কবি অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্তার কবিতা
বঙ্গ-কুলনারী
কবি অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্তা
বামাবোধিনী ডিপোজিটরি থেকে ১৩০৪ সালে (১৮৯৭খৃ) প্রকাশিত কবির "প্রীতি ও পূজা" গ্রন্থে
কবিতাটি এই রূপে প্রকাশিত হয়েছিল।


বড় ভালবাসি আমি বঙ্গ-কুল-নারী,
ধীরতা-নম্রতা-মাখা,                           ঘোমটায় মুখ ঢাকা
রয়েছে উনন-ধারে চিরকাল ধরি,
বড় ভালবাসি আমি বঙ্গ-কুলনারী।
নয়নে কজ্জল-দাগ,                            অধরে তাম্বুল-রাগ,
ললাটে সিন্দুর-বিন্দু লক্ষ্মীর আসন,
সহাস্য সুন্দর মুখ,                              সুন্দর সরল বুক,
উজ্জ্বল তারার মত আনত আনন।
সলাজ সুন্দর আঁখি,                       জানে না ছলনা ফাঁকি,
কায়মনে চেয়ে রয় পতির বদনে,---
মৃদু হাস্য মৃদু কথা,                       শ্যামা লজ্জাবতী লতা,
অমৃত উথলি উঠে মন্থর গমনে।
অঞ্চলে আবরি রাখে যৌবন-মাধুরী,
কভু উচ্চ-বাচ্য নাই,                        যাহা পাবে নিবে তাই,
বড় ভালবাসি আমি বঙ্গ-কুল-নারী।
অবস্থা যেমন যার,                            তেমনি চরিত্র তার,
কুরূপ সুরূপ পতি নির্গুণ নির্ধন,
হোক্ বোবা হোক্ অন্ধ,                     বিচারে না ভাল মন্দ,
পিতা মাতা যারে দিবে সেই প্রিয়জন।
মারিবে কাটিবে পতি,                     কথাটী ক'বে না সতী,
তবুও মঙ্গল ইচ্ছা করিবে স্বামীর,
বুক ভরা স্নেহ-ধারা                       পতি-প্রেমে মাতোয়ার,
স্থির সরসীর ন্যায় গম্ভীর সুস্থীর।
আঁখি-ভরা সুশীতল                             বরষা-গঙ্গার জল,
সফেন তরঙ্গে সদা হয় উদ্বেলিত,
উচ্চ হিয়া উচ্চ মন,                           উচ্চ কাজ অনুক্ষণ,
তবুও ক্ষুদ্রের ন্যায় পর-পদানত।
সর্ব্বদা সন্তুষ্টমনা,                             সামান্য নীহার-কণা,
একটু উত্তাপে শুষ্ক কমনীয় কায়,
একটু মলয়ানিলে                            আবেশে পড়িবে টলে
আবার সহালে স’বে ঝঞ্ঝাবাত তায়।
সুবাস আবদ্ধ যথা ফুলের ভিতরে,
তেমনি গৃহের মাঝে                           বঙ্গ নারী বদ্ধ আছে,
মনভ্রমে পদার্পণ না করে বাহিরে।
যদিও আবদ্ধ তারা,                            তবুও ভারত-ভরা
তাদেরি সন্তান স্বামী তাদেরি সকল,
যদিও ললনা-লতা                          বাহিরে কহে না কথা,
তবুও উত্থিত সদা শান্ত কোলাহল।
যদিও দেখে না চেয়ে,                      তবুও ফেলেছে ছেয়ে,
তাদেরি নয়ন-তারা ভারত-জননী,
রমণী কুসুম-থর,                               তবুও ত খরতর,
প্রতি ঘরে ঘরে বংশধর-প্রসবিনী।
ত্রিদিব-নন্দন-বনে                            লক্ষ্মী বসে পদ্মাসনে,
বঙ্গ-ঘরে-ঘরে বুঝি তাহারি মাধুরী,
সীমন্তে সিন্দুর-ফোঁটা,                          মাথে চুল ঘনঘটা,
অধর তাম্বুলে লাল বিদ্যুৎ-লহরী।
বড় ভালবাসি আমি বঙ্গ-কুলনারী।
তৃতীয়ায় শশী-কলা,                        জানে না কুহক ছলা,
বড় ভালবাসি আমি সরলা সুন্দরী।
অনিন্দ্যরূপিণী নারী                        পূজা করি প্রাণ ভরি,
মঙ্গল আরতি করি ধান্য দূর্ব্বা দিয়া।
জীবন্ত লক্ষ্মীর প্রায়                        শঙ্খ-সিন্দুরেতে ভায়,
সংসারের হিত করে মন প্রাণ দিয়া।
বিলাতের রাঙা মেয়ে                    পথে যায় নেচে গেয়ে,
যৌবনে বিবাহ করে "কোর্টসিপ্" করি,
বড় ভালবাসি আমি বঙ্গ-কুলনারী।
মেমদের রং সার,                        ধারে না পতির ধার,
সড়কে সড়কে ভ্রমে ড্রেস বুট পরি,
বড় ভালবাসি আমি বঙ্গ-কুলনারী।
ভারতের বোকা বধু                      ঘরে থাকে শুধু শুধু,
অতি কষ্টে পত্র লেখে "শিশুশিক্ষা" পড়ি,
কিছুতে হয় না রুষ্ট,                      স্বামীরে দেয় না কষ্ট,
তাই ভালবাসি আমি বঙ্গ-কুল-নারী।

ই কবিতাটি নমিতা চৌধুরী ও অনিন্দিতা বসু সান্যাল সম্পাদিত "দামিনী" (২০১৩) কাব্য সংকলনে এই
সংক্ষিপ্ত রূপে দেওয়া রয়েছে।


বড় ভালবাসি আমি বঙ্গকুল-নারী,
ধীরতা নম্রতা মাখা,                        ঘোমটায় মুখ ঢাকা
রয়েছে উনন-ধারে চিরকাল ধরি,
বড় ভালবাসি আমি বঙ্গৃকুল-নারী।
নয়নে কজ্জল-দাগ,                          অধরে তম্বুল-রাগ,
ললাটে সিন্দুর-বিন্দু লক্ষ্মীর আসন,
সহাস্য সুন্দর মুখ,                           সুন্দর সরল বুক,
উজ্জ্বল তারার মত আনত আনন।

... বুক ভরা স্নেহ-ধারা                    পতি-প্রেমে মাতোয়ার,
স্থির সরসীর ন্যায় গম্ভীর সুস্থীর।
আঁখিভরা সুশীতল                           বরষা-গঙ্গার জল,
সফেন তরঙ্গে সদা হয় উদ্বেলিত,
উচ্চ হিয়া উচ্চ মন,                        উচ্চ কাজ অনুক্ষণ,
তবুও ক্ষুদ্রের ন্যায় পর-পদানত।
সর্ব্বদা সন্তুষ্টমনা,                           সামান্য নীহার-কণা,
একটু উত্তাপে শুষ্ক কমনীয় কায়,
একটু মলয়ানিলে                         আবেশে পড়িবে টলে
আবার সহাসে স’বে ঝঞ্ঝাবাত তায়।

.    ***************  

.                                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
বনবালা
কবি অম্বুজাসুন্দরী দেবী
বামাবোধিনী ডিপোজিটরি থেকে ১৩০৪ সালে (১৮৯৭খৃ) প্রকাশিত কবির "প্রীতি ও পূজা"  
গ্রন্থে কবিতাটি এই রূপে প্রকাশিত হয়েছিল।


শ্যামল কানন-শোভা কিবা মনোহর!
শ্যামাঙ্গী প্রতিমা যেন শান্তি-করুণার!
চারি পাশে আন্দোলিতা বসন্ত-বাতাসে
স্বরগের বামা সম পুষ্পিতা লতিকা।
সমীর-পরশে নাচে বনফুলচয়
ত্রিদিব-অপ্সরা প্রায় প্রীতি-পুণ্যময়ী।
মাধবীর মধুবর্ষী হাসির মাঝারে
শত শত অলিবৃন্দ আছে নিমগন।
নব-জল-করুণাময়ী ঊষার যুথিকা
কনক বরণে বন আছে আলোকিয়া।
অপরাজিতার থোপা, অশোক, শিরীষ,
কিংশুক, রজনীগন্ধা, গোলাপ, কামিনী---
কাননের কমনীয় উরসে গ্রীবায়
অযুত কুসুম-ভার হ'তেছে শোভিত।
শাখায় দোদুল্যমানা ফণিনীর প্রায়
সহস্র ললিতা লতা রয়েছে নুইয়া ;
অনুচ্চ সরল শাখা ফলে অবনত।
অদূরে ভগন কাষ্ঠ গিরিখণ্ড প্রায় ;
মঞ্জরিত বৃক্ষশ্রেণী ঋতুর পর্য্যায়
কাননের স্থানে স্থানে মনসিজ যেন
ফুটন্ত কুসুম-ভার ফুল-ধনু করে।
বৃক্ষ হ'তে বৃক্ষান্তরে কোকিল কোকিলা
মধুর ঝঞ্ঝার ঢালি করি'ছে গমন।
বিটপীর ঊর্দ্ধতম শাখায় বসিয়া
পাঞ্চজন্য-শঙ্খনাদ-সমান সুরবে
পাপিয়া কাননস্থলী করি'ছে কম্পিত।
কিংশুক-কদম্ব-ডালে বসিয়া আরামে
কপোত ঢালিছে গীতি চিত্তদ্রবকর।
বরষিয়া হুলুধ্বনি বিহঙ্গ-নিকর
সীমা হ'তে সীমান্তরে যায় কুতুহলে ;
নীরবে বিহঙ্গ কভু তরুর কোটরে
বসিয়া ডানায় চঞ্চু করি' লুক্কায়িত।
লতা-কুঞ্জে সুমধুর ঘুঘুর সঙ্গীত
বন-নিস্তব্ধতা ভাঙ্গি' হ'তেছে উত্থিত।
আনত পুষ্পিতা লতা ফুটন্ত কুসুম,
গন্ধময় সমীরণে চন্দনাদ্রি-সম
তুষি'ছে মানব-চিত্ত অতি মনোহর।
বন-অভ্যন্তরভাগে শ্বাপদের দল
ভ্রমিছে অকুতোভয়ে ঘুরি নানা স্থানে ;
বসুধার চির-ভূষা, শ্যাম আস্তরণ
প্রকৃতির, নব-দূর্ব্বা-সরল-মূরতি,
বসন্তের রঙ্গভূমি,---তুমি বনবালা!
জলদ-গম্ভীর--- কিন্তু সতত চঞ্চলা,
নীরব সতত--- কিন্তু অস্ফুট নিনাদে
বিমল শান্তির স্রোত কর প্রবাহিত।

ই কবিতাটি নমিতা চৌধুরী ও অনিন্দিতা বসু সান্যাল সম্পাদিত "দামিনী" (২০১৩) কাব্য
সংকলনে এই সংক্ষিপ্ত রূপে দেওয়া রয়েছে।


মঞ্জরিত বৃক্ষশ্রেণী ঋতুর পর্য্যায়
কাননের স্থানে স্থানে মনসিজ যেন
ফুটন্ত কুসুম-ভার ফুলধনু করে।
বৃক্ষ হতে বৃক্ষান্তরে কোকিল কোকিলা।
মধুর ঝঞ্ঝার ঢালি করিছে গমন।
বিটপীর ঊর্দ্ধতম শাখায় বসিয়া
পাঞ্চজন্য-শঙ্খনাদ সমান সুরবে।
পাপিয়া কাননস্থলী করিছে কম্পিত।
কিমশুক কদম্ব ডালে বসিয়া আরামে।
কপোত ঢালিছে গীতি চিত্তদ্রবকর।
বরষিয়া হুলুধ্বনি বিহঙ্গ-নিকর
সীমা হতে সীমান্তরে যাত কুতুহলে ;
নীরবে বিহঙ্গ কভু তরুর কোটরে
বসিয়া ডানায় চঞ্চু করি লুকায়িত।

লতা-কুঞ্জে সুমধুর ঘুঘুর সঙ্গীত
বন নিস্তব্ধতা ভাঙ্গি হতেছে উত্থিত।
আনত পুষ্পিতা লতা ফুটন্ত কুসুম,
গন্ধময় সমীরণে চন্দনাদ্রি-সম
তুষিতে মানব-চিত্ত অতি মনোহর।
বসন্তের রঙ্গভূমি তুমি বনবালা
জলদ গম্ভীর--- কিন্তু সতত চঞ্চলা
নীরব সতত--- কিন্তু অস্ফুট নিনাদে
বিমল শান্তির স্রোত কর প্রবাহিত।

.          ***************  
.                                                                                  
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
পাগলিনী
কবি অম্বুজাসুন্দরী দেবী
বামাবোধিনী ডিপোজিটরি থেকে ১৩০৪ সালে (১৮৯৭খৃ) প্রকাশিত কবির "প্রীতি ও পূজা"
গ্রন্থে কবিতাটি এই রূপে প্রকাশিত হয়েছিল।


আঁচল ভরিয়া তুলিব লো! ফুল,
.                ঢালিয়া দিব লো! যমুনা-জলে,
হেলিয়া দুলিয়া করিব লো! খেলা,---
.                সরসী যেমন লহরী তোলে।
কখনো গিরির সুদূর শিখরে
.                একেলা নীরবে রহিব বসি,
আধ-ঘুম-ঘোরে আধ জাগরণে
.                ভাবিবে সকলে এ বাল-শশী!
কখনো নিবিড় নিভৃত কাননে
.                এলাইয়া দিয়া চুলের রাশ,
বসি' তরুমূলে শুনিব বিরলে
.                বন-সারিকার মুখর ভাষ!
কখনো বা ফুলে সাজি' ফুলময়ী
.                বনদেবী সম করিব ধ্যান,
লতিকার ছায় বসিয়া একেলা
.                কোকিলার সম করিব গান!
চন্দ্রকরোজ্জ্বলে উজ্জ্বল হইয়া
.                ফুল-আস্তরণে রহিব শু'য়ে,
মৃদুল বাতাসে ঘুমা'ব হরষে
.                শেফালি যেমন ঘুমায় ভুঁয়ে!
কভু বা পরিয়া রত্ন-আভরণ
.                সিন্দুরে রঞ্জিত করিব সিঁথি,
কভু বা ফেলিয়া বসন ভূষণ
.                পরিব কুসুম-মালিকা গাঁথি'।
কভু এলো কেশে লুণ্ঠিত অঞ্চলে
.                সারা নিশি র'ব কুসুমবনে,---
চন্দ্রও আমারে তুষিবে যতনে
.                তারাও চাহিবে নয়ন-কোণে।
নিকুঞ্জকাননে নব জল-কণা
.                ধুইয়া ফেলিবে এ দেহ-লতা,
শিশিরে হইয়া অর্দ্ধ-নিমগন
.                শ্বেত সুঁদী সম শোভিব তথা।
আ’মরি কি সুখ! ---কি সুখ আমরি!---
.                পাগলিনী সবে আমারে কয়,---
আমারি ব্রহ্মাণ্ড, আমারি ব্রহ্মাণ্ড,---
.                এ ব্রহ্মাণ্ড আর কাহারো নয়!
আকাশের তারা, ধরার কুসুম,
.                জলের লহরী,---আমারি সব,---
আমারি কারণ বনে লতা পাতা,
.                আমারি কারণ পাখীর রব।
যেথা ইচ্ছা যাই, যাহা ইচ্ছা খাই,
.                মনের আনন্দে বেড়াই ঘুরে,
পাগলিনী হ’য়ে বেঁচে আছি আমি---
.                সাধু ম'রে যা'ক্ স্বরগ-পুরে!

ই কবিতাটি রাধারাণী দেবী ও নরেন্দ্র দেব সম্পাদিত "কাব্য-দীপালি", আষাঢ় ১৩৩৮
(জুলাই ১৯৩১) কাব্য সংকলনে এইরূপে দেওয়া রয়েছে।


আঁচল ভরিয়া তুলিব লো ফুল
.                ঢালিয়া দিব লো যমুনা কোলে,
হেলিয়া দুলিয়া করিব লো খেলা,
.                সরসী যেমন লহরী তোলে।

কখনো গিরির সুদূর শিখরে
.                একেলা নীরবে রহিব বসি,
আধ-ঘুম-ঘোরে --- আধ-জাগরণে
.                ভাবিবে সকলে তরুণ শশী!

কখনো নিবিড় নিভৃত কাননে
.                এলাইয়া দিয়া চুলের রাশ
বসি তরুমূলে শুনিব বিরলে
.                বন-সারিকার মুখর ভাষ!

কখনো বা ফুলে সাজি ফুলময়ী
.                বনদেবী সম করিব মান,
লতিকার ছায়ে বসিয়া কখনো
.                কোকিলার সম করিব গান!

চাঁদের কিরণে উজল হইয়া
.                কুসুম শয়নে রহিব শুয়ে
মৃদুল বাতাসে ঘুমাব’ হরষে
.                শেফালি যেমন ঘুমায় ভুঁয়ে!

কভু বা পরিয়া নানা আভরণ
.                সিঁদুরে রঙীন করিব সিঁথি,
কভুবা ফেলিয়া বসন ভূষণ
.                জাগাবো জীবনে আদিমস্মৃতি।

কভু এলোকেশে স্লথ অঞ্চলে
.                সারা নিশি রবো কুসুম বনে
চন্দ্র আমারে চুমিবে আদরে
.                তারা হেসে চা’বে নয়ন কোণে।

কুঞ্জ কাননে নব-জল-কণা
.                ধুইয়া দিবে গো এ দেহ-লতা,
শিশিরে ডুবায়ে আধেক অঙ্গ
.                শ্বেত সুঁদী সম শোভিব তথা।

আ’মরি কি সুখ! কি সুখ আ’মরি---!
.                পাগলিনী সবে আমারে কয়,
আমারি বিশ্ব---নিখিল আমার---
.                এ ভূবন আর কাহারো নয়!

আকাশের তারা ধরণীর ফুল
.                সাগর লহর আমারি সব
আমারি কারণে কানন ভূধর
.                আমারি কারণ পাখীর রব!

যেথা খুশি যাই, যাহা খুসি খাই
.                মনের সুখেতে বেড়াই ঘুরে,
পাগলিনী হ’য়ে বেঁচে আছি আমি
.                সাধু মরে গেছে স্বরগ পুরে!

.                  ***************  
.                                                                                   
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
আত্মার মঙ্গল
কবি অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্তা
দেবীপ্রসন্ন রায়চৌধুরী সম্পাদিত “নব্যভারত” পত্রিকার চৈত্র ১৩০৮ (এপ্রিল ১৯০২) সংখ্যা
থেকে।


হে দেব! জীবনলীলা করি পরিহার
চলিল স্বরগ ধামে বিনয় আমার।
হে পিতঃ! হে পরমেশ! ভকত-বত্সল!
জীবের আশ্রয়স্থল আত্মার মঙ্গল!
ত্যজি ধন, ত্যজি জন, শিশু মম যায়,
ডেকে লও ডেকে লও স্নেহ মমতায়।
হে প্রভো! হে বিভো! ভব-সিন্ধুর কাণ্ডারি!
ভবেশ ভারব-ভীম-ভব-ভয় হারি!

নিতান্ত চলিল শিশু তোমার আশ্রমে,
সুবাস করিয়ে রোখো চরণ-কুসুমে।
নিবেদন করে তায় দুঃখিনী জননী
তাপিত সে শিশুটিরে কোলে লও তুমি।
আহা, কত কষ্ট পেয়ে মোর সে গিয়েছে চলে,
তুলে লও কোলে প্রভু তুলে লও কোলে।
জীবের ভরসা তুমি জীবনে মরণে,
চরণে যেতেছে শিশু রাখিও চরণে।
জগন্নাথ, জগবন্ধু জগতজীবন!
দীনবন্ধু প্রিয় তব দীন হীন জন।
চলিল গো দীন নাথ শিশু দীন হীন
রোগাগুণে দগ্ধীভূত বদন মলিন,
তোমার চরণতলে, চৈতন্যস্বরূপ!
একমাত্র শান্তিদাতা এক মাত্র ভূপ!
আশীর্ব্বাদ করি আমি নয়নের জলে
তব কাছে পাঠালেম তুমি লও কোলে।
জগদীশ, সে আমার হৃদয়ের ধন
করিলাম তোমার চরণে সমর্পণ।
জগতের অলঙ্ঘনীয় নিয়তি নিয়ম,
লঙ্ঘন হউক ইচ্ছা নাহি প্রিয়তম!
গেল শিশু তব কাছে শোক নাহি তায়,
তুমি তারে স্থান দিও চরণ-ছায়ায়।
রোগে দুঃখে শান্তিহারা শিশু অসহায়,
চলিল তোমার পদে শান্তির আশায়
আত্মার উপরে তার নিত্যনিরঞ্জন!
শান্তির সন্তেষ-উত্স কর বরিষণ।
পিতা মাতা ভ্রাতা ভগ্নী ত্যজিয়া সকলে,
শরণ লইল তব চরণ-কমলে।
ত্যজি রবি ত্যজি শশী ত্যজি বন্ধুদলে,
শরণ লইল তব চরণ-কমলে।
হে শুভ! হে শিব! সনাতন সুধাকর!
হে অনন্ত! হে অব্যয়! হে সত্য শঙ্কর!
চরণ-সরোজে তারে এক বিন্দু স্থান
সৃষ্টি স্থিতিকারী হরি করহ প্রদান।

তোমার নিকটে যাবে আর কারে ভয়
অভয় আনন্দ দান করহ অব্যয়।
বড় আদরের সে যে বড় সোহাগের,
বড় আবদারে সে যে অগাধ স্নেহের।
তোমার নিকটে যাবে এই ভরসায়
পাষাণে বাঁধিয়া হিয়া দিলাম বিদায়।
রোগ জ্বালা দুর্ব্বলতা সব হবে দূর,
আনন্দ আলয়ে পাবে আনন্দ প্রচুর।
কি বলিব দুঃখকথা প্রভু ভগবান!
সেই জ্যেষ্ঠ সেই শ্রেষ্ঠ সেই সে প্রধান
সন্তানের মধ্যে মম সব জান তুমি,
অন্তরযামীর কাছে কি জানাব আমি।
তথাপি তাহাতে দুঃখ করি না ঈশ্বর
তুমি তারে সুখ শান্তি দিও নিরন্তর।
আমি পাপী মহাপাপী মহা দুঃখানলে
অবশ্য হৃদয় মম যাইবেক জ্বলে।
হৃদয় হউক মম পুড়ে ছারখার
তাহারে রাখিও সুখে মিনতি আমার।
আত্মাতে আনন্দ তার উঠুক বিকাশি
বসন্ত কুসুমে যথা সুবাসের রাশি।
অতৃপ্তি অভাব পূর্ণ অনিত্য এভব
বিষতুল্য যাবতীয় বিষয় বিভব।
অল্পকালে ত্যজি সব পবিত্র বালক
চলিল তোমার কাছে পৃথিবীপালক।
সুশীল সুবোধ সে যে ধার্ম্মিক সরল
জগদীশ কর তার আত্মার মঙ্গল।

স্বর্গগত বিনয়ভূষণ দাশগুপ্তের মৃত্যুতে এই শোক-কবিতা লিখিত হইল।

.                  ***************  
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
সুপণ্ডিত চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কার মহাশয়ের মৃত্যুতে
কবি অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্তা
দেবীপ্রসন্ন রায়চৌধুরী সম্পাদিত “নব্যভারত” পত্রিকার ফাল্গুন ১৩১৬ (মার্চ ১৯১০) সংখ্যা
থেকে।


.                ১
কি শুনিনু আজি হায় পণ্ডিত প্রবর
চন্দ্রকান্ত মহাশয় নাহি এ জগতে,
ছুটিয়াছে দেশব্যাপী লোকের লহর,
ভাসিছে ভারত, বঙ্গ অশ্রু-বারি-স্রোতে।

.                ২
চন্দ্রতুল্য দীপ্তি যাঁর ব্যাপ্ত চরাচরে,
চন্দ্রকান্ত মণি তুল্য যাঁর উজ্জ্বলতা,
তিনি আজ ডুবাইয়া শোকের সাগরে
স্বদেশ বিদেশ হায়, নাহি স্বরে কথা,

.                ৩
চলিলেন মৃত্যপুরে, যাঁহার কারণ
প্রধান পণ্ডিতগণ মিলিয়া কাশীতে
মহতী সমিতি এক করিয়া গঠন,
করিয়াছেন শোক ব্যপ্ত করুণ ভাষাতে।

.                ৪
স্বরগ হইত সৃষ্টি যাঁর বক্তৃতায়,
যাঁর সম সুপণ্ডিত নাহি বঙ্গ-ভূমে,
কোথায় গেলেন তিনি মরি হায় হায়,
আবরিয়া বঙ্গভূমি অন্ধকার-ধূমে!

.                  ***************  
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
শ্যামা পাখী
কবি অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্তা
বামাবোধিনী ডিপোজিটরি থেকে ১৩০৪ সালে (১৮৯৭খৃ) প্রকাশিত কবির "প্রীতি ও পূজা" গ্রন্থে
কবিতাটি এই রূপে প্রকাশিত হয়েছিল। মিলনসাগরে প্রকাশ - ৬.৮.২০১৮।


শ্যাম-লতিকার গা’য়                         শ্যামা-পাখী গান গায়,
অতি সুললিত সুরে মোহিয়া ভুবন,
শ্যামল একটী পাতে,                        শিশির ঝরেছে রাতে,
তা দিয়ে পাখীরে ধোয় ধীর সমীরণ।
পাখীর গ্রীবাটী ছুঁয়ে                             একটী পল্লব নুঁয়ে
তাহাতে ফুটিয়া আছে একটী বকুল,
ঊষার আলোক-মালা                     চারি দিক্ করি আলা,
তাহাতে ঘুমায়ে আছে বেহুঁস্ বিভুল।
হঠাৎ প্রভাত-বায়                           সেখানে বহিয়া যায়,
টুপ্ করে পড়ে গেল সাধের কুসুম,
সাপ্ টা সমীর-ভরে                            পল্লব সরিয়া পড়ে,
ঊষার সে আলোকের ভেঙে গেল ঘুল।
পাখী আর তথা নাই,                        চলিয়া গিয়াছে ভাই!
ওই যে উড়িয়া যায় আকাশের গা’য়,
ফিরে আয় শ্যামা-পাখী যাস্ নে কোথায়।

.                  ***************                 
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রাণের দেবতা
কবি অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্তা
বামাবোধিনী ডিপোজিটরি থেকে ১৩০৪ সালে (১৮৯৭খৃ) প্রকাশিত কবির "প্রীতি ও পূজা" গ্রন্থে
কবিতাটি এই রূপে প্রকাশিত হয়েছিল। মিলনসাগরে প্রকাশ - ৬.৮.২০১৮।


তাহারে ছোঁব না আমি সে যে গো দেবতা,
এসেছি পূজিব ব’লে,                        পূজিব হৃদয় খুলে,
নাই বা কহিল কথা---না কহিনু কথা।
কথা ত কথার কথা, কাজ প্রাণে প্রাণে,
দরশ স্বর্গের ধন,                             পরশে কলুষ মন,
দরশন চাহে লোক দেবতার স্থানে।
পরশন হ’তে ভাল দরশন অতি,
দরশ দেবের যোগ্য,                       পরশ পশুর ভোগ্য,
দরশে জ্বলিয়া উঠে ধরমের ভাতি।
আঁখিতে রাখিয়া আঁখি,                  দূর হ’তে চেয়ে দেখি,
দাও গো! এ বুকে বল অগতির গতি!
নাই বা ছুঁইনু অঙ্গ---না কহিনু কথা,
হৃদে রাখি সদা শুচি,                        ভকতি-প্রসূনে পূজি,
দূরে দূরে ভালবাসি প্রাণের দেবতা।

.                  ***************                 
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
অপরাজিতা
কবি অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্তা
বামাবোধিনী ডিপোজিটরি থেকে ১৩০৪ সালে (১৮৯৭খৃ) প্রকাশিত কবির "প্রীতি ও পূজা"
গ্রন্থে কবিতাটি এই রূপে প্রকাশিত হয়েছিল। মিলনসাগরে প্রকাশ - ৬.৮.২০১৮।


উজল চাঁদিনী-রাতে        ফুটিল অপরাজিতা,---
নাহিক রূপের গর্ব্ব,        নাহি হাসি নাহি কথা।
আঁধারের আস্তরণে        বসি বালা নিরিবিলি,
গাঁথিছে নয়ন-লোর ---------সখারে সঁপিবে ডালি।
কবরী খসিয়া গেছে,        আঁচলে লেগেছে কাদা,
উন্মুক্ত চিকুরগুচ্ছ, ----------আধ-ফোটা আধ-মোদা!
আশে পাশে প্রেমাবেশে        ভ্রমর ঘুমা’য়ে আছে,
ভুলেও একটী বার        আ’সেনা তাহার কাছে।
মধু মধু কোরে ফেরে        তাহার পরাণ-বঁধু,
তবুও ত বিষাদিনী        তা’রে চায় শুধু শুধু!
নৈরাশ্যের তীব্র জ্বালা        লুকা’য়ে মরম-তলে,
এখনো সখায় পেলে        সুখে কত কথা বলে।
অতি ধীরে অতি ধীরে        খুলিয়া আঁখির পাতা,
হেরিছে অপরাজিতা        প্রকৃতির নীরবতা।

.                  ***************                 
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
পতিতা রমণী
কবি অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্তা
বামাবোধিনী ডিপোজিটরি থেকে ১৩০৪ সালে (১৮৯৭খৃ) প্রকাশিত কবির "প্রীতি ও পূজা" গ্রন্থে
কবিতাটি এই রূপে প্রকাশিত হয়েছিল। মিলনসাগরে প্রকাশ - ৬.৮.২০১৮।


কোথা যাস্ কোথা যাস্ থাম্ থাম্ থাম্,
যাস্ নে যাস্ নে আর,                        পথে ঘোর অন্ধকার,
নিবিড় জলদাচ্ছন্ন রজনী দ্বিযাম,
কোথা যাস্ কোথা যাস্ থাম্ থাম্ থাম্।
যে পথে যাইতে চাস্,                      সেথায় বিষের রাশ,
বিষে বিষে প্রাণ যাবে রহিবে দুর্নাম,
কোথা যাস্ কোথা যাস্ থাম্ থাম্ থাম্।
ঘোরতর দেশাচার,                        পুড়ে হবি ছারখার,
দাঁড়াতে পাবি না তৃণ! কোন দেশ গ্রাম,
কোথা যাস্ কোথা যাস্ থাম্ থাম্ থাম্।
পিতা মাতা সহোদর,                       সবে হবে পর পর,
ঘৃণাতেও লইবে না কেহ তোর নাম,
কোথা যাস্ কোথা যাস্ থাম্ থাম্ থাম্।
পিছনে অমৃত-গঙ্গা,                        নাই ভয় নাই শঙ্কা,
সোণার শৈবালে ভরা, নাহি দল দাম,
তা ফেলিয়া কোথা যাস্ থাম্ থাম্ থাম্।
পিছনে অমৃত-পুরী,                        রয়েছে জগত যুড়ি,
আনন্দ বিরাজে তাহে পর্ব্বত-প্রমাণ,
তা ফেলিয়া কোথা যাস্ থাম্ থাম্ থাম্।
যেখানে যাইবে ব’লে                        এতটা এসেছ চলে,
সেখানে নরককুণ্ড অশান্তির বাণ,
মহা বিষ মহা বিষ,                         অন্ধকার দশ দিশ,
জ্বলন্ত অনলবৃষ্টি তরঙ্গ তুফান,
না বুঝিয়া কোথা যাস্ থাম্ থাম্ থাম্।
ত্যজিয়া সুধার ধারা                   বিষ-পানে মাতোয়ারা,
বিশ্বময় বিশ্বম্ভর মহান্ মহান্,
না জানিয়া কোথা যাস্ থাম্ থাম্ থাম্।
হোস্ না লো! দিশাহারা,            হোস্ না লো! মাতোয়ারা,
ডুবাস্ না মহিলার সুনাম-বিভব,
সতীত্ব দেবের রশ্মি                        দেবতা আনন্দে বর্ষি,
বাড়ায়েছে পৃথিবীর মহৎ গৌরব।
সতীর মূরতি ধরি                          কনক-আসনোপরি,
পূজিছে ভারতবাসী ভরিয়া পরাণ,
কোথা যাস্ কোথা যাস্ থাম্ থাম্ থাম্।
সতীস্পর্ষে মহা হর্ষ!                          কত দিন কত বর্ষ
সতী-দেহ স্কন্ধে করি ভ্রমিল ত্রিশূলী,
সেই সতী-দেহ ছিঁড়ি,                         পড়িল জগত যুড়ি,
তাই সুপবীত্র তীর্থ পীঠস্থা গুলি।
সীতার সতীত্ব-গাথা,                       ভারতে রয়েছে গাঁথা,
দময়ন্তী সাবিত্রীর অদ্ভুত কাহিনী,
খনা লীলা অরুন্ধতী,                     গান্ধারী কৌশল্যা সতী,
রাজস্থান-সরোবরে পদ্মিনী পদ্মিনী।
সম্মান-রক্ষার হেতু                          বাঁধি নর-মুণ্ডে সেতু
গড়িয়া কীর্তির সম্ভ করিল পয়ান,
সেই এ ভারতভূমি,                         সেই এ রমণী তুমি,
এতই কি হেয় তুচ্ছ হ’ল তব মান?
না না ছি ছি ফিরে আয়!                  অধর্ম্ম ঠেলিয়া পায়,
দেখিবি এখানে কত জুড়াবার স্থান।
তোরি তরে রবি তারা                    ঢালিবে অমিয়-ধারা,
তোরি তরে ফুটি ফুটি উঠিবে কুসুম,
তোরি তরে সরোবর                     গেয়ে যাবে তর তর,
তোরি তরে ফুলরেণু চন্দন কুঙ্কুম।
কোকিলার কলালাপ,                        লতার নিদাঘ তাপ,
পাপিয়ার পিউ পিউ তোমারি কারণ,
এলায়ে জলদ-চুল,                            দেখিবে চপলাকুল
তোমাকেই রূপ-রত্ন করে বিতরণ।
কুসুমের কোমলতা,                       শিশিরের শিতলতা,
তারার স্তিমিত আলো কত মধুময়,
নাহি সুখ নাহি শান্তি,                      এ কথা সকলি ভ্রান্তি,
মানব-জগত সব সুখ-অভিনয়।
গাছে গাছে বকফুল,                         শাখে শাখে বুলবুল
সাধিয়া ঢালিবে সুখ তোমার সমুখে,
অনধ নয়ন খুলি                        চাবে যবে ভাবে ভুলি,
তখনি অধীর হবে সুখে সুখে সুখে।
জীবন-যৌবন-ফুল                            হবে শীঘ্র নিরমূল,
নরের সুশমাত্র চিরস্থায়ী ভবে,
আর যদি পাপ কাজে                      চিরকাল রহ মজে,
তা হইলে দুর্গতির অবধি না র’বে।

.                  ***************                 
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
মধুর পবন
কবি অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্তা
অধ্যাপক বিধুভূষণ গোস্বামী ও অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ ভদ্র সম্পাদিত “সম্মিলন” (ঢাকা রিভিউ ও সম্মিলন)
পত্রিকার আষাঢ় ১৩১৮ (জুলাই ১৯১১) সংখ্যায় প্রকাশিত। মিলনসাগরে প্রকাশ - ৬.৮.২০১৮।


কোথা হতে এস তুমি মধুর পবন ?
কার আজ্ঞ৩মত আসি, পরশ কেশের রাশি,
অশরীরী দেহে দেহ কর পরশন।
পলকে আবার কোথা কর পলায়ন ?


যে স্থানে যে গীত তুমি করহ শ্বরণ,
তাহাই বহিয়া আনি, মুগ্ধ কর যত প্রাণী,
কোথায় নিঃশেষ তব, কোথায় জনম ?


উচ্চপাহাড়ের শির হিমানী প্রধান,
শ্বেত প্রস্তরের স্তূপ, দুগ্ধফেণ-নিত রূপ,
প্রবেশি তাহার মাঝে ঠাণ্ডা কর প্রাণ,


বজ্রের পতন তুমি কর অনুভব,
ভূমিকম্পে ধরা যবে, সঘনে কম্পিত হবে,
সে কম্পনো অনুভব কর তুমি সব।


হে সমীর।
সিন্ধু পার হয়ে যবে যাও,
খুলিয়া তরল প্রাণ, তালমান-হীন গান,
প্রতিলম্ফে প্রতিঝম্পে অবিরত গাও।


বসন্তের সদ্দ ফোটা পুষ্পের কেয়ারী,
যখন পরশ কর, তখনও মনোহর,
সুরে ও বেসুরে গান গাও প্রাণ ভরি।


অল্প অন্ধকারাবৃত বন-ভূমি দিয়া
যখন বহিয়া যাও তখনও গান গাও,
সে গীতে নিস্তব্ধ ছায়া উঠে শিহরিয়া।


রসাল তরুর শিরে পাখীর বাসায়
অথবা শ্মশানে যথা, ছাইমাখা তৃণলতা,
যাও যথা চিতা-ধৌত মরানদী ধায়।


তোমার পরশে বায়ু! কাননে প্রান্তরে,
চমকে জন্তুর দল, জল করে কোলাহল,
তোমারি পরশে বারি বাষ্পরূপে উড়ে।

.                  ***************                 
.                                                                               
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*