কবি অমিতাভ গুপ্তর কবিতা
*
কবি অমিতাভ গুপ্তর পরিচিতির পাতায় . . .
উত্স
কবি অমিতাভ গুপ্ত
“ও” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া, রচনাকাল / সাময়িকপত্রে প্রকাশকাল ২০১৪-২০১৫।

ও’দুটি করতল যতটা দূরে থাকে তারই মতো কোনো নিথর ব্যবধানে
দিগন্তের কুলে একটি দীঘিজল, দাতা ও দান ডুবে গিয়েছে ধীরে ধীরে

যে দীঘিজল দেখে আবেগে দোলাচলে শাপলা খুঁজে নেয় হালকা রাজহাঁস
ভাসিয়ে দেওয়া যায় যে দীঘিপাড়ে সব অসম্পূর্ণের সর্বশেষ স্নান

সেই- যে জল তুমি তারই ছায়া, তুমি জ্যোত্স্নাপিচ্ছিল কুহক কূটাভাস
যে দেয় তাকে যদি তেমনই চিনে রাখ যেমন চিনেছিলে আর্ত প্রতিদান

উভয়ে উভয়ের দিকে কৃতাঞ্জলি, তোমারই মতো, মেলে দিয়েছে করতল
পাওয়ায় না-পাওয়া না-দেওয়া প্রতিগ্রহণ, উভয়েরই অন্ত নেই

কখনো পথে পথে অন্তহীন ধুলো লক্ষ করে যদি চমকে উঠেছিলে
তুমি কী ভেবেছিলে এ’পথে হেঁটে গেছে তোমার অনুগামী করুণাপ্রার্থীও

কুড়িয়ে নিয়েছিলে ধুলোকে, দেখেছিলে ক্ষরিত ক্ষমা হয়ে হয়ত সেই ধুলো
উদিত ঊষা আর অস্তগোধূলির আভাকে মোহময় ঈষৎ ছুঁয়ে যায়

আমারও করুণার উন্মোচন তাই ছিন্নমাত্রিক, অবছিন্নের
কুয়াশা-আবৃত, যেভাবে ভ্রমরের ডানায় পরাগের আহুতি কেঁপে ওঠে

ফসল কাটা মাঠে যে কৃশ খরগোশ যেভাবে ছুটে যায়, যেভাবে মূষিকের
ভ্রান্তি শুরু হয়, যেভাবে প্রণামের চরম আলপনা আমিও এঁকে রাখি








*
চেয়ে থাকা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
“ও” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া, রচনাকাল / সাময়িকপত্রে প্রকাশকাল ২০১৪-২০১৫।


স্পর্শই প্রেম। স্পর্শাতুর
হয়ে ওঠাই প্রেম। স্পর্শাতীতই
প্রেম। অস্পৃষ্ট যাকিছু
তা-ই প্রেম। তাই, এই গান
তাই এই গান গেয়ে ফিরে যাওয়া
ঘরে। ভিখারির ঘরে আর কতটুকু ধরে
তবু সে যে ব্রহ্মের কুটির


মনে পড়ে সেই ভিক্ষের ঝুলির কথা
যাকে কুড়িয়ে নেব বলে
পথে পথে ঘুরেছি
কতদিন পরে আজ অতিথি এসেছে
ঘরে ফিরে দেখি, ছুঁয়ে দেখি
উঠোনে রাঙাধুলোর কাছে
দোলপূর্ণিমা। অজ্ঞাতপূর্ব সেই স্পর্শের
স্মৃতি মনে পড়ে


রূপ দিয়ে যেটুকু লুকিয়ে
রাখা যায়
সেইসব সর্বগ্রাসী প্রাক্ শুক্লপক্ষের
অলংকার তবে কেন, অঙ্গে
আঁকা হয়েছিল
তার অর্থ কে জানে কিংবা
যদি জানে, কে বলতে পারে








*
শ্রীপঞ্চমী
কবি অমিতাভ গুপ্ত
“ও” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া, রচনাকাল / সাময়িকপত্রে প্রকাশকাল ২০১৪-২০১৫।

অসত্যের যজ্ঞবেদি তার
মধ্যযামে অরণিখণ্ডের
মতন নশ্বর ভালোবাসা

নশ্বর হংসবলাকার
ডানা ছুঁয়ে রজনীগন্ধার
মতন জ্যোত্স্না জ্বলে ওঠে

প্রবাহিত অন্তসূচনাকে
রূপের স্বরূপ চিনেছিল
ক্ষতি নেই। হৃদ্ স্পন্দনের

কাছে আজ বীণা ভেসে যায়
আধো অবিদিত মূর্ছনায়
অসত্যের অনাহত সুরে








*
নয়ানজুলির পাড়ে
কবি অমিতাভ গুপ্ত
“ও” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া, রচনাকাল / সাময়িকপত্রে প্রকাশকাল ২০১৪-২০১৫।

ছোট ছোট অপরিসীমের মতন জোনাকিরা জ্বলে। তাই
পথটিকে বুকে তুলে নিয়েছে নয়ানজুলি পাড়ে
যেটুকু আঁধার ছিল, নিভে যায়। জ্যোতি, অন্তর্গত
প্রণামের মতো। তাই, যতদূর সাধ্য হয়
আভূমি লুটিয়ে
পড়েছিল সেইসব সত্য যারা রূপের উদ্দেশ্য থেকে সৌন্দর্যচয়ন
করে আজও, শুধু এইকথা ভেবে, যতটুকু আর্তস্বরে দেখা যায়, যেটুকু-বা
চোখের জলের মতো স্পর্শ করা যায়
সকলেরই অন্তর্নিহিত তবু সমাসন্ন সুমঙ্গল কোনও-এক নক্ষত্রের
হৃদয়স্পন্দন ছুঁয়ে জোনাকির ডানায় ডানায় যদি কেঁপে ওঠে। যদি
কোনও-এক আকাশের মেয়ে তবু অঙ্গরাগ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই
নয়ানজুলির পাড়ে আবার চকিত ভেসে আসে







*
দীপান্বিতা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
“ও” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া, রচনাকাল / সাময়িকপত্রে প্রকাশকাল ২০১৪-২০১৫।

বাঘের মতন ভালবাসি
    এখন তোমাকে। একদিন
        আদিম ব্রহ্মরা গড়েছেন

প্রথমে ময়ালসাপ। পরে
    প্রজাপতি, লাজুক ও রাঙা
        তারপর আরণ্যক নদী

দীর্ণ ক’রে তুমি এসেছিলে
    অভিধার তীরের দু’পাড়ে
        ছোট ছোট কুটিরের মতো

সন্ধ্যারতি সাজিয়ে দিয়েছ
    তারপর আহত খাঁচায়
        বাঘের মতন বসে আছি

মৃদুস্বরে অতিমৃদুস্বরে
    দীপের ছায়ায় অকথিত
        হতে পারে, না-হতেও পারে

যা তোমার দ্বিতীয় করুণা
    যা তোমার শৃঙ্খলের আগে
        লুপ্ত হয় ব্রহ্মের থাবায়








*
নত হওয়া
কবি অমিতাভ গুপ্ত
“ও” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া, রচনাকাল / সাময়িকপত্রে প্রকাশকাল ২০১৪-২০১৫।

মহাবিশ্ব অযাপন, আর

সূর্যাভার কৌতূহল দিয়ে
অনুচ্চার্য প্রশ্নটি জানিয়ে
ঊর্ণাজলের মতো তার
শূন্যতার তন্ত্রী ছুঁয়ে সোনা

জ্বলে ওঠে। সন্ধ্যার ছায়ার
বিভ্রমে রিক্তের আলপনা
পূর্ণ হল প্রণামে আমার








*
সুখী হওয়া
কবি অমিতাভ গুপ্ত
“ও” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া, রচনাকাল / সাময়িকপত্রে প্রকাশকাল ২০১৪-২০১৫।

কৈকেয়ীর দুঃখশোক ছুঁয়ে ছুঁয়ে কোনো-এক হারানো শপথে
সৌভাগ্যলক্ষ্মীর ঝাঁপি একমুঠো শস্যবীজ এখনো লুকিয়ে
রেখেছে। তারও বুকে ভয় চমকে ওঠে—
না-যদি উজার ক’রে দিতে পারে অচেনা কিষাণ
না-যদি কিষাণী ওই ঝাঁপির আভায় জ্বালে সোহাগপ্রদীপ
অথচ মাটির ঘরে সদ্য ফুটে উঠেছে শিশুটি
তার মৃদু অতিমৃদু হাত দিয়ে সে যদি নতুন ব্রতকথা
বুনে দিতে চায়








*
কেঁপে ওঠা
কবি অমিতাভ গুপ্ত
“ও” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া, রচনাকাল / সাময়িকপত্রে প্রকাশকাল ২০১৪-২০১৫।

হয়ত গোলাপ বিকচোন্মুখ। হয়ত
কোরকে কোরকে সুঘ্রাণ এল ঘনিয়ে

তীর্থপথের রূপে মহারূপে রূপাতীত
কী অপূর্বকে রেখেছে সাজিয়ে জানিনা

শুধু জানি সব তীর্থরেণুরই প্রান্তে
রয়েছে নিবিড় গভীর হ্রদের জোত্স্না

কূলে উপকূলে দ্রুত চন্দ্রাভা পদ্মের
একটি গোপন পাপড়ির কাছে কাঁপছে








*
ফিরে পাওয়া
কবি অমিতাভ গুপ্ত
“ও” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া, রচনাকাল / সাময়িকপত্রে প্রকাশকাল ২০১৪-২০১৫।

মনে পড়ে রহস্যভঙ্গুর
মনে পড়ে জীবনাতীতের
সীমা পার হয়ে বেঁচে ওঠা

যা শুধু পড়ে না মনে, তার
চিরস্মৃতিধার্য বেদনার
দ্রুতি দিয়ে উল্কার আদলে

অলংকার গেঁথেছি চকিত
মণিখণ্ডে অর্ধবৃত্তাকার
উপমা বাগর্থ বিশ্লেষণ








*
দেখা হওয়া
কবি অমিতাভ গুপ্ত
“ও” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া, রচনাকাল / সাময়িকপত্রে প্রকাশকাল ২০১৪-২০১৫।

রূপের সংকেতটিরও পাঠোদ্ধার
এখন প্রয়োজন। অনুচ্চার্য
যেটুকু শিলাপটে মন্ত্র লেখা তার
ছন্দশৃঙ্খল অপরিহার্য

এখনো ? তবু ওই শৃঙ্খলের সোনা
রূপের রূপাতীতে কুহকসর্পিল
তবে কী মুক্তক ? মহাপয়ারে বাসনা
তৃপ্ত হতে পারে ? সেও তো পিচ্ছিল

বহুভাষিক, দোলায়িত। তবে কি নীরবের
নৈঃশব্দ্যে মৌনের নিবিড়ে দেখা হবে