কবিবন্ধু তন্ময় মৃধার "তোমার অনুপস্থিতির সুযোগে তোমাকে নিয়ে কিছু কথা" . . .
কবি অচ্যুত মণ্ডল - জন্মগ্রহণ করেন শিলিগুড়িতে। তিনি শিলিগুড়ি বয়েস স্কুল থেকে বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করেন। কলেজ জীবন কাটে কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে। তিনি ছাত্র হিসেবে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। স্কুল, কলেজ, যেখানেই পড়েছেন, সেখানেই তিনি ছিলেন অসাধারণ। তাঁর পি.এইচডি. গবেষণা পত্রের বিষয় ছিল “বাংলাভাষার নির্বাচিত কয়েকজন অস্তিত্ববাদী কবি”।

কর্মজীবন শুরু হয় সেন্ট পলস কলেজে (?) অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে। আলিপুর দুয়ার কলেজ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি শিক্ষকতা করেছিলেন। কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় জেনারেল ক্যাটাগরিতে পাশ করে, তিনি বিধাননগর কলেজে শিক্ষকতায় নিযুক্ত হন। পরবর্তী কালে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনায় যুক্ত হন। তিনি তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন এবং শিক্ষক হিসেবে অতি উচ্চ আসনের অধিকারী হয়েছিলেন। তাঁর এক ছাত্র জানান যে ১৬ই নভেম্বর ২০০৯ তারিখে তাঁর নেওয়া শেষ ক্লাসে কবি, বাদল সরকারের অস্তিত্ববাদী নাটক “এবং ইন্দ্রজিত” নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর নেওয়া শেষ ক্লাসে তিনি এক জায়গায় বলেছিলেন যে তাঁর মতে . . . “আত্মহত্যাই নাকি চূড়ান্ত স্বাধীনতা”।

তাঁর রহস্য রোমাঞ্চ সাহিত্যের জন্য। কবি অচ্যুত মণ্ডল ইনটারনেটে ব্লগার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর, মৃত্যুর পরে আত্মা, ভূতের গল্প ইত্যাদির প্রতিও আগ্রহ কম ছিলনা। এই বিষয়ে তিনি তাঁর ব্লগ . . . "জোড়াভুত.ব্লগস্পট.ইন” এ লিখছিলেন। সেখানে একটি ৫৪ সেকেণ্ডের ভিডিও রেকর্ডিংও রাখা আছে। সেই ব্লগে যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন . . .
http://jorabhoot.blogspot.in/

১৭ নভেম্বর ২০০৯ তারিখে, দিল্লীর মিরাণ্ডা কলেজের কাছে অবস্থিত দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসবভনে তিনি স্বহস্তে নিজের জীবনের অবসান ঘটান বলে শোনা যায়। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রহস্য দানা বাঁধে। কবির দিদি এই মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য পুলিশের কাছে তদন্তের দাবী করেন। তিনি বলেন যে, যে ঘরে তাঁকে মৃত পাওয়া যায় সেই ঘরের সিলিং ছিল নিচু এবং কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে তাঁর পা নাকি মাটিতে ছুঁয়েছিল। বাংলার শিল্পী-সাহিত্যিক মহলেও এই ঘটনা নিয়ে আলোড়ণ সৃষ্টি হয় এবং সেখান থেকেও দাবী করা হয় তদন্তের। পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭ ধারায়, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেন।

অচ্যুত মণ্ডল কবিতা লিখতেন, কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায় কোনো কবিতার বই প্রকাশিত করে যান নি। মৃত্যুর ঠিক আগের মুহুর্তে, সুইসাইড নোট হিসেবে লিখে রেখে যান একটি কবিতা। তাঁর সহকর্মী দিল্লীর মিরাণ্ডা কলেজের অধ্যাপিকা কবি শাশ্বতী গাঙ্গুলী, কবির মৃত্যুর পর অকুস্থলে গিয়ে সেই কবিতাটি পুলিশের হাতে দেখতে পেয়ে, সেটা নিজের খাতায় লিখে নিয়ে আসেন। তাঁর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ কারণ তিনি সেই শেষ লেখা কবিতাটি আমাদের দিয়েছেন। আমরা কবি অচ্যুত মণ্ডলের শেষ কবিতাটি, তাঁর অন্যান্য কবিতার সঙ্গে এখানে প্রকাশিত করলাম।

মৃত্যুর পর তাঁর মা শ্রীমতী রেখা মণ্ডলের ইচ্ছায় এবং বন্ধুবর শিল্পী তন্ময় মৃধার সম্পাদনায়, প্রকাশিত হয় অচ্যুত মণ্ডলের একমাত্র কবিতার বই “একটি তারার তিমির”। এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলির রচনাকাল ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৭ সাল। তার মধ্যে তাঁর বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে অনেকগুলি কবিতা। আমরা সেই বই থেকে কবিতা ও শিল্পী তন্ময় মৃধার লেখা "তোমার অনুপস্থিতির সুযোগে তোমাকে নিয়ে কিছু কথা" সম্পূর্ণ এখানে তুলে দিচ্ছি কারণ তা কবিকে চেনাতে সাহায্য করে।

কবিতা চর্চার পাশাপাশি কবি ছবিও আঁকতেন দক্ষতার সঙ্গে। শিল্পী তন্ময় মৃধার সঙ্গে তিনি দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছবির প্রদর্শনীতে অংশ গ্রহণও করেছিলেন।

যে জিনিষটা আমাদের ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে, তা হলো তাঁর প্রখর আত্মমর্যাদা বোধ। ভারত সরকারের সংরক্ষণ-নীতির রাজনীতিকে তিনি বর্জন করেছিলেন। ভারতের “অনুসূচিত জাতি”-র মানুষ হয়েও তিনি কোনোদিন কোনো রকমের সংরক্ষণের সুযোগ গ্রহণ করেন নি।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটির প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা, তাঁর অকালপ্রয়াণের সাথে স্তব্ধ হয়ে গেছে। যে মানুষের, কবিতাই ছিল শেষ অবলম্বন, তাঁর কবিতা মিলনসাগরে তোলা অবশ্য-কর্তব্য বলে আমরা মনে করছি। দিল্লীর অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত বাংলা সাহিত্যিক মহলের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, যাঁরা আমাদের এই কবি সম্বন্ধে নানা তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন।

তাঁর সম্বন্ধে আরো তথ্য যদি কেউ আমাদের কাছে পাঠান তা হলে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমরা এই পাতায় প্রেরকের নাম উল্লেখ করবো। এখানে প্রকাশিত তথ্যে যদি কোনো ভুল দেখতে পান তাহলে আমাদের জানালে আমরা তা শুধরে নেব।

মিলনসাগরে আমরা কবি অচ্যুত মণ্ডলের কবিতা প্রকাশ করে আনন্দিত এবং আগামী প্রজন্মের কাছে তাঁর কবিতা পৌঁছে দিতে পারলে এই প্রয়াসের সার্থকতা।


কবি অচ্যুত মণ্ডলের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন


         

উৎস :





আমাদের ই-মেল
: srimilansengupta@yahoo.co.in
হোয়াটসঅ্যাপ
: +৯১ ৯৮৩০৬৮১০১৭       



এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ১৩.৭.২০১৩
অচ্যুত মণ্ডলের কাব্যগ্রন্থ "একটি তারার তিমির" থেকে, কবির বন্ধু শিল্পী তন্ময় মৃধার লেখা "তোমার অনুপস্থিতির সুযোগে তোমাকে নিয়ে কিছু কথা" সহ এই পাতার পরিবর্ধিত সংস্করণ - ২৯.৭.২০২৩
^^ উপরে ফেরত