কবি অমিতাভ গুপ্তর কবিতা
অজন্তা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
মহানির্বাণের দৃশ্যে তথাগতঃ স্তম্ভের আড়ালে
ক্রমশ স্পষ্ট হয় দিগন্তে ছড়ানো তার দেহের ভঙ্গিমা
অজন্তার ছাব্বিশ নম্বর গুহা দক্ষিণ প্যানেলে
কয়েকটি শিশুর মুখঃ অন্যদিকে, আর্ত তথাগত।
কবি অমিতাভ গুপ্ত
মহানির্বাণের দৃশ্যে তথাগতঃ স্তম্ভের আড়ালে
ক্রমশ স্পষ্ট হয় দিগন্তে ছড়ানো তার দেহের ভঙ্গিমা
অজন্তার ছাব্বিশ নম্বর গুহা দক্ষিণ প্যানেলে
কয়েকটি শিশুর মুখঃ অন্যদিকে, আর্ত তথাগত।
অপহরণ
কবি অমিতাভ গুপ্ত
দিনের দেহ গভীর হাতে ছুঁয়েছে যৌবন
অলক্ষ্যে তাই রৌদ্য হাসে বনের চারিপাশে ;
হঠাৎ কাঁপে বনের হৃদয় বিপন্ন নির্জন।
যা ছিল এই নীরবতায় ব্যাপ্তি ব্যাকুলতা
ত্রস্ত প্রজাপতির ডানায় সহসা এক শঙ্কা জানায়
যেমন কিশোর জানে প্রথম যৌনপ্রবণতা।
অপাপবিদ্ধ দেবালয়ের দীর্ঘ ছায়া দূরে
মৃত মৃগের চোখের মতো অসীম অর্চনায় নত
সহসা সেও চমকে ওঠে কঠিন অশ্বক্ষুরে।
বহুখ্যাত কৃষ্ণ ঘোড়া আরোহী বর্বর
ভ্রমণ করে দেশে দেশে মধ্যদিনে অবশেষে
গোপন দেবালয়ে এলো প্রাচীন তস্কর।
কবি অমিতাভ গুপ্ত
দিনের দেহ গভীর হাতে ছুঁয়েছে যৌবন
অলক্ষ্যে তাই রৌদ্য হাসে বনের চারিপাশে ;
হঠাৎ কাঁপে বনের হৃদয় বিপন্ন নির্জন।
যা ছিল এই নীরবতায় ব্যাপ্তি ব্যাকুলতা
ত্রস্ত প্রজাপতির ডানায় সহসা এক শঙ্কা জানায়
যেমন কিশোর জানে প্রথম যৌনপ্রবণতা।
অপাপবিদ্ধ দেবালয়ের দীর্ঘ ছায়া দূরে
মৃত মৃগের চোখের মতো অসীম অর্চনায় নত
সহসা সেও চমকে ওঠে কঠিন অশ্বক্ষুরে।
বহুখ্যাত কৃষ্ণ ঘোড়া আরোহী বর্বর
ভ্রমণ করে দেশে দেশে মধ্যদিনে অবশেষে
গোপন দেবালয়ে এলো প্রাচীন তস্কর।
আমাদের রাত্রিবোধ পূর্ণ হল
কবি অমিতাভ গুপ্ত
আমাদের রাত্রিবোধ পূর্ণ হল আকস্মিকে। কোন্ মরুভূমি থেকে
চাঁদ উঠে এল
তারপর মহাপূর্ণিমার মতো আঁধার ঘনালো
এই সব শান্তি নিয়ে মরে যাব। একদিন উপাসনহীন
অস্বচ্ছ মন্ত্রের মতো আমারও জীবন থেকে ধূপ ঝরে যাবে
তোমাদের নদীতে তখন যেন সাগর ভেসেছে
মনে হবে একটি আকাশভরা বালুচর, অনাসক্ত, প্রসারণশীল
কবি অমিতাভ গুপ্ত
আমাদের রাত্রিবোধ পূর্ণ হল আকস্মিকে। কোন্ মরুভূমি থেকে
চাঁদ উঠে এল
তারপর মহাপূর্ণিমার মতো আঁধার ঘনালো
এই সব শান্তি নিয়ে মরে যাব। একদিন উপাসনহীন
অস্বচ্ছ মন্ত্রের মতো আমারও জীবন থেকে ধূপ ঝরে যাবে
তোমাদের নদীতে তখন যেন সাগর ভেসেছে
মনে হবে একটি আকাশভরা বালুচর, অনাসক্ত, প্রসারণশীল
এই জীবনে
কবি অমিতাভ গুপ্ত
এই জীবনের সঙ্গী আমার কালোবেড়াল, ভূতদেখানো রাত্রিবেলা
শিউরে ওঠে যার শরীরে, যেমন করে অনেক নীচে পাতাল ছুঁয়ে
স্বর্গে যাওয়ার রাস্তা হঠাৎ হারিয়ে ফেলা ;
এই জীবনে দাসানুদাস, মেয়েপুরুষ--গন্ধবণিক--তিনভিখারি
সবাই আমায় শাসন করে ----- চোখের নীচে গর্ত করে বারুদ ঢালে,
তাদের পায়ের কাছেই শুধু বসতে পারি ;
এই জীবনের ভালোবাসা বুকের কাছে বরফ নিয়ে ঘুমিয়ে থাকা
এই জীবনের বিদেশভ্রমণ খুনীর ভয়ে অনেকদূরে পালিয়ে যাওয়া
স্মৃতি শুধুই ভুলঠিকানা মনে রাখা ;
কালোবেড়াল তবুও থাকে সঙ্গে আমার, যেমন ছিল মায়ের চোখে
যখন আমি কিশোর ছিলাম, আছে আমার ছায়ার মধ্যে, জলপিপাসায়
তৃষ্ণা এবং ছায়াই ভাবে অন্যলোক।
কবি অমিতাভ গুপ্ত
এই জীবনের সঙ্গী আমার কালোবেড়াল, ভূতদেখানো রাত্রিবেলা
শিউরে ওঠে যার শরীরে, যেমন করে অনেক নীচে পাতাল ছুঁয়ে
স্বর্গে যাওয়ার রাস্তা হঠাৎ হারিয়ে ফেলা ;
এই জীবনে দাসানুদাস, মেয়েপুরুষ--গন্ধবণিক--তিনভিখারি
সবাই আমায় শাসন করে ----- চোখের নীচে গর্ত করে বারুদ ঢালে,
তাদের পায়ের কাছেই শুধু বসতে পারি ;
এই জীবনের ভালোবাসা বুকের কাছে বরফ নিয়ে ঘুমিয়ে থাকা
এই জীবনের বিদেশভ্রমণ খুনীর ভয়ে অনেকদূরে পালিয়ে যাওয়া
স্মৃতি শুধুই ভুলঠিকানা মনে রাখা ;
কালোবেড়াল তবুও থাকে সঙ্গে আমার, যেমন ছিল মায়ের চোখে
যখন আমি কিশোর ছিলাম, আছে আমার ছায়ার মধ্যে, জলপিপাসায়
তৃষ্ণা এবং ছায়াই ভাবে অন্যলোক।
কণারকের মেয়ে
কবি অমিতাভ গুপ্ত
সন্ধ্যা যখন সরস্বতীর মতো
আভার কাছে রূপ অরূপে নত
জ্যোত্স্নাপূর্ণিমায়
না পাওয়া কোন তিথির মতন চুম্বনে উদ্যত
পূর্ণ ছুঁয়ে যায়
স্বপ্নজাগর অন্ধকারের মতো মধুর স্নেহে
আমার দিকে ছড়িয়ে পড়ে কনারকের মেয়ে
২
তাহলে তীব্র সান্তের অচাপল্যে
কনারকবঁধূ জ্বালবে আমাকে জ্বালবে
যখন নিবিড় হবে সব প্রস্তুতি
ক্ষয়ের মতন ঝরে যাবে বিচ্যুতি
তখনই আবার মুগ্ধের কাছে ফিরেছি
কবি অমিতাভ গুপ্ত
সন্ধ্যা যখন সরস্বতীর মতো
আভার কাছে রূপ অরূপে নত
জ্যোত্স্নাপূর্ণিমায়
না পাওয়া কোন তিথির মতন চুম্বনে উদ্যত
পূর্ণ ছুঁয়ে যায়
স্বপ্নজাগর অন্ধকারের মতো মধুর স্নেহে
আমার দিকে ছড়িয়ে পড়ে কনারকের মেয়ে
২
তাহলে তীব্র সান্তের অচাপল্যে
কনারকবঁধূ জ্বালবে আমাকে জ্বালবে
যখন নিবিড় হবে সব প্রস্তুতি
ক্ষয়ের মতন ঝরে যাবে বিচ্যুতি
তখনই আবার মুগ্ধের কাছে ফিরেছি
কল্পনা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
কল্পনা চাওলার আগে জন্ম নিয়ে শূণ্যতাকে কিছু কিছু প্রশ্ন করেছি
তারপর, স্মৃতি ও মায়ার শেষে তারপর, কোনো এক রাতে
সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তুপে ঝুঁকে পড়েছিল তবুও উত্তরোদ্যত এই
দীর্ণ, যাকে কল্পনা চাওলার মতো সৌন্দর্যও সম্পূর্ণ মানেনি
শান্তিময় সপ্রতিভ পরিণামহীন চরাচরে
তাই তারা মুক্ত যারা অযাচিত। পৃথিবীর সমুদ্রে দোলানো
দিনের প্রহরগুলি স্তবে সূর্যান্তরে
ভিখারির গান হয়ে কখন গিয়েছে ঝরে। আঁধারে, গভীরতর নক্ষত্রের মতো
কল্পনা চাওলার মূঢ় রূপভস্ম পুনর্বার আমার প্রশ্নকে স্পর্শ করে
কবি অমিতাভ গুপ্ত
কল্পনা চাওলার আগে জন্ম নিয়ে শূণ্যতাকে কিছু কিছু প্রশ্ন করেছি
তারপর, স্মৃতি ও মায়ার শেষে তারপর, কোনো এক রাতে
সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তুপে ঝুঁকে পড়েছিল তবুও উত্তরোদ্যত এই
দীর্ণ, যাকে কল্পনা চাওলার মতো সৌন্দর্যও সম্পূর্ণ মানেনি
শান্তিময় সপ্রতিভ পরিণামহীন চরাচরে
তাই তারা মুক্ত যারা অযাচিত। পৃথিবীর সমুদ্রে দোলানো
দিনের প্রহরগুলি স্তবে সূর্যান্তরে
ভিখারির গান হয়ে কখন গিয়েছে ঝরে। আঁধারে, গভীরতর নক্ষত্রের মতো
কল্পনা চাওলার মূঢ় রূপভস্ম পুনর্বার আমার প্রশ্নকে স্পর্শ করে
কামাখ্যা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
যদি ওই প্রতিমার স্থির তিল ছুঁয়ে একটি তিতির
কিশোরের মতো যাই, ভেসে চলে যাই
নবান্নের গানে তিলোত্তমা একদিন সমস্ত ক্ষমায়
ভরে দেবে : যেন এক প্রাচীন কাহিনী
পেরিয়ে চলছে ইরাবতী ব্রহ্মপুত্র, আহোমের তীর
বিহু-লোকসুরে বাজে বাংলার খঞ্জনি
প্রতিমার তিল আর মাটি আজো চিনি, আজো মাথা পাতি
গঙ্গাজলে, কামাখ্যায় তিতির সাজাই
কবি অমিতাভ গুপ্ত
যদি ওই প্রতিমার স্থির তিল ছুঁয়ে একটি তিতির
কিশোরের মতো যাই, ভেসে চলে যাই
নবান্নের গানে তিলোত্তমা একদিন সমস্ত ক্ষমায়
ভরে দেবে : যেন এক প্রাচীন কাহিনী
পেরিয়ে চলছে ইরাবতী ব্রহ্মপুত্র, আহোমের তীর
বিহু-লোকসুরে বাজে বাংলার খঞ্জনি
প্রতিমার তিল আর মাটি আজো চিনি, আজো মাথা পাতি
গঙ্গাজলে, কামাখ্যায় তিতির সাজাই
কুশল
কবি অমিতাভ গুপ্ত
ভালো আছি। কী খবর। কেমন আছেন।
একজন মাথা নাড়ল।
একজন লেজ।
একজন সুখদুঃখ থেকে খুব গভীর আসক্তি নিয়ে
হলদে বালুর চোখে তাকিয়ে রইল।
সহ্য হয় বলেই শুধু সকলে বেঁচে আছে
এখনো।
প্রাণ উথালপাতাল, শিরায় টান, চারিদিকে জাল,
ধাতুর গানের
এবং তিনকে তিন দিয়ে গুণ করে তার সঙ্গে দশ যোগ দিতে দিতে
নেয়েরা কুড়িতে বুড়ি হয়ে যাওয়ার দুঃখ করে গুনগুনিয়ে
এবং বিশ বছরের যুবক সটান রাস্তায় ছুরির ঘা খেয়ে শুয়ে থাকে।
এই এক সময়
যেন চোরাবালি পায়ের নীচে এমন করে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে
মানুষ ও লোকজন
কী খবর---এর দুদিকে ঝলসে--ওঠা হাসি
চোরাবালি চোখে নিয়ে কুড়ি বছরের এক কঠিনা যুবতী
দাঁড়িয়ে রইল,
ওকে ভালোবাসা না দিলে হাঁটু মুড়ে ক্ষমা না চাইলে
এই পৃথিবীতে আর শিশুরা জন্ম নেবে না।
পথে কতদিন দেখা হয়
কত ভালোমানুষের সাথে আরো কত ভালুকমানুষেরও সাথে।
কেউ কেউ মাথা নাড়ে।
কেউ আবার লেজ।
শুধু সহ্য হয় বলেই এখনো সকলে বেঁচে আছে।
কবি অমিতাভ গুপ্ত
ভালো আছি। কী খবর। কেমন আছেন।
একজন মাথা নাড়ল।
একজন লেজ।
একজন সুখদুঃখ থেকে খুব গভীর আসক্তি নিয়ে
হলদে বালুর চোখে তাকিয়ে রইল।
সহ্য হয় বলেই শুধু সকলে বেঁচে আছে
এখনো।
প্রাণ উথালপাতাল, শিরায় টান, চারিদিকে জাল,
ধাতুর গানের
এবং তিনকে তিন দিয়ে গুণ করে তার সঙ্গে দশ যোগ দিতে দিতে
নেয়েরা কুড়িতে বুড়ি হয়ে যাওয়ার দুঃখ করে গুনগুনিয়ে
এবং বিশ বছরের যুবক সটান রাস্তায় ছুরির ঘা খেয়ে শুয়ে থাকে।
এই এক সময়
যেন চোরাবালি পায়ের নীচে এমন করে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে
মানুষ ও লোকজন
কী খবর---এর দুদিকে ঝলসে--ওঠা হাসি
চোরাবালি চোখে নিয়ে কুড়ি বছরের এক কঠিনা যুবতী
দাঁড়িয়ে রইল,
ওকে ভালোবাসা না দিলে হাঁটু মুড়ে ক্ষমা না চাইলে
এই পৃথিবীতে আর শিশুরা জন্ম নেবে না।
পথে কতদিন দেখা হয়
কত ভালোমানুষের সাথে আরো কত ভালুকমানুষেরও সাথে।
কেউ কেউ মাথা নাড়ে।
কেউ আবার লেজ।
শুধু সহ্য হয় বলেই এখনো সকলে বেঁচে আছে।
কোজাগরী
কবি অমিতাভ গুপ্ত
আমিও উঠেছি জেগে, নক্ষত্রবিশ্বের উতরোলে।
যখন আদিম পাতা জলের এমিবা ছেড়ে ধীরে ধীরে জাগে
ঘন হয় মাটি
যখন জ্যোত্স্নায় ডানা মেলে দিয়ে উড়ে যায় মযুরের প্রথম শাবক
ছায়া পড়ে উর্বশীর চেখে।
কবি অমিতাভ গুপ্ত
আমিও উঠেছি জেগে, নক্ষত্রবিশ্বের উতরোলে।
যখন আদিম পাতা জলের এমিবা ছেড়ে ধীরে ধীরে জাগে
ঘন হয় মাটি
যখন জ্যোত্স্নায় ডানা মেলে দিয়ে উড়ে যায় মযুরের প্রথম শাবক
ছায়া পড়ে উর্বশীর চেখে।
ক্ষমা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
সমস্ত সাম্রাজ্যবোধ ঝরে গেলে ঊষার উদিত সেই
সম্রাজ্ঞীর কথা মনে পড়ে
সূর্যাস্তের মতো তার অধরদু’টিকে মনে পড়ে
রাত্রির স্তব্ধতা নিয়ে দু’টি হাত-----তাও মনে পড়ে
ছায়াপথে ছায়াপথে ভেসে যাওয়া দৃষ্টির নিঃস্বতা আর নক্ষত্রের বেদি দীর্ণ ক’রে
চলে যাওয়া ঋজুক্ষিপ্র পায়ের নূপুর মনে পড়ে
গভীর ভ্রমরভরা আরেকটি ভোর, তারপর, আমারই উদ্দেশে
পাঠাল সে------যখন সাম্রাজ্য নেই জানা ও অজানা নেই
সম্রাজ্ঞীও নেই
একটি ক্ষমার মতো হিরন্ময় মুকুটের দোলাচল শুধু পড়ে আছে
কবি অমিতাভ গুপ্ত
সমস্ত সাম্রাজ্যবোধ ঝরে গেলে ঊষার উদিত সেই
সম্রাজ্ঞীর কথা মনে পড়ে
সূর্যাস্তের মতো তার অধরদু’টিকে মনে পড়ে
রাত্রির স্তব্ধতা নিয়ে দু’টি হাত-----তাও মনে পড়ে
ছায়াপথে ছায়াপথে ভেসে যাওয়া দৃষ্টির নিঃস্বতা আর নক্ষত্রের বেদি দীর্ণ ক’রে
চলে যাওয়া ঋজুক্ষিপ্র পায়ের নূপুর মনে পড়ে
গভীর ভ্রমরভরা আরেকটি ভোর, তারপর, আমারই উদ্দেশে
পাঠাল সে------যখন সাম্রাজ্য নেই জানা ও অজানা নেই
সম্রাজ্ঞীও নেই
একটি ক্ষমার মতো হিরন্ময় মুকুটের দোলাচল শুধু পড়ে আছে
গোপীবল্লভপুর
কবি অমিতাভ গুপ্ত
বনের কাছে
বারুদজ্বলা মাটি
মাটিতে কার নাম লিখেছে পুরোনো বন্ধুরা
চিতাবাঘের
থাবায় ছেঁড়া পাথর
পাথরে বুক পেতেছিল পুরোনো বন্ধুরা
নীলাভ জয়
কাঁটাতারের বেড়ায়
অপরাজিতায় জড়িয়ে আছে পুরোনো বন্ধুরা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
বনের কাছে
বারুদজ্বলা মাটি
মাটিতে কার নাম লিখেছে পুরোনো বন্ধুরা
চিতাবাঘের
থাবায় ছেঁড়া পাথর
পাথরে বুক পেতেছিল পুরোনো বন্ধুরা
নীলাভ জয়
কাঁটাতারের বেড়ায়
অপরাজিতায় জড়িয়ে আছে পুরোনো বন্ধুরা
চলো জুনপুট
কবি অমিতাভ গুপ্ত
সূর্যোদয়ের কোনো না-দেখা দৃশ্যের দিকে শুরু হল আমাদের দৌড়
যেখানে পাথরখন্ড ঈষৎ রক্তিম
যেখানে ভাসানিজাল টেনে আনে হেলে বুনো এবং আকাট
যেখানে অস্থির ওই বালিযাড়ি, জলের উজ্জ্বলভূমি ঝাউতরঙ্গের দিকে
দ্রুত উঠে আসে
নিসারৎ বসে আছে চায়ের দোকানে
চুল্লিতে জাগেনি আঁচ, এত অন্তর্গূঢ় ভোর, বাবুরা ওঠে নি
ট্যুরিস্টকাকলিরত মৃগয়ায় দশরথ ঋষিবালকের বুকে তীর ছুঁড়ে মারে
যেখানে আমারো ঘরে ঘোর ঘূর্ণিজল
চলো চলো উদিত হওয়ার আগে যে কোনো সূর্যের দিকে চলো
যতদিন এঁটোভাত খুঁটে বাঁচি ততদিন সমুদ্র আমার
অসম্ভব সূর্যোদয়ের দিকে দৌড়োতে দৌড়োতে বাঁচি, সমুদ্র আমার
তরঙ্গের মতো ওই ফেটে যায় নীল হরধনু
শ্রেণীবদ্ধ নৌকোগুলি, অতিথিবত্সল চিল জ্যা-রোপণ করে
স্বর্ণগরুড়ের ডানা মুড়ে নেয় মাছের ট্রলার
উল্লাসভ্রমণে তবু বোঝা যায় উত্তোলিত খাঁড়িগুলি কিভাবে নোয়ানো
চলো জুনপুট চলো, দেখে আসি মানিক ব্যানার্জির
ঝল্সানো মুখ
প্রলয়পয়োধিজলে উঁকি মারে হিমালয় শুশুক শুশুক
জরাগাছ ভরে ওঠে ফলে ও অঙ্কুরে
আমাদের ঘরে এলে মাদুর ও হাসিমুখ পাবে
নিসারৎ বলেছিল, চন্দনেশ্বরের শিব কিছু দূরে, দীঘাসৈকতের চেয়ে
আরো বেশি ভ্রমণ যাদের
পোস্টারবাহক হওয়া ছাড়া আর অন্য কোনো যোগ্যতা ছিল না আমার
আবার নিয়েছি পিঠে পোস্টার, আগুনের নীল
চলো চলো মিছিলে মিলিয়ে চলো মিছিলে সামিল
যে--কোনো পোস্টারে আঁকা নিসারের মুখ
যে--কোনো পোস্টারে আঁকা শিবের গাজন
যে--কোনো পোস্টার নিয়ে অস্বমেধযজ্ঞে যাওয়া যায়
পরমান্ন রাঁধা হয় হিংস্র ভ্রূণের আঁচে : নিসারের বয়েস বেড়েছে
সমুদ্রে নেমেছে তারই ছোটো ভাই সম্পতির ছেলে
কাল মাঝরাতে দ্রুত ঝড়ের খবর উড়ে এসেছিল রেডিয়োতড়িতে
আমাকে ফাঠাও কেন নির্বাসনে বিশাল কৈকেয়ী
মনে পড়ে সত্তরদশক, মুক্তি, এমনই বন্যার টানে গঙ্গা ও কাবেরী
এবার চলেছি নীল হাওয়ায় দিয়েছে শান বাতাসের দাঁত
ওই দেখো, মাছের আঁশের মতো জেলেদের পিঠ
জাগো হে যুগল লবকুশ
আরো শোনো, ভেজাবালি বিঁধে ওই আছড়ায় সাপের শরীর
ভরাকোটালের ব্যূহ ফসকায় সমুদ্রঘোটক
অতর্কিত সেতুবন্ধনের পরে সূর্যোদয়ের দিকে দৌড়োতে দৌড়োতে
তখনই যুদ্ধের শুরু, টমিগান, ফুঁসে ওটা বোমারু বিমান
জলসেনানীরা ওই রুখে দেয় দিগন্তের ঢাল
ছুটে আসে ভিন্দিপাল শূল শক্তি অথবা পরশু
মেঘের আড়ালে কালো রথ
স্বনিত রক্তের কাদা, অপ্রতিভ পড়ে থাকে রাবণের সোনার কিরীট
২
আমার প্রসঙ্গ তাই অজগর। জানকীর মুখ
এদিকে অশোকবনে শীতের পদ্মের মতো ফুটে আছে ঈষৎ উত্সুক
ধ্বনি গুলি ফেটে যায় সীমাচলে সমুদ্রস্ফটিকে
আমার ধনুক জুড়ে রুদ্ধ জ্যা যেমন মেলেছি
চোখে পড়ে মাটির গর্ভের কাছে নিরুপম নতুন গহ্বর
কবি অমিতাভ গুপ্ত
সূর্যোদয়ের কোনো না-দেখা দৃশ্যের দিকে শুরু হল আমাদের দৌড়
যেখানে পাথরখন্ড ঈষৎ রক্তিম
যেখানে ভাসানিজাল টেনে আনে হেলে বুনো এবং আকাট
যেখানে অস্থির ওই বালিযাড়ি, জলের উজ্জ্বলভূমি ঝাউতরঙ্গের দিকে
দ্রুত উঠে আসে
নিসারৎ বসে আছে চায়ের দোকানে
চুল্লিতে জাগেনি আঁচ, এত অন্তর্গূঢ় ভোর, বাবুরা ওঠে নি
ট্যুরিস্টকাকলিরত মৃগয়ায় দশরথ ঋষিবালকের বুকে তীর ছুঁড়ে মারে
যেখানে আমারো ঘরে ঘোর ঘূর্ণিজল
চলো চলো উদিত হওয়ার আগে যে কোনো সূর্যের দিকে চলো
যতদিন এঁটোভাত খুঁটে বাঁচি ততদিন সমুদ্র আমার
অসম্ভব সূর্যোদয়ের দিকে দৌড়োতে দৌড়োতে বাঁচি, সমুদ্র আমার
তরঙ্গের মতো ওই ফেটে যায় নীল হরধনু
শ্রেণীবদ্ধ নৌকোগুলি, অতিথিবত্সল চিল জ্যা-রোপণ করে
স্বর্ণগরুড়ের ডানা মুড়ে নেয় মাছের ট্রলার
উল্লাসভ্রমণে তবু বোঝা যায় উত্তোলিত খাঁড়িগুলি কিভাবে নোয়ানো
চলো জুনপুট চলো, দেখে আসি মানিক ব্যানার্জির
ঝল্সানো মুখ
প্রলয়পয়োধিজলে উঁকি মারে হিমালয় শুশুক শুশুক
জরাগাছ ভরে ওঠে ফলে ও অঙ্কুরে
আমাদের ঘরে এলে মাদুর ও হাসিমুখ পাবে
নিসারৎ বলেছিল, চন্দনেশ্বরের শিব কিছু দূরে, দীঘাসৈকতের চেয়ে
আরো বেশি ভ্রমণ যাদের
পোস্টারবাহক হওয়া ছাড়া আর অন্য কোনো যোগ্যতা ছিল না আমার
আবার নিয়েছি পিঠে পোস্টার, আগুনের নীল
চলো চলো মিছিলে মিলিয়ে চলো মিছিলে সামিল
যে--কোনো পোস্টারে আঁকা নিসারের মুখ
যে--কোনো পোস্টারে আঁকা শিবের গাজন
যে--কোনো পোস্টার নিয়ে অস্বমেধযজ্ঞে যাওয়া যায়
পরমান্ন রাঁধা হয় হিংস্র ভ্রূণের আঁচে : নিসারের বয়েস বেড়েছে
সমুদ্রে নেমেছে তারই ছোটো ভাই সম্পতির ছেলে
কাল মাঝরাতে দ্রুত ঝড়ের খবর উড়ে এসেছিল রেডিয়োতড়িতে
আমাকে ফাঠাও কেন নির্বাসনে বিশাল কৈকেয়ী
মনে পড়ে সত্তরদশক, মুক্তি, এমনই বন্যার টানে গঙ্গা ও কাবেরী
এবার চলেছি নীল হাওয়ায় দিয়েছে শান বাতাসের দাঁত
ওই দেখো, মাছের আঁশের মতো জেলেদের পিঠ
জাগো হে যুগল লবকুশ
আরো শোনো, ভেজাবালি বিঁধে ওই আছড়ায় সাপের শরীর
ভরাকোটালের ব্যূহ ফসকায় সমুদ্রঘোটক
অতর্কিত সেতুবন্ধনের পরে সূর্যোদয়ের দিকে দৌড়োতে দৌড়োতে
তখনই যুদ্ধের শুরু, টমিগান, ফুঁসে ওটা বোমারু বিমান
জলসেনানীরা ওই রুখে দেয় দিগন্তের ঢাল
ছুটে আসে ভিন্দিপাল শূল শক্তি অথবা পরশু
মেঘের আড়ালে কালো রথ
স্বনিত রক্তের কাদা, অপ্রতিভ পড়ে থাকে রাবণের সোনার কিরীট
২
আমার প্রসঙ্গ তাই অজগর। জানকীর মুখ
এদিকে অশোকবনে শীতের পদ্মের মতো ফুটে আছে ঈষৎ উত্সুক
ধ্বনি গুলি ফেটে যায় সীমাচলে সমুদ্রস্ফটিকে
আমার ধনুক জুড়ে রুদ্ধ জ্যা যেমন মেলেছি
চোখে পড়ে মাটির গর্ভের কাছে নিরুপম নতুন গহ্বর
ছড়িয়ে যাওয়া
কবি অমিতাভ গুপ্ত
এই আকাশ থেকে
জেগে উঠবে যখন
মহাসূর্যধূলো
সে কী প্রেমোচ্চারণ
অপূর্ণ রেখে
গড়ে স্তব্ধদ্যুলোক
তার বুকের কাছে
যদি আর্যবকুল
রাখে তরঙ্গিত
ঢেউয়ে পুষ্পকুসুম
যেন উপমাবিহীন
কোনো কূল--উপকূল
তবে তীব্রপ্রথম
আনো বিজয়ী জীবন
এসো গভীরতম
তুমি তমসাউজল
প্রতিমুহূর্তদিন
তুমি, হে জয়াতীত
কবি অমিতাভ গুপ্ত
এই আকাশ থেকে
জেগে উঠবে যখন
মহাসূর্যধূলো
সে কী প্রেমোচ্চারণ
অপূর্ণ রেখে
গড়ে স্তব্ধদ্যুলোক
তার বুকের কাছে
যদি আর্যবকুল
রাখে তরঙ্গিত
ঢেউয়ে পুষ্পকুসুম
যেন উপমাবিহীন
কোনো কূল--উপকূল
তবে তীব্রপ্রথম
আনো বিজয়ী জীবন
এসো গভীরতম
তুমি তমসাউজল
প্রতিমুহূর্তদিন
তুমি, হে জয়াতীত
আলো
কবি অমিতাভ গুপ্ত
সে--সব কিশোরবন্ধু আজ আমন্ত্রণ পেয়ে চলে গেছে তোমার প্রসাদে।
সমারোহ সেখানে শুনেছি, যেন বহুদূর, দূর এই উপত্যকা হ’তে
তোমার উত্সব যেন কল্পনায় দেখা যায়, এই হিম উপত্যকা, মানুষের মতো
একা বসে থাকি। তবু ক্ষোভ নেই। ঈর্ষা নেই। এখানো আমার মুখ অমৃতের স্বাদে
বেদনায় ভরে আছে। এখনো তোমার ছায়া, মায়াবী সংলাপ যেন মিলাতে মিলাতে
হারায়নি একেবারে। তুষারে তোমার দীপ্তি এখনো নির্মম জ্বলে ওঠে।
উত্সবে অতিথি হ’লে এমন বিজন জ্যোত্স্না অর্জন অসম্ভব হতো।
দ্বিতীয় উচ্ছাসে যেন মনে হয় চকিতে প্লাবিত হলো অসীম সংসার।
তোমার নৈঃশব্দ্য দিয়ে আমাকে শুনিয়ে গেলে তপস্যায় শ্রুত কন্ঠস্বর।
তোমার উপেক্ষা দিয়ে আমাকে চিনিয়ে গেলে নীলিমায় নক্ষত্রের মন
কিভাবে হারিয়ে থাকে। হার্মাদবাতাসে যেন চতুর্দিকে খুলে যায় সমস্ত দুয়ার।
সমস্ত বন্দী আজ মুক্ত হয়ে বিশাল প্রন্তরে ছুটে আসে। অবিশ্রাম ঝড়
প্রক্ষাপট তুচ্ছ করে। জানা গেল, কখনো যাবে না জানা। জনশ্রুতি
পারে না বুঝিয়ে দিতে তোমার গভীর দৃষ্টি : এ সকল বুঝেছি এখন।
এখন বুঝেছি আমি সার্বভৌমতার মিথ্যা। অধিক যন্ত্রণা এই কৌতূহলের
আমার উল্লাস ছিল ! এখন জেনেছি আমি অগ্নিপূত আমার হৃদয়
অধিকার পেল আজ জ্যোত্স্নায় ঝরে যেতে। এই জ্যোত্স্না তোমার হাসির
অবশেষে। এই জ্যোত্স্না পৃথিবীতে শুধু একবারই জাগে। পূজারীর শ্বেত শঙ্খের
উচ্চারণ এখানে এসেছে মিশে। সম্রাটের স্বেচ্ছাচারী রাজদন্ড, অদ্বৈত--অক্ষয়
আঁধার ভীত হলো। এখন জেনেছি আমি স্বপ্ন শুধু তরঙ্গের মতো
বন্যায় ভেসে যাওয়া। রক্তের ভিতরে এক ঈশ্বর অস্থির।
কিশোরবন্ধুরা বুঝি আমন্ত্রণ পেয়েছিল উজ্জ্বল উষ্ণ সমারোহে
স্বাধিকারবোধে তারা আত্মবিস্মৃতের মতো আগুনের চারিপাশে নেচে
ফিরে যাবে। ফেরার সময় হয়তো অভ্র পাবে। কিছু কথা অশথের সাথে।
আমি এক নির্বাসিত। আমার হয়নি স্থান প্রসারিত বাষ্পের আবহে।
তবুও অতৃপ্ত নই। সাফল্য আমার নয়। সৃষ্টি নয়। তবু সে এসেছে
আমাকে রাতুল দেখে। হয়তো বিদ্যুৎ হয়ে। হয়তো নিকটে
তাৎক্ষণিকের মতো আসা তার শতাব্দীর মতো চলে যেতে।
কবি অমিতাভ গুপ্ত
সে--সব কিশোরবন্ধু আজ আমন্ত্রণ পেয়ে চলে গেছে তোমার প্রসাদে।
সমারোহ সেখানে শুনেছি, যেন বহুদূর, দূর এই উপত্যকা হ’তে
তোমার উত্সব যেন কল্পনায় দেখা যায়, এই হিম উপত্যকা, মানুষের মতো
একা বসে থাকি। তবু ক্ষোভ নেই। ঈর্ষা নেই। এখানো আমার মুখ অমৃতের স্বাদে
বেদনায় ভরে আছে। এখনো তোমার ছায়া, মায়াবী সংলাপ যেন মিলাতে মিলাতে
হারায়নি একেবারে। তুষারে তোমার দীপ্তি এখনো নির্মম জ্বলে ওঠে।
উত্সবে অতিথি হ’লে এমন বিজন জ্যোত্স্না অর্জন অসম্ভব হতো।
দ্বিতীয় উচ্ছাসে যেন মনে হয় চকিতে প্লাবিত হলো অসীম সংসার।
তোমার নৈঃশব্দ্য দিয়ে আমাকে শুনিয়ে গেলে তপস্যায় শ্রুত কন্ঠস্বর।
তোমার উপেক্ষা দিয়ে আমাকে চিনিয়ে গেলে নীলিমায় নক্ষত্রের মন
কিভাবে হারিয়ে থাকে। হার্মাদবাতাসে যেন চতুর্দিকে খুলে যায় সমস্ত দুয়ার।
সমস্ত বন্দী আজ মুক্ত হয়ে বিশাল প্রন্তরে ছুটে আসে। অবিশ্রাম ঝড়
প্রক্ষাপট তুচ্ছ করে। জানা গেল, কখনো যাবে না জানা। জনশ্রুতি
পারে না বুঝিয়ে দিতে তোমার গভীর দৃষ্টি : এ সকল বুঝেছি এখন।
এখন বুঝেছি আমি সার্বভৌমতার মিথ্যা। অধিক যন্ত্রণা এই কৌতূহলের
আমার উল্লাস ছিল ! এখন জেনেছি আমি অগ্নিপূত আমার হৃদয়
অধিকার পেল আজ জ্যোত্স্নায় ঝরে যেতে। এই জ্যোত্স্না তোমার হাসির
অবশেষে। এই জ্যোত্স্না পৃথিবীতে শুধু একবারই জাগে। পূজারীর শ্বেত শঙ্খের
উচ্চারণ এখানে এসেছে মিশে। সম্রাটের স্বেচ্ছাচারী রাজদন্ড, অদ্বৈত--অক্ষয়
আঁধার ভীত হলো। এখন জেনেছি আমি স্বপ্ন শুধু তরঙ্গের মতো
বন্যায় ভেসে যাওয়া। রক্তের ভিতরে এক ঈশ্বর অস্থির।
কিশোরবন্ধুরা বুঝি আমন্ত্রণ পেয়েছিল উজ্জ্বল উষ্ণ সমারোহে
স্বাধিকারবোধে তারা আত্মবিস্মৃতের মতো আগুনের চারিপাশে নেচে
ফিরে যাবে। ফেরার সময় হয়তো অভ্র পাবে। কিছু কথা অশথের সাথে।
আমি এক নির্বাসিত। আমার হয়নি স্থান প্রসারিত বাষ্পের আবহে।
তবুও অতৃপ্ত নই। সাফল্য আমার নয়। সৃষ্টি নয়। তবু সে এসেছে
আমাকে রাতুল দেখে। হয়তো বিদ্যুৎ হয়ে। হয়তো নিকটে
তাৎক্ষণিকের মতো আসা তার শতাব্দীর মতো চলে যেতে।
জু--চেন
কবি অমিতাভ গুপ্ত
এতদিন প্রত্নকথার অধিকার চূর্ণ ত’রে
এসেছে সূর্যমুখী
কতবার অপ্রাকৃত রাত্রিক্ষত নিদ্রাতুর অসুখী
কখনো পেল না টের এতদিনে ঝড়ের মেঘের
মতো গূঢ় অন্ধকারের চাতুর্যকে জ্বালাবে সূর্যমুখী
সকলের স্বপ্ন নিয়েই সকলের বাঁচতে হবে
রাত্রি। আগুন পাহাড় পেরিয়ে সাজতে হবে
প্রতিটি ঊষার মতো
হয়তো বিপথরত হয়তো রাতের মলিন
তখনো থাকতে পারে তবু হে স্বাগতদিন
শাসনে ও ভয়ে আতঙ্কে আর চাবুকে চাবুকে এ’জীবন
মুখর। তবুও নীরবের
কাছে প্রর্থনা কা হবে
কী অনিশ্চয়ে উজ্জ্বলে গৌরবে
প্রার্থনারত সে আমাকে নেবে যেন প্রর্থনাহীন
বলো যাই বোলো যাই
লজ্জাই
আমাকে আঁধার ক’রে রেখেছিল, তাই
রাত্রির কাছে দিনের মতন
নক্ষত্রের শুভ্রকে রেখে বলো, হে নিরাভরণ, যাই
পথ পথকে পথে ডাকে, ছায়াপথের পথে পথে, প্রত্যেক আকাশে নীহারিকা
জ্যোতির্বিন্দুর মতো এক প্রাণ ছড়িয়ে রেখেছে এই ছায়ায় আলোয়
তার সব সৌন্দর্যকে চোখের পলকে
দেখাযায় ---- যদি চোখে দৃষ্টি থাকে---- দৃষ্টিবান অন্ধের মতন
পুরোনো পুরোনো পুঁথিমুখস্থের পন্ডিতের মতো নয়, গভীর নীরবতর মূর্খদের ঘরে
ভাঙা চাটাইয়ের পরে ডাগর ডাগর চোখে যেরকম আলো জ্বলে, যারা আকাশের নিবে-যাওয়া
কখনো দেখে না কিংবা যদি দেখে, জানে, তার পুনর্জ্যোতির্গম
এভাবে বাংলারও গ্রামে জলের কণিকা ক্রমে স্রোত হয়, স্রোতগুলি নদী হয়ে ওঠে
নদীর উজানে সেই বঙ্গোপসাগর
পূর্বচীনসমুদ্রের মতো আর অতলান্তিকের মতো কিংবা প্রশান্ত মহাসাগরের মতো যে কোন জলধি
যেভাবে গণনাতীত অজস্র ঢেউয়ের শীর্ষে প্রাণের দীপ্তি নিয়ে জ্বলে
বাংলা বিহার থেকে উত্তরপ্রদেশ আর থেকে গাড়োয়াল
মেঘালয় দাহেজ গোয়া চম্বলের সমতলে পাহাড়ের খাঁজে
বালিয়াড়িটির ছায়া হয়ে ওঠা জেলে ডিঙিদের স্তব্ধ ছায়ায় ছায়ায়
সুন্দরবনের মধুসন্ধানীর সতর্ক ভঙ্গিতে
যাদের সমগ্র ও অবারিত দৃষ্টিপাতে জ্বলে ওঠে সেই দীপ্তিপথ
যা এখনো জ্বেলে রাখে ১৯৩৪ সন ১ আগষ্ট রাত্রি, কমরেড মাওয়ের বক্তৃতা
অক্টোবর ১৫ তারিখ থেকে লালফৌজের যাত্রা শুরু
পঁচাশি হাজার সৈন্য পনেরো হাজার পার্টি কমরেড নিয়ে
সমস্ত দুঃখই স্তব্ধ, লক্ষ লক্ষ গ্রামে গ্রামে নীরবের বেদনার মতো অন্ধকার
সমস্ত শৃঙ্খলই মূক, কঠিন লোহার মতো পায়ে পায়ে মৌনতা জড়ানো
ঢাকার আভুলকাটা তাঁতি এসে নৈহাটির জুটমিলে হিন্দ্ মোটরের শেডে সম্পূর্ণ দাঁড়ায়
কতদিন কত দীর্গযুগ ধরে লং মার্চ শুরু হয়ে গেছে
জলের অভাবে আর খাদ্যভাবে তীব্রনিষ্ঠুর সেই মালভূমি জানত না কত
দুর্ভিক্ষ মন্বন্তর বেঁচে আছি, হাতে পায়ে শিকলের রক্তচিহ্ন পিঠে চাবুকের দাগ নিয়ে
সুবিখ্যাত কোম্পানি কার এন্ড টেগোরের আফিঙের জাহাজ পুড়িয়ে
চন্ডুর দোকান ভেঙে রিক্সাঅলার হাতে রাইফেল তেলেঙ্গানা তুন্দ্রাকাকুলাম
বাসন্তীর কৃষক ও কিষানীর হাতে টাঙি বর্শা তুলে দিয়ে
লং মার্চ, দিশি চুরুটের স্বাদ কাঁচা লঙ্কা প্রিয় ছিল মাও--সে তুঙের
লং মার্চ, কাঁচালঙ্কা পর্বতসংকুল পথে কল্পনাতীত আর দোক্তাপাতারও কোনো প্রয়োজন নেই
লংমার্চ, এখন ভারতে টেলিভিশনের কাছে নতজানু দুবলা ও রোদনপ্রিয় : মহাপত্রিকার সাহিত্যিক
অলক্ষিতে ধীরে ধীরে বেঁচে ওঠে চিরায়তনতুন সংস্কৃতি
প্রশ্ন উঠবে সাংহাই থেকে আকস্মিক এক অভিনেত্রী ল্যান--পিং তাঁর
হৃদয়ে কী দ্রুত প্রত্যাঘ্যাত দিতে পেরেছিল যাতে
কমরেড মাও তাঁর লং মার্চের সঙ্গী সাতটি সন্তানের জননীকে
রাশিয়ায় পাঠিয়েই বিবাহবিচ্ছেদ করলেন
প্রশ্ন উঠবে যে--সংশ্লেষণ তিনি মার্কস্ বাদ এবং চীনের
দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদে অমোঘ করেন সেই তত্ত্বটিকে সাধারণগম্যক’রে গেলেন না কেন
সমস্ত প্রশ্নের কিছু মীমাংসা সূত্র যদি পাওয়া যায় চিত্রলিপিলেখা ওই ১৯৫৭ সনের কবিতায়
যেখানে কমরেড--কবি প্রথম প্রেমিকা তাঁর ইয়াং-কাই--হুই আর সহযোদ্ধা লিউ--চি--শুনের স্মৃতি
পপলারের পাতায় পাতায় আর উইলোর মর্মরে মর্মরে ছড়িয়ে দিলেন
আদি সাম্যজীবনের গুহাচিত্রের বর্ণসুষমা কী কবিতার ছন্দে মেশেনি
তবু মেনে নিতে হয় হো--জু--চেন সঙ্গী হ’লে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাত্রান্তর হ’ত
লং মার্চ এতদিনে এগিয়ে গিয়েছে বহুদূরে
আমারও অক্ষম কোনো কবিতার ক্লান্ত মৃত কালো বজ্রমণি
মুক্ত নুক্ত পূর্ণমুক্ত পৃথিবীর যৌথখামারের
এককোণে পড়ে আছে ---- কোন্ বন্ধ্যামাঠে বোনা শস্যের দানার মতো দীনহীন ব্যক্তিমানুষের
কবিতার সমস্ত আখর
ঊনিশশ’ আঠাশ থেকে কৃষিবিপ্লবের ঢেউ ক্রমশ উত্তাল হয়ে ওঠে
ইয়াংসির উত্তরে--- অন্যান্য গেরিলাঘাঁটি মাওয়ের পুরোনো বন্ধু চ্যাং--কুয়ো তাও
গড়ে উঠছে লালফৌজ, শুধু স্বেচ্ছাসেবীদের সংগঠনব্রতে
নায়ক বা সেনাপতি, নায়েক বা সৈনিকের পার্থক্য ছিল না যেন শ্রেণীঘৃণা মিলিত করেছে
একেকটি মানুষের সংঘ, গড়ে উঠল দক্ষিণে দু’টি সোভিয়েত ১৯৩৪ সনের মধ্যেই
শ্রমিক ও কৃষকের সংগঠনে মিলিত ও পৃথিবীর মুক্ত তীব্র জনকেন্দ্রগুলি
যেভাবে এখনও হয়তো অথবা নিশ্চিতভাবে শতাব্দীর শেষপর্বে অন্য এক নতুন শতকে
মহাচীন--ভারতের লাতিন আমেরিকা আর আফ্রিকা আর সমগ্র ক্ষুদিত পীড়িত
লাথি--খাওয়া মানুষেরা একত্রে মিলেছে
একটি ভিখারি মেগাপলিসের কাছে, ফুটপাথে, অবিদ্রোহী, তবু সেও হাজার হাজার
চরিত্রের প্রতীক হয়েছে
যবদ্বীপের ক্লান্ত চাষাদের কোথায় কীভাবে কাজ শ্যামদেশে জামসেদপুরে কিংবা ছত্রিশগড়ে
কালপুরুষের ছায়া কোন্ দিকে দেখা যায় ? মাও সে --তুঙ এর অবয়বে ?
কিংবা ঐ ভিখারির একটি সন্মান থেকে গভীর গভীরতর অবচেতনায় ?
লঙমার্চ শুরু হলে সমস্ত উপমা থাকে সম্ভাবনাময়
লঙ্ মার্চ শুরু হয়, ভিক্ষাপাত্র থেকে যেন বজ্র উঠে আসে
লঙ্--মার্চ শুরু হবে, সব বধিরতা থেকে আছড়ে পড়বে ঝড় শুধু ঝড়
রাত্রি এল প্রাণে
দিন এসেছে
দিনের কাছে
জাগার অনুমানে
প্রাণের অন্ধকারে
একটি জেগে ওঠার কোরক
দিনের মতো বাড়ে
এ তিথি নবীন, জাগো জাগো এই তিথি রৌদ্রজ্যোত্স্নার
মহাবিশ্বে যাকিছু প্রাচীন ফাল্গুনের পাতায় ঝরানো
জাগো নবজন্মের জ্যোত্স্নায় সূর্যের হৃদয়স্পন্দনে
একবার চিরজীবনের তীব্র কাঁপে, কোমল আকাশ
একবার ডাক দিয়ে যায়
বৃক্ষ এবং অবিশ্বাসের অসমবর্তী একটিই সেতু
যে উভয়কেই দোলা দিয়ে যায় ঢেউভরা কান্নার
মতন হাওয়ায় হাওয়ায়
তারপর শুরু জনযুদ্ধের সাথে নিয়মিত যুদ্ধের
সন্ধ্যামুহূর্তের
শঙ্খধ্বনির আবেগে ঘ্বনিতে গোধূলি ঘনায় শত্রুর রক্তের
ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে কনার্ক খাজুরাহো
শ্রীচৈতন্য চেয়েছিলেন একটি পুনর্মিলন
সমস্ত বিষ্ণুপ্রিয়ার মতো দুঃখি কাঙালিরা
ছড়িয়ে পড়বে নৃত্যে এবং গানে
অনাবৃত অকুন্ঠিত পুরীর মন্দিরের
শিল্পসুষমা
ফিরিয়ে দিল প্রার্থিত সেই পুর্ণমিলিতকে
শুরু হয়েছিল মিলিতমিলন দক্ষিণ ভারতের
সীমানা পেরিয়ে মধ্যভারতে গৌড়--রাঢ় বঙ্গের
পাথরে ও পোড়া ইঁটে
খোঁজে না বলেই পায় না এবং ইতিহাসাতীত স্বপ্নের মতো সোনা
স্বপ্নেই থাকে লুকিয়ে
জগন্নাথ মন্দিরের মিলনভাস্কর্য ছেড়ে ক্লান্ত ক্লিষ্ট সান্ধ্য কনারক
এখানেই একদিন পৃথিবীর সর্বপ্রথম
কুষ্ঠাশ্রম গড়ে উঠেছিল
তখন সূর্যের দাঙ চন্দ্রভাগার জল মিথুনমূর্তির
সব কারুকাজ
শুশ্রূষার মতো ছিল, নিস্তব্ধ জীর্ণপ্রায় রথের মতন
মনে পড়ে মার্চমাস, ১৯৩৫, জয়ী লালফৌজ এল দক্ষিণ সিচুয়ানে
উন্নানগিরিখাতে প্রবাহিত জিন্ লানদীর তরঙ্গে উত্তালে
সেতু ভেঙে গেছে, উত্তর মেস্ সিতে
এল লালফৌজ, কমরেড ছাং--জিয়ে তাঁর বিশাল শরীর দিয়ে
সেতুর ফাটল আবৃতকরে রাখলেন, তাঁকে দ্রুত
মাড়িয়ে ফৌজ ছাথিয়ানে এল, চরমজয়ের চরমস্মারক হয়ে
সেতুর উপরে দলিত গতায়ু শহীদের দেহ ছড়িয়ে রয়েছে, যুদ্ধের শেষে
জু--চেন এবং মাও
কুড়িয়ে নিলেন সেই স্মারকের সামান্য অবশেষ
আমি প্রেম। দরিদ্রভূমির অসহায়
কবির মতন প্রেমগান
লিখে যাই। প্রেমিকা জানে না
আজ অরন্ধনব্রত। বাংলার প্রণয়গীতিকা
সহস্রতম জন্মদিন পার হল
কবি অমিতাভ গুপ্ত
এতদিন প্রত্নকথার অধিকার চূর্ণ ত’রে
এসেছে সূর্যমুখী
কতবার অপ্রাকৃত রাত্রিক্ষত নিদ্রাতুর অসুখী
কখনো পেল না টের এতদিনে ঝড়ের মেঘের
মতো গূঢ় অন্ধকারের চাতুর্যকে জ্বালাবে সূর্যমুখী
সকলের স্বপ্ন নিয়েই সকলের বাঁচতে হবে
রাত্রি। আগুন পাহাড় পেরিয়ে সাজতে হবে
প্রতিটি ঊষার মতো
হয়তো বিপথরত হয়তো রাতের মলিন
তখনো থাকতে পারে তবু হে স্বাগতদিন
শাসনে ও ভয়ে আতঙ্কে আর চাবুকে চাবুকে এ’জীবন
মুখর। তবুও নীরবের
কাছে প্রর্থনা কা হবে
কী অনিশ্চয়ে উজ্জ্বলে গৌরবে
প্রার্থনারত সে আমাকে নেবে যেন প্রর্থনাহীন
বলো যাই বোলো যাই
লজ্জাই
আমাকে আঁধার ক’রে রেখেছিল, তাই
রাত্রির কাছে দিনের মতন
নক্ষত্রের শুভ্রকে রেখে বলো, হে নিরাভরণ, যাই
পথ পথকে পথে ডাকে, ছায়াপথের পথে পথে, প্রত্যেক আকাশে নীহারিকা
জ্যোতির্বিন্দুর মতো এক প্রাণ ছড়িয়ে রেখেছে এই ছায়ায় আলোয়
তার সব সৌন্দর্যকে চোখের পলকে
দেখাযায় ---- যদি চোখে দৃষ্টি থাকে---- দৃষ্টিবান অন্ধের মতন
পুরোনো পুরোনো পুঁথিমুখস্থের পন্ডিতের মতো নয়, গভীর নীরবতর মূর্খদের ঘরে
ভাঙা চাটাইয়ের পরে ডাগর ডাগর চোখে যেরকম আলো জ্বলে, যারা আকাশের নিবে-যাওয়া
কখনো দেখে না কিংবা যদি দেখে, জানে, তার পুনর্জ্যোতির্গম
এভাবে বাংলারও গ্রামে জলের কণিকা ক্রমে স্রোত হয়, স্রোতগুলি নদী হয়ে ওঠে
নদীর উজানে সেই বঙ্গোপসাগর
পূর্বচীনসমুদ্রের মতো আর অতলান্তিকের মতো কিংবা প্রশান্ত মহাসাগরের মতো যে কোন জলধি
যেভাবে গণনাতীত অজস্র ঢেউয়ের শীর্ষে প্রাণের দীপ্তি নিয়ে জ্বলে
বাংলা বিহার থেকে উত্তরপ্রদেশ আর থেকে গাড়োয়াল
মেঘালয় দাহেজ গোয়া চম্বলের সমতলে পাহাড়ের খাঁজে
বালিয়াড়িটির ছায়া হয়ে ওঠা জেলে ডিঙিদের স্তব্ধ ছায়ায় ছায়ায়
সুন্দরবনের মধুসন্ধানীর সতর্ক ভঙ্গিতে
যাদের সমগ্র ও অবারিত দৃষ্টিপাতে জ্বলে ওঠে সেই দীপ্তিপথ
যা এখনো জ্বেলে রাখে ১৯৩৪ সন ১ আগষ্ট রাত্রি, কমরেড মাওয়ের বক্তৃতা
অক্টোবর ১৫ তারিখ থেকে লালফৌজের যাত্রা শুরু
পঁচাশি হাজার সৈন্য পনেরো হাজার পার্টি কমরেড নিয়ে
সমস্ত দুঃখই স্তব্ধ, লক্ষ লক্ষ গ্রামে গ্রামে নীরবের বেদনার মতো অন্ধকার
সমস্ত শৃঙ্খলই মূক, কঠিন লোহার মতো পায়ে পায়ে মৌনতা জড়ানো
ঢাকার আভুলকাটা তাঁতি এসে নৈহাটির জুটমিলে হিন্দ্ মোটরের শেডে সম্পূর্ণ দাঁড়ায়
কতদিন কত দীর্গযুগ ধরে লং মার্চ শুরু হয়ে গেছে
জলের অভাবে আর খাদ্যভাবে তীব্রনিষ্ঠুর সেই মালভূমি জানত না কত
দুর্ভিক্ষ মন্বন্তর বেঁচে আছি, হাতে পায়ে শিকলের রক্তচিহ্ন পিঠে চাবুকের দাগ নিয়ে
সুবিখ্যাত কোম্পানি কার এন্ড টেগোরের আফিঙের জাহাজ পুড়িয়ে
চন্ডুর দোকান ভেঙে রিক্সাঅলার হাতে রাইফেল তেলেঙ্গানা তুন্দ্রাকাকুলাম
বাসন্তীর কৃষক ও কিষানীর হাতে টাঙি বর্শা তুলে দিয়ে
লং মার্চ, দিশি চুরুটের স্বাদ কাঁচা লঙ্কা প্রিয় ছিল মাও--সে তুঙের
লং মার্চ, কাঁচালঙ্কা পর্বতসংকুল পথে কল্পনাতীত আর দোক্তাপাতারও কোনো প্রয়োজন নেই
লংমার্চ, এখন ভারতে টেলিভিশনের কাছে নতজানু দুবলা ও রোদনপ্রিয় : মহাপত্রিকার সাহিত্যিক
অলক্ষিতে ধীরে ধীরে বেঁচে ওঠে চিরায়তনতুন সংস্কৃতি
প্রশ্ন উঠবে সাংহাই থেকে আকস্মিক এক অভিনেত্রী ল্যান--পিং তাঁর
হৃদয়ে কী দ্রুত প্রত্যাঘ্যাত দিতে পেরেছিল যাতে
কমরেড মাও তাঁর লং মার্চের সঙ্গী সাতটি সন্তানের জননীকে
রাশিয়ায় পাঠিয়েই বিবাহবিচ্ছেদ করলেন
প্রশ্ন উঠবে যে--সংশ্লেষণ তিনি মার্কস্ বাদ এবং চীনের
দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদে অমোঘ করেন সেই তত্ত্বটিকে সাধারণগম্যক’রে গেলেন না কেন
সমস্ত প্রশ্নের কিছু মীমাংসা সূত্র যদি পাওয়া যায় চিত্রলিপিলেখা ওই ১৯৫৭ সনের কবিতায়
যেখানে কমরেড--কবি প্রথম প্রেমিকা তাঁর ইয়াং-কাই--হুই আর সহযোদ্ধা লিউ--চি--শুনের স্মৃতি
পপলারের পাতায় পাতায় আর উইলোর মর্মরে মর্মরে ছড়িয়ে দিলেন
আদি সাম্যজীবনের গুহাচিত্রের বর্ণসুষমা কী কবিতার ছন্দে মেশেনি
তবু মেনে নিতে হয় হো--জু--চেন সঙ্গী হ’লে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাত্রান্তর হ’ত
লং মার্চ এতদিনে এগিয়ে গিয়েছে বহুদূরে
আমারও অক্ষম কোনো কবিতার ক্লান্ত মৃত কালো বজ্রমণি
মুক্ত নুক্ত পূর্ণমুক্ত পৃথিবীর যৌথখামারের
এককোণে পড়ে আছে ---- কোন্ বন্ধ্যামাঠে বোনা শস্যের দানার মতো দীনহীন ব্যক্তিমানুষের
কবিতার সমস্ত আখর
ঊনিশশ’ আঠাশ থেকে কৃষিবিপ্লবের ঢেউ ক্রমশ উত্তাল হয়ে ওঠে
ইয়াংসির উত্তরে--- অন্যান্য গেরিলাঘাঁটি মাওয়ের পুরোনো বন্ধু চ্যাং--কুয়ো তাও
গড়ে উঠছে লালফৌজ, শুধু স্বেচ্ছাসেবীদের সংগঠনব্রতে
নায়ক বা সেনাপতি, নায়েক বা সৈনিকের পার্থক্য ছিল না যেন শ্রেণীঘৃণা মিলিত করেছে
একেকটি মানুষের সংঘ, গড়ে উঠল দক্ষিণে দু’টি সোভিয়েত ১৯৩৪ সনের মধ্যেই
শ্রমিক ও কৃষকের সংগঠনে মিলিত ও পৃথিবীর মুক্ত তীব্র জনকেন্দ্রগুলি
যেভাবে এখনও হয়তো অথবা নিশ্চিতভাবে শতাব্দীর শেষপর্বে অন্য এক নতুন শতকে
মহাচীন--ভারতের লাতিন আমেরিকা আর আফ্রিকা আর সমগ্র ক্ষুদিত পীড়িত
লাথি--খাওয়া মানুষেরা একত্রে মিলেছে
একটি ভিখারি মেগাপলিসের কাছে, ফুটপাথে, অবিদ্রোহী, তবু সেও হাজার হাজার
চরিত্রের প্রতীক হয়েছে
যবদ্বীপের ক্লান্ত চাষাদের কোথায় কীভাবে কাজ শ্যামদেশে জামসেদপুরে কিংবা ছত্রিশগড়ে
কালপুরুষের ছায়া কোন্ দিকে দেখা যায় ? মাও সে --তুঙ এর অবয়বে ?
কিংবা ঐ ভিখারির একটি সন্মান থেকে গভীর গভীরতর অবচেতনায় ?
লঙমার্চ শুরু হলে সমস্ত উপমা থাকে সম্ভাবনাময়
লঙ্ মার্চ শুরু হয়, ভিক্ষাপাত্র থেকে যেন বজ্র উঠে আসে
লঙ্--মার্চ শুরু হবে, সব বধিরতা থেকে আছড়ে পড়বে ঝড় শুধু ঝড়
রাত্রি এল প্রাণে
দিন এসেছে
দিনের কাছে
জাগার অনুমানে
প্রাণের অন্ধকারে
একটি জেগে ওঠার কোরক
দিনের মতো বাড়ে
এ তিথি নবীন, জাগো জাগো এই তিথি রৌদ্রজ্যোত্স্নার
মহাবিশ্বে যাকিছু প্রাচীন ফাল্গুনের পাতায় ঝরানো
জাগো নবজন্মের জ্যোত্স্নায় সূর্যের হৃদয়স্পন্দনে
একবার চিরজীবনের তীব্র কাঁপে, কোমল আকাশ
একবার ডাক দিয়ে যায়
বৃক্ষ এবং অবিশ্বাসের অসমবর্তী একটিই সেতু
যে উভয়কেই দোলা দিয়ে যায় ঢেউভরা কান্নার
মতন হাওয়ায় হাওয়ায়
তারপর শুরু জনযুদ্ধের সাথে নিয়মিত যুদ্ধের
সন্ধ্যামুহূর্তের
শঙ্খধ্বনির আবেগে ঘ্বনিতে গোধূলি ঘনায় শত্রুর রক্তের
ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে কনার্ক খাজুরাহো
শ্রীচৈতন্য চেয়েছিলেন একটি পুনর্মিলন
সমস্ত বিষ্ণুপ্রিয়ার মতো দুঃখি কাঙালিরা
ছড়িয়ে পড়বে নৃত্যে এবং গানে
অনাবৃত অকুন্ঠিত পুরীর মন্দিরের
শিল্পসুষমা
ফিরিয়ে দিল প্রার্থিত সেই পুর্ণমিলিতকে
শুরু হয়েছিল মিলিতমিলন দক্ষিণ ভারতের
সীমানা পেরিয়ে মধ্যভারতে গৌড়--রাঢ় বঙ্গের
পাথরে ও পোড়া ইঁটে
খোঁজে না বলেই পায় না এবং ইতিহাসাতীত স্বপ্নের মতো সোনা
স্বপ্নেই থাকে লুকিয়ে
জগন্নাথ মন্দিরের মিলনভাস্কর্য ছেড়ে ক্লান্ত ক্লিষ্ট সান্ধ্য কনারক
এখানেই একদিন পৃথিবীর সর্বপ্রথম
কুষ্ঠাশ্রম গড়ে উঠেছিল
তখন সূর্যের দাঙ চন্দ্রভাগার জল মিথুনমূর্তির
সব কারুকাজ
শুশ্রূষার মতো ছিল, নিস্তব্ধ জীর্ণপ্রায় রথের মতন
মনে পড়ে মার্চমাস, ১৯৩৫, জয়ী লালফৌজ এল দক্ষিণ সিচুয়ানে
উন্নানগিরিখাতে প্রবাহিত জিন্ লানদীর তরঙ্গে উত্তালে
সেতু ভেঙে গেছে, উত্তর মেস্ সিতে
এল লালফৌজ, কমরেড ছাং--জিয়ে তাঁর বিশাল শরীর দিয়ে
সেতুর ফাটল আবৃতকরে রাখলেন, তাঁকে দ্রুত
মাড়িয়ে ফৌজ ছাথিয়ানে এল, চরমজয়ের চরমস্মারক হয়ে
সেতুর উপরে দলিত গতায়ু শহীদের দেহ ছড়িয়ে রয়েছে, যুদ্ধের শেষে
জু--চেন এবং মাও
কুড়িয়ে নিলেন সেই স্মারকের সামান্য অবশেষ
আমি প্রেম। দরিদ্রভূমির অসহায়
কবির মতন প্রেমগান
লিখে যাই। প্রেমিকা জানে না
আজ অরন্ধনব্রত। বাংলার প্রণয়গীতিকা
সহস্রতম জন্মদিন পার হল
ঝরা মানুষ
কবি অমিতাভ গুপ্ত
ভাঙা মানুষের ফাটা মানুষের
ঝরা মানুষের গানে
একদিন এই পৃথিবী মুখর হবে।
একদিন, আরো কত অস্থির
অপেক্ষা শেষ হলে
মানুষের গান পাবে অমলিন
অগ্নির ব্যাপকতা।
আজ তারা শুধু কীর্তিনাশার
অকূলের মাঝখানে।
ঢেউ ভেঙে যায়, তীর ঝরে যায়
হয়তো মানুষও মরে
তবু কী দীপ্ত, অবিনাশী প্রাণ
জ্বলে ওঠে চরাচরে।
তরঙ্গ হতে তরঙ্গে আর
ঢেউ হতে দূর ঢেউয়ে
যারা চলে যায়, সকলে ফেরে না
তবু সহস্র ফেরে।
তারা বেঁচে ওঠে, তারা বেঁচে থাকে,
গান বোনে ধান বোনে।
কবি অমিতাভ গুপ্ত
ভাঙা মানুষের ফাটা মানুষের
ঝরা মানুষের গানে
একদিন এই পৃথিবী মুখর হবে।
একদিন, আরো কত অস্থির
অপেক্ষা শেষ হলে
মানুষের গান পাবে অমলিন
অগ্নির ব্যাপকতা।
আজ তারা শুধু কীর্তিনাশার
অকূলের মাঝখানে।
ঢেউ ভেঙে যায়, তীর ঝরে যায়
হয়তো মানুষও মরে
তবু কী দীপ্ত, অবিনাশী প্রাণ
জ্বলে ওঠে চরাচরে।
তরঙ্গ হতে তরঙ্গে আর
ঢেউ হতে দূর ঢেউয়ে
যারা চলে যায়, সকলে ফেরে না
তবু সহস্র ফেরে।
তারা বেঁচে ওঠে, তারা বেঁচে থাকে,
গান বোনে ধান বোনে।
দেউলঘাটা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
কোথায় ছিলাম আমি। সেইদিন ? যখন আসি নি ফিরে দেউলঘাটায়?
দেবতার ঘর ভেঙে গুঁড়ো হয়ে গেছে তাই মানুষের গ্রামে
দেবতা বসতি করে। জানি না এ--সব কথা। না জেনে কি সম্পূর্ণ ছিলাম
এবার, এখানে তবু ? ক্ষীনায়ু রূপের মতো কংসাবতী অথবা কাঁসাই
যে নামেই ডাকি আজো সাড়া দেয়। দেখা যায় পাথরের মা
এখনো দাঁড়িয়ে আছে। বেঁচে আছে পাথরের মায়ের ছেলেরা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
কোথায় ছিলাম আমি। সেইদিন ? যখন আসি নি ফিরে দেউলঘাটায়?
দেবতার ঘর ভেঙে গুঁড়ো হয়ে গেছে তাই মানুষের গ্রামে
দেবতা বসতি করে। জানি না এ--সব কথা। না জেনে কি সম্পূর্ণ ছিলাম
এবার, এখানে তবু ? ক্ষীনায়ু রূপের মতো কংসাবতী অথবা কাঁসাই
যে নামেই ডাকি আজো সাড়া দেয়। দেখা যায় পাথরের মা
এখনো দাঁড়িয়ে আছে। বেঁচে আছে পাথরের মায়ের ছেলেরা
দোলপূর্ণিমা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
আবীরে রাঙানো জ্যোত্স্না
জ্যোত্স্নারাঙানো নৌকো
নৌকোটি দিয়ে রাঙানো
মুক্ত তীব্র নদী
নদী মেলে দিতে চলেছি
নদীর গভীর নদীতে
যেন রাতজাগা পাখি
রাতজাগা পাখিটির
ডানার মতন নদীকে
জ্যোত্স্নায় মেলে দিয়েছি
সারারাত শুধু জ্যোত্স্না
সারাজীবনের জ্যোত্স্না
আবীরে আবীরে রাঙানো
ঢেউ, যেন ব্রজরমণী
সারারাত এপারের
দোল ভেসে যায় ওপারে
পারাপার করে নৌকো
বন্দী, মুগ্ধ নৌকো
কবি অমিতাভ গুপ্ত
আবীরে রাঙানো জ্যোত্স্না
জ্যোত্স্নারাঙানো নৌকো
নৌকোটি দিয়ে রাঙানো
মুক্ত তীব্র নদী
নদী মেলে দিতে চলেছি
নদীর গভীর নদীতে
যেন রাতজাগা পাখি
রাতজাগা পাখিটির
ডানার মতন নদীকে
জ্যোত্স্নায় মেলে দিয়েছি
সারারাত শুধু জ্যোত্স্না
সারাজীবনের জ্যোত্স্না
আবীরে আবীরে রাঙানো
ঢেউ, যেন ব্রজরমণী
সারারাত এপারের
দোল ভেসে যায় ওপারে
পারাপার করে নৌকো
বন্দী, মুগ্ধ নৌকো
দ্বিধা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
সহজ মেয়েটির সঙ্গে দেখা হলো
বৃষ্টিভেজা এক সহজ সন্ধ্যায়
তখন সহজিয়া বাতাসে ভেসে আসে
লুকোনো কান্নার মতন গুঞ্জন
রিক্সাঅলা তাকে, আস্তে, মৃদুহেসে
বলল, ‘দিদিমণি, হেথাকে নামবেন ?’
ক্ষয়াটে চেহারার রিক্সা---হাড়ওঠা
বুকের পাঁজরেরও একই দশা তার
বুড়োর শাদাদাড়ি চোয়ালে নড়ে ওঠে
মেয়েটি চুপ করে কী যেন ভাবে, তাই
‘মিটিয়াকলেজের এইতো লাশঘর’
রিক্সাঅলা বলে কোমল, চাপাস্বরে
হাতের ইশারায় দেখায় মেয়েটিকে
ঠান্ডা ঘুপচিতে এলানো মৃতদেহ
কিন্তু মেয়েটির দু’চোখ ঘিরে ফেলে
প্রবীন বাহু তার, পেশীর পোড়াদাগ।
কবি অমিতাভ গুপ্ত
সহজ মেয়েটির সঙ্গে দেখা হলো
বৃষ্টিভেজা এক সহজ সন্ধ্যায়
তখন সহজিয়া বাতাসে ভেসে আসে
লুকোনো কান্নার মতন গুঞ্জন
রিক্সাঅলা তাকে, আস্তে, মৃদুহেসে
বলল, ‘দিদিমণি, হেথাকে নামবেন ?’
ক্ষয়াটে চেহারার রিক্সা---হাড়ওঠা
বুকের পাঁজরেরও একই দশা তার
বুড়োর শাদাদাড়ি চোয়ালে নড়ে ওঠে
মেয়েটি চুপ করে কী যেন ভাবে, তাই
‘মিটিয়াকলেজের এইতো লাশঘর’
রিক্সাঅলা বলে কোমল, চাপাস্বরে
হাতের ইশারায় দেখায় মেয়েটিকে
ঠান্ডা ঘুপচিতে এলানো মৃতদেহ
কিন্তু মেয়েটির দু’চোখ ঘিরে ফেলে
প্রবীন বাহু তার, পেশীর পোড়াদাগ।
পুণ্যিপুকুর পুষ্পমালা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
ক্ষণজটিল দুপুরে, ছায়াটির
মতন ওই দুর্গামেয়ের মুখ
খিদেয় পোড়া রূপের কাছে তার
ঢেউ জাগে না পুণ্যিপুকুরের
একটি জটিল ছায়ার মতো শুধু
এই জলে এই জলের আয়োজনে
নলডাঁটা আর কলমী খুঁজেছে সে
সারাদুপুর ক্ষণজটিল ছায়া
ছায়ার মতো ছড়িয়ে গেল জলে
সজল, আরো সজল হ’ল জল
খিদেয় পোড়া মুখের উপর তার
পুণ্যিপুকুর ঈষৎ এঁকে দিল
ব্রতকথার মতন আলপনা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
ক্ষণজটিল দুপুরে, ছায়াটির
মতন ওই দুর্গামেয়ের মুখ
খিদেয় পোড়া রূপের কাছে তার
ঢেউ জাগে না পুণ্যিপুকুরের
একটি জটিল ছায়ার মতো শুধু
এই জলে এই জলের আয়োজনে
নলডাঁটা আর কলমী খুঁজেছে সে
সারাদুপুর ক্ষণজটিল ছায়া
ছায়ার মতো ছড়িয়ে গেল জলে
সজল, আরো সজল হ’ল জল
খিদেয় পোড়া মুখের উপর তার
পুণ্যিপুকুর ঈষৎ এঁকে দিল
ব্রতকথার মতন আলপনা
বাগেশ্বর
কবি অমিতাভ গুপ্ত
ক্ষতপ্রতিমার মতো। পড়ে আছে ভাঙা অন্ধকার।
কিছু অন্তর্জালা।
আমিও এসেছি আজ, স্তব্ধতায় চ্যুত হয়ে, গৌড়বাংলার।
যে আকাশে ভাষা নেই, তার বুকে একটি তারার
মিতাক্ষরমালা
একটি অথবা দুটি, দিব্যোক চন্দ্রবর্মা বাঁশের কেল্লার
তিতুমীর। আমাকে বাঙময় করো। কোন্ দেবতার
স্মৃতির নিরালা
ছুঁযেছি এখানে, বলো। দূরে অপাবৃত চূড়া, ত্রিশুল--নন্দার।
কবি অমিতাভ গুপ্ত
ক্ষতপ্রতিমার মতো। পড়ে আছে ভাঙা অন্ধকার।
কিছু অন্তর্জালা।
আমিও এসেছি আজ, স্তব্ধতায় চ্যুত হয়ে, গৌড়বাংলার।
যে আকাশে ভাষা নেই, তার বুকে একটি তারার
মিতাক্ষরমালা
একটি অথবা দুটি, দিব্যোক চন্দ্রবর্মা বাঁশের কেল্লার
তিতুমীর। আমাকে বাঙময় করো। কোন্ দেবতার
স্মৃতির নিরালা
ছুঁযেছি এখানে, বলো। দূরে অপাবৃত চূড়া, ত্রিশুল--নন্দার।
বাংলাভাষা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
(উত্সর্গ কবিতা / ‘সূর্যে ধ্বনিপটে’)
আকাশে ছড়ানো এই ভাষা
এই ভাষা আলো আর ভ্রূণ
ভোরবেলা, যখন জাগে নি
আর কেউ, বিবাহসংকেত
ছুঁয়ে গেল শিশুর কাকলি
আমি ওর গর্ভের আগুন
আমি ওর আভার সিঁদুর
কবি অমিতাভ গুপ্ত
(উত্সর্গ কবিতা / ‘সূর্যে ধ্বনিপটে’)
আকাশে ছড়ানো এই ভাষা
এই ভাষা আলো আর ভ্রূণ
ভোরবেলা, যখন জাগে নি
আর কেউ, বিবাহসংকেত
ছুঁয়ে গেল শিশুর কাকলি
আমি ওর গর্ভের আগুন
আমি ওর আভার সিঁদুর
বিদায়, হে আধুনিকতা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
একটি দীর্ঘ ও জটিল অবয়ব
একটি ত্রস্ত অপরাধের ভঙ্গি
এইমাত্র বারান্দা পেরিয়ে ঘরে
এইমাত্র ঘর পেরিয়ে বারান্দায়
একটি শাদাচুলের ছায়া
আঁকাবাঁকা, আংশিক জ্যোত্স্নায়
২
যখন নতুনভাবে ভেঙে ফেলি আধেক প্রতিমা
তোমদের কথা মনে পড়ে
আটচালা বেঁধে রেখে গ্রামীণ কুমোর ফিরি ঘরে
জ্যোত্স্নায় অসীমে পথে পথে
টের পাই, ছড়িয়ে রয়েছে ওই প্রতিমার ক্ষমা
৩
সম্পূর্ণ স্বচ্ছ নয়। তবু তার মায়াবী শাদার
কাছে, গোল হয়ে
ভিখারিরা বসে। অন্ন, স্থির
আজ বর্ণরোধ থেকে এভাবেই বিচ্ছুরিত হয়
ভিখারির প্রবল চীত্কার
কবি অমিতাভ গুপ্ত
একটি দীর্ঘ ও জটিল অবয়ব
একটি ত্রস্ত অপরাধের ভঙ্গি
এইমাত্র বারান্দা পেরিয়ে ঘরে
এইমাত্র ঘর পেরিয়ে বারান্দায়
একটি শাদাচুলের ছায়া
আঁকাবাঁকা, আংশিক জ্যোত্স্নায়
২
যখন নতুনভাবে ভেঙে ফেলি আধেক প্রতিমা
তোমদের কথা মনে পড়ে
আটচালা বেঁধে রেখে গ্রামীণ কুমোর ফিরি ঘরে
জ্যোত্স্নায় অসীমে পথে পথে
টের পাই, ছড়িয়ে রয়েছে ওই প্রতিমার ক্ষমা
৩
সম্পূর্ণ স্বচ্ছ নয়। তবু তার মায়াবী শাদার
কাছে, গোল হয়ে
ভিখারিরা বসে। অন্ন, স্থির
আজ বর্ণরোধ থেকে এভাবেই বিচ্ছুরিত হয়
ভিখারির প্রবল চীত্কার
বিদুরের গান
কবি অমিতাভ গুপ্ত
কোন্ দেবতাকেআজ আমার নৈবেদ্য দেব ? কে আমাকে অবিরল রৌদ্রের জগতে
মুক্ত করে, প্রান্তরে ছড়িয়ে দেয়, পথে পথে শস্যেতৃণে মাটির উপরে
অনাবৃত করে রাখে। স্বপ্নের আঁধার থেকে ভেসে যাই অনুপলস্রোতে
আগুনে রাঙানো ভোরে। তিথিহীন এ শরীর ভরে ওঠে সূর্যের মর্মরে
আমরা সম্পূর্ণ আমি জ্বলে যাই। সূচীমুখে জটিল যন্ত্রণা
তুলে নিই। কী উজ্জ্বল সর্বগ্রাস এনেছে সে সন্মোহনে, আলোজয়রথে।
আমি তার পথের অঞ্জলি যেন। শুভ্র হয়ে এল আজ আমার বাসনা।
তখনই দেখেছি মেঘ, অকস্মাৎ, শ্যামকুরঙ্গীর মতো, আকাশের কোণে।
সহসা প্রবল ঝড় নেমে আসে। উচ্ছসিত, অশ্রুর মতন ঝরে জল
কে আমাকে সিক্ত করে ? কে আমার বুকের উপর কান পেতে রেখে শোনে
কিছু ক্ষুদ্ধ হাহাকার ? কোন্ দেবতাকে দেব আমার নিস্ফল
ম্লান ধ্বনি ? মধ্যদিনে, সকল শ্রাবণধারা আমার দু’চোখে
গ্রহণ করেছি আমি। গৃহহীন, আমাকে সে ক্রমশ বিন্যস্ত করে জলের নির্জনে
আমিও ছড়িয়ে পড়ি অঙ্কুরে শৈবালে নৃত্যেমৃত্তিকায় বৃষ্টির দ্যুলোকে।
কখন সন্ধ্যা নামে। শীতের হাওয়ার টানে বেদনায় ভরে ওঠে দেবদারুছায়া
মনে পড়ে, যা-কিছু পেয়েছি তার সব দিয়ে যেতে হবে অচঞ্চল হাতে।
শুধু নিয়ে যাব আমি শূন্য এ প্রাণের দৃশ্য, কাটা ফসলের খেতে মায়া
মানুষের হৃদয়ের। কে আমাকে রিক্ত করে, নিয়েযাবে সাথে
অকৃতার্থতার এই করপুট মেলে দিলে ? যেদিকে তাকাই, ঊর্ধ্ব--দূরে
সর্বস্বচ্যুতির চিহ্ন জেগে ওঠে। অন্ধকারে অপলক দু’চোখের চাওয়া
কোনো চাহনির মতো। পাতাঝরানোর শব্দ ফিরে আসে বনভূমি ঘুরে।
কবি অমিতাভ গুপ্ত
কোন্ দেবতাকেআজ আমার নৈবেদ্য দেব ? কে আমাকে অবিরল রৌদ্রের জগতে
মুক্ত করে, প্রান্তরে ছড়িয়ে দেয়, পথে পথে শস্যেতৃণে মাটির উপরে
অনাবৃত করে রাখে। স্বপ্নের আঁধার থেকে ভেসে যাই অনুপলস্রোতে
আগুনে রাঙানো ভোরে। তিথিহীন এ শরীর ভরে ওঠে সূর্যের মর্মরে
আমরা সম্পূর্ণ আমি জ্বলে যাই। সূচীমুখে জটিল যন্ত্রণা
তুলে নিই। কী উজ্জ্বল সর্বগ্রাস এনেছে সে সন্মোহনে, আলোজয়রথে।
আমি তার পথের অঞ্জলি যেন। শুভ্র হয়ে এল আজ আমার বাসনা।
তখনই দেখেছি মেঘ, অকস্মাৎ, শ্যামকুরঙ্গীর মতো, আকাশের কোণে।
সহসা প্রবল ঝড় নেমে আসে। উচ্ছসিত, অশ্রুর মতন ঝরে জল
কে আমাকে সিক্ত করে ? কে আমার বুকের উপর কান পেতে রেখে শোনে
কিছু ক্ষুদ্ধ হাহাকার ? কোন্ দেবতাকে দেব আমার নিস্ফল
ম্লান ধ্বনি ? মধ্যদিনে, সকল শ্রাবণধারা আমার দু’চোখে
গ্রহণ করেছি আমি। গৃহহীন, আমাকে সে ক্রমশ বিন্যস্ত করে জলের নির্জনে
আমিও ছড়িয়ে পড়ি অঙ্কুরে শৈবালে নৃত্যেমৃত্তিকায় বৃষ্টির দ্যুলোকে।
কখন সন্ধ্যা নামে। শীতের হাওয়ার টানে বেদনায় ভরে ওঠে দেবদারুছায়া
মনে পড়ে, যা-কিছু পেয়েছি তার সব দিয়ে যেতে হবে অচঞ্চল হাতে।
শুধু নিয়ে যাব আমি শূন্য এ প্রাণের দৃশ্য, কাটা ফসলের খেতে মায়া
মানুষের হৃদয়ের। কে আমাকে রিক্ত করে, নিয়েযাবে সাথে
অকৃতার্থতার এই করপুট মেলে দিলে ? যেদিকে তাকাই, ঊর্ধ্ব--দূরে
সর্বস্বচ্যুতির চিহ্ন জেগে ওঠে। অন্ধকারে অপলক দু’চোখের চাওয়া
কোনো চাহনির মতো। পাতাঝরানোর শব্দ ফিরে আসে বনভূমি ঘুরে।