কবি অমিতাভ গুপ্তর কবিতা
*
কবি অমিতাভ গুপ্তর পরিচিতির পাতায় . . .
খনা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
যুক্তিশৃঙ্খল কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

লক্ষ ঢেউয়ের ফণা, সাগর পেরিয়ে
খনা এসেছিল। গ্রামবাংলা জাগে
খনার বচনে, তাই খনার প্রভু
লাঙল জড়িয়ে দিল মহাজনী দিয়ে
লাঙলের মুখে তবু খনার বচন
বীজ ও ফসলে জাগে খনার বচন
আকাশের তারা তার ভাষা হয়ে জ্বলে









*
ঝর্ণায়
কবি অমিতাভ গুপ্ত
যুক্তিশৃঙ্খল কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

মাঠের কালোমেয়ের মতো এইখানে আজ ঝর্ণা এসে রূপ রেখেছে
ঈষৎ তরুণঅঙ্গ, কৃশ, অন্নদায়ের জড়ুলচিহ্ন
তারই রূপের মতন নদী একটি গল্প শুনিয়েছিল
মাঠের কালোমেয়ে যখন জলের বুকে জাগল একা, যখন তীরের
রূপের টানে ঝর্ণারেখাও আগুন বোনে









*
পূর্বমেঘ
কবি অমিতাভ গুপ্ত
যুক্তিশৃঙ্খল কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

গোধূলিপথের পথিক যখন
জলসত্রের মেয়েটিকে বললেন
‘আমাকে তৃষ্ণা দাও’

আষাঢ়ের শেষদিনটির মতো দীর্ঘ
সমস্ত পথ। পথিকের কৃষিসাজ
সোনা হয়ে এল গোধূলির দীপ্তিতে

জলসত্রের মেয়েটি পথের ধারে
পূর্ণ কলসে অপেক্ষা করেছিল
কখন ফুরোবে আষাঢ়ের শেষদিন









*
উত্তরমেঘ
কবি অমিতাভ গুপ্ত
যুক্তিশৃঙ্খল কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

বিদ্যুতের কোরক জ্বলে
গোলাপ বড়ো হয়

ঝড়ের গ্রীবা ঘিরেছ তুমি
জ্বালার মালা গাঁথে

সাজিয়ে দিলে প্লাবন, মেঘ
ফসল সাজিয়েছ

শতফুলের অপরিসীন
জননী, জয় জয়








*
রুদ্র
কবি অমিতাভ গুপ্ত
যুক্তিশৃঙ্খল কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

এখন নয়। অন্য একদিন
তোমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তেই
জন্ম নেবে একটি নীলশিশু
রুদ্র ? নাকি, ঈশান তার নাম

তোমার বুকে কঠিন জন্মায়
তোমার বুকে কঠিন বড়ো হয়
তোমার বুকে শিশুর মতো সে
গভীর নীল নগ্ন বনচারী

যৌবনে তার ধূসর হবে দেহ
ছড়িয়ে দিয়ো ভস্ম তার ‘পরে
কপালজুড়ে আগুন দিয়ো তাকে
আগুন, যেন পার্বতীর আদর

এখন নয়। নতুন কোনোদিন
বিষাণ এখন সহজে বাজবে না
একনো রাত সহজে আঁধার নয়
শ্মশান তবু স্বপ্নে বরে যাক








*
ভ্রমরের কাছে
কবি অমিতাভ গুপ্ত
যুক্তিশৃঙ্খল কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

অন্ধকারে, মধু ও শিশির নিয়ে জেগে থাকে
শুভ্র শ্বেতফুল

অন্ধকারে আমিও রয়েছি বেঁচে ভ্রমরের কাছে
বিনিদ্র আলাপে


ভ্রমর এঁকেছিল
সপ্তপাতালের
শ্রেষ্ঠ মন্দির

পাথরবেদী তার
ছিন্ন করলেন
অর্ধনারীদেব

ভ্রমরসীমা ভেঙে
শিশির হয়ে তিনি
শুভ্র শ্বেতফুলে
এখনো ঝরে যান
মধুক্ষরণের
চিহ্ন তাঁর কোলে

আমার বেঁচে-থাকা
আমার আঁধারেরা
ভ্রমরগুঞ্জনে
গল্পে ভরে ওঠে








*
পরীদের আত্মকথন
কবি অমিতাভ গুপ্ত
যুক্তিশৃঙ্খল কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

শিকড় জড়িয়ে ধরা গাছটিকে দেখে
মনে পড়ে নাগরিক রক্তকরবী
আই পি টি এ’র গান লিখত পরীরা
তারপর বাগানের বুকে জড়ো হল
নতুন বাগানে কচি সবুজ পাতায়
কমলা হলুদ লাল ঝিকিমিকি পরী
ছোট ছোট, এত ছোট, হাতের মুঠোয়
ধরা যেত, তারপর বাগানের সীমা
ছড়িয়ে পড়ল। মায়ামমতার টানে
শিকড় জড়িয়ে গেল গাছের শিকড়ে








*
মরুৎ
কবি অমিতাভ গুপ্ত
যুক্তিশৃঙ্খল কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

প্রবাসে ফিরে যাওয়ার আগে চাষারা
মানুষের রূপমোহের মতো
ছোট ছোট গানের প্রকল্প রেখে গিয়েছিল
তারপর মরা ধানখেত, ধানখেতের পাশে
মাটির ঘর
ঘরের ছাউনি সরিয়ে অন্ধকার ভেসে চলেছে
মহাঅন্তরীক্ষের দিকে, যেন বাতাসে বাতাসে
খুঁজছে সেইসব ছোট ছোট গানের প্রকল্প, কাঁপছে
কয়েকটি চ্যুত দীর্ঘশ্বাস
যেন ত্রিশিরাহননের বোধ ওষধি ও নারীশরীর পার হয়ে
ছড়িয়ে পড়েছে বাতাসে বাতাসে








*
বিশ্বাস
কবি অমিতাভ গুপ্ত
যুক্তিশৃঙ্খল কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

অন্ধকারে বেদবতীটির
একদিকে, কাজরীগাথায়
ক্ষরিত হয়েছে কিছু শ্লোক

অন্যদিকে অশ্বথ্ব-বটের
শিকড়ে ও সমূহ পাতায়
পরিশোক, সবুজ স্থবির

টের পাই, দেবতার বুকে
এখানে রয়েছি আধোজাগা
আকাশের কষ্ট টের পাই

কিছু-বা শিথিল জলেস্থলে
আমার স্বপ্নের অবশেষ
যেদিন গিয়েছে ঝরে তার
করুণার জ্বালা টের পাই








*
গাথা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
যুক্তিশৃঙ্খল কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

এবার চৈত্রগাথার গান
আমাকে দিয়েছে যে সম্মান
তাকেই মুকুটের কাছে রাখি
গাথার অধীরাক্ষর ফাঁকির
হিসেব কখনো মানিনি বলে
ঋতুর মুকুটে উঠেছে জ্বলে
আমার চৈত্রের অভিমান