*
মা ষষ্ঠী
কবি অখিল নিয়োগী (স্বপন বুড়ো)

মা ষষ্ঠীর ছেলেমেয়ে ষাট্ ষাট্ ষাট্!
তোমার পায়ে গড় করে মা--- বসতে দেবো খাট!
বেড়াল বাছা ষষ্ঠী মাগো---
ধনে মানে সুখে রাখো
মোদের যতেক নাতনী-নাতি পাবে রাজ্যপাট---
ও জননী, কৃপা করো, ক্ষমো মোদের ঘাট্!
মা ষষ্ঠীর ছেলেমেয়ে ষাট্ ষাট্ ষাট্!

.      **********************     


.                                                                                                 
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
কবি অখিল নিয়োগীর (স্বপনবুড়ো) কবিতা ও ছড়া
*
খেলার খেসারত
কবি অখিল নিয়োগী (স্বপন বুড়ো)
উত্থানপদ বিজলী সম্পাদিত "ছোটদের আবৃত্তির ছড়া ও কবিতা" কাব্য গ্রন্থ থেকে।


খেলিবার নামে মাতে ছেলে বুড়ো চ্যাংড়া---
তাহাদের দেখাদেখি পোলো খেলে ব্যাঙরা।
কিতকিত খেলা মাঝে কেনারাম কুণ্ডু
খচ করে খসাইল ক্যাবলার মুণ্ড!
হেড করে হকি খেলে ছেলে বড় ষণ্ডা!
পেট ফাঁপে ফুটবলে গোল খেলে গণ্ডা!
গড় করি গড়পারে, গুপিদের গুপলো
‘বাগবির’ ম্যাচ দিতে ময়দানে ডুবলো।
‘ব্রেকফাস্ট’ খেয়ে ব্রিজ খেলে বিশ্ বর্মা
স্রেফ সাত মাস রয় হয়ে নিষ্কর্মা ;
ন-কড়ির কনে বউ কানুদের শুক্ল,
লুকাইয়া কড়ি খেলি কফে কাশে ভুগলো।
খেলি ‘ছাও ছি’ খেলাটা দিন দুই মাত্র
মারা গেল প্যালারাম পহেলিয়া ভাদ্র।
বারোগুটি বাঘছাল ঘুঁটি যেই বাটলো---
সেনেদের গিন্নির ছেলে সাপে কাটলো।
তাই বলি খেলিও না কভু গুলি ডান্ডা,
চোট লেগে হবে মাথা একেবারে ঠাণ্ডা!
গোকুলের কেরানিটা ট্রেনে খেলি বিন্তি
হারাইলো ঘড়িটারে, তাই করে নিন্দি!
দখিন হাতের খেলা খেলো একনিষ্ঠ,
পেটে খেলে জেনো ভাই সয় সদা পৃষ্ঠ!

.           **********************     


.                                                                          
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
বলো দেখি
কবি অখিল নিয়োগী (স্বপন বুড়ো)
২০১২ সালে প্রকাশিত, কালিদাস ভদ্র সম্পাদিত "আবৃত্তির সেরা ছোটদের ছড়া ও কবিতা"
থেকে।


খবলো দেখি প্রীতিলতা, বংকু ও স্বরাজ
কার ভয়ে থরথরে কাঁপে রে ইংরাজ।
বজ্র সম-কণ্ঠে বাণী ধ্বনিতেছে কার
কাহার মহিমা লোকে করিছে প্রচার
কারাগারে কেটে গেল কার দীর্ঘকাল
আমাদের বীর নেতা ‘জওহরলাল’।

শোন দেখি আয় তো রে রমা---
কার বীর কীর্তি  গাঁথা রেখেছিস জমা
কার মূর্তি স্মরে তোর ফুলে ওঠে বুক
কার লাগি জনগণ অধীর উন্মুখ
কাহার আদেশে তুই প্রাণ দিতে চাস ?
দেশের বরণ্য বীর নেতাজী সুভাষ।

.        **********************     


.                                                                             
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
খিদের খিদমত
কবি অখিল নিয়োগী (স্বপন বুড়ো)

কেবল খিদে---কেবল খিদে!
খিদেয় চলি কুঁজো হয়েই, সাধ্য কি রে হই যে সিধে!
সকালবেলা হলদে খিদে---
মুখখানি রয় পলতা তিতে!

দুপুরবেলা লালচে খিদেয় হুমড়ি খেয়ে পড়ছি দাদা!
.                        খিদেই সকল কাজের বাধা!
বিকেলবেলা নীল খিদে ভাই
.                        নীল করে দেয় শরীরটাকে,
মাঠের খেলায় মন বসে না
.                        বাঁধবে কেবল দড়ির পাঁকে!

রাত্তিরেতে হরেক রকম খিদে আমায় মারবে ঠেলা---
ঠিক মনে হয় পেটের ভেতর মারছে যেন ভূতের ঢেলা!
খিদের রাতে ঝোপে ঝাড়ে
দুঃস্বপনের দাবড়ি মারে---
ঘন খিদে, কালো খিদে, সবুজ খিদেয় মরছি দাদা
খিদে পড়্ কেমন করে ? বই কিনেছি গাদা গাদা!
কোবল খিদে---কেবল খিদে!
আঁতকে উঠি জেগে জেগেই,---খাই যে খাবি গভীর নিদে!

.                 **********************     


.                                                                             
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
খোকা
কবি অখিল নিয়োগী (স্বপন বুড়ো)

খোকা যখন হাসে,
ক্ষীর সাগরে সোনার কলম আপনি সুখে ভাসে।
.        পাখ পাখালি গায় কত গান,
.        ধীর সমীরণ মাতায় পরাণ
ময়ূরপঙ্খী নাওখানি যে আপনি ঘাটে আসে
লাখো লাখো ফুল ফুটো ভাই ডাকে নীলাকাশে।

খোকা যখন কাঁদে,
পাতালপুরীর কোন অজগর মনকে এসে বাঁধে।
.        রয় যে ঢাকা অরুণ আলো
.        দিনের বেলা পিদিম জ্বালো
কালোমেঘে আকাশখানি ঝড় বাদলে মাতে
রাজার মেয়ে যায় হারিয়ে দত্যি দানোর ফাঁদে॥

.              **********************     


.                                                                               
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
তোমরা যদি ইচ্ছে করো
কবি অখিল নিয়োগী
আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৩৫২বঙ্গাব্দ (১৯৪৫) শারদীয়া সংখ্যায় প্রকাশিত।
মিলনসাগরে প্রকাশ ২৯.৯.২০১৯।

তোমরা যদি ইচ্ছে করো, খেলতে পারো নতুন খেলা---
শিশুর হাসির মধ্যিখানে খুলতে পারো নতুন মেলা।
নতুনতরো দখিণ-হাওয়ায় বলতে পারো নতুন বাণী,
সেই হাওয়াতে নতুন-জগৎ করবে কেবল কানাকানি!

তোমরা যদি ইচ্ছে করো, বলতে পারো নতুন ভাষা . . .
সেই ভাষাতেই গুঞ্জরিবে মোদের সকল মনের আশা!
শিশুর দলের একই ভাষা থাকবে সকল ভুবন ঘিরে . . .
উঠবে শুধু কলধ্বনি নানান দেশের তীরে তীরে।

তোমরা যদি ইচ্ছে করো, গাইতে পারো নতুন সুরে---
সঞ্জীবনী-মন্ত্র দিতে পারো সবার হৃদয় পরে।
তোদের মুখের মধুর সুরই সকল সুরে বাঁধবে কাছে,
আধেক শোনা সেই সে গানে সকল জনার হৃদয় নাচে!

তোমরা যদি ইচ্ছে করো, নাচতে পারো নতুন তাসে
বাঁধতে পারো বিশ্ব-জগৎ তোমার মধুর ইন্দ্রজালো।
ছন্দ-রাগের হিন্দেলেতে স্বর্ণকমল উঠবে ফুটি . . .
নৃত্যতালে নতুন ভুবন তোদের পায়েই পড়বে লুটি।

তোমরা যদি ইচ্ছে করো, বলতে পারো সহজ কথা---
সেই কথাতেই ঘুচতে পারে সকল জনার মনের ব্যথা!
শিশুর মুখের মধুর কথা ভুলায় সকল মনের বেদন
এমন নিঠুর কে-ই বা আছে ইচ্ছে করে ভুলবে সে ধন?

তোমরা যদি ইচ্ছে করো, মিলতে পারো মিলন মেলায়
দলাদলি নেই কো যাতে জুটতে পারো সেই সে খেলায়!
এক ধরণে খেলবে খেলা, এক সুরেতে বাজবে বাঁশী
সাগরতীরের কিশোর মেলায় ফুটবে একই মধুর হাসি!

তোমরা যদি ইচ্ছে করো, গড়তে পারো নতুন জগৎ . . .
ধূলি-মলিন এই ধরণী তাতেই হবে অনেক মহৎ।
থাকবে নাকো দুঃখ-আপদ, জাগবে মধুর-মনের প্রীতি
তিন ভুবনের তীরে-তীরে কল্লোলিবে কিশোর গীতি!

.              **********************     


.                                                                            
সূচীতে . . .    

মিলনসাগর
*
শরত্চন্দ্র
কবি অখিল নিয়োগী
শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পরে, ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ
পত্রিকার চৈত্র ১৩৪৪ (মার্চ ১৯৩৮) সংখ্যায় প্রকাশিত। মিলনসাগরে প্রকাশ ২৯.৯.২০১৯।

পড়িতেছিলাম গ্রন্থ নিরালা সন্ধ্যায়---
উত্তরের বায়ু এসে প্রদীপ কাঁপায়!
বাতায়ন কেঁপে ওঠে, উড়ে যায় বই---
বিজলী চমক দেখে মূক হয়ে রই।
ঝরে ধারা অবিরল আসে ভেজা বায়ু
কম্পিত দীপটির কেড়ে নেয় আয়ু!
আঁধার ঘনায়ে আসে ; আসে কালো মেঘ---
কবলি বাড়িতে থাকে পবনের বেগ!
হঠাৎ অবাক মানি---শরতের চাঁদ---
জলদের ফাঁক দিয়া পাতে মায়া ফাঁদ!
থেমে গেল জলধারা, দেখি চরাচর
তুলে লই পুঁথিখানি কোলের উপর।
আছে ঝড়, আছে ঝঞ্ঝা---সত্য সমুদয়---
তারি মাঝে আছে চন্দ্র দিব্য জ্যোতির্ময়!

.              **********************     


.                                                                              
সূচীতে . . .    

মিলনসাগর
*
হোলির গান
কবি অখিল নিয়োগী
গিরিজাকুমার বসু সম্পাদিত, দীপালী পত্রিকার, চৈত্র ১৩৪১বঙ্গাব্দ (১৯৩৫) দোল সংখ্যায়
প্রকাশিত।
মিলনসাগরে প্রকাশ ২৯.৯.২০১৯।

লালচে কপোল লাল হয়েছে আজ ফাগুয়ার আবীর লালে---
মিষ্টি হাসি হাসতে গিয়ে টোল্ পড়েছে নিটোল গালে।
.                অধর-রঙে রঙ্ গুলোছ
.                আঁখির সরম আজ ভুলেছ---
রামধনুকের রঙ্ নিয়ে আজ মন শুধু রঙ্-মশাল জ্বালে!

আঁচল যদি আজ খসে যায়, অলক ওড়ে ক্ষণে ক্ষণে---
দখিন হাওয়ায় দোষ দিও না, আজকে সখি মনে-মনে।
.                আজ শুধু সই রঙের নেশা---
.                হালকা হাসির আমেজ মেশা---
রাগ কোরোনা---রঙ্ লাগাতে ঠোঁটের ছোঁয়া লাগলে গালে!

.             
        **********************     


.                                                                              
সূচীতে . . .    

মিলনসাগর
*
স্বপন-বুড়োর ঝুলি
কবি স্বপন বুড়ো
বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত “শারদীয়া যুগান্তর” পত্রিকার, আশ্বিন ১৩৫২বঙ্গাব্দ
(সেপ্টেম্বর ১৯৪৫) সংখ্যায় প্রকাশিত। সেই সংখ্যার ছোটদের পাততাড়ি নাক বিভাগের
পরিচালক "স্বপনবুড়ো" নামে লেখা। মিলনসাগরে প্রকাশ ২৯.৯.২০১৯।

বাঙ্ লা দেশের ছেলে-মেয়ে বলছিরে মন খুলি
তোদের তরে আছে যে এক স্বপন বুড়োর ঝুলি!
সেই ঝুলিতে লুকিয়ে আছে সবার প্রাণের প্রীতি---
বাঙ্ লা মায়ের স্নেহ-সুধার নতুন সুরের গীতি---!
লুকিয়ে আছে ঝুলির মাঝে কিশোর কল-হাসি---
রামধনুকের মঙ দিয়ে তাই রাঙ্ তে ভালোবাসি!
সত্য পথে চলার দাবী ঝুলির মাঝেই জমা---
অন্যায়েরে কোনোমতেই করবো না ভাই ক্ষমা!
তাইত ঝুলি নবারুণের নতুন-বাণী বহে---
মিথ্যা স্তূপের আবর্জ্জনা বইতে রাজি নহে।
ঝুলির মাঝে সহজ কথা, সফল করার সুর
তোদের জীবন সকল দিকেই করবে সুমধুর।
তাইত সবায় ডাকছিরে ভাই . . . আয় না সবে ছুটে,
ঝুলির মাঝে যতেক মজা সবাই নে না লুটে!
আছে যতেক কিশোর দলের মনের-যাদুকর
এই থলিতে তাঁদের লেখার সাজাই যাদিঘর।
কূপকথারই রূপ অপরূপ গল্প করমারী
শুনতে যদি চাস্ রে ও ভাই, আয় না তাড়াতাড়ি!
ইতিহাসের আজব কথা, হাসির ছড়া-ছবি
পাততাড়িরই পাতায় পাতায় মিলবে রে ভাই সবি!
দেশ-বিদেশের গল্প-কথার সহজ অনুবাদ
শারদীয়ার পাততাড়িতে যায় নি জোনো বাদ।
সকল রসের সমন্বয়ে ভরা যে মোর ঝুলি ;
যার যে রকম রয় কামনা দুই হাতে নাও তুলি!

.              **********************     


.                                                                            
সূচীতে . . .    

মিলনসাগর
*
স্বপনবুড়োর চিঠি
কবি স্বপন বুড়ো
বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত “শারদীয়া যুগান্তর” পত্রিকার, আশ্বিন ১৩৬১বঙ্গাব্দ
(সেপ্টেম্বর ১৯৫৪) সংখ্যায় প্রকাশিত। সেই সংখ্যার ছোটদের পাততাড়ি নাক বিভাগের
পরিচালক "স্বপনবুড়ো" নামে লেখা। মিলনসাগরে প্রকাশ ২৯.৯.২০১৯।


চারি দিকে বন্যা, জল করে থৈ থৈ
তারি মাঝে হে জননী, তোরে খুঁজে পাই কৈ?
মার কোল থেকে ছেলে ভেসে যায় বন্যায়
দুর্গতি হারিণী গো, রাখো ছেলে কন্যায়।
অনাহারে সন্তান, ঘরে ঘরে ক্রন্দন . . .
কে সাজাবে পূজো লাগি পুষ্প ও চন্দন?
চিরকাল শুনি তুমি জগতের ধাত্রী ---
কবে বলো পোহাবে গো এই কাল-রাত্রি!
তব আগমনী দিনে কোথা মাগো উত্সব?
পূজা-মণ্ডপে নাচে বিভীষিকা ভূত-সব!
কোথা প্রাণ? কোথা গান? অঞ্জলি দেবে কে?
কান্নার শতদল আঁখি মুছি নেবে কে?
তোমারই ত’ সন্তান, অভিমান আছে গো,
সব ব্যথা মুছে দিয়ে ডাকিবেনা কাছে গো?
জয় আর যশ পাবো-মা তোমারি আশিসে
প্রাণ খুলে গান গাবো আনন্দে ভাসি যে!
অঞ্জলি দেবো মাগো, ছেলে-মেয়ে সকলে
স্নেহ-প্রীতি-শ্রদ্ধায় নোবে সবে দখলে॥

.              **********************     


.                                                                              
সূচীতে . . .    

মিলনসাগর