স্টেন গানের বুলেটে বুলেটে আমার ঝাঁঝরা বুকের উপরে ফুটে উঠেছে যে মানচিত্র--- তার নাম ভারতবর্ষ।
আমার প্রতিটি রক্তের ফোঁটা দিয়ে চা-বাগিচায় কফি খেতে, কয়লা-খাদানে, পাহাড়ে-অরণ্যে লেখা হয়েছে যে ভালোবাসা--- তার নাম ভারতবর্ষ।
আমার অশ্রুর জলসেচে আর হাড়ের ফসফেট-এ খুনীর চেয়েও রুক্ষ কঠোর মাটিতে বোনা হয়েছে যে-অন্তহীন ধান ও গানের স্বপ্ন--- তার নাম ভারতবর্ষ।
আমার ঠাণ্ডা মুখের ওপর এখন গাঢ় হয়ে জমে আছে ভাক্ রা নাঙ্গালের পাথুরে বাঁধের গমেভীর ছায়া। ডিগবয়ের বুক থেকে মায়ের দুধের মত উঠে আসা তোলো ভেসে যাচ্ছে আমার সারা শরীর।
কপাল থেকে দাঙ্গার রক্ত মুছে ফেলে আমাকে বুকে ক’রে তুলে নিতে এসেছে আমেদাবাদের সুতোকলের জঙ্গী মজুর। আমার মৃতদেহের পাহারাদার আজ প্রতিটি হাল বহনকারী বলরাম। প্রতিটি ধর্ষিতা আদিবাসী যুবতীর শোক নয় ক্রোধের আগুনে দাউ দাউ জ্বলে যাচ্ছে আমার শেষ শয্যা।
ভরাট গর্ভের মত আকাশে আকাশে কেঁপে উঠছে মেঘ। বৃষ্টি আসবে। ঘাতকের স্টেনগান আর আমার মাঝবরাবর ঝরে যাবে বরফ-গলা গঙ্গোত্রী। আর একটু পরেই প্রতিটি মরা খাল-বিল-পুকুর কানায় কানায় ভরে উঠবে আমার মায়ের চোখের মত। প্রতিটি পাথর ঢেকে যাবে উদ্ভিদের সবুদ চুম্বনে।
ওড়িশির ছন্দে ভারতনাট্যমের মুদ্রায় সাঁওতালী মাদলে আর ভাঙরার আলোড়নে জেগে উঠবে তুমুল উত্সবের রাত। সেই রাতে সেই তারায় ফেটে পরা মেহফিলের রাতে তোমরা ভুলে যেও না আমাকে যার ছেঁড়া হাত, ফাঁসা জঠর, উপড়ে আনা কল্ জে, ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু, রক্ত, ঘাম মাইল-মাইল অভিমান আর ভালোবাসার নাম . স্বদেশ . স্বাধীনতা . ভারতবর্ষ॥
. তুমি একা ঘরে বসে রবে . না কি পা টিপে পা টিপে যাবে ? . যদি হাওয়া ডাকে চুপি-চুপি . ঝড় খুলে ফেলে তার টুপি, . যদি লাল নীল কালো মাছ . দীঘি জুড়ে শুরু করে নাচ . ঘরে বসে রবে না কি যাবে . সেই ঝলমলে উত্সবে ?
মায়ের সঙ্গে ঠোঙা বানায়., বিকেলে খেলে খো খো, বনগাঁ থেকে বার্লিনে যায়, সাধ্যি থাকে রোখো। মেয়ের বাবা সকাল-সন্ধে চৌমাথাতে হকার, ছোট বোনটি ফাইভে পড়ে, এখনও দাদা বেকার। তবুও খো খো খেলুড়ে মেয়ে লড়ছে এমন লড়াই তাকে নিয়েই দেশসুদ্ধ আমজনতার বড়াই।
হাত ঝুমঝুম পা ঝুমঝুম সিয়ারামের খেলা খেলতে খেলতে সাঁঝের কোলে গড়িয়ে আসে বেলা, ভাতের গন্ধে লাফিয়ে ওঠে খিদের নাড়িভুঁড়ি বালিকা তবু উজানভরা স্বপ্ন করে চুরি, মায়ের সঙ্গে ঠোঙা বানায়, বিকেলে খেলে খো-খো খেলার পাতায় সেই মেয়েটির স্বপ্ন ছেপে রেখো।
চলছে চলছে--- . এক মূকাভিনয় তার খেজুরের মাথার ওপর খাঁড়ার মতো দাঁড়িয়ে দ্যাখে অলপ্পেয়ে সময়।
ওর মা মরেছে আটষট্টির বন্যায় বাপ এ সনের খরায়, ওকে ছুঁয়ো না ছুঁয়ো না ছিঃ ও যে যমের অরুচি!
লে লে ছে আনা লে যা লিবি ছে আনা আমি রাজার ভাতিজা---এসেছি সদর থেকে গাঁও বুড়ো থেকে ঘরের ঝিয়ারি, বাল-বাচ্চাও শুধোয়--- তুমি কোঁচড়ো এনেছো কি ? এনেছি---এনেছি প্রতিশ্রুতি। আমি এনেছি টি আর, জি আর সেচ প্রকল্প, সার, গোরু, আমি ছ’হাজার নলকূপে জলে নদী করে দেব মরু। এই আমিন, এদিকে এসো, ওরা যা বলে, সবটা টোকো খুব ভালো করে মাপো-জোকো যত দাবি আছে মোটা সরু--- আমি ছ’হাজার নলকূপে জলে নদী করে দেব মরু।