কবি অমল বাওয়ালী –জন্মগ্রহণ করেন নদীয়া জেলার, রানাঘাটের, কুপার্স রিফিউজি ক্যাম্পে। বাবা
রাধাকান্ত বাওয়ালী, মা বরোদাসুন্দরী দেবী।
কবিদের আদিবাড়ী ছিল বরিসালের ভাণ্ডারিয়া থানার শিয়ালকাঠি গ্রামে। মামাবাড়ীতে গানে গানেরর চল
ছিল। তাঁদের পদবী ছিল “সাধক’। দেশভাগের ফলে তাঁর পরিবার বাধ্য হন এপারে চলে আসতে ১৯৫১ সাল
নাগাদ। তাঁর জন্ম হয় রিফিউজি ক্যাম্পে। দেশভাগের ফলে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা ভীটেমাটি সম্বল হারা, উদ্বাস্তু
হয়ে আসা শরণার্থীদের অকল্পনীয়, বঞ্চনা, যাতনা ও লাঞ্ছনার কথা ভারতের বেসরকারী ইতিহাসে মোটা
কালো হরফে চিরকাল লেখা থাকবে।
১৯৭২ সালে কবির ক্লাস ৭ এ পড়াকালীন, রিফিউজি পুনর্বাসনের মাধ্যমে তাঁর পরিবার বসবাস শুরু করেন
শ্যামনগরে। ৭৩-৭৮ সালে তাঁদের পারিবারিক অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে, মাত্র ৬-৭ বছর বয়স থেকেই,
পেটের দায়ে কবিকে বিড়ি বেঁধে রোজগার করতে হোতো। মাতৃদুগ্ধপানরত অবস্থা থেকেই গান করতে
বেরোতেন ছেটোমামার সাথে। সেই বয়স থেকেই ছোটমামার সঙ্গে রামায়ণ গান গাইতেন হারমোনিয়াম
বাজিয়ে এবং সুনামও অর্জন করেছিলেন। গাইতেন শ্রীকৃষ্ণের লীলাকে কেন্দ্র করে “অষ্টক” গান, “নীলের
গাজন”, “মনষার ভাসান গান ( রয়ানী , মনষামঙ্গল প্রভৃতি)। মান্না দের “ললিতাগো” গানটির জন্য তাঁর ওই
বয়েসের কণ্ঠে খুব জনপ্রিয় হয়েছিলেন সেই অঞ্চলে।
এরই মধ্যে ১৯৭৮ সাল থেকে গান লিখতে শুরু করেন। কলমের অভাবে পোড়া দেশলাই কাঠি দিয়েই গান
লিখে ফেলতেন মেঝেতে। এই অবস্থার মধ্যেই প্রাইভেটে ১৯৯০ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন।
১৯৯২ উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজী পরীক্ষার আগের রাতে সারারাত তাঁর অনুষ্ঠান ছিল। তাই আর পরীক্ষা
দেওয়া হয় নি।
তাঁর গানের প্রথম শিক্ষা গুরু অবশ্যই তাঁর ছোট মামা নির্মলেন্দু সাধক। পরে গুরু হীরেন চক্রবর্তীর কাছে
লঘু শাস্ত্রীয় সংগীত শিক্ষা লাভ করেছেন। নজরুল গীতি শিখেছেন বিমান মুখোপাধ্যায়ের কাছে। আধুনিক
বাংলা গানের তালিম নিয়েছেন অনল চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। ১৯৯০ সালে আকাশবাণী কলকাতা থেকে
গীতিকারের স্বীকৃতি পেয়েছেন।
১৯৭৬ সাল থেকে কর্মজীবন শুরু হয় শ্যামনগরের একটি সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে। এখনও সেখানেই কাজ
করে চলেছেন। ১৯৭৫ সালে বিবাহসূত্রে আবধ্য হন গৌরী দেবীর সঙ্গে। তিন মেয়ে এক ছেলের সংসার।
মেয়েরা সবাই প্রতিষ্ঠিত। ছেলে এখনও পাঠরত।
কবি বলেন যে প্রতীকী ব্যাপারে তাঁর বিশ্বাস নেই। তিনি মানুষে বিশ্বাসী। মানবতাবাদে বিশ্বাসী। তিনি
আধ্যাত্মিক গানের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিক জীবনের গানও লেখেন। সমাজের অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠ সর্বদা
সোচ্চার কিন্তু তাঁর ভাষা মার্জিত। লোকসঙ্গীতের সুরে সেই কথা এক অনবদ্য মাত্রা লাভ করে। তাঁর
সুর ও কথার মিশ্রন খুবই সুন্দর। এমন ১০টি গান নিয়ে তাঁরই কথায় ও সুরে ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয়
তাঁর অ্যালবাম “ঝান্ডা নিয়ে ধান্ধাবাজী”।
তাঁর লেখা ও সুর দেওয়া গান গেয়েছেন শ্রীকান্ত আচার্য, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীর মজুমদারে কন্যা
সায়ন্তনী মজুমদার, শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়, অতনু সান্যাল, সুকণ্ঠ অধিকারীদের মতো খ্যাতনামা শিল্পীরা।
তিনি নিজে গেয়েছেন বিজয় সরকারের গান। সেই গানের শিক্ষাও দিয়ে থাকেন।
তাঁর লেখা শ্রুতিনাট্যে কণ্ঠ দিয়েছিলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায় (বিথোফেন রেকর্ডস এর ক্যাসেট)।
স্বকণ্ঠে “ও বাঁশী উদাসী” (২০১২), ঝাণ্ডা নিয়ে ধান্দাবাজী (২০০৯), তারাপীঠের উপর “তারানামে” (২০১২)।
নেতাজীর জন্ম শতবর্ষে “হে বীর পূর্ণ করো” অমরের লেখা গেয়েছিলেন শুভেন্দু মাইতি, প্রবাহ ক্যাসেট
কোম্পানী থেকে ১৯৯৭ সালে।
তাঁর শিষ্যদের মধ্যে রয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্ষ্যাতি সম্পন্ন শিল্পী অর্জুন ক্ষ্যাপা, শ্যামসুন্দর দাস বাউল, নান্টু
কাহার প্রমুখ।
আমরা মিলনসাগরে কবি অমল বাওয়ালী রচিত কবিতা ও গান তুলে আনন্দিত।
কবির সঙ্গে যোগাযোগ -
চলভাষ - +৯১৯৮৩৬২৫২২৫৭
উত্স - কবির সঙ্গে একটি সাক্ষাত্কার।
কবি অমল বাওয়ালীর মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের ই-মেল - srimilansengupta@yahoo.co.in
এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ২৬.১.২০১৪
...