কবি অমিতাভ চৌধুরীর ছড়া
*
ঈশ্বরের কী অবিচার, দৃষ্টিটা একপেশে
কবি অমিতাভ চৌধুরী

ঈশ্বরের কী অবিচার, দৃষ্টিটা একপেশে,
সাহের মেমের জন্য ভাল, খারাপটা এই দেশে।
ওদের যখন নতুন বছর, কেমন ঠাণ্ডা সব,
শীতল শীতল বরফকুচি, ঠাণ্ডাতে ধবধব।
এই বাংলার নববর্ষে ঘামঝরানো দুপুর
সকাল বিকাল ভ্যাপসা গরম রোদের কলস উপুড়।
সেই কারণের বাঙালিদের একটি বড় দল,
নববর্ষ বলতে ওদের জানুয়ারিই চল।
আমরা চালাক ওদের থেকে দুই দিকে চোখ থাকে
গাছেরও খাই, তলার কুড়াই, জানুয়ারি বৈশাখে।
ঠাণ্ডাতে খাই প্যাস্ট্রি এবং গরমে আইসক্রিম
নববর্ষ আর নিউ ইয়ার দুটোই দ্রিদিম দ্রিম।
পিঠের সঙ্গে পুডিং খাওয়া হয়েছে অভ্যেস,
এই তো ভালো সবচে’ ভালো বলুন বেশ বেশ।
একদিকে গিংর্জা গমন, ওদিকে হালখাতা,
জয় বাংলা, নিউ ইয়ার্স, বেঁচে থাক কলকাতা।

.              *****************

.                                                                                
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
হাইদ্রাবাদে হাই প্রোফাইল
কবি অমিতাভ চৌধুরী

হাইদ্রাবাদে হাই প্রোফাইল
.        টেনিস-রানি মির্জা
যে বল আসে, র্যাকেট বলে,
.        ‘ফির যা রে তুই ফির যা।’
তোমার জন্য উপাসনায়
.        মন্দির মসজিদ গির্জা।

.         *****************


.                                                                                
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
স্বর্গে যাবার ইচ্ছা তো নেই
কবি অমিতাভ চৌধুরী

স্বর্গে যাবার ইচ্ছা তো নেই,
.        এই বলে ডাক পাঠালে
তাইতো আমি ছুটে এলাম
.        থাকতে ওই হাসপাতালে।
সেইখানেতে অনেক মজা
.        অনেক কারিকরি
হাত ভাঙে তো বাঁধে ব্যাণ্ডেজ
.        দিয়ে শনের দড়ি।
খাওয়া দাওয়া মন্দ তো নয়
.        পেঁপের ডালনা, ভাত,
একই খাবার বারংবার
.        দুপুর এবং রাত।
ডাক্তাররা যখন আসেন
.        সঙ্গে থাকেন নার্স
আলাদা কেউ রাখতে গেলে
.        খালি হবে পার্স।
রক্ত নেবে হাজার বার
.        এক্স রে দশ কি বারো
থুতু যাচাই করতে হবে
.        পেচ্ছাপটা আরও।
যাচাই বাছাই করতে করতে
.        তিন সপ্তাহ পার।
মানি ব্যাগটা খালি হলো
.        উপায় নেই তো আর।
পেটের ব্যথা যেমন ছিল
.        তেমনি থেকে গেছে,
বাড়ি ফিরতে পারলে এখন
.        প্রাণটি যাবে বেঁচে।
কিন্তু ফেরার পয়সা কোথায়
.        নিল পকেট কেটে,
ট্যাকসি ছেড়ে বাড়ি পালাই
.        একাই হেঁটে হেঁটে।

.         *****************

.                                                                                
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
অস্ট্রেলিয়া থেকে এলেছিল
কবি অমিতাভ চৌধুরী

অস্ট্রেলিয়া থেকে এলেছিল
নামজাদা এক ক্যাঙারু,
এসেই বলে, সাবধান ভাই,
একজনকে খুব ঠ্যাঙারু।
নামটি তাহার গ্রেগ চ্যাপেল,
সবাই পাশ, একজন ফেল।
দলে ছিল যে গৌরব
বাদ গেলো সেই সৌরভ।
যতই কর ভ্যাঙারু,
কামড়ে দেবে ক্যাঙারু।

.     *****************

.                                                                                
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
বই
কবি অমিতাভ চৌধুরী

বইশাখ মাসে আমি
.        বইকুণ্ঠে যেতে,
বইবাহিক মহাশয়
.        ডেকেছেন খেতে।
বইতরণী পার হতে
.        বইরাগী আসে,
বইকাল বেলা থেকে
.        লোক কেন হাসে ?

.     *****************

.                                                                                
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
কাটাকুটি
কবি অমিতাভ চৌধুরী

লম্বা এবং চওড়া ছিল বাংলা নামে দেশ,
এক কলমের খোঁচায় কেটে দুই টুকরোয় শেষ।
কোথায় গেল ঢাকা শহর কোথায় বরিশাল,
পদ্মা এবং মেঘনা গেল রূপসা আড়িয়াল।
কাটাকুটি চলল অনেক সব কিছু খান খান,
স্বাধীনতার নামে কাটি নিজের নাক ও কান।
দু-কান কেটে হইনি খুশি আবার কাটার ঝোঁক,
যা পেয়েছি তাকে কাটেন মনে অনেক লোক।
উপর দিকে আছে তরাই নীচে সোঁদরবন,
উত্তরে আর দক্ষিণেতে ফারাক করার পণ।
দক্ষিণকেই পশ্চিম কই ওটা উত্তর বং,
অনেক দূরের শহর যেন মালদা কালিম্পং।
কোচবিহার আর শিলিগুড়ি ডুয়ার্স বালুরঘাট,
উপেক্ষিতার অভিমানে কেঁদে ভাসায় মাঠ!
দূরে আরও নিকট টেনে না যদি নিই, পরে
কলকাতাটাই বাংলা হয়ে রইবে কেবল পড়ে।

.             *****************

.                                                                                
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
এক যে রাজার ছেলে
কবি অমিতাভ চৌধুরী

বেঁটে খাটো কৃষ্ণকালো
এক যে রাজার ছেলে,
হদ্দ ন্যাকা মদ্দ জোয়ান
হাজারে এক মেলে।
ভীষণ ভিতু, তবে তাকেই
অনেক ঠেলেঠুলে,
রাজারানি পাঠান দূরে
ক্ষীরসাগরের কূলে।
ক্ষীরসাগরের কূলের কাছে,
তেপান্তরের মাঠ,
মাঠে এসে ভয়ে বাবুর
তেষ্ঠায় বুক কাঠ।

ঘোড়ায় চড়া জানে না সে,
হাঁটলে ধরে হাঁফ
তরোয়ালডা খুলবে কেডা,
ওরে বাপরে বাপ!

বুক ধক্ ধক্, পা ঠক্ ঠক্
বেড়ায় হয়ে হন্যে,
জানে না সে কোন পুরীতে
আছে রাজকন্যে।

গাছের ডালে উঠে চোখের
জল পড়ে টস্ টস্,
সেই সময়ে হাজির হলো
মস্তান রাক্ষস।
গাছের থেকে রাজার ছেলে
পড়ল ভয়ে ধবাস্,
রাক্ষুসে মুখ গিলল তাকে
গব গবা গব গবাস।
ওই দিকেতে রাজকন্যে
আছেন দৈত্যপুরী
রাজপুত্রের আসার আশায়
বসে বসে বুড়ি।

.     *****************

.                                                                                
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
ভাবেন খুকী শান্তা
অমিতাভ চৌধুরী
যামিনীমোহন কর সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার চৈত্র ১৩৫৩ (মার্চ ১৯৪৭) সংখ্যা
থেকে নেওয়া।


ভাবেন খুকী শান্তা
আর সকলে বেজায় বোকা
তিনিই সব জান্তা।
বড়দা, ন’দা, পটলা
মুখেই কেবল জগৎ মারে
করতে বসে জটলা।
ভাই-বোনেরা অন্য
মাথায় তাদের গোবর পোরা
জঘন্য ও বন্য।
কেবল তিনি ভীষণ চালাক
নহেন দিকভ্রান্তা।
ভাবেন খুকী শান্তা।

ভাবেন খুকী শান্তা।
গুরুজন যা আদেশ করেন
তিনিই করে যান তা’।
বড়দা ওরা বিচ্ছু
হাবার মতো বেড়ায় ঘুড়ে
করবে না তো কিচ্ছু।
তাই তো তিনি সাবড়ি
খাবেন ঠেসে কোপ্তা কাবাব
পায়েস এবং রাবড়ি।
বড়দা ওরা খাকগে পচা
বেগুনপোড়া পান্তা।
ভাবেন খুকী শান্তা।

.     *****************

.                                                                                
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
লিমেরিক
অমিতাভ চৌধুরী
যামিনীমোহন কর সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার জ্যৈষ্ঠ ১৩৫৩ (মে ১৯৪৬) সংখ্যা
থেকে নেওয়া।


নটবর নন্দী
দিনরাত আঁটে মনে যত বদ ফন্দী
কিসে কারে ঠকাবে সে মস্তকে ঘুরছে
অপরের সুখ দেখে শুধু রাগে পুড়ছে
হয় কিসে পর ধন তার ট্যাঁকে বন্দী?


সৈয়দ সুলতান
বাড়ী তার মুলতান।
গান গেতে গিয়ে সে যে
ধরে শুধু ভুল তান।
তসে বসে গুলতান।


অজিতকুমার বিশ্বাস
ছাড়ছে কেবল নিশ্বাস
আরাম তাহার চাই তো
উপায় কিছুই নাই তো
ভাবছে কেবল তাই তো!


শ্যামলাল সরকার
স্বদেশী সে মস্ত
খাটে উদয়স্ত।
বলে তার দরকার
একখানা চরকার।


জগদীশ চন্দ
কদাকার চেহারাটি, গায়ে বদ গন্ধ।
ঠোঁট চেপে দাঁতগুলো বেরিয়েছে ছিট্ কে।
রোম ভরা ভুড়ি দেখে উঠে নাক সিঁটকে,
মানুষ না আর কিছু মনে জাগে সন্দ।


কানু মহাপাত্র
ইসকুল ছাত্র।
বসি দিবারাত্র
চুলকায় গাত্র,
থামে নাকো মাত্র।


গদাধর গুপ্ত
গায়ে জোর খুব তো
তার কথা না শুনিলে সকলে যে চড় খায়
হড়কিয়ে পড়ে গিয়ে এক দম ভড়কায়
সব তাই চুপ তো।


বিশুলাল ভঞ্জ
বাড়ী মধু গঞ্জ
কাঁথা গায়ে মুড়িয়ে
চলে পথে খুঁড়িয়ে
বিশু বুঝি খঞ্জ?


বিপুলচরণ শর্মা
বড়ই করিত্কর্মা
গৃহস্থালী কার্য্য সকল তাহার হাতে ন্যস্ত
সন্ধ্যা সকাল তাই তো সে যে কাজের মাঝে ব্যস্ত
রান্না করে বাসন মেজে কাট্ ছে বসে দরমা।


বেলারাণী বকসী
আসে রোজ হেথারে
পাকা হাত সেতারে
গান গায় বেতারে
সিনেমায় যায় খুব ‘রূপবাণী’ ‘রক্সী’।

.     *****************

.                                                                                
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর