কবি অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরীর কবিতা যে কোন গানের উপর ক্লিক করলেই সেই গানটি আপনার সামনে চলে আসবে।
|
প্রাণে যার মর্ম্মবিদ্ধ জীবন্ত জ্বলন্ত আশা,
মিশিব পতির সনে যদি থাকে ভালবাসা,
দেহমাত্র ছাড়াছাড়ি দেহ হ’লে ছারখার,
দুটি দীপশিখা মিশে উভে হব একাকার,
এমন বিশ্বাসবজ্রে বাঁধান হৃদয় যার,
তাঁর সম সধবা গো! ভূমণ্ডলে কোথা আর!
আপনি প্রকৃতি সতী গাঁথি মালা নব ফুলে---
নব পরিণয় তরে অনন্তের উপকূলে,
দাঁড়ায়ে আছেন দেবী ধরিয়ে বরণডালা,
চিরমিলনের সুখ জাগিবে, জাগিবে বালা,
বাসর আসর হবে মহাশূন্যে মহালোকে,
সখার তরুণ কান্তি নেহারিবে দিব্যচোখে,
পৃথিবীর দুষ্টবায়ু সেখানে পশিতে নারে,
দেহের কালিমা-ছায়া সেথা না পড়িতে পারে,
প্রাণে প্রাণে সম্মিলন যমুনা জাহ্নবী পারা,
. দাসীর “অশ্রু-কণা” কাব্যগ্রন্থের প্রকাশের পরে বাংলার কাব্যজগতে এক আলোরণ
. কয়েকজন খ্যাতনামা কবি “অশ্রুকণা” পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে কবিতা রচনা করেন।
. ক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী অন্যতম। তাঁর লেখা কবিতাটি পরবর্তীতে, কবি গিরিন্দ্রমোহিনী
. কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণের পরিশিষ্ট হিসেবে প্রকাশিত করেন . . .
. খুলিয়ে উদাস প্রাণ,
. গাহিছ খেদের গান!
. ন ভেঙে ভেঙে যায়,
. না ফুটিতে চায়!
. বাহিতে যেন মানা,
. শুধু এক অশ্রুকণা
যাও বিজ্ঞ দার্শনিক মানি না তোমার কথা,
ন্যায়ের হেঁয়ালি রঙ্গ শুষ্ক তর্ক কুটিলতা!
আন এক পরমাণু পুনঃ পুনঃ কর ভাগ,
সূক্ষ্ম হ’তে সূক্ষ্মতর সূক্ষ্মতম হয়ে যাগ,
সেই সূক্ষ্মতম টুকু কার সাধ্য করে লয়,
প্রকৃতি জননী যে গো! প্রকৃতি রাক্ষসী নয়।
যা’ ছিল তা’ রহিয়াছে, যা’ আছে তাহাও রবে,
একেবারে নির্ব্বাপিত নিঃশেষিত নাহি হবে---
ওই যে গাহিল পাখী, আবার থামিল গান,
থামিল মর্ত্তের কর্ণে, কিন্তু নহে অবসান,
ও গানের প্রতি সুর, প্রত্যেক কম্পন তার,
বায়ুস্তর ছাড়ি আছে সূক্ষ্ম ব্যোমপারাবার,---
সেখানে হিল্লোলে উহা অবাধে চৌদিকে ধায়,
পৃথিবীর টানাটানি সেথা না যাইতে পায়,
ওই যে ফুলের গন্ধ, ওই যে বাঁশীর রব,
ফুল যাক, বাঁশী যাক, শূন্যেতে মিলিছে সব,
শিশুটির কচি হাসি, যৌবনের প্রেমোচ্ছ্বাস,
যুগান্ত বিরহ পরে মিলনের দীর্ঘশ্বাস,
প্রেমের প্রথম অঙ্কে আধফুটো যত সাধ---
সেই শূন্যে তোলা আছে, কিছুই পায়নি লয়,
প্রকৃতি গুছান মেয়ে, প্রকৃতি উন্মাদ নয়,
শিশুকালে করেছি যে জননীর স্তনপান,
শিশুকালে জননী যে করেছেন চুমুদান,
সেই দুগ্ধ, সেই চুমু, এখন গিয়াছে কোথা ?
জীবনের গাঁটে গাঁটে বিজড়িত আছে গাঁথা।
এই যে ফুটন্ত ফুল কালে ছিল কলিপ্রায়,
কালিকার রবিকর লেগেছিল ওর গায়,
আজ ত নূতন রবি নব কর করে দান,
কালিকার রবি তবু ফুলটিতে বিদ্যমান,
যা’ ছিল তা’ উবে যাবে, এ কভু সম্ভব হয়,
প্রকৃতি জননী যে গো প্রকৃতি রাক্ষসী নয়,
আকর্ষণ-শক্তিবলে কেন্দ্রস্থিত চারিধার,
গ্রহ উপগ্রহ লয়ে ছোটে সৈর পরিবার,
প্রত্যেক অণুটি টানে অণুরে আপন কাছে,
চন্দ্রের আভাসমাত্রে সমুদ্র উথলে উঠে,
কেন্দ্রভ্রষ্ট ধূমকেতু সেও’ সূর্য্যপানে ছুটে,
হৃদয়ে হৃদয় টানে, থাকুক না ব্যবধান,
মশানে শ্রীমন্তে বাঁধে, শ্রীমন্ত ফুকারে কাঁদে
কৈলাসে কৈলাসেশ্বরী আকুল ব্যা
দুর্ব্বাসার চক্রে পড়ি দ্রৌপদী আ
হেথায় দ্বারকাপুরে যদুপতি ভে
এ নহে প্রলাপবাক্য, প্রকৃতির প
ভালবাসা মোহমন্ত্র, সুধু আকর্ষণ
থাকুক না প্রিয়জন সপ্তর্ষিমণ্ডল
থাকে যদি ভালবাসা, অবশ্য পূরি
শত বিঘ্ন অতিক্রমি মিশিব পরা
থাকুক না প্রিয়জন সপ্তর্ষি মণ্ডল পার।
লক্ষ্য রাখ পতি প্রতি কায়মনো
স্থিরদৃষ্টি অরুন্ধতী যেমন ধ্রুবের
আবার মিলন হ’বে যমুনা জাহ্ন
অনন্ত বিহার ক্ষেত্র অনন্ত অমৃত
অনন্ত তৃপ্তির মাঝে অনন্ত বাস
এই ত বিবাহ শুভ, এ বিবাহ হবে
. ******************
. সুচিতে...
মিলনসাগর
স্থগিত শোণিত-স্রোত, পরাণ শীহরে,
কারে বা সুধাই এই কানন ভিতরে ?
অয়ি বনদেবি, শুভে! কোথা এ সময় ?
দেখা দিয়ে দূর কর কাতরের ভয়!”
সহসা অরণ্যদেশ বিভাসি ললনা
---যেন শত শত পূর্ণ শারদচন্দ্রমা---
মরাল গমনে দেবী আসিয়ে নিকটে,
“শান্ত হও পান্থবর! ভেব’না শঙ্কটে।”---
সুধামুখী সুধাভাষে আশ্বাসি কহিল।
পথিকের ভয়ভাব ক্রমশঃ ঘুচিল,
উপজিল কণ্ঠে শ্বাস, পরাণে পরাণ,
শরীরে শোণিত পুনঃ হলো বহমান।
সম্বোধি দেবীরে পান্থ কহিল কাতরে,
“একি অবিচার, দেবি, কানন ভিতরে ?
ওই যে উঠিছে ধ্বনি, রমণী-রোদন,---
স্বর্গ মর্ত্ত্য রসাতল করি বিদারণ---
দুর্ভেদ্য ভূধর যাহে ভেদ হ’য়ে যায়,
পাষাণ হৃদয় তব ফাটে না কি তায় ?
কেমনে কানন মাঝে, কহ সীমন্তিনি!
সুখের সুষুপ্তি ভোগে যাপিছ যামিনী ?
মঙ্গল-স্বরূপা দেবি! বনে অধিষ্ঠান,
কেন গো কাননে তবে হেন অকল্যাণ ?”
অধোমুখী বনদেবী শুনিয়ে ভর্ত্সন,
রঞ্জিল সরম-রাগে পূর্ণেন্দু বদন।
“চল পান্থ” মৃদু হাসি, কহেন সুন্দরী,
“যথায় রোদিছে বামা আপনা পাসরি।”
উজলি অরণ্য-দেশ বরণ-ছটায়,
চলিলেন সীমন্তিনী ; পাতায় পাতায়
পড়েছে শিশির বিন্দু, তদীয় বিমল-
দীপ্তিতে খদ্যোত-সম হইল উজ্জ্বল।
উর্দ্ধকণ্ঠ ঝিল্লিগণ সহসা নীরব,
অটবীর ফাটে ফাটে লুকাইল সব।
নিলীনা হরিণীকুল চমকিয়ে চায়,
সভয়ে শার্দ্দূল-বৃন্দ দূরান্তে পলায় ;
ধরাশায়ী জীর্ণ পত্র করিছে মর্ম্মর,
পাখা নাড়া দেয় পাখি শাখার উপর,
কোকিল কুহরে কুহু, উষা ভাবি মনে,
পাপিয়া পীয়ুষ স্রোত ঢালিছে সঘনে।
লতিকা-বন্ধন বাধা ঠেলিয়ে চরণে,
দুকরে পল্লব কাটি চলিল দুজনে।
অল্পদূর অগ্রসর হইয়ে উভয়ে,
প্রচণ্ড পাবক-শিখা হেরিল বিস্ময়ে।
আশঙ্কায় উর্দ্ধশ্বাসে চলিল বিহ্বলে,
নিবিড় গহনে যথা হুতাশন জ্বলে।
হায় হায় কি হেরিল দৃশ্য চমত্কার!
অরণ্য গভীর-গর্ভে এ কি রে ব্যপার!
কহিতে সরে না কথা চিত্ত চমকিত,
নীরস রসনা হলো দশনে জড়িত!
ক্ষণপরে কহে পান্থ দেবীরে কাতরে---
“একি গো বিষম কাণ্ড বলের ভিতরে!
ওই যে বিবশা বামা, হের গো নয়নে,
চিতানল জ্বেলে, দেবী! রোদিছে সঘনে---
উদাসিনী
প্রথম সর্গ
Now nought was heard beneath the skies,
The busy sounds of life were still,
Save an unhappy lady’s sighs.
. Mickle.
স্থান - কিন্নর কানন। সময় - রাত্রি দ্বিপ্রহর।