে পবন ||
তপোবনে মুনিঋষি যত তপস্যায় |
বেদধ্বনি নিনাদিত হ’তেছে তথায় ||
জলধি কল্লোল কিবা অতি সুমধুর |
মোহিত মানব মন হ’তেছে প্রচুর ||
এ-হেন দ্বারকাপুরে শাম্বের বসতি |
যদুবংশ-জাত তিনি ধীর মহামতি ||
কর্ম্মফলে সেই শাম্ব হ’য়ে রোগগ্রস্ত  |
কি হবে উপায় ভাবি হইলেন ত্রস্ত  ||
ক্রমে হ’ল ক্ষীণ-দেহ জীর্ণ অতিশয় |
হেরিয়া তাহাকে কৃষ্ণ বলেন উপায় ||
শুন বলি শুন বত্স আমার বচন |
ভক্তিভরে সূর্য্যদেবে কর আরাধন ||
তিনিই আরোগ্যদাতা নিখিল জগতে |
তাঁহার কৃপায় মুক্ত হবে রোগ হ’তে ||
জগতের বন্ধু তিনি দেব-দিবাকর |
সুখমোক্ষদাতা তিনি দয়ার সাগর ||
কৃষ্ণ উপদেশ শুনি শাম্ব মতিমান্ |
নির্জ্জন কানন দেশে করিল প্রয়াণ ||
পবিত্র বিজন স্থানে করিয়া গমন |
সূর্য্য আরাধনা হেতু করিলা আসন ||
সংযত অন্তরে বসি শাম্ব মহামতি  |
কায়মনে ভক্তিভরে করিছেন স্তুতি ||
বাহ্যজ্ঞানশৃন্য তাঁর জপে সদা রত |
কিছুদিন এইভাবে হইল বিগত ||
দিবাকর পরিতুষ্ট হইয়া তখন |
আবির্ভূত হইলেন শাম্বের সদন  ||
কহিলেন শুন, শুন শাম্ব তপোধন |
নয়ন মেলিয়া তুমি কর দরশন ||
পরিতুষ্ট হইয়াছি তোমার স্তবেতে |
মনোমত বর লও যা আছে মনেতে ||
যে বর চাহিবে তুমি দিব সেই বর |
নির্ভয়ে বলহ ওহে তাপস-প্রবর ||
দিবাকর-বাক্য শুনি শাম্ব তপোধন |
চক্ষু মেলি সূর্য্যদেবে করেন দর্শন  ||
ভুলুন্ঠিত হ’য়ে শাম্ব করিয়া প্রণতি |
ভক্তিগদগদচিত্তে করিছেন স্তুতি ||
তুমি দেব দিবাকর সূর্য্য নারায়ণ |
তুমি ব্রহ্মা তুমি বিষ্ণু তুমি ত্রিলোচন ||
যদি তুষ্ট হ’য়ে থাক আমার স্তবেতে |
ব্যাধিমুক্ত কর মোরে দুষ্ট রোগ হ’তে ||
দিননাথ হাসিমুখে বলেন তখন |
বলিতেছি যাহা তাহা করহ পালন ||
অষ্টোত্তর শতনাম আছয়ে আমার |
পাঠ কর প্রতিদিন ওহে গুণাধার ||
ইহার  প্রসাদে তুমি ব্যাধি মুক্ত হবে |
দুঃখ -কষ্ট রোগ-শোক সব দূরে যাবে ||
অষ্টোত্তর শতনাম করহ শ্রবণ |                                                      
সূচিতে . . .   

শতনাম স্তোত্র

ভাস্কর প্রথম নাম শুন যাদুধন || ১
আমার দ্বিতীয় নাম হয় দিবাকর | ২
তৃতীয় আমার নাম সর্ব্বরোগ হর || ৩
চতুর্থ আমার নাম হয় বিকর্ত্তন | ৪
তাপ দান করি বলে পঞ্চম তপন  || ৫
জানিবে আমার ষষ্ট নাম বিবস্বান্  | ৬
মার্কন্ড সপ্তম নাম শুন মতিমান্ || ৭
লোক-প্রকাশক নাম অষ্টম জানিবে | ৮
লোকসাক্ষী নাম মোর নবম হইবে || ৯
গ্রহশ্রেষ্ঠ বলি নাম হ’ল গ্রহেশ্বর | ১০
একাদশ নাম মোর হয় যে ভূধর || ১১
আমার দ্বাদশ নাম তপন হইল | ১২
অশুদ্ধে করিয়ে শুদ্ধ শুচি নাম হ’ল || ১৩
সপ্ত অশ্বে চড়ি তাই সপ্তাশ্ববাহন | ১৪
শ্রীগভস্তিহস্ত নাম জানে সর্ব্বজন  || ১৫
রবি নামে খ্যাত আমি নিখিল-ভুবনে | ১৬
শ্রীমান্ নামেতে মোর দেবগণ ভণে || ১৭
ব্রহ্মাও আমার নাম জেনো সর্ব্বজনে | ১৮
তীক্ষ্ণ-রশ্মি নাম হ’ল সুতীক্ষ্ণ কিরণে || ১৯
সর্ব্বদেব-নমস্কৃত নামটি আমার | ২০
গ্রহপতি নাম মোর জগতে প্রচার || ২১
আমার দ্বাবিংশ নাম জগৎ-সহায় | ২২
ঊর্দ্ধরতি ত্রয়োবিংশ নাম যদুরায়  || ২৩
কিরণ আছয়ে বলি নাম রশ্মিমালী | ২৪
শূন্যেতে আমার বাস তাই শূন্যাচারী || ২৫
ত্রিভুবন ভ্রমি তাই বিশ্বব্যাপী নাম | ২৬
সর্ব্বসাক্ষী নামে মোরে করিবে প্রণাম || ২৭
হরিও আমার নাম জেনো তপোধন  | ২৮
কালজয়ী নাম মোর দেবতা ভবন || ২৯
সকলেরে করি জয় তাইত অজেয় | ৩০
সর্ব্বতেজা নামটিও হইল  বিধেয় || ৩১
শক্তির আধার তাই নাম পূর্ণশক্তি | ৩২
ভক্তিভাবে ডাকে যেই তারে করি মুক্তি ||
তমোহন্তা নামে আমি আঁধার ঘুচাই | ৩৩
তমিস্রহা নামে তাই পূজে সর্ব্ব ঠাঁই || ৩৪
ধ্বান্তনাশী নাম হ’ল অন্ধকার নাশি | ৩৫
হর্ত্তা নাম তাই বিশ্ব প্রলয়ে বিনাশি || ৩৬
কর্ত্তা নামে আমি পুনঃ জগতে উদ্ধারি | ৩৭
কমলিনী-পতি বলে ভকত লহরী || ৩৮
পদ্মিনী-জীবন নাম বলে সর্ব্বলোক | ৩৯
শুষ্ক করি সব তাই নামটি শোষক || ৪০
সকলের গতি করে অগতির গতি | ৪১
সূর্য্যবংশস্রষ্টা ব’লে আমারই খ্যাতি || ৪২
সূর্য্যকুলপতি ব’লে আমিই বিখ্যাত | ৪৩
বুধপ্রিয় নাম মোর জগতে বিদিত || ৪৪
গতিশীল বলি মোর ইন নামে খ্যাতি | ৪৫
ভয়হারী নামে ডাকে ভকত সংহতি || ৪৬
ব্রাহ্মণ-রক্ষক নাম সর্ব্বলোকে জানে | ৪৭
ভক্তিপ্রিয় বলি মোরে ভক্তগণ ভণে || ৪৮
বরদান করি ব’লে নাম বরদাতা | ৪৯
বসুধা-ঈশ্বর নামে জগতের ধাতা || ৫০
আর এক নাম মম সংক্রান্তির পতি | ৫১
বশিষ্ঠ আমার নাম অগতির গতি || ৫২
গরিষ্ঠ নামেতে মোরে সর্ব্বজনে ভজে | ৫৩
অনাদি বলিয়া মোরে সকলেই পূজে || ৫৪
আমার অনন্ত নাম সর্ব্বলোকে খ্যাত | ৫৫
বদান্য নামেতে আমি সর্ব্বত্র পূজিত || ৫৬
বসুদাতা বলে মোরে সব সুধীজন | ৫৭
মহাবল ব’লে ডাকে যত বীরগণ  || ৫৮
মহামানী নামে  মোরে সর্ব্বলোকে ভণে | ৫৯
পঞ্চভূতাত্মক নাম সকলেই জানে || ৬০
শূন্যেতে ভ্রমণ করি তাই শূন্যপতি | ৬১
পদ্মেশ্বর নাম মোর কমলার প্রতি || ৬২
সুন্দর নয়নে পদ্মপলাশ-লোচন | ৬৩
পদ্মিনী-পূঁজিত নাম বিদিত ভুবন || ৬৪
প্রপঞ্চনায়ক বলে যত মুনিগণ | ৬৫
ধর্মাত্মা  নামেতে খ্যাতি নিখিল ভুবন | ৬৬
ধর্ম্মের রক্ষক হেতু নাম ধর্ম্মপাল  | ৬৭
পূর্ণানন্দ বলে মোরে ঠাকুর গোপাল  || ৬৮
তেজের স্বরূপ তাই তেজোমূর্তি নাম | ৬৯
ভবভূতি নামে আমি পুরি মনস্কাম || ৭০
অভয় প্রদান হেতু অভয়-প্রদাতা | ৭১
কৃষকেরা বলে মোরে শস্যোর বিধাতা || ৭২
মনুষ্যলোকেতে নাম সংসার-তারণ  | ৭৩
ধ্যেয় নামে পূজে মোরে তাপস সুজন || ৭৪
জ্ঞেয় নামে পূজে মোরে ভকত-নিকর | ৭৫
অনন্তমহিম নাম জ্ঞাত চরাচর || ৭৬
জ্বলম্মূর্তি বলে মোরে যত সৌরগণ | ৭৭
দন্ডধর নাম মোর যমের ভবন || ৭৮
নাগগণ-মাঝে আমি হই নাগপতি | ৭৯
ভূধর নায়ক বলে মহীধর-পতি  || ৮০
দর্প চুর্ণ করি ব’লে নাম দর্পহারী | ৮১
পরাত্পর  নামে আমি গগনবিহারী  || ৮২
পঞ্চবায়ু নামে মোরে জানে সর্ব্বজন  | ৮৩
মেঘ নাশি ব’লে ঘন গর্জ্জন-বারণ || ৮৪
বিক্রম অতুল ব’লে অতুল বিক্রম | ৮৫
দেবগুহ্য নামে আমি দেবের উত্তম || ৮৬
বৈরীর নিধনে আর অরাতির অরি | ৮৭
সচ্চিদ-আনন্দ নামে গোলোকবিহার || ৮৮
তীর্থেতে নিবাস হেতু সর্ব্বতীর্থময় | ৮৯
শ্রীযজ্ঞ-রক্ষক নাম যজ্ঞস্থলে হয় || ৯০
অনন্তে বিহার তাই অনন্তবিহারী | ৯১
অসীম আমার নাম সীমা দিতে নারি || ৯২
কৈলাসে আমিই হই কৈলাস রক্ষক | ৯৩
শান্তিকৃত হই আমি সকলভক্ষক  || ৯৪
শঙ্খধ্বনি-প্রিয় নাম জানে মুনিগণ  | ৯৫
জবাকুসুম-সঙ্কাশ বলে গুণীজন || ৯৬
বিনাশি আঁধার তাই বলে যে ধ্বান্তরি | ৯৭
কাশ্যপেয় নামে আমি জগতবিহারী || ৯৮
দীপ্তিময় সদা তাই নাম মহাদ্যুতি | ৯৯
সর্ব্বপাপ-বিনাশন হয় মোর খ্যাতি || ১০০
পতিতপাবন মোরে সকলেই বলে | ১০১
সত্যবান নামে আমি থাকি সর্ব্বস্থলে || ১০২
সুখদান করি ব’লে নাম সুখদাতা  | ১০৩
জবাপুষ্পপ্রিয় নামে পাদপ-প্রপাতা || ১০৪
জগৎ-আলোক লোকে আমাকেই বলে | ১০৫
সর্ব্বসিদ্ধিদাতা নাম হয় যজ্ঞস্থলে || ১০৬
যোগীশ্বর নামে পূজে যত মুনিচয়  | ১০৭
সর্ব্বমঙ্গল-মঙ্গল্য নাম মোর হয়  || ১০৮                                             
সূচিতে . . .   



এই শতনাম স্তব বলিনু তোমায়  |
ইহার পাঠেতে নাহি থাকে রোগভয় ||
আমার বরেতে তুমি রোগমুক্ত হবে |
অবনী-মাঝারে তব সুযশ রটিবে ||
এতেক বলিয়া সূর্য্য হন অন্তর্হিত |
তপোক্লান্ত শাম্ব হন পুলকে পূরিত ||
বর্ষব্যাপী স্তবপাঠ করি ভক্তিভরে |
রোগমুক্ত হইলেন শাম্ব অতঃপরে ||
সূর্য্য-শতনাম স্তব যেই ভক্তিভরে |
সুসংযত চিত্ত হ’য়ে নিত্য পাঠ করে ||
অথবা শ্রবণ করে যেই ভক্তজন |
রোগ শোক পরিতাপ না রহে কখন ||
ইহধামে সুখভোগ করি সেইজন |
অন্তিমে সুখেতে যায় বৈকুন্ঠ-ভবন ||

.          ********************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর