কবি আমোদিনী ঘোষের কবিতা
*
অমিয়ে কুম্ভ ভরি।

.        *************************      
.                                                                                                   
সূচিতে . . .      



মিলনসাগর       
বেহুলা
কবি আমোদিনী ঘোষ

শারদ প্রভাত ঝলে গাঙ্গুরের জলে---
হের নদী ঘোর                এ কি যাত্রা তোর
অকুলেতে যাবি কোথা?
মকর কুম্ভীরে                গরসিবে যে রে
রাখ্ ও দারুণ কথা---
অয়ি সুকুমারী লতা!

শোভন সীমন্ত তলে
গত রজনীর                    আঁকা সিন্দুর ;
শুক তারা-সম জ্বলে,
কনক প্রভাতে                    শত আভরণ
ঝলমেলে চেলীতলে,
মণিময় অঞ্চলে!

‘মরি গো ভগিনী মোর!
কাস যে তুহারে                সাজায়ে দিয়েছি
বাঁধি মাণিকের ডোর’
ধেয়ে সপ্ত ভাই                আসি নদী তীরে
কাঁদে, করি মহা রোর ; --
‘মরি গো ভগিনী মোর!’

‘চল ফিরে যাই ঘরে---
আহা কে পাষাণ                কনক পুতলী
ভাসায়ে দিয়াছে নীরে!
কাঁদিছে জননী                তিতায়ে ধরণী
চল বোন্ চল ফিরে,
বধিবি কি জননীরে?’

যুড়িয়া যুগল পাণি
ভাসি আঁখিনীরে                বেহুলা সবারে
কহে বাধা নাহি মানি ;
‘জীবনে মরণে                স্ত্রীর স্বামী গতি
আর কিছু নাহি জানি’
যুড়িয়া যুগল পাণি।

ভেসে যায় ভেলা জলে,
পুরবাসী যত                সজল আঁখিতে
দাঁড়ায়ে গাঙ্গুর তলে,
নমিছে কেহ বা                কেহ জল লয়ে
অঙ্গে ও শিরে ঢালে,
‘সতী গেছে এই জলে’

যায় দিন যায় রাত,
বুকে মৃত পতি                ধ্যানরতা সতী
দেবে করে প্রণিপাত ;
‘কায় মনে যদি                ভালবেসে থাকি
আবার পাইব নাথ’
ভাবে সতী দিন রাত।

গেল পক্ষ গেল মাস!
অনাবৃত শিরে                লয়ে রবিতাপ
সহে বালা উপবাস,
বরষার জল                ঝরি অবিরল
বিগলিত পট্টবাস ;
চলে যায় বর্ষ মাস।

করাল তামসী নিশি ;
গরজে-গগনে                অশনি শমনে
চমকিয়া দশদিশি
করি মহা রোর                বহে বায়ু ঘোর
বিশ্ব ভূবন ত্রাসি ;
ভয়াল তামসী নিশি।

তিমিরে ভূবন ভরা ;
নাহি ঊর্ধ্ব অধঃ                দিক্বিধিক বোধ।
দ্যুলোকে ভূলোক ঘেরা---
বজ্রাগ্নির শিখা                সর্প জিহ্বা সম
লেহন করিছে ধরা ;
তিমিরে ভূবন ভরা।

কাঁপে সতী থর থর ;
উত্তাল তরঙ্গে                খসি পড়ে ভেলা
সহেনাকো আর ভর।
ইষ্টদেবতারে                মনে মনে স্মরে
মেত্রে নীর ঝর ঝর।
কাঁপে সতী থর থর!

সহসা তিমির টুটি
নন্দন বন                ফুল্ল কুসুম
নয়নে উঠিল ফুটি।
প্রিয় সম্ভাষে                কিন্নর বালা
হাসি হাসি পড়ে লুটি,
সহসা তিমির টুটি।

‘হা রে অবোধিনী বালা,
মৃতের কঙ্কালে                লয়ে হেন কালে
কোথা যাস্ বয়ে ভেলা?
আয় হেথা আয়                নন্দনের বায়
করিবি প্রমোদ লীলা ;
হা রে অবোধিনী বালা!’

ভ্রুভঙ্গে ফিরায়ে মুখ
সতী ভাবে চিতে                ‘শুধু এ জগতে
ব্যথিতের তরে দুখ,
পতিত লতারে                পায়ে দলিবারে
সকলের বাড়ে বুক’!
লাজে অপমানে মূক।

ঘুচিল নন্দন বন ;
সহসা প্রবল                হিমানী সম্পাতে
ভরি গেল ত্রিভূবন,
নিদারুণ শীতে                অঙ্গে হানে সূচী
দুর্বিষহ সে বেদন,---